যদি আপনার স্মার্টফোন থেকে থাকে তাহলে এই অভিজ্ঞতাটি আপনার সাথে মিলবে: দৈর্ঘ্যের দিক থেকে যত ছোটই হোক না কেন অবসর সময় পেলেই আপনি ফোনের দিকে মনোযোগ দেন। হয়তো অনলাইনে বন্ধুরা কে কী আপডেট করেছে তা দেখার আগ্রহ অথবা কোনো গেমের অসমাপ্ত লেভেল সম্পন্ন করার তাগিদ অনুভব করেই এই কাজটি করেন। দিনের মধ্যে অনেকবারই ব্যাপারটি ঘটে থাকে। এর পেছনে একটা বড় কারণ রয়েছে। স্মার্টফোন অ্যাপগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যেন তা প্রতিনিয়ত আপনার মনোযোগ কাড়তে সমর্থ হয়। এই উদ্দেশ্য পূরণার্থে বিভিন্ন অ্যাপ বিভিন্ন রকম চাতুরির আশ্রয় নেয়।
স্মার্টফোন ব্যবহার অবসর কাটানোর অন্যান্য মাধ্যম থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানের কনটেন্টগুলো আমাদের নিজেদের পছন্দমত নির্বাচন করা যায়। যেমন: টেলিভিশনের যে কনটেন্ট তা নির্মাতারা আমাদের কথা চিন্তা করে তৈরি করে। স্মার্টফোন অ্যাপের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়। কিন্তু এখানে ব্যবহারকারীর কনটেন্ট বাছাই করার স্বাধীনতা অনেক বেশি। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে তাই অ্যাপগুলোকে ব্যবহারকারীর মনোযোগ আকর্ষণ করার সামর্থ্য থাকতে হয়। কিছু কিছু অ্যাপ ডেভেলপারের ব্যবহৃত কৌশল এক্ষেত্রে খুবই সফল হয়েছে। এমনই কিছু কৌশল নিয়ে আলোচনা করা যাক।
টুইটার
স্মার্টফোন অ্যাপগুলোর সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত কৌশলটি প্রযুক্তিবিদদের দ্বারা উদ্ভাবিত হয়নি। ক্যাসিনোগুলোতে প্রায়ই এই কৌশল ব্যবহার করতে দেখা যায়। কোনো একটি কাজের পুরষ্কার দেওয়ার সময় নিয়ে কৌশলটি গড়ে ওঠে। যেমন: প্রতিবারই যখন কেউ স্লট মেশিনের লিভার টেনে ধরে সে বিশাল কোনো প্রতিদান পায় অথবা ছোট কোনো পুরষ্কার নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। কিন্তু বেশিরভাগ সময়েই কোনো পুরষ্কারের দেখা মেলে না। এই কৌশলটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ভ্যারিয়েবল রেশিও স্কেজুল’।
টুইটার অ্যাপে ব্যবহারকারী যখন আঙুল চেপে নিচের দিকে টেনে ধরেন এরকমই একটি প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। একটা ঘুরন্ত চাকা ভেসে উঠে যা নির্দেশ করে যে অ্যাপ আরো কনটেন্ট প্রদর্শনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ব্যবহারকারী জানেন না তিনি কী দেখতে চলেছেন, কিন্তু আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করেন নতুন কোনো পোস্ট, যা তাকে তুষ্ট করবে, ঠিক স্লট মেশিনের পুরষ্কারের মতোই।
টুইটার এই কৌশলকে আরো সূক্ষ্মভাবেও ব্যবহার করে থাকে। যখনই টুইটার অ্যাপটিতে প্রবেশ করা হয়, পুরো পর্দা এক মুহূর্তের জন্য নীল হয়ে থাকে। এরপরে সাদা রঙের পাখিটিকে স্পন্দন করতে দেখা যায়। খানিক পরেই পাখিটি দীর্ঘায়িত হয়ে হোম পেজটি অনাবৃত করে। এই কয়েক মুহূর্তই হচ্ছে স্লট মেশিনের মতো প্রলুব্ধকর সময়। ব্যবহারকারীকে তার পছন্দের টুইটের আশায় উদগ্রীব করে তোলে এই ছোট সময়ের অপেক্ষাটি। তাই বারবার অ্যাপে তার প্রবেশ ঘটে। টুইটারের মতো ফেসবুকও এই কৌশলটি ব্যবহার করে থাকে।
ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রাম
ফেসবুক প্রায় সবসময়েই ফ্রি অ্যাপের তালিকায় প্রথম পাঁচের মধ্যে অবস্থান করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ব্যবহৃত অ্যাপও এই ফেসবুক। ব্যবহারকারীর মনোযোগ আকর্ষণ করতে ফেসবুকের নিজস্ব কিছু কৌশল রয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে অন্য কোনো অ্যাপে লগইন করার মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক ব্যবহার করা। ডাউনলোড করা সবগুলো অ্যাপের জন্যে আলাদা আলাদা ইউজারনেম আর পাসওয়ার্ড তৈরির চেয়ে ফেসবুক আইডি ব্যবহার করা অনেক সহজ এবং ব্যবহারকারীও তাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এভাবে ফেসবুক অ্যাপও বারবার ব্যবহার করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়গুলোতে ফেসবুক অনেকটাই লগবুকের মতো হয়ে যাচ্ছে। এর মেমোরি ফিচারটির কল্যাণে একই দিনে বিগত বছরগুলো কেমন কেটেছিল তার একটা ধারণা পাওয়া যায়। ফেসবুক মেমোরি ক্যাটালগে বিগত বছরগুলোর পোস্ট, ছবি, ফ্রেন্ডশিপ ইত্যাদি সবকিছুই দেখায়। বিশেষত যারা অনেক বছর ধরে ফেসবুক ব্যবহার করে আসছে তাদের জন্যে এই ছবি ও পোস্টগুলো আবেগের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। মানুষের স্মৃতিবেদনাকে উদ্দেশ্য করে তৈরি করা এই ফিচারটিকে ফেসবুকের অন্যতম কৌশলই বলা চলে।
স্ন্যাপচ্যাট থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করা ফিচার ‘স্টোরি’ ফেসবুকের আরেকটি কৌশল। ২০১৬ সালে ইন্সটাগ্রামে এই ফিচারটি পরিচিত করার এক বছরের মাথায় তা স্ন্যাপচ্যাটকে পেছনে ফেলেছিল। ইন্সটাগ্রাম স্টোরিতে মজাদার ফিল্টার, অ্যানিমেশন ও স্টিকার সংযুক্ত হয় যা লোকেশন ও তাপমাত্রা অনুযায়ী পরিবর্তন করা যায়। তাছাড়া ইন্সটাগ্রাম যেভাবে ব্যবহারকারীকে অন্যের স্টোরি দেখতে প্রণোদিত করে তা অনেকেরই আসক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অ্যাপে প্রবেশের পরে প্রথমেই যে ফিচারটি চোখে পড়ে তা হচ্ছে স্টোরি, কারণ এটাকে পেজের একেবারে প্রথমে রাখা হয়েছে। আবার স্ক্রল করার মাঝেও এই স্টোরির অনুপ্রবেশ ঘটে।
যখন ব্যবহারকারী একজনের স্টোরি দেখতে যায় অ্যাপ ইন্টারফেস স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তাকে পরবর্তী আরেকজনের স্টোরিতে নিয়ে যায়। এভাবেও একধরনের আসক্তি তৈরি হয়। তাছাড়া ইন্সটাগ্রামের স্টোরি থেকে অনবরত নোটিফিকেশনের ব্যাপার তো রয়েছেই। ফেসবুক অ্যাপের স্টোরি ফিচারটির বৈশিষ্ট্যও প্রায় একইরকম। এরকম বিভিন্ন উপায়েই ফেসবুক এখন শুধুমাত্র একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ছাপিয়ে সামাজিক জীবনযাপনেরই একটি উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ডুয়োলিংগো
ডুয়োলিংগো অ্যাপ স্টোরের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভাষা শেখার অ্যাপ। অ্যাপটি বিভিন্ন গেমের তৈরি করা সফল কিছু কৌশল অনুসরণ করে। ভাষা শেখার কোর্স শুরু করার পরে ব্যবহারকারীকে একটা গোল নির্বাচন করতে হয়। অ্যাপটি তখন নিয়মিতভাবেই ব্যবহারকারীর গতিবিধি নজর রাখে আর গোল থেকে দূরত্বের আপডেট দেয়। আবার পরপর একটা নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত যদি অ্যাপটি ব্যবহার করা হয় তখন ব্যবহারকারীকে পুরষ্কৃত করে।
অ্যাপ ও গেম বিশ্লেষকরা এই কৌশলকে ‘FOMO effect’ বলে আখ্যায়িত করেছেন, যার পূর্ণরুপ ‘fear of missing out’। যদি অ্যাপের দেওয়া প্রতিদিনের সেশন সম্পূর্ণ না করা হয় তখন ব্যবহারকারী কিছু বিশেষ পুরষ্কার হারাবেন। পুরষ্কার থেকে বঞ্চিত না হওয়ার জন্যেই ব্যবহারকারী প্রতিদিন অ্যাপে প্রবেশ করবেন।
স্ন্যাপচ্যাট
যারা নিয়মিত স্ন্যাপচ্যাট ব্যবহার করেন তারাই শুধুমাত্র ‘স্ন্যাপস্ট্রিকস’ ও তার সামাজিক গুরুত্ব সম্পর্কে বলতে পারবে। এই ‘স্ট্রিক’ শুধুমাত্রই একটি সংখ্যা যা ব্যবহারকারীর সাথে তার কোনো বন্ধু টানা কতদিন ধরে ‘স্ন্যাপ’ আদানপ্রদান করেছে তার হিসাব রাখে। কোনো মানুষের সাথে যদি ২৪ ঘন্টার মধ্যে স্ন্যাপ আদানপ্রদান না করা হয় তখন এই স্ট্রিকটি মুছে যায়। কিশোর বয়সীদের জন্যেই বিশেষত এই স্ট্রিক বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ডুয়োলিংগোর মতো এই স্ট্রিক ধরে রাখতে পারলে স্ন্যাপচ্যাট থেকে কোনো পুরষ্কার দেওয়া হয় না। বেশিরভাগ মানুষের জন্যেই এই স্ট্রিকটি শুধুমাত্রই আস্ফালনের একটা অধিকার হয়ে দাঁড়ায়। অনেকে তো বছরের পর বছর ধরে এই স্ট্রিক রক্ষা করে চলেছে। সত্যিকার অর্থে স্ন্যাপচ্যাট এখানে ‘FOMO effect’ এরই সুবিধা নিচ্ছে।
তবে স্ট্রিকস স্ন্যাপচ্যাটের একমাত্র কৌশল নয়। স্ন্যাপচ্যাটই সামাজিক মাধ্যমগুলোতে তুমুল জনপ্রিয় ‘স্টোরি’ ফিচারের প্রথম নির্মাতা। একইসাথে তারাই প্রথম ফেস ফিল্টার তৈরি করেছিল। এখন তো এই ফিল্টারগুলো দিয়েই ঘন্টার ঘন্টা ব্যবহারকারীদের আসক্ত করে রাখা যায়।
স্ন্যাপচ্যাট ‘রিয়েল ওয়ার্ল্ড বিটমোজি’কেও নিজেদের অ্যাপে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই ফিচার ব্যবহার করে ব্যবহারকারী নিজের কার্টুন ক্যারেকটার দিয়ে বিভিন্ন রকম কাজ করাতে পারেন। আর যেহেতু বিটমোজি ব্যক্তি বিশেষে বিভিন্ন তাই এটা আরো মজাদার হয়ে উঠেছে।
টিন্ডার
টিন্ডার ও একইসাথে বাম্বল, গ্রিন্ডারের মতো ডেটিং অ্যাপগুলো স্লট মেশিনেরই ‘ভ্যারিয়েবল রেশিও স্কেজুল’ পদ্ধতি অনুসরণ করে ব্যবহারকারীদেরকে আটকে রাখে। এই অ্যাপটি ভালোবাসার মানুষ খুঁজে দিতে সাহায্য করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ অ্যাপগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে।
