নব্বইয়ের দশক থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এমন কোনো গেমার হয়তো পাওয়া যাবে না যে গ্র্যান্ড থেফট অটো (জিটিএ) খেলেনি। গেমার ছাড়াও যারা অনিমিয়ত কিংবা শুধু পিসি/কনসোল গেমের স্বাদ নিতে ইচ্ছুক, প্রায় সবাই প্রথমে যেটি খোঁজে সেটি হচ্ছে জিটিএ। জিটিএ, রেড ডেডের মতো গেমগুলো জায়গা করে নিয়েছে মানুষের হৃদয়ে। সময়ের সেরা গ্রাফিক্স, সাউন্ডট্র্যাক, স্টোরি লাইনের চমক- সব মিলিয়ে রকস্টারের গেম সিরিজগুলো এককথায় অনবদ্য। কিন্তু গান নিয়ে কাজ করা দুই ভাই, যাদের ছিল না কোনো প্রোগ্রামিং কিংবা গেম ডিজাইনিংয়ের জ্ঞান, তারা কীভাবে তৈরি করলো ইতিহাসের অন্যতম সেরা ভিডিও গেম পাবলিশিং কোম্পানি? আজকের এই লেখায় বলা হবে সেই ইতিহাস।
রকস্টারের শুরু
স্যাম এবং ড্যান হাউজার; রকস্টার গেমসের যাত্রার শুরু লন্ডনের এই দুই ভাইয়ের হাত ধরে। রকস্টারকে আজকের পর্যায়ে নিয়ে আসা এবং কোম্পানির নকশা বদলে দেয়ার পেছনে এ দুজনের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। সুরকার বাবার মিউজিক ক্লাবে ছেলেদের দিনগুলো সঙ্গীতের মাঝেই কাটছিলো।
হঠাৎ একদিন ভিডিও গেম খেলতে গিয়ে স্যামের চিন্তা আসে বাস্তব জগতকে গেমের মাঝে নিয়ে যাওয়ার, এবং এই চিন্তাধারাই পাল্টে দেয় তার জীবন। স্যাম ও ড্যানের বাবা ওয়াল্টার হাউজার বিএমজি (বার্টেলসম্যান মিউজিক গ্রুপ) এর একজন কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলেন। ছেলেদের জেদি মনোভাবে তিনি বিএমজি ইন্টার্যাক্টিভ নামে একটি ভিডিও গেম বিভাগ খোলেন এবং দুজনকে এটি চালানোর দায়িত্ব দেন। ১৯৯৭ সালে তারা ডিএমএ ডিজাইন-এর সাথে মিলে তৈরি করেন গ্র্যান্ড থেফট অটো, যা পাল্টে দেয় পুরো গেমিং ইন্ডাস্ট্রির ভাবমূর্তি। শুরুতে এর নাম ‘রেসিং চেজ’ দেয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে সিকুয়েল তৈরির সুবিধার জন্য ‘গ্র্যান্ড থেফট অটো’ নামকরণ করা হয়। সেসময় গেমটি ছিল সবার থেকে আলাদা। তখন ‘মর্টাল কমব্যাট’-এর মতো গেম জনপ্রিয় থাকলেও সেগুলো ছিল ফিকশনের উপর এবং গেমারদের লক্ষ্য করে তৈরি।
কিন্তু গ্র্যান্ড থেফট অটো ছিল বাস্তবধর্মী, সকল প্রকার মানুষের জন্য। রকস্টারই প্রথম ভিডিও গেমকে বিতর্কিত করে তোলে, যে কারণে তাদের পড়তে হয়েছে মামলা-মোকদ্দমায়, এবং দিতে হয়েছে জরিমানা। তবে এই বিতর্ক উল্টো জিটিএকে আরও জনপ্রিয় করে তোলে, বিক্রি হয় প্রায় ১০ লক্ষ কপি। ১৯৯৮ সালে বিএমজি ইন্টার্যাক্টিভকে কিনে নেয় নিউ ইয়র্কের ভিডিও গেম কোম্পানি Take-Two Interactive, এরপর স্যাম হাউজার, ড্যান হাউজার, টেরি ডনোভ্যান ও আরও দুজন সহযোগী মিলে Take-Two এর অধীনে তৈরি করেন রকস্টার গেমস।
