আকাশচুম্বী টাওয়ার থেকে শুরু করে ব্রিজ পর্যন্ত বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন আইকনিক কাঠামোগুলো বিল্ডিং ইনফরমেশন মডেলিং (বিআইএম) ব্যবহার করে নকশা করা হচ্ছে এবং এভাবেই নির্মিত হচ্ছে। স্থাপত্যশিল্পের এই আধুনিকায়নে ব্যবসায়ী এবং বিনোয়োগকারীরা নিত্য-নতুন ধারায় নির্মাণকৌশল, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জপূর্ণ স্থাপনা, নান্দনিক নকশায় ভবন কাঠামো, দ্রুততম সময়ে প্রজেক্ট ডেলিভারি এবং পাওয়ারফুল সল্যুশানের নির্মাণ ব্যবস্থাপনায় জোর দিচ্ছেন। গ্লোবাল ট্রেন্ডের এমন সব ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক চাহিদাসম্পন্ন বিল্ডিং প্রজেক্টের সময়োপযোগী সমাধানই হলো বিআইএম মডেল, যার হাত ধরেই আমরা আজকের কনস্ট্রাকশন দুনিয়ায় নতুন-নতুন উদ্ভাবন সহ প্রযুক্তির নানা উৎকর্ষতায় আকাশ ছুঁয়ে যাওয়া বিভিন্ন আইকনিক কাঠামোগুলো দেখতে পাই।
বিআইএম সময় ও ব্যয়কে সহজ করে এবং স্কাইস্ক্র্যাপার, হাসপাতাল, অফিস ও আবাসিক ভবনসহ নানা রকম কাঠামোর প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন ও উন্নতির নিমিত্তে জনবল ও প্রযুক্তিকে একই সুতোয় গেঁথেছে। বিআইএম কী, কীভাবে ব্যবহৃত হয়, কী করতে পারে, এর মাধ্যমে ফাস্ট কনস্ট্রাকশন ও ডিজিটালাইজেশনের নতুন দুনিয়া আবিষ্কারে চলুন পড়ে নেওয়া যাক হাল-আমলের স্থাপত্যকলার এই বিস্ময়কে!
বিআইএম মডেলে নির্মিত সাংহাই টাওয়ার চীনের উদীয়মান অর্থনীতির একটি চিত্তাকর্ষক আইকন বলা চলে। ১২৮ তলা এবং ৬৩২ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট এই টাওয়ারটি বিশ্বের উচ্চতম টাওয়ার কাঠামোতে দ্বিতীয় স্থানে, যেখানে দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা ৮২৮ মিটার উচ্চতা নিয়ে প্রথম স্থানে আছে।
এই প্রযুক্তিকে বলা যায় নির্মাণশিল্পের বর্তমান তারকা খেলোয়াড়। প্রযুক্তিটি প্রায় এক দশক ধরে থাকলেও গত কয়েক বছর ধরে মাঠে বিআইএমকে নিয়ে প্রচুর আলোচনা চলছে। বিশ্বের কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রিতে এটি এখন গেম চেঞ্জারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে সময়কে জয় করে চলেছে। পূর্বে যেখানে কনস্ট্রাকশন কাজের প্রক্রিয়া জটিল ব্যবস্থাপনা, সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল ব্যাপার ছিল, তা এখন রিয়েল টাইম ডেটা প্রসেসিং এবং কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অতি দ্রুতই প্রজেক্ট ডেলিভারি করা সম্ভবপর হয়ে উঠছে। ফলে উন্নত দেশগুলো তো বটেই, বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশগুলোও বিআইএম প্রযুক্তিতে আগ্রহী হয়ে উঠছে।
এশিয়ার উন্নয়নশীল বিভিন্ন দেশ বিআইএম মডেলে নিমার্ণকৌশল গ্রহণ শুরু করেছে এবং ইতোমধ্যে প্রগতিশীল পদক্ষেপের মাধ্যমে ডিজিটাল নির্মাণ প্রক্রিয়ায় উন্নীত হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য সক্রিয়ভাবে বিআইএম মডেলের ধারণা ও স্ট্যার্ন্ডাড বিকাশ করে চলেছে। এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্য নির্মাণশিল্প তার নিজস্ব ডিজিটাল বিপ্লবে চলছে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, চীন, নরওয়ে এবং ফিনল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশও এখন বিআইএম মডেলের কনস্ট্রাকশন এবং বিল্ডিং কমপ্লায়েন্সের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নে মনোযোগী হয়ে উঠছে।
বিআইএম কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বিআইএম-এর মাধ্যমে আর্কিটেক্ট, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এবং ঠিকাদারসহ নির্মাণ পেশাদারদের প্রত্যেকে স্বাধীন কার্যপদ্ধতি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুবিধায় ত্রিমাত্রিক মডেলের একক সুসঙ্গত ব্যবস্থায় যেকোনো বিল্ডিং ডিজাইনিং, প্ল্যানিং এবং অপারেটিং প্রক্রিয়াকে সমন্বয় করে থাকেন। ফলে প্রকল্পের ব্যয় নিরূপণসহ নির্মাণে ভুল কম হওয়া, অপচয় কমানো এবং সময় সাশ্রয় করা যায়।
একটি প্রকল্পে, একই সূত্রে, সহযোগী উপায়ে- প্রজেক্টের উন্নয়নে সবাই নিজ দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারেন। যে কারণে স্থপতি থেকে শুরু করে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, ঠিকাদার এবং মালিকপক্ষ- সবার কাছেই সমানভাবে এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। জাতিসংঘের মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যা হবে ৯.৭ বিলিয়ন। বিশ্বব্যাপী আর্কিটেকচার, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কনস্ট্রাকশন শিল্পকে অবশ্যই বিশ্বব্যাপী চাহিদা বজায় রাখার উপায় হিসেবে আরও চৌকস এবং আরও উদ্দীপন পরিবর্ধন সাধনের জন্য নকশাকরণ ও নির্মাণের আরও কার্যকর উপায়গুলোর দিকে নজর দিতে হবে।
বিআইএম নকশা এবং নির্মাণ দলগুলোকে আরও দক্ষতায় কাজ করার সুবিধার সাথে সাথে নির্মাণ প্রক্রিয়া চলাকালে তাদের ডেটা পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণমূলক ক্রিয়াকলাপের পরিধি এবং সহায়তামূলক আন্তঃসংযোগ বাড়াতে হবে, যার আপাত সমাধান বিআইএম মডেলেই পাওয়া যাচ্ছে। ভবিষ্যতের দিনগুলোতে আমরা হয়তো আরো উন্নত এবং সমৃদ্ধ প্রযুক্তির মডেলে নির্মাণশিল্পের চমৎকার ও চোখ ধাঁধানো স্থাপনার যুগোপযোগী সমাধান দেখতে পাব।
বিআইএম কী?
এতক্ষণে নিশ্চয়ই বিআইএম এবং এর কার্যপরিধি নিয়ে কিছুটা হলেও ধারণা পাওয়া গেছে। তারপরেও সাধারণভাবে বলতে গেলে, বিআইএম হলো কন্সট্রাকশন শিল্পের জন্য ডিজিটাল কাজের পদ্ধতি, যা বিল্ডিং প্রজেক্টের পুরো ব্যবস্থাকে একটি সাধারণ নেটওয়ার্কের আওতায় পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এটি দিয়ে ডিজাইনাররা ডিজিটাল ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরি করেন, যার সাথে প্রকল্পের যাবতীয় হালনাগাদ তথ্য সংযুক্ত থাকে এবং বিল্ডিং প্রজেক্টের স্ট্রাকচার ও ফাংশনাল বৈশিষ্ট্য একই সূত্রে ব্যবস্থাপনা এবং নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
বিআইএম ডিজাইনিং, ভিজ্যুয়ালাইজিং, সিমুলেশন এবং বিশ্লেষণে সহায়তা করে। সমস্ত কিছু (পরিকল্পনা, নকশা, বিল্ড, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ) এক মডেল থেকে চালানো যায় এবং নজরদারিও করা যায়। বিআইএম প্রযুক্তির সাহায্যে একটি বিল্ডিংয়ের এক বা একাধিক নির্ভুল ভার্চুয়াল মডেল ডিজিটালভাবে নির্মিত হয়। এটি স্থপতি, প্রকৌশলী এবং অন্যান্য প্রকল্পের অংশগ্রহণকারীদের সাথে উন্নত যোগাযোগ ও সমন্বয় নিশ্চিত করে থাকে।
বিআইএম কীভাবে কাজ করে?
বিআইএম মানে তথ্য ব্যবহারের অটোমেশন। ক্যাড এবং মাইক্রোসফট প্রজেক্ট যখন আসে, তখন থেকেই তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করত। আমাদের চারপাশের প্রযুক্তিগুলো আমাদের জীবনযাত্রার, কাজ করার, গেমিং এবং যোগাযোগের পদ্ধতিতে বিপ্লব ঘটাচ্ছে। এটি এত দ্রুততার ঘটে যাচ্ছে যে হাল-আমলের ইন্টারনেট, ইন্টারনেট অফ থিংস, স্মার্ট ফোন এবং ওয়্যারলেস ডেটার আগে এই ব্যবস্থার স্বরূপ এমনটা সহজবোধ্য ছিল না। বিআইএম পূর্বেকার ক্যাড, মাইক্রোসফট প্রজেক্ট এবং অন্যান্য আরো আনুষঙ্গিক সফটওয়্যারের চেয়ে অনেক উন্নত কর্মপরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনা করে থাকে। এটি প্রচুর তথ্য নিয়ে কাজ করে এবং সেজন্য ত্রিমাত্রিক মডেলের মাধ্যমে নির্ভুলতা এবং সঠিকতা যাচাইকরণ প্রক্রিয়ায় বাস্তবে অন্যান্য পর্যায়গুলোর সাথেও সামঞ্জস্য বজায় রেখে প্রকল্পের কর্মপ্রবাহ চালু রাখে। যেকোনো প্রকল্পে কাজ শুরু করার পূর্বেই প্রয়োজনীয় তথ্য সম্পাদনা করে, আরো উন্নত ডিজাইন এবং অতি দ্রুতই রিয়েলিস্টিক ভিজ্যুয়ালাইজেশনের মাধ্যমে ক্লায়েন্টকে ধারণা দেয়া যায়।
বিআইএম স্থপতি এবং প্রকৌশলীদেরকে একসাথে বিশ্বের যেকোনো জায়গা থেকে এক প্রকল্পে রিয়েল টাইম ডেটার ভিত্তিতে কাজ করতে সক্ষম করে তোলে। এই প্রযুক্তিতে সংরক্ষিত তথ্যগুলো মডেলের মধ্যে ডিজাইনের বিভিন্ন উপাদানগুলোর প্রকৃতি ও ধরন অনুযায়ী ডিজাইনের সাথে সম্পৃক্ত অন্য উপকরণের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে। ফলস্বরূপ, যখন কোনো উপাদানের পরিবর্তন হয়, তখনই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিজাইনের পুরো ভিউ আপডেট হয়ে যায়। সর্বোপরি, ডিজিটাল ডিজাইনের সরঞ্জামগুলোতে অগ্রগতি, আন্তঃসংযোগ এবং কম্পিউটার-নিয়ন্ত্রিত নকশার প্রতিটি স্তরকে একই সেন্ট্রালাইজের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা করা হয়ে থাকে। বলা যায়, এটি স্থপতি, প্রকৌশলী এবং ঠিকাদারকে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার আওতায় সব পক্ষকেই তাদের বিশেষত্ব এবং দক্ষতার জায়গা থেকে সহযোগী উপায়ে কাজ করতে সক্ষম করে তুলেছে।
দ্বিমাত্রিক চিত্র থেকে বিআইএম পর্যন্ত
অতীতে একটি নির্দিষ্ট বিল্ডিং ডিজাইন এবং পরিকল্পনা সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশের জন্য ব্লুপ্রিন্ট এবং ড্রয়িং ব্যবহৃত হতো। দ্বিমাত্রিক ড্রয়িংগুলো থেকে ডিজাইনের শুধুমাত্র মাপজোখের তথ্যই পাওয়া যেত। এই দ্বিমাত্রিক পদ্ধতিতে ড্রয়িং ভিজ্যুয়ালাইজ করার বাড়তি মাত্রা এবং প্রয়োজনীয়তাগুলো পূরণ হতো না । এরপরে কম্পিউটার এইডেড ডিজাইন বা ক্যাড এসেছিল, যা ড্রাফটসম্যানদের ডিজিটাল পরিবেশে ত্রিমাত্রিক পরিকল্পনার সুবিধা তৈরি করে।
পরে ক্যাড ত্রিমাত্রিক ব্যবস্থায় পরিণত হয়, যা ড্রয়িংগুলোতে আরও বাস্তবসম্মত ভিজ্যুয়াল নিয়ে আসে, যা থেকে নিমার্ণের পূর্বে একটি স্থাপনা দৃশ্যত কেমন হবে, তার বাস্তবিক একটা ধারণা পাওয়া যায়। বর্তমানে বিআইএম মডেলের ধারণা এবং স্ট্যান্ডার্ডের বিকাশ চলেছে। তবে এটি কেবল একটি ত্রিমাত্রিক মডেলের ডিজাইন এবং পরিকল্পনা সম্পর্কিত ভিজ্যুয়ালাইশনই নয়, বরং তার চেয়েও বেশি কিছু।
বিআইএম আপনাকে কীভাবে সহায়তা করতে পারে?
বিআইএম একটি ভবনের প্রতিটি অংশ এবং উপাংশের সমস্ত তথ্য এক জায়গায় নিয়ে আসে। এটি বিল্ডিং প্রজেক্টের প্রত্যেক দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির জন্য যোগাযোগ ও সমন্বয়ের উদ্দেশ্যে তথ্যের সহজলভ্যতা এবং প্রবেশাধিকার সম্ভব করে তোলে, যার ফলে প্রত্যেকে তার পেশাগত ভূমিকা অনুযায়ী দক্ষতার সেরাটুকু দিয়ে প্রজেক্ট সফল করতে পারে। ডিজাইনের বিভিন্ন দিককে আরও কার্যকরভাবে সুসংহত করতে অপারেশনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নির্মাণের যেকোনো ত্রুটি এবং মিলিমিটার মাপের বিচ্যুতি ঘটলেও স্ট্রাকচারে থাকা সেন্সরগুলোর ব্যবহার এবং এপিআই-এর নিয়ন্ত্রণের সাথে মডেলে ডেটা যুক্ত করে সমাধান বাতলে দেবে। এভাবে আমাদের পুরোনো নির্মাণ পদ্ধতির সীমাবদ্ধতাগুলোকে দূর করে, ভুল বা ত্রুটিপূর্ণ সমস্যা লাঘব করার পাশাপাশি ঝুঁকি হ্রাস করা এবং অনাকাঙ্ক্ষিত প্রকল্প ব্যয় কমানো যায়। ফলে আমরা সময়মতো এবং নির্ধারিত বাজেটে আমাদের কাঙ্ক্ষিত প্রজেক্ট ডেলিভারিতে পূর্বের ন্যায় তেমন কোনো বেগ পেতে হয় না।
নির্মাণ সাইট ডিজিটালাইজিং
ভবিষ্যতের নির্মাণ কার্যক্রম নকশা পর্যায় থেকে বিল্ডিং প্রজেক্টের কনস্ট্রাকশন পর্যায়ে হ্যান্ডওভার এবং নির্মাণ পরবর্তী সাইট তদারকি, নিয়ন্ত্রণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সহযোগী সাপোর্টসহ একইসূত্রে কাজ করবে। নির্মাণ দলগুলো প্রথম থেকেই পরিকল্পনাগত ইস্যুতে জড়িত থাকবে এবং সব পক্ষই পেশাগত ভূমিকা অনুযায়ী তথ্য পরিচালনা এবং সম্পাদনাসহ প্রবেশাধিকারের অনুমতি থাকবে। তথ্যগুলো ড্রয়িং পেপার থেকে মাঠে দ্রুত সরবরাহ এবং বাস্তবায়িত হবে, নির্মাণ সংশ্লিষ্ট দলগুলো কম সময়ে আরও বেশি আউটপুট দিতে সক্ষম হবে।
অবাধ তথ্য শেয়ার, সাইটের রিপোর্টিং, ইন্সট্যান্ট ম্যাসেজিংয়ের জন্য আর অন্য কোনো অ্যাপ্লিকেশন বা সফটওয়্যারগুলোর মধ্যে ডেটা স্থানান্তর করতে হবে না, যা বর্তমানে তথ্যবিভ্রাটসহ নির্মাণ কার্যক্রমে কমিউনিকেশান গ্যাপ তৈরি করছে। কার্যক্ষম ডেটা দিয়ে রিয়েল-টাইম অপারশনের মাধ্যমে সাইট পরিচালনা, মাস্টার শিডিউলিং এবং কন্সট্রাকশন পরিকল্পনার যাবতীয় সাধারণ তথ্যের অ্যাভেইলিবিলিটি বিআইএম-এর কেন্দ্রীয় মডেলটি তৈরি করবে ।
বিআইএম ক্লাউড বেসড ডেটা সংরক্ষণ করে
পরিকল্পনা পর্যায় থেকে বিল্ডিং অপারেশন এবং মেইনটেন্যান্স পর্যন্ত পুরো প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত টিমের প্রত্যেক সদস্য তার ভূমিকা অনুযায়ী ক্লাউডে সংরক্ষিত এবং কেন্দ্রীভূত তথ্যে প্রবেশাধিকারের অনুমতি থাকবে। দলগত এবং স্বতন্ত্র উভয় কাজই এই কেন্দ্রীয় মডেলটিতে সঞ্চালিত হবে, যা রিয়েল ডেটার একক উৎস হিসেবে কাজ করে। এটি কাজের গুণমান এবং গতি বজায় রাখতে এবং শেষ পর্যন্ত একই ধারায় বিল্ডিং প্রজেক্ট রক্ষণাবেক্ষণ করতে সহায়তা করবে। বিল্ডিং প্রজেক্টের দলের প্রত্যেক সদস্য যখন একটি সাধারণ ডেটা পরিবেশে একত্র হয়, বিআইএম মডেলটির ক্লাউড সহযোগিতায় সংরক্ষিত তথ্যের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে প্রকল্প সমন্বয় আরো সহজ ও অনায়াসে নিয়ন্ত্রণ সম্ভবপর হয়ে ওঠে।
বিআইএম মডেলের উল্লেখ করার মতো কিছু ফিচারে চলুন চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক:
১) টিম প্রশাসক এবং ম্যানেজমেন্টসহ বিল্ডিং প্রজেক্টের প্রতিটি টিমের সদস্য রিয়েল টাইম ডেটা এবং ডেটাবেসগুলোর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের আওতায় কাজ করে থাকে।
২) বিল্ডিং প্রজেক্টেটিতে কোনো দলের সদস্য আমন্ত্রিত থাকলে বা অনুমিত হলে কেন্দ্রীয় মডেলটি দেখতে, প্রবেশ করতে এবং সম্পাদনা করতে পারবে, অন্যথায় নয়।
৩) যেকোনো দলের সদস্য যেকোনো সময় কোনো ডিভাইস, ফাইল এক্সটেনশন এবং ওএস-অজোনস্টিক প্ল্যাটফর্মের অনুমতিপ্রাপ্ত প্রকল্পের তথ্যে প্রবেশ করতে পারবে ।
৪) মডেলের ওয়ার্কিং ক্ল্যাশ তাত্ক্ষণিকভাবে চিহ্নিত করা যাবে এবং স্মার্ট সম্পাদনা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে সহজেই সংশোধন করা হবে।
৫) পরিবর্তনগুলো সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব হবে এবং মডেলজুড়ে অভিন্ন প্রয়োগ নিশ্চিত করার জন্য সংস্করণগুলোর মধ্যে তুলনা করা যাবে এবং পুনরায় কাজটি কম সময়ে করা যাবে।
৬) নির্মাণ ঠিকাদার কোনো নির্দিষ্ট প্রকল্পের আপডেট দেখতে এবং সহজেই ডেটাবেজগুলোর সাইটটিতে কেন্দ্রীয় মডেল থেকে মোবাইল ডিভাইসে ডেটা ডাউনলোড করতে সক্ষম হবে।
৭) অপারেশন শুরু এবং শেষ পর্যন্ত কাঠামোগত যেকোনো ত্রুটি পাওয়ার সাথে সাথে স্ট্রাকচারে ইনস্টলড সেন্সরগুলোর ব্যবহার এবং এপিআই-এর নিয়ন্ত্রণের সাথে মডেল ডেটা যুক্ত করে তাৎক্ষণিক সমাধান বাতলে দেবে।
৮ ) বিল্ডিং প্রজেক্টের যাবতীয় তথ্য সর্বদা ক্লাউডে থাকবে, নতুন ডিজাইনের অভিপ্রায়, রি-ডিজাইন, সংশোধন, ডেটা এবং ব্যবহারকারীর ইনপুটগুলোর সমস্ত হিস্টোরির একই মডেলের সাথে বিল্ডিংয়ের পুরো লাইফ সাইকেল জুড়ে থাকবে ।
প্রকল্প ডেলিভারির ভবিষ্যত এখানে
এই বিআইএম প্রযুক্তির উদ্ভাবনটি কনস্ট্রাকশনে নতুন মাত্রা, অনুসন্ধান, নির্মাণ পদ্ধতি, ডিজিটাল জরিপ সমাধান, ত্রিমাত্রিক মডেলিং সফটওয়্যার, নির্মাণকৌশল এবং ফাইল-শেয়ার করে নেওয়ার মাধ্যমে বিল্ডিং শিল্পকে আরো ত্বরান্বিত করে চলেছে। প্রযুক্তিগতভাবে প্রকল্প ডেলিভারির এই উদ্ভাবনগুলো বিকশিত হচ্ছে প্রতিদিনই, এবং জ্ঞান, নির্মাণ সরঞ্জাম এবং কৌশলগুলোর প্রবেশাধিকারকে গণতান্ত্রিকীকরণ করেছে যা সংশ্লিষ্ট সব পার্টির জন্য এক নতুন দ্বারের সূচনা।
স্থপতি, প্রকৌশলী বা ঠিকাদার হিসেবে সংশ্লিষ্ট সকলে এই পরিবর্তনের যুগে রয়েছে। এই সময়ের প্রকল্পগুলোর জটিল, ইরেগুলার শেপ, বহুমাত্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনা, সময় সীমাবদ্ধতা, প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ, পূর্ণ-মেয়াদী মেইনটেন্যান্স নিশ্চয়তা যা-ই হোক না কেন, বিআইএম মডেলে এসব সমাধানকল্পে নির্মাণ পেশাদারগণ সহ সব মহলের জন্য এক অনন্য সুবিধা বয়ে আনবে। সময়ের আধুনিকতম নির্মাণশিল্পের এই প্রযুক্তিটি খুব দ্রুতই আমাদের প্রচলিত নির্মাণ ভাবনার প্রথা-পদ্ধতিকে নতুন মোড়কদান, ফাস্ট কনস্ট্রাকশন এবং ডিজিটালাইজেশনের নতুন দুনিয়ায় নতুন এক বিস্ময় হিসেবেই হাজির হচ্ছে বলা যায়।