কুরিল দ্বীপপুঞ্জ ওখোতস্ক সাগর এবং উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত ৫৬টি দ্বীপের সমষ্টি। বর্তমান রুশ ফেডারেশনের কামচাৎকা উপদ্বীপের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে জাপানের হোক্কাইডো দ্বীপের উত্তর–পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত এই দ্বীপপুঞ্জটি বিস্তৃত। রুশ ভাষায় এই দ্বীপপুঞ্জটি Курильский острова (‘কুরিলস্কি অস্ত্রোভা’) নামে এবং জাপানি ভাষা য় দ্বীপপুঞ্জটি クリル列島 (‘কুরিরু রেত্তো’) নামে পরিচিত। এই দ্বীপপুঞ্জটি নিয়ে বা আরো স্পষ্টভাবে বলতে গেলে দ্বীপপুঞ্জটির অংশবিশেষ নিয়ে রাশিয়া ও জাপানের মধ্যে তীব্র বিরোধ রয়েছে।
কুরিল দ্বীপপুঞ্জের মোট আয়তন ১০,৫০৩.২ বর্গ কি.মি.। দ্বীপপুঞ্জটি বর্তমানে সম্পূর্ণরূপে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন। প্রশাসনিকভাবে কুরিল দ্বীপপুঞ্জ রুশ ফেডারেশনের শাখালিন প্রদেশের অন্তর্গত। দ্বীপপুঞ্জটি প্রশাসনিকভাবে তিনটি জেলায় বিভক্ত – সেভেরো–কুরিলস্কি (‘উত্তর কুরিল’), কুরিলস্কি (‘কুরিল’) এবং ইয়ুঝনো–কুরিলস্কি (‘দক্ষিণ কুরিল’)। দ্বীপপুঞ্জটির সর্ববৃহৎ ৪টি দ্বীপ হচ্ছে যথাক্রমে ইতুরুপ (৩,২৮০ বর্গ কি.মি.), পারামুশির (২,০৫৩ বর্গ কি.মি.), কুনাশির (১,৪৯৯ বর্গ কি.মি.) এবং উরুপ (১,৪৫০ বর্গ কি.মি.)।
দ্বীপপুঞ্জটির ৫৬টি দ্বীপের মধ্যে মাত্র ৮টি দ্বীপে জনবসতি রয়েছে। ২০১০ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, দ্বীপপুঞ্জটিতে মোট ১৯,৪৩৪ জন মানুষ বসবাস করে। এদের মধ্যে রুশ, ইউক্রেনীয়, তাতার–সহ বিভিন্ন জাতির মানুষ রয়েছে এবং অর্থোডক্স খ্রিস্টান ও ইসলাম দ্বীপটির অধিবাসীদের প্রধান ধর্ম। উল্লেখ্য, কুরিল দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত ইতুরুপ দ্বীপটির অধিবাসীদের ৬০%–এর বেশি জাতিগতভাবে ইউক্রেনীয়।
বর্তমানে জাপান কুরিল দ্বীপপুঞ্জের সম্পূর্ণ অংশ দাবি করে না। জাপান দ্বীপপুঞ্জটির যে দ্বীপগুলো দাবি করে সেগুলো প্রশাসনিকভাবে কুরিলস্কি ও ইয়ুঝনো–কুরিলস্কি জেলার অন্তর্গত। এই দ্বীপগুলো হচ্ছে ইতুরুপ, কুনাশির ও শিকোতান দ্বীপ এবং হাবোমাই দ্বীপপুঞ্জ। এগুলোর মধ্যে কুনাশির ও শিকোতান দ্বীপ এবং হাবোমাই দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে ইয়ুঝনো–কুরিলস্কি জেলাটি গঠিত এবং ইতুরুপ দ্বীপটি কুরিলস্কি জেলার অংশবিশেষ। উল্লেখ্য, শিকোতান দ্বীপটির আয়তন ২৫৫ বর্গ কি.মি. এবং হাবোমাই দ্বীপপুঞ্জটির আয়তন মাত্র ৯৭.৭ বর্গ কি.মি.। হাবোমাই দ্বীপপুঞ্জটি ১৩টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপ নিয়ে গঠিত।
বিরোধপূর্ণ এই দ্বীপগুলো সাধারণভাবে রাশিয়ায় ‘দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জ’ নামে পরিচিত। অন্যদিকে, জাপানে এই দ্বীপগুলো পরিচিত ‘উত্তরাঞ্চলীয় ভূমি’ (Northern Territory) নামে। জাপানি সরকার এই দ্বীপগুলোকে জাপানের হোক্কাইডো প্রিফেকচারের (Prefecture) অন্তর্গত নেমুরো সাব–প্রিফেকচারের অংশ হিসেবে দাবি করে। প্রশ্ন উঠতেই পারে, রাশিয়ার নিয়ন্ত্রিত কুরিল দ্বীপপুঞ্জের একাংশ জাপান কেন দাবি করে? এর উত্তর জানার জন্য কুরিল দ্বীপপুঞ্জের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস জানা জরুরি।
