নিত্যদিনের পৃথিবীকে সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে দেখতে চাইলে একজন লেখকের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার বিকল্প নেই। খুনখারাবি আর রাহাজানির সংবাদ দেখতে দেখতে হাঁপিয়ে ওঠা মানুষের মনে প্রশান্তি এনে দিতে পারে ফিকশন-নন ফিকশন বইগুলো। প্রতিদিন চোখের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া পথশিশু থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সম্পর্কে চমকপ্রদ সব তথ্য দেয়া বইগুলো কখনো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় নির্মম বাস্তবতাকে, কখনো বা টেনে নিয়ে যায় বাস্তবতা থেকে অনেকটা দূরে স্বপ্নের এক দুনিয়ায়। নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতে ২০১৭ সালের সেরা ১০টি বইয়ের কথা থাকছে আজকের আয়োজনে।
ফিকশন
১. অটাম, আলী স্মিথ
শরৎ, হালকা কুয়াশা আর মিষ্টিমধুর ফলের ঋতু। ১৮১৯ সালে অন্তত তাই মনে হয়েছিল কেটসের। তবে কেমন ছিল ২০১৬ সালের শরৎকালটা? শতবর্ষী বৃদ্ধ ড্যানিয়েল, ১৯৮৪ সালে জন্ম নেয়া ভবিষ্যৎদ্রষ্টা এলিজাবেথ। যুক্তরাজ্য ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে, এক প্রজন্মের গ্রীষ্মের গল্পে তার আর কোনো অস্তিত্ব নেই। ভালোবাসা জিতে যায়, ভালোবাসা হেরে যায়। আশার সাথে হাত ধরে হাঁটতে থাকে হতাশা। ঋতুর পর ঋতু চলে যায়। আলী স্মিথের নতুন বইটিতে দেশের সীমানার সাথে বাড়তে থাকা মানসিক দূরত্বের গল্প তুলে ধরা হয়েছে।
বয়স্ক এক গীতিকারের সাথে ইঁচড়ে পাকা এক শিশুর বন্ধুত্বের গল্প ‘অটাম’। ১৯৬০ সাল থেকে ব্রেক্সিটের যুগ পর্যন্ত ইতিহাসের নানা টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে উপন্যাসের চরিত্ররা। চার ভলিউম সিরিজের বইটির এই সিরিজটিতে লেখক বুঝিয়ে দিয়েছেন সময়কে কীভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হয়, কীভাবে তাকে কাজে লাগাতে হয়। শুধু এ বছরের জন্যই নয়, উপন্যাসটি পাঠকের মন ছুঁয়ে যাওয়া চিরসবুজ একটি বইয়ে পরিণত হতে চলেছে।
২. এক্সিট ওয়েস্ট, মোহসিন হামিদ
গৃহযুদ্ধ দরজায় প্রায় কড়া নাড়ছে, এমন এক দেশে মিলিত হয় দুই তরুণ-তরুণী। সুদর্শনা, স্বাধীনচেতা মেয়ে নাদিয়া। ভদ্র, মার্জিত সাঈদ। সবার অলক্ষে প্রণয়ের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া এই দুই নর-নারীর অন্তরঙ্গতায় বাঁধা দিতেই যেন শুরু হয়ে যায় ঘোরতর যুদ্ধ। গোটা দেশ পরিণত হয় চেকপোস্টে, বোমা বিস্ফোরণ হয়ে যায় নিত্যদিনের সঙ্গী। দরজায় গিয়ে যেন বাতাস কানে কানে বলে আসছে চলে যাও এখান থেকে, অনেক দূরে চলে যাও। সহিংসতার মাত্র বাড়তে থাকলে নাদিয়া আর সাঈদ সিদ্ধান্ত নেয়, মাতৃভূমি ছেড়ে তাদের পালিয়ে বাঁচতে হবে।