অ্যাপটির ফরম্যাট হচ্ছে, পর্দায় ভেসে আসা মানুষের ছবিকে পছন্দ হলে ডানে সোয়াইপ করতে হবে, আর নাহলে বামে সোয়াইপ করতে হবে। স্লট মেশিনের মতোই ব্যবহারকারী পছন্দের মানুষকে খুঁজে পাওয়ার আশায় বারবার সোয়াইপ করতে থাকেন। এরকম সোয়াইপ করা নেশায় পরিণত হতে পারে ভেবে টিন্ডার ডেভেলপাররা ডানে সোয়াইপ বা ‘লাইকের’ একটি নির্দিষ্ট সীমা দিয়ে রেখেছে। প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক ‘লাইক’ বিনামূল্যে পাওয়া যায়, যা অতিক্রম করতে হলে টিন্ডারকে মূল্য পরিশোধ করতে হবে।
ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার একটি লেখায় টিন্ডারের এই ‘সোয়াইপ’ আসক্তিকে মাদকাসক্তির সাথে তুলনা করা হয়েছে।
মাদকাসক্তদের মস্তিষ্কের উপরে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মাদকের তুলনায় মাদকের জন্যে প্রত্যাশাই ভালো অনুভূতি তৈরি করা ডোপামিন বেশি ক্ষরণ করে। একইভাবে যারা আশা করে থাকে টিন্ডারের পরবর্তী সোয়াইপই তাদের কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে খুঁজে আনবে, তাদের অনবরত সোয়াইপ মাদকের মতো আসক্তি তৈরি করে।
স্পটিফাই
স্পটিফাইয়ের মতো মিউজিক স্ট্রিমিং অ্যাপগুলোর উদ্দেশ্যই হচ্ছে ব্যবহারকারী এখানে অনেক সময় ব্যয় করবেন। কিন্তু ব্যবহারকারীকে এই অ্যাপে ব্যবহারের জন্য ফেরত নিয়ে আসা তাদের আরো গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে পড়ে।
ব্যবহারকারী কী ধরনের মিউজিকে অভ্যস্ত এবং কী ধরনের মিউজিকে বেশি সময় ব্যয় করছেন স্পটিফাই সে ব্যাপার সতর্ক নজরদারি করে। এরপরে সে-ই পছন্দের মিউজিক ও গানগুলো দিয়েই নতুন প্লেলিস্ট তৈরি করে ব্যবহারকারীর কাছে প্রদর্শন করে। অনেক সময় ব্যবহারকারীর নাম দিয়েও এই লিস্ট তৈরি করা হয়, যেমন: ‘Made for [your name]’। এভাবে নিজের জন্যে স্বকীয়ভাবে তৈরি এমন একটা অনুভূতি দেয়। এই কৌশলটি অবশ্য ব্যবহারকারীর জন্যেও বেশ উপকারী কারণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হওয়া প্লেলিস্টগুলো তার পছন্দের গান দিয়ে পূর্ণ থাকে। স্পটিফাইয়ের জন্যও এটি বেশ লাভজনক কারণ তাকে ব্যবহারকারীর থেকে প্রতিমাসের সাবস্ক্রিপশন ফি আদায় করতে হয়।
হুকড
২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে ‘চ্যাট স্টোরি’ নামে একধরনের অ্যাপ বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। হুকড এমনই একটি অ্যাপ। সে বছরেই অ্যাপটি বিটমোজি, ইন্সটাগ্রাম ও স্ন্যাপচ্যাটের মতো অ্যাপকে টপকে অ্যাপল স্টোরের ফ্রি অ্যাপের তালিকায় শীর্ষস্থানটি অর্জন করে।
হুকডের এই তুমুল জনপ্রিয়তার কারণ তার সহজ ইন্টারফেস। কাল্পনিক গল্পকে এটি উপস্থাপন করে টেক্সট মেসেজের আকারে। ফোনের পর্দায় স্পর্শ করলেই গল্পের পরের লাইনটি উপস্থিত হয়। গল্প বলার এই ফরম্যাটটিই বেশ আসক্তি ধরিয়ে দেয়। কিন্তু অ্যাপটি গল্পের খুবই গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এসে বিরতি নেয় এবং একটি টাইমার ধরিয়ে দেয়। ব্যবহারকারীকে হয় অপেক্ষা করতে হবে, নাহলে বিরতি ছাড়া গল্প পড়তে হলে সাবস্ক্রিপশন মূল্য পরিশোধ করতে হবে, যা সপ্তাহে পাঁচ ডলার করে।
দুই কৌশলেই হুকডের লাভ হয়। ব্যবহারকারীরা নির্দিষ্ট সময় পরে তাদের অ্যাপে ফেরত আসেন অথবা অর্থ দিয়ে গল্প পড়া অব্যাহত রাখেন।
ডার্ক প্যাটার্ন
ডার্ক প্যাটার্ন অ্যাপ বা ওয়েব ইন্টারফেসের একধরনের চাতুরি যে কৌশলে ব্যবহারকারীর উপর নির্দিষ্ট কাজের জন্য নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যায়। ২০১০ সালে হ্যারি ব্রিগনাল সর্বপ্রথম এই টার্মটি ব্যবহার করেছিলেন। অনলাইনে বিভিন্ন প্রকারের ডার্ক প্যাটার্ন পাওয়া যায়।
‘বেইট এন্ড সুইচ’ প্যাটার্ন ব্যবহারকারীকে একধরনের নির্দেশনা দিয়ে ভিন্ন আরেক কাজ করিয়ে নেয়। যেমন: কোনো ওয়েবসাইটে হয়তো বিনামূল্যে কোনো পণ্য বা সেবা পাওয়ার বিজ্ঞাপন দেওয়া হলো। বিজ্ঞাপনে ক্লিক করলে দেখা যাবে পণ্যটির স্টক শেষ বা কোনো কারণে আর পাওয়া যাচ্ছে না। সেখানে তখন একইরকম আরেকটা পণ্য কেনার সুপারিশ করা হবে যার দাম তুলনামূলক বেশি অথবা গুণগত মান কম।
আরেকরকম ডার্ক প্যাটার্ন দিয়ে ব্যবহারকারীর মনোযোগ ভিন্নদিকে সরিয়ে নেওয়া হয়। উদাহরণ হিসেবে ‘টু ডটস’ গেমের কথা বলা যেতে পারে। এখানে প্লে বাটন, নতুন লেভেল শুরু করা কিংবা লেভেল রিস্টার্ট ইত্যাদি সবগুলো বাটনই সবুজ রঙ দিয়ে সাজানো হয়েছে। কিন্তু যখনই কেউ একটা লেভেল হেরে যায় সবুজ রঙটি তখন লাইফ কেনার জন্যে মূল্য পরিশোধের বাটন হিসেবে কাজ করে। অনেকেই ভুল করে তখন সবুজ বাটনটি চেপে দেয়। শুধুমাত্র রঙ দিয়েই ব্যবহারকারীকে এভাবে ভুল পেজে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। অনেক সাইটের নিউজলেটার থেকে আনসাবস্ক্রাইব করার অপশনটির রঙ পুরো ই-মেইলের টেক্সটের রঙের সাথে মিশে গিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করে। অপশনটি তখন সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না।
‘রোচ মোটেল’ নামের আরেক ধরনের ডার্ক প্যাটার্ন রয়েছে। এই প্যাটার্নের কৌশল অনুযায়ী, ব্যবহারকারী কোনো একটা পরিস্থিতিতে খুব সহজে প্রবেশ করতে পারেন, কিন্তু সেখান থেকে বের হওয়া অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অনেক অ্যাপ বা সেবার প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন এ ধরনের প্যাটার্ন অনুসরণ করে। একটি বড় উদাহরণ হচ্ছে অ্যামাজন একাউন্ট। এই একাউন্ট মুছে ফেলার সহজ কোনো উপায় নেই। এমনকি মুছে ফেলার অপশনটি খুঁজে পাওয়াও বেশ ঝামেলাপূর্ণ। কোনো অ্যামাজন একাউন্ট ডিলিট করার একমাত্র উপায় হচ্ছে তাদের একজন অ্যাসোসিয়েটের সাথে সরাসরি চ্যাট করা। কিন্তু সেই অ্যাসোসিয়েটকে এমনভাবেই ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে যেন সে আপনাকে একাউন্ট ডিলিট না করার ব্যাপারে বেশ ভালোভাবে আশ্বস্ত করতে পারে।
স্মার্টফোন অ্যাপের এসব কৌশল অনেকক্ষেত্রেই ব্যবহারকারীর বেশ সুবিধা করে দেয়। স্পটিফাই এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। কিন্তু অনেক কৌশল গুরুত্বপূর্ণ সময়ও নষ্ট করে। তাই অ্যাপগুলো ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন তা অহেতুক আসক্তির কারণ হয়ে না দাঁড়ায়।