কুরিল দ্বীপপুঞ্জের মূল অধিবাসী ছিল ‘আইনু’ (Ainu) নামক একটি পূর্ব এশীয় জাতি। সপ্তদশ শতাব্দীতে জাপান দ্বীপপুঞ্জটি দখল করে নেয় এবং জাতিগত জাপানিরা দ্বীপপুঞ্জটিতে বসতি স্থাপন করে। জাতিগত আইনুদের মতে, এসময় থেকে জাপানিরা রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক গণহত্যার মাধ্যমে কুরিল দ্বীপপুঞ্জ থেকে আইনুদেরকে নিশ্চিহ্ন করার প্রচেষ্টা শুরু করে। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে রুশ নৌ–অভিযাত্রীরা কুরিল দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছায় এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে কুরিল দ্বীপপুঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী বৃহত্তর শাখালিন দ্বীপ নিয়ে তদানীন্তন রুশ সাম্রাজ্যের সঙ্গে জাপানি সাম্রাজ্যের বিরোধ দেখা দেয়। ১৮৭৫ সালের ৭ মে রাশিয়া ও জাপানের মধ্যে সেন্ট পিটার্সবার্গের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং এই চুক্তি অনুযায়ী শাখালিন দ্বীপের ওপর রাশিয়ার ও কুরিল দ্বীপপুঞ্জের ওপর জাপানের একচ্ছত্র অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯০৪–০৫ সালের রুশ–জাপানি যুদ্ধে জাপানের নিকট রাশিয়া পরাজিত হয় এবং ১৯০৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত পোর্টসমাউথের চুক্তি অনুযায়ী রুশ–নিয়ন্ত্রিত শাখালিন দ্বীপের দক্ষিণার্ধ (দক্ষিণ শাখালিন) জাপানের হস্তগত হয়। রুশ–জাপানি যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয় ছিল রুশদের জন্য চরম অবমাননাকর। ১৮৭০–১৮৭১ সালের ফরাসি–জার্মান যুদ্ধে জার্মানির নিকট পরাজিত হওয়ার পর ফ্রান্স অ্যালসেস–লোরেন অঞ্চলটি জার্মানির কাছে হারানোর ফলে ফরাসি জাতীয়তাবাদীদের যেমন প্রধান স্বপ্ন হয়ে উঠেছিল এই পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়া, ঠিক তেমনি রুশ–জাপান যুদ্ধে জাপানের নিকট পরাজিত হওয়ার পর দক্ষিণ শাখালিন অঞ্চলটি জাপানের কাছে হারানোর ফলে রুশ জাতীয়তাবাদীদের অন্যতম প্রধান স্বপ্ন ছিল এই পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়া।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং মাঞ্চুরিয়া (বর্তমান উত্তর–পূর্ব চীন), কোরিয়া উপদ্বীপের উত্তরাংশ (বর্তমান উত্তর কোরিয়া) ও দক্ষিণ শাখালিনকে জাপানি দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করে এবং সেই সঙ্গে কুরিল দ্বীপপুঞ্জও দখল করে নেয়। এভাবে রুশ জাতীয়তাবাদীদের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হয়। ১৯৪৮ সালে সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী জোসেফ স্তালিনের নির্দেশে কুরিল দ্বীপপুঞ্জ থেকে সেখানে বসবাসরত প্রায় ১৭,০০০ জাতিগত জাপানিকে বহিষ্কার করা হয় এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জাতিগত রুশ, ইউক্রেনীয়, তাতার ও অন্যান্য জাতির মানুষ কুরিল দ্বীপপুঞ্জে বসতি স্থাপন করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ–পরবর্তী সময়ে জাপান দক্ষিণ শাখালিনের ওপর থেকে সব দাবি প্রত্যাহার করে নিলেও দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জের ওপর দাবি ছেড়ে দিতে ইচ্ছুক ছিল না। ১৯৫১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর মিত্রশক্তি ও জাপানের মধ্যে সান ফ্রান্সিসকোর চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং এই চুক্তির একটি শর্ত হিসেবে জাপান কুরিল দ্বীপপুঞ্জের ওপর থেকে তার দাবি পরিত্যাগ করে, কিন্তু দ্বীপপুঞ্জটির ওপর সার্বভৌমত্ব তাহলে কোন রাষ্ট্রের সে সম্পর্কে চুক্তিটিতে কিছু বলা হয়নি। সোভিয়েত ইউনিয়ন এই চুক্তিকে প্রত্যাখ্যান করে এবং জাপানের সঙ্গে পৃথকভাবে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেয়। ১৯৫৬ সালের সোভিয়েত–জাপানি যৌথ ঘোষণা অনুযায়ী সোভিয়েত ইউনিয়ন জাপানের নিকট অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র শিকোতান দ্বীপ ও হাবোমাই দ্বীপপুঞ্জ হস্তান্তর করতে সম্মত হয় এবং জাপান ইতুরুপ ও কুনাশির দ্বীপদ্বয়ের ওপর থেকে তার দাবি প্রত্যাহার করে নিতে রাজি হয়। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপে জাপান এই শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে নি। ইতোমধ্যে জাপানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্থায়ীভাবে সৈন্য মোতায়েন করলে মস্কোর সিদ্ধান্তও পরিবর্তিত হয় এবং ১৯৬০ সালের ২৭ জানুয়ারিতে প্রকাশিত একটি স্মারকলিপিতে সোভিয়েত সরকার ঘোষণা করে যে, যতদিন পর্যন্ত জাপান থেকে সমস্ত বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহার না করা হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত কুরিল দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে জাপানের সঙ্গে কোনো আলোচনায় তারা অংশ নেবে না।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের আইনগত উত্তরসূরী রাষ্ট্র হিসেবে রুশ ফেডারেশন কুরিল দ্বীপপুঞ্জের মালিকানা লাভ করে। ১৯৯০-এর দশকে রাশিয়া ছিল অর্থনৈতিক ও সামরিকভাবে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি রাষ্ট্র, অন্যদিকে জাপানের অর্থনীতি ১৯৮৭ সালেই হয়ে উঠেছিল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। এসময় টোকিও মস্কোর দুর্বলতাকে ব্যবহার করে দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জ ফিরে পাবার প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু বিপুল পরিমাণ আর্থিক সহায়তা ও বিনিয়োগের লোভ দেখিয়েও ক্রেমলিনের কর্তাদের এ ব্যাপারে রাজি করানো যায় নি। ভ্লাদিমির পুতিন রুশ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে রাশিয়ার অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি আবার বৃদ্ধি পেতে শুরু করে এবং পুনরুত্থিত রাশিয়া জাপানের কাছে কোনো ভূমি হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানায়। এই কারণে বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টার পরও রাশিয়া ও জাপানের মধ্যে কোনো শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর সম্ভব হয়নি। উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়ন/রাশিয়ার সঙ্গে জাপানের কোনো শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি, অর্থাৎ রাষ্ট্র দুটি এখনও যুদ্ধাবস্থায় রয়েছে!
