Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো কী কী?

বাংলাদেশের মানুষের দৈনন্দিন জীবনের একটি সাধারণ সমস্যা- যানজট এবং সড়ক দুর্ঘটনা। প্রতিদিন দেশের যেকোনো সংবাদপত্রে কিংবা টেলিভিশনে খবরের হেডলাইন দেখলে এমন অনেকগুলো খবর নজরে আসবেই। সবচেয়ে বেশি যেটি নজরে আসে, সেটি হচ্ছে দেশের প্রধান প্রধান মহাসড়কগুলোতে বাস-ট্রাক-গাড়ি-পথচারীর দুর্ঘটনা। বাংলাদেশ এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট, বুয়েট এর ২০১৪ সালের রিপোর্টে দেখা যায়, সেই বছরের মোট সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা হচ্ছে ১,৫৮৯ এবং দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের সংখ্যা প্রায় ২,৪৩১। আসল সংখ্যা যদিও আরও অনেক বেশি। এখানে উল্লেখ্য যে, এই সংখ্যাগুলো কিন্তু নির্ভরযোগ্য নয়, কারণ এদেশে সড়ক দুর্ঘটনার বেশিরভাগই থানায় রিপোর্ট করা হয় না। কিছুদিন আগে ডাটা মাইনিং নিয়ে এক গবেষণায় এই তথ্য প্রকাশ পেয়েছে যে, বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন আংশিক নির্ভরযোগ্য; কারণ এখানে কিছু কিছু তথ্যের অনুপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল [১]।

World Health organization (WHO) এর ২০০৪ এর প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয় যে, ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা অন্যান্য সব বৈশ্বিক সমস্যার মধ্যে তৃতীয় স্থানে উঠে যাবে। কথা হচ্ছে, কেন এমনটি হবে? সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে, প্রযুক্তি বাড়ানো হচ্ছে, রাস্তাঘাট, ফ্লাইওভার তৈরি করা হচ্ছে তবুও সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু মিছিল থামছে না। এই বিষয়ে গবেষণা কী বলে?

সড়ক নিরাপত্তা এবং দুর্ঘটনার সাথে সম্পর্কযুক্ত পাঁচটি বিষয় নিয়ে রোড সেফটি গবেষকদের আশংকা অনেক বেশি। আজকের লেখায় এই বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা করা হলো।

বেশি দুর্ঘটনার বলী যখন তরুণ চালকরা

সেফটি গবেষক লিওনার্দ ইভান্সের মতে, তরুণ চালকরা এত বেশিবার দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে যে, বিষয়টি অনেকটা প্রকৃতির নিয়মের মতো অবশ্যম্ভাবী ঘটনায় পরিণত হয়েছে। মনে হচ্ছে এর কোনো প্রতিকার নেই [২]। এক্ষেত্রে মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের দুর্ঘটনার হারই বেশি। এর কারণ হিসেবে গবেষণায় যেসব কথা উঠে এসেছে তা হলো,

১) গাড়ি চালানোর সময় তরুণদের ঝুঁকি নেবার প্রবণতা বেশি থাকে। গাড়ি চালানোর সময় অমনোযোগীতা, দৃষ্টিশক্তির সমস্যা, গাড়ির গতি ঠিক রাখতে না পারা, গাড়ি চালানোর সময় আগে থেকেই সামনের দুর্ঘটনা ঘটার প্রবণতা বুঝতে না পারা, ইত্যাদিও কারণ হিসেবে এসেছে।

তরুণ চালকদের দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন আছে; Image Source: Walmsley Baker

