বার্মিংহামের এডজবেস্টনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত বনাম পাকিস্তানের মাঠের লড়াই দেখতে দুই দেশের সমর্থকরা আস্তে আস্তে ভিড় জমায়। এডজবেস্টনে পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ টসে জিতে বিরাট কোহলির ভারতকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান। মেঘের আনাগোনা থাকলেও ঠিক সময়েই বল মাঠে গড়ায়। পাকিস্তানের একাদশে জায়গা হয়নি জুনায়েদ খানের, যিনি বিরাট কোহলির উইকেট শিকারের ব্যাপারে বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। থাকবেনই বা না কেন! ওডিআইতে বিরাটের বিপক্ষে ২২ বল করে তিনবার আউট করেন। বিরাট সর্বসাকুল্যে দুই রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন জুনায়েদের বল থেকে।
টসে হেরে ব্যাট করতে নামা ভারতের হয়ে ইনিংস উদ্বোধন করেন গত আসরের সেরা জুটি শিখর ধাওয়ান এবং রোহিত শর্মা। দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলে ফেরা রোহিত শর্মা মোহাম্মদ আমিরের করা প্রথম ওভারে বেশ অস্বস্তি বোধ করছিলেন। ব্যাটে-বলে করতে পারেননি একটি বলও। পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজ ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বল তুলে দেন বাঁহাতি স্পিনার ইমাদ ওয়াসিমের হাতে। আমির এবং ইমাদ ওয়াসিমের বল দেখেশুনেই খেলছিলেন ধাওয়ান ও রোহিত। প্রথম চার ওভারে মাত্র ৯ রান সংগ্রহ করেন। ইনিংসের ৯.৫ ওভারের সময় প্রথমবারের মতো বৃষ্টি নামে। তখন ভারতের সংগ্রহ ছিল বিনা উইকেটে ৪৬ রান।
পাকিস্তানি বোলারদের কোনো সুযোগ না দিয়ে ভারতের দুই ওপেনার ব্যাট করছিলেন। ১৫ ওভার শেষে ৬৬ রান থেকে ২১ ওভার শেষে ভারতের স্কোরবোর্ডে রান সংখ্যা বিনা উইকেটে ১২১! ধাওয়ান এবং রোহিত দুইজনেই ফিফটি তুলে নিয়েছিলেন। দুইজনেই বড় সংগ্রহের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। শেষপর্যন্ত শাদাব খানের ফুলটস বল সীমানা ছাড়া করতে গিয়ে আজহার আলীর হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান ৬৫ বলে ৬৮ রান করা শিখর ধাওয়ান। উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে রোহিতের সাথে ১৩৬ রান যোগ করেন তিনি।
ধাওয়ানের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। রোহিতের সাথে সাবলীলভাবেই ব্যাট করে যাচ্ছিলেন। কোহলি নিজের স্বাভাবিক খেলা খেললেও রোহিত তুলনামূলক ধীরগতিতেই ব্যাটিং করছিলেন। এডজবেস্টনে দ্বিতীয় ধাপে বৃষ্টি নামে ৩৩.১ ওভারে। ক্রিজে থাকা রোহিত ১০৮ বলে ৭৭* এবং কোহলি ২৬ বলে ২৪ রান নিয়ে ব্যাট করছিলেন।
প্রায় আধঘণ্টা পর পুনরায় খেলা শুরু হয়। বৃষ্টির কারণে ৫০ ওভার থেকে দুই ওভার কমিয়ে ৪৮ ওভার নির্ধারণ করা হয়। বৃষ্টি থামার পর ওয়াহাব রিয়াজের এক ওভারে ১৩ রান নেওয়ার পর পরের ওভারে দ্রুত সিঙ্গেল নিতে গিয়ে রান আউটের ফাঁদে আটকা পড়েন। সেইসাথে তার ১১৯ বলে সাতটি চার এবং দুটি ছয়ের সাহায্যে সাজানো ৯১ রানের ইনিংসটির ইতি ঘটে।
কোহলিকে সঙ্গ দিতে নতুন ব্যাটসম্যান হিসাবে ক্রিজে আসেন যুবরাজ সিং। তিনি মাত্র ৮ রানের মাথায় শাদাব খানের বলে হাসান আলীর হাতে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান। হাসান আলী সহজ ক্যাচটি তালুবন্দী করতে পারেননি। নতুন জীবন পেয়ে পাকিস্তানি বোলারদের উপর তাণ্ডব চালান যুবরাজ সিং। মাত্র ২৯ বলে অর্ধশতক তুলে নেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এটিই সবচেয়ে কম বলে অর্ধশতকের রেকর্ড। ৪০ ওভার শেষে যেখানে ভারতের সংগ্রহ ছিল ২ উইকেটে ২১৩ রান, সেখানে ৪৩ ওভার শেষে তাদের সংগ্রহ ২ উইকেটে ২৪২ রান। অবস্থা বেগতিক দেখে সরফরাজ তার প্রধান অস্ত্র আমিরকে অ্যাটাকে নিয়ে আসেন।
