(পর্ব ৩ এর পর থেকে)
৭
সিতি কয়েক সপ্তাহ পর বুঝতে পারেন তাকে দিয়ে খুন করানো আর প্র্যাঙ্কের নাটক করানো পুরোটাই ছিল উত্তর কোরিয়ার পরিকল্পনার অংশ।
সিতির জেমস নামের যে জাপানি লোকের সাথে ঘুরছিলেন, ওই লোক আসলে ছিলেন উত্তর কোরিয়ার এক এজেন্ট। তার প্রকৃত নাম রি জি উ। রি জি উ ট্যাক্সি চালক জনের ট্যাক্সিতে চড়ার সময় তাকে কয়েকজন তরুণীর খোঁজ দিতে বলেন। জন প্রথমে তাকে নিয়ে যান এক ফিলিপাইনের তরুণীর কাছে। কিন্তু ওই ফিলিপিনো বেশি অর্থ দাবি করেন। জন ওই এজেন্টকে তখন সিতির সাথে পরিচয় করানোর আগে এক ভিয়েতনামি নারীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। ওই নারীকেই আবার সিতির প্রথম টার্গেট হিসাবে অনুশীলন করানো হয়।
এরপর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থাকা পাপেট মাস্টাররা সিতিকে দিয়ে নাটক মঞ্চস্থ করাতে থাকেন। তারা পুরো এশিয়া জুড়ে এই নাটকের কলাকুশলীদের জড়ো করছিলেন আর ধৈর্য্যের সাথে হত্যাকাণ্ডের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সিতি যখন কম্বোডিয়ায় আসেন, তখন জেমসের জায়গায় যে লোক আসেন, তার প্রকৃত নাম ছিল হং সং হ্যাক; চ্যাং নয়। তিনি ছিলেন উত্তর কোরিয়ার এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা, যিনি ইন্দোনেশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে বাহাসা নিয়ে পড়াশোনা করেন। এরপর জাকার্তার দূতাবাসে কাজ করেন।
সিতির দুই দিন আগে ডোয়ানও চলে আসেন কম্বোডিয়ায়। তাকে নিয়ে আসেন আরেক উত্তর কোরিয়ার এজেন্ট, যার ভিয়েতনামে অনেক বছর ধরে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল। হং আর সিতি যখন নম পেনের বিমানবন্দরে অনুশীলন করছেন, আরো তিন স্পাইমাস্টার কাছাকাছি স্থানেই ছিলেন। এরা পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ড পরিচালনার কাজ করেন। এভাবে পুরো টিম জড়ো করার উদ্দেশ্য শুধু উত্তর কোরিয়ার কাছেই জানা। তবে একটা কারণ হতে পারে, ওখানে কিম জং ন্যামকে আক্রমণ করা। কারণ ওই শহরে তিনি মাঝে মাঝে ক্যাসিনো খেলতে যেতেন।
কোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ন্যাম সাং উক একসময় দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার গবেষণা বিভাগে কাজ করেছেন। তিনি বলেন,
এই হত্যাকাণ্ড পুরোটাই ছিল একটা মাস্টার প্ল্যানের অংশ। কিম জং ন্যাম যখন ম্যাকাও ত্যাগ করেন, উত্তর কোরিয়ার গোয়েন্দারা তখন থেকেই তার পিছু নেন। তার বিমানে তাদের একটা দল ছিল। তিনি কুয়ালালামপুরের বিমানবন্দরে পৌঁছালে সেখানে আরেকটা দল তাকে অনুসরণ করে। তারা কিম জং ন্যামকে ঘুমন্ত অবস্থাতেও নজরদারিতে রাখে।
সিতি যে তরলটা জং ন্যামের মুখে মাখান, সেটা প্রকৃত ভিএক্স হওয়ার সম্ভাবনা কম। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেছেন, সেখানে সাধারণ ভিএক্সের একটা পরিবর্তিত সংস্করণ ভিএক্সটু ব্যবহার করা হয়েছিল। এমআইটির এক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ভিপিন নারাং, যার কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ওপরও দুটি ডিগ্রি আছে, তিনি বলেন,