রাশিয়া কুরিল দ্বীপপুঞ্জের ব্যাপারে জাপানকে সীমিত কিছু ছাড় দিয়েছিল। জাপানি নাগরিকরা ভিসা ছাড়াই কুরিল দ্বীপপুঞ্জে যাতায়াত করতে পারে এবং কুরিল দ্বীপপুঞ্জের চারপাশে অবস্থিত সমুদ্রে রুশ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (Exclusive Economic Zone) জাপানি জেলেদের মাছ ধরার অধিকার দেয়া হয়েছে। কিন্তু ২০০৬ সালে রুশ সীমান্তরক্ষীরা একজন জাপানি জেলেকে গুলি করে হত্যা করার পর থেকে জাপানি জেলেদের জন্য এই অঞ্চলে মাছ ধরা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। এছাড়া রুশ জাতীয়তাবাদীরা এবং শাখালিন প্রদেশের গভর্নরও ভিসা ছাড়া জাপানিদের কুরিল দ্বীপপুঞ্জে প্রবেশাধিকার কেড়ে নিতে আগ্রহী।
মস্কো কেন দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জ জাপানের কাছে হস্তান্তর করতে চায় না? এর কারণ নিহিত রয়েছে রুশ রাষ্ট্রের রাজনৈতিক, ভূকৌশলগত, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতার মধ্যে।
প্রথমত, কোনো রাষ্ট্র চাইলেই তার ভূমি অন্য কোনো রাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করতে পারে না। যে সরকার এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেবে, সেই সরকারের জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়ার, এমনকি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। স্বাভাবিকভাবেই একটি রাষ্ট্রের জনসাধারণ রাষ্ট্রের কোনো একটি অংশ, তা যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করাকে রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অবমাননা হিসেবেই বিবেচনা করে। রুশ জনসাধারণ রাশিয়ার কোনো ভূমি অন্য কোনো রাষ্ট্রের নিকট হস্তান্তরের প্রস্তাবনাকে খুবই নেতিবাচকভাবে দেখে। রুশ জাতীয়তাবাদীরা এবং বর্তমান রুশ নেতৃবৃন্দ দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জকে জাপানের কাছে হস্তান্তরের ঘোর বিরোধী। তাদের মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মস্কো বিজয়ী হয় এবং জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হাজার হাজার সোভিয়েত সৈন্য প্রাণ দেয়। অতএব কুরিল দ্বীপপুঞ্জ মস্কোর বিজয়ের পুরস্কার এবং পরাজিত শক্তি হিসেবে জাপানের উচিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল মেনে নেয়া।
দ্বিতীয়ত, কুরিল দ্বীপপুঞ্জে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। বিপুল পরিমাণ খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ এই দ্বীপপুঞ্জটিতে এ পর্যন্ত ১,৮৬৭ টন স্বর্ণ এবং ৯,২৮৪ টন রৌপ্যের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ রেনিয়ামের (Rhenium) মজুদ রয়েছে কুরিল দ্বীপপুঞ্জে। উল্লেখ্য, বিমানের জেট ইঞ্জিন তৈরিতে এই উপাদানটি ব্যবহৃত হয়। এছাড়া কুরিল দ্বীপপুঞ্জ ও এর নিকটবর্তী সমুদ্রে প্রচুর পরিমাণে হাইড্রোকার্বন অর্থাৎ খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তদুপরি, কুরিল দ্বীপপুঞ্জের চারপাশের সমুদ্রে রয়েছে প্রচুর মাছ ও অন্যান্য প্রাণিজ ও উদ্ভিজ সামুদ্রিক সম্পদ। কুরিল দ্বীপপুঞ্জের চারপাশে রয়েছে রাশিয়ার হাজার হাজার কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত অর্থনৈতিক অঞ্চল। এত সম্পদশালী একটি অঞ্চল কোনো বৃহৎ শক্তি নির্বিবাদে ছেড়ে দেবে এটা চিন্তা করাটাও অযৌক্তিক।
তৃতীয়ত, কুরিল দ্বীপপুঞ্জ মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। ঘন জঙ্গল, আগ্নেয়গিরি, জলপ্রপাত – নানা ধরনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ এই দ্বীপপুঞ্জটিতে পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটিয়ে বিপুল পরিমাণ আয় করা সম্ভব। সম্প্রতি রুশ সরকার এই দিকে মনোযোগ দিয়েছে এবং কুরিল দ্বীপপুঞ্জ জুড়ে পুরনো অবকাঠামোর সংস্কার ও আধুনিকীকরণ এবং নতুন অবকাঠামো নির্মাণ আরম্ভ করেছে।
