উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সর্বসম্মত নিষেধাজ্ঞা

উত্তর কোরিয়ার উপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ। আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানোয় গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সর্বসম্মতভাবে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তুত করা নিষেধাজ্ঞার খসড়া প্রস্তাবটিতে উত্তর কোরিয়ার দুই প্রধান ব্যবসায়িক অংশীদার রাশিয়া এবং চীন সহ নিরাপত্তা পরিষদের ১৫টি রাষ্ট্রের সকলেই পক্ষে ভোট প্রদান করে।

নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন; Source: Reuters

জাতিসংঘের মতামত উপেক্ষা করে বারবার ক্ষেপণাস্ত্র এবং পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর কারণে উত্তর কোরিয়ার উপর আগে থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের অবরোধ ছিল। এবার সেই অবরোধ আরো কঠোর করা হলো। চীন এবং রাশিয়া ইতোপূর্বের অধিবেশনগুলোতে অবরোধের পরিবর্তে কূটনৈতিক সমাধানের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করলেও এবার তারাও এই অবরোধের ব্যাপারে একমত ছিল

যা আছে এই নিষেধাজ্ঞায়

  • এই নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী উত্তর কোরিয়ার পরিশোধিত জ্বালানী আমদানি ৯০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করা হবে। পেট্রোল আমদানি বছরে সর্বোচ্চ ৫ লাখ ব্যারেল এবং অপরিশোধিত জ্বালানি আমদানি বছরে সর্বোচ্চ ৪০ লাখ ব্যারেল পর্যন্ত সীমিত রাখা হবে।
  • বিদেশে কর্মরত সকল উত্তর কোরীয় নাগরিককে আগামী ২ বছরের মধ্যে দেশে ফিরে যেতে হবে।
  • উত্তর কোরিয়ার বিভিন্ন পণ্য, যেমন মেশিন এবং ইলেক্ট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি বিদেশে রপ্তানির উপরেও এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।

যে কারণে এই নিষেধাজ্ঞা

উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচী; Source: Al Jazeera

  • উত্তর কোরিয়া বিভিন্ন সময় দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ধ্বংস করার হুমকি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সহ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলো উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তিকে বিশ্ব শান্তির প্রতি হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে।
  • গত ২৯ নভেম্বর উত্তর কোরিয়া নতুন একটি আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায় এবং দাবি করে, এটি যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম। এর পরপরই যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞার উদ্যোগ গ্রহণ করে।
  • এই নিষেধাজ্ঞার মূল উদ্দেশ্য উত্তর কোরিয়ার উপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা, যেন তারা তাদের অস্ত্র কর্মসূচী বাতিল করতে, অথবা অন্ততপক্ষে পারমাণবিক এবং আন্তঃমহাদেশী ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা থেকে সরে এসে আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য হয়।

অতীতের নিষেধাজ্ঞা

  • ২০০৮ সাল থেকেই যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার উপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আসছিল। তারা বিভিন্ন সময় দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচীর সাথে জড়িত একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি জব্দ করেছে এবং উত্তর কোরিয়ায় বিভিন্ন পণ্য ও সেবা রপ্তানির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
  • জাতিসংঘও এর আগে একাধিকবার উত্তর কোরিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। গতকালের নিষেধাজ্ঞাটি ছিল উত্তর কোরিয়া উপর নিরাপত্তা পরিষদের দশম নিষেধাজ্ঞা এবং এই বছর আরোপ করা তৃতীয় নিষেধাজ্ঞা।
  • এর আগে প্রায় প্রতিটি নিষেধাজ্ঞার পরপরই উত্তর কোরিয়া তার অস্ত্র কর্মসূচী থেকে সরে না এসে বরং নতুন নতুন ক্ষেপণাস্ত্র এবং পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে।

উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক এবং ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা; Source: AFP

প্রতিক্রিয়া

জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি নিকি হ্যালি বলেছেন, এই অবরোধ পিয়ংইয়ংকে দ্ব্যর্থহীন বার্তা প্রেরণ করবে যে, ভবিষ্যতে আরো অবাধ্যতার ফলাফল হবে আরো শাস্তিমূলক এবং আরো বিচ্ছিন্নকরণ।

চীনের প্রতিনিধি উ হাইতো বলেছেন, এই ভোটের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র কর্মসূচীর ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সর্বসম্মত অবস্থানের প্রতিফলন ঘটেছে।

মার্কিন প্রতিনিধি নিকি হ্যালি; Source: KENA BETANCUR @ AFP

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। এক টুইট বার্তায় তিনি অবরোধের সংবাদ উল্লেখ বলেন, বিশ্ব শান্তি চায়, যুদ্ধ চায় না।

উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে এর আগে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ উত্তর কোরিয়ার প্রতি শত্রুতামূলক এবং তারা চায় সমগ্র কোরিয় উপদ্বীপকে তাদের বিদ্বেষের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে।

ফিচার ইমেজ- KENA BETANCUR/AFP

Related Articles

Exit mobile version