ভিএক্সকে ভেঙে দুটি বিক্রিয়া করে না এমন যৌগ গঠন করলে ভিএক্সটু উৎপন্ন হয়। ওই নারীরা সম্ভবত প্রত্যেকে ভিএক্সের উপাদান জং ন্যামের মুখে দিয়ে এসেছিলেন। তারপর সেখান থেকে সক্রিয় ভিএক্স গঠিত হয়, আর বিষক্রিয়া শুরু করে।
এরকম জটিল পদ্ধতিতে বিষক্রিয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করা তাদের কিছুটা সুবিধা এনে দেয়। প্রথমত, সেই টক্সিনগুলো সক্রিয় হওয়ার আগে পর্যন্ত নিরাপদ থাকত। তাছাড়া ভিএক্সটু অন্যান্য রাসায়নিক অস্ত্রের মতো উদ্বায়ী পদার্থ নয়। অর্থাৎ, এর কাছাকাছি যারা থাকবেন, বা এটা নিয়ে আক্রমণ করতে যাবেন, তাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। ভিএক্সটু যদি নিক্ষেপ করা হয়ে থাকত, সিতির আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম ছিল। কারণ তিনি যেহেতু প্রথমে নিক্ষেপ করেছিলেন, দ্বিতীয় রাসায়নিক বিক্রিয়কের সাথে সংযুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। আর দোয়ানও সম্ভবত রাসায়নিক পদার্থ তার হাতে বেশি শোষিত হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। কারণ তার হাতের শক্ত চামড়ার তালুতে অল্প পরিমাণ টক্সিন ছিল, যা তাকে অসুস্থ করার মতো যথেষ্ট ছিল না। তাছাড়া তিনি দ্রুত হাত ধুয়ে ফেলেন।
কিম জং ন্যাম যখন অলস গতিতে চেকইনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, টার্মিনালে অন্তত পাঁচ জন উত্তর কোরিয়ান এজেন্ট সিতি আর ডোয়ানকে দিকনির্দেশনা দেন। হং যখন ভিএক্স বিতরণ করে শৌচাগারে চলে যান, এক স্বাস্থ্যবান উত্তর কোরিয়ান কাছাকাছি স্থানে সিতি আর ডোয়ানের আক্রমণ পর্যবেক্ষণ করছিলেন। তৃতীয় আরেক এজেন্ট সেই কফি শপ থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন, যেখানে সিতি আগে বসেছিলেন। সিতি আর ডোয়ান জং ন্যামের ওপর বিষ প্রয়োগ করতে সক্ষম হলে চতুর্থ আরেক এজেন্ট বাকি এজেন্টদের সামনে দিয়ে যান এবং সম্ভবত তাদের ইশারায় জানিয়ে দেন সফলভাবে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। পরবর্তীতে জানা যায় ওই চতুর্থ এজেন্ট ছিলেন উচ্চ পর্যায়ের গোয়েন্দা কর্মকর্তা। সম্ভবত পুরো মিশনের সফলতার কৃতিত্বটা তারই।
কিম জং ন্যাম যখন তথ্য কেন্দ্রে গিয়ে ব্যথা আর তার ওপর আক্রমণের কথা ব্যাখ্যা করছিলেন, তখন একটা কালো ট্রলি ব্যাগ হাতে পঞ্চম আরেক উত্তর কোরিয়ান কান পেতে শুনছিলেন তার বলা শেষ কথাগুলো। মৃত্যু পথযাত্রী মানুষটা যখন হোঁচট খেতে খেতে মেডিকেল ক্লিনিকের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, পঞ্চম এজেন্টও তাকে অনুসরণ করতে থাকেন। তার এক হাত পকেটে ঢোকানো ছিল। বিশ্রামাগারের কাঁচের দেওয়াল দিয়ে তিনি সাবেক রাজপুত্রকে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যেতে দেখেন। জং ন্যামকে অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়ার আগ পর্যন্ত এজেন্ট তার জায়গায় ছিলেন। অ্যাম্বুলেন্সের দরজা যখন বন্ধ করা হয়, তখনই শেষ পর্যন্ত কিম জং ন্যাম সুপ্রিম লিডারের দৃষ্টি থেকে রক্ষা পান। অবশেষে তাকে মৃত্যুবরণ করার জন্য একা থাকার সুযোগ দেওয়া হয়।
