ল্যাম্বরগিনি: এক ক্ষ্যাপাটে ষাঁড়ের বিশ্ব জয়ের গল্প

স্পোর্টস কারের জগতে একটি অন্যতম আইকনিক নাম হলো ল্যাম্বরগিনি। সন্ধ্যার আকাশে শুকতারা চিনতে যেমন কারো ভুল হয় না, তেমনি অসংখ্য গাড়ির ভিড়ে একটি ল্যাম্বরগিনিকে খুঁজে পেতেও কোনো গাড়িপ্রেমীর ভুল হবার কথা নয়। এর কারণ হলো, যাত্রা শুরুর পর থেকে আজ পর্যন্ত স্টাইলিশ ডিজাইনের চোখ ধাঁধানো অসংখ্য গাড়ি তৈরির মাধ্যমে ল্যাম্বরগিনি গাড়িপ্রেমীদের মাঝে একটি স্বকীয় স্থান দখল করে নিয়েছে। তাছাড়া দুর্দান্ত গতি এবং অসাধারণ নির্মাণশৈলী গাড়ির জগতে ল্যাম্বরগিনিকে করে তুলেছে অতুলনীয়।

গত কয়েক দশক জুড়ে ল্যাম্বরগিনি বিশ্ববাসীকে উপহার দিয়েছে বেশ কিছু মনোমুগ্ধকর এবং আইকনিক মডেলের সুপার কার। এসব সুপার কার তৈরি করতে তাদের পাড়ি দিতে হয়েছে এক সুদীর্ঘ পথ। ল্যাম্বরগিনির এই পথচলাকে নিয়েই সাজানো হয়েছে আজকের লেখা।

আরেক সুপার কার জায়ান্ট ফেরারির মত ল্যাম্বরগিনিরও জন্মস্থান ইতালি। সেখানে ১৯১৬ সালের ২৮ এপ্রিল এক সাধারণ আঙুর চাষীর ঘরে জন্ম নেন ভবিষ্যত ল্যাম্বরগিনি কোম্পানির স্বপ্নদ্রষ্টা ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনি। কিন্তু পরিবারের প্রথা অনুযায়ী আঙুর চাষে জড়িয়ে পড়েননি তিনি। কৃষিকাজের চেয়ে তাকে বরং চাষাবাদের কাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টর এবং বিভিন্ন যন্ত্রপাতিই বেশি আকর্ষণ করত।

ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনি; Image Source: Lamborghini

মেকানিক্সের প্রতি প্রবল আকর্ষণ থেকেই তিনি ১৯৩০ সালে ভর্তি হন ‘ফ্রাতেল্লি তাদিয়া টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটে’। সেখানে তিনি মেকানিক্স নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেন। পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ১৯৪০ সালে তিনি রোডস্‌ আইল্যান্ডে ‘ইতালিয়ান রয়্যাল এয়ার ফোর্স’-এ একজন মেকানিক হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে তার কাজ ছিল ধংসপ্রাপ্ত এবং ত্রুটিযুক্ত যানবাহন মেরামত করা।  

১৯৪৫ সালে ব্রিটিশদের কাছে রোডস্‌ আইল্যান্ডের পতন হলে যুদ্ধবন্দী হিসেবে গ্রেফতার হন ফেরুসিও। এর ঠিক এক বছর পর তিনি মুক্তি পান এবং ইতালিতে ফিরে আসেন।

যুদ্ধবিদ্ধস্ত ইতালিতে দেশে ফিরেই তিনি কাজে নেমে পড়েন এবং এয়ার ফোর্সে বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৪৭ সালে তিনি ইতালির সেন্টো শহরে একটি ট্রাক্টর কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন।

একটি ল্যাম্বরগিনি ট্রাক্টর- Lamborghinetta; Image Source: Wikimedia Commons

কাজের প্রতি তীব্র অনুরাগ ও অসাধারণ মেধার জোরে ফেরুসিও তার কোম্পানিকে ধীরে ধীরে সাফল্যের পথে পরিচালিত করেন। তাছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইতালির ক্রমশ চাঙ্গা হয়ে ওঠা অর্থনীতির কারণে অল্প সময়েই বিশাল লাভের মুখ দেখে ফেরুসিওর ট্রাক্টর কোম্পানি। রীতিমতো ধনী বনে যান তিনি।

স্পোর্টস্‌ কারের প্রতি বেশ দুর্বলতা ছিল ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনির; Image Source: Lamborghini

