একবার ভাবুন তো, আপনার প্রিয় স্মার্টফোনটি চুরি হয়েছে অথবা হারিয়ে গিয়েছে! আসলে এমন কিছু ভাবতেও কষ্ট লাগে। প্রিয় স্মার্টফোনটি চুরি হয়ে যাওয়া কিংবা হারিয়ে যাওয়া আসলেই মন খারাপ করে দেবার মতো একটি বিষয়। তবে আমরা একটু সতর্ক হলে কিন্তু এই ফোন চুরি বা হারিয়ে যাওয়ার মতো বিষয়কে অনেকাংশে রুখে দিতে পারি।
এসব ক্ষেত্রে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুগলের পক্ষ থেকে ‘ফাইন্ড মাই ডিভাইস’ নামের একটি কার্যকরী অ্যাপ রয়েছে। এছাড়া, বাড়তি সুরক্ষার জন্য গুগল প্লে স্টোরে আরও ফিচার সমৃদ্ধ কার্যকরী বেশ কিছু অ্যাপ রয়েছে। আজকের লেখাটি এমন কিছু অ্যান্ড্রয়েড আপ্লিকেশন নিয়ে সাজানো হয়েছে, যেগুলো স্মার্টফোন চুরি হলে বা হারিয়ে গেলে ফিরে পাবার সম্ভাবনা যথেষ্ট পরিমাণে বাড়িয়ে দিতে পারে। এই অ্যাপগুলোর কয়েকটি অন্যান্য স্মার্টফোন প্লাটফর্মেও বেশ ভালো সুরক্ষা প্রদান করে।
ফাইন্ড মাই ডিভাইস
চুরির হাত থেকে সুরক্ষার জন্য গুগলের পক্ষ থেকে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে ‘ফাইন্ড মাই ডিভাইস’ ফিচার রয়েছে। কারো স্মার্টফোনে এই ফিচারটি না থাকলে যে কেউ চাইলেও গুগল প্লে স্টোর থেকে অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
ফাইন্ড মাই ডিভাইসের মাধ্যমে যে কেউ চাইলেই দূর থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তার স্মার্টফোন লক, সাইন আউট, এমনকি যাবতীয় ব্যক্তিগত তথ্য মুছে ফেলতে পারবেন। এছাড়া এই অ্যাপ্লিকেশনটির মাধ্যমে অ্যালার্ম এবং সতর্কবার্তাও প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। এমনকি ইন্টারনেটে যুক্ত থাকলে চুরি যাওয়া স্মার্টফোনের অবস্থান জানার ব্যবস্থা থাকছে ফাইন্ড মাই ডিভাইসের মাধ্যমে।
অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের সেটিংস → গুগল সিকিউরিটি → ফাইন্ড মাই ডিভাইসে গিয়ে নিরাপত্তাজনিত এই সেটিংসটি চালু করা যায়। স্মার্টফোনের পাশাপাশি গুগলের ওয়েব পেজ থেকে এই অ্যাপটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
সারবেরাস
ফাইন্ড মাই ডিভাইসের পরেই সারবেরাস হচ্ছে অন্যতম কার্যকরী চুরি প্রতিরোধক একটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ। এই অ্যাপটি ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে, টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে এবং স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে স্মার্টফোনের সুরক্ষা নিশ্চিত করে থাকে।
সারবেরাসের মাধ্যমে চুরি যাওয়া বা হারিয়ে যাওয়া স্মার্টফোনের অবস্থান শনাক্ত করা, লক করা, অ্যালার্ম বাজানো, কলের ইতিহাস জেনে নেওয়া, এমনকি অভ্যন্তরীণ এবং বাড়তি মেমরি কার্ডে রক্ষিত তথ্য ব্যবহারকারী চাইলে মুছে ফেলতে পারবেন। এছাড়া চুরি হয়ে যাওয়া ফোন কেউ ব্যবহার করলে তার ছবি তুলে এই অ্যাপটি মূল আকাউন্টে পাঠিয়ে দিতে সক্ষম। এমনটি এক্ষেত্রে ব্যবহারকারী চাইলে অডিও রেকর্ডিংও তার ক্লাউড আকাউন্টে পেতে পারেন।
