বিশ্বের বৃহৎ শক্তিসমূহের আকর্ষণের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র মধ্যপ্রাচ্য। মধ্যপ্রাচ্য পৃথিবীর বৃহৎ তেল উৎপাদক ও রপ্তানিকারক। সেখানকার বেশিরভাগ রাষ্ট্র তেল উৎপাদক, যার শীর্ষে রয়েছে ইরান, ইরাক এবং সৌদি আরব। এই তেল উৎপাদনকারী রাষ্ট্রগুলোর সংগঠন ওপেক (OPEC)। এদের মধ্যে সৌদি আরব হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ও ইসরায়েলের পর দ্বিতীয় নির্ভরশীল মিত্র। যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রের অন্যতম ক্রেতাও এই দেশ।
সম্প্রতি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের দরূন আন্তর্জাতিক রাজনীতির উত্তপ্ত পরিবেশে মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন সৌদি-আরব সফর করে তেলের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বলেন। উল্টো ২ শতাংশ উৎপাদন কমিয়ে দেয়ার ঘোষণা দেয় ওপেক প্লাস। চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং সৌদি সফর করার পর চীন থেকে ৪ বিলিয়ন ডলারে অস্ত্র কিনতে যাচ্ছে সৌদি আরব। তাছাড়া সৌদি আরবের ব্রিক্স (BRICS)-এ যোগদানে আগ্রহ, মার্কিন ও চীনা রাষ্ট্রপতির সাথে বিতর্কিত ব্যবহার কি বলতে চাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিনীদের দাপট আর চলবে না? সৌদি আরবের ডলারে বিপরীতে চীনা মুদ্রা ইউয়ানে তেল বিক্রি কি পতন ঘটাবে পেট্রোডলার ব্যবস্থার? চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে কুটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় স্থাপন, সৌদি আরব ও সিরিয়ার নতুন সম্পর্ক নতুন করে ভাবিয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির তাত্ত্বিকদের।
মধ্যপ্রাচ্য ও যুক্তরাষ্ট্র
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগদানের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঐতিহাসিক বিচ্ছেদের নীতি বাপলিসি অব আইসোলেশন থেকে সরে আসে। কিন্তু বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধরত ইউরোপে প্রচুর অস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে অর্থনীতি চাঙ্গা করে যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্বযুদ্ধের পর আত্মপ্রকাশ করে পরাশক্তি হিসেবে। স্নায়ুযুদ্ধকালীন বিশ্বে মধ্যপ্রাচ্য ছিল পুঁজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক ব্লকের সংঘাতের আলোচিত কেন্দ্র। স্নায়ুযুদ্ধের পরই মধ্যপ্রাচ্য নিয়ন্ত্রিত হয় একক মার্কিন নেতৃত্বে, যার ইতি ঘটে সিরিয়া যুদ্ধের মাধ্যমে। সিরিয়াতে রুশ-সিরিয়া-ইরানি জোট বাহিনীর কাছে পরাজিত হয় মার্কিন বাহিনী। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নীতির পরিবর্তন ঘটে আক্রমণাত্মক থেকে প্রতিরক্ষামূলক (Offensive to defensive) অবস্থানে। বৈশ্বিক ব্যবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। একদিকে যেমন রাশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে ভাবতে হয়, তেমনি ভাবতে হয় মধ্যপ্রাচ্যের পরাশক্তি ইরানকে নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্র কখনো চাইবে না মধ্যপ্রাচ্য তার হাতের বাইরে চলে যাক। এর প্রতিফলন পাওয়া যায় সৌদি-চীন সম্পর্ক নিয়ে সম্প্রতি মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের বক্তব্যে। তিনি বলেন, “আমরা মধ্যপ্রাচ্যে কোনো খালি জায়গা (Vacuum) রাখব না, যেটা চীন বা ইরান নিয়ে নিতে পারে।”
শুধু ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের জন্য নয়, বরং তেলের উপর আধিপত্য বজায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশের সাথে সুসম্পর্ক বা তার প্রভাবাধীন রাখতে হবে। ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে মুক্তভাবে পা রাখার জায়গা পেলেও তেলের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। তেলের উপর নিয়ন্ত্রণ না থাকলে ধস নামবে যুক্তরাষ্ট্রের পেট্রোডলার বাণিজ্যে, যদিও যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদকে পরিণত হয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিধ্বস্ত মার্কিন অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের জন্য ব্রেটন উড সিস্টেমের মাধ্যমে ডলারকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। সোনার জায়গায় লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে নেয়া হয় ডলার। যুক্তরাষ্ট্র স্বর্ণের বিনিময়ে ডলার পাঠায় দেশগুলোকে বাণিজ্য করতে।