২) তরুণ চালকদের দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। যারা নতুন লাইসেন্স প্রাপ্ত চালক, স্বাভাবিকভাবেই তাদের গাড়ি চালানোর দক্ষতা কম। সেফ ড্রাইভিংয়ের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে তাদের আরও বেশ কিছু সময় লাগবেই। গাড়ি চালানোর বিষয়ে তরুণ চালকদের তাদের নিজেদের ক্ষমতার সীমাটুকু জানতে হবে। নিজের সম্পর্কে এই বিষয়গুলো বোঝাটা নিজে থেকেই রপ্ত করতে হয়। পরীক্ষামূলক এক গবেষণায় একটি তথ্য প্রকাশ পেয়েছে যে, নতুন তরুণ চালকরা গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে তাদের নিজেদেরকে অতিরিক্ত দক্ষ বলে মনে করে। কিন্তু পরে দেখা গিয়েছে যে, তাদের এই ধারণাটি ভুল।

৩) অতিরিক্ত ঝুঁকি নেবার প্রবণতা নিয়ে অনেকে মেডিকেলের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তারা দেখিয়েছেন যে, হরমোনাল সমস্যার কারণে এমনটি ঘটা অস্বাভাবিক নয়। মানুষের মস্তিষ্কের পরিপূর্ণতা ২৫ বছর পর্যন্ত আংশিক পরিমাণ হয়ে থাকে। এই বয়সের পর থেকে আস্তে আস্তে তা পূর্ণতা পেতে থাকে। তাই তরুণরা নিজেদের অপরিপক্বতার জন্য বেশি দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে [৩]।

গাড়ি চালকদের থেকে পথচারী এবং সাইকেল – মোটরসাইকেল আরোহীদের দুর্ঘটনার হার যখন বেশি

পরিবহন প্রকৌশলে পথচারী এবং মোটরসাইকেল আরোহীদের দুর্ঘটনা বিশ্লেষণ করার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে রাস্তায় সে কতটুকু সময় অতিবাহিত করেছে, সেটি পরিমাপ করা। এই পরিমাপ বিভিন্নভাবে করা যায়। যেমন- গন্তব্যস্থলে যেতে কতটুকু সময় লাগছে, যাওয়ার সময় যানজট ছিল কিনা, কোন রাস্তা দিয়ে সে গিয়েছে ইত্যাদি। আমাদের দেশে পথচারীদের দুর্ঘটনা তো আছেই, তার সাথে সাইকেল এবং মোটরসাইকেল আরোহীদের দুর্ঘটনাও বেড়ে চলেছে। পর্যাপ্ত সুরক্ষার অভাব এবং ইচ্ছের অভাবে এমনটি হচ্ছে। আমাদের দেশে পথচারীরা ওভারব্রিজ ব্যবহার করতে ইচ্ছুক না। মোটরসাইকেল আরোহীরা যদি আইন থাকা স্বত্ত্বেও হেলমেট ব্যবহার না করেন, তাহলে প্রকৌশলগত কোনো সমাধানে আসাটা অত্যন্ত কঠিন। কড়া আইন এবং সরকারের কঠিন কোনো পদক্ষেপই এর একটি সুরাহা করতে পারে।

রাস্তায় চলাচল করার সময় পথচারীদের নিজস্ব যুক্তি এবং বুদ্ধি দিয়ে রাস্তা পার হবার সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ; Image Source: autoexpress.co.uk

রাস্তায় চলাচল করার সময় পথচারীদের নিজস্ব যুক্তি এবং বুদ্ধি দিয়ে রাস্তা পার হবার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যখনই কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে, এটি মনে রাখতে হবে যে, দুর্ঘটনাটি ঘটেছে অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের জন্য এবং সেজন্য একজন পথচারী বা গাড়ীচালক কিংবা উভয়ই দায়ী হতে পারে। সব পথচারীর তাড়াতাড়ি গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হবার প্রবণতা থাকে। এই অভ্যাস বিভিন্ন মানুষের মধ্যে বিভিন্ন রকম হতে পারে। গাড়ি চালকদেরও এই বিষয়ে কিছু কিছু ভুল থাকে। যেমন-

১) কিছু কিছু চালক পথচারীদের রাস্তা পার হতে দেখলেই গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেন। তখন দুই পক্ষেরই সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়ে যায়, যে কারণে দুর্ঘটনা ঘটে।

