Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

করোনাকালে পোষা প্রাণীর যত্ন ও সুরক্ষা

নভেল করোনাভাইরাস একপ্রকার নতুন আবিষ্কৃত ভাইরাস, যা সারা বিশ্বের অধিকাংশ দেশে মহামারি আকারে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে। গত ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনা আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়। এ ভাইরাস সংক্রমণকে কোভিড-১৯ বলা হয়। ভাইরাসটি সম্পূর্ণরূপে নতুন ধরনের হওয়ায় এবং কোনো টিকা বা প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন দেশের সরকার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ নানা প্রকার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। কোথাও কোথাও আংশিক বা সীমিত আকারে লকডাউন করে এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর চেষ্টা চলছে।  

Image Source: Phoenixmed.arizona.edu

করোনা ভাইরাস একপ্রকার আরএনএ ভাইরাস। ‘করোনা’ শব্দটি এসেছে ইংরেজি শব্দ ‘Crown‘ বা ‘মুকুট’ থেকে। এই ভাইরাসের চারপাশে লিপিডের একটি আবরণ থাকে। এ আবরণের চারপাশে প্রোটিন দিয়ে তৈরি কাঁটা থাকে, যা দিয়ে ভাইরাস প্রাণী কোষের রিসেপ্টরের সাথে আটকে বংশ বিস্তারের চেষ্টা চালায়। ভাইরাসের রোগ তৈরি করার ক্ষমতা নির্ভর করে কী পরিমাণ ভাইরাস প্রাণী দেহে প্রবেশ করতে পেরেছে এবং সেই সাথে প্রাণীর শারীরিক ক্ষমতা অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, বয়স ইত্যাদির ওপর। কোভিড-১৯ এর সুপ্তিকাল ২-১৪ দিন।

কিন্তু এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসের উৎপত্তি সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হতে পারেননি। চীনের স্বাস্থ্য বিভাগ দাবি করে, উহানের বন্য প্রাণী বিক্রয়ের বাজার থেকে মানুষে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটেছে। এরপর চীনের প্রাণিসম্পদ বিভাগ শূকর, হাস-মুরগি, কুকুর এবং অন্যান্য প্রাণী থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে। কিন্তু সে পরীক্ষায় করোনাভাইরাসের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

উহানে মানবদেহে যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটিয়েছিল, তার জিনোম সিকোয়েন্সের সাথে বাদুড় থেকে পাওয়া করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সের মিল ৮৭.৯৯ শতাংশ, যেখানে গৃহপালিত প্রাণী থেকে প্রাপ্ত করোনাভাইরাসের মিল ৬৬ শতাংশের চেয়েও কম। ধারণা করা হয়, এ ভাইরাস বাদুড় থেকে তার প্রকৃতি পরিবর্তন করে প্যাঙ্গোলিন বা বনরুইয়ের মাধ্যমে মানুষে এসেছে। পরে মানুষ থেকে মানুষে কফ, থুথু বা নিঃশ্বাসের ড্রপলেটের মাধ্যমে খুব দ্রুত বিস্তার লাভ করেছে। কিন্তু গৃহপালিত কোনো প্রাণী থেকে মানুষে করোনা আক্রান্তের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

চীনের বন্য প্রাণী ক্রয়-বিক্রয়ের বাজার; Image Source: nenow.in

এ বছর, অর্থাৎ ২০২০ সালের ৫ এপ্রিল, নিউ ইয়র্কের ব্রংস চিড়িয়াখানায় প্রথমবার বাঘের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। ২২ এপ্রিল আরও ৬টি বাঘ ও সিংহের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়। এছাড়াও ২২ এপ্রিল নিউ ইয়র্কে পোষা বিড়ালে করোনা সংক্রমণের তথ্য সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বা সিডিসি থেকে নিশ্চিত করা হয়। পরে তদন্তে জানা যায়, বিড়াল পালনকারী এবং চিড়িয়াখানায় যে লোক বাঘের দেখাশোনা করতেন, তারা করোনা পজিটিভ ছিলেন। বাঘ এবং আমাদের গৃহপালিত বিড়াল কিন্তু একই পরিবার (ফেলিডে) এর সদস্য। এরা করোনাভাইরাসের প্রতি সংবেদনশীল এবং রোগের লক্ষণ প্রকাশ করতে পারে। কুকুরের সংবেদনশীলতা বিড়ালের তুলনায় কম।

