পৃথিবীর বিকিরণ ও তাপ থেকেই উৎপন্ন হবে বিদ্যুৎ!

  • বাড়তি অবলোহিত বিকিরণ এবং তাপকে বিদ্যুতে রূপান্তরিত করে পৃথিবী থেকেই শক্তি উৎপাদন করার উপায় বের করেছেন গবেষকরা।
  • পদার্থবিজ্ঞানে কোয়ান্টাম টানেলিং হিসেবে পরিচিত পদ্ধতিতে এ রূপান্তর করা যাবে বলে গবেষকদের ধারণা।
  • এই পদ্ধতির মূলে থাকবে বিশেষভাবে তৈরি করা একটি অ্যান্টেনা, যা অপব্যয় হয়ে যাওয়া ও অবলোহিত তাপকে উচ্চ কম্পাঙ্কের তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ হিসেবে শনাক্ত করে সরাসরি চার্জে রূপান্তরিত করতে পারে।
  • ম্যাটেরিয়ালস টুডে এনার্জিতে প্রকাশিত প্রবন্ধে গবেষকরা এসব ধারণা তুলে ধরেছেন।

গবেষকরা বলেন, পৃথিবীতে অনেক শক্তির অপচয় হয়। পৃথিবীতে আসা অধিকাংশ সূর্যের আলোই ভূ-পৃষ্ঠ, সাগর ও বায়ুমণ্ডল শোষণ করে নেয়। এই তাপমাত্রা অবিরতভাবে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় মিলিয়ন গিগাওয়াটের মতো অবলোহিত রশ্মির বিকিরণ ঘটায়। যেহেতু অবলোহিত রশ্মি খুব ছোট তাই সেগুলোকে সংযুক্ত করতে খুবই ছোট অ্যান্টেনা প্রয়োজন। এ বিষয়ের আন্তর্জাতিক গবেষকদের মতে, কোয়ান্টাম টানেলিং এই শর্ত পূরণ করতে পারবে।

কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যায় কোয়ান্টাম টানেলিং একটি প্রতিষ্ঠিত ঘটনা, যেখানে কোনো কণা এর প্রয়োজনীয় শক্তি ছাড়াই কোনো প্রতিবন্ধক পার হতে পারে। ধাতু-অন্তরক-ধাতু টানেলিং ডায়োডের মাধ্যমে এটি ইলেক্ট্রনগুলোকে ছোট প্রতিবন্ধকের ভেতর দিয়ে পার হতে সক্ষম করে এবং এ পথে অবলোহিত তরঙ্গগুলোকে বিদ্যুৎ প্রবাহে পরিণত করে।

কোয়ান্টাম টানেলিং প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন;  Source: sciencealert.com

বিজ্ঞানীরা স্বর্ণ ও টাইটানিয়াম ধাতুর মাঝে ছোট পাতলা অন্তরক স্থাপন করে একটি ন্যানো অ্যান্টেনা তৈরি করেছেন। নতুন তৈরি এই ডায়োড কোনো ভোল্টেজ প্রয়োগ ছাড়াই সফলভাবে অবলোহিত বিকিরণ ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে। তাই এটি শুধু প্রয়োজন অনুযায়ী চালু হয়।

যেখানে গতানুগতিক সৌর প্যানেল শুধুমাত্র দৃশ্যমান আলোর বর্ণালির ক্ষুদ্র অংশ রূপান্তরিত করতে পারে, সেখানে সকল বাড়তি অবলোহিত বিকিরণ ধারণ করা শক্তি উৎপাদনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। গবেষকরা এটিকে ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

আরও একটি ব্যাপার হচ্ছে, এগুলো যেকোনো আবহাওয়াতেই কার্যকর থাকবে, যা সৌর প্যানেল পারে না। বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন দিক থেকে এ ব্যাপারটির সমাধান চালাতে চেষ্টা চালাচ্ছেন।

অনেক প্রতিশ্রুতির পরেও সামনে অনেক প্রযুক্তিগত বাধা রয়েছে যেগুলো অতিক্রম করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, অ্যান্টেনাটি সক্রিয়তার দিক থেকে খুব বেশি কার্যকরী নয়। গবেষকদের একজন বলেন, “এটি শুধুমাত্র শুরু, একটি ধারণার প্রমাণ। আমরা সামগ্রিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে এ ধরনের লক্ষ লক্ষ যন্ত্র একসাথে সংযুক্ত করতে পারি।”

ফিচার ইমেজ: sciencealert.com

Related Articles

Exit mobile version