জুল ভার্নের ‘সাগর তলে’ বইটির কথা মনে আছে? যেখানে ভয়ংকর এক সমুদ্র দানবের সন্ধানে ছিল একদল অনুসন্ধানী মানুষ। ডুবোযান সাবমেরিনে বসে দিনের পর দিন গুনেছে অপেক্ষার প্রহর।
হ্যাঁ, অনেকটা সেই কল্পিত সমুদ্র অভিযানের মতোই। পানির নিচে ৭৪ দিন! শুনতে অদ্ভুত মনে হলেও সম্প্রতি তেমনই এক অবিশ্বাস্য রেকর্ড গড়েছেন ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ফ্লোরিডার অধ্যাপক জোসেফ ডিটুরি।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের কী লারগো অঞ্চল। সেখানে অবস্থান করছে জুলস আন্ডার সী লজ নামক এক অদ্ভুতুড়ে ডুবো হোটেল। হোটেলটির ৩০ ফুট পানির নিচে ১০০ বর্গ ফুট আয়তনের ছোট্ট এক কুঠুরি কক্ষে গত ১ মার্চ প্রবেশ করেন তিনি। সঙ্গে নেন নিত্যপ্রয়োজনীয় সাজসরঞ্জামও। গবেষণা কাজের অংশ হিসেবে শুরু হওয়া এ মিশনের নাম প্রজেক্ট নেপচুন ১০০। যেখানে ইতোমধ্যেই ৭৪ দিন অতিবাহিত করে গড়েছেন সবচেয়ে বেশিদিন পানির নিচে থাকার রুদ্ধশ্বাস বিশ্বরেকর্ড!
এর আগে ২০১৪ সালে একই হোটেলের পানির নিচে টানা ৭৩ দিন ২ ঘন্টা ৩৪ মিনিট অবস্থান করে বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন ব্রুস সেন্ট্রেল ও জেসিকা ফেইন নামের অন্য দুজন অধ্যাপক ও গবেষক। সম্প্রতি তাদেরই রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়লেন জোসেফ।
প্রচন্ড পানির চাপ সহ্য করে কেমন কাটছে ৫৫ বছর বয়সী এই অধ্যাপকের জীবন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান- সকালটা শুরু করছেন ব্যায়ামের মাধ্যমে। অতঃপর ফ্রেশ হয়ে নিজ মাইক্রোওভেনেই সেরে নিচ্ছেন রান্নাবান্না। খাবারের তালিকায় রেখেছেন উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ খুবই অল্প পরিমাণ খাবার- স্যামন মাছ, মাংস ও ডিম। ইন্টারনেটের কল্যাণে অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লাসও নিচ্ছেন তিনি। ইতোমধ্যে পড়িয়েছেন ২,৫০০-এরও অধিক শিক্ষার্থীকে!
তবে, টানা ৭৪ দিন সেখানে থেকে অনন্য এ রেকর্ড গড়ার পরও বাইরে আসতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন তিনি, থাকতে চান ৯ জুন পর্যন্ত সর্বমোট ১০০ দিন! যদিও এরই মধ্যে গবেষকদের ছোট ছোট দল তার উপর চালাচ্ছেন নানাবিধ শারীরিক পরীক্ষা। ব্লাড প্যানেল, আলট্রাসাউন্ড ও ইলেক্ট্রো-কার্ডিওগ্রামের পাশাপাশি স্টেমসেল পরীক্ষাসহ করা হচ্ছে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষাও। ডাঙায় আসলে হবে ডিটুরির চূড়ান্ত মানসিক নিরীক্ষা।
রুদ্ধশ্বাস এ প্রজেক্টের বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের অভিমত, অদূর ভবিষ্যতে মহাসাগরের গভীর তলদেশে মিশন পরিচালনা ও রহস্য অভিযানকে সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করতেই ডিটুরির এমন অনন্য পরিকল্পনা। আর তাই শেষ পর্যন্ত অদম্য এ সাহসী অধ্যাপক সফলভাবে তার প্রজেক্ট নেপচুনের ১০০ দিন সমাপ্ত করতে পারবেন কিনা সেটির এখন দেখার পালা।