আপনার আত্ম-উন্নয়নের মূল সোপান হচ্ছে- আপনাকে অবশ্যই নিজের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং সেগুলো অর্জনের জন্য পরিশ্রম করতে হবে। মূলত ব্যক্তির বিকাশ কিংবা ব্যক্তিত্ব তৈরির পেছনে প্রথম শর্তই হচ্ছে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা। কারণ ব্যক্তিজীবনে এই পদক্ষেপগুলো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোই আপনার উচ্চাভিলাষ এবং আপনার সফলতার পথকে আপনার কাছে আরো দৃশ্যমান করে তুলবে এবং আপনার গুণাবলীর পরিধি বাড়াবে। নিজের যাত্রাপথ সম্পর্কে সচেতন হতে চাইলে আপনি এই ১০টি লক্ষ্যমাত্রাকে অনুসরণ করতে পারেন, যা আপনাকে সামনে আরো উদ্যমী করে তুলবে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়তা করবে।
নিজেকে আরও বেশি উপযুক্ত করে তুলুন
আপনার শুরুটা হোক নিজস্ব রুটিন তৈরি করে এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে। নিষ্ঠাই সাফল্যের চাবিকাঠি। নির্দিষ্ট সময় এগুলোর চর্চা করলে আপনি ফলাফল দেখে নিজেই চমৎকৃত হবেন; নিজেকে আবিষ্কার করবেন আরও শক্তিশালী, আরও যোগ্য হিসাবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটা লক্ষ্যণীয় যে, সবকিছু আসলে পূর্ণাঙ্গভাবে আমাদের পরিকল্পনা মোতাবেক হয় না। জীবনের বৈশিষ্টই হচ্ছে যে, সব সময় আপনার জন্য নতুন নতুন অজানা অধ্যায় উন্মোচিত হবে। আর এ কারণেই জীবন এতটা আকর্ষণীয়।
অতীতকে আঁকড়ে ধরে রাখবেন না
অতীতের ব্যর্থতা নিয়ে হা-হুতাশ করে কেউই জীবনে সফল হয়নি। আপনি যতই আপনার অতীতের সমস্যার বা ব্যর্থতার সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলবেন, ততই আপনার মাঝে একটা আলাদা শূন্যতা তৈরি হবে। এ শূন্যতার জায়গা যত বড় হবে, ততই আপনি আপনার উপর খেই হারিয়ে ফেলবেন। দুঃসহ অতীত আমাদের কোনো সময় বাঁচার শক্তি দেয়নি আর আপনিও এই বলয়ের বাইরের কেউ নন। আপনি শিখে নিন কিভাবে ঝড়-ঝঞ্ঝাকে সমূলে বিনষ্ট করে বাস্তবে বসবাস করা আর ভবিষ্যতে দৃষ্টি রাখা যায় সেই কৌশল। ভবিষ্যতের সুখী-সমৃদ্ধ জীবনের জন্যই অতীতের বলয় থেকে বেরিয়ে আসুন।
আত্মবিশ্বাসী হোন
আত্মবিশ্বাস আপনার সাফল্যের পথে সিঁড়ি স্বরূপ। এটি মূলত আপনার নিজের যোগ্যতা, নিজের সামর্থ্য যা কিনা সংক্রমিত হয় আপনার পারিপার্শ্বিক পরিবেশে। আত্মবিশ্বাসী হলে আপনি সহজেই অন্যকে প্রভাবিত করতে পারবেন এবং আপনার অধিকার আদায় করে নিতে পারবেন।
বস্তুত আমাদের পক্ষে দুটি জিনিস সর্বদা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। প্রথমত, দৃষ্টিভঙ্গি এবং দ্বিতীয়ত, উদ্যম। আপনার মূল আত্মবিশ্বাসের পথে এই দুইয়ের নিয়ন্ত্রণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তবে এক্ষেত্রে শুধুমাত্র নিজের ক্ষমতার সীমা না দেখে অন্যের কাজের সীমাও দেখতে হবে। এটি নিজের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বৃদ্ধির সাথে সাথে উদ্যমকেও বাড়াতে সক্ষম। আমরা সব কাজ করতে সমান আগ্রহী নই, কিন্তু সব কাজই আমাদের সাফল্য অর্জনের পথে গুরুত্বপূর্ণ। আর যখন প্রতিটি কাজে সাফল্য ধরা দেবে, তখন আপনার আত্নবিশ্বাসও বেড়ে যাবে বহুগুণ।
আরও বেশি বই পড়ুন
বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না, বই পড়েও ঠিক তেমনি। আবার বই কিনে ফেলে রাখাও চলবে না। বই পড়লে আপনার জ্ঞানের পরিধি বাড়বে। এটির অন্য কোনো বিকল্প নেই। বই আপনার চেতনার প্রসার ঘটায় এবং সম্পূর্ণ নতুন দৃষ্টিভঙ্গি জাগ্রত করে। এভাবে এটি আপনার ব্যক্তি-চরিত্রের বিকাশ ঘটানোর পাশাপাশি আপনাকে প্রতিটি বিষয়বস্তুকে নিয়ে আলাদাভাবে বোঝার সুযোগ তৈরি করে দেয়। পৃথিবীতে যত বড় বড় উদ্যাক্তা, সফল ব্যক্তিত্ব রয়েছেন তাদের রোজকার রুটিনে বই ছিলো একটি উপাদেয় খাবারের মতন, যা ঘন্টার পর ঘন্টা গোগ্রাসে গিললেও কোথাও যেন একটা ফাঁকা ফাঁকা অনুভব হয়। অতএব বই, বই এবং বই। আর একটি বই-ই পারবে আপনার আত্মবিশ্বাস ও আত্ম-উন্নয়নের পথে সবসময়ের সঙ্গী হতে।
শরীরী ভাষা উন্নত করুন