পকেটে টাকার আনাগোনা শুরু হলে নতুন একটি নেশা মাথায় ঢোকে তার। আর তা হলো- বিভিন্ন কোম্পানির বিলাসবহুল সব গাড়ি সংগ্রহ করা। এরই ধারাবাহিকতায় একসময় ফেরুসিওর গ্যারাজে আবির্ভাব ঘটে সেসময়ের অন্যতম সেরা স্পোর্টস্‌ কার– ফেরারি ২৫০ জিটি।

নতুন কেনা ফেরারি গাড়িটি চালাতে গিয়ে ফেরুসিও লক্ষ করলেন, গাড়িটি অনেক বেশি শব্দ তৈরি করে এবং সাধারণ রাস্তায় চালনোর জন্য তা খুব একটা উপযোগী নয়। তার ওপর গাড়িটির ক্লাচে কিছুদিন পর পরই গণ্ডগোল দেখা দেয়।

ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনি; Image Source: Lamborghini

নিজে একজন মেকানিক হওয়ায় ফেরুসিও গাড়িটির সমস্যাগুলো সম্পর্কে তৎকালীন ফেরারির মালিক– এনজো ফেরারিকে অবহিত করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু একজন তরুণ ট্রাক্টর মেকানিকের কাছ থেকে নিজেদের গাড়ির সমস্যা শুনতে ভালো লাগেনি এনজো ফেরারির। তিনি ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনিকে সাফ জানিয়ে দেন, একজন ট্রাক্টর মেকানিকের উপদেশ তার প্রয়োজন নেই।

এনজো ফেরারি; Image Source: AP

এনজো ফেরারির কাছ থেকে একপ্রকার অপমানিত হয়ে ফিরে আসেন ল্যাম্বরগিনি। এই অপমানের সমুচিত জবাব দেয়ার পণ করেন তিনি। জবাব তিনি কতটা দিতে পেরেছিলেন, তা আজ বিশ্ববাসীর অজানা নয়! নিজের নামে একটি গাড়ি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন ফেরুসিও।

ষাঁড়ের লড়াইয়ের প্রতি প্রবল আকর্ষণ থাকায় এবং নিজেও বৃষ রাশির জাতক হওয়ায় তিনি তার কোম্পানির লোগো হিসেবে একটি তেড়ে আসা ষাঁড়কেই বেছে নেন। পরবর্তী সময়ে তার কোম্পানি যতগুলো গাড়ি তৈরি করেছে, তার বেশির ভাগেরই নাম রাখা হয়েছিল কোনো না কোনো ষাঁড়ের নামে।

ল্যাম্বরগিনির লোগো; Image Source: Matthew DeBord/Business Insider

এনজো ফেরারির সাথে সাক্ষাতের মাত্র চারমাসের মাঝেই ১৯৬৩ সালে ফেরুসিও ‘তুরিন মোটর শো’তে প্রদর্শন করেন তার কোম্পানির প্রথম স্পোর্টস্‌ কার– ল্যাম্বরগিনি ৩৫০জিটি। ১৯৬৪ সালের মধ্যেই এই মডেলের ১৩টি গাড়ি বিক্রি করে ল্যাম্বরগিনি বিশ্ববাসীকে জানান দেয় যে, গাড়ির দুনিয়ায় রাজত্ব করতেই আবির্ভাব হয়েছে তাদের।

ল্যাম্বরগিনি ৩৫০জিটি; Image Source: Sports Car Market

ল্যাম্বরগিনি কোম্পানির স্রষ্টা ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনি ছিলেন একজন পাক্কা জহুরি। তিনি ল্যাম্বরগিনি গাড়ির ডিজাইন করার জন্য নিয়োগ দেন মাসেরাটি ডিবি৫, ফেরারি ১৬৬এস সহ বহু আইকনিক গাড়ির ডিজাইন করা কোম্পানি ‘কারোজেরিয়া তুরিং’কে। অন্যদিকে নিজেদের জন্য স্বতন্ত্র ও শক্তিশালী ইঞ্জিন তৈরির উদ্দেশ্যে তিনি নিয়োগ দেন ফেরারি কোম্পানির সাবেক ‘চিফ অব ডেভলপ্‌মেন্ট’ অফিসার জিওত্তো বিজারিনিকে।

ফেরারিতে থাকার সময় বিজারিনি খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন বিখ্যাত ফেরারি ২৫০জিটি গাড়ি তৈরির প্রক্রিয়া। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি ল্যাম্বরগিনির জন্য তৈরি করেন একটি ৩.৫ লিটারের অত্যন্ত শক্তিশালী ‘ভি-১২’ ইঞ্জিন। পরবর্তী বছরগুলোয় বিজারিনির তৈরী এই ইঞ্জিনই আরও উন্নত ও শক্তিশালী করে ২০১০ সাল পর্যন্ত নিজেদের বিভিন্ন গাড়িতে ব্যবহার করেছে ল্যাম্বরগিনি।

ল্যাম্বরগিনির ভি-১২ ইঞ্জিনের সাথে ফেরুসিও; Image Source: Lamborghini

১৯৬৬ সালে জেনেভা মোটর শো’তে ল্যাম্বরগিনি তাদের নতুন মডেলের একটি স্পোর্টস্‌ কার প্রদর্শন করে, যা ওই শো’র সব আকর্ষণ কেড়ে নেয়। আর নেবেই বা না কেন? সেটি যে হতে যাচ্ছিল তৎকালীন সময়ের অন্যতম সেরা স্পোর্টস্‌ কার। ল্যাম্বরগিনির ওই মডেলটির নাম ছিল– ল্যাম্বরগিনি মিউরা

ল্যাম্বরগিনি মিউরা; Image Source: Flickr/Gordonplant

স্পেনের বিখ্যাত এক লড়াকু ষাঁড়ের ব্রিড ‘মিউরা’র নামানুকরণে রাখা হয়েছিল গাড়িটির নাম। ‘ল্যাম্বরগিনি মিউরা’র ডিজাইন করেছিলেন মার্সেলো গানদিনি এবং গাড়িটিতে ব্যবহার করা হয়ছিল বিজারিনির ভি-১২ ইঞ্জিন। এই মিউরাতেই প্রথমবারের মতো গাড়ির পেছনের অংশে ইঞ্জিন বসানোর চল শুরু করে ল্যাম্বরগিনি।

ল্যাম্বরগিনি মিউরা; Image Source: Flickr/Rex Gray

‘ল্যাম্বরগিনি মিউরা’র তুমুল জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও নতুন মডেলের গাড়ি বাজারে ছাড়ার মতো অর্থনৈতিক অবস্থা কোম্পানির ছিল না। নতুন মডেলের অভাবে কোম্পানির আয় একসময় তলানিতে গিয়ে ঠেকে। ফলে একপ্রকার বাধ্য হয়েই ১৯৭২ সালে ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনি তার সাধের কোম্পানিটি একটি সুইস গ্রুপের কাছে বিক্রি করে দেন।

নিজের প্রতিষ্ঠিত ‘ল্যাম্বরগিনি’ একসময় বেচে দিতে বাধ্য হন ফেরুসিও; Image Source: Lamborghini

পরবর্তী সময়ে আরও অনেক হাত ঘুরে ১৯৮৭ সালে ল্যাম্বরগিনি কোম্পানির মালিকানা লাভ করে বিখ্যাত অটোমোবাইল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘ক্রিসলার (Chrysler)’। ১৯৭২ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত একাধিকবার মালিকানা পরিবর্তিত হলেও এসময় ল্যাম্বরগিনি বিশ্ববাসীকে উপহার দিয়েছিল বেশ কিছু মনোমুগ্ধকর ডিজাইনের গাড়ি। এসবের মধ্যে এস্পাডা, জারামা, উরাক্কো উল্লেখযোগ্য।

ল্যাম্বরগিনি জারামা; Image Source: Flickr/NAParish

তবে এ সময়ের মধ্যে ল্যাম্বরগিনির তৈরী সবচেয়ে বিখ্যাত মডেল ছিল ‘ল্যাম্বরগিনি কাউন্টাচ’। এটি বাজারে আসে ১৯৭৪ সালে। ল্যাম্বরগিনির এই মডেলেই প্রথমবারের মতো আকাশের দিকে মুখ করে থাকা স্টাইলিশ দরজার ব্যবহার করা হয়, যা পরবর্তী সময়ে কোম্পানিটির সিগনেচার স্টাইলে পরিণত হয়। মডেলটির নকশা করেছিলেন মার্সেলো গানদিনি।

