প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমানোর আগপর্যন্ত আর কিছু আমাদের সাথে থাক বা না থাক, আমাদের প্রিয় স্মার্টফোনটি কিন্তু আমাদের সাথেই থাকে। ক্যাম্পাসে, অফিসে, রাস্তাঘাটে, রেস্টুরেন্টে কিংবা দিন শেষে ঘুমানোর আগে নানা রকম কাজের ফাঁকে স্মার্টফোনটি সঙ্গ দেয় আমাদের। তাই আমরা চাইলেই এই স্মার্টফোনটির সাহায্যে আমাদের প্রতিদিনের অনেক কাজ করতে পারি খুব সহজে, বাঁচাতে পারি কিছুটা সময়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে করতে পারি আরেকটু সহজ।
আর আপনার দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করতেই স্মার্টফোনগুলোর জন্য রয়েছে এমন কিছু অ্যাপ, যার খবর হয়তো অনেকেই জানেন না। আপনার জীবনযাত্রাকে সহজ করে তুলবে এমন ৭টি অ্যাপ সাথে আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হবে।
১. গুগল অ্যাসিস্টেন্ট
গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টকে হয়তো আমরা অনেকেই চিনি। কিন্তু এর সঠিক ব্যবহার আমরা অনেকেই জানি না। আইফোনের ‘সিরি’ কিংবা উইন্ডোজ ফোনের ‘কর্টানা’ এর মতো অ্যান্ড্রয়েডের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) অ্যাসিস্ট্যান্ট হলো গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট। এটি আপনার ফোনে ইনস্টল করা থাকলে শুধু “Ok Google” করেই আপনি অনেক প্রয়োজনীয় কাজ সেরে ফেলতে পারবেন। গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট আপনার ভয়েস রিকগনাইজ করে আপনার বিভিন্ন আদেশ খুব সহজেই পালন করবে।
আজকের আবহাওয়া, গতকালের ক্রিকেট ম্যাচের রেজাল্ট কিংবা নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র সব কিছুই আপনি জেনে নিতে পারেন আপনার গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টের কাছ থেকে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার এলার্ম কিংবা কোনো বন্ধুর জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো সবকিছুই করে দেবে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট।
অফিসের কাজ করতে করতে বিরক্ত হচ্ছেন? গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টকে আদেশ করুন, “Play my favorite songs.” আপনার পছন্দের গানগুলো গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট আপনাকে শুনিয়ে দেবে। কোনো কারণে মন খারাপ? গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টকে বলুন “Tell me a joke.” গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট কৌতুক শুনিয়ে আপনার মন ভালো করে দেবে।
২. সাজাম
মনে করুন, প্রিয়জন কিংবা বন্ধুদের সাথে আপনি কোনো রেস্টুরেন্টে গিয়েছেন। আপনারা গল্প করছেন। ব্যাকগ্রাউন্ডে একটি সুন্দর গান বাজছে। আপনার খুব ইচ্ছা করছে গানটি ফোনে ডাউনলোড করে নিতে। কিন্তু আপনি গানটির নাম জানেন না। ঠিক এমন পরিস্থিতিতে খুব সহজেই আপনার প্রিয় গানটির নাম জেনে নিতে পারেন সাজামের মাধ্যমে। কোথাও কোনো গান বাজছে? ওপেন করুন সাজাম। সাজাম গানটি শুনেই আপনাকে জানিয়ে দিবে গানের নাম। এমনকি গানটি ডাউনলোড ও গানটির মিউজিক ভিডিওটিও দেখার সুবিধা রয়েছে এই অ্যাপে। চাইলে গানের লিরিকটিও দেখে নিতে পারবেন আপনি।
