ব্রাজিল কি বৈশ্বিক পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে?

আটলান্টিক মহাসাগর সংলগ্ন দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশে অবস্থিত ব্রাজিল যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোবিশিষ্ট একটি রাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী, ব্রাজিলের মোট আয়তন প্রায় ৮৫,১৫,৭৬৭ বর্গ কিলোমিটার, যা বিশ্বে পঞ্চম বৃহত্তর। দেশটি ইকুয়েডর ও চিলি ব্যতীত দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের বাকি সবগুলো রাষ্ট্রের সাথে সীমান্তবর্তী। বর্তমানে দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ২১ কোটি ৬০ লক্ষ, এবং এটি বিশ্বের ষষ্ঠ জনবহুল রাষ্ট্র।

বৈশ্বিক মানচিত্রে ব্রাজিলের অবস্থান; চিত্রসূত্র: Worldometer

 

ভৌগোলিকভাবে পশ্চিম গোলার্ধে অবস্থিত ব্রাজিলের সামরিক বাহিনীর আকার এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের পর বৃহত্তর। ২০২১ সালে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পরিমাণ প্রায় ১.৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। দেশটি সয়াবিন এবং গোমাংসের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক। তাদের অন্যান্য প্রধান রপ্তানি পণ্যের মাঝে লৌহ আকরিক, চিনি এবং কফি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও দেশটি ২০১৪ সালে ফুটবল বিশ্বকাপ এবং ২০১৬ সালে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক আয়োজন করে বহির্বিশ্বে ইতিবাচক ভাবমূর্তি ধরে রাখার প্রয়াস অব্যাহত রাখে।

১৮২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর পর্তুগালের ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থা থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করা লাতিন আমেরিকার এই রাষ্ট্র ১৮৮৯ সালের ১৫ নভেম্বর রাজতন্ত্র থেকে প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। শুরুতে দেশটির বৈদেশিক সম্পর্ক আঞ্চলিক বিভিন্ন দেশের সাথে সীমাবদ্ধ থাকে। এমনকি, দেশটি একসময় প্রতিবেশী আর্জেন্টিনা এবং প্যারাগুয়ের সাথে সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ব্রাজিল বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে নিজের প্রভাব রাখতে শুরু করে। লাতিন আমেরিকা অঞ্চল থেকে একমাত্র দেশ হিসেবে ব্রাজিল সেই যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়ে। দেশটি বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে সমঝোতার জন্য দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ থেকে বৃহত্তম প্রতিনিধি দল প্রেরণ করে। এই সমঝোতা ১৯২০ সালের জানুয়ারিতে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ গঠনে ভূমিকা রাখে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির পক্ষে ব্রাজিলের সামরিক সহায়তা ও স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক দেশটিকে পশ্চিমা প্রভাববলয়ে কিছুটা ঠেলে দেয়। তবে তারা সামরিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার নিরপেক্ষতার পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে।

১৯৬৪ সালে ব্রাজিলে এক সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে। এতে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে একটি কর্তৃত্ববাদী সরকার দেশটির ক্ষমতা দখল করে। প্রায় দুই যুগের সামরিক শাসনের অবসানের পর ১৯৮৮ সালের ৫ অক্টোবর দেশটিতে নতুন সংবিধান কার্যকর হয়। ১৯৮৯ সালে ব্রাজিলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যে দুজন রাষ্ট্রপতি ফার্নান্দো হেনরিক কার্দোসো এবং লুইস ইনাসিও লুলা ডি সিলভার শাসনামলে ব্রাজিল বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর একটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ব্রাজিল পাঁচটি বৃহৎ উদীয়মান অর্থনীতির দেশের জোট ব্রিকস এর সদস্য; চিত্রসূত্র: Alexey Nikolsky/Kremlin via Reuters

 

ব্রাজিল আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার জন্য অর্থনৈতিক একীভূতকরণ এবং পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর জোর দিয়েছে। দেশটি পশ্চিম গোলার্ধের সর্ববৃহৎ সহযোগিতা সংস্থা অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস (ওএএস) এর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। এই সংস্থাটি অঞ্চলটির দারিদ্র্য বিমোচন, শান্তি ও নিরাপত্তা জোরদার করা, এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা নিশ্চিতে কাজ করছে। ব্রাজিল মার্কোসের অর্থনৈতিক জোটের অন্যতম অংশীদার। দেশটি আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, এবং প্যারাগুয়েকে সাথে নিয়ে এই জোটের মাধ্যমে আঞ্চলিক বাজার ব্যবস্থায় মুক্ত বাণিজ্য সম্প্রসারণে উদ্যোগী হয়েছে।