ল্যাম্বরগিনি কাউন্টাচ; Image Source: Lamborghini

ল্যাম্বরগিনি কাউন্টাচ একাই পরবর্তী বেশ কয়েক বছর পর্যন্ত ফেরারির বিভিন্ন মডেলের গাড়ির সাথে তুমুল লড়াই করে বাজার গরম রেখেছিল। তৈরির প্রায় ৪৫ বছর হয়ে গেলেও এটিই এখন পর্যন্ত ল্যাম্বরগিনির সবচেয়ে আলোচিত গাড়ি হিসেবে বিবেচিত হয়।

ল্যাম্বরগিনি কাউন্টাচ; Image Source: Lamborghini

আশির দশকে ধীরে ধীরে কাউন্টাচের জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। ফেরারির তুমুল জনপ্রিয় এফ-৪০ এবং পোর্শের বিখ্যাত ৯৫৯ মডেলের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য ল্যাম্বরগিনির তখন প্রয়োজন ছিল নতুন একটি ফ্ল্যাগশিপ মডেলের। সেই তাগিদ থেকেই ল্যাম্বরগিনি বাজারে ছাড়ে তাদের নতুন মডেল – ল্যাম্বরগিনি ডায়াবলো

ল্যাম্বরগিনি ডায়াবলো; Image Source: Lamborghini

একটি বিখ্যাত ক্ষ্যাপাটে ষাঁড়ের নামে রাখা এই মডেলটিরও ডিজাইন করেছিলেন মার্সেলো গানদিনি এবং এতে ব্যবহার করা হয়েছিল বিজারিনির ভি-১২ ইঞ্জিনের উন্নত ভার্সন। আর এই ল্যাম্বরগিনি ডায়াবলোই ছিল ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনির জীবদ্দশায় তৈরী ল্যাম্বরগিনির শেষ গাড়ি। তিনি ৭৬ বছর বয়সে ১৯৯৩ সালে মৃত্যু বরণ করেন।

ল্যাম্বরগিনি ডায়াবলো; Image Source: AP

ক্রিসলারের অধীনে যদিও ল্যাম্বরগিনির অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ ভালোই ছিল, তারপরও তারা কোম্পানিটি বিক্রি করে দেয় এবং ১৯৯৮ সালে ১১১ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ল্যাম্বরগিনির মালিকানা কিনে নেয় ভক্সওয়াগন গ্রুপের অধীনে থাকা অডি কোম্পানি।

অডি কিনে নেয় ল্যাম্বরগিনির মালিকানা; Image Source: REUTERS/Valentin Flauraud

অডির অধীনে ল্যাম্বরগিনির প্রথম প্রডাকশন ছিল– ল্যাম্বরগিনি মার্সিয়েলাগো। ২০০১ সালে ডায়াবলোর উত্তরসূরী হিসেবে বাজারে ছাড়া হয় মার্সিয়েলাগো মডেলটিকে।

ল্যাম্বরগিনি মার্সিয়েলাগো; Image Source: Lamborghini

মার্সিয়েলাগোর নামকরণ করা হয়েছিল একটি বিখ্যাত ষাঁড়ের নামানুসারে, যেটি একজন ম্যাটাডোরের ২৪টি ছুরিকাঘাত সহ্য করেও বেঁচেবর্তে গিয়েছিল! এই নামকরণের আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল ল্যাম্বরগিনির চিরপ্রতিদ্বন্দী ফেরারিকে একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়া যে, যতবারই মালিকানা পরিবর্তন হোক না কেন, যতই বাধা-বিপত্তি আসুক না কেন ল্যাম্বরগিনি টিকে থাকবে তার স্ব-মহিমায়।

ল্যাম্বরগিনি মার্সিয়েলাগো; Image Source: Wikimedia Commons

বিজারিনির ভি-১২ ইঞ্জিনই ব্যবহার করা হয়েছিল মার্সিয়েলাগোর ক্ষেত্রেও, যেটি সর্বোচ্চ ৬৬০ অশ্বশক্তি উৎপন্ন করতে সক্ষম ছিল।

২০০৪ সালে ল্যাম্বোর লাইনআপে যুক্ত হয় নতুন এন্ট্রি লেভেল মডেল– ল্যাম্বরগিনি গ্যালার্দো। গ্যালার্দোতে ভি-১২’র পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় ভি-১০ ইঞ্জিন এবং এটিই ল্যাম্বরগিনির ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত মডেল হিসেবে স্বীকৃত।

