২০২২ সালের ২৬–২৮ জুন বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট ‘গ্রুপ অব সেভেন’ (জি সেভেন) এর ৪৮ তম শীর্ষ সম্মেলন জার্মানির বাভারিয়ান আল্পসের শ্লোস এলমাউতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। একই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে শুরু হওয়া রাশিয়ার সামরিক অভিযানের প্রেক্ষিতে জোটের শীর্ষ নেতাদের এই সম্মেলন বেশ তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে, এবং এই সম্মেলনে জোট নেতারা ইউক্রেনের পাশে থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তবে প্রকাশিত একটি ভিডিও থেকে দেখা যায়, এই ‘জি সেভেন’ সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একটি পুরনো ছবিকে কেন্দ্র করে জোটের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বেশ হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে।
২০০৯ সালের ৩ আগস্ট সাইবেরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের টুভা অঞ্চলে রাশিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুতিনের শার্ট খোলা অবস্থায় খোলা গায়ে ঘোড়ার পিঠে চড়া একটি ছবি প্রকাশিত হয়েছিল। সেই ছবিটি ইঙ্গিত করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো পুতিনকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টার সূত্রপাত করেন। এমনকি, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন তাদের সাথে এই হাসি-ঠাট্টায় অংশ নেন। এ সময় বৈঠকে উপস্থিত জোটের অন্য শীর্ষ নেতাদেরও হাস্যরসে শামিল হতে দেখা গেছে। এছাড়াও, বিভিন্ন সময়ে পুতিনের বেশ কয়েকটি দুঃসাহসিক ছবি প্রকাশিত হয়েছে, এবং এগুলো বেশ আলোচিতও হয়েছে।
২০১০ সালের ৬ মার্চ প্রকাশিত একটি ছবিতে দেখা যায়, পুতিন রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত খাকাশিয়া প্রজাতন্ত্র সফরের পথে একটি ঘোড়ায় আরোহী হয়েছেন। এই ছবিটি সেই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি আবাকান শহরের নিকটস্থ কারাটাশ এলাকা থেকে তোলা হয়েছে।
২০১০ সালের ৭ নভেম্বর লেলিনগ্রাদ অঞ্চলের একক আসনবিশিষ্ট গাড়ি প্রতিযোগিতা ‘ফর্মুলা ওয়ান’-এ পরীক্ষামূলকভাবে অংশগ্রহণের জন্য পুতিন প্রস্তুত হচ্ছেন, এবং এ সময় তিনি প্রতিযোগিতার উপযোগী হেলমেট এবং বিশেষ পোশাক পরে আরোহীর আসনে বসেছেন।
২০০৮ সালের ৩১ আগস্ট রাশিয়ার পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত উসুরি অভয়ারণ্যে পৌঁছে পুতিন প্রায় পাঁচ বছর বয়সী একটি বাঘ পর্যবেক্ষণ করছেন। এ সময় বিজ্ঞানীরা পরবর্তীতে বাঘটির গতিবিধির ওপর নজর রাখার জন্য প্রাণিটির দেহে একটি ‘স্যাটেলাইট ট্র্যাকার’ যুক্ত করে দেন।
২০০৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর পুতিন সেন্ট পিটার্সবার্গের একটি শরীরচর্চা বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন, এবং এ সময় তিনি একটি জুডো প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালনা করেন।
২০১১ সালের ১০ আগস্ট পুতিন প্রত্নতাত্ত্বিক খনন পরিদর্শনে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত তামান উপদ্বীপে পৌঁছেন। মস্কো থেকে দক্ষিণে প্রায় ১,১৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই উপদ্বীপে একসময় গ্রিক উপনিবেশ ছিল। সেখানে পৌঁছে পুতিন প্রয়োজনীয় সরঞ্জামসহ পানিতে ডুব দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।
২০০৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তোলা একটি ছবিতে দেখা যায়, পুতিন দেশটির সোচি শহরে অবস্থিত জাতীয় পার্ক পরিদর্শনে গিয়ে একটি চিতাবাঘ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
২০১১ সালের ১৪ আগস্ট পুতিন দেশটির ভালাম দ্বীপে অবস্থিত বিখ্যাত স্পাসো-প্রিওব্রাজেনস্কি মঠ পরিদর্শন করেন। এ সময় তাকে লাডোগা হ্রদে ভাসমান একটি জলযানে রোদচশমা পরা অবস্থায় দেখা গেছে।
২০১১ সালের পহেলা আগস্ট পুতিন মস্কো থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত কেন্দ্রীয় তিভের অঞ্চলের সেলিগার হৃদ এলাকায় নাশি যুব সংঘ কর্তৃক আয়োজিত গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পে একটি পাঞ্জা লড়াই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। দেশটির প্রায় ৮৪টি অঞ্চল থেকে হাজারো তরুণ এই বার্ষিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।