মূল জিটিএ টুডি-তে তৈরি ছিল, জিটিএ থ্রি দিয়ে তারা থ্রিডি জগতে প্রবেশ করে এবং নিজেদের সবার থেকে আলাদাভাবে প্রকাশ করে। রকস্টারের এত জনপ্রিয়তা পাওয়ার কারণ হিসেবে বলা যায়- তারা গেমারদের দিয়েছে স্বাধীন ইচ্ছা, কেউ চাইলে স্টোরিও খেলতে পারে, আবার পুরো গেমটিতে ঘুরেও বেড়াতে পারে। ওপেন ওয়ার্ল্ড ছিল তাদের গেমের প্রধান দৃষ্টিকোণ। হ্যাঁ, এতে আক্রমণাত্মক, খুন-খারাবি, সন্ত্রাসবাদের মতো বিষয় ছিল, কিন্তু এগুলোই তো তাদের বাকিদের থেকে আলাদা করেছে। কাল্পনিক এই জগতে কেউ মনের মতো যা খুশি করতে পারতো। গেমগুলো ব্যাপকভাবে সফল হওয়ায় এরপর থেকে তাদের আর থেমে থাকতে হয়নি, আমাদের দিয়েছে একের পর এক মাস্টারপিস। চলুন সেই যাত্রা থেকে ঘুরে আসা যাক।
গ্রান্ড থেফট অটো – ভাইস সিটি
বর্তমানে সর্বকালের সেরা বেস্ট সেলিং গেমের তালিকায় ৪৪ নম্বরে থাকা এই গেমটি খেলেনি এমন গেমার হয়তো পাওয়া যাবে না। সাধারণ মানুষের কাছেও বিভিন্ন নামে শোনা যেত গেমটির কথা। আমাদের দেশেই ডেভেলপাররা মডিফাই করে এই গেমের অসংখ্য ভার্সন তৈরি করেছেন।
১৯৮৬ সালের মায়ামি শহরের প্রেক্ষাপটে তৈরি শহরের নাম হচ্ছে ভাইস সিটি। ড্রাগ ব্যবসায় আচমকা সর্বস্ব হারিয়ে ফেলে টমি ভারসেটি, কে কীভাবে কী করলো জানা নেই কিছুই। লিবার্টি সিটি থেকে গ্যাংস্টাররা আসার আগেই সব ঝামেলামুক্ত এবং ক্ষতিপূরণ করতে হবে তাকে। আপনাকে খেলতে হবে টমি চরিত্রটি নিয়েই, করতে হবে অনুসন্ধান। আর হ্যাঁ, পুরো গেমের জগতেই আপনাকে করতে হবে গ্যাং যুদ্ধ, ব্যাংক লুট, পিৎজা ডেলিভারিসহ নানা কিছু। ২০০২ সালে রিলিজ হওয়া গেমটিও ব্যাপক সফলতা লাভ করে।
গ্র্যান্ড থেফট অটো – স্যান আন্ড্রেস
২০০৪ সালে রকস্টার রিলিজ করে তাদের পরবর্তী মাস্টারপিস। স্যান আন্ড্রেস বর্তমানে বেস্ট সেলিং তালিকায় রয়েছে ২১ নাম্বারে। ‘৯০ দশকের লস অ্যাঞ্জেলেস, স্যান ফ্রান্সিসকো এবং লাস ভেগাসের আলোকে তৈরি শহরে গ্যাং-ওয়ারফেয়ার নিয়ে তৈরি এই গেমটি। এর বিস্তৃত ওপেন ওয়ার্ল্ড ম্যাপে খেলোয়াড়রা চাইলে শুধু ঘুরেই বেড়াতে পারবেন। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে সবকিছু পছন্দমতো বেছে নেয়ার উপায়। প্রধান চরিত্র সি জেও খাওয়াদাওয়ার উপর নির্ভর করে মোটা কিংবা চিকন হতো। তৎকালে এর গল্প, চরিত্র মিলে একে অনেকেই আখ্যা দিয়েছিলেন সর্বকালের সেরা হিসেবে। তবে এর মতো বিতর্কও খুব কম ভিডিও গেমই তৈরি করেছিল। গেমটির প্রায় ২৮ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়।
বিতর্ক-মামলা ও রকস্টারের জবাব
রকস্টার স্টুডিও গেম ডিজাইন, গল্প সবকিছুকেই শীর্ষে নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু এর সাথে তৈরি হয় নানা বিতর্কও। গেমের বিভিন্ন এডাল্ট কন্টেন্ট, খুন-খারাবির জন্য তারা রাজনীতিবিদদের প্রধান লক্ষ্যবস্তু হয়ে দাঁড়ায়, এবং জনগণকে এসব কেনা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। কিন্তু নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আকর্ষণ যে বেশি সেটি আবারও প্রমাণিত হয়ে যায়। অবশ্য রকস্টারও গেমের কিছু কন্টেন্ট সরিয়ে ফেলে। তবে বেশ কিছু দৃশ্যের কারণে রকস্টারের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা দায়ের করা হয়, এবং গেমটি ‘Mature’ থেকে ‘Adults Only’ রেটিং দেয়া হয়।
এজন্য রকস্টারের ক্ষতি হয় প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলার, এছাড়া বিভিন্ন দোকানীরাও গেমটিকে দোকানে রাখতে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেন। এর সাথে স্যাম হাউজারকেও শুনানির জন্য ক্যাপিটল হিলে ডাকা হয়। ২০০৯ এ এসে মামলাটি নিষ্পত্তি হয়। এসব বিতর্কের ফলে রকস্টার অহিংস ভিডিও গেম তৈরির উদ্যোগ নেয় এবং ২০০৬ সালে ‘টেবিল টেনিস’ গেমটি উন্মোচন করে। একই সালে Bully নামক আরেকটি গেম তারা বাজারে ছাড়ে, যেটি মূলত স্কুলের গুন্ডা-মাস্তানদের নিয়ে তৈরি। এখানেও তেমন কোনো সহিংস কার্যক্রম ছিল না।
কিন্তু এরপর তাদের ‘ম্যানহান্ট ২’ এতটাই সহিংস ছিল যে এটি নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু এসব নিষেধাজ্ঞা তাদের ব্যবসায় তেমন প্রভাব ফেলেনি, কারণ জিটিএ-ই ছিল তাদের আয়ের প্রধান উৎস। কিছু পরেই তারা জিটিএ-এর পরবর্তী ভার্সন জিটিএ ৪ প্রকাশ করার ঘোষণা দেয়, আর বরাবরের মতো সেটিও চরম সফলতা লাভ করে। ২০০৮ সালে প্রকাশিত হওয়া গেমটি বর্তমানে সর্বকালের সেরা বেস্ট সেলিং তালিকায় ২৪ তম স্থানে রয়েছে। জিটিএ-৪ সিরিজটির প্রথম এইচডি গেম এবং তৈরি করা হয় রকস্টারের নিজস্ব গেম ইঞ্জিন দিয়ে। এটি তৈরি করতে খরচ হয়েছিলো প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার। কিন্ত রকস্টারের সেরাটা আসতে তখনও বাকি।
রকস্টারের অন্যান্য জনপ্রিয় সিরিজ
জিটিএ ছাড়াও রকস্টারের আরও জনপ্রিয় কিছু সিরিজ রয়েছে। এর মাঝে Red Dead, Max Payne, Midnight Club উল্লেখযোগ্য। Max Payne একটি থার্ড পারসন শ্যুটার গেম, ড্রাগ ডিলারের দ্বারা খুন হয়ে যাওয়া পরিবারের প্রতিশোধ নিতে পাল্টে যান নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশের এই ডিটেকটিভ। সিরিজটির প্রতিটি গেমের গল্পই মুগ্ধ করবে আপনাকে। ২০০১ থেকে ২০১২ পর্যন্ত প্রথম দুটি পার্টের লেখক স্যাম লেক, এবং তৃতীয় পার্টটি লিখেছেন স্যাম হাউজার।
আরেকটি নজরকারা, হৃদয়নাড়ানো গেম সিরিজ হচ্ছে Red Dead। সিরিজের প্রথম গেম Red Dead Revolver মুক্তি পায় ২০০৪ সালে। এটি অনেকটা সোজাসাপ্টা গল্প এবং লোকেশন নিয়ে তৈরি ছিল। বাণিজ্যিকভাবে এটি তেমন সফল হতে পারেনি। তবে রকস্টার হেরে যাওয়ার পাত্র নয়। ২০০৯ সালে তারা প্রকাশ করে Red Dead Redemption, যা ব্যাপক সফলতা লাভ করে বাণিজ্যিকভাবে এবং সমালেচকদের কাছে থেকেও।
১৯-২০ শতকের পশ্চিমা আমেরিকান ধারায় তৈরি এটি একটি ওপেন ওয়ার্ল্ড গেম ছিল। সেই সময়টিকে তুলে ধরা হয়েছে অত্যন্ত সুন্দরভাবে। যাতায়াত হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে ঘোড়ার গাড়ি, ট্রেন। মূল গল্প ছাড়াও রয়েছে শিকার, গ্যাং যুদ্ধ, গুপ্তধনের সন্ধান, এবং সবচেয়ে ভালো যেটি সেটি হচ্ছে অপরূপ প্রকৃতি ঘুরে দেখা। এছাড়া গেমে একপ্রকার ‘Honor’ ব্যবস্থা রয়েছে। মানুষের উপকার করলে আপনার চরিত্রের ইতিবাচক দিক ফুটে উঠবে এবং অপকার কিংবা খুনে নেতিবাচক পরিচয় তৈরি হবে।
২০১৮ সালে কনসোলে এবং ২০১৯ সালে পিসিতে রিলিজ হয় Red Dead Redemption এর সিকুয়েল। প্রতিবারের মতো এটিও বিপুল সফলতা লাভ করে এবং সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত হয়। প্রকাশের তিন দিনে এটি ৭২৫ মিলিয়ন ডলার উপার্জন করে, যা একটি রেকর্ড। এর মেটাক্রিটিক স্কোর ৯৩। অনেকের মতে, বর্তমান প্রজন্মের সবচেয়ে সুন্দর গেম এটি। Red Dead Redemption 2 এতটাই সুন্দর করে তৈরি যে এর জন্য পৃথক একটি আর্টিকেল প্রাপ্য। এই মাস্টারপিস নিয়ে নাহয় পরবর্তীতে আলাদা করেই আলাপ করা হবে। তবে পাঠক এখনও যে জিনিসটির জন্য অপেক্ষা করে আছেন সেটি হচ্ছে গ্র্যান্ড থেফট অটো ফাইভ।
বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আয় করা সিনেমা হচ্ছে মারভেলের ‘অ্যাভেঞ্জার্স এন্ডগেম’ এবং তারই সামান্য পেছনে রয়েছে ‘অ্যাভাটার’। দুটির উপার্জন যোগ করলে দাঁড়ায় ৫.৫ বিলিয়ন, সেখানে জিটিএ ৫ একাই আয় করেছে প্রায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ভেঙেছে ৭টি গিনেস রেকর্ড, এবং ২০১৩ সালে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ১৩০ মিলিয়ন কপিরও বেশি। প্রথম ১ বিলিয়ন ডলার এসেছে মুক্তির তিন দিনেই, যা একে সর্বকালের সেরা ব্যবসাসফল মিডিয়া টাইটেলের খেতাব এনে দিয়েছে। এটি তৈরির খরচ শুনলেও অবাকই লাগবে, প্রায় ২৬৫ মিলিয়ন ডলার লেগেছে তৈরি করতে। এছাড়া বছরের পর বছর ধরে DLC (Downloadable Content) তো রয়েছেই। অসাধারণ গ্রাফিক্স ও গল্প তৈরি করতে রকস্টারকে যা করতে হয়েছে তা শুনলেও অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হবে।
তৈরির গল্প
জিটিএ ৫ তৈরিতে কয়েকবছর ধরে কাজ করেছে হাজারেরও বেশি মানুষ। জিটিএ ৪ রিলিজের পর বিভিন্ন দেশে অবস্থিত রকস্টার গেমসের ৮টি ডেভেলপমেন্ট স্টুডিওতে এর কাজ চলে, এবং শেষ হয় ২০১৩ সালে। লস অ্যাঞ্জেলস এবং দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার কিছু অংশ নিয়ে গেমটির ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। এজন্য সেসব জায়গা থেকে ডিজিটাল ফুটেজ এবং রাস্তা তৈরিতে গুগল ম্যাপসের সাহায্য নেয়া হয়েছে। গেমটিতে খেলোয়াড় তিনটি চরিত্র নিয়ে খেলতে পারবেন এবং এতে প্রতিজনের আলাদা টাইমলাইন তৈরি হবে।
একাধিক প্রধান চরিত্র জিটিএ-৫-এই প্রথম করেছে রকস্টার। বাহ্যিক ভঙ্গি গ্রহণের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে মোশন ক্যাপচার পদ্ধতি। এছাড়া গেমের মধ্যে যে রেডিও রয়েছে তাতে প্লে হওয়া গানগুলোও লাইসেন্স করে নিয়েছে রকস্টার। জিটিএ-র পূর্বের সব গেমের বৈশিষ্ট্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
রকস্টার বাস্তবের সাথে যথাসম্ভব মিল রাখতে কথা বলেছে এফবিআই এজেন্ট, মাফিয়াসহ, স্ট্রিট গ্যাঙের সাথে যা ইতোপূর্বে কেউ করেছে বলে জানা যায়নি। সেসময় অনুযায়ী জিটিএ ফাইভের গ্রাফিক্স ছিল অসম্ভব সুন্দর। কাহিনী নিয়ে তেমন কিছু না বললেও যেহেতু গেমটি এখনও বিক্রি হচ্ছে এবং দামও খুবই কম, সেহেতু ব্যবহারকারীদের উপরই ছেড়ে দেয়া হলো। তবে নিরাশ যে হবেন না এটি জোর দিয়েই বলা যায়। পিসির জন্য ২০১৪ সালে রিলিজ হয়েছে এটি, এবং জিটিএ-৫ প্রায় সকল প্রকার ভোক্তাকে লক্ষ্য করেই বানানো। চলার মতো একটি কম্পিউটার থাকলেই জিটিএ ফাইভের স্বাদ নেয়া সম্ভব।
জিটিএ অনলাইন
জিটিএ ফাইভের সাথে মাল্টিপ্লেয়ার মোড হিসেবে যুক্ত করা হয় জিটিএ অনলাইনকে। রকস্টার ভাবেনি যে এটিই তাদের গেমের অন্যতম মূল আকর্ষণ হয়ে দাঁড়াবে। এটি যুক্ত করার পর তেমন প্রশংসা লাভ করতে পারেনি; বিভিন্ন ত্রুটি, সার্ভারে বিঘ্নতা ও আপডেটেড না হওয়ায় গেমারদের কটূক্তির মুখে পড়তে হয় রকস্টারকে। কিন্তু এই দীর্ঘসময়ে রকস্টার জিটিএ অনলাইনকে নিখুঁত করার চেষ্টা করেছে, যার ফলে এটি অনেকের কাছেই জিটিএ খেলার একমাত্র কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অনলাইন ভার্সনে আপনার মনোযোগ আকর্ষণের জন্য রয়েছে আরও অসংখ্য খেলোয়াড়। ব্যবসা, ইভেন্ট এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে লুট করা। এছাড়া বিভিন্ন মিশনে দেখা পাবেন এফবিআই-এর মতো বড় কর্পোরেশনের ও নানা ক্রিমিনালের। গেম খেলতে খেলতে আপনার হাতে আসবে কয়েকটি ব্যবসা, মিলিটারি বেজ ও দামি গাড়ি। সেই সাথে সাথে চোর-পুলিশ খেলা তো আছেই। সব মিলিয়ে জিটিএ ফাইভ যেন এক অন্যবদ্য সৃষ্টি।
রকস্টার এমন এক ভিডিও গেম কোম্পানি, যারা ভোক্তাদের দিয়েছে তাদের ইচ্ছার স্বাধীনতা। যা তাদের সবচেয়ে ব্যতিক্রম এবং দুর্লভ গেম কোম্পানির খেতাব প্রদান করেছে। রকস্টারের বিতর্কগুলোর ফলেই গেম ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছে পরিবর্তন, বাস্তব জগতে এই দুই ভাই নিজেদের আসলেই রকস্টার হিসেবে তৈরি করেছে। শেষ করছি ড্যান হাউজারের কিছু কথা দিয়ে,
ভিডিও গেম কোম্পানি হিসেবে আমরা শুনতে চাই না যে আমাদের গেম ডিজাইন অনেক সুন্দর, অথচ গল্প বাজে কিংবা গল্প সুন্দর তবে ডিজাইন তেমন ভালো না। আমরা শুনতে চাই মানুষ যেন বলে রকস্টার ভালো গেম তৈরি করে। আমরা সবসময় আমাদের সেরাটা দিয়ে তৈরি করার চেষ্টা করবো এবং তা কেমন হয়েছে শুনবো আমাদের ভোক্তাদের কাছে থেকে।
কথাগুলো বাস্তবের প্রতিটি ক্ষেত্রেই খাটে। যেকোনো জিনিসই তৈরি করতে আমাদের সেরাটা দিতে হবে এবং এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে মানুষ সেরা বলে। রকস্টার আমাদের যা দিতে পেরেছে আর কোনো গেম কোম্পানি সেভাবে দিতে পারেনি, ভোক্তাদের তাদের প্রতি একটি আস্থা তৈরি হয়েছে। এই আস্থা বজায় থাকবে এটিই কামনা কোটি কোটি গেমারের।