সাদামাটা গল্পের ‘এক্সিট ওয়েস্ট’ বইটি নির্বাসিতদের মনস্তত্ত্ব বুঝিয়ে দেবে খুব সহজে। জাদুর এক দরজা মুহূর্তের মধ্যে পরিচিত পৃথিবী থেকে নিয়ে যায় অনেক অনেক দূরে। বাস্তবতার সাথে পরাবাস্তবতার মিশেলে রচিত বইটিতে আমাদের পারস্পারিক সম্পর্কযুক্ত পৃথিবীর রাজনৈতিক রীতিনীতির দোষত্রুটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হয়েছে।
৩. পাচিনকো, মিন জিন লি
এক কোরিয়ান পরিবারকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অনুসরণ করে লেখা হয়েছে পাচিনকো। ১৯০০ সালের শুরুর দিকে কোরিয়ায় সুনজাকে, আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন দরিদ্র পরিবারের যোগ্য কন্যা, কেন্দ্র করে কাহিনীটি শুরু হয়। সুনজার অনিয়ন্ত্রিত গর্ভাবস্থা পুরো পরিবারের জন্য বয়ে আনে মারাত্মক লজ্জা। প্রেমিকের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া সুনজাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসে তরুণ এক মন্ত্রী, যে তাকে বিয়ে করে জাপানে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়।
কাজেই পরিবারের এক সদস্য নিজের দেশ থেকে এক প্রকার নির্বাসিত হয়ে পাড়ি জমায় দূরদেশে, পারিবারিক ইতিহাসে তাতে তৈরি হয় নানা মোড়। বিশ্বাস, অস্তিত্ব আর পরিবারের প্রতি ভালোবাসার টানাপোড়েনের কাহিনী ‘পাচিনকো’। মিন জিন লির দ্বিতীয় উপন্যাস এটি। বইয়ের শুরুর বাক্যটি, ‘ইতিহাস আমাদের হারিয়ে দিয়েছে, কিন্তু তাতে কী আসে-যায়?’- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময়কার উচ্চাভিলাষ, দুঃখ-কষ্ট, অসীম ধৈর্যধারণের প্রতিভূ।
৪. দ্য পাওয়ার, নাওমি আল্ডারম্যান
আমাদের চেনা পৃথিবীর প্রতিচ্ছবি ‘দ্য পাওয়ার’। এক ধনী নাইজেরিয়ান পরিবারের সন্তান সারাক্ষণ উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাফেরা করে সুইমিং পুলের চারপাশে; এক পালিত মেয়ে যার ধর্ম পিতা-মাতার আসল পরিচয় সে জানে না; স্থানীয় এক আমেরিকান রাজনীতিবিদ; লন্ডনের ধুরন্ধর পরিবারের দৃঢ় মানসিকতার একটি মেয়ে। কিন্তু কোথায় কী যেন একটা পাল্টে গেছে, সবার জীবনে এক বিন্দুতে এসে মিলিত হয়েছে, বিধ্বংসী এক সত্যতার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়েছে তারা সবাই। কিশোরী মেয়েদের শারীরিক শক্তি বেড়ে গেছে খুব বেশি, কাউকে ব্যথা দেয়া থেকে শুরু করে মৃত্যু ঘটাতে পারে তারা। আর প্রকৃতির ছোট্ট এই টুইস্টে গোটা বিশ্ব যেন বদলে যেতে বসেছে।
‘টাইমস’এর মতে ‘বছরের সেরা তরুণ লেখক’ পুরষ্কারপ্রাপ্ত নাওমি আল্ডারম্যানের অসাধারণ একটি উপন্যাস ‘দ্য পাওয়ার’। ক্ষমতা নারীদের হাতে চলে গেলে পৃথিবীর চেহারা কেমন দাঁড়াবে- এখানে কেবল তাই দেখানো হয়নি, বরং ক্ষমতা যখনই একপেশে হয়ে যায় তখনই তাতে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয় সে বক্তব্যটিও স্পষ্ট করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
৫. সিং, আনবারিড, সিং; জেসমিন ওয়ার্ড