ল্যাম্বরগিনি গ্যালার্দো; Image Source: Lamborghini

২০০৫ সালে ল্যাম্বোর সিইও এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পান স্টিফেন উইঙ্কেলম্যান। তার ম্যানেজমেন্টে ২০১১ সালে বাজারে আসে ল্যাম্বোরগিনির নতুন ফ্ল্যাগশিপ মডেল– ল্যাম্বরগিনি এভেন্টাডর। ২১৭ মাইল/ঘন্টা গতিবেগের এভেন্টাডরের নামকরণ করা হয়েছিল এমন একটি ষাঁড়ের নামে, যেটি ১৯৯৩ সালে একজন ম্যাটাডোরের সাথে রক্তক্ষয়ী লড়াই করেছিল। ল্যাম্বরগিনির এই মডেলেই প্রথমবারের মতো বিজারিনির ভি-১২ ইঞ্জিনের ব্যবহার হয়নি।

ল্যাম্বরগিনি এভেন্টাডর; Image Source: Lamborghini

২০১৪ সালে ল্যাম্বরগিনি তৈরি করে তাদের আরেক বিখ্যাত মডেল– ল্যাম্বরগিনি হুরাকেন। গ্যালার্দোর মতো হুরাকেনেও ব্যবহার করা হয়েছে ভি-১০ ইঞ্জিন। অন্যান্য মডেলের মতো হুরাকেনেরও নাম রাখা হয়েছিল একটি ষাঁড়ের নামে।

ল্যাম্বরগিনি হুরাকেন; Image Source: Lamborghini

২০১৬ সালে উইঙ্কেলম্যান ল্যাম্বরগিনি ছেড়ে গেলে কোম্পানির নতুন সিইও হন সাবেক ‘ফেরারি ফর্মুলা ওয়ান টিমের’ প্রিন্সিপাল– স্টিফানো ডোমেনিকালি। তার অধীনে সেন্টেনারিও, টেরজো মিলেনিওয়ের মতো সুপারকারের সাথে সাথে ল্যাম্বো প্রথমবার বাজারে আনে ল্যাম্বরগিনি ইউরাস নামের একটি এসইউভি (SUV)। ১৯০ মাইল/ঘণ্টা গতিবেগের এই এসইউভি’টিই পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুত গতির এসইউভি হিসেবে স্বীকৃত।

ল্যাম্বরগিনি সেন্টেনারিও; Image Source: Newspress
ল্যাম্বরগিনি টেরজো মিলেনিও; Image Source: Lamborghini
ল্যাম্বরগিনি ইউরাস; Image Source: Lamborghini

বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে বেশ ভালো অবস্থানে থাকা ল্যাম্বরগিনির সিইও থেকে শুরু করে প্রতিটি কর্মী নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন তাদের নতুন মডেলের সুপারকার ভক্তদের সামনে উন্মুক্ত করার উদ্দেশ্যে।

প্রায় পাঁচ দশক আগে একজন ট্রাক্টর মেকানিকের হাত ধরে যাত্রা করা ল্যাম্বরগিনি নানা চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে আজ গাড়ি-দুনিয়ার এক অন্যতম নামে পরিণত হয়েছে। এই দীর্ঘ যাত্রাপথে তারা পৃথিবীকে উপহার দিয়েছে অসাধারণ মডেলের বেশ কিছু সুপারকার, যা জিতে নিয়েছে প্রতিটি গাড়িপ্রেমী মানুষের হৃদয়। এ যেন এক ক্ষ্যাপাটে ষাঁড়ের বিশ্ব জয়ের গল্প। ভবিষ্যতে ল্যাম্বরগিনি তাদের গাড়িগুলোর আরও কতটা উৎকর্ষ সাধন করতে পারে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

প্রিয় পাঠক, রোর বাংলার ‘প্রযুক্তি’ বিভাগে এখন থেকে নিয়মিত লিখতে পারবেন আপনিও। সমৃদ্ধ করে তুলতে পারবেন রোর বাংলাকে আপনার সৃজনশীল ও বুদ্ধিদীপ্ত লেখনীর মাধ্যমে। আমাদের সাথে লিখতে চাইলে আপনার পূর্বে অপ্রকাশিত লেখাটি সাবমিট করুন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/

This article is in Bangla language. It's about the history of car giant- Lamborghini. References are hyperlinked inside the article.

Featured Image: Lamborghini

RB/AC

Related Articles

Exit mobile version