পাঞ্জা লড়াই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ ছাড়াও সেই গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পে পুতিন প্রতিযোগীদের উৎসাহ প্রদান করতে একটি খাবার ভাজার পাত্র বাঁকা করতে চেষ্টা করেন।
২০১০ সালের ৩ জানুয়ারি রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে সোচির নিকটে অবস্থিত দেশটির স্কি রিসোর্ট ‘ক্রাসনায়া পলিয়ানা’তে পুতিনকে বরফের উপর চলাচলের যানবাহন ‘স্নোমোবাইল’ এর চালকের আসনে দেখা যায়।
২০১০ সালের ১০ আগস্ট দেশটির রায়াজান অঞ্চলে পুতিন হেডফোন পরা অবস্থায় একটি অগ্নিনির্বাপক বিমানের ককপিটে পাইলটের আসন বসেন।
২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর বুলগেরিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বয়কো বরিসভের নিকট থেকে উপহার পাওয়া একটি বুলগেরিয়ান শেফার্ড কুকুর পুতিন বুকে জড়িয়ে ধরেন।
২০১১ সালের ২৯ আগস্ট পুতিন রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় নভোরোসিস্ক শহরে তিন চাকার মোটরসাইকেলের চালকের আসনে বসা অবস্থায় দেখা গেছে।
একটি ছবিতে ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট সাইবেরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের টুভা অঞ্চলের একটি হৃদে পুতিনকে সাঁতার কাটতে দেখা যায়।
পুতিন ২০১০ সালের ২৭ আগস্ট দেশটির খাবারভস্ক অঞ্চল সফর করেন। এ সময় শিশুদের আগ্রহে তাকে ছবিতে অটোগ্রাফ দিতে দেখা গেছে।
প্রকাশিত আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, পুতিন ২০১০ সালের ২৫ আগস্ট ওলগা উপসাগরের উত্তাল স্রোতে তিমির এক টুকরো চামড়া সংগ্রহ করে বিশ্লেষণের উদ্দেশ্যে একটি তিমিকে লক্ষ্য করে বিশেষ একধরনের অস্ত্র তাক করে আছেন।
পুতিন ২০০৯ সালের ৩১ জুলাই চকালভ দ্বীপে একটি সফরে পৌঁছান। এ সময় তাকে ‘ডাশা’ নামের একটি বেলুগা তিমির দেহে ‘স্যাটেলাইট ট্র্যাকার’ যুক্ত করতে দেখা গেছে।
২০১০ সালের ১০ ডিসেম্বর সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত দাতব্য উদ্দেশ্যে আয়োজিত একটি সঙ্গীতানুষ্ঠানে পুতিনকে পিয়ানো বাজাতে দেখা গেছে।
২০১০ সালের ৫ জুন পুতিন মস্কোর উত্তর-পূর্বে অবস্থিত লসিনি অস্ট্রোভ জাতীয় পার্কে পৌঁছে একটি হরিণজাতীয় প্রাণীকে খাওয়াতে দেখা গেছে।
২০০৭ সালের ১৫ আগস্ট সাইবেরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের টুভা অঞ্চলের একটি তৃণভূমির পথ ধরে অস্ত্র হাতে পুতিন হেঁটে চলছেন।
২০১১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পুতিন নিজনি তাগিল অঞ্চলের উরালস শহরে অনুষ্ঠিত একটি প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তাকে একটি অত্যাধুনিক টি-৯০এএম ট্যাংকের অভ্যন্তরে বসা অবস্থায় দেখা যায়।
২০০৯ সালের পহেলা আগস্ট পুতিন পূর্ব সাইবেরিয়াতে একটি স্থাপত্য এবং নৃতাত্ত্বিক জাদুঘর পরিদর্শন করেন। প্রকাশিত ছবিতে এ সময় হাতুড়ি হাতে তাকে লোহায় আঘাত করতে দেখা যায়।
পুতিন ২০১১ সালের ১৫ এপ্রিল মস্কোতে অনুষ্ঠিত একটি যুব আইস হকি প্রতিযোগিতার প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন।
২০০৯ সালের পহেলা আগস্ট পুতিন পানিতে নিমজ্জনের বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে পৃথিবীর গভীরতম হৃদ বৈকালের প্রায় ১,৪০০ মিটার তলদেশে গিয়ে মূল্যবান গ্যাস স্ফটিক নিরীক্ষণ করেন।
প্রকাশিত একটি ছবিতে পুতিনকে সাইবেরিয়াতে মৎস্য শিকার করতে দেখা গেছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি ছবিতে দেখা যায় যে, ২০০৬ সালে একটি সামরিক ফায়ারিং রেঞ্জে পুতিন অস্ত্র হাতে অনুশীলন করছেন।
একটি ছবিতে অবসর সময়ে পুতিনকে পাহাড়ি পথ বেয়ে উঠতে দেখা গেছে।
আরেকটি ছবিতে পুতিনকে একটি প্রাচীরে আরোহণ করতে দেখা যায়। এভাবে বিভিন্ন কৌশলী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পুতিন রাশিয়ার জনগণের নিকট নিজের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে প্রয়াস চালিয়ে গিয়েছেম এবং তার প্রকাশিত এসব ছবি বিশ্ব গণমাধ্যমে আলোচনার খোরাক হয়েছে।