বহির্বিশ্বের কাছে নিজেদের শক্তিমত্তা তুলে ধরার জন্য পরাশক্তি দেশগুলোর মাঝে সামরিক দিক থেকে নিজেদের গুছিয়ে নেয়ার প্রবণতা দেখা যায়। আর এরই ধারাবাহিকতায় সমুদ্রের তলদেশেও নিজেদের দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ব্যবহার করা হয় সাবমেরিন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সাবমেরিনের ব্যবহার বহুলভাবে লক্ষ্য করা যায়। বিগত কয়েক দশক ধরে এর আধুনিকায়ন লক্ষ্যনীয়। এরই মধ্যে নিউক্লিয়ার শক্তিসমৃদ্ধ সাবমেরিন নতুন মাত্রা যোগ করেছে। খুব গোপনে শত্রুর রাডারকে ফাঁকি দিয়ে অনেক দূর থেকে শত্রুপক্ষের ঘাঁটিতে আঘাত হানতে সক্ষম বর্তমান সাবমেরিনগুলো। সমুদ্রের তলদেশে রাজত্ব করা এরকম সেরা দশটি সাবমেরিন নিয়ে আজকের এই লেখাটি সাজানো হয়েছে।
১০) অস্কার-২ ক্লাস – রাশিয়া
তালিকার দশ নম্বরে আছে পৃথিবীর অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়ান সাবমেরিন অস্কার-২ ক্লাস। প্রজেক্ট ৯৪৯ এবং প্রজেক্ট ৯৪৯-এ সোভিয়েত নেভির তত্ত্বাবধানে ১৯৭৫ সালে তৈরি করা হয় সাবমেরিনটি। প্রায় ৯৭,৯৯০ হর্স পাওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন সাবমেরিনটি ১০৭ জন ক্রু নিয়ে ঘন্টায় প্রায় ৩২ নট (৫৯ কি.মি/ঘন্টা) গতিতে চলতে পারে। এর দৈর্ঘ্য ৫০৮ ফুট। প্রজেক্ট ৯৪৯ এর অন্যতম বৃহৎ সাবমেরিন এটি।
৯) ওহিও ক্লাস – যুক্তরাষ্ট্র
পৃথিবীর অন্যতম পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র যে সামরিক দিক থেকে কতটা শক্তিধর তার একটি ধারণা পাওয়া যায় সমুদ্রের তলদেশে দাপিয়ে বেড়ান তাদের সাবমেরিনগুলো দেখে। অহিও ক্লাস হচ্ছে নিউক্লিয়ার পাওয়ার সম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্রসমৃদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর একটি শক্তিশালী সাবমেরিন। এটি প্রায় ৫৬০ ফুট লম্বা। এর ক্ষমতা ৬০,০০০ হর্স পাওয়ার। প্রায় ২.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যায়ে নির্মিত এই সাবমেরিনটি ১৯৮১ সালে যাত্রা শুরু করে। ১৫ জন অফিসার ও ১৪০ জন ক্রু নিয়ে সাবমেরিনটি ঘন্টায় প্রায় ২৫ নট (৪৬ কি.মি/ঘণ্টা) বেগে ছুটতে পারে।
৮) সরয়্যু ক্লাস – জাপান
এটি জাপানের অন্যতম অ্যাটাক সাবমেরিন, ২০০৯ সালে যা যাত্রা শুরু করে। ৩২,০০০ হর্স পাওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন এই সাবমেরিনটি তৈরি করতে ব্যায় হয়েছিল প্রায় ০.৬ বিলিয়ন ডলার। ৯ জন অফিসার ও ৫৬ জন ক্রু ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এই সাবমেরিনের দৈর্ঘ্য ২৭৫ ফুট। সাবমেরিনটি ঘন্টায় প্রায় ৩৭ কি.মি বেগে ছুটতে পারে।
৭) আকুলা ক্লাস – রাশিয়া
১৯৮৪ সালে প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যায়ে নির্মিত সাবমেরিনটি যাত্রা শুরু করে। ৪৩,০০০ হর্স পাওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৬২ ফুটের এই সাবমেরিনটি ৬৩ জন ক্রু নিয়ে ঘন্টায় প্রায় ৬৫ কি.মি বেগে ছুটতে পারে। সাবমেরিনটি ৪ এপ্রিল ২০১২ সালে ভারতীয় নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং এর নাম রাখা হয় আইএনএস-চক্র।
৬) লস অ্যাঞ্জেলস ক্লাস – যুক্তরাষ্ট্র
শতাব্দীতে ঘটে যাওয়া পর পর দুটি বিশ্বযুদ্ধ এবং ইউরোপীয় অর্থনৈতিক মন্দা ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় আমেরিকা হয়ে উঠেছে এক অন্যতম পরাশক্তি। সামরিক সক্ষমতাকে তারা নিয়ে গেছে অভাবনীয় এক পর্যায়ে। ১৬ জন অফিসার ও ১২৭ জন ক্রু নিয়ে সমুদ্রের তলদেশে রাজত্ব করে বেড়ায় লস অ্যাঞ্জেলস ক্লাস। ৩৫,০০০ হর্স পাওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন সাবমেরিনটি ঘন্টায় প্রায় ৬২ কি.মি বেগে ছুটতে পারে। লম্বায় ৩৬২ ফুট সাবমেরিনটি নির্মাণে ব্যায় হয়েছিল প্রায় ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। নিউক্লিয়ার পাওয়ারসম্পন্ন এই অ্যাটাক সাবমেরিনটি ৬৮৮ ক্লাস সাবমেরিন নামেও পরিচিত।