২) অনেকক্ষণ ধরে গাড়ি চালানোর কারণে চালকের মধ্যে ক্লান্তি, অবসাদ এবং ঘুম চলে আসে, যে কারণে তাদের মধ্যে গাড়ি চালানোয় অসতর্কতা দেখা দেয়। আরও উল্লেখ্য যে, এই অসতর্কতা ট্রাক বা বাস ড্রাইভারদের ড্রাগ এবং অ্যালকোহল নেওয়ার ফলেও হয়ে থাকে এবং ফলাফল হিসেবে হাইওয়েগুলোতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে।

বড় গাড়ির সাথে ছোট গাড়ির সংঘর্ষ

একটি বড় গাড়ির ভর ছোট গাড়ির ভর থেকে অনেক বেশি। এছাড়া বড় গাড়িগুলোর গতিশক্তিও ছোট গাড়িগুলো থেকে তুলনামূলক বেশি হয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই বড়-ছোট গাড়ির সংঘর্ষে ছোট গাড়ির বেশি ক্ষতি হবার সম্ভাবনাই থাকে। উন্নত দেশের গবেষণাতে দেখা গিয়েছে যে, এরকম সংঘর্ষের ফলে বাস বা ট্রাকের ভেতরে যদি একজন আরোহী আহত হয়, তাহলে ছোট গাড়ির ক্ষেত্রে গড়ে ৪ জন আহত বা নিহত হতে পারে। বড় মহাসড়কগুলোতে ছোট-বড় যেকোনো গাড়ি অনেক দ্রুত বেগে চলে। সামনে থেকে যখন কোনো গাড়ি আসে, দুই দিকের গাড়ির চালকরাই মনে করেন, তাদের সামনের গাড়িকে পাশ কাটিয়ে চলে যাবেন। এতে সিদ্ধান্তে ত্রুটি চলে আসে, যার ফলাফল রাস্তার মতো ডায়নামিক সিস্টেমে মারাত্মক।

বড় গাড়ীর সাথে ছোট গাড়ীর সংঘর্ষ; Image Source: thehindu.com

আবার, চলন্ত অবস্থায় ওভারটেক করার সময়ও সিদ্ধান্তে ভুল হয়ে যায়। সাধারণত সামনের গাড়িকে পেছনে ফেলার জন্য পেছনের গাড়িকে একটি ন্যূনতম দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়, যেটি একজন চালককে খুব ভালো করে বুঝতে হয়। কারণ এই ওভারটেক করার সময় নিজের গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, যাকে ওভারটেক করা হচ্ছে সেই গাড়ির গতির সাথে তাল মিলিয়ে রাখতে হয়, আবার সামনে থেকে উল্টো পাশ দিয়ে যদি কোনো গাড়ি আসে, তার গতির দিকটিও খেয়াল রাখতে হয়। ওভারটেক করার সময় গাড়ি চালককে এই তিনটি বিষয় এক করে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়, যাকে বলে Passing Sight Distance। এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। বেশিরভাগ বড় দুর্ঘটনা এই ওভারটেক করার সময়ই হয়ে থাকে। অভিজ্ঞ চালকরাই এই বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন, যা একজন নতুন চালকের পক্ষে অর্জন করার সম্ভাবনা অনেক কম।

বেশিরভাগ বড় দুর্ঘটনা এই ওভারটেক করার সময়ই হয়ে থাকে; Image Source: Youtube

দুর্ঘটনার কারণ যখন রাস্তার আশেপাশের পরিবেশ

বিভিন্ন রাস্তার এবং সেই রাস্তার ট্রাফিকের পরিবেশ বিভিন্ন রকম। এই ভিন্নতা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়। একটি রাস্তায় যদি অনেক বেশি ভিড় থাকে, তাহলে সেই রাস্তার পরিবেশ হবে একরকম। আবার, যে রাস্তায় ভিড় কম সেখানকার পরিবেশ হবে অন্যরকম। একটি রাস্তার বিভিন্ন অংশ আঁকাবাঁকা হতে পারে, সোজা হতে পারে, রাস্তায় ঢাল থাকতে পারে, রাস্তার মাঝে ডিভাইডার থাকতে পারে, না-ও পারে, রাস্তাটি বিটুমিনের বা কংক্রিটের তৈরি হতে পারে, আবার কাঁচাও হতে পারে, রাস্তায় পথচারী, সাইকেল-মটরসাইকেল আরোহীদের প্রবেশাধিকার থাকতে পারে, না-ও পারে, রাস্তা পাহাড়ী হতে পারে, আবার বনের ভিতর দিয়েও হতে পারে।