চতুর্থত, কুরিল দ্বীপপুঞ্জের অধিবাসীরা মূলত বৃহত্তর স্লাভ ও তুর্কি জাতিভুক্ত এবং জাপানি সভ্যতার সঙ্গে তাদের প্রায় কোনো সাংস্কৃতিক সাদৃশ্য নেই। জাপানি সরকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রলোভন দেখিয়ে দ্বীপপুঞ্জটির অধিবাসীদের জাপানের সঙ্গে যোগদান করার জন্য প্রচুর প্রচেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু দ্বীপপুঞ্জটির অধিবাসীরা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যকে বিসর্জন দিতে প্রস্তুত নয়। তাদের আনুগত্য মস্কোর প্রতি, এজন্য রুশ সরকার যদি দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জ বা এর একাংশ জাপানের কাছে হস্তান্তর করতে চায়ও, এই অঞ্চলের জনসাধারণ তাতে প্রচণ্ডভাবে বাধা দেবে।
পঞ্চমত, দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জের ভূকৌশলগত তাৎপর্য অত্যধিক। দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জে ফ্রিজা ও একাতেরিনা প্রণালীদ্বয় অবস্থিত। ফ্রিজা প্রণালীটি ইতুরুপ দ্বীপ থেকে উরুপ দ্বীপকে এবং একাতেরিনা প্রণালীটি কুনাশির দ্বীপ থেকে ইতুরুপ দ্বীপকে পৃথক করেছে। এই প্রণালীদ্বয় ওখোতস্ক সাগরকে প্রশান্ত মহাসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। এই প্রণালী দুটি সারা বছর বরফমুক্ত থাকে এবং এদের মধ্য দিয়ে রুশ নৌবাহিনীর প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহর খোলা সমুদ্রে প্রবেশ করতে পারে। উল্লেখ্য, মধ্য ও উত্তর কুরিল দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত প্রণালীগুলো এবং সুশিমা ও সাঙ্গার প্রণালীর মাধ্যমেও ওখোতস্ক সাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে প্রবেশ করা যায়, কিন্তু মধ্য ও উত্তর কুরিল দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত প্রণালীগুলো ব্যবহারের জন্য পুরোপুরি উপযুক্ত নয় এবং সুশিমা ও সাঙ্গার প্রণালীদ্বয় জাপানের নিয়ন্ত্রণধীন। দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকার কারণে রুশ নৌ ও বিমানবাহিনী ওখোতস্ক সাগরে বিদেশি নৌযান, বিশেষত যুদ্ধজাহাজ ও ডুবোজাহাজের প্রবেশ কার্যকরভাবে পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সোভিয়েত আমলে মস্কো ওখোতস্ক সাগরকে নিজস্ব সমুদ্র হিসেবে ঘোষণা করেছিল, যাতে মার্কিন ব্যালিস্টিক ক্ষেপনাস্ত্রবাহী ডুবোজাহাজ এই সাগরে প্রবেশ করে মস্কোর জন্য পারমাণবিক হুমকি সৃষ্টি করতে না পারে। মস্কোও একই নীতি অবলম্বন করেছে এবং এজন্য দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা রুশ সমরবিশারদদের দৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তদুপরি, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উত্তর মেরুর বরফ গলতে আরম্ভ করেছে এবং উত্তর মেরুর বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রচুর খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস–সহ প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। রুশরা উত্তর মেরুর বিরাট এক অংশে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। বরফ গলার কারণে আর্কটিক মহাসাগর ক্রমে নৌযান চলাচলের উপযোগী হয়ে উঠছে এবং রুশরা এই ‘উত্তরাঞ্চলীয় সমুদ্রপথে’র (Northern Sea Route) নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিপুল অর্থ আয় করবে। এই উত্তরাঞ্চলীয় সমুদ্রপথে পৌঁছানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ চলে গিয়েছে কুরিল দ্বীপপুঞ্জের মধ্য দিয়ে, তাই এই দ্বীপপুঞ্জের ওপর পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ মস্কোর জন্য একান্ত আবশ্যক। এই দ্বীপপুঞ্জের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকার ফলে মধ্য রাশিয়া থেকে রাশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল অঞ্চলে পৌঁছানোর একটি নতুন জলপথ সৃষ্টি হচ্ছে। রাশিয়া একটি স্বীকৃত ইউরোপীয় ও এশীয় শক্তি, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্ব ও অভাবনীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে এশীয়–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল (Asia-Pacific) ক্রমশ বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে, তাই রাশিয়া নিজেকে একটি এশীয়–প্রশান্ত মহাসাগরীয় শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে আগ্রহী, আর মস্কোর উত্তর–পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় রণকৌশলে কুরিল দ্বীপপুঞ্জের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকার অত্যন্ত জরুরি।
ষষ্ঠত, নতুন করে রুশ–মার্কিন স্নায়ুযুদ্ধ শুরুর পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য কুরিল দ্বীপপুঞ্জের ওপর রুশ নিয়ন্ত্রণ অত্যাবশ্যক হয়ে উঠেছে। ২০১৯ সালে যখন রাশিয়া ও জাপানের মধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর সংক্রান্ত আলোচনা চলছিল, তখন মস্কো দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জ জাপানের কাছে হস্তান্তর করতে পারে এরকম একটি সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। তখন মার্কিন সমরবিশারদরা ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন যে, দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জ জাপানের নিয়ন্ত্রণে এলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত সেখানে একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (missile shield) স্থাপন করা। বিশেষত ইতুরুপ দ্বীপটি উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য একটি আদর্শ স্থান বলে তাঁরা ব্যক্ত করেছিলেন। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে বসানো ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ইতোমধ্যে দূরপ্রাচ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক সামরিক উপস্থিতি বিদ্যমান। জাপানে ‘ইউনাইটেড স্টেটস ফোর্সেস জাপান’ (United States Forces Japan) কমান্ডের অধীনে ৫০,০০০ মার্কিন সৈন্য রয়েছে এবং মার্কিন ৭ম নৌবহর, ৩য় মেরিন এক্সপিডিশনারি ফোর্স এবং মার্কিন বিমানবাহিনীর ১৩০টি যুদ্ধবিমান জাপানে অবস্থিত। দক্ষিণ কোরিয়ায় ‘ইউনাইটেড স্টেটস ফোর্সেস কোরিয়া’ (United States Forces Korea) কমান্ডের অধীনে ২৩,৫০০ মার্কিন সৈন্য রয়েছে এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ‘টার্মিনাল হাই অল্টিচ্যুড এরিয়া ডিফেন্স’ (Terminal High Altitude Area Defense) বা ‘থাড’ (THAAD) নামক অত্যাধুনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপনাস্ত্র–বিধ্বংসী ক্ষেপনাস্ত্র ব্যবস্থা স্থাপন করেছে। অর্থাৎ, দূরপ্রাচ্যে রাশিয়া ইতোমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা সামরিকভাবে পরিবেষ্টিত বা অবরুদ্ধ। এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জ জাপানের কাছে হস্তান্তর করে রাশিয়া তার দুর্বলতাকে আরো বৃদ্ধি করতে মোটেই ইচ্ছুক নয়।
সর্বোপরি, ভ্লাদিমির পুতিনের নেতৃত্বাধীন বর্তমান রুশ সরকার জাতীয়তাবাদী পররাষ্ট্রনীতির কারণেই রুশ জনসাধারণের মধ্যে জনপ্রিয় এবং এজন্যই মার্কিন–নেতৃত্বাধীন জোটের চাপিয়ে দেয়া অর্থনৈতিক অবরোধের কারণে রুশ অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার পরেও রুশরা সরকারবিরোধী বড় কোনো আন্দোলনে লিপ্ত হয় নি। এমতাবস্থায় দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জকে জাপানের কাছে হস্তান্তরকে রুশ জনসাধারণ রুশ পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা ও জাপানের কাছে আত্মসমর্পণ হিসেবে দেখবে। তাছাড়া, ঐতিহাসিক কারণে রুশ জাতীয়তাবাদীরা জাপানকে রাশিয়ার বড় একটি শত্রু হিসেবে দেখে।
উল্লেখ্য, বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে জাপান পরপর ৪ বার রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। ১৯০৪–০৫ সালের রুশ–জাপানি যুদ্ধ জাপান শুরু করেছিল মাঞ্চুরিয়ায় অবস্থিত রুশ নৌঘাঁটি আক্রমণের মধ্য দিয়ে। ১৯১৮–২২ সালে রাশিয়ার গৃহযুদ্ধ চলাকালে জাপানি সৈন্যরা ভ্লাদিভোস্তক–সহ রুশ দূরপ্রাচ্যের একটি বিরাট অংশ দখল করে নিয়ে সেখানে একটি পুতুল সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল এবং তাদের উদ্দেশ্য ছিল সাইবেরিয়াকে রাশিয়া থেকে পৃথক করে একটি ‘নিরপেক্ষ রাষ্ট্র’ (buffer state) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা, কিন্তু রাশিয়ার গৃহযুদ্ধে বলশেভিকরা বিজয়ী হওয়ায় তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। ১৯৩২–১৯৪১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও জাপানের মধ্যে বহুবার সীমান্ত সংঘর্ষ হয়, এবং জাপানি সেনাবাহিনীর পরিকল্পনা ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে উরাল পর্বতমালা পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল দখল করে নেয়া। কিন্তু ১৯৩৮ সালে খাসান হ্রদের যুদ্ধ এবং ১৯৩৯ সালে খালখিন–গোল নদীর যুদ্ধে সোভিয়েতদের কাছে পরাজিত হওয়ার পর জাপানিরা এই পরিকল্পনা পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়। ১৯৪৫ সালে সর্বশেষ সোভিয়েত–জাপানি যুদ্ধ সংঘটিত হয়, যেটিতে জাপান চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়। সর্বশেষে, স্নায়ুযুদ্ধে জাপান দৃঢ়ভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ছিল এবং বর্তমান রুশ–মার্কিন দ্বন্দ্বেও জাপানের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে। ইউক্রেন সঙ্কটের পর মার্কিন–নেতৃত্বাধীন জোটের পাশাপাশি জাপানও রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করেছে। রুশ অভিজাত সম্প্রদায়ের একাংশের ধারণা, জাপানের পররাষ্ট্রনীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এমতাবস্থায় জাপানের কাছে রুশ–নিয়ন্ত্রিত ভূমি হস্তান্তর রুশ সরকারের জন্য হবে ‘রাজনৈতিক আত্মহত্যা’র শামিল।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে রুশ দূরপ্রাচ্যে অবস্থিত রুশ সামরিক বাহিনী ছিল জাপানি সশস্ত্রবাহিনীর তুলনায় গুণগতভাবে নিম্নমানের ও সংখ্যাগতভাবে স্বল্প। জাপানি সশস্ত্রবাহিনীতে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের পরিমাণ ছিল দূরপ্রাচ্যের রুশ সশস্ত্রবাহিনীর চেয়ে বেশি। এসময় শুধু রুশ পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারই ছিল জাপানের সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে কুরিল দ্বীপপুঞ্জকে রক্ষা করার জন্য মস্কোর একমাত্র হাতিয়ার। কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ের কোনো যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সুযোগ সীমিত। এজন্য রাশিয়া সম্প্রতি কুরিল দ্বীপপুঞ্জের এবং সার্বিকভাবে রুশ দূরপ্রাচ্যের নিরাপত্তার জন্য প্রথাগত সামরিক শক্তি বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে।
বর্তমানে কুরিল দ্বীপপুঞ্জে রুশ সেনাবাহিনীর ১৮তম মেশিনগান আর্টিলারি ডিভিশন মোতায়েনকৃত রয়েছে, এবং এই ডিভিশনটির সদরদপ্তর অবস্থিত ইতুরুপ দ্বীপে, যেটি জাপান দাবি করে আসছে। এছাড়া দ্বীপটিতে রুশ অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা ‘এফএসবি’র অধীনস্থ সীমান্তরক্ষীরা রয়েছে। রুশরা দ্বীপপুঞ্জটিতে আরো দুইটি সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করেছে এবং দ্বীপগুলোতে অবস্থিত বিমানবন্দরগুলোর সংস্কার করেছে। মস্কো দ্বীপপুঞ্জটিতে ‘কে–৩০০পি বাস্তিওন–পি’ উপকূলীয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ‘বুক’ (Buk) ও ‘তর’ (Tor) বিমান–বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, ‘কামোভ কা–৫২ অ্যালিগেটর’ সামরিক হেলিকপ্টার–বহর, বিভিন্ন মডেলের সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান, ‘প্রোজেক্ট ৬৩৬–এম’ ডুবোজাহাজ এবং ‘এলেরন–৩’ ড্রোনবহর মোতায়েন করেছে। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মস্কো কুরিল দ্বীপপুঞ্জ আরো এক ডিভিশন সৈন্য প্রেরণ করবে এবং বিখ্যাত ‘এস–৪০০ ত্রিউম্ফ’ বিমান–বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন করবে। ইতোমধ্যে মস্কো কুরিল দ্বীপপুঞ্জের সামরিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রায় ৮,৯৫০ কোটি (বা ৮৯.৫ বিলিয়ন) রুবল (বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০,১৯৯ কোটি টাকা) ব্যয় করেছে।