ডেজিগনেটেড সার্ভাইবার টিভি সিরিজটি ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে প্রচারিত হওয়া শুরু হয়। এখানে মূলত পলিটিক্যাল বা রাজনৈতিক থ্রিলার এবং কন্সপিরেসি বা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে দারুণসব অ্যাকশনকে একসুতোয় গাঁথা হয়েছে। নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে, সিরিজের কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন একজন ডেজিগনেটেড সার্ভাইবার। কথা হচ্ছে, এই ‘ডেজিগনেটেড সার্ভাইবার’ জিনিসটি কী?
আমেরিকায় প্রেসিডেন্সিয়াল সাকসেশন অ্যাক্টনামে একটি নীতি আছে। এই নীতি অনুসারে, কোনো কারণে প্রেসিডেন্টের কিছু হয়ে গেলে বা প্রেসিডেন্ট মারা পড়লে ভাইস-প্রেসিডেন্ট এই দায়িত্ব পালন করবেন। তারপর কোনো সমস্যা হলে দায়িত্ব নেবেন যথাক্রমে স্পিকার, প্রেসিডেন্ট প্রো টেম্পোর এবং কেবিনেট মেম্বার। এখানে, প্রেসিডেন্ট প্রো টেম্পোর হচ্ছেন সিনেটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাসীন অফিসার। কিন্তু এমন যদি হয় যে, কেবিনেটের কেউই দায়িত্ব নেয়ার মতো অবিস্থায় নেই বা সবাই মারা পড়েছেন?
জানি, অনেকেই ভাবছেন, এটা কীভাবে সম্ভব? এত মানুষ একসঙ্গে মারা যাওয়া তো সম্ভব না। আসলে, দুটো অনুষ্ঠানে সংসদ, মানে কংগ্রেস এবং সিনেটের সকল সদস্য একত্র হন। এর মাঝে একটা হলো, স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন অ্যাড্রেস। বছরের এই দিনটিতে প্রেসিডেন্ট বাজেট নিয়ে কথা বলেন, বিভিন্ন নতুন আইন পাস করার ব্যাপারে সবাইকে জানান কিংবা বিগত বছরের অর্থনৈতিক রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা করেন। আরেকটা হলো, প্রেসিডেন্টের অভিষেকের দিন। নির্বাচিত নতুন প্রেসিডেন্ট চার বছরের জন্য সেদিন শপথ করেন। এই দুটি দিন সবাই যেহেতু একত্র হয়, হতেই পারে কোনো বোমা হামলা বা দুর্বৃত্তদের আক্রমণে কংগ্রেস এবং সিনেটের সকল সদস্য একসঙ্গে মারা পড়লেন। কী হবে তখন? পুরো দেশটা কি এলোমেলো হয়ে যাবে?
এই ভাবনা থেকেই ডেজিগনেটেড সার্ভাইবার এসেছে। প্রেসিডেন্সিয়াল সাকসেশন অ্যাক্ট অনুযায়ী এই ভীষণ বিপদে দেশের হাল ধরবেন ডেজিগনেটেড সার্ভাইবার। একজন কেবিনেট সদস্যকে এই দুটো দিন আলাদা, নিরাপদ কোনো জায়গায় সরিয়ে নেয়া হয়। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে প্রেসিডেন্সিয়াল সকল সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে সিক্রেট সার্ভিস। এমনকি তার জন্য নিউক্লিয়ার ফুটবলের মধ্যে আমেরিকার সকল পারমাণবিক বোমার সুইচ এবং অ্যাক্সেস কোড থাকে- সরিয়ে রাখা হয়। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো ডেজিগনেটেড সার্ভাইবারকে আমেরিকার দায়িত্ব নিতে হয়নি, কিন্তু সেই ১৯৮১ সাল থেকে বাস্তবেই প্রতিবার এসব অনুষ্ঠানের সময় ডেজিগনেটেড সার্ভাইবার হিসেবে একজনকে সরিয়ে রাখা হয়েছে।
এখানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার আছে। প্রথমত, উপরে বলা দুটো দিনই আমেরিকানদের কাছে অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ। এবং সকল দায়িত্বশীল কেবিনেট মেম্বার এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। তার মানে, যিনি ডেজিগনেটেড সার্ভাইবার হিসেবে রয়ে যাচ্ছেন, তিনি নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের কেবিনেটের গুরুত্বপূর্ণ কেউ না।
আমেরিকায় সব স্টেটের আলাদা গভর্নর আছে। একটা স্টেটে গভর্নরই সর্বেসর্বা হিসেবে কাজ করেন। একমাত্র প্রেসিডেন্ট ছাড়া ওতে আর কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারে না। নিয়ম হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য প্রার্থীকে দুবারের গভর্নর হতে হয়। সমস্যা হলো, ডেজিগনেটেড সার্ভাইবার হওয়ার জন্য কিন্তু এই শর্ত নেই। তার মানে, হুট করে যিনি নতুন প্রেসিডেন্ট হয়ে গেলেন, তার না আছে কোনো অভিজ্ঞতা, না আছে তেমন কোনো পদমর্যাদা। এরকম কাউকে বিভিন্ন স্টেটের গভর্নররা মানবে কেন? হোয়াইট হাউজের কর্মীরাই বা তাকে কতটুকু মানবে?
তার উপর, যিনি ডেজিগনেটেড সার্ভাইবার হবেন, তার ভাইস-প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী কারা হবে, এ নিয়ে প্রেসিডেন্সিয়াল সাকসেশন অ্যাক্টে কিছু বলা নেই। তার মানে, একজন একেবারে অভিজ্ঞতাশূন্য মানুষকে একা হাতে আস্ত একটা দেশের পুরো সংসদ পুনর্নির্মাণ করতে হবে! সেই সঙ্গে শান্ত করতে হবে জনগণকে, ভরসা দিতে হবে। অথচ প্রেসিডেন্টকে নির্বাচনের আগে থেকেই যেমন সবাই চেনে, এই মানুষটিকে সেরকম প্রায় কেউই চেনে না!
মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো আছে একটা ভয়াবহ হামলার তদন্ত। একজন ডেজিগনেটেড সার্ভাইবারের প্রেসিডেন্ট হওয়া মানে, এমন একটা হামলা হয়েছে, যাতে পুরো আমেরিকার সংসদ বিলীন হয়ে গেছে। এই হামলার তদন্ত করে দোষীদেরকে ধরতে না পারলে সেই প্রেসিডেন্টকে কে মেনে নেবে? কিন্তু ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার, যিনি এফবিআই, সিআইএ, আমেরিকান আর্মি ইত্যাদির প্রধানের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের হয়ে যোগাযোগ রাখেন- তিনিই বা এমন কাউকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মানবেন কেন? তারা নিজেরাই তো এর চেয়ে অনেক অভিজ্ঞ!
আর, আমেরিকার বিভিন্ন শত্রু দেশ তো আছেই। যেমন, উত্তর কোরিয়া বা রাশিয়া। এমন একটা সুযোগ কি ওরা কাজে লাগাতে চাইবে না? এরকম অবস্থা কীভাবে সামলাবেন এই নতুন প্রেসিডেন্ট?
এসব নিয়েই বানানো হয়েছে টিভি সিরিজ ডেজিগনেটেড সার্ভাইবার। বাস্তবে এমনটা কখনো না হলেও, স্বীকার করতেই হবে, মুভি বা সিরিজের জন্য এটি প্লট হিসেবে দারুণ। পারমাণবিক বোমা হামলা বা টেরোরিজম ইত্যাদি নিয়ে গন্ডায় গন্ডায় মুভি, সিরিজ তো বানানোই হয়। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঠেকাতে জানবাজি রেখে কাজে নেমে যায় দুর্ধর্ষ সব গোয়েন্দা চরিত্র। এসবের কতটুকুই আর বাস্তব? আর, এত এত কাজ হয়েছে এসব নিয়ে যে, এই ব্যাপারগুলো এখন একরকম ক্লিশে হয়ে গেছে। সেই তুলনায় ডেজিগনেটেড সার্ভাইবার একটা ফ্রেশ প্লটের অনুভূতি দেবে আপনাকে।
সবচেয়ে বড় কথা, অনেকে সাহায্য করলেও, মূলত একা একজন মানুষের হাত ধরে একটা দেশের সংসদ কীভাবে দাঁড়ায়, একজন প্রেসিডেন্ট কীভাবে কাজ করে, তার পরিবারকে কীসের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়- এসব জিনিস একেবারে সামনে থেকে দেখার সুযোগ করে দেবে ডেজিগনেটেড সার্ভাইবার।
সিরিজ প্রিভিউ:
টম কার্কম্যান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অফ হাউস এন্ড আরবান ডেভেলপমেন্ট। বর্তমান প্রেসিডেন্টকে এ নিয়ে বেশ কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছিল সে, স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন অ্যাড্রেসে কথা বলার জন্য। প্রেসিডেন্ট রাজি হননি, বরং তাকে অন্য কোনো পদের দায়িত্ব নেয়ার কথা বলে দিয়েছেন। সেদিন স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন অ্যাড্রেসের সময় ডেজিগনেটেড সার্ভাইবার হিসেবে কার্কম্যানকে সরিয়ে নেয়া হলো। নিরাপদে সেফ হাউসে বসে প্রেসিডেন্টের বক্তৃতা শুনছিল কার্কম্যান এবং তার স্ত্রী। বাচ্চাকাচ্চা বাসায় রয়ে গেছে। হাসাহাসি করছিল ওরা কিছু একটা নিয়ে।
ঠিক এই সময় টেলিভিশনের সিগন্যাল চলে গেল। দৌড়ে এলো সিক্রেট সার্ভিস সদস্যরা। কেড়ে নিল ওদের ফোন। এক এজেন্ট জানাল, বোমা হামলা হয়েছে সংসদে। ব্যাপার বোঝার জন্য কার্কম্যান দৌড়ে গিয়ে জানালাটা খুলে দিয়েছিল। এখান থেকে ক্যাপিটাল- ওয়াশিংটনে অবস্থিত মার্কিন সংসদ চোখে পড়ে। হতভম্ব কার্কম্যান টের পেল, একটা পাশ প্রায় নাই হয়ে গেছে। আগুন আর ধোঁয়া উগলে উঠছে। সিক্রেট সার্ভিস এজেন্ট দৌড়ে এসে বন্ধ করে দিল জানালাটা। জানাল, এক্ষুণি হোয়াইট হাউসে ফিরতে হবে। আস্ত মার্কিন মুলুকের দায়িত্ব এখন ওর কাঁধেই পড়েছে!
এফবিআই বোমা হামলার সবকিছু তন্ন তন্ন করে খুঁজছিল। এর মধ্যেই পাওয়া গেল একটা অবিস্ফোরিত বোমা। ল্যাব রেজাল্ট জানাচ্ছে একটা নির্দিষ্ট টেরোরিস্ট গ্রুপের কথা। কিন্তু এজেন্ট হ্যানা ওয়েলস বুঝতে পারছে, এটা কোনোভাবেই যুক্তির ছাঁচে পড়ে না। যারা এক ধাক্কায় পুরো সংসদ উড়িয়ে দিয়েছে, তাদের ভুলের কারণে একটা বোমা ফাটবে না, তা হয় না। বরং এই বোমাটাকে হয়তো ইচ্ছে করেই এখানে রেখে যাওয়া হয়েছে। যেন একটা নির্দিষ্ট গ্রুপের কথাই মনে হয়। ওরা যেন আর কোনো সম্ভাবনা নিয়ে না ভাবে। কেউ একজন পেছন থেকে সুতো ধরে টানছে। ওদের সবাইকে পুতুল নাচ নাচাচ্ছে। কথা হচ্ছে, কে সে?
শপথ নেয়ার কিছুক্ষণের মাঝেই শত্রু দেশের কাছ থেকে সাবমেরিন হামলার হুমকি পান প্রেসিডেন্ট কার্কম্যান। সেই সঙ্গে অ্যাডমিরাল জেনারেল বলেন, পাল্টা আক্রমণ করতে। একজন নতুন প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পাওয়ার সাথে সাথেই একটা যুদ্ধ শুরু করে দেয়া কতটা যুক্তিযুক্ত?
তথাকথিত মিত্র দেশে আবার টেরোরিস্ট গ্রুপের নেতার খোঁজ পাওয়া গেছে। যেটা সেই দেশ স্বীকার করছে না। তার উপর যোগ হয়েছে মিডিয়ার চাপ। ওরা ফলাও করে বলছে, আগের প্রেসিডেন্ট কার্কম্যানