যতদিন যাচ্ছে ততই স্মার্টফোনের জন্য নিত্যনতুন অ্যাপ তৈরি হচ্ছে। সেই সাথে পুরনো অ্যাপগুলোতে যোগ হচ্ছে নিত্যনতুন সব ফিচার। যার কোনোটি হয়তো আমাদের প্রয়োজন হয় আবার কোনোটি হয় না। বহু ফিচার থাকার কারণে অ্যাপগুলোর আকারে হয়ে যাচ্ছে অনেক বড়। ফলে প্রচুর ফিচারে ভরা এসব অ্যাপগুলো আমাদের ফোনকে করছে ধীরগতির। অ্যাপগুলো চালু হতেও নিচ্ছে অনেকটা সময়। তাহলে এই সমস্যার সমাধান কী? এর সমাধান হলো প্রয়োজনীয় অ্যাপগুলোর ‘লাইট’ (lite) বা হালকা ভার্সন ব্যবহার করা।
জনপ্রিয় অ্যাপ কোম্পানিগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর ধীরগতির ইন্টারনেট ও নিম্ন কনফিগারেশনের ফোনগুলোর জন্য তাদের অ্যাপের ‘লাইট’ ভার্সন বের করেছে। এই লাইট ভার্সনের অ্যাপগুলো ব্যবহারে আপনার ফোনটি হবে আরো দ্রুত, আপনার ইন্টারনেট ডাটা খরচ হবে কম আর সেই সাথে ফোনের ব্যাটারির চার্জও থাকবে অনেকক্ষণ। তবে এক্ষেত্রে আপনি হয়তো কিছু কিছু ফিচার লাইট অ্যাপগুলোতে পাবেন না। যেমন, ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের লাইট ভার্সনে আপনি ‘ভিডিও কল’ অপশনটি পাবেন না। কিন্তু এই অ্যাপটি ব্যবহারে আপনার ফোনটি হবে আরেকটু দ্রুতগতির। ফোনের প্রসেসরের উপরও চাপ পড়বে কম।
তবে দুর্ভাগ্যবশত এই লাইট অ্যাপগুলি শুধুমাত্র অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহারকারীরাই ব্যবহার করতে পারবেন। আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য লাইট ভার্সনের কোনো অ্যাপ নেই। তো চলুন তাহলে আজকে জেনে নিই অ্যান্ড্রোয়েড ফোনের জন্য এমনই ৬টি লাইট অ্যাপ সম্পর্কে।
১. ফেসবুক লাইট
আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ ফেসবুক ব্যবহারকারীই ফেসবুকের ফুল ভার্সন অ্যাপটি ফোনে ব্যবহার করেন। কিন্তু এই অ্যাপটির সাইজ যেমন বড়, তেমনি বেশি ডাটা খরচ হয় ফুল ভার্সনের অ্যাপটিতে। এই সমস্যা দূর করতে আছে ফেসবুকের লাইট ভার্সন।
এই লাইট ভার্সনের ফেসবুকে ফুল ভার্সনের প্রায় সব ফিচারই পাবেন আপনি। নিউজফিড, নোটিফিকেশন, স্টাটাস আপডেট, অন দিস ডে ইত্যাদি সব ফিচারই রয়েছে ফেসবুকের এই লাইট ভার্সনের অ্যাপটিতে। বাড়তি হিসেবে মেসেজিংয়ের সুবিধাও রয়েছে এখানে, যেটি ফেসবুকের ফুল ভার্সনের অ্যাপটিতে নেই। তবে লাইট অ্যাপে আপনি কিছু পরিবর্তন দেখতে পাবেন যেমন কিছু কিছু জায়গায় সোয়াইপ না করে টাচ করে কাজ করতে হবে আপনাকে।