খুব কাছ থেকে দেখা এক পরিবারের আশা-আকাঙ্ক্ষা, সংগ্রামের লিখিত চিত্র ‘সিং, আনবারিড, সিং’ বইটি। আমেরিকার রুক্ষ ক্ষমতা, সীমাবদ্ধতার সাথে লড়তে থাকা একটি পরিবারের সদস্যদের বন্ধন সুনিপুণভাবে তুলে ধরেছেন জেসমিন ওয়ার্ড।
তেরো বছরের কিশোর জোজো বুঝতে চেষ্টা করে বড় হওয়া কাকে বলে। তার মা লিওনি সারাক্ষণ নিজের সাথে, চারপাশের সবার সাথে ঝগড়ায় ব্যস্ত। সে নিজে কৃষ্ণাঙ্গ, তার সন্তানদের বাবা শ্বেতাঙ্গ। সারাক্ষণ চারপাশ থেকে নিজের পরিচয় নিয়ে কটূক্তি শুনতে শুনতে হতাশাগ্রস্ত সে। ভালো মা হতে চায় লিওনি, কিন্তু মাদকের নেশা ছাপিয়ে সন্তানদের গুরুত্ব দেয়া তার পক্ষে কোনভাবেই সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। লিওনির স্বামী যখন জেল থেকে ছাড়া পায়, সন্তান আর এক বন্ধুকে নিয়ে মিসিসিপির কেন্দ্রে উত্তরের দিকে রওনা দেয় সে। সেখানে পৌঁছে আরেক ছেলের সাথে পরিচয় হয় তাদের, ভৌতিক সেই চরিত্র তার সাথে বয়ে বেড়াচ্ছে ইতিহাসের জঘন্য কিছু সত্য। জোজোকে সে শেখায় পিতা-পুত্রের সম্পর্ক কেমন হয়, ভালোবাসা কাকে বলে, নৃশংসতা কাকে বলে। একবিংশ শতাব্দীর আমেরিকার গ্রামীণ দৃশ্যপটের চিত্র রুপায়নের ক্ষেত্রে যথেষ্ট মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন জেসমিন ওয়ার্ড।
নন-ফিকশন
৬. দ্য ইভোল্যুশন অফ বিউটি: হাউ ডারউইন’স ফরগোটেন থিওরি অফ মেট চয়েস শেপস দ্য অ্যানিমেল ওয়ার্ল্ড অ্যান্ড আস, রিচার্ড ও. প্রাম
বৈজ্ঞানিক বইগুলোও হতে পারে বিধ্বংসী রকমের চেতনা সৃষ্টিকারী, নারীবাদী এবং নিজের দেহের প্রতি আমাদের যে ধারণা রয়েছে তা সম্পূর্ণ বদলে দেয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন। জ্বী, ‘দ্য ইভোল্যুশন অফ বিউটি: হাউ ডারউইন’স ফরগোটেন থিওরি অফ মেট চয়েস শেপস দ্য অ্যানিমেল ওয়ার্ল্ড অ্যান্ড আস’ বইটির কথা বলা হচ্ছিল। এখানে পাখির শরীরের দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছেন পক্ষিবিজ্ঞানী প্রাম।
ডারউইনের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও উপেক্ষিত ‘যৌনসঙ্গী নির্বাচন’ তত্ত্বটি নিয়ে বৃহৎ পরিসরে কাজ করেছেন প্রাম। ডারউইন বিশ্বাস করতেন, নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার পাশাপাশি প্রাণীদের গঠনে পরিবর্তন আনার পেছনে অন্য কোনো শক্তি বা উপাদান নিশ্চয়ই কাজ করতো। সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে অপর পক্ষের সৌন্দর্যের প্রতি মনোযোগ দেয়ার প্রবণতা নারীদের মধ্যেই বেশি ছিল। প্রাম চেয়েছেন, বস্তুনিষ্ঠভাবে সৌন্দর্যকে একটি মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করে বিবর্তন কীভাবে কাজ করে তা খুঁজে বের করতে। কাজটি পাখিদের দিয়ে শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত মানুষের কাছেই গিয়ে ঠেকেছেন তিনি। পৃথিবীতে ময়ূরের মতো অদ্ভুত সুন্দর প্রাণী কীভাবে এলো, জানতে হলে এই বইটি অবশ্যই পড়তে হবে।