অত্যন্ত কার্যকরী এবং ফলপ্রসু এই অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করে নেওয়া যায়। তবে অ্যাপটির সম্পূর্ণ ফিচার উপভোগ করতে চাইলে ব্যবহারকারীকে পকেটের পয়সা খরচ করতে হবে।
এন্টি থেফট অ্যালার্ম
অন্য পাঁচটি প্রচলিত চুরি প্রতিরোধক আপ্লিকেশন থেকে এই অ্যাপটি একটু ভিন্নভাবে কাজ করে। স্মার্টফোন চুরি কিংবা হারিয়ে যাওয়ার পরে এই অ্যাপটি কোনো কাজে না আসলেও চুরির সময়ে এটি বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
ধরুন, আপনি জরুরি প্রয়োজনে কোথাও আপনার স্মার্টফোনটি চার্জে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে আপনি ব্যতীত অন্য কেউ ফোনটি চার্জ থেকে তুলে নিলে অ্যাপটি বেশ জোরেই অ্যালার্ম বাজাবে। এমন বেশ কিছু পরিস্থিতিতে এই অ্যাপটি অত্যন্ত কার্যকরী। ব্যবহারকারীর স্মার্টফোন হঠাৎ চুরি হলে বা পকেট থেকে পড়ে গেলে এই অ্যাপটির মাধ্যমে অ্যালার্ম পাওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে চোর যদি ফোনটি সাইলেন্ট মোডে নিয়ে যায় বা সিমকার্ডটি পরিবর্তন করেও ফেলে, তৎক্ষণাৎ এই অ্যাপটির মাধ্যমে অ্যালার্ম পাওয়া সম্ভব। আগে থেকে দেওয়া পাসওয়ার্ড ব্যতীত এই অ্যালার্ম বন্ধ করা বেশ দুরুহ।
সম্পূর্ণ বিনামূল্যের এই অ্যান্ড্রয়েড এপ্লিকেশনটি গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যায়।
অ্যাভাস্ট মোবাইল সিকিউরিটি
অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের সম্পূর্ণ সুরক্ষার জন্য অ্যাভাস্ট মোবাইল সিকিউরিটি অত্যন্ত কার্যকরী একটি অ্যাপ। তবে আজকের আলোচনা যেহেতু চুরি প্রতিরোধক অ্যাপ নিয়ে সেহেতু অ্যাভাস্ট মোবাইল সিকিউরিটির চুরি বা নিয়ন্ত্রণজনিত ফিচার নিয়েই আলোচনা করা হচ্ছে।
অন্যান্য চুরি প্রতিরোধক আপ্লিকেশনের মতোই অ্যাভাস্ট মোবাইল সিকিউরিটিতে যাবতীয় সব ফিচার দেওয়া রয়েছে। অ্যালার্ম, ম্যাপ, দূর নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও এই অ্যাপটির বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ফিচার রয়েছে।
এই অ্যাপটি থেকে চুরি যাওয়া বা হারিয়ে যাওয়া স্মার্টফোন থেকে রিমোট কলের অপশন রয়েছে। ফলে এক্ষেত্রে চোরের অজ্ঞাতসারেই আসল মালিক কল প্রদানের মাধ্যমে যাবতীয় তথ্য পেতে পারেন। এছাড়া হারিয়ে যাওয়া বা চুরি যাওয়া স্মার্টফোনের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য পাওয়া সম্ভব। ব্যাটারির বর্তমান অবস্থা, কেউ স্মার্টফোনটি ব্যবহার করছে কি না, কেউ স্মার্টফোনটি চার্জ করছে কি না এরকম যাবতীয় তথ্য থেকে যে কেউ সহজে তার চুরি হয়ে যাওয়া বা হারিয়ে যাওয়া স্মার্টফোনটি এই অ্যাপটির সাহায্যে ফিরে পেতে পারেন।
অ্যাভাস্ট মোবাইল সিকিউরিটির ভাইরাস প্রোটেকশন ফিচারটি বিনামূল্যের হলেও চুরি প্রতিরোধ ফিচার উপভোগ করতে চাইলে ব্যবহারকারীকে অবশ্যই সাবস্ক্রিপশন ফি প্রদান করতে হবে। অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যায়।
অ্যাপস লক
অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় এই অ্যাপটি চুরি বা হারানো পরবর্তী পদক্ষেপে খুব একটা কার্যকরী ভূমিকা না রাখতে পারলেও ব্যবহারকারীর ব্যবহৃত অন্যান্য অ্যাপ এবং ব্যক্তিগত তথ্যকে নিরাপদ রাখতে অত্যন্ত ফলপ্রসূ। এছাড়া, ভিডিও কন্টেন্ট, ব্যক্তিগত ছবিসহ স্মার্টফোনের যাবতীয় তথ্যাদি পাসওয়ার্ডের/ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে এই আন্ড্রয়েড অ্যাপটি লুকিয়ে রাখতে পারে। ফলশ্রুতিতে মোবাইল ফোন চুরি হলে বা হারিয়ে গেলে অত্যন্ত ব্যক্তিগত কোন তথ্য বেহাত হবার সম্ভাবনা বেশ সীমিত থাকে।
দরকারি এই অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোর থেকে নামিয়ে নেওয়া যায়।
প্রে
ক্রস-প্লাটফর্ম এই কাজের অ্যাপটি শুধু স্মার্টফোনের সুরক্ষা নয়, বরং ল্যাপটপ, ট্যাবলেট এবং পিসির সুরক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
প্রে অ্যাপটিতে ব্যবহারকারীর বসবাসের একটি এলাকা আগে থেকেই নির্ধারণ করে দিতে হয়। এক্ষেত্রে স্মার্টফোন চুরি হয়ে নির্ধারিত এলাকার বাইরে গেলে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রিমোট লক এমনকি সেলফি ক্যামেরার সাহায্যে ছবি তুলে নেওয়া সম্ভব। অ্যাপটির সাধারণ ফিচারগুলো বিনামূল্যের হলেও সব ধরনের ফিচার উপভোগ করতে চাইলে ব্যবহারকারীকে অবশ্যই অ্যাপটি কিনে নিতে হবে। উল্লেখ্য, ক্রস-প্লাটফর্মের এই অ্যাপটি ব্যবহার করতে চাইলে জিপিএস চালু রাখা প্রয়োজন।
অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যায়।
হয়্যার’স মাই ড্রয়েড
কাজের এই অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটির বিনামূল্যের সংস্করণের পাশাপাশি দুই ধরনের সাবস্ক্রিপশনের ব্যবস্থা রয়েছে। বিনামূল্যের সংস্করণে ডিভাইস শনাক্তকরণ, রিং বাজানো, পাসওয়ার্ড নিরাপত্তা, সিমকার্ড পরিবর্তন মেসেজের মতো ফিচারগুলো পাওয়া গেলেও ছবি নেওয়া, লক এবং রিসেটের মতো ফিচারগুলো উপভোগ করতে চাইলে ‘প্রো’ সংস্করণ ব্যবহার করতে হবে।
অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোর থেকে নামিয়ে নেওয়া সম্ভব।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় অঞ্চলগুলোতে স্মার্টফোন প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবহারকারীদের কথা চিন্তা করে ক্ষেত্রবিশেষে এই ধরনের সুরক্ষা অ্যাপ আগে থেকেই দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বিশেষ করে স্যামসাং এবং হুয়াওয়ের কথা বলা যেতে পারে। আবার ভেরাইজন, এটিএন্ডটি, টি-মোবাইল এবং স্প্রিন্টের মতো নামিদামি মার্কিন অপারেটরগুলো তাদের গ্রাহকদের কথা চিন্তা করে এই ধরনের সেবা প্রদান করে থাকে। তবে এক্ষেত্রে গ্রাহকদের নির্দিষ্ট পরিমাণে সাবস্ক্রিবশন ফি দিতে হয়। তবে আমাদের দেশ এবং ভারতীয় অঞ্চলে এই ধরনের সেবা এখনও চালু হয়নি। কাজেই, স্মার্টফোন চুরি কিংবা খোয়া যাওয়ার পরবর্তী পদক্ষেপ সহজতর করার জন্য এই ধরনের এক বা একাধিক অ্যাপ ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ। এই অ্যাপগুলোর ব্যবহার হারানো বা চুরি হয়ে যাওয়া স্মার্টফোন ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা কয়েকগুন বাড়িয়ে দিতে পারে।
অ্যান্ড্রয়েড নিয়ে আরও জানতে পড়ুন এই বইটি