মধ্যপ্রাচ্যের ‘উর্বর অর্ধচন্দ্রাকৃতির ভূমি’তে (Fertile Crescent) অবস্থিত ‘ইহুদি রাষ্ট্র’ ইসরায়েল সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষ শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর একটি। ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণ–পূর্ব তীর ও লোহিত সাগরের উত্তর তীরে অবস্থিত ক্ষুদ্র রাষ্ট্রটি উত্তরে লেবানন, উত্তর–পূর্বে সিরিয়া, পূর্বে জর্দান ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রিত পশ্চিম তীর, পশ্চিমে হামাস–নিয়ন্ত্রিত গাজা ভূখণ্ড এবং দক্ষিণ–পশ্চিমে মিসর দ্বারা পরিবেষ্টিত। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনের ভূমিতে ইহুদি অভিবাসীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এই রাষ্ট্রটিকে মুসলিম বিশ্বের একটি বৃহৎ অংশ ‘ফিলিস্তিনিদের ভূমি জবরদখলকারী রাষ্ট্র’ এবং মধ্যপ্রাচ্যে ‘পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ/ঔপনিবেশকতাবাদের প্রতিনিধি’ হিসেবে বিবেচনা করে, এবং এই প্রেক্ষাপটে মুসলিম–অধ্যুষিত ও ‘ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা’র সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অধিকাংশই ভূরাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কারণে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি প্রদান করেনি।
কিন্তু ৩টি আরব রাষ্ট্র (মিসর, জর্দান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত), কতিপয় আফ্রিকান অনারব মুসলিম রাষ্ট্র (চাদ, নাইজেরিয়া, গিনি, গিনি–বিসাউ, গাম্বিয়া, সেনেগাল, বার্কিনা ফাসো, আইভরি কোস্ট ও সিয়েরা লিয়ন), ২টি ইউরোপীয় মুসলিম রাষ্ট্র (আলবেনিয়া ও বসনিয়া–হার্জেগোভিনা), ৬টি প্রাক্তন সোভিয়েত মুসলিম রাষ্ট্র (আজারবাইজান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তান) এবং তুরস্ক ও মালদ্বীপ ইসরায়েলকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। এর পাশাপাশি ‘ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা’র সদস্য কিন্তু মুসলিম–সংখ্যাগরিষ্ঠ নয় এমন রাষ্ট্রগুলোও (বেনিন, ক্যামেরুন, ইরিত্রিয়া, গ্যাবন, টোগো, মোজাম্বিক, উগান্ডা, সুরিনাম ও গায়ানা) ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তদুপরি, আরো বেশকিছু মুসলিম রাষ্ট্রের (যেমন: সৌদি আরব, বাহরাইন, মরক্কো, নাইজার, মালি, সুদান, মৌরিতানিয়া প্রভৃতি) সঙ্গে ইসরায়েলের অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক রয়েছে এবং এগুলোও ভবিষ্যতে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর বিপরীতে অনেকগুলো আরব রাষ্ট্র এবং সিংহভাগ দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পূর্ব এশীয় মুসলিম রাষ্ট্র এখন পর্যন্ত ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে নারাজ।
তুরস্ক, মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ইসরায়েলের আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক এবং সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক নিয়ে প্রচুর আলাপ–আলোচনা হয়েছে, কিন্তু একটি মুসলিম রাষ্ট্র রয়েছে, যেটির সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয় না। এই রাষ্ট্রটি হলো দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলে অবস্থিত আজারবাইজান।
