ইউক্রেনের ঘটনাবলি সংক্রান্ত ভ্লাদিমির পুতিনের ভাষণ || পর্ব–৫

২০২২ সালের জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনীয় সীমান্তে রুশ সৈন্য সমাবেশ এবং গণপ্রজাতন্ত্রী দনেৎস্ক ও গণপ্রজাতন্ত্রী লুগানস্কের সীমান্তে ইউক্রেনীয় সৈন্য সমাবেশকে কেন্দ্র করে একদিকে রাশিয়া, দনেৎস্ক ও লুগানস্ক এবং অন্যদিকে ইউক্রেন ও ন্যাটোর মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছিল। ১৭ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন দনেৎস্ক ও লুগানস্কের বিরুদ্ধে একটি আক্রমণাভিযান শুরু করে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় উভয় পক্ষের মধ্যেকার উত্তেজনার মাত্রা তীব্রতর হয়ে ওঠে। ২১ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া দনেৎস্ক ও লুগানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান এবং রাষ্ট্রদ্বয়ের সঙ্গে ‘বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক সহযোগিতা চুক্তি’ সম্পাদনের সিদ্ধান্ত নেয়। রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন রুশ জনসাধারণের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত একটি ভাষণে এই ঘোষণা প্রদান করেন এবং ইউক্রেনে চলমান ঘটনাবলি সম্পর্কে সবিস্তারে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেন।

উক্ত ভাষণটিতে ইউক্রেনীয় সঙ্কট, রুশ–ইউক্রেনীয় সম্পর্ক এবং ইউক্রেনীয় সঙ্কটে পশ্চিমা বিশ্বের ভূমিকা সম্পর্কে পুতিনের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি পরিস্ফুটিত হয়েছে। ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ এবং রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে চলমান নতুন স্নায়ুযুদ্ধকে পূর্ণাঙ্গরূপে অনুধাবন করার জন্য পুতিনের এই ভাষণটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে। এই নিবন্ধে উক্ত ভাষণটির অনুবাদ করা হয়েছে এবং ভাষণটির বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা ও মতামত প্রদান করা হয়েছে। নিচের ইটালিক অক্ষরে প্রদত্ত অংশগুলো পুতিনের প্রদত্ত ভাষণের অংশ এবং তৃতীয় বন্ধনীর মধ্যে আবদ্ধ বিবরণগুলো উক্ত ভাষণ সম্পর্কিত ব্যাখ্যা/মতামত।

ভাষণ

[৪র্থ পর্বের পর]

কিয়েভ দীর্ঘদিন যাবৎ ন্যাটোয় যোগদানের কৌশলগত লক্ষ্য ঘোষণা করেছে। বস্তুত প্রতিটি দেশের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেছে নেয়ার এবং সামরিক জোটে যোগদানের অধিকার রয়েছে। এতে কোনো সমস্যা হতো না, যদি না একটা ‘কিন্তু’ থাকতো। আন্তর্জাতিক নথিপত্রগুলোয় স্পষ্টভাবে সমান ও অবিভাজ্য নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অন্য কোনো রাষ্ট্রের নিরাপত্তা হ্রাস করে নিজের নিরাপত্তা বৃদ্ধি না করার দায়বদ্ধতা। ১৯৯৯ সালে ইস্তাম্বুলে গৃহীত ওএসসিই ইউরোপীয় নিরাপত্তা সনদ এবং ২০১০ সালের ওএসসিই আস্তানা ঘোষণায় এটি উল্লেখ করা হয়েছে।

অন্যভাবে বললে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পথ বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত অন্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়ানো উচিত নয়, যেখানে ইউক্রেনের ন্যাটোয় যোগদান রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি।

২০১০ সালে কাজাখস্তানের নুর–সুলতানে অনুষ্ঠিত ওএসসিই সামিটে তদানীন্তন রুশ রাষ্ট্রপতি দিমিত্রি মেদভেদেভ (প্রথম সারিতে বাম দিক থেকে চতুর্থ); Source: Vladimir Trofimchuk/OSCE

[‘অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন ইন ইউরোপ’ (ওএসসিই) বিশ্বের বৃহত্তম আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিষয়ক সংগঠন। ১৯৯৯ সালের নভেম্বরে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ওএসসিইভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানদের ৬ষ্ঠ সামিট অনুষ্ঠিত হয় এবং সেখানে ওএসসিই ‘ইউরোপীয় নিরাপত্তা সনদ’ গৃহীত হয়। উক্ত সনদ অনুসারে, ওএসসিইভুক্ত প্রতিটি রাষ্ট্রের স্বাধীনভাবে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেছে নেয়ার এবং যে কোনো জোটে যোগদান করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু উক্ত সনদে এটিও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ওএসসিইভুক্ত কোনো রাষ্ট্র অন্য কোনো রাষ্ট্রের নিরাপত্তা খর্ব করে নিজস্ব নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে পারবে না। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে কাজাখস্তানের রাজধানী নুর–সুলতানে (তদানীন্তন আস্তানা) ওএসসিইভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানদের ৭ম সামিট অনুষ্ঠিত হয় এবং সেখানে প্রদত্ত ‘একটি নিরাপত্তা সম্প্রদায় সংক্রান্ত আস্তানা স্মারক ঘোষণা’য় ওএসসিইভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর নিরাপত্তা সম্পর্কে একই ধরনের বক্তব্য উল্লেখ করা হয়।

রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়েই ওএসসিইর সদস্য রাষ্ট্র এবং আইনগতভাবে ওএসসিইর নীতিমালা অনুসরণ করতে দায়বদ্ধ। রাশিয়ার ভাষ্য অনুসারে, ইউক্রেন ন্যাটোয় যোগদান করলে সেটি রাশিয়ার নিরাপত্তাকে খর্ব করবে, সুতরাং ইউক্রেনের ন্যাটোয় যোগদানের সিদ্ধান্ত কার্যত ওএসসিই নিরাপত্তা সনদ ও ওএসসিই আস্তানা ঘোষণার মূলনীতির লঙ্ঘন। সহজ ভাষায় বললে, ভাষণের এই অংশে পুতিন এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে, ইউক্রেন ন্যাটোয় যোগ দিলে সেটি রাশিয়ার জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকির সৃষ্টি করবে এবং এজন্য ইউক্রেনের ন্যাটোয় যোগদানের সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন]

আমি আপনাদেরকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে, ২০০৮ সালের এপ্রিলে বুখারেস্টে অনুষ্ঠিত ন্যাটো সামিটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এরকম একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে ইউক্রেন, এবং জর্জিয়াও, ন্যাটো সদস্য হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ইউরোপীয় মিত্রই সেসময় এর সঙ্গে জড়িত ঝুঁকি সম্পর্কে ভালোমতো সচেতন ছিল, কিন্তু তাদেরকে তাদের ঊর্ধ্বতন অংশীদারের ইচ্ছা মেনে নিতে হয়। মার্কিনিরা একটি স্পষ্ট রুশবিরোধী নীতি বাস্তবায়নের জন্য তাদেরকে ব্যবহার করেছিল।

এখনো ন্যাটোর বেশ কিছু সদস্য ইউক্রেনের ন্যাটোয় যোগদান সম্পর্কে সন্দিহান। আমরা কিছু ইউরোপীয় রাজধানী থেকে এরকম ইঙ্গিত পাচ্ছি যে, আমাদের দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন নেই কারণ এটি রাতারাতি ঘটবে না। বস্তুত আমাদের মার্কিন অংশীদাররাও একই কথা বলছে। আমরা জবাব দিচ্ছি, “ঠিক আছে, এটা যদি আগামীকাল না হয়, তাহলে তার পরের দিন হবে। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি কী পরিবর্তন ঘটায়? কিছুই না।”

তদুপরি, যদি ইউক্রেন ন্যাটোর শর্তাবলি পূরণ করতে ও দুর্নীতি দমনে সমর্থ হয়, সেক্ষেত্রে পূর্ব ইউক্রেনের সক্রিয় সংঘাতের ফলে দেশটির ন্যাটোয় যোগদানের সম্ভাবনা বাতিল হবে না, মার্কিন নেতৃবৃন্দের এইরূপ অবস্থান ও বক্তব্য সম্পর্কে আমরা অবগত।

মানচিত্রে ইউরোপের ন্যাটোভুক্ত রাষ্ট্রগুলো (নীল রঙে চিহ্নিত); Source: Patrick/Wikimedia Commons

[২০০৮ সালে রুমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্টে ন্যাটোর ২০তম সামিট অনুষ্ঠিত হয়। বস্তুত ন্যাটোর কর্ণধার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন ও জর্জিয়াকে ন্যাটোর ‘মেম্বারশিপ অ্যাকশন প্ল্যানে’ শামিল করতে চেয়েছিল, কিন্তু প্রধানত ফ্রান্স ও জার্মানির বিরোধিতার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। এই সামিটে ইউক্রেন ও জর্জিয়াকে ভবিষ্যতে ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত করা হবে, এই মর্মে ঘোষণা প্রদান করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই রাশিয়া এই বিষয়টিকে নেতিবাচকভাবে দেখেছে।

উল্লেখ্য, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম একটি লক্ষ্য হচ্ছে – প্রাক্তন সোভিয়েত ভূখণ্ডে রাশিয়া বাদে যে ১৪টি রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে সেগুলোকে রুশ প্রভাব বলয় থেকে সম্পূর্ণভাবে বের করে আনা এবং মার্কিন প্রভাব বলয়ের অন্তর্ভুক্ত করা। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে অবস্থিত প্রাক্তন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলোকে (এস্তোনিয়া, লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া, বেলারুশ, ইউক্রেন, মলদোভা, আর্মেনিয়া, জর্জিয়া ও আজারবাইজান) ইউরোপীয় ইউনিয়ন/ন্যাটোয় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বিশেষভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে। উদাহরণস্বরূপ, ২০০৪ সালে লিথুয়ানিয়া, লাতভিয়া ও এস্তোনিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটো উভয়ের সদস্যপদ লাভ করে।

২০০৩ সালের নভেম্বরে জর্জিয়ায় ‘গোলাপ বিপ্লব’ (Rose Revolution) সংঘটিত হয় এবং এর ফলে মিখেইল সাকাশভিলির নেতৃত্বে একটি তীব্র রুশবিরোধী সরকার জর্জিয়ার শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। অনুরূপভাবে, ২০০৪ সালের নভেম্বর–ডিসেম্বরে ইউক্রেনে ‘কমলা বিপ্লব’ সংঘটিত হয় এবং এর ফলে ভিক্তর ইয়ুশ্চেঙ্কোর নেতৃত্বে একটি তীব্র রুশবিরোধী সরকার ইউক্রেনের শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। দুইটি ‘বিপ্লব’/অভ্যুত্থানেই যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় সমর্থন ছিল এবং এই দুইটি বিপ্লব/অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র দুইটি ন্যাটোয় যোগদানের জন্য অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে ওঠে]

পুরো সময়টা জুড়ে তারা আমাদেরকে বারবার বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করছে যে, ন্যাটো একটি শান্তিপ্রিয় এবং সম্পূর্ণরূপে আত্মরক্ষামূলক জোট, যেটি রাশিয়ার জন্য কোনো হুমকি নয়। আবারো তারা চায় যে আমরা তাদের কথায় বিশ্বাস করি। কিন্তু এসব কথার প্রকৃত মূল্য আমাদের ভালোভাবেই জানা আছে। ১৯৯০ সালে যখন জার্মান একত্রীকরণ নিয়ে আলোচনা চলছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত নেতৃবৃন্দকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে পূর্ব দিকে ন্যাটোর এখতিয়ার বা সামরিক উপস্থিতি এক ইঞ্চিও সম্প্রসারিত হবে না এবং জার্মানির একত্রীকরণের ফলে পূর্ব দিকে ন্যাটোর সামরিক কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়বে না। এটি একটি উদ্ধৃতি।

প্রাক্তন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস বেকার (বামে) এবং প্রাক্তন সোভিয়েত রাষ্ট্রপতি মিখাইল গর্বাচেভ (ডানে)। ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বেকার গর্বাচেভকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, ন্যাটো পূর্ব দিকে এক ইঞ্চিও অগ্রসর হবে না; Source: The Baker Institute via WAMU

তারা বহুসংখ্যক মৌখিক আশ্বাস দিয়েছিল, যেগুলোর সবই ফাঁকা বুলি প্রমাণিত হয়েছে। পরবর্তীতে তারা আমাদের আশ্বাস দিতে শুরু করলো যে, মধ্য ও পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর ন্যাটোয় যোগদান কেবল মস্কোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন ঘটাবে, এই দেশগুলোকে তাদের তিক্ত ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার ফলে সৃষ্ট ভয় থেকে মুক্ত করবে এবং এমন দেশগুলোর একটি বেষ্টনী তৈরি করবে যারা রাশিয়ার প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন। 