ইংরেজি, বাংলা, হিন্দি, চাইনিজ সহ প্রায় সব ভাষার গানই আপনি খুঁজে পেতে পারেন এই অ্যাপটির সাহায্যে। ২০০টি দেশের প্রায় ২২৫ মিলিয়ন স্মার্টফোন ব্যবহারকারী প্রতিনিয়ত সাজাম ব্যবহার করে থাকেন। তাই আপনি যদি একজন সংগীতপ্রেমী হয়ে থাকেন, তবে এখনই ডাউনলোড করে নিন এই অ্যাপটি।
অ্যাপটির প্লেস্টোর লিংক – Link
৩. টোয়াইলাইট
আপনার কি রাতে ঘুমাতে অসুবিধা হয়? আপনি কি রাত জেগে স্মার্টফোন ব্যবহার করেন? যদি আপনার উত্তর হ্যাঁ হয়, তবে এই অ্যাপটি আপনার জন্য। অনেকেই আমরা রাতের বেলা লাইট অফ করে শুয়ে শুয়ে স্মার্টফোন ব্যবহার করতে ভালবাসি। কিন্তু আপনি কি জানেন অন্ধকার রুমে স্মার্টফোনের দিকে ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে থাকা আপনার চোখের জন্য কতটা ক্ষতিকর? স্মার্টফোনের স্ক্রিন থেকে নির্গত হওয়া ব্লু লাইট আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, এই স্মার্টফোন থেকে বের হওয়া ব্লু লাইট ব্রেনের মেলাটোনিনের প্রোডাকশন কমিয়ে দেয়। মেলাটোনিন আমাদেরকে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করে। এছাড়াও দীর্ঘক্ষণ ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে ড্রাই আই সহ নানা রকম চোখের সমস্যা হতে পারে। তাই ফোনের স্ক্রীনের ক্ষতিকর ব্লু লাইট থেকে আপনার চোখকে রক্ষা করতে ব্যবহার করুন এই অ্যাপটি। এই অ্যাপটি ফোনের উজ্জ্বল আলো কমিয়ে একটি ব্লু লাইট ফিল্টার স্ক্রিনে চালু করে দেয়। ফলে ক্ষতিকর ব্লু লাইট ফোনের স্ক্রিন থেকে নির্গত হয় না। আপনার চোখ থাকে সুরক্ষিত।
অ্যাপটির প্লেস্টোর লিংক – Link
৪. ফরেস্ট স্টে ফোকাস্ড
আমাদের মধ্যে অনেকেরই স্মার্টফোন ব্যবহার করা একধরনের নেশায় পরিণত হয়েছে। একটু পরপর ফেসবুক ওয়াল চেক করা, কেউ মেসেজ দিল কিনা চেক করা কিংবা বিভিন্ন অনলাইন গেম খেলা ইত্যাদির ফলে কোনো কাজে মনোযোগ দিতে প্রায়ই অসুবিধা হয় আমাদের। সামনে পরীক্ষা আছে, অনেক পড়া বাকি, পড়তে হবে। কিন্তু একটু পরপরই আপনি ফেসবুক চেক করছেন। আপনার মন চাইছে একটু গেম খেলি। চাইলেও মন দিয়ে পড়তে পারছেন না। ছোট্ট, সুন্দর একটি অ্যাপের সাহায্যে চাইলেই আপনি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। অ্যাপটির নাম ফরেস্ট স্টে ফোকাস্ড।
এটি একটি সেল্ফ মোটিভেশন অ্যাপ। আসুন দেখি অ্যাপটি কীভাবে কাজ করে। মনে করুন, আপনি আগামী ২ ঘন্টার মধ্যে আর আপনার ফোনটিতে হাত দিতে চান না। আপনি এখন অ্যাপটি ওপেন করে একটি বনের মধ্যে একটি গাছের বীজ বপন করবেন এবং সময় সেট করবেন ২ ঘন্টা। এই দুই ঘন্টায় বীজটি থেকে একটি গাছ হবে। আপনি যদি এই দুই ঘন্টার মধ্যে ফোনটি হাতে নিয়ে অ্যাপটি থেকে বের হয়ে ফেসবুকিং কিংবা অন্য কিছু করেন, তবে আপনার গাছটি মরে যাবে। কিন্তু আপনি যদি দু’ঘন্টা ফোনে হাত না দেন, তাহলে বীজটি একটি সুন্দর গাছে পরিণত হবে। এভাবে কাজের সময় ফোন ব্যবহার না করে গাছ লাগিয়ে আপনি একটি সম্পূর্ণ বন তৈরি করতে পারবেন। ব্যাপারটা অনেকটা গেমের মতো। একটি গেমে যেমন কিছু কাজের মাধ্যমে নির্দিষ্ট অ্যাচিভমেন্টের ফলে আমরা আনন্দ পাই, ঠিক তেমনি প্রতিটি গাছ বড় হলে আপনি আনন্দ পাবেন। আর তার সাথে আপনি প্রয়োজনীয় সময়ে ফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকার অভ্যাস করতে পারবেন।
অ্যাপটির প্লেস্টোর লিংক – Link
৫. মাই ফিটনেস পাল
যারা শরীরের ওজন কমাতে বা বাড়াতে কিংবা শরীর ফিট রাখতে চান, তাদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি অ্যাপ এটি।
এই অ্যাপটির সাহায্যে আপনি প্রতিটি খাবারের ক্যালরি দেখতে পারবেন এবং প্রতিবেলার খাবারের মোট ক্যালরির পরিমাণ হিসাব করতে পারবেন। এছাড়াও কোন এক্সারসাইজে কত ক্যালরি বার্ন হচ্ছে সেটাও আপনি হিসাব করতে পারবেন এই অ্যাপ দিয়ে। ফলে যারা সারাদিনে নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালরির খাবার খেতে চান, তারা এই অ্যাপের মাধ্যমে নির্দিষ্ট গোল সেট করে সারাদিনের খাবারের মাধ্যমে আপনি কত ক্যালরি গ্রহণ করছেন তার হিসাব রাখতে পারবেন। ফলে সহজ হবে আপনার ওয়েট গেইন কিংবা ওয়েট লুজের প্রক্রিয়া।
অ্যাপটির প্লেস্টোর লিংক – Link
৬. অ্যাটমস্ফিয়ার
মনে করুন, সারাদিনের কাজ শেষে ক্লান্ত শরীরে আপনি বাসায় এসে একটু শান্তিতে বিশ্রাম নিবেন। কিন্তু পাশের রুমেই কেউ লাউড ভলিউমে টিভি দেখছে। কিংবা পাশের বাসায় ফুল ভলিউমে গান বাজছে। এমন পরিস্থিতিতে আপনার মন চাচ্ছে যদি বাসা ছেড়ে দূরে কোনো সমুদ্রের ধারে একা একা গিয়ে শুয়ে থাকতে পারতাম! কিংবা চুপচাপ জানলার ধারে বসে বৃষ্টির শব্দ শুনতে পারতাম। আপনার এই চাহিদা পূরণ করতে আছে অ্যাটমস্ফিয়ার অ্যাপটি।
শুধু অ্যাপটি ওপেন করে আপনার পছন্দের জায়গা সিলেক্ট করুন। আর চোখ দুটো বুজে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে বসে পড়ুন। আপনি চলে যাবেন আপনার পছন্দের রাজ্যে। এই অ্যাপটিতে রয়েছে সমুদ্র সৈকত, বন, ব্যস্ত শহর, পাখি ডাকা গ্রামের পরিবেশ সহ মোট আটটি পরিবেশ এবং ৮০টি সাউন্ড। এছাড়াও রয়েছে বাইনরাল বিটস যা আপনার ব্রেন ওয়েভ কন্ট্রোল করে আপনাকে দ্রুত রিল্যাক্স হতে কিংবা ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করবে। তাই চোখ বুজে ঝুম বৃষ্টি, নিঝুম বন কিংবা একাকী সমুদ্র সৈকতে হারিয়ে যেতে এখনই ডাউনলোড করে নিন অ্যাপটি।
অ্যাপটির প্লেস্টোর লিংক – Link
৭. ড্রাগ ইনডেক্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম
সবশেষে, আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো অতি প্রয়োজনীয় একটি অ্যাপের সাথে। অ্যাপটির নাম DIMS (Drug Index Management System)। অ্যাপটি তৈরি করেছে ITmedicus নামের একটি বাংলাদেশী ডেভেলপার টিম।
এই অ্যাপটির সাহায্যে আপনি বাংলাদেশের যেকোনো ঔষধ সম্পর্কে জানতে পারবেন। ওষুধ কখন খেতে হবে, ওষুধটি কীভাবে কাজ করে কিংবা ওষুধটির দাম- সব কিছুই আপনি পাবেন এই অ্যাপে। প্রয়োজনের সময় আমরা অনেকেই এই তথ্যগুলো খুঁজে পাই না। ফলে পড়তে হয় নানা সমস্যায়। এই অ্যাপটি ফোনে ইনস্টল করা থাকলে আপনাকে আর সেসব সমস্যায় পড়তে হবে না।
অ্যাপটির প্লেস্টোর লিংক – Link