এদিকে হং যখন শৌচাগার থেকে বের হয়ে আসেন, আক্রমণের সময় তার সাথে থাকা কালো ব্যাকপ্যাক আর সাদা প্লাস্টিকের ব্যাগ গায়েব হয়ে যায়। তার ফুলহাতা ধূসর টিশার্টটি বদলে হাফ হাতা মেরুন রঙের টিশার্ট পরেন। শুধুমাত্র তার পায়ের জুতাটি আগের মতোই ছিল। বাকি চার এজেন্টের সাথে তিনি ইমিগ্রেশনের কাজ সম্পন্ন করে ফেলেন। উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসের এক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা বিমান ছাড়ার আগে তাদের বিদায় জানান, যে বিমানটির আগে থেকেই সূচি ঠিক করা ছিল হত্যাকাণ্ডের পরপর উড্ডয়ন করার।
তারা ঘোরানো পথে দেশে ফেরত যান। হত্যাকাণ্ডের ব্যাপার ফাঁস হয়ে গেলে যেসব দেশ বিমান নামিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করতে পারে, সেই দেশগুলো এড়িয়ে যান। যতক্ষণে আসল ঘটনা জানাজানি হয়, তারা ততক্ষণে নিরাপদে পিয়ংইয়ং পৌঁছে গেছেন।
৮
সিতি গ্রেপ্তার হলেও তার কোনো ধারণা ছিল না আসলে কী ঘটেছে। গ্রেপ্তার থাকা অবস্থায় তার কোনো খবর দেখার বা পত্রিকা পড়ার সুযোগ ছিল না। তাই জানতেন না যে কিম জং ন্যাম খুন হয়েছেন। মালয়েশিয়ায় থাকা ইন্দোনেশিয়ান রাষ্ট্রদূত আন্দ্রিয়ানো আরউইন বলেন,
সিতি গ্রেপ্তার হওয়ার পর ইন্দোনেশিয়ার কর্মকর্তারা প্রথম চার বার যখন তার সাথে দেখা করতে যান, তখন তার ধারণা ছিল তাকে প্র্যাঙ্ক করার কারণে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রথম বার আমরা যখন যাই, তিনি প্রশ্ন করতে থাকেন কবে জেল থেকে মুক্তি পাবেন। দ্বিতীয় বার তিনি অভিযোগ করেন, তাকে এখনো সর্বশেষ প্র্যাঙ্কের পারিশ্রমিক দেওয়া হয়নি। তৃতীয় বার তিনি আমাদের দায়ী করেন, আমরাও প্র্যাঙ্কের অংশ। চতুর্থ বার আমরা তাকে একটা পত্রিকার খবর দেখাই যেখানে কিম জং ন্যামের মৃত্যুর ব্যাপারে লেখা ছিল। তিনি এটা দেখে কান্না শুরু করেন।
জুলাইয়ের শেষের দিকে সিতিকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। এক নারী পুলিশ তার হাত ধরে নিয়ে আসেন। তার পরনে ছিল মালয়েশিয়ার ঐতিহ্যবাহী পোশাক, তার ওপর ছিল বুলেটপ্রুফ ভেস্ট। তার উকিলের মাধ্যমে বার বার নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলছিলেন তার সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। বিচারক যখন বলেন, অক্টোবরে তার বিচার শুরু হবে, সিতি তখন কাঁদছিলেন। আরউইন বলেন, তিনি তখনই পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারেন ঘটনা আসলে কতটা গুরুতর।
সিতি কারাগারে ডোয়ানের সেলের পাশেই একটা সেলে থাকতে থাকতে মুটিয়ে যান। তিনি তখন উপলব্ধি করতে পারেন, উত্তর কোরিয়ার বিচরণ কত গভীরে। তাকে যখন হং এর ছবিগুলো দেখানো হয়, তিনি মনে করতে পারেন ডাবল ট্রি হোটেলে তিনি এক লোককে প্র্যাঙ্ক করার সময় তরল পদার্থ মাখিয়ে দিয়েছিলেন। তার সাথে হংয়ের চেহারায় অদ্ভুত মিল দেখতে পান। (এটা নির্দেশ করে, তাদের অনুশীলনের সময় যাদের ‘শিকারি’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল, তারা হয়তো সবাই উত্তর কোরিয়ার এজেন্টদের ঠিক করে দেওয়া ব্যক্তি ছিল। যেন শিকারিরা পুলিশের কাছে যেতে না পারে।)
৯