নিজের ৯মম ওভারের প্রথম বল করেই ইনজুরিতে পড়েন আমির। তার অসম্পূর্ণ ওভার শেষ করতে আসেন ওয়াহাব রিয়াজ। রিয়াজ তার প্রথম সাত ওভারে বেধড়ক পিটুনি খেলেও আমিরের করা ঐ অসম্পূর্ণ ওভারের শেষ বলে বিরাট কোহলিকে আউট করার সুযোগ তৈরি করেন। কিন্তু এইবার বদলি ফিল্ডার হিসাবে নামা ফাখার জামান বল তালুবন্দী করতে ব্যর্থ হন। তখন বিরাট কোহলির রান ছিল ৫৬ বলে ৪৪।
আমিরের পর ওয়াহাব রিয়াজও ইনজুরিতে পড়েন। ইনিংসের ৪৬তম ওভারের ৫ম বল করে ইনজুরিতে পড়েন তিনি। দিনটি মোটেও ওয়াহাব রিয়াজের ছিলোনা। তার করা ৮.৪ ওভার থেকে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা ৮৭ রান সংগ্রহ করে।
যুবরাজ এবং কোহলি দুইজনেই পুনরায় জীবন পেয়ে সেটা কাজে লাগান। যুবরাজ ৩২ বলে ৫৩ রান করে ফিরে গেলেও কোহলি ৬৮ বলে ৮১* রানে অপরাজিত থাকেনা। হার্দিক পান্ডিয়া ছয় বলে ২০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন। যুবরাজ, কোহলি এবং পান্ডিয়া মিলে শেষ ৪ ওভার থেকে ৭২ রান সংগ্রহ করেন। এতে করে নির্ধারিত ৪৮ ওভার শেষে ভারত ৩ উইকেটে ৩১৯ রান সংগ্রহ করে।
বৃষ্টি আইনে পাকিস্তানের সামনে লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ৪৮ ওভারে ৩২৪ রান। পাকিস্তানের হয়ে ইনিংস উদ্বোধন করেন আজহার এবং শেহজাদ। এই দুই ব্যাটসম্যান ৪.৪ ওভার থেকে ২২ রান সংগ্রহ করার পর আবারও বৃষ্টি নামে। পুনরায় খেলা শুরু হলে পাকিস্তানকে ৪১ ওভারে ২৮৯ রানের টার্গেট দেওয়া হয়। পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং দেখে কখনও মনে হয়নি তারা জয়ের জন্য খেলছে। ভুবেনেশ্বর কুমারের বলে আউট হওয়ার আগে শেহজাদ ১২ রান করতে খেলেন ২২ বল।
ওডিআই ক্রিকেটে প্রথম ২৫ ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রান করা বাবর আজম ১২ বলে ৮ রান করে যাদবের বলে আউট হয়ে সাজঘরে ফিরে যান। একপ্রান্ত আগলে রেখে পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক আজহার আলী অর্ধশতক তুলে নেন। অর্ধশতক পূরণ করার পরের বলেই আউট হন আজহার আলী।
এরপর আর কোনো পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানই ক্রিজে থিতু হতে পারেননি। শোয়েব মালিক ৯ বলে ১৫ রান করে রান আউট হন। শুধুমাত্র তার ব্যাটিং স্টাইল দেখেই বুঝা যাচ্ছিলো পাকিস্তান জয়ের জন্য খেলছে। উমেশ যাদব তিনটি এবং জাদেজা ও পান্ডিয়া দুটি করে উইকেট শিকার করলে পাকিস্তান ৩৩.৪ ওভারে মাত্র ১৬৪ রানে গুটিয়ে যায়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজেদের উদ্বোধনী ম্যাচে বৃষ্টি আইনে ভারত ১২৪ রানে জয় তুলে নেয়। যুবরাজ সিং তার ঝড়ো অর্ধশতকের জন্য ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন।
বিশ্বকাপ এবং টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে এখনো জয়ের দেখা পায়নি পাকিস্তান। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দুবার জয়ের মুখ দেখেছিলো তারা। আইসিসি টুর্নামেন্টে ১৫ বারের দেখায় ১৩ ম্যাচে জয় পেয়েছে ভারত। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা এখন একপেশে। র্যাংকিংয়ের আট নাম্বার দল হয়ে তিন নাম্বার দলের সাথে খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারছেনা পাকিস্তান।