Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

যে অনুপ্রেরণায় তারা পৌঁছেছেন সফলতার দ্বারপ্রান্তে

সাফল্যের একদম চূড়ায় তাদের বসবাস। অর্থবিত্তের অভাব তো নেই-ই, অভাব নেই যশেরও। পূর্ব থেকে পশ্চিমে গোটা দুনিয়ার সব প্রান্তের সব মানুষই এক নামে চেনে তাদের। প্রতিদিনই লাখো মানুষ নিজেদের জীবনে অনুপ্রেরণা হিসেবে, আইডল হিসেবে অনুসরণ করছেন এই মানুষদের। কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে সফল এই মানুষগুলোর অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করে কোন কোন বিষয়?
ক্ষমতা, অর্থ আর খ্যাতি সবই যখন হাতের মুঠোয়, তখন কিসের তাড়ায় তারা প্রতিদিন ঘুম থেকে জেগে ওঠেন, ঘাম ঝরান আর চেষ্টা চালিয়ে যান? হ্যাঁ, আর দশজন মানুষ হয়তো জীবনভর ক্ষমতা, টাকা-পয়সা এবং খ্যাতির মোহ কাটিয়ে উঠতে পারেন না। সেই লক্ষ্যেই তারা সাজান জীবনের ছক। সেই ছকে এক-দু’বার ব্যর্থ হয়ে তারা হাত গুটিয়ে বসেন, ফিরে যান চিরচেনা জীবনে। কিন্তু সবচেয়ে সফল মানুষগুলোকে জিজ্ঞেস করে পাওয়া যায় একেবারে ভিন্ন চিত্র। ক্ষমতা, অর্থ আর খ্যাতি যাদের হাতে এসেছে, তারা সেখানেই থেমে থাকেননি; জীবনের অর্থ এবং সার্থকতা খুঁজেছেন আরো গভীরে।

মাইকেল জর্ডান: ব্যর্থতাই যার অনুপ্রেরণা

মাইকেল জর্ডানকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাস্কেটবল খেলোয়াড় হিসেবে ধরা হয়। তাঁর কাছ থেকে জানা যায়, ব্যর্থতাকেই অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে ধরেই এত দূর আসতে পেরেছেন তিনি। জর্ডানের ভাষায়, “ব্যর্থতার মুখোমুখি হওয়ার পর, সেটা আমাকে আরো কঠোর পরিশ্রম করতে বাধ্য করে।

জর্ডান যখন হাই স্কুলের ছাত্র, তখন ছাত্রদের নিয়ে করা এক বাস্কেটবল টিমে তার জায়গা হয়নি। বিষয়টি যখন তার চোখে পড়ে, সেটাকে ভালোভাবে নেননি তিনি। বাড়ি ফিরে দরজা লাগিয়ে কাঁদতে থাকেন, হতাশায় অশ্রুসিক্ত হয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লেন, তার মনে নেই। জর্ডান চাইলে তখনই নিরাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিতে পারতেন। কিন্তু তার বদলে তিনি কোমর বেধে কাজে লেগে পড়লেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাস্কেটবল টিমে কাটাতে লাগলেন তিনি।

এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, যখন ক্লান্ত হয়ে পড়তাম, তখন মনে মনে দেখতাম ঐ টিমে আমার নামও উঠেছে। এটাই আমাকে আবার উঠে দাঁড়ানোর শক্তি দিতো। পরের বছর ঐ টিমে জর্ডানের জায়গা তো হলোই, প্রতিটা ম্যাচে অন্যদের চেয়ে গড়ে ২০ পয়েন্ট করে বেশি পেলেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ইয়ারে গিয়ে দেখা গেলো, তার গড় পয়েন্ট ‘ট্রিপল-ডাবল’ ছাড়িয়েছে। ছয়বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন এনবিএ ম্যাচে, বাস্কেটবলে সেরা খেলোয়াড়ের শিরোপা জিতেছেন ছয়বারেরও বেশি।

জর্ডানের মুখের কথাই শোনা যাক,

‘ব্যর্থতা আমি মেনে নিতে পারি, কারণ সবাই কিছু না কিছুতে ব্যর্থ হয়ই। কিন্তু চেষ্টা না করে বসে থাকাটা আমি মানতে পারি না।’

অপরাহ উইনফ্রে: বাঁচার জন্যেই কাঁধে দায়িত্ব তুলে নেই

সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম হয়নি তাঁর। বর্ণবাদী পঞ্চাশের দশকে জন্ম নেয়া একজন কৃষ্ণাঙ্গ তিনি, পরিবারের আর্থিক অবস্থাও ছিল খুব শোচনীয়। শৈশবেই নিপীড়নের শিকার হতে হয় তাঁকে। সব মিলিয়ে বলা যায়, পরিস্থিতি মোটেও তার অনুকূলে ছিলো না। আর দশজন মানুষ এই প্রতিকূলতাকে অজুহাত হিসেবে দেখিয়ে বসে থাকতে পারতেন, কিন্তু সে পথ মাড়াননি অপরাহ।

বিখ্যাত টিভি অনুষ্ঠান ল্যারি কিং শো-তে অতিথি হয়ে এসে একবার অপরাহ তাঁর সাফল্যের গোপন রহস্য হিসেবে বলেন, “এই গোপন কথাটা আসলে আমি গত ২১ বছর ধরে আমার নিজের টিভি শো-তে বলে আসার চেষ্টা করছি। গোপন বার্তাটা হলো,

তোমার জীবন নিয়ে তুমি কি করবে, সেটার পুরো দায়ভার তোমার। তোমার চারপাশের পরিস্থিতিকে তুমি যেভাবে নিচ্ছো, সেটাই ঠিক করবে, তুমি সামনে এগিয়ে যাবে, না পিছিয়ে পড়বে।”

এই জীবনে বড় কিছু করতে পারবো, এমন বিশ্বাস মাথায় রেখে জীবনের দায়ভার নিজের হাতে তুলে নেয়াটাই ছিলো অপরাহর সাফল্যের চাবিকাঠি। এত প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন পৃথিবীখ্যাত টিভি উপস্থাপিকা, একটি টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক যার আর্থিক মূল্য ৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। জনহিতৈষী কাজে এ পর্যন্ত মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করেছেন তিনি।

স্টিভ জবস: মৃত্যু থেকে অনুপ্রেরণা

অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রতিভাবান উদ্ভাবনশিল্পী স্টিভ জবস যে পৃথিবীতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছেন, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। এমন প্রভাবশালী একজন মানুষ হয়ে ওঠার পেছনে তাঁকে যে বিষয়টি তাড়া করেছে, তা হলো মৃত্যুর মতো নিষ্ঠুর সত্য।আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়া এক ভাষণে জবস বলেন, “আমি যে খুব দ্রুত মারা যাবো, এমন একটি বোধ আমাকে তাড়া করতো। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি, যার মাধ্যমে জীবনের বড় বড় অর্জনগুলো করায়ত্ব করতে পেরেছি। মৃত্যুভয়ের সামনে বাকি সবকিছু, যেমন কাছের মানুষদের প্রত্যাশা, অপমান এবং ব্যর্থতার ভয়- সবকিছুই তুচ্ছ হয়ে পড়ে।

তিনি আরো বলেন, “গত ৩৩ বছর ধরে, প্রতিটা সকালে আমি আয়নার দিকে তাকিয়েছি এবং নিজেকে প্রশ্ন করেছি, আজকের দিনটাই যদি আমার জীবনের শেষ দিন হয়, তাহলে আজ আমার যা যা করার কথা, সেটা কি আমি করবো? যদি উত্তরটা হতো ‘না’ বোধক, তাহলে আমি বুঝতে পারতাম, আজকের দিনের কাজের তালিকায় পরিবর্তন আনা দরকার।

ওয়াল্ট ডিজনি: কৌতুহল থেকেই সবকিছু

ওয়াল্ট ডিজনির জীবনের দিকে তাকালে দেখা যায়, প্রথমদিক ব্যর্থতায় ক্ষত-বিক্ষত হয়ে আছে। বয়স যখন বিশের কোঠায়, তখন কানসাস শহরে একটা কার্টুন সিরিজ আঁকতে শুরু করেন তিনি। এত খারাপভাবে ব্যর্থ হলেন যে, সহায়সম্বল হারিয়ে রীতিমতো দেউলিয়া হয়ে পড়লেন। কিন্তু পৃথিবীর বাসিন্দাদের প্রতি ভাগ্যদেবতা নেহাত প্রসন্ন ছিলেন। ওই ব্যর্থতার পর হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি ডিজনি। থাকলে আজকের ডিজনির মনোরম অ্যানিমেশন আমরা পেতাম না।

ওয়াল্ট ডিজনি বলেন,

“কোনো কিছু করার স্বপ্নটা যদি দেখতে পারেন, তাহলে ধরে রাখুন আপনি সেটা করতে পারবেন।”

আমরা কৌতুহলী প্রাণী। আমাদের ভেতরে যে কৌতুহল, সেটার কারণেই আমরা সামনে এগিয়ে যাই, একের পর এক নতুন দরজা খুলতে থাকি, যেসব দরজা আমাদের নিয়ে যায় নতুন নতুন পথে। যদি স্বপ্নের পেছনে ছোটার সাহসটা থাকে, তাহলে স্বপ্ন সত্যি হবেই। কৌতুহলের শক্তি থেকেই ডিজনি মিকি মাউস, স্নো হোয়াইট-এর মতো আরো বিখ্যাত কার্টুন চরিত্রগুলো সৃষ্টি করেন। ফ্লোরিডায় গড়ে তোলেন ওয়াল্ট ডিজনি ওয়ার্ল্ড নামের থিম পার্ক। ডিজনির ভাষায়, “আজ যেটা অসম্ভব, সেটা করতে পারাটাতেই আসল আনন্দ।”

টনি রবিনস: সাফল্যের জন্য চাই ক্ষুধা

আমেরিকার প্রথমসারির ব্যবসা কৌশলীদের মধ্যে একজন টনি রবিনস। অডিও-ভিডিও বার্তা এবং জীবন সম্পর্কে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিশ্বের নামা প্রান্তের অন্তত ৫ কোটি লোককে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন তিনি। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, একজন মহান মানুষ এবং একজন সাধারণ মানুষের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়। তার উত্তর ছিলো, “ক্ষুধাই দুজন মানুষের ভেতরে ফারাকটা গড়ে দেয়। …আপনি যদি পৃথিবীর সবচেয়ে সফল মানুষগুলোর দিকে তাকান, দেখবেন তাঁরা জীবনভরই কোনো কিছু অর্জনের জন্য ক্ষুধার্ত থাকেন।” মানুষকে সাহায্য করতে পারাটাই রবিনসের ক্ষুধা। গত ৩৮ বছর ধরে মানুষকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করে চলেছেন তিনি।

তথ্যসূত্র

১/ en.wikipedia.org/wiki/Tony_Robbins

২/ en.wikipedia.org/wiki/Oprah_Winfrey

৩/ en.wikipedia.org/wiki/Michael_Jordan

৪/ en.wikipedia.org/wiki/Steve_Jobs

৫/ en.wikipedia.org/wiki/Walt_Disney

Related Articles