কিন্তু তার ঠিক উল্টোটা ঘটেছে। কিছু কিছু পূর্ব ইউরোপীয় দেশের সরকারগুলো রুশবিদ্বেষের জল্পনা–কল্পনার ভিত্তিতে রুশ হুমকি সংক্রান্ত তাদের ভীতি ও বাঁধাধরা ধারণাগুলো জোটটিতে নিয়ে আসে এবং যৌথ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নির্মাণ ও সেগুলোকে মূলত রাশিয়ার বিরুদ্ধে মোতায়েন করার ওপর জোর দেয়। এরচেয়েও খারাপ ব্যাপার হচ্ছে, ১৯৯০–এর দশকে এবং ২০০০–এর দশকের শুরুর দিকে এটি ঘটেছে, যখন আমাদের অকপটতা ও সদিচ্ছার কারণে রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যেকার সম্পর্ক একটি উঁচু পর্যায়ে পৌঁছেছিল।

[ন্যাটো সনদ অনুসারে, ন্যাটো মূলত একটি আত্মরক্ষামূলক সামরিক জোট। ন্যাটোর প্রচারণায় এই দিকটির ওপর বিশেষভাবে জোর দেয়া হয়। কিন্তু কার্যত ন্যাটো এখন পর্যন্ত যে কয়টি সামরিক অভিযানে অংশগ্রহণ করেছে, সেগুলোর কোনোটিই আত্মরক্ষামূলক ছিল না, বরং সবগুলোই ছিল আক্রমণাত্মক এবং সবগুলোই পরিচালিত হয়েছে ন্যাটোভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর সীমানার বাইরে। ন্যাটো এখন পর্যন্ত বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক ও লিবিয়ায় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে এবং এগুলোর প্রতিটিই ছিল আক্রমণাত্মক যুদ্ধ। সুতরাং ন্যাটো একটি আত্মরক্ষামূলক জোট, এই বক্তব্যটি বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে তদানীন্তন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস বেকার সোভিয়েত ইউনিয়ন কমিউনিস্ট পার্টির মহাসচিব মিখাইল গর্বাচেভকে এই মর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, ন্যাটো পূর্ব দিকে এক ইঞ্চিও সম্প্রসারিত হবে না, অর্থাৎ পূর্ব ও মধ্য ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোকে ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি এবং ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণ এখনো চলমান রয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব দাবি করে যে, তারা সোভিয়েত ইউনিয়নকে এরকম কোনো প্রতিশ্রুতি প্রদান করেনি।

১৯৯৯ সালে তদানীন্তন যুগোস্লাভিয়ার ওপর ন্যাটোর বোমাবর্ষণের ফলে নিহত শিশুদের স্মরণে সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে স্থাপিত একটি স্মৃতিসৌধ; Source: Vlastito djelo via Andrija1234567/Wikimedia Commons

কিন্তু সেসময়ের নথিপত্রে এই প্রতিশ্রুতির স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। এজন্য রুশদের দৃষ্টিতে, ন্যাটো পূর্বমুখী সম্প্রসারণ অব্যাহত রেখে চুক্তি ভঙ্গ করেছে এবং রাশিয়ার সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছে। এই অভিজ্ঞতা রুশ নেতৃবৃন্দকে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর দেয়া যেকোনো প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে সন্দিহান করে তুলেছে এবং পশ্চিমা বিশ্ব ও রাশিয়ার মধ্যে স্থায়ী তিক্ততার সৃষ্টি করেছে]

রাশিয়া জার্মানি এবং মধ্য ও পূর্ব ইউরোপ থেকে সৈন্য প্রত্যাহারসহ তার সকল দায়িত্ব পূরণ করেছে এবং এর মাধ্যমে স্নায়ুযুদ্ধের ঐতিহ্য কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রেখেছে। আমরা নিয়মিতভাবে ন্যাটো–রাশিয়া পরিষদ এবং ওএসসিই ফরম্যাটসহ বিভিন্ন সহযোগিতামূলক উপায় প্রস্তাব করেছি।

