নশ্বর এই পৃথিবীতে কেউ চিরজীবন জীবিত রবে না। তাই বলে কেউ কি চায় আপনের মায়া ত্যাগ করে এই ধরণী থেকে স্বল্প সময়ে বিদায় নিতে? সুপ্রিয় পাঠক, আপনারাই বলুন, যদি কেউ আপনাকে বলে আপনি কাল মারা যেতে চলেছেন, এই ভয়াবহ সত্যি কথা কি আপনি সহজে মেনে নিতে পারবেন? না, এই ভয়াবহ অনুভূতির প্রকাশ এককথায় করা নিতান্ত অসম্ভব।
শেষ বয়সে মৃত্যুর কথা ভেবে হয়তো মনকে বুঝ মানানো সম্ভব, কিন্তু যখন মাত্র জীবনের পথচলা শুরু, তখন যদি অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর আভাস স্তব্ধ করে দেয় সুখের পৃথিবীকে? ঠিক এমনটিই ঘটেছে ২৭ বছর বয়সী হলি বুচারের সাথে। কিন্তু মৃত্যুশয্যায় শুয়েও সাহসিকতার সাথে এই নারী গেয়েছেন জীবনের জয়গান। তিনি তার শেষ ইচ্ছেতে পরিবারের কাছে অনুরোধ করে গিয়েছেন, তার লেখা শেষ ফেসবুক বার্তাটি যেন সবার সাথে শেয়ার করা হয়, সেই বার্তাটি এখানে তার জবানীতে পাঠকের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো।
“২৬ বছর বয়সে তরুণদের মৃত্যু সম্পর্কে অনুধাবন করা এবং নীরবে তা উপলদ্ধি করার মানসিকতা আসলে খুবই আশ্চর্যের বিষয়। তারুণ্য যে বিদ্রোহের নাম। এ সময় জীবন-মৃত্যুর ভাবনা তো নিছক উপেক্ষার বিষয়। ঘড়ির কাঁটার টিক টিক শব্দের সাথে দিন গত হয়ে আসছে আর মৃত্যু আপনার শিয়রে নিঃশ্বাস ফেলছে, যতক্ষণ না জীবনের শেষ সঞ্জীবনী সুধা হারিয়ে আপনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। এমতাবস্থায় আপনাকে যা বাঁচিয়ে রাখিয়ে তা হলো বেঁচে থাকার আকুল আশা। যদি ঘটে যায় কোনো অলৌকিক ঘটনা, যদি অপ্রত্যাশিতভাবে বেঁচে যান আপনি। আমি সর্বদা নিজেকে বৃদ্ধাবস্থায়, ধূসর চুলের মাঝে এক সুন্দর পরিবার ও অনেকগুলো বাচ্চাকাচ্চার মাঝে কল্পনা করেছি, জীবন কাটাতে চেয়েছি নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে সঙ্গী করে,আনমনে কত না স্বপ্ন বুনেছি, কতই না পরিকল্পনা করেছি। আমি এই সকল কিছু এত বেশি চেয়েছি যে, আজ শেষ সময়ে এসে আমার যে কী ভীষণ কষ্ট হচ্ছে সব ছেড়ে যেতে আমি তা কোনো ভাষাতেই বোঝাতে পারবো না।”
“জীবনটা ঠিক যেন এমনই; ভঙ্গুর, মূল্যবান ও অচিন্তনীয় এবং উপহার, কোনো অধিকার নয়।
আমার বয়স এখন ২৭। আমি এখনই চলে যেতে চাই না। আমি আমার জীবন ভালবাসি। আমি খুশি আমার এই জীবনের প্রতিটি আনন্দঘন মুহূর্তের জন্য, আমি আমার প্রিয়জনদের কাছে ঋণী। কিন্তু এ জীবনের নিয়ন্ত্রণ আজ আর আমার হাতে নেই ।
মৃত্যুর ভয়ে আমি এই ‘লেখাটি’ শুরু করিনি। আমি আনন্দিত এই ভেবে যে, এই মৃত্যুর অনিবার্যতা সম্পর্কে আমরা সকলে অজ্ঞাত। প্রথম জীবনে আমরা জানি না যে, ঠিক কতদিন আমরা বাঁচবো। কিন্তু আমি যখন অবধারিত মৃত্যু সম্পর্কে কথা বলতে চাই, তখন এটি একটি ‘নিষিদ্ধ’ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়, যা আমি অপছন্দ করি। মৃত্যু যেন আমাদের জীবনে কখনও আসবে না। এই অভিনয় মানা আমার জন্য একটু কঠিন হয়েছে।