সারা বিশ্বে প্রায় ৪৭০ মিলিয়ন কুকুর এবং প্রায় ৩৭৩ মিলিয়ন বিড়ালকে পোষা প্রাণী হিসেবে পালন করা হয়। বাংলাদেশে যদিও এর কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে সংখ্যাটা নেহায়েত কম নয়। যারা পোষা প্রাণী পালন করেন, তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ, বিড়াল বা কুকুর থেকে করোনা ভাইরাস ছড়ায় না। কিন্তু মানুষ থেকে প্রাণীতে যেহেতু ছড়ায়, সেহেতু সিডিসি এবং বিশ্ব প্রাণী স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রদেয় গৃহপালিত পোষা প্রাণীর নিম্নলিখিত দিকনির্দেশনাসমূহ মেনে চলা আবশ্যক।

ওদের যত্নের ক্ষেত্রেও অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে; Image Source: Medical News Today
  • পোষা প্রাণীকে আপনার পরিবারের অন্য সদস্যদের মতোই বাইরের কোনো মানুষ বা প্রাণীর সাথে মিশতে দেবেন না।
  • কোনো প্রাণী অসুস্থ হলে তাকে ঘরের অন্য প্রাণী ও মানুষ থেকে আলাদা করুন।
  • প্রাণী অসুস্থ হলে তার যত্ন নিন। এ সময় মুখে মাস্ক ও গ্লাভস পরে নিন এবং পরে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  • পোষা প্রাণীর বাসস্থানে নিয়মিত জীবাণুনাশক স্প্রে করুন।
  • খাবার দেয়া এবং বর্জ্য পরিস্কারের পর হাত সাবান দিয়ে হাত ভালভাবে ধুয়ে ফেলুন।
  • সিডিসি-র মতে, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাবিশিষ্ট মানুষ এবং ৬৫ বছরের অধিক বয়সের মানুষ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকিতে থাকে। তাই এদের পোষা প্রাণী থেকে দূরে রাখুন। পোষা প্রাণী করোনাভাইরাস বহন না করলেও অন্য জীবাণু তো বহন করতে পারে।
  • অসুস্থ প্রাণীর চিকিৎসার জন্য একজন অভিজ্ঞ ভেটেরিনারিয়ান বা প্রাণী চিকিৎসকের সহায়তা নিন। যেহেতু সরকার চলাচল সীমিত করেছে, তাই টেলিমেডিসিন সেবা নিতে পারেন।

অবৈধ বন্যপ্রাণীর বাণিজ্য প্রকৃতির জীববৈচিত্র্য ও ভারসাম্য, জনস্বাস্থ্য ও প্রাণীর প্রজাতির অস্তিত্বের জন্য হুমকি স্বরূপ। চীনে বন্যপ্রাণীর খামার স্থাপন ও কেনাবেচা সরকারিভাবে স্বীকৃত। কারণ শত শত বছর ধরে সেখানে বন্যপ্রাণীর হাড়, মাথা, অঙ্গ প্রত্যঙ্গ থেকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ তৈরি হয়। বিশ্ব প্রাণী স্বাস্থ্য সংস্থা তার সদস্য দেশগুলোর সাথে বসে বন্যপ্রাণীর বৈধ বাণিজ্য, পরিবহন, খামার করা, ধরা ইত্যাদি সম্পর্কে কিছু নীতিমালা তৈরি করছে, যাতে পরিবেশের ভারসাম্য, জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকে। সেই সাথে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের আদান প্রদান, রোগের নজরদারি, ঝুঁকি নির্ধারণ, তথ্য সংরক্ষণ এবং প্রয়োজনে ব্যবহার করার জন্য নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। তবে নীতিমালা করলেই হবে না, চাই এর যথার্থ বাস্তবায়ন।

সুস্থ থাকুক সবাই; Image Source: The Conversation

করোনাভাইরাসের কারণে প্রতিদিন বেড়ে চলেছে মৃত্যুর মিছিল। কিন্তু বিজ্ঞানীরাও বসে নেই। অবিরাম চেষ্টা চলছে টিকা আবিষ্কারের। ইতোমধ্যে ট্রায়াল শুরুও হয়েছে। বিভিন্ন ওষুধ আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে। করোনা থেকে সুস্থ মানুষের হাইপার ইমিউন সিরাম দিয়ে চিকিৎসাও চলছে।

সামাজিক জীবনের সাথে সাথে করোনার প্রভাব বিস্তৃত অর্থনীতির ওপরেও। সরকার বিভিন্ন প্রণোদনা ও ত্রাণ সহায়তা ঘোষণার মাধ্যমে মানুষকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এত মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা বৃথা যেতে পারে না। জয় হোক প্রচেষ্টার, জয় হোক মানবতার।

Related Articles