৭. গ্র্যান্ট, রন চার্নয়
পুলিৎজার পুরস্কারপ্রাপ্ত আত্মজীবনী লেখক রণ চার্নয় এবার কাজ করেছেন আমেরিকার অন্যতম কুটিল জেনারেল এবং প্রেসিডেন্ট ইউলিসেস এস গ্র্যান্টের জীবনী নিয়ে। গ্র্যান্টকে সারাজীবন ভর ভুল বুঝে আসা হয়েছে। ক্রমাগত হারতে থাকা এক অদক্ষ ব্যবসায়ী, মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপানের প্রতি নেশাগ্রস্ত অথবা গৃহযুদ্ধের এক পাশবিক জয়ী জেনারেল হিসেবে চিত্রায়িত করা হয় তাকে। যারা গ্র্যান্ট সম্পর্কে ইতোমধ্যে জানেন, তারাও চার্নয়ের এই বইটি থেকে নতুন করে কিছু জানতে পারবেন। একজন আত্মজীবনী লেখক কতটা কর্মঠ হলে এমন একটি মাস্টারপিস সৃষ্টি করতে পারেন, তা সত্যিই মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেয়ার মতো বিষয়।
অর্থনৈতিক ভারসাম্যহীনতার দিনগুলোতে, উনবিংশ শতাব্দীর ‘গিল্ডেড এজ’ বা স্বর্ণালী যুগে নতুন এক হুমকি ছিল শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য বিস্তারকারী দলগুলো। সেই পরিস্থিতি সামাল দিতে গ্র্যান্ট যে বাহাদুরি দেখিয়েছিলেন, তার অজানা ইতিহাস নিয়ে হাজির হয়েছেন চির্নয়। গ্র্যান্ট কেবল এক কুটিল চরিত্রই নয়, তার কাছ থেকে শেখার আছে স্বজাতিকে রক্ষা করার কলাকৌশল।
৮. লকিং আপ আওয়ার ওউন: ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট ইন ব্ল্যাক আমেরিকা, জেমস ফরম্যান জুনিয়র
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমেরিকার বিচার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, বিতর্কের ঝড় বয়ে গেছে। সমালোচকরা বারবার দাবী জানাচ্ছেন, কারো গায়ের রঙের উপর ভিত্তি করে গণহারে গ্রেপ্তার করার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসার কোনো বিকল্প নেই। ১৯৭০ সালের যুদ্ধে আফ্রিকান আমেরিকান নেতারা সমর্থন জানালেও পরবর্তীতে কৃষ্ণাঙ্গদের কেন ছোট করে দেখা হলো, জেমস ফরম্যান জুনিয়র সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন ‘লকিং আপ আওয়ার ওউন: ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট ইন ব্ল্যাক আমেরিকা’ বইটিতে।
ওয়াশিংটনের প্রাক্তন এই পাবলিক ডিফেন্ডার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এভাবে বর্ণবাদী গণগ্রেপ্তার চলতে থাকলে বিচার ব্যবস্থায় দায়িত্বের বদলে প্রতিহিংসা কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
৯. কিলারস অফ দ্য ফ্লাওয়ার মুন: দ্য ওসেজ মার্ডারস অ্যান্ড দ্য বার্থ অফ এফবিআই, ডেভিড গ্র্যান
১৯২০ সালে ওকলোহমার ওসেজ ভারতীয় জাতির (মিসৌরিতে অবস্থানরত ভারতীয় আমেরিকান) লোকজনের মাথাপিছু আয় ছিল সবচেয়ে বেশি। তাদের মাটির নিচে তেলের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার পরপরই ওসেজরা গাড়ি কিনল, দালান বানাল, সন্তানদের পড়াশোনা করাতে ইউরোপে পাঠাল। তারপর হঠাৎ করেই একে একে খুন হতে শুরু করল ওসেজরা। এক ওসেজ নারীর, মলি বার্খার্ট, চোখের সামনে মেরে ফেলা হয় তার পরিবারের সদস্যদের। গোটা এলাকা জুড়ে এমন রহস্যময় খুনের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকলো, তেলখনির মালিকদের আরামের ঘুম হারাম হয়ে গেল। সে সময় গুপ্তচরের এক দল নিয়ে রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামলেন জে. এডগার হোভার। ওসেজদের সাথে মিলে তারা উন্মোচন করল আমেরিকার ইতিহাসের জঘন্য এক চক্রান্তের।
‘কিলারস অফ দ্য ফ্লাওয়ার মুন’ বইটিতে ডেভিড গ্র্যান ঠাণ্ডা মাথায় করা ডজনখানি খুনের কথা লিখেছেন। অনুসন্ধানমূলক বইটির প্রতিটি অধ্যায় রহস্য উন্মোচনের পাশাপাশি তুলে ধরা হয়েছে ভয়ানক সব ষড়যন্ত্র ও গোপন পরিকল্পনার কথা। কেবল ঐতিহাসিক সত্যতার দিক থেকেই নয়, বরং মানবিক আবেদনের দিক থেকেও বইটি পাঠকের ছুঁয়ে যাবে।
১০. আই ওয়াজ টোল্ড টু কাম অ্যালোন: মাই জার্নি বিহাইন্ড দ্য লাইনস অফ জিহাদ, সোয়াদ মেখেনেট
‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’এর সাংবাদিক সোয়াদ মেখেনেটের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা জার্মানিতে। আজীবন তাকে দুই পক্ষের ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হয়েছে- মুসলিম নারী হিসেবে তার দায়িত্ব এবং পশ্চিমা বিশ্বের হালহকিকত। তথাকথিত পরস্পর বিরোধী বা পারস্পারিক ভুল বোঝাবুঝির এই দুই সংস্কৃতির মধ্যে কেমন ছিল তার জীবন? সেই না বলা কথাগুলোই তিনি লিখেছেন ‘আই ওয়াজ টোল্ড টু কাম অ্যালোন: মাই জার্নি বিহাইন্ড দ্য লাইনস অফ জিহাদ’ বইটিতে।
৯/১১ এর হামলার পরে জার্মানিতে বসবাসরত সোয়াদের জার্মান প্রতিবেশীরা তাদের সন্দেহের চোখে দেখা শুরু করে, ইরাকি প্রতিবেশীদের মধ্যে শিয়া এবং সুন্নীরা পরস্পরের সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়। তুরস্ক আর সিরিয়া সীমানায় সারাক্ষণ আইসিসদের ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। সোয়াদ তখন মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকায় কর্মরত ছিলেন। অসংখ্য গোয়েন্দা সংস্থার মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা, আরব বসন্তকে খুব কাছ থেকে দেখা, সে সময় ফ্রান্স, বেলজিয়াম এবং তার স্বীয় দেশ জার্মানির অবস্থা তুলে ধরেছেন এখানে। আল ক্বায়েদা, দ্য তালিবান, আইসিস ও তাদের অঙ্গসংগঠনগুলোর অনেকের সাথে সরাসরি দেখা করে সাক্ষাৎকার নেয়ার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তার। নিজের বিপদ নিয়ে চিন্তা না করা দুঃসাহসিক এই নারী ভয়ঙ্কর সব শিরোনামের আড়ালে লুকিয়ে থাকা মানুষগুলোর সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। তার এই আত্মজীবনী চাইলেও খুব সহজে ভুলে যাওয়া যাবে না।
ফিচার ইমেজ: nyt.com