১৯৯১ সালে আজারবাইজান স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার পর থেকেই ইসরায়েলের সঙ্গে রাষ্ট্রটির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ভূরাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও কৌশলগত সম্পর্ক বিদ্যমান। ইসরায়েলের ভূকৌশলগত অবস্থান এবং জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য আজারবাইজান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রাষ্ট্র। কিন্তু তা সত্ত্বেও এটি নিয়ে কোনো আলোড়নের সৃষ্টি হয় না। আজারবাইজানের বর্তমান রাষ্ট্রপতি ইলহাম আলিয়েভের মতে, আজারবাইজানি–ইসরায়েলি সম্পর্ক হিমশৈল বা আইসবার্গের অনুরূপ, যার মাত্র এক–দশমাংশ দৃশ্যমান, বাকি নয়–দশমাংশই পানির নিচে লোকচক্ষুর অন্তরালে অবস্থিত।
পূর্ব ইউরোপ ও পশ্চিম এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত আজারবাইজান একটি প্রাক্তন সোভিয়েত রাষ্ট্র। পূর্বে কাস্পিয়ান সাগর, উত্তরে রাশিয়া, উত্তর–পশ্চিমে জর্জিয়া, পশ্চিমে আর্মেনিয়া ও দক্ষিণে ইরান দ্বারা বেষ্টিত এই দক্ষিণ ককেশীয় রাষ্ট্রটিকে ভৌগোলিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যের বর্ধিতাংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আজারবাইজানের মূল ভূখণ্ডের বাইরে রাষ্ট্রটির একটি বৃহৎ ছিটমহল রয়েছে, যেটির নাম নাখচিভান এবং যেটি উত্তর ও পূর্বে আর্মেনিয়া, দক্ষিণ ও পশ্চিমে ইরান এবং উত্তর–পশ্চিমে তুরস্ক দ্বারা পরিবেষ্টিত। পূর্ব স্লাভিক, তুর্কি ও ইরানি সভ্যতার সংযোগস্থলে অবস্থিত আজারবাইজানের ভৌগোলিক অবস্থান রাষ্ট্রটিকে ভূরাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে। ‘প্রচ্ছন্ন পরাশক্তি’ রাশিয়া এবং ‘আঞ্চলিক বৃহৎ শক্তি’ তুরস্ক ও ইরান দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায় আজারবাইজানের ভূকৌশলগত গুরুত্ব অপরিসীম। তদুপরি, আজারবাইজান একটি তেলসমৃদ্ধ রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রটির মূল ভূখণ্ডে ও কাস্পিয়ান সাগরে আজারবাইজানি জলসীমায় প্রচুর খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ রয়েছে।
বর্তমান আজারবাইজানের জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৯১% জাতিগত আজারবাইজানি, যারা বৃহত্তর তুর্কি জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। রাষ্ট্রটির জনসংখ্যার প্রায় ৯৭% ধর্মগতভাবে মুসলিম, যাদের মধ্যে প্রায় ৮৫% শিয়া এবং প্রায় ১৫% সুন্নি, কিন্তু সামগ্রিকভাবে আজারবাইজানের জনসাধারণের মধ্যে ধর্মচর্চার হার কম। আজারবাইজান বিশ্বের ৪টি শিয়াপ্রধান রাষ্ট্রের মধ্যে একটি (বাকি ৩টি শিয়াপ্রধান রাষ্ট্র হচ্ছে ইরান, ইরাক ও বাহরাইন), এবং জাতিগত তুর্কি–অধ্যুষিত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একমাত্র শিয়াপ্রধান রাষ্ট্র। উল্লেখ্য, বৃহত্তর তুর্কি জাতিগোষ্ঠী অধ্যুষিত ৬টি রাষ্ট্রের সবগুলোর সঙ্গেই ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে।
বর্তমান আজারবাইজানের ভূখণ্ডটি ১৮১০–এর দশকে রুশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ১৯২০ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত এটি ‘আজারবাইজান সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র’ নামে প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি অংশ ছিল। সোভিয়েত অর্থনীতির জন্য আজারবাইজানের তেলভাণ্ডারের গুরুত্ব ছিল সীমাহীন, এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে জার্মানির সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য ছিল আজারবাইজানের তেলখনিগুলো দখল করা। ইতিহাসবিদদের মতে, আজারবাইজানের তেলভাণ্ডার দখলের ক্ষেত্রে জার্মান সশস্ত্রবাহিনীর ব্যর্থতা ছিল বিশ্বযুদ্ধে জার্মান পরাজয়ের একটি অন্যতম কারণ। জ্বালানি সংক্রান্ত গুরুত্ব ছাড়াও আজারবাইজান সোভিয়েত রণকৌশলবিদদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ মার্কিন মিত্ররাষ্ট্র ইরান ও ন্যাটো সদস্য তুরস্কের ওপর এবং বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যে সম্ভাব্য আক্রমণ পরিচালনার জন্য আজারবাইজান ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যপ্রাচ্যীয় ঘাঁটি।
১৯৫০–এর দশক থেকে প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন আরব রাষ্ট্রগুলোতে নিজস্ব প্রভাব বিস্তারের উদ্দেশ্যে এবং ইসরায়েলের পশ্চিমাপন্থী পররাষ্ট্রনীতি অবলম্বনের প্রেক্ষাপটে তীব্র ইসরায়েলবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করে। সোভিয়েত আজারবাইজানও মস্কোর নীতি অনুসরণ করে ইসরায়েলবিরোধী এবং ফিলিস্তিনিপন্থী অবস্থান গ্রহণ করেছিল। বিশেষত, ১৯৬৭–১৯৭০ সালে মিসরীয়–ইসরায়েলি ‘অঘোষিত যুদ্ধ’ চলাকালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর আক্রমণ থেকে মিসরীয় হৃদভূমিকে সুরক্ষা প্রদানের জন্য ১৫,০০০ সৈন্যের যে বাহিনীটিকে মিসরে মোতায়েন করেছিল, তার সৈন্যদের একাংশ এসেছিল আজারবাইজান থেকে। ১৯৭৩ সালের আরব–ইসরায়েল যুদ্ধ চলাকালে সোভিয়েত আজারবাইজান মিসর ও সিরিয়াকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বিপুল পরিমাণ আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছিল।
কিন্তু ১৯৯১ সালের অক্টোবরে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের প্রাক্কালে আজারবাইজান স্বাধীনতা লাভ করে এবং ২৫ ডিসেম্বর বিশ্বের দ্বিতীয় রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েল আজারবাইজানকে স্বীকৃতি প্রদান করে (আজারবাইজানকে স্বীকৃতি প্রদানকারী প্রথম রাষ্ট্রটি ছিল তুরস্ক)। এর মধ্য দিয়ে আজারবাইজানি–ইসরায়েলি সহযোগিতামূলক সম্পর্কের সূত্রপাত ঘটে। ১৯৯২ সালের ৭ এপ্রিল রাষ্ট্র দুইটির মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। বর্তমানে আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে ইসরায়েলের দূতাবাস রয়েছে, কিন্তু ইসরায়েলে আজারবাইজানের কোনো কূটনৈতিক দপ্তর নেই।
ইসরায়েল ও আজারবাইজান ভৌগোলিকভাবে নিকটবর্তী নয় (রাষ্ট্র দুইটির মধ্যবর্তী দূরত্ব ২,২৮১.৫ কি.মি.), এবং রাষ্ট্র দুইটির মধ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক, ভাষাগত, ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক সামঞ্জস্য নেই। তা সত্ত্বেও আজারবাইজানের স্বাধীনতা লাভের প্রাক্কালেই রাষ্ট্র দুইটির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং এর মূল কারণ ছিল ভূরাজনৈতিক। আজারবাইজানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের প্রান্তিক অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার, এতদঞ্চলে সোভিয়েত প্রভাব বিলুপ্তির ফলে সৃষ্ট সামরিক–রাজনৈতিক শূন্যস্থান পূরণ, তেলসমৃদ্ধ আজারবাইজানে প্রভাব বিস্তারের মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের জ্বালানি নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং ইরানের বিরুদ্ধে ভূকৌশলগত অবস্থানের উন্নয়ন – এসব উদ্দেশ্যে ইসরায়েল মুসলিম–অধ্যুষিত আজারবাইজানের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী ছিল।
অন্যদিকে, ১৯৮৮ সাল থেকে আর্মেনিয়ার সঙ্গে চলমান নাগর্নো–কারাবাখ যুদ্ধে লিপ্ত ও ইরান থেকে ইসলামপন্থী ভাবাদর্শ আজারবাইজানে ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে ভীত আজারবাইজানের ধর্মনিরপেক্ষ ও জাতীয়তাবাদী শাসকশ্রেণি উন্নত সমরপ্রযুক্তি ও কারিগরি সহায়তা লাভ এবং আর্মেনীয় ও ইরানি প্রভাব রোধের উদ্দেশ্যে ইহুদি–অধ্যুষিত ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল।
নাগর্নো–কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আর্মেনীয়–আজারবাইজানি দ্বন্দ্বে ইসরায়েল আজারবাইজানকে সমর্থন করে এবং সামরিক সহায়তা প্রদান করে। এ সময় ইসরায়েল (ও তুরস্ক) আজারবাইজানকে মার্কিন–নির্মিত ‘স্টিঙ্গার’ (Stinger) বিমান–বিধ্বংসী ক্ষেপনাস্ত্র সরবরাহ করেছিল। কিন্তু এই যুদ্ধে আজারবাইজান পরাজিত হয় এবং বিরোধপূর্ণ নাগর্নো–কারাবাখ অঞ্চলের ওপর আর্মেনিয়ার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে নাগর্নো–কারাবাখ এখনো আজারবাইজানের অংশ। বস্তুত নাগর্নো–কারাবাখের ওপর আর্মেনীয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলেও আজারবাইজানের সঙ্গে আর্মেনিয়ার দ্বন্দ্বের এখনো অবসান ঘটেনি এবং কিছুদিন পরপরই রাষ্ট্র দুইটির মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষ শুরু হয়। এই প্রেক্ষাপটে আজারবাইজান সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে সচেষ্ট হয়েছে এবং আজারবাইজানের সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।
আর্মেনিয়ার পাশাপাশি ইরানের সঙ্গেও বিভিন্ন কারণে আজারবাইজানের দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক বিদ্যমান।
প্রথমত, ভৌগোলিক ও জাতিগতভাবে আজারবাইজান একটি অসম্পূর্ণ রাষ্ট্র। আজারবাইজান ভৌগোলিক অঞ্চলটি স্বাধীন আজারবাইজান ও ইরানের অন্তর্গত ‘ইরানি আজারবাইজান’ এই দুইটি ভাগে বিভক্ত। ‘ইরানি আজারবাইজান’ অঞ্চলটি পশ্চিম আজারবাইজান, পূর্ব আজারবাইজান, আরদাবিল ও জাঞ্জান প্রদেশে বিভক্ত এবং ইরানি আজারবাইজানের বসবাসরত জাতিগত আজারবাইজানির সংখ্যা দেড় কোটি থেকে ১ কোটি ৮৫ লক্ষের কাছাকাছি। অর্থাৎ, স্বাধীন আজারবাইজানের চেয়ে ইরানি আজারবাইজানে বেশি সংখ্যক জাতিগত আজারবাইজানি বসবাস করে (স্বাধীন আজারবাইজানের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ১ লক্ষ)।
আজারবাইজানি জাতীয়তাবাদীদের মতে, স্বাধীন আজারবাইজান হচ্ছে ‘উত্তর আজারবাইজান’ আর ইরানি আজারবাইজান হচ্ছে ‘দক্ষিণ আজারবাইজান’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ও তার পরবর্তীতে ১৯৪১–১৯৪৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক উত্তর ইরান দখলের সময় আজারবাইজানি জাতীয়তাবাদীরা উভয় আজারবাইজানকে একত্রিত করে ‘বৃহত্তর সমাজতান্ত্রিক আজারবাইজান’ প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছিল। ১৯৮০–এর দশকের শেষদিকে আজারবাইজানি জাতীয়তাবাদীরা পুনরায় এই দাবি উত্থাপন করে। স্বভাবতই ইরান আজারবাইজানের স্বাধীনতা লাভকে নিজের ভৌগোলিক অখণ্ডতার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করেছিল।
দ্বিতীয়ত, ১৯৭৯ সালের ‘ইসলামি বিপ্লবে’র পর থেকে ইরান পার্শ্ববর্তী ককেশাস, মধ্য এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে ইরানি ধাঁচের ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় লিপ্ত ছিল এবং সোভিয়েত আজারবাইজানের কমিউনিস্ট শাসকশ্রেণি এই প্রচেষ্টাকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করত। আজারবাইজান স্বাধীনতা লাভের পর মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে ১৯৯৩ সালে প্রজাতন্ত্রটির প্রাক্তন কমিউনিস্ট শাসক (১৯৬৯–১৯৮২) ও সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রাক্তন প্রথম উপপ্রধানমন্ত্রী (১৯৮২–১৯৮৭) হায়দার আলিয়েভ রাষ্ট্রটির শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। তিনি আজারবাইজানে সোভিয়েত ধাঁচের ধর্মনিরপেক্ষ ও কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করেন এবং ২০০৩ সালে তার মৃত্যুর পর থেকে তার ছেলে ইলহাম আলিয়েভ আজারবাইজানের রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত। আজারবাইজানি শাসকশ্রেণি ইরানি ধাঁচের ইসলামি শাসনব্যবস্থাকে আজারবাইজানের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে এবং আজারবাইজানে ইরানি প্রভাব বিস্তার রোধের জন্য তারা সচেষ্ট।
তৃতীয়ত, নাগর্নো–কারাবাখ যুদ্ধে এবং পরবর্তী দ্বন্দ্বে ইরান সক্রিয়ভাবে আর্মেনিয়াকে সমর্থন করেছে। আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান উভয়ের সঙ্গেই ইরানের ঘনিষ্ঠ ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বিদ্যমান, কিন্তু তা সত্ত্বেও ইরান শিয়া মুসলিম–অধ্যুষিত আজারবাইজানকে সমর্থন না করে খ্রিস্টান–অধ্যুষিত আর্মেনিয়াকে সমর্থন করছে। বস্তুত আর্মেনিয়ার মাধ্যমে আজারবাইজানের ওপর চাপ বজায় রাখার মাধ্যমে ইরানি আজারবাইজান থেকে আজারবাইজানের দৃষ্টি সরিয়ে রাখার জন্যই ইরান এরকম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
সর্বোপরি, আজারবাইজান ও ইরান উভয়ের সঙ্গেই কাস্পিয়ান সাগরের জলসীমা রয়েছে এবং এই জলসীমা নিয়ে রাষ্ট্র দুইটির মধ্যে বিরোধ রয়েছে। কাস্পিয়ান সাগরে বিপুল পরিমাণ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ রয়েছে এবং স্বভাবতই উভয় রাষ্ট্রই এই সম্পদের ওপর নিজস্ব কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে। আজারবাইজান বেশ কয়েকবার অভিযোগ তুলেছে যে, ইরানি নৌবাহিনী আজারবাইজানি জলসীমায় প্রবেশ করেছে। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র দুটির মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও ২০১৮ সালের আগস্টে কাস্পিয়ান সাগরের উপকূলীয় রাষ্ট্রগুলো (রাশিয়া, কাজাখস্তান, তুর্কমেনিস্তান, আজারবাইজান ও ইরান) জলসীমা নিয়ে বিরোধ নিরসনের উদ্দেশ্যে একটি ‘ঐতিহাসিক’ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, কিন্তু কাস্পিয়ান অঞ্চলে ইরানি–আজারবাইজানি দ্বন্দ্বের এখনো চূড়ান্ত নিরসন হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানি ‘হুমকি’কে মোকাবেলা করার জন্য আজারবাইজান ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মিত্রতা গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যদিকে, ‘ইসলামি বিপ্লবে’র পর থেকে ভূরাজনৈতিক ও আদর্শিক কারণে ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কের ক্রমাগত অবনতি ঘটেছে এবং বর্তমানে এই সম্পর্ক খুবই খারাপ অবস্থায় রয়েছে। বিশেষত ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র সৃষ্টির প্রচেষ্টাকে ইসরায়েল নিজস্ব অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ বিবেচনা করে। এর পাশাপাশি, ১৯৯০–এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মৌন সমর্থনে ককেশাস অঞ্চলে রাশিয়া, ইরান ও আর্মেনিয়ার প্রভাবকে রোধ করার জন্য ইসরায়েল, আজারবাইজান, জর্জিয়া ও তুরস্কের সমন্বয়ে একটি ‘ভূকৌশলগত অক্ষ’ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু আজারবাইজান তার পররাষ্ট্রনীতি পুরোপুরিভাবে পশ্চিমামুখী করতে রাজি ছিল না এবং এজন্য রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রয়াসী হয়। ফলে এরকম কোনো অক্ষ গড়ে ওঠেনি।
কিন্তু ইরানি–আজারবাইজানি দ্বন্দ্ব এবং ইরানি–ইসরায়েলি দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে ইসরায়েল ও আজারবাইজানের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। আজারবাইজান ইসরায়েল থেকে প্রচুর পরিমাণ সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করে থাকে। ‘জেন’স ডিফেন্স উইকলি’র তথ্য অনুসারে, ইসরায়েল আজারবাইজানের কাছে ভারী কামান, ট্যাঙ্ক–বিধ্বংসী অস্ত্র, ক্ষেপণাস্ত্র এবং যুদ্ধবিমান রপ্তানি করে থাকে। আজারবাইজানি সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা ইসরায়েলে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। আজারবাইজানের নিজস্ব যুদ্ধাস্ত্র নির্মাণ শিল্প গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও ইসরায়েল আজারবাইজানকে সহায়তা করছে। ২০১১ সালে ইসরায়েলের ‘অ্যারোনটিক্স ডিফেন্স সিস্টেমস’ কোম্পানি আজারবাইজানি সরকারের সঙ্গে যুগ্মভাবে আজারবাইজানের ভূমিতে ‘আজাদ সিস্টেম’ কোম্পানি স্থাপন করেছে, যেটি চালকবিহীন বিমান নির্মাণ করে।
২০১২ সালে আজারবাইজান ইসরায়েলের রাষ্ট্রায়ত্ত ‘ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রি’র কাছ থেকে চালকবিহীন বিমান এবং বিমান–বিধ্বংসী ও অন্যান্য ক্ষেপনাস্ত্র ক্রয় করে। ২০১৬ সালের মধ্যে আজারবাইজান ইসরায়েলের কাছ থেকে প্রায় ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার সমমূল্যের অস্ত্রশস্ত্র ক্রয় করেছে। ২০১৯ সালে আজারবাইজান বিশ্বের প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের ‘এলবিত সিস্টেম’ কোম্পানির কাছ থেকে ‘স্কাই স্ট্রাইকার’ আত্মঘাতী ড্রোন ক্রয় করেছে।
ইসরায়েলি ও আজারবাইজানি গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মধ্যেও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বিদ্যমান। ১৯৯০–এর দশকে ‘হিজব–উত–তাহরির’সহ বিভিন্ন মিলিট্যান্ট গ্রুপ আজারবাইজানে সক্রিয় ছিল এবং এদের দমন করার জন্য আজারবাইজান ইসরায়েলি সহায়তা গ্রহণ করে। ২০০১ সালের অক্টোবরে ইসরায়েল ও আজারবাইজান ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে’ একই অবস্থান গ্রহণের ব্যাপারে একমত হয়। ২০০৮ সালে আজারবাইজানি নিরাপত্তারক্ষীরা বাকুতে অবস্থিত ইসরায়েলি দূতাবাসের ওপর আক্রমণ চালানোর একটি প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেয় এবং ২০০৯ সালের মে মাসে লেবাননভিত্তিক শিয়া সংগঠন হিজবুল্লাহ–এর দুইজন সদস্যকে এই আক্রমণ প্রচেষ্টার জন্য আজারবাইজানের আদালত শাস্তি প্রদান করে। এই আক্রমণ প্রচেষ্টার পেছনে ইরানি হস্তক্ষেপ জড়িত ছিল বলেও বাকু ও জেরুজালেম থেকে অভিযোগ করা হয়। বস্তুত আজারবাইজানে ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের কার্যক্রম এত বিস্তৃত যে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে ইরানবিরোধী কার্যকলাপে ইসরায়েলকে সহায়তা করার দায়ে আজারবাইজানকে অভিযুক্ত করে। কিন্তু পরের মাসেই ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের তথ্য মোতাবেক আজারবাইজানি নিরাপত্তারক্ষীরা ২২ জনকে গ্রেপ্তার করে এবং এরা ইরানি ‘ইসলামি বিপ্লবী রক্ষীবাহিনী’র (Islamic Revolutionary Guard Corps, ‘IRGC’) নির্দেশে আজারবাইজানে অবস্থিত মার্কিন ও ইসরায়েলি দূতাবাসে আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা করছিল বলে অভিযোগ করে।
তদুপরি, আজারবাইজান ইসরায়েলকে নিজ ভূমিতে সামরিক ও গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের জন্য অনুমতি প্রদান করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে, যদিও আজারবাইজান ও ইসরায়েল উভয়েই এই তথ্য অস্বীকার করেছে। কিন্তু বিভিন্ন সূত্রের তথ্যমতে, ইরানের ওপর নজরদারি করার জন্য কাস্পিয়ান সাগরের তীরে এবং ইরানি–আজারবাইজানি সীমান্ত বরাবর ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ বৈদ্যুতিক লিসনিং পোস্ট স্থাপন করেছে। তদুপরি, আজারবাইজানের কয়েকটি সোভিয়েত–নির্মিত বিমানঘাঁটি ব্যবহারের জন্য ইসরায়েলি বিমানবাহিনীকে অনুমতি প্রদান করা হয়েছে বলেও জানা যায়। বিশেষত, কাস্পিয়ান সাগরের তীরে পূর্ব আজারবাইজানে অবস্থিত সোভিয়েত আমলে নির্মিত সিতালচায় সামরিক বিমানঘাঁটিতে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী ঘাঁটি স্থাপন করেছে বলে বিশ্লেষকরা ধারণা করেন। এই বিমানঘাঁটিটি ইরান থেকে ৫০০ কি.মি. দূরে অবস্থিত এবং বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে এতদঞ্চলে ইরানের বিরুদ্ধে একটি ‘দ্বিতীয় রণাঙ্গন’ খুলতে পারে। তদুপরি, ইরানি পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর বিমান হামলা চালানোর জন্যও ইসরায়েল আজারবাইজানি বিমানঘাঁটিগুলো ব্যবহার করতে পারে।
সামরিক সম্পর্কের পাশাপাশি ইসরায়েল ও আজারবাইজানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে এবং সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত ও কারিগরি যোগাযোগও বিদ্যমান। ইসরায়েলের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য তেলসমৃদ্ধ আজারবাইজান খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ইসরায়েলের আমদানিকৃত জ্বালানি তেলের প্রায় ৪০% আসে আজারবাইজান থেকে। তদুপরি, ইসরায়েলি ব্যবসায়ীরা আজারবাইজানে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছে এবং আজারবাইজানের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেলফোন অপারেটর ‘বাকসেল’ ইসরায়েলি মালিকানাধীন।
রাষ্ট্র দুইটির মধ্যে পারস্পরিক পর্যটনও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ২০১০ সালে আজারবাইজানে যে নতুন ভিসা আইন প্রবর্তন করা হয়েছে, সেটি থেকে ছাড় পাওয়া দুইটি রাষ্ট্রের একটি হচ্ছে ইসরায়েল (অপরটি তুরস্ক)। ২০১৭ সালের এপ্রিলে রাষ্ট্র দুইটির মধ্যে বাণিজ্যকে সহজতর করার উদ্দেশ্যে শুল্ক ব্যবস্থার সরলীকরণের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আজারবাইজান ইসরায়েলের শীর্ষ বাণিজ্যিক অংশীদারগুলোর একটি এবং ২০১৯ সালে ইসরায়েল আজারবাইজান থেকে ১৩৩ কোটি (বা ১.৩৩ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্য আমদানি করেছে।
আজারবাইজানি ও ইসরায়েলি বিশ্লেষকদের মতে, ইউরেশিয়া অঞ্চলে ইসরায়েলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ‘কৌশলগত অংশীদার’ হচ্ছে আজারবাইজান। আজারবাইজানের শাসকশ্রেণি ইসরায়েলের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদি লবির সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলছে, যার মূল উদ্দেশ্য তাদের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আজারবাইজানের সম্পর্ক উন্নয়ন করা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো আজারবাইজানের যে নিন্দা করে সেটি এড়ানো। একইসঙ্গে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আর্মেনীয় লবির যে প্রভাব রয়েছে (১৯৯০–এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর্মেনিয়াকে এত বেশি আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছিল যে আর্মেনিয়া ‘ককেশাসের ইসরায়েল’ নামে পরিচিতি অর্জন করেছিল), সেটির প্রভাব হ্রাস করার জন্যও আজারবাইজান ইসরায়েল ও মার্কিন ইহুদি লবির সমর্থন লাভের প্রত্যাশী। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ধারণা করা যায়, আজারবাইজানের সরকারব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন না ঘটলে অথবা বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন না এলে আজারবাইজান ও ইসরায়েলের মধ্যেকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অপরিবর্তিত থাকবে।