মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সংগঠন ওআইসি পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত ওআইসির বিশেষ সম্মেলন থেকে এ স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ওআইসির পক্ষ থেকে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতিও জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
এক সপ্তাহ আগে, গত মঙ্গলবারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অখণ্ড জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন এবং মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর করার উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য তার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঐ ঘোষণার পর বিশ্বব্যাপী তীব্র নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। তারই ধারাবাহিকতায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার জন্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িব এরদোয়ান ওআইসির সম্মেলন আহ্বান করেছিলেন। সেই সম্মেলন থেকেই এই যুগান্তকারী ঘোষণাটি এলো।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, সম্মেলন সম্পর্কিত উল্লেখযোগ্য কিছু তথ্য:
- ওআইসি তথা ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (Organisation of Islamic Cooperation, OIC) ইসলামিক রাষ্ট্রগুলোর সমন্বয়ে গঠিত একটি সংস্থা, যা মুসলমানদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। ওআইসি জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধিত্বমূলক সংস্থা। জাতিসংঘ এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে এর স্থায়ী প্রতিনিধি দল আছে। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ৫৭।
- ১৯৬৯ সালে ওআইসির সৃষ্টিই হয়েছিল জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে আগুন দেওয়ার ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে। ইতোপূর্বে তারা কখনো ফিলিস্তিনের ব্যাপারে খুব বেশি জোরালো ভূমিকা রাখতে পারেনি। কিন্তু মঙ্গলবারের পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়াটা প্রশংসিত হয়েছে, বিশেষ করে যেখানে আরব লীগের বৈঠক কোনো রকম সিদ্ধান্ত ছাড়াই শুধু নিন্দা জানানোর মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছিল।
- মঙ্গলবারের সম্মেলনে ওআইসি যুক্তরাষ্ট্রে পদক্ষেপকে ‘বিপজ্জনক’ বলে আখ্যায়িত করে এবং একে ‘অসার’ এবং ‘অকার্যকর’ বলে প্রত্যাখ্যান করে দেয়। ওআইসির ঘোষণাপত্রে ইসরাইলকে দখলদার শক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
- ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের কঠোর নিন্দা জানিয়ে বলেন, তারা এই অঞ্চলের শান্তি প্রক্রিয়ার আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের আর কোনো ভূমিকা মেনে নেবেন না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রতি তাদের পক্ষপাতিত্বের প্রমাণ দিয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপকে দ্বিতীয় বেলফোর ঘোষণা হিসেবে উল্লেখ করেন। আব্বাস ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত বাতিল করার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান।
- তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িব এরদোয়ান ট্রাম্পের সিদ্ধান্তটিকে আইনগতভাবে ভিত্তিহীন উল্লেখ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে আর মধ্যস্থতা করতে পারবে না। তাদের পরিবর্তে অন্য কোনো রাষ্ট্রকে এই দায়িত্ব পালন করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। তিনি আরো বলেন, তারা জেরুজালেম শহরের পবিত্রতা এবং ঐতিহাসিক মর্যাদা রক্ষা করতে বদ্ধ পরিকর।
- যদিও ইসরায়েলের সৃষ্টিলগ্নে জাতিসংঘ জেরুজালেমকে ইসরায়েলের অধীনে না দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তত্ত্বাবধানে রাখার প্রস্তাব করেছিল এবং ইসরায়েল পরবর্তীতে জোর পূর্বক জেরুজালেম দখল করে নিয়েছিল, কিন্তু বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রই ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত ইসরায়েলের দখলে থাকা পশ্চিম জেরুজালেমকে তাদের এলাকা হিসেবে মেনে নিয়েছে।
- ওআইসি ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটের সমাধানের ক্ষেত্রে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানে বিশ্বাস করে। তাদের এই ঘোষণাতেও অখণ্ড জেরুজালেমের পরিবর্তে শুধু পূর্ব জেরুজালেমকেই ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যা ইউরোপের অধিকাংশ রাষ্ট্রের নীতির সাথে মিলে যায়। ফলে আশা করা যায়, ওআইসির এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমর্থন পাবে।
ফিচার ইমেজ: AP Photo/Lefteris Pitarakis