আপনার নিয়মিত কাজ অর্থাৎ চাকুরী কেমন চলছে? ভাল তো অবশ্যই, তা নাহলে আপনি কেনই বা করছেন। তবে যে বিষয়টি আপনার উপার্জন অথবা সুযোগ সুবিধার চাইতে আরও গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হচ্ছে আপনার কর্তৃত্ব অথবা স্বাধীনতা। আপনার নিয়মিত ৯টা – ৫টা কাজের চাইতে কিন্তু স্বাধীন উদ্যোক্তা হবার পথে ঝুঁকি অনেকগুণ বেশি। এতে একদিকে হারাতে হবে আপনার কাঙ্ক্ষিত আরাম আয়েশ, অন্যদিকে দিতে হবে হাড়ভাঙা খাটুনি। একমাত্র আপনিই যদি নিজের ব্যবসা বা কাজের ক্ষেত্রকে শক্ত ভিতের উপরে দাঁড় করাতে পারেন, তাহলেই আপনার ত্যাগ আর শ্রম সার্থক হবে।
অনেক ক্ষেত্রেই ‘হাড়ভাঙ্গা খাটুনি’ শব্দটাকে আমরা খুব বড় চোখে দেখি। কিন্তু এই শব্দটি আপনার কাজে আর বাধা হয়ে দাঁড়াবে না যখন দেখবেন আপনার কাজের ক্ষেত্রটি বড় হচ্ছে, সেখান থেকে কিছু অর্থ আপনার নিজস্ব কোষাগারে জমা হচ্ছে। তবে যা-ই বলুন, টাকাকেই আপনার প্রথম অনুপ্রেরণা হিসেবে ধরতে হবে, সে আপনি যত ছোট কিংবা বড় ব্যবসাই করেন না কেন।
এখানে অধিক চিন্তা করার কোনো অবকাশ নেই। আপনার নিয়মিত কাজ আপনি চালিয়ে যাবেন আগের মতোই। সাধারণ চাকুরে যারা, তারা ৫টার পরে ঝুঁকে পড়ে বিনোদনের খোঁজে; আর যারা পেশাদার, তারা ছোটে নিজের ব্যবসা সামলাতে।
তো নিজেই ঠিক করে ফেলুন কি ধরনের ব্যবসার উদ্যোগ আপনি নিতে চান। আর এখানে আপনার জন্যই কিছু চমৎকার পরামর্শ দেওয়া হলো।
খাবার চিন্তা সবার আগে
ব্যবসায় ক্ষেত্রে ভাল করার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষের চাহিদা পূরণ করা। আর সেদিক থেকে খাবার সবার জন্যই অত্যাবশ্যকীয়। আপনার রান্নার হাত যদি ভাল হয় আর হাতের নাগালে যদি রান্নাঘর পেয়েই যান, তাহলে আপনার অর্ধেক চিন্তা এমনিতেই শেষ। মিষ্টান্ন, ভাজা পোড়া, চাটনি, কেক, পেস্ট্রি- এর যে কোনোটা বেছে নিন। রাঁধুনি হিসেবে আপনার সুস্বাদু রেসিপিকে কাজে লাগান। চাইলে স্ট্রিট ফুড অথবা হোম ডেলিভারিতে সাপ্লাই দিতে পারেন। আপনি রান্না করে দিলেন, তারা একটি নির্দিষ্ট দামে আপনার কাছ থেকে কিনে নিয়ে গেলো।
“খাবার যদি হয় আপনার প্যাশন, তবে এটিকেই বানিয়ে নিন আপনার ব্যবসা!”
যা আপনি জানেন, তা বিক্রিও করতে পারেন
আপনার দক্ষতা এবং জ্ঞান ই-বুকের মাধ্যমে পৌঁছে দিতে পারেন মানুষের কাছে। মনে রাখবেন, পাঠক আপনি অবশ্যই পাবেন। ই-বুকের মাধ্যমে কাজ না হলে করে ফেলতে পারেন অনলাইন কোর্স। এক্ষেত্রে আপনার বুঝে নিতে হবে নিজের দর্শকদের প্রকৃতি আর তাদেরকে প্রভাবিত করার পদ্ধতি এবং তাদের প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে আপনার কতটুকু জ্ঞান রয়েছে।
আপনার কনটেন্ট শুধু ডিজিটাল করে ফেলতে যা দেরি, বাকিটা পানির মতোই সরল। বাড়তি খরচের ঝক্কিও আপনাকে পোহাতে হবে না, শুধু দরকার ইন্টারনেট কানেকশন। আর আপনার প্রযুক্তিগত দক্ষতা নিয়ে টেনশন করছেন? আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য গুগুল সার্চ ইঞ্জিন সব সময় কাজ করে যাচ্ছে।
আপনার প্রযুক্তিগত দক্ষতা কম থাকলেও সমস্যা নেই। কোর্স করে নিজেকে ঝানু করে ফেলতে পারেন Udemy.com, alison.com, udacity.com অথবা এই জাতীয় ওয়েবসাইট থেকে। যে বিষয়ে আপনার প্যাশন কাজ করে সেই বিষয়টির উপর কোর্স করে নিতে পারেন খুব সহজেই। তবে আমি নিশ্চিত আয়ের গ্যারান্টি দিচ্ছি না যতক্ষণ না আপনি ঐ বিষয়টি ভালোভাবে আয়ত্ত করতে পারবেন। আর লাভ হলো নিয়মিত সন্ধ্যার পর ঘরে বসেই আপনি বাড়তি উপার্জনের একটি রাস্তা তৈরি করতে পারবেন।
কাজে লাগান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে
আপনি হয়তো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক , টুইটার , ভাইবার ইত্যাদি) বেশি সময় দেন। এর মাধ্যমেই নামতে পারেন ব্যবসায়। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সামাজিক মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে পরিচিতি বাড়াতে চায়। আপনার মতো মানুষই তাদের দরকার। Hootsuite জাতীয় প্ল্যাটফর্ম আপনি পেতে পারেন সহজেই। আপনার একাধিক একাউন্ট সংরক্ষণ এবং পরিচালনার জন্য নিজস্ব শিডিউল করতে পারেন ।
২০১৩ সালে Dreamforce conference এ ফেসবুক জানায় যে, তাদের সাইটে অন্তত 25 million active small business page রয়েছে । আপনার দক্ষতা কাজে লাগানোর এই সুযোগ ছাড়বেন কেন ?
ব্লগিং; অফুরন্ত সম্ভাবনা
ব্লগিংকে বলা হয় বর্তমান সময়ের সবচেয়ে স্মার্ট একটি পেশা। যেটি আপনি বিশ্বের যেকোনো জায়গা থেকেই করতে পারবেন। ব্লগিংকে মূলত বাড়তি উপার্জনের জন্য একটি অসাধারণ উপায়ও বলা চলে। ব্লগিংয়ে আছে সময় বেছে নেয়ার একটা অনন্য সুযোগ, যেখানে আপনি আপনার প্রাত্যহিক কাজ সেরেও সেখানে সময় দিতে পারবেন। ব্লগিং নিয়ে অবশ্য আমাদের দেশের জনগণের মাঝে একটা ভুল ধারণা প্রচলিত আছে।
ব্লগিং মূলত দুই মাধ্যমে হয়ে থাকে- এক হচ্ছে নিজের ভাষায়, আরেকটি হচ্ছে আন্তর্জাতিক ভাষায় মানে ইংরেজীতে।
বলা বাহুল্য, প্রতিদিন হাজার হাজার ব্লগ লেখা হচ্ছে- ভ্রমণ, রান্নাবান্না, শিল্প, সাহিত্য, জীবনযাপন ইত্যাদিসহ আরো নানাবিধ বিষয় নিয়ে। গ্রাহক, বিপণনের শাখা সৃষ্টি, বিজ্ঞাপন খাত ইত্যাদি মিলিয়ে ব্লগারদের উপার্জন কিন্তু নিয়মিত। আপনার লেখার দক্ষতা বাড়ার সাথে সাথে আপনি নিজে স্বাধীন ব্লগিং ছাড়াও পেশাদার লেখক হিসাবে কাজ করতে পারেন।
শিখে ফেলুন গ্রাফিক ডিজাইন
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থাকলে এই পথে আপনি যথেষ্ট সুবিধা পাবেন। তবে আপনার সুযোগ থাকছে নিজেই গ্রাফিক ডিজাইনের প্রাথমিক পাঠ বুঝে নেবার। সামনে গ্রাফিক্স ডিজাইনের জন্য রয়েছে অপার ভবিষ্যত এবং বিলিয়ন ডলার মার্কেটপ্লেস। আপনি চাইলে অনলাইনে কিংবা ইউটিউবে বসেই গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে পারেন অথবা শিখতে পারেন কোনো ইন্সটিটিউটে গিয়েও। গ্রাফিক ডিজাইন শিখতে হলে আপনাকে Adobe software, Canva, Visme ইত্যাদি ব্যবহারের দক্ষতার পাশাপাশি আপনার সৃজনশীলতা আর একাগ্রতার সম্মিলনের উপর আপনার পুরো সাফল্য নির্ভর করবে।
সংগীতের পাঠ দিন
ধরুন আপনার গানের গলা অনেক ভালো, কিন্তু ভাগ্যের দুষ্ট চক্রে আপনাকে ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত চাকরি বেছে নিতে হয়েছে। তবে চাইলে এই সময়চক্রের বাইরে গিয়েও আপনার গান গাওয়ার প্যাশনকে আবার জাগিয়ে তুলতে পারেন, আপনার প্যাশনকেই মোশন হিসেবে তৈরি করে নিন। বলা যায় আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে যাদের গান শিখার ব্যাপারটা একটা সময়ে হারিয়ে যায় কিংবা সম্ভবপর হয়ে উঠে না।
বলা যায়, একটি নির্দিষ্ট বাদ্যযন্ত্রের পরিবর্তে একাধিক বাদ্যযন্ত্র শিখানো হতে পারে নিখুঁত একটি ব্যবসায়িক উদ্যোগ। শুরু করতে পারেন দু-একজন শিক্ষার্থী দিয়ে, আস্তে আস্তে আপনার পরিচিতি বাড়বে। যেহেতু সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গান-বাজনা চর্চার উদ্যোগ কম, আপনার সুযোগ থাকছে নিজের ব্যবসা আরও বড় করার। এতে প্যাশনও থাকলো, আবার কাজেও কোনো ক্ষতি হলো না।
অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট; সম্ভাবনার নতুন দুয়ার
অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট একটি নতুন, বর্ধিষ্ণু ব্যবসাক্ষেত্র। ২০১৪ সালে iPhone app market এককভাবে freelancer.com এ ৪,০০০ এর উপরে চাকরির সুযোগ তৈরি করে। এছাড়াও অ্যাপ বিক্রি করার হাজারটা ওয়েবসাইট হয়েছে যেখানে আপনি খুব সহজেই অ্যাপ বিক্রি করতে পারবেন।
কোডিং শিখতে আপনার কিছু সময় লাগবে যদি আপনি টাকা উপার্জনের জন্য এতটা মরিয়া হয়ে না উঠেন, কিন্তু কিছু সময় পর আপনি ঘরে বসেই অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট করতে পারবেন। সঠিক সময়ে কোডিংও হতে পারে আপনার ব্যবসা দাঁড় করানোর রাস্তা।
পোষা প্রাণী দেখভাল করেই ব্যবসা সম্ভব
পোষা প্রাণী সংক্রান্ত একাধিক ব্যবসা চালু আছে । Pet Walking থেকে শুরু করে Pet Parlor খুবই জনপ্রিয় এ দেশের বাইরে । তবে দেশেও প্রাণী অনেকেই পুষে থাকেন। সন্ধ্যার দিকে অর্থের বিনিময়ে মানুষের পোষা প্রাণী দেখেশুনে রাখা একটি আকর্ষণীয় ব্যবসার পন্থা হতে পারে। উপার্জনের পাশাপাশি আপনার সময়টাও কিন্তু একঘেয়ে কাটবে না। আর আপনার খরচও বলতে গেলে শুন্যের কোঠায়।
Off-hour এ মিস্ত্রী হয়ে যান
আপনার নিয়মিত কাজের সময় সীমিত; মিস্ত্রী অথবা মেরামতকারীদেরও কিন্তু তা-ই। Off-hour এ মিস্ত্রীর কাজ করতে পারেন সুলভে। কিছুটা শারীরিক পরিশ্রম করে আপনি বেশ ভাল উপার্জন করতে পারবেন। তাছাড়া এ সময়ে কাজ করে যে দক্ষতা আপনি অর্জন করবেন, তা আপনার নিজের বাসাবাড়ি অথবা নিয়মিত কাজের জায়গায়ও সাহায্য করবে। কোনো মেরামতের কাজ নিজেই করে আপনি সময় আর অর্থ দুটোই বাঁচাতে পারবেন।
Off hour এ হয়ে যান চালক
শুনতে খানিকটা খটকা লাগবে, মনে মনে আমাকে গালিও দেয়াটাও অসম্ভব কিছু নয়, কিন্তু ব্যাপারটি সম্পূর্ণ বাস্তব। একটা মোটর সাইকেল কিংবা প্রাইভেট গাড়ি কিনে নিয়ে যেখানে বসে বসে ফেসবুক চালাচ্ছেন কিংবা অযথা সময় নষ্ট করছেন, সেখানে আপনি চাইলে কাউকে সার্ভিস দিতে পারেন। বাহিরের দেশগুলোতে যা অহরহই হচ্ছে। তবে কাজ করার জায়গাটায় আপনাকে অবশ্যই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে হবে।
সম্প্রতি বাংলাদেশেই কিছু সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়েছে যারা এসব পরিবহন সুবিধা দিচ্ছে, যা কিনা আপনার বাহনটিকেই নির্ভর করে। আপনি চাইলে খুব সহজেই আপনার তথ্য দিয়ে হয়ে যেতে পারেন ড্রাইভার।