আমি শুধু মানুষকে ছোট ছোট, অর্থহীন মানসিক চাপ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকতে মানা করতে চাই। দুশ্চিন্তায় নিজেকে হারাতে বারণ করতে চাই। মনে রাখবেন, দিনের শেষে আমাদের সবার ভাগ্যেই শেষ বিদায় লেখা আছে, তাই আপনার সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করুন। মহৎ কজে সময় ব্যয় করুন, সময়ের অপচয় রোধ করুন। সিদ্ধান্ত নিন সময়কে কত ভালোভাবে ব্যবহার করা সম্ভব।
গত কয়েকমাস বিছানায় শুয়ে জীবন নিয়ে চিন্তাভাবনা করার অনেক সময়ই আমি পেয়েছি। সব চিন্তা যে গঠনমূলক ছিলো তেমনটি নয়। এমন অনেক ভাবনাই এসেছে যা নিতান্ত অমূলক ও আবেগী। তা আমি নিজে থেকেই বাদ দিয়েছি। অবশ্য যে সকল ভাবনার বশবর্তী হয়ে এই লেখাটি আমি লিখছি, তার অনেক কিছুই মধ্যরাতে একাকী শুয়ে থাকার সময় আমার মাথায় এসেছে।
আপনার হাতে যখন সময় খুব অল্প, তখন কিন্তু খুব সহজেই কাজের বিষয় আর সময়ের অপচয়- দুটোকেই আলাদা করা সম্ভব। গত কয়েক মাসে অনেককেই আমি হাস্যকর বিষয় নিয়ে অতিমাত্রায় চিন্তিত হতে দেখেছি। আবার অনেককেই লক্ষ্য করেছি কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হয়েও নীরবে হাসিমুখে তার সমাধান করতে। মানছি, প্রতিদিন কমবেশি একজনের জীবনে বিরক্তিকর সময় আসতেই পারে। কিন্তু চাইলে হয়তো সহজেই তা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। আপনার জীবনে ঘটে চলা ছোটখাট সমস্যার জন্য আপনার কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। কিন্তু ছোটখাট সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে হা-হুতাশ করে নিজের পাশাপাশি অন্য কারো দিনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলার কোনো মানেই হয় না।
কোনো কারণে প্রচণ্ড বিরক্ত লাগছে, ক্লান্তি লাগছে, কারো সাথে কথা বলতে চাইছেন না। প্রকৃতির সান্নিধ্যে বেরিয়ে যান। খোলা আকাশের নীচে দিগন্তভরা মাঠ, ঘাস ছুঁয়ে বিশুদ্ধ বাতাসে নিঃশ্বাস নিন। দেখবেন আপনার মন হালকা হয়ে গিয়েছে। তখন এই সুন্দর পৃথিবীতে জন্ম নেওয়ায় নিজেকে ভাগ্যবান মনে হবে। কিছুতেই কাটাতে চাইবেন না এই পৃথিবীর মায়া। সারাজীবন বেঁচে থাকতে মন চাইবে।
দিনের শুরুতে বা অফিস শেষে ট্র্যাফিক জ্যামের ফাঁদে ধরা পড়েছেন বা রাতে ঠিক মতো ঘুম হয়নি। সারারাত বাচ্চার কান্না থামাতে জেগে কাটিয়েছেন অথবা সেলুনে গিয়ে আপনার চুলের স্টাইল নষ্ট হয়ে গিয়েছে, সকাল সকাল উঠেছে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা।
দূর দূর করে তাড়িয়ে দিন আপনার বিরক্তির কারণগুলো। নিজের কাছেই শপথ করুন আপনার ভালো দিনগুলোকে কেউ আপনার থেকে কেড়ে নিতে পারবে না। আপনার সুন্দর জীবনের কাছে এই ঘটনাগুলো খুবই তুচ্ছ। একবার আমার কথাই ভেবে দেখুন। চোখের সামনে আমি আমার জীবনী শক্তি ফুরিয়ে যেতে দেখছি, যা কোনোভাবেই আমি আটকাতে পারছি না। মন খালি বলছে, আর একটি বড়দিনের উৎসব, আর একটি জন্মদিন আমি আমার প্রিয় পরিবারের সাথে কাটাতে পারতাম! আর একাটি দিন পেতাম ভালোবাসার মানুষের সাথে জীবনের সেরা মুহূর্তটি ভাগ করে নেবার জন্য বা প্রিয় পোষা কুকুরটির সাথে খেলা করার জন্য! পেতাম জীবনে বেঁচে থাকার আরও কিছু দিন…
আমি শুনেছি, লোকে কতই না অভিযোগ করে দিনের শত কাজের ভার নিয়ে বা কঠোর পরিশ্রমের ব্যায়াম নিয়ে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন, কারণ আপনার হাতে এখনো সময় আছে শরীরের যত্ন নেবার, স্রষ্টা আপনাকে সেই সুযোগ দিয়েছেন, শরীর আপনাকে অনুমতি দিচ্ছে খাটানোর।
আমি সারাজীবন স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করার চেষ্টা করেছি, আসলে নিজেকে সুস্থ রাখার বিষয়টি আমাকে ভীষণভাবে প্ররোচিত করতো। সুস্বাস্থ্য ছিলো আমার কাছে প্রাণ শক্তির উৎস। আপনার স্বাস্থ্য এবং শরীরের প্রশংসা করুন- এমনকি আপনার শারীরিক গঠন যদি আপনার অপছন্দের হয় তবুও কৃতজ্ঞ থাকুন। শরীরের যত্ন নিন, স্বাস্থ্যকর খাবার খান। নিজের শারীরিক গঠন নিয়েও অতিমাত্রায় স্পর্শকাতর হবেন না।
ব্যায়ামের মাধ্যমে সুস্বাস্থ্য অর্জনের হাজারো দিক ও সুফল রয়েছে। সুস্বাস্থ্য মানে শুধু মাত্র আপনার শারীরিক গঠন মজবুত হবে, আপনি আরও আকর্ষণীয় বা আকর্ষণীয়া হয়ে উঠবেন তা কিন্তু নয়। নিজেকে মানসিক, আত্মিক এবং আধ্যাত্মিকভাবে সুখী করতেই কঠোর পরিশ্রম করুন। এভাবেই হয়তো কোনো একদিন উপলদ্ধি করতে পারবেন, শুধুমাত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেকে অন্যের চোখে সুন্দর করে তুলতে বড় করে প্রদর্শন করা কতটা মূল্যহীন। এতে মনের দৈন্যতা ভিন্ন অন্য কিছু ফুটে ওঠে না। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়া হোক বা সরাসরি কেউ যদি আপনাকে দেখে কটাক্ষ করে বা বিরূপ মন্তব্য করে, তাকে নিজের জীবন থেকে সরিয়ে দিন। আপনার অনুভূতিতে আঘাত হানে এমন কিছুকে কখনোই গুরুত্ব দিবেন না। নিজে ভালো থাকতে প্রয়োজনে না হয় খানিকটা অসামাজিক হলেন। সহজাত সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপনে নিজেকে অভ্যস্ত করে তোলা, নিজের জন্য বাঁচা কিন্তু দোষের কিছু নয়।
প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্তেরর জন্য কৃতজ্ঞ হোন। যেদিন আপনার ব্যথা নেই বা যে দিনগুলোতে আপনি ঠাণ্ডা জ্বরে ভুগছেন, এমনকি আপনার হাঁটু ছড়ে গিয়েছে বা পা মচকে গিয়েছে- এমন অবস্থাতেও দুঃখিত হবেন না, হতাশ হবেন না; কারণ এসবই নিরাময়যোগ্য। কোনোটাই আপনার জীবনকে হুমকির মুখে ফেলছে না। আপনি কিছুদিন পর তো সুস্থই হয়ে যাবেন।
প্রতিযোগী নয়, সহযোগী হোন, সহমর্মী হোন। বিশ্বাস করুন নিজের জন্য কিছু করার চেয়ে অন্যের জন্য কিছু করতে পারার আনন্দই বেশি। আমার শুধু মনে হয়, আমি যদি অন্যের উপকারে আসে এমন কাজ আরও করতে পারতাম…