তদুপরি, আমি এমন কিছু বলব যেটি আমি আগে কখনো জনসমক্ষে বলিনি, এখন আমি এটা প্রথম বারের মতো বলব। ২০০০ সালে যখন বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটন মস্কো সফর করেছিলেন, তখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে ন্যাটোয় রাশিয়ার অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে আমেরিকার মনোভাব কীরকম।

আমি সেই আলাপচারিতার বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করব না, কিন্তু আমার প্রশ্নের জবাব ছিল বহুলাংশে নিয়ন্ত্রিত, এবং সেই সম্ভাবনার প্রতি মার্কিনিদের প্রকৃত দৃষ্টিভঙ্গি বস্তুত আমাদের দেশের প্রতি তাদের পরবর্তী পদক্ষেপগুলো থেকে বোঝা যায়। আমি বুঝাচ্ছি উত্তর ককেশাসের সন্ত্রাসবাদীদের প্রতি খোলাখুলি সমর্থন, আমাদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত দাবিগুলো ও উদ্বেগের প্রতি অবহেলা, ন্যাটোর ক্রমাগত সম্প্রসারণ, এবিএম চুক্তি থেকে বহির্গমন এবং অনুরূপ পদক্ষেপগুলোকে। এসবের থেকে প্রশ্ন আসে: কেন? কিসের জন্য এসব হচ্ছে, এর উদ্দেশ্য কী? ঠিক আছে, তোমরা আমাদেরকে বন্ধু বা মিত্র হিসেবে দেখতে চাও না, কিন্তু আমাদেরকে শত্রু বানানোর কারণ কী?

রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন (বামে) এবং প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটন (ডানে)। পুতিনের ভাষ্য অনুসারে, ক্লিনটন ক্ষমতায় থাকাকালীন রাশিয়া ন্যাটোয় যোগ দিতে চেয়েছিল; Source: The Hindu

এর কেবল একটিই উত্তর হতে পারে – এটি আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা সংক্রান্ত বা এরকম কিছু নয়। মূলত রাশিয়ার মতো বড় এবং স্বাধীন একটা দেশকে তারা চায় না। এটি হচ্ছে সকল প্রশ্নের উত্তর। এটি হচ্ছে রাশিয়ার প্রতি আমেরিকার ঐতিহাসিক নীতির উৎস। এজন্যই আমাদের সকল নিরাপত্তা প্রস্তাবনার প্রতি এরকম মনোভাব।

[সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্তরসূরী রাষ্ট্র রাশিয়া মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শান্তিকালীন সৈন্য প্রত্যাহার (peacetime military withdrawal) সম্পন্ন করে। স্নায়ুযুদ্ধের সময় পূর্ব ও মধ্য ইউরোপের কমিউনিস্ট রাষ্ট্রগুলোয় সোভিয়েত ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ সামরিক উপস্থিতি ছিল। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়া পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া ও জার্মানির পূর্বাংশ থেকে সমস্ত সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয় এবং বুলগেরিয়ায় তাদের সামরিক ঘাঁটিগুলো বন্ধ করে দেয়। তদুপরি, বেশ কয়েকটি প্রাক্তন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র (যেমন: এস্তোনিয়া, লাতভিয়া, আজারবাইজান প্রভৃতি) থেকেও রাশিয়া সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়। রুশদের এই ব্যাপক মাত্রায় সৈন্য প্রত্যাহারের নানাবিধ কারণ ছিল, কিন্তু এগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান একটি কারণ ছিল পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন করার জন্য মস্কোর প্রচেষ্টা।

শুধু তাই নয়, ১৯৯০–এর দশকে রাশিয়া ন্যাটোয় যোগদান করার প্রচেষ্টা চালায়, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বা অন্যান্য ন্যাটোভুক্ত রাষ্ট্রগুলো রাশিয়াকে ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষপাতী ছিল না। ন্যাটো কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি সামরিক জোট এবং বিশ্বব্যাপী মার্কিন আধিপত্য বজায় রাখার একটি হাতিয়ার। মার্কিন নীতিনির্ধারকরা বরাবরই রাশিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিপত্যের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে এসেছেন। ১৯৯০–এর দশকের শুরুতে রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, কিন্তু একই সঙ্গে এটিও স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে, রাশিয়া পুরোপুরিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীনে চলে যেতে ইচ্ছুক নয়। এমতাবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত করতে ইচ্ছুক ছিল না।