অপ্রয়োজনীয় কিছু ফিচার বাদ দেয়ার ফলে লাইট অ্যাপটি সাইজে হয়েছে অনেক ছোট, সেই সাথে এটি আপনার ফোনের মেমোরিও কম দখল করে। মূল ফেসবুক অ্যাপটির সাইজ যেখানে ৬০ মেগাবাইটের বেশি সেখানে ফেসবুক লাইটের সাইজ মাত্র দেড় মেগাবাইট! এটি বিভিন্ন ইমেজ ও কন্টেন্ট কম্প্রেস করে আপনার ফোনে দেখায় যার ফলে ইন্টারনেট ডাটা খরচ হয় কম। ফলে ২জি নেটওয়ার্কেও ঝামেলাবিহীনভাবে এই অ্যাপটি ব্যবহার করা যায়।
অ্যাপটি আপনি পাবেন গুগল প্লে স্টোরে।
প্লেস্টোর লিংক – Link
২. ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার লাইট
ফেসবুক অ্যাপের মতো ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার অ্যাপটিও দিন দিন সাইজে বড় ও ভারি হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে একটু লো কনফিগারেশনের ফোনে ম্যাসেঞ্জার ব্যবহার করলেই ফোনটি স্লো হয়ে যায়, সাথে ফোনের ব্যাটারিও খরচ হয় দ্রুত। এই সমস্যার সমাধানে ফেসবুক এনেছে ম্যাসেঞ্জারের লাইট ভার্সন।
ম্যাসেঞ্জার লাইটে আপনি সাধারণ ম্যাসেঞ্জার অ্যাপটির মতোই প্রায় সব ফিচার উপভোগ করতে পারবেন। টেক্সট চ্যাটিং, ছবি শেয়ারিং, ভয়েস কল, ইমোজি-স্টিকার ইত্যাদি সব কিছুই আপনি পাবেন ম্যাসেঞ্জার লাইটে। তবে ভিডিও কলিং, ফেসবুক গেমস, চ্যাট হেড ইত্যাদি ফিচার নেই এই ম্যাসেঞ্জার লাইটে। এসব ফিচার না থাকায় ম্যাসেঞ্জার লাইট অ্যাপটি অনেক হালকা আর কম সাইজের। তাই খুব দ্রুত ব্যবহার করা যায় এটি।
ম্যাসেঞ্জার লাইট পাওয়া যাবে গুগল প্লে স্টোরে।
প্লে স্টোর লিংক – Link
৩. টুইটার লাইট
ফেসবুকের পাশাপাশি টুইটার ব্যবহারকারীদের জন্যও রয়েছে টুইটার লাইট। টুইটারের এই লাইট ভার্সনটিতে আপনি ফুল ভার্সনের প্রায় সব ফিচারই পাবেন। ডিরেক্ট মেসেজ, সার্চ, নোটিফিকেশন ইত্যাদি সব ফিচারই পাবেন এখানে। তবে হাইলাইটস এন্ড মোমেন্টস, নাইট স্কিন ইত্যাদি ফিচার থাকবে না টুইটার লাইটে।
এসব ফিচার না থাকার কারণে টুইটার লাইট অ্যাপটি হয়েছে আরো দ্রুত। এটি ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়া অফলাইনেও ব্যবহার করা যায়। টুইটার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সাধারণ টুইটার অ্যাপ থেকে এই লাইট অ্যাপটি তুলনামূলকভাবে ৩০ শতাংশ বেশি দ্রুত লোড হয়। এছাড়াও টুইটারের লাইট ভার্সনে রয়েছে ডাটা সেভিং ফিচার। যার মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অপ্রয়োজনীয় ছবি ও ভিডিও দেখা বন্ধ করা যাবে। ফলে বেঁচে যাবে আপনার ইন্টারনেট ডাটা।
গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যাবে অ্যাপটি।
অ্যাপটির প্লে স্টোর লিংক – Link
৪. স্কাইপ লাইট
ভিডিও কলিংয়ের জন্য জনপ্রিয় অ্যাপ হলো স্কাইপ। স্মার্টফোনের পাশাপাশি ল্যাপটপ কিংবা ডেস্কটপ কম্পিউটারেও ব্যবহৃত হয় এটি। জনপ্রিয় এই অ্যাপটিরও রয়েছে লাইট ভার্সন। মূল ভার্সনের মতোই ভিডিও ও অডিও কলিংয়ের সাথে মেসেজিং করতে পারবেন আপনি স্কাইপ লাইটে। তবে মূল অ্যাপের হাইলাইট ফিচার, মোমেন্টস শেয়ার, জিফ এনিমেশন শেয়ার ইত্যাদি ফিচার নেই এখানে।
স্কাইপ লাইট ইন্টারনেট ডাটাকে কম্প্রেস করে ভিডিও ও অডিও লিংকে করে আরো দ্রুত। তাই আপনি যদি স্কাইপের ভিডিও, অডিও কলিংয়ের মতো বেসিক ফিচারগুলো ফোনের উপর চাপ কমিয়ে ব্যবহার করতে চান, তবে এখনই ইনস্টল করে নিন স্কাইপ লাইট অ্যাপটি।
অ্যাপটির প্লে স্টোর লিংক – Link
৫. ইন্সটাগ্রাম লাইট
আমাদের দেশে ফেসবুক টুইটারের তুলনায় ইন্সটাগ্রামের ব্যবহারকারী তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম। তবে এই ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারীদের জন্যও রয়েছে ইন্সটাগ্রামের লাইট ভার্সন। তবে ফেসবুক টুইটারের মতো ইন্সটাগ্রামের নেই কোনো লাইট অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ। ইন্সটাগ্রাম তাদের ব্যবহারকারীদের জন্য অপ্রয়োজনীয় ও ভারি ফিচারগুলো বাদ দিয়ে চালু করেছে ওয়েবভিত্তিক ইন্সটাগ্রাম মোবাইল লাইট ভার্সন।
ইন্সটাগ্রাম মোবাইল ওয়েবসাইটে সম্প্রতি চালু হয়েছে ছবি আপলোড করার সুবিধা। ওয়েবসাইটে ঢুকে সরাসরি ফোনের ক্যামেরা ব্যবহার করে ছবি তুলে তা আপলোড করা যাবে ইন্সটাগ্রামে। এছাড়াও লাইক, কমেন্ট, ফটো ফিল্টার ইত্যাদি সব ফিচারই থাকছে এখানে। তবে ছবির ব্রাইটনেস ঠিক করা, ছবির সাইজ ঠিক করা ইত্যাদি জটিল কাজগুলো করা যাবে না এর মাধ্যমে।
ইন্সটাগ্রাম মোবাইলের ওয়েব লিংক – Link
৬. সাজাম লাইট
গান সনাক্তকরণ ভিত্তিক জনপ্রিয় একটি অ্যাপ হলো সাজাম। এই অ্যাপটির মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি রাস্তাঘাটে বা আশেপাশে বাজছে এমন কোনো অপরিচিত গান সম্পর্কে জানতে পারবেন। জেনে নিতে পারবেন কী নাম এই গানটির, জানা যাবে গায়কের কথাও।
সম্প্রতি লো কনফিগারেশনের ফোন ব্যবহারকারীদের কথা মাথায় থেকে সাজাম বের করেছে তাদের অ্যাপের লাইট ভার্সন। খুবই ছোট এই অ্যাপটি দিয়ে আপনি এক নিমিষেই খুঁজে বের করতে পারবেন আপনার পছন্দের গানটি। মূল অ্যাপের মতো গান খুঁজে বের করার প্রধান ফিচারটি রয়েছে এখানে। বাদ দেয়া হয়েছে সরাসরি গানের ভিডিও, লিরিক্স দেখা প্রভৃতি ফিচার।
অ্যাপটি এখনো আমাদের দেশে প্লে স্টোরে উন্মুক্ত হয়নি। তবে ডাউনলোড করা যাবে apkmirror থেকে।
ডাউনলোড লিংক – Link
ফিচার ইমেজ – crackorsquad.com