যেহেতু আমি অসুস্থ ছিলাম, তাই আমি অবিশ্বাস্য রকমের ভালো কিছু মানুষের সাহচর্য পেয়েছি, তাদের ভালোবাসায় আপ্লুত হয়েছি, তাদের মমত্ববোধ আমার হৃদয়কে স্পর্শ করেছে। তাদের মধ্যে যেমন আমার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের উপস্থিতি ছিলো, ঠিক তেমনভাবেই ছিল বন্ধুবান্ধব ও অপরিচিত মানুষজন। তাদের অকুণ্ঠ ভালোবাসা, বাণী, মধুর ব্যবহার আমি জীবদ্দশায় কোনোদিন ফিরিয়ে দিতে পারবো না। আপনাদের আমি কোনোদিনও ভুলবো না। চিরজীবন আপনাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতাবোধ বেঁচে রইবে।
মৃত্যুশয্যায় শুয়ে আপনি আপনার খেয়াল খুশিমতো খরচ করছেন, যখন জানছেন আপনি মারা যাচ্ছেন। সময়টি ঠিক এমন নয় যে ইচ্ছে হলো আর আপনি কেনাকাটা করতে বেরিয়ে পড়লেন। কোনো পোশাক আপনার পছন্দ হলো আর আপনি কিনে নিলেন। শেষ সময়ে যেকোনো খরচই হোক না কেন আপনার পছন্দসই জিনিসের পেছনে, তা কেমন যেন অর্থহীন মনে হয়। যে জিনিসগুলো ছিল শত আদরের, তা হেলায় পড়ে থাকবে ভেবে সারাজীবনের কেনাকাটার খরচকে আজ অপচয় বলে মনে হয়।
পরবর্তী বিয়ের দাওয়াতে পরে যাবার পোশাক, গহনা বা কসমেটিকস না কিনে বন্ধু বা প্রিয়জনকে উপহার দেবার মতো কিছু কিনুন, যেটি দেখে আপনার বন্ধু আপনাকে সারা জীবন মনে রাখবে। মনে রাখবেন-
- আপনি একই পোশাক দ্বিতীয়বার পরলে তা নিয়ে কেউ কোনো কিছু মনে করবে না।
- ভালো লাগবে, যদি বন্ধু বা প্রিয় মানুষকে কোথাও খেতে নিয়ে যান। আরও ভালো হয় যদি তাকে মনের মতো রেঁধে খাওয়ান। চিৎকার করে তাকে কফির দাওয়াত দিন। তাদেরকে পরিবেশ বান্ধব গাছ উপহার দিন। তাদেরকে ভালোবেসে কোনো বার্তা লিখে পাঠান বা নিছক সুগন্ধী মোমবাতি উপহার দিয়েই তাকে বলে ফেলুন অন্তরে জমানো ভালোবাসার কথা।
অন্যান্য মানুষের সময়কে মূল্য দিন। নিজের জন্য কাওকে অপেক্ষার ফাঁদে বেঁধে রাখবেন না। কৃতজ্ঞ থাকুন যে আপনার বন্ধুটি আপনাকে ভালোবাসে আপনার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। সময় হাতে নিয়ে তৈরি হয়ে যান এবং নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই বন্ধুর অপেক্ষমান জায়গাটিতে পৌঁছে তাকে চমকে দিন, দেখবেন বন্ধুটি আপনার সময়ানুবর্তীতার প্রশংসা করছে। আপনার স্তুতিতে মাতবে চারপাশ। উল্লসিত হোন, কারণ আপনি রয়ে যাবেন স্মৃতিতে চির অম্লান।
এই বড়দিনে আমার পরিবার কোনো রকম উপহার কিনতে নারাজ। এমনকি তারা বড়দিনের গাছটিও সাজাচ্ছে না। একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। কেনাকাটার ঝঞ্ঝাট নেই, নেই কোনো তাড়াহুড়া। পরিবারের সবাই বড়দিন উপলক্ষে সুন্দর শুভেচ্ছা বার্তা লিখে আমাকে উপহার দিচ্ছে। এছাড়াও একবার খালি কল্পনা করুন, পরিবারের সদস্যরা আমার জন্য অনেক খুঁজে এমন এক উপহার দিলো, যা তাদের কাছেই নীরব সাক্ষী হয়ে পড়ে রইবে। ব্যাপারটা বড্ড অযৌক্তিক দেখায়। তার চেয়ে কার্ডে লেখা তাদের মনের ভাবনাগুলো আমার কাছে বেশি অর্থবহ। আসলে আমি বলতে চাইছি, উৎসবে উপহার থাকতেই হবে, উপহারের মূল্যে লুকিয়ে রইবে ভালোবাসা- ব্যাপারটি ভিত্তিহীন। ভালোবাসার প্রকাশে উপহারের প্রয়োজন নেই। ছোট ভাবনার মাঝেও বড় কোনো ভালোবাসার অর্ঘ্য লুকোনো থাকতে পারে, যা অমূল্য।
জাগতিক বস্তুর বদলে অভিজ্ঞতা অর্জনে আপনার অর্থ খরচ করুন। কারণ অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার কখনো ফুরোবে না।
সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ুন প্রকৃতির সান্নিধ্যে। সমুদ্রের পাড়ে পা ডুবিয়ে বালুতে কাটুন আঁকিবুঁকি। চোখে-মুখে পানির ঝাপ্টা মারুন, নিন নোনা পানির স্বাদ। মুহূর্তকে সঙ্গী করে বাঁচুন। ভাবছেন, ক্যামেরাবন্দী করবেন হাজারো রঙিন ছবি? এখুনি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন এমন ভাবনা। নিজের জন্য বাঁচুন। কী হবে মনের আনন্দে ছবি তুলে অন্যকে দেখিয়ে? হেলায় নির্মল আনন্দের মুহূর্ত বেঁচে থাকার সুখ হারাবেন। স্ক্রিনে নিজ জীবনকে বন্দী করা বন্ধ করুন।
সকলের উদ্দেশ্যে খোলা মনে একটি প্রশ্ন রাখি? মাত্র একটি দিন বা রাত বাইরে কাটাবো বলে বহু ঘন্টা ধরে চুল ও মেকআপের পেছনে সময় ব্যয় করে আদৌ কি কোনো লাভ রয়েছে? নারীদের ভাবনার এই অতল রহস্যের হদিস আমি আজও খুঁজে বের করতে পারিনি।
কখনো ক্বচিৎ হঠাৎ ভোরবেলা পাখির কল-কাকলিতে ঘুম ভেঙে দেখোই না নতুন দিনের সূর্যোদয়। কী সুন্দর সোনালী আভায় ঢাকা পড়ে আকাশ! অথবা শুনতে পারেন পুরনো দিনের গান। সুরেলা সংগীত কিন্তু মহৌষধ। পোষা প্রাণীটির গায়ে আদর করে হাত বুলোতে পারেন। আমি এটি ভীষণভাবে মিস করবো। প্রিয় বন্ধুদের সাথে কথা বলুন। হাতে তুলে নিন মুঠোফোন। আর জিজ্ঞাস করুন, ”বন্ধু ভালো আছিস তো?“
বাঁচার জন্য কাজ করুন, কাজের জন্য বাঁচবেন না। তা-ই করুন যা আপনি করতে ভালবাসেন। কেক খেতে ইচ্ছে করছে? নির্দ্বিধায় খেয়ে ফেলুন। অপরাধবোধে ভুগবেন না।
জীবনে অন্যের ভালো থাকার ধারণায় প্রভাবিত না হয়ে নিজের ভালো থাকার ধারণাকে মেলে ধরুন। অযথা দুশ্চিন্তায় না ভুগে মন যা চায় তা-ই করুন। মন যদি অল্পে তুষ্ট থাকে আপনিও সন্তুষ্ট হন।
আপনার কাছের মানুষদের প্রতিটি মুহূর্তে জানান একটিমাত্র শব্দ, ভালোবাসি। তাদেরকে বলুন, জেনে রেখো, আমার সবটুকু দিয়ে আমি তোমাদের ভালোবাসি, আমৃত্যু ভালবাসবো, এবং মৃত্যুর পরেও…।
এছাড়াও, মনে রাখবেন, যা কিছু আপনার জীবনকে দুঃখজনক করে তুলছে, আপনার কাছে তা পরিবর্তন করার ক্ষমতা রয়েছে, সেটা কাজই হোক কিংবা ভালোবাসা। যেকোনো পরিবর্তন আনতে দুঃসাহসী হতে হয়। দুঃসাহসী হন, পরিবর্তন ঘটান নিজের দৃষ্টিভঙ্গির, নিজের জীবন দর্শনের। আপনি জানেন না কতদিন পৃথিবীর এই মায়াবী আলোয় আপনি নিঃশ্বাস নিতে পারবেন। জীবনের রঙিন মুহূর্তকে ভারাক্রান্ত মন ও হতাশার সাগরে ভাসিয়ে দেবেন না। আমি জানি, হয়তো আরও হাজারো মানুষ এমন পরামর্শই আপনাদের দিয়ে থাকবে। বিশ্বাস করুন, জীবনে এর চেয়ে বড় কোনো সত্যি হতে পারে না।
যা-ই হোক, জেনে রাখুন, এই লেখাটি শুধু এক তরুণীর জীবনবোধ থেকে দেওয়া পরামর্শ। ভালো লাগলে শুনুন, নতুবা ছেড়ে দিন, আমি কিছুই মনে করবো না!
ওহ, সকলের প্রতি শেষ অনুরোধ, যদি সম্ভব হয়, মানবতার জন্য (এবং আমার জন্য) নিয়মিত রক্ত দান করুন। এটি আপনার মনকে নিছক ভালো কাজের আত্মতৃপ্তিই দেবে না, কারো জীবন বাঁচাতেও কাজে আসবে। আমার কেন যেন মনে হয় অনেকেই বিষয়টি এড়িয়ে যান, যেখানে এই সাময়িক রক্ত দান হয়তো ৩টি জীবন বাঁচাতে পারে। খালি চোখে হয়তো ব্যাপারটিকে তেমন বড় কিছু বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু এই সামান্য রক্তদানের বিষয়টি মানবজীবন রক্ষায় স্রষ্টার আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেয়। রক্তদানের প্রক্রিয়াটিও সহজ।
এই রক্তদান (আমি গুণে শেষ করতে পারিনি ঠিক কত ব্যাগ) আমাকে অতিরিক্ত একটি বছর বেঁচে থাকতে সাহায্য করেছে- এই একটি বছরের জন্য আমি চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকবো, যে সময়টি আমার পরিবার, বন্ধু ও প্রিয় কুকুরের সাথে কাটাতে পেরেছি। এই একটি বছরে আমি আমার জীবনের সেরা সময়টি, সবচেয়ে দীর্ঘ সময়টি কাটিয়েছি।
হয়তো আবার দেখা হবে। কোনোদিন…
হলি’’
এটি অস্ট্রেলীয় তরুণী হলি বুচারের লেখা শেষ চিঠি, যা লেখার পরদিন সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। এই অস্ট্রেলীয় তরুণী ২০১৮ সালের ৪ জানুয়ারি পরলোক গমন করে।
যেভাবে মারা যান এই অস্ট্রেলীয় তরুনী
হলি মৃত্যুর পূর্বে এক বছর যাবত ইউয়িং সারকোমা নামক এক বিরল ক্যান্সারে ভুগছিলেন। বিশেষত তরুণ-তরুণী ও শিশুরা এই মরণরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই ক্যান্সার হাড় ও তার চারপাশের নরম টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আক্রান্তদের বয়স সাধারণত ১০-২০ বছরের মাঝে হয়ে থাকে।
এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে হাড়ের ব্যথা, যা সময় সময় ও রাতে খারাপ হতে পারে। শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দেয় এবং রোগী উচ্চ তাপমাত্রার শিকার হয়, যা সহজে নামে না। সবসময় ক্লান্তি বোধ এবং ওজন কমার অভিজ্ঞতা হতে পারে। হাড় দুর্বল হয়ে থাকে, ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, এমনকি অনেকের হাড় ভেঙেও যায়।
শরীরের কোন অঞ্চলে ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে তা জানতে এক্স-রে, রক্ত পরীক্ষা, এমআরআই স্ক্যান, সিটি স্ক্যান বা পিইটি স্ক্যানসহ নানা পরীক্ষা করা হয়।
চিকিৎসায় কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি প্রভৃতি ব্যবহার করা হয়। পরবর্তীতে অস্ত্রোপ্রচার করে দেহ থেকে মৃত কোষ বের করে ফেলা হয়।