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন সংকটে, ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো ডলার ফেরত দিয়ে স্বর্ণ চায়। কিন্তু পর্যাপ্ত স্বর্ণ ছিল না মার্কিন রিজার্ভে। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট সৌদি বাদশাহ ফয়সালকে নিরাপত্তা দেয়ার স্বার্থে চালু করেন ডলারের বিনিময়ে তেল বিক্রি। সুদিন ফেরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। কতদিন মনে রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র? পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র সৌদির সাথে চুক্তি করে- যুক্তরাষ্ট্র তেল কিনবে, কিন্তু সৌদি আরব ডলার নিয়ে আসতে পারবে না, বরং তা দিয়ে অস্ত্র কিনতে হবে, নয়তো সেদেশে বিনিয়োগ করতে হবে। বর্তমানে সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় অস্ত্রের ক্রেতা। অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের পরও মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরব হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির অন্যান্য ক্রীড়ানকের মধ্যে সিরিয়া ও ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বিরোধপূর্ণ।
সৌদি-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের টানাপোড়েন
মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি-আরব যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত মিত্র, তাই দুই দেশের সম্পর্কের চড়াই-উৎরাই প্রমাণ করে মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রভাব। ২০১৮ সালের নভেম্বরে জামাল খাশোগী হত্যার নিন্দা করে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন আইনপ্রণেতারা খাশোগী হত্যা মামলায় সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের (এমবিএস) ভূমিকার প্রমাণ করে উদ্ধৃতি দেন, যা এমবিএস-কে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি রাগান্বিত করে তোলে। তাছাড়া ইয়েমেনে সৌদি হামলার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে মার্কিন নাগরিকরা সৌদি আরবে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের দাবি তোলে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২১ সালে ইয়েমেনে হামলার জন্য সৌদি আরবকে কোনো প্রকার সমর্থন দেয়া বন্ধ ঘোষণা করেন, এবং খাশোগী হত্যার সমালোচনা করেন । সম্প্রতি জো বাইডেন সৌদি সফর করে তেল উৎপাদন ২ শতাংশ বৃদ্ধির কথা বলেন, ওপেক উল্টো ২ শতাংশ কমিয়ে দেয়।
ডেনভার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য বিভাগের অধ্যাপক নাদের হাশেমির মতে, “এর দ্বারা সৌদি বোঝাতে চায়- আমি কখনো তোমাকে বলি না অস্ত্রের বেচাকেনা কমাও বা বাড়াও। আমার কথায় তোমার অস্ত্রের ব্যবসা চলে না, কেন তোমার কথায় আমি তেল বিক্রি কমাবো?”
বাইডেন সফরে আসলে তাকে অভ্যর্থনা জানান মক্কার গভর্নর, যেখানে শি জিনপিংকে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রী অভ্যর্থনা জানান। পশ্চিমা মিডিয়ায় খবর হয়- শি-র জন্য লাল গালিচা, বাইডেনের জন্য অন্য রঙ কেন? অধ্যাপক নাদের হাশেমির মতে, এমবিএসের এমন আচরণ মূলত ডেমোক্রেটিক দল ও জো বাইডেনের প্রতি যারা সৌদি আরবের বিপক্ষে মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে কথা বলেন তাদের প্রতি।
সবচেয়ে বড় ধাক্কা হলো সৌদি আরবের চীনা মুদ্রা ইউয়ানে তেল বিক্রিতে রাজি হওয়া। লিবিয়ার শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি যখন ডলারের বিপক্ষে আফ্রিকা জুড়ে নতুন অর্থব্যবস্থা চালু করতে উদ্যত হন, তার পতন হয়। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন ডলার দিয়ে তেল বেচাকেনা হবে না। বাশার আল আসাদ, নিকোলাস মাদুরা বন্ধ করতে চেয়েছিলেন ডলার দিয়ে তেল বিক্রি, কেউ সফল হননি। শি ও এমবিএসের ডলারের বদলে ইউয়ানে তেল কেনাবেচা সৌদি-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতিরই বহিঃপ্রকাশ। তাছাড়া, সৌদি আরব চীন থেকে নতুন করে ৪ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের অস্ত্র কেনার চুক্তি করেছে বলে নিশ্চিত করেছে চীনা নিউজ মিডিয়া সিজিটিএন। গত বছর রিয়াদ ও আবুধাবি নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রকে হুথি গোষ্ঠীকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী দল অ্যাখ্যা দেয়াকে পুনর্বিবেচনা করতে আহ্বান জানায়।