বরং যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য ছিল রাশিয়ার তদানীন্তন নৈরাজ্যকর আর্থ–সামাজিক পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে রাশিয়াকে যতদূর সম্ভব দুর্বল করে ফেলা, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিজস্ব ভূকৌশলগত অবস্থানকে সর্বোচ্চ সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে যাওয়া এবং সম্ভব হলে সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো রাশিয়াকেও খণ্ডবিখণ্ড করে ফেলা। চেচেন স্বাধীনতাকামী/বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরকে পরোক্ষ সমর্থন প্রদান, ইউরেশিয়ায় অবশিষ্ট রুশঘেঁষা সরকারগুলোকে একে একে অপসারণ, রাশিয়ার অভ্যন্তরে মার্কিনপন্থী মনোভাবের বিস্তার, ‘অ্যান্টি–ব্যালিস্টিক মিসাইল ট্রিটি’ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়ে ‘ন্যাশনাল মিসাইল ডিফেন্স’ প্রকল্প গ্রহণ, পূর্ব ইউরোপে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন প্রভৃতি নানাবিধ মার্কিন পদক্ষেপ ছিল উক্ত লক্ষ্য বাস্তবায়নের মাধ্যম]

আন্তর্জাতিক মিলিট্যান্ট গ্রুপ ‘আইএস’–এর প্রাক্তন যুদ্ধমন্ত্রী তারখান বাতিরাশভিলি (আবু ওমর আল–শিশানি)। মার্কিন স্পেশাল ফোর্সের দ্বারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জর্জীয় সেনাবাহিনীর প্রাক্তন কমান্ডো চেচেন জাতিভুক্ত বাতিরাশভিলি চেচনিয়া ও সিরিয়ায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন; Source: The Daily Beast

আজকে মানচিত্রের দিকে এক নজর দেখলেই বোঝা যায় যে পশ্চিমা দেশগুলো ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণ থেকে বিরত থাকার প্রতিশ্রুতি কতটুকু রক্ষা করেছে। তারা কেবল ধোঁকাবাজি করেছে। আমরা একের পর এক পাঁচ ধাপে ন্যাটোর সম্প্রসারণ দেখেছি – ১৯৯৯ সালে পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র ও হাঙ্গেরিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়; ২০০৪ সালে বুলগেরিয়া, এস্তোনিয়া, লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া, রুমানিয়া, স্লোভাকিয়া ও স্লোভেনিয়াকে; ২০০৯ সালে আলবেনিয়া ও ক্রোয়েশিয়াকে; ২০১৭ সালে মন্টিনিগ্রোকে; এবং ২০২০ সালে উত্তর মেসিডোনিয়াকে।

এর ফলে জোটটি, এর সামরিক অবকাঠামো রাশিয়ার সীমান্তে পৌঁছেছে। এটি ইউরোপীয় নিরাপত্তা সঙ্কটের একটি মূল কারণ; আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পুরো ব্যবস্থার ওপর এটি সবচেয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং পারস্পরিক আস্থাকে লুপ্ত করেছে।

পরিস্থিতির, বিশেষত কৌশলগত ক্ষেত্রে, আরো অবনতি ঘটছে। বৈশ্বিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সৃষ্টির মার্কিন প্রকল্পের অংশ হিসেবে রুমানিয়া ও পোল্যান্ডে ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন করা হচ্ছে। এটি সাধারণ জ্ঞান যে, সেখানে মোতায়েনকৃত লঞ্চারগুলোকে টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের জন্য ব্যবহার করা যায়, যেগুলো আক্রমণাত্মক স্ট্রাইক সিস্টেম।

তদুপরি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অল–পারপাজ স্ট্যান্ডার্ড মিসাইল–৬ তৈরি করছে, যেটি আকাশ ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ভূমিতে থাকা লক্ষ্যবস্তুতেও আঘাত হানতে পারবে। অন্যভাবে বললে, তথাকথিত আত্মরক্ষামূলক মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নতুন আক্রমণাত্মক ক্ষমতার সৃষ্টি করছে ও সম্প্রসারণ ঘটাচ্ছে।

মার্কিন–নির্মিত ‘স্ট্যান্ডার্ড মিসাইল–৬’ (এসএম–৬) ক্ষেপণাস্ত্রের গঠনপ্রণালী; Source: Missile Defense Agency via Wikimedia Commons

[লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে এখন পর্যন্ত যে কয়টি রাষ্ট্র ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, সবগুলোই ইতিপূর্বে কমিউনিস্ট শাসনের অধীনে ছিল। লিথুয়ানিয়া, লাতভিয়া ও এস্তোনিয়া কমিউনিস্ট–শাসিত প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল, ক্রোয়েশিয়া, স্লোভেনিয়া, মন্টিনিগ্রো ও উত্তর মেসিডোনিয়া কমিউনিস্ট–শাসিত প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়ার অংশ ছিল, চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভাকিয়া কমিউনিস্ট–শাসিত প্রাক্তন চেকোস্লোভাকিয়ার অংশ ছিল, এবং পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, রুমানিয়া ও বুলগেরিয়া কমিউনিস্ট রাষ্ট্র ছিল। তদুপরি, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন, জর্জিয়া, মলদোভা, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, ফিনল্যান্ড প্রভৃতি রাষ্ট্রকে ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে, যেগুলো অতীতে হয় রুশ/সোভিয়েত প্রভাব বলয়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল, নয়তো কমিউনিস্ট শাসনের অধীনে ছিল।

এর থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ন্যাটোর সম্প্রসারণের পশ্চাতে যুক্তরাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ঐতিহাসিক রুশ/সোভিয়েত প্রভাব বলয় এবং প্রাক্তন পূর্ব ইউরোপীয় কমিউনিস্ট বিশ্বকে পুরোপুরিভাবে নিজস্ব প্রভাব বলয়ের অংশে পরিণত করা। এর ফলে একদিকে ইউরোপে কমিউনিজমের পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভের কোনো সম্ভাবনা অবশিষ্ট থাকবে না, অন্য দিকে রাশিয়া আর কখনো ইউরোপে আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে না।

তদুপরি, রাশিয়ার বিশাল পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এক অতি শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীতে পরিণত করেছে এবং এজন্য সম্ভাব্য রুশ পারমাণবিক হুমকি মোকাবেলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত সক্রিয়। যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব ইউরোপে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে এবং এটি তাদের বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নির্মাণ প্রক্রিয়ার অংশ। যুক্তরাষ্ট্রের হিসেব এরকম: যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হলে সেক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাশিয়া কর্তৃক নিক্ষিপ্ত পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে ভূপাতিত করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষা করবে, কিন্তু রাশিয়ার অনুরূপ কোনো বিস্তৃত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক নিক্ষিপ্ত পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে থামাতে পারবে না। ফলে সম্ভাব্য পারমাণবিক যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র বিজয়ী হবে।

সর্বোপরি, যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব ইউরোপে যেসব ‘প্রতিরক্ষামূলক’ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করছে, সেগুলো কেবল শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্রকে ধ্বংস করার কাজেই নয়, একই সঙ্গে শত্রুপক্ষের লক্ষ্যবস্তুর ওপর আক্রমণ চালানোর জন্যও ব্যবহার করা যায়। রুশ সীমান্তের কাছে অনুরূপ মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন থাকলে সম্ভাব্য যুদ্ধের সময় মার্কিনিরা সহজেই রুশ ভূখণ্ডের ওপর ব্যাপক মাত্রায় ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ পরিচালনা করতে পারবে। অর্থাৎ, পূর্ব ইউরোপের ন্যাটোভুক্ত রাষ্ট্রগুলোয় যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক মোতায়েনকৃত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কার্যত রাশিয়ার জন্য শাঁখের করাত স্বরূপ। এমতাবস্থায় রাশিয়া ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণকে নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুতর হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে]

This is the fifth part of a Bengali article that provides a translation of (along with a brief commentary on) the speech of Russian President Vladimir Putin which was delivered on 21 February 2022 on the occasion of the Russian recognition of the Donetsk People’s Republic and the Lugansk People's Republic. In this part of the speech, Putin elaborates on the ongoing eastward expansion of NATO and the security risks it poses towards Russia.

Source of the featured image: Aleksei Nikolsky/Sputnik/Kremlin Pool Photo/AFP via Euronews

Related Articles

Exit mobile version