৫) সিয়েরা ২ ক্লাস – রাশিয়া
প্রজেক্ট ৯৪৫ এর তত্ত্বাবধানে এই সাবমেরিনটি তৈরি করা হয়। ১৯৮৪ সালে যাত্রা শুরু করে এই নিউক্লিয়ার অ্যাটাক সাবমেরিন। ২৫টি টর্পেডো বহন ও সূক্ষ্মভাবে মাইন স্থাপন করতে সক্ষম এটি।
সাবমেরিনটি তৈরিতে খরচ হয়েছিল প্রায় ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ৩৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের এই সাবমেরিনটি ৬১ জন ক্রু নিয়ে ৩২ নট (৬০ কি.মি/ঘণ্টা) গতিতে চলতে পারে।
৪) গ্রানি ক্লাস – রাশিয়া
বর্তমান বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়ার বিগত কয়েক দশক ধরে সামরিক শক্তির আধুনিকায়নের প্রচেষ্টা যথেষ্ট লক্ষ্যণীয়। নিউক্লিয়ার পাওয়ারসম্পন্ন ১৯৯৩ সালে যাত্রা শুরু করা ৪৫৮ ফুটের বিশাল এই অত্যাধুনিক সাবমেরিন রাশিয়ার সামরিক শক্তির অন্যতম এক সম্পদ। ৪৩,০০০ হর্স পাওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন সাবমেরিনটি তৈরিতে ব্যায় হয়েছিল প্রায় ১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ৩২ জন অফিসার ও ৯০ জন ক্রু নিয়ে সাবমেরিনটি ঘন্টায় প্রায় ৬৫ কি.মি বেগে ছুটতে পারে। প্রজেক্ট ৮৮৫ ইয়াসেন-এর আদলে তৈরি এই রাশিয়ান সাবমেরিনটি ইয়াসেন ক্লাস নামেও পরিচিত। এটি রাশিয়ান নৌবাহিনীর অত্যাধুনিক নিউক্লিয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন অ্যাটাক সাবমেরিন।
৩) অ্যাসটুট ক্লাস – যুক্তরাজ্য
সাম্প্রতিক সময়ে তৈরি হওয়া নিউক্লিয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন যুক্তরাজ্যের রয়্যাল নেভীর অন্যতম এক সম্পদ। সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি এই সাবমেরিনটি ভারী ক্ষেপণাস্ত্র ও টর্পেডো বহনে সক্ষম। ৬০০ কিলোওয়াটের ডিজেল ইঞ্জিন দ্বারা এটি পরিচালিত। প্রায় ৩১৮ ফুট লম্বা এই সাবমেরিনটি তৈরিতে খরচ হয়েছিল প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ১২ জন অফিসার ও ১১০ জন ক্রু নিয়ে সাবমেরিনটি ঘন্টায় প্রায় ৫৬ কি.মি গতিবেগে ছুটতে পারে। শত্রুপক্ষের রাডারকে ফাঁকি দিয়ে সমুদ্রের তলদেশে প্রায় ৩৯০ মিটার গভীরতা দিয়ে চলতে পারে।
২) ভার্জিনিয়া ক্লাস – যুক্তরাষ্ট্র
এটি এসএসনএন-৭৭৪ ক্লাস নামেও পরিচিত। নিউক্লিয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সক্ষম এই অ্যাটাক সাবমেরিনটি ২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করে। সমুদ্রের প্রায় ৮০০ ফুট গভীরে ঘন্টায় প্রায় ৪৬ কি.মি বেগে এটি চলতে পারে। এটি মার্কিন নৌবাহিনীর সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি। ৪০,০০০ হর্স পাওয়ারসম্পন্ন এই সাবমেরিনটি তৈরিতে খরচ হয়েছিল প্রায় ৩.২ বিলিয়ন মাকিন ডলার। লম্বায় ৩৭৭ ফুট এই সাবমেরিনটিতে ১৫ জন অফিসারসহ ১১৭ জন ক্রু অবস্থান করতে পারেন।
১) সি উল্ফ ক্লাস – যুক্তরাষ্ট্র
এই তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে বর্তমান সময়ের সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সাবমেরিন যুক্তরাষ্ট্রের সি উল্ফ ক্লাস। ১৯৯৭ সালে এই নিউক্লিয়ার অ্যাটাক সাবমেরিনটি যাত্রা শুরু করে। লস অ্যাঞ্জেলস ক্লাসের আদলে তৈরি করা হয়েছিল সাবমেরিনটি। এটি তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর দৈর্ঘ্য ৩৫৩ ফুট। ৪৫,০০০ হর্স পাওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন এই সাবমেরিনটি ১৪ জন অফিসার ও ১২৬ জন ক্রু নিয়ে ঘন্টায় প্রায় ৬৫ কি.মি গতিবেগে চলতে পারে।