বিভিন্ন রাস্তার এবং সেই রাস্তার ট্রাফিকের পরিবেশ বিভিন্ন রকম। এই ভিন্নতা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়; Image Source: VideoBlocks

‘রাস্তার চাহিদা’ বলে একটি কথা আছে, যা দ্বারা ওই রাস্তায় যানবাহন চলাচলের হারকে বোঝায়। যে সড়ক যত ব্যস্ত, তার চাহিদা তত বেশি। রাস্তার আশেপাশের পরিবেশ বেশিরভাগই নকশা এবং পরিকল্পনার উপর নির্ভরশীল। কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ের পরিকল্পনায় ঘাটতির কারণে নকশার সদৃশ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়ে উঠে না। এখানে মনে রাখতে হবে যে, একটি রাস্তায় সবই এক রকমের গাড়ি চলে না। বিভিন্ন ভরের, আকারের, আকৃতির এবং বিভিন্ন গতির গাড়ি চলে। গাড়িচালকদের মানসিকতাও বিভিন্ন রকম হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এবং বাস্তবায়ন পর্যায়ে এই বিষয়গুলোর কথা মাথায় রেখে পরিকল্পনা করা উচিত। তাছাড়া একটি রাস্তার আশেপাশের ভূমির অবস্থা এবং বিভিন্ন আর্থসামাজিক পর্যায়ের মানুষদের কথাও বিবেচনায় রাখতে হয়, যাতে সড়ক নির্মাণের মতো উন্নয়নমূলক কাজের জন্য তাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে।

গাড়িচালকদের নির্দিষ্ট গতিসীমা অতিক্রমের প্রবণতা

গাড়িচালকদের গতি বাড়ানোর প্রবণতা পরিবহন গবেষকদের জন্য একটি মাথাব্যথার বিষয়। উন্নত দেশগুলোতে ২০০৪-০৭ এর মধ্যে গাড়ির গতি বৃদ্ধির হার প্রায় ৫০% পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল। গবেষণায় দেখা গেছে যে, গাড়ির গতি যদি নিয়ন্ত্রণের ভেতর রাখা যায়, তাহলে ২৫% এর মতো মৃত্যুর হার কমে যাবে, ১৮% এর মতো ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা এবং ১০% এর মতো স্বল্পমাত্রার দুর্ঘটনা কমে যাবে।

গাড়িচালকদের গতি বাড়ানোর প্রবণতা পরিবহন গবেষকদের জন্য একটি মাথাব্যথার বিষয়; Image Source: UT News – The University of Texas at Austin

কিন্তু এই দ্রুত গাড়ি চালানোর প্রবণতা এমন একটি বিষয়, যেটি সহজে দূর করা যাবে না [৪]। কারণ-

১) গাড়ির অনিয়ন্ত্রিত গতির কারণে চালক নিজেই তার সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে বুঝতে পারে না এবং আশেপাশের পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা করতে পারে না। তত্ত্বের মাধ্যমে চালকদের এই প্রবণতার বিষয়ে বোঝা গেলেও, সরাসরি এর প্রতিরোধ করা এখনও সম্ভবপর হয়ে উঠেনি।

২) আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে, চালকের নিজের কাছে মনে হওয়া যে, সে যে গতিতে চালাচ্ছে সেটি ঠিক। যদিও, আগেই বলা হয়েছে যে এই ধরনের ধারণা অমূলক।

৩) চালকের সিদ্ধান্তহীনতা আরেকটি বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ গাড়ির গতি বাড়ানো-কমানোর ক্ষেত্রে চালকের পছন্দ (Choice) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। চালকের নিজের পছন্দ বেশিরভাগ সময়ই আশেপাশের পরিবেশের সাথে এবং নিরাপত্তার সাথে দ্বন্দ্বে (Conflict) জড়িয়ে পড়ে, যে কারণে দুর্ঘটনা ঘটে।

একটি রাস্তার গতিসীমা নির্ধারণ করা হয় তিনটি পরিস্থিতি মাথায় রেখে। প্রথমটি হচ্ছে রাস্তার ব্যবহারকারীদের সাপেক্ষে গতি কেমন হওয়া উচিত, দ্বিতীয়ত, আশেপাশের সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং শেষটি হচ্ছে, গাড়ির গন্তব্যে পৌঁছতে অতিবাহিত সময় ও গাড়ির যাত্রার সাথে জড়িত অর্থনৈতিক লাভ লোকসান। সাধারণত, চালক কিংবা গাড়ির মালিকপক্ষ শেষের বিষয়ে বেশি মাথা ঘামান, যে কারণে গতিসীমা লঙ্ঘন করে যাত্রার সময় কমিয়ে চালকরা দ্রুত গাড়ি চালায় এবং দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

এসব সমস্যা সমাধান করার জন্য অনেক ধরনের গবেষণা করা হচ্ছে। যেমন- নতুন নতুন প্রযুক্তি তৈরি করা (Intelligent Transportation System), নিজে নিজেই চলবে এমন স্বয়ংক্রিয় গাড়ি বানানো, চালকের সিদ্ধান্ত এবং আচরণ বোঝার জন্য Discrete Choice Analysis করা, পথচারীদের চলার প্যাটার্ন বোঝা ইত্যাদি।

উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যাচ্ছে, উক্ত সমস্যাগুলো আমাদের সবার জানা। অনেক ক্ষেত্রে এগুলো সমাধানের বৈজ্ঞানিক উপায়ও আছে। কিন্তু তবুও আমরা সমাধান করতে পারছি না। কেন? এখানে কিন্তু সামাজিক উভয় সংকট এবং সমাজের মানুষের দোষ অনেকাংশে চলে আসে। সমাধানের উপায় হিসেবে সবাই বলে, সমাজকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলো, তাদেরকে ভালো-মন্দের পার্থক্য বোঝাও। কিন্তু যারা শিক্ষিত তারা কতটুকু সচেতন? যারা ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হন, তাদের সবাই কি অশিক্ষিত? যারা ট্রাফিক পুলিশ কিংবা যারা পরিবহন কোম্পানির মালিক, তারা কি অশিক্ষিত? তারা কি সব আইনকানুন মেনে চলেন? সামাজিক কিছু প্রশ্ন আসলে থেকে যায়। কিন্তু সদুত্তর খুব বেশি পাওয়া যায় না। পরিবহন প্রকৌশলে যারা কাজ করেন, তাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত প্রত্যেকটি জীবন বাঁচানো। যারা রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালান, হেঁটে বেড়ান, চলাচল করেন, তাদের স্বাধীনতা আছে ঘুরে বেড়ানোর। কিন্তু শুধুমাত্র অযৌক্তিক ঝুঁকি নেওয়ার জন্য নিজের জীবন এবং অন্য মানুষের জীবনকে সংকটের মধ্যে ফেলার অধিকার কারো নেই। সামাজিক জীব হিসেবে নিজের এবং অন্যের বিষয়ে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।

তথ্যসূত্র:

[১]  Raihan, M.A., Hossain, M., and Hasan, T. (2017) Data mining in road crash analysis: the context of developing countries, International Journal of Injury Control and Safety

[২]  Evans, L., 1991. Traffic Safety and the Driver. Van Nostrand Reinhold, New York.

[৩] Evans, L., 2006. Innate sex differences supported by untypical traffic fatalities.Chance 19 (1), 10–15

[৪]  Elvik, R. (2010). Why some road safety problems are more difficult to solve than others, Accident Analysis and Prevention, Vol. 42, pp.1089–1096

ফিচার ইমেজ- Wikipedia

Related Articles