সম্প্রতি জার্মানির শহরগুলোকে পুরনো এবং অতিরিক্ত পরিবেশ দূষণকারী ডিজেলচালিত গাড়িগুলোকে নিষিদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে জার্মানির এক আদালত। বিশুদ্ধ বাতাস পাওয়ার পথে এই নির্দেশ বেশ কার্যকরী এক সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন সবাই। এই সিদ্ধান্তের কারণে জার্মানির কয়েক লক্ষ গাড়িচালক তাদের গাড়িকে নবায়ন করবে কিংবা অন্য কোনো গাড়ি ব্যবহার করবে বলে আশা করা হচ্ছে। স্টাটগার্ট এবং ডেসেলগার্ফের আদালত এর আগে ডিজেলচালিত গাড়ি সম্পর্কে এমন কিছু করার কথা ভেবেছিল। এই নির্দেশের বিরুদ্ধে বাডেন-উসেমবার্গ এবং নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়া শহর দুটি আপিল করলেও সেসব ধোপে টেকেনি।
নাগরিকদের স্বার্থে নির্দেশ জারি রেখেছে আদালত। আদালতের নির্দেশে বলা হয় যে, এই শহর দুটি ইচ্ছে করলে নিজেদের পরিকল্পনার মধ্যে ডিজেলের এই নিষেধাজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। তবে তাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে, অতিরিক্ত ডিজেলের এই ব্যবহার যাতে বিষাক্ত বাতাস নির্গমনের বৈধ পর্যায়কে পেরিয়ে না যায়। পরিবেশ প্রচারণার সাথে সংশ্লিষ্টরা কিছুদিন আগে জার্মানির বেশ কিছু শহরের বিরুদ্ধে বায়ু দূষণের মামলা করলে টনক নড়ে সবার। ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করেছে দেশটি।
জার্মানির পরিবেশ মন্ত্রী বারবারা হেন্ড্রিক্স এই ব্যাপারে বলেন, “আদালত গাড়ি চালানোর উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি, বরং আইনকে আরো পরিষ্কার করে তুলেছে।” জার্মান চ্যান্সেলরও এই নিষেধাজ্ঞাকে কেবল ‘নির্দিষ্ট কিছু শহরের’ জন্য বলে মন্তব্য করেছেন।“এটা পুরো দেশ এবং সমস্ত গাড়ির মালিকদের জন্য নয়”, বলেন তিনি। গ্রিনপিসের বিশুদ্ধ বায়ুর প্রচারক নিকলাস শিনারীর মতে, আদালতের এই নির্দেশ একটি বড় জয়, “ইউরোপের সমস্ত শহরে এই সিদ্ধান্ত এটাই প্রকাশ করছে যে, ডিজেলচালিত গাড়িদের সময় শেষ হয়ে এসেছে।” ডিজেলের পরিবর্তে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি, পরিবেশবান্ধব গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে।
তবে স্টুটগার্টের মতো স্থানগুলোতে এই নির্দেশ পহেলা সেপ্টেম্বরের আগে বলবত হবে না। ঘোষণাটি দেওয়ার পর জার্মানির গাড়ি তৈরি প্রতিষ্ঠানগুলোর লগ্নি কমে গিয়েছে। জার্মান পরিবেশবাদী দল ডিইউএইচের সাথে যৌথভাবে এই মামলায় কাজ করেছে ক্লায়েন্টআর্থ। ক্লায়েন্টআর্থের প্রধান নির্বাহী জানান, “এটি মানুষের আরেকটি বড় জয় এবং পরিষ্কারভাবে আদালতের একটি পরিষ্কার পদক্ষেপ এটি, যেটা নিয়ে সরকার এখনো ভাবছে“।
বছর তিনেক আগে ভক্সওয়াগনের মধ্যে যন্ত্রপাতি লাগিয়ে সেখান থেকে কোনো দূষিত বায়ু বের হচ্ছে না তা দেখানোর চেষ্টা করা হলে ডিজেল সবার কাছে নেতিবাচকভাবে প্রকাশ পায়। ফুসফুসে সমস্যা সৃষ্টিকারী নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইড পেট্রোলের চাইতে বেশি ডিজেলে থাকে বলে জানা যায়। যুক্তরাষ্ট্রকেও জার্মানির এই পদক্ষেপ থেকে শিক্ষা নিতে বলছে পরিবেশবাদীরা। ইউরোপিয়ান জোটের অনেক নিয়মই ভেঙ্গে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। অবশ্য, ২০৪০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডিজেল ও পেট্রোলচালিত গাড়ির বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হবে। ২০১৯ সালের এপ্রিলের মধ্যে লন্ডনে আলট্রা-লো ইমিশন জোন তৈরি করা হবে। অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হবে দূষিতগাড়ির মালিকদের। তবে, ইউএলইজেডের পরিমাণ আরো বাড়ানোর দাবী করছেন পরিবেশ সচেতনরা।
ফিচার ইমেজ: Getty images