চীনের সাথে সম্পর্ক ও দ্বিপাক্ষিক সুবিধা
বর্তমান বিশ্বে চীন অন্যতম এক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক শক্তি। চীন শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বরং পুরো পৃথিবীর সবগুলো রাষ্ট্রের সাথে অর্থনৈতিক দিক থেকে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চাচ্ছে। চীন-সৌদি আরব সম্পর্কের পেছনে উভয়ের স্বার্থই জড়িত। এমবিএস চাচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্যকে আগামীর ইউরোপ বানিয়ে তুলতে, নিয়েছেন ভিশন ২০৩০। তিনি চাচ্ছেন শুধু তেলের উপর নির্ভর না করে অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য নিয়ে আসতে, যাতে চীনের সহযোগিতা প্রয়োজন। অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম কেনার পাশাপাশি চীনের সাথে সম্পর্ক তৈরি করলে অর্থনীতিতে অনেক এগিয়ে যেতে পারবে সৌদি আরব।
সৌদি আরব ১ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে মেগা সিটি বানাচ্ছে, যেখানে থাকবে 5G নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা, পাওয়ার গ্রিড, এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম ইত্যাদি। এগুলোর জন্য বর্তমানে সৌদি আরবকে চীনের দ্বারস্থ হতে হতোই। তাছাড়া, সৌদি আরব চাচ্ছে এই মরুর বুকে রেল সংযোগ তৈরি করতে, যেখানে চীনের রয়েছে সবচেয়ে বেশি দক্ষতা।
তাছাড়া সৌদি আরব, ইরানের সবচেয়ে বেশি তেলের ক্রেতা হচ্ছে এই চীন। যুক্তরাষ্ট্র এখন তেলের বড় উৎপাদক, তাই সৌদি আরবেকে তেল বিক্রির জন্য চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন জরুরী। নিরাপত্তা জন্য চীনের কাছে রয়েছে আধুনিক অস্ত্র যা সৌদি পেতে পারে। সর্বোপরি সৌদি আরবের যুবরাজ এমবিএসের পরিকল্পনা অনুযায়ী সৌদিকে আধুনিকায়ন করে আগামীর ইউরোপ বানাতে চীনের গুরুত্ব অনেক বেশি। তবে এখানে চীনের দিক থেকেও অনেক সুবিধা রয়েছে।
ইরানের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সম্পর্ক চরম বিরোধপূর্ণ। ইরানের তেলের বৃহৎ ক্রেতা চীন। গত বছর চীন-ইরান দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করে। চীন ইরানে ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয়। মধ্যপ্রাচ্যের দুই বিরোধী রাষ্ট্র সৌদি আরব- ইরান শক্তির সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হয় চীনের মধ্যস্থতায়। ইরান বর্তমানে চীনের বড় কৌশলগত মিত্র।
আরব বসন্তে যখন মধ্যপ্রাচ্যে একে একে পতন হচ্ছিল স্বৈরশাসকদের, তার বাতাস এসে লাগে সিরিয়াতে। আসাদের পতন হয়নি, কিন্তু সিরিয়ায় শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। আসাদ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে পাশে থেকেছে রাশিয়া। অর্থনৈতিক, সামরিক বিভিন্ন কারণে সিরিয়ায় আসাদ সরকার চীন ও রাশিয়ার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখে। তাছাড়া, সিরিয়ায় বিদ্রোহী সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টিকে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন আসাদ সরকারকে মার্কিনবিমুখ করে তোলে।
সুতরাং মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র সৌদি আরবের নতুন করে চীনের সাথে সম্পর্ক, চীনের মধ্যস্থতায় ইরান-সৌদি আরব সম্পর্কের নতুন সূচনা, সিরিয়া-সৌদি আরব সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব কমে আসার ইঙ্গিত দেয়। তাছাড়া, JCPOA-র ভাঙন মার্কিন বিশ্বাসযোগ্যতা ও মিত্রতাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে বিশ্বব্যাপী। ২০২১ সালে আফগানিস্তান ত্যাগের পর মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম মিত্র সৌদি আরব, ইরানের এমন প্রতিক্রিয়া মধ্যপ্রাচ্য-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করবে। চীন হতে পারে সৌদির এমন বন্ধু যে তার সমালোচনা করবে না, বরং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রযুক্তিতে সহযোগিতার মাধ্যমে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে আধুনিক সৌদি আরব। তাই সৌদি আরব স্বভাবতই চাইবে না যুক্তরাষ্ট্রের নাক গলাক। এটা হতে পারে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের খরার দিনের শুরু।