শরীরী ভাষা অথবা অমৌখিক যোগাযোগের মাধ্যমেই মানুষের সবচেয়ে বেশি পরিচিতি ঘটে। সায়েন্টিফিক্যালি এই ব্যাপারটি মানসিক দিক দিয়ে অনেকাংশে প্রভাব ফেলে। বডি ল্যাংগুয়েজের মাধ্যমেই মানুষ আপনাকে প্রাথমিকভাবে বিচার করে। আপনি নিজেকে নিয়ে কতটুকু উদ্যমী, কতটুকু নির্ভর সেটা অনেকাংশেই নির্ভর করে আপনার বডি ল্যাংগুয়েজের উপর। শারীরিক ঋজুতা বজায় রাখুন এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী শান্ত থাকুন। আপনার চালচলন, হাবভাব, কথাবার্তায় আনুন উৎকর্ষতা; দেখবেন আপনাকে আপনার ব্র্যান্ডিং করতে হবে না, মানুষই আপনার ব্র্যান্ডিং করে দিবে।
আপনার অগ্রাধিকার স্থির করুন
আপনার লক্ষ্য অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিন। ঝামেলা এড়ানোর জন্য এগুলোতে ক্রমানুসারে বিবেচনা করতে পারেন। সেক্ষেত্রে গুরুত্ব অনুসারে কাজের তালিকা নির্ধারণ করে ফেলুন। যে কাজটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেটি আগে করুন। দিনের কাজের শুরুতেই যদি কাজের গুরুত্বানুযায়ী বিন্যাস করে ফেলতে পারেন, তাহলে সারাদিনের কাজের চাপের অনেকটাই কমে যাবে। এতে আপনার আত্মোন্নয়নের পথ অনেকটাই সুগম হবে।
আরো প্রাণবন্ত থাকুন
জীবনের কঠিন যাত্রাপথ নিরাপদে পাড়ি দিতে নিজের প্রাণবন্ততা খুবই প্রয়োজনীয়। সাফল্য অর্জনের জন্য যন্ত্রের মতো নিরবচ্ছিন্ন কাজ না করে একটু বিরতি, যেমন বাইরে নির্মল পরিবেশে একটু ঘোরাঘুরি করা বা বন্ধুদের সাথে একটু আড্ডা খুবই প্রয়োজন। এটি বিনোদনের পাশাপাশি আমাদের মানসিক চাপ কমিয়ে সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করে। ব্যর্থতার হতাশা যখন আপনাকে ঘিরে ধরবে, স্বতঃস্ফূর্ততাই হবে আপনার বড় শক্তি।
শিখতে হবে চাপ সামলানোর কৌশল
শারীরিক বা মানসিক চাপ বা ধকল আপনাকে ক্লান্ত করে তুলতে পারে। এটি আপনার ব্যক্তিজীবন বা কর্মজীবন- দুটির প্রতিই মনোযোগ দেওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করে। এটি কাটিয়ে ওঠার ভাল পন্থা হচ্ছে যোগব্যায়াম করা, দৌঁড়ানো অথবা মাঝে মাঝে গান শোনা। এতে আপনি শরীর আর মনের হৃত শক্তি ফিরে পাবেন। অথবা যখন কাজের চাপ খুব বেশি, নিজের আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে কষ্ট হচ্ছে, কাজে মন বসছেনা, কিন্তু জোর করে করতে হচ্ছে এবং সেটিও এগোচ্ছে না- তখন এমন পরিস্থিতিতে কাজে একটু বিরতি দিয়ে একটু কথা বলুন প্রিয়জনের সঙ্গে। সম্ভব হলে তার সঙ্গে শেয়ার করুন। দেখবেন তার অনুপ্রেরণা আপনার আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে টনিকের মতো কাজ করছে।
সময়ের মূল্য দিন
প্রতিটি সময় আপনার জন্য অনেক মূল্যবান। সময় কারো জন্যই অপেক্ষা করে না। ঘড়ির কাঁটার দিকে মনোযোগ না দেওয়ায় জীবনে আমাদের অনেক করণীয় কাজই করা হয়ে ওঠে না। আমাদের জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হচ্ছে সময়। কারণ জীবন বয়সের ফ্রেমে বাঁধা। আর জীবনের গতি সময়ের গতির মতোই নির্মম। তাই সময়ের মূল্য উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন। তবে নির্মম সত্য এই যে, সময়ের ওপর ভর করেই জীবনের উন্নতি ত্বরান্বিত হয় এবং সময়কে যথাযথ ব্যবহার করতে ব্যর্থ হলে জীবনের অবনতি হয়। নিজের লক্ষ্যপূরণে আপনাকে সময় নিয়ে হতে হবে আরো তৎপর। সময়ের ব্যপারে হতে হবে আরো সচেতন। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে “Time is all the best of money” অর্থাৎ সময়ই হচ্ছে সব সম্পদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ।
আচরণ হোক সৌহার্দ্যপূর্ণ
পরিবার, বন্ধু অথবা সহকর্মী-সবার সাথে সামাজিকতা বজায় রাখাই শ্রেয়। এতে আপনি তাদের জীবনদর্শন আর দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে পারবেন। এটি আপনাকে নিজের ব্যক্তিত্ব গঠনে সহায়তা করবে। তাছাড়া সমাজে কেউ একা চলতে পারে না। আপনি আন্তরিক হলে সবার আন্তরিকতা পাবেন। তা নাহলে জীবন সংগ্রামে হয়তো আপনি কোনো শুভাকাঙ্ক্ষী পাবেন না , যা আপনার ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।