ব্রাজিল বিশ্বের সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশগুলোর জোট ‘গ্রুপ অব টুয়েন্টি’ (জি টুয়েন্টি) এর অন্যতম সদস্য। এছাড়াও, দেশটি রাশিয়া, ভারত, চীন, এবং দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে যৌথভাবে এই পাঁচ বৃহৎ উদীয়মান অর্থনীতির দেশের জোট ব্রিকস (BRICS) এর সদস্য। এটি বিকল্প অর্থনৈতিক জোট হিসেবে আবির্ভূত হতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

রাষ্ট্রপতি লুইস ইনাসিও লুলা ডি সিলভা ও দিলমা রৌসেফের শাসনামলে ব্রাজিল সরকার প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভেনিজুয়েলার সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রপতি হুগো চ্যাভেজের সরকারের সাথে গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে আবদ্ধ ছিল। ২০১৬ সালে ব্রাজিলের প্রথম নারী রাষ্ট্রপতি দিলমা রৌসেফকে বিতর্কিত অভিশংসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপসারণ এবং ডানপন্থী নেতা মিশেল তেমারকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার প্রক্রিয়ায় মার্কিন প্রশাসনের সমর্থন দিয়েছে। অন্যদিকে, ২০১৩ সালের মার্চে হুগো চ্যাভেজের মৃত্যুর পর নিকোলাস মাদুরো ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্রপতি হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। ২০১৯ সালে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে মাদুরো সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা জুয়ান গুইদো নিজেকে অন্তবর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। এদিকে, রাষ্ট্রপতি জাইর বলসোনারোর নেতৃত্বাধীন ব্রাজিলের নতুন প্রশাসন জুয়ান গুইদোকে ভেনিজুয়েলার অন্তবর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফলে, দেশ দুটোর মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন তৈরি হয়। ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ১৮৭ রাষ্ট্র কিউবার ওপর মার্কিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানিয়ে উত্থাপিত প্রস্তাবে সমর্থন প্রদান করলেও ব্রাজিল এই নিন্দা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। বর্তমানে রাষ্ট্রপতি জাইর বলসোনারোর প্রশাসনের সাথে কিউবার কূটনৈতিক সম্পর্ক কিছুটা শীতল হয়েছে।

মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের সাথে জাইর বলসোনারো; চিত্রসূত্র: Alan Santos/PR

স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ব্রাজিলকে স্বীকৃতি প্রদানকারী প্রথম রাষ্ট্র হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ১৮২৪ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দেশটির কূটনৈতিক সম্পর্কের শুরু হয়, এবং দেশটির সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার সম্পর্ক বহুমাত্রিক। ১৯৬৪ সালের  সামরিক অভ্যুত্থানে মার্কিন সমর্থন থাকলেও পরবর্তীতে দেশটির গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং অর্থনৈতিক সম্প্রসারণে যুক্তরাষ্ট্র ভূমিকা রাখে। ব্রাজিল আফগানিস্তান ও ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বাহিনীর আক্রমণের নিন্দা জানায়। লুইস ইনাসিও লুলা ডি সিলভা ও দিলমা রৌসেফের শাসনামলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে খানিকটা মতপার্থক্যে থাকলেও ২০১৮ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জাইর বলসোনারো জয়ী হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিল কূটনৈতিক সম্পর্কের বেশ অগ্রগতি হয়। এমনকি, মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ব্রাজিলকে ‘উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট’ (ন্যাটো) এর বাইরে ‘অন্যতম প্রধান মিত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা এবং কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক লড়াইয়ে নতুন মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন প্রশাসনের ঘোষণার ফলে ব্রাজিলের সাথে দেশটির ক্রমবর্ধমান সম্পর্কে কিছুটা বিরূপ প্রভাব পড়ে।

চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিংয়ের সাথে জাইর বলসোনারো; চিত্রসূত্র: Alan Santos/PR

 

বর্তমানে চীন ব্রাজিলের বাণিজ্যের অন্যতম অংশীদার। ২০২০ সালে ব্রাজিল প্রায় ৬৭.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য চীনে রপ্তানি করেছে এবং দেশটির প্রধান রপ্তানি পণ্যের মধ্যে সয়াবিন, লৌহ আকরিক, ও অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে, একই বছরে চীন প্রায় ৩৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য ব্রাজিলে রপ্তানি করেছে। ২০২১ সালে দেশ দুটো প্রায় ১৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য করেছে। ২০০৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত চীন বিভিন্ন খাতে ব্রাজিলে প্রায় ৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। বৈশ্বিক মহামারির শুরুর দিকে ব্রাজিল কোভিড–১৯ মোকাবেলায় চীনের তৈরি ভ্যাক্সিনের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করেছে। বর্তমানে বিভিন্ন খাতে ব্রাজিল এবং চীনের সম্পর্ক আরও সম্প্রসারিত হচ্ছে।

২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেভ্লাদিমির পুতিন এবং জাইর বলসোনারো; চিত্রসূত্র: Konstantin Zavrazhin/TASS/Getty Images

 

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ব্রাজিলের কৃষিজাত পণ্যের অন্যতম গন্তব্যস্থল। এসব পণ্যের মধ্যে সয়াবিন, বিভিন্ন ধরনের ফল, এবং কফি উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে, লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে ব্রাজিল রাশিয়ার অন্যতম প্রধান বাণিজ্য অংশীদার এবং ২০২০ সালে রাশিয়া দেশটিতে প্রায় ২.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। রাশিয়া দেশটির তেল ও গ্যাস খাত, অবকাঠামো, এবং ইলেকট্রনিক্স শিল্পে কয়েক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে শুরু হওয়া সামরিক অভিযানের প্রেক্ষিতে রাশিয়ার সাথে ব্রাজিলের সম্পর্কে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে অভিযান পরিচালনা করার অভিযোগে তুলে জাতিসংঘে ব্রাজিল একাধিকবার রাশিয়ার বিপক্ষে আনীত নিন্দা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। তবে ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি জাইর বলসোনারো এই ইস্যুতে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। এদিকে, দেশটির কয়েকজন শীর্ষ আইন প্রণেতা রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করেছেন।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে হাইতিতে নিযুক্ত ব্রাজিলের সামরিক বাহিনীর সদস্য; চিত্রসূত্র: Dieu Nalio Chery/AP

 

ব্রাজিলের জনসংখ্যা, ভূখণ্ড, এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের মোট জনসংখ্যা, ভূখণ্ড, এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় অর্ধেক। ফলে, দেশটি ল্যাটিন আমেরিকা অঞ্চলে একটি প্রভাবশালী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে বিশ্ব বাণিজ্যে ব্রাজিল একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। ব্রাজিল ইতোমধ্যে পঞ্চাশটি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করেছে। দেশটি এঙ্গোলা, মোজাম্বিক, পূর্ব তিমুর এবং সংঘাতে বিপর্যস্ত বেশ কয়েকটি দেশের জন্য বিভিন্ন প্রণোদনামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজ করছে।

এছাড়াও, হাইতি এবং গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ব্রাজিলের সামরিক বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন দেশটির বাণিজ্যের প্রধান অংশীদার, এবং একইসাথে, দেশটি রাশিয়ার সাথে রাজনৈতিক ও সামরিক খাতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিস্তারে চেষ্টা করছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি সত্ত্বেও ব্রাজিল ইরানের সাথে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে গুরুত্বারোপ করেছে, এবং দেশটি ইরানের অন্যতম বাণিজ্য অংশীদার।

দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের মোট ৯টি দেশে বিরাজমান বিশ্বের বৃহত্তম চিরহরিৎ বন আমাজনের ৬০ ভাগ ব্রাজিলের অন্তর্ভুক্ত। ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ হিসেবে পরিচিত এই বন বিপুল পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস শোষণ করে বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে কাজ করে। ফলে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় যে বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, ব্রাজিল সেই উদ্যোগের সামনের সারিতে রয়েছে। ব্রাজিলের পররাষ্ট্রনীতি অনুযায়ী, দেশটি কূটনৈতিক উপায়ে যেকোনো সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষপাতী। বর্তমানে লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের বাইরেও দেশটি রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়েছে। ব্রাজিল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে বেশ কয়েকবার নির্বাচিত হয়েছে। বর্তমানে দেশটি সংস্থাটির নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ অর্জনে আগ্রহী, এবং বর্তমান শক্তির অধিকতর ভারসাম্য রক্ষায় দেশটি নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য দাবি জানিয়ে আসছে। স্নায়ুযুদ্ধোত্তর বৈশ্বিক বাস্তবতা এবং অন্যান্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ব্রাজিল পরাশক্তি হিসেবে নিজেকে কতটা প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে, সেটা সময়ই নির্ধারণ করবে।

Related Articles

Exit mobile version