হত্যাকাণ্ডের দিকে ফিরে তাকালে পুরো ব্যাপারটাকে একটা অযোগ্য স্বৈরশাসকের আনাড়ি একটা কাজ মনে হতে পারে। পুরো মিশনটাতেই উত্তর কোরিয়ার এজেন্টরা সিসিটিভি ক্যামেরার থেকে মুখ লুকানোর কোনো চেষ্টাই করেননি। এটাকে একটা ভুল মনে হতে পারে। কিন্তু এটা আরেকটা কৌশলগত সিদ্ধান্তও হতে পারে।
পিয়ংইয়ং কিম জং ন্যামকে দিনের আলোয় জনসম্মুখে হত্যা করে বিশ্বকে একটা বার্তা দিতে চেয়েছে। অনেক বছর ধরেই ধারণা করা হচ্ছিল, চীন কিম জং উনের জায়গায় তার সৎ ভাইকে উত্তর কোরিয়ার শাসক হিসাবে দেখতে চায়। তাকে এ কারণেই রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে আসছিল চীন।
পিয়ংইয়ং বিমানবন্দরে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে পুরো বিশ্বকেই আতঙ্কিত করতে চেয়েছিল। একটা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এমন একটা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে কিম জং উন যেন সবাইকে বার্তা দিতে চেয়েছেন, তাকে যেন কেউ ঘাটাতে না আসে। কিম জং উন লম্বা সময় উত্তর কোরিয়া শাসন করতে চান এবং নিজেকে একটা সুপারপাওয়ার দেশের প্রতিনিধি হিসেবে দেখাতে চান। আর এটা বাস্তবায়ন করতে চাইলে তাকে ধারাবাহিকভাবে একটা ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে যেতে হবে।
শেষ পর্যন্ত পিয়ংইয়ংয়ের এতে খুব বেশি ক্ষতি হয়নি। মালয়েশিয়ায় তাদের দূতাবাস এখনো কাজ করছে। সব এজেন্টকে তারা মুক্ত করে নিয়ে যেতে পেরেছে। কিম জং উনও পুতিন, শি জিনপিং, ট্রাম্পের সাথে দেখা করার সময় লাল গালিচার সংবর্ধনা পেয়েছেন। আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছেন। তার ক্ষমতাও আরো মজবুত করেছেন। হত্যাকাণ্ডে উত্তর কোরিয়ার কোনো সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছেন।
কিন্তু মালয়েশিয়ার জন্য এটা ছিল বিরাট বড় লজ্জার ব্যাপার। তাদের তাই কাউকে না কাউকে শাস্তি দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। এখানে বলির পাঁঠা হিসাবে ব্যবহার করা হয় ডোয়ান ও সিতিকে। মালয়েশিয়া পুলিশ ক্রমাগত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সামনে তাদেরকে দোষী হিসেবে দাবি করে আসছিল। শেষ পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়া সরকার ও মালয়েশিয়া সরকারের কূটনৈতিক মধ্যস্থতায় ২০১৯ সালের মার্চে সিতির ওপর থেকে মামলা তুলে নেয় মালয়েশিয়া।
কিন্তু ডোয়ানের মামলা তখনো চলতে থাকে। কারণ ভিয়েতনামের সাথে উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক ভালো। দুটিই সমাজতান্ত্রিক দেশ। ভিয়েতনাম এক নারীর জন্য উত্তর কোরিয়ার বিরাগভাজন হতে চায়নি। তবে কি ডোয়ানই ফাঁসিতে ঝুলতে যাচ্ছিলেন? না, শেষ পর্যন্ত সিতির দুই মাস পর ডোয়ানকেও খুনের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তারা দুজনই পরবর্তীতে নিজ নিজ দেশে ফিরে যান। জেলে থাকার সময় তাদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। এখনো তারা একে অন্যের খোঁজ রাখেন। তারা না হয় ন্যায়বিচার পেয়েছেন। কিন্তু খুন হওয়া কিম জং ন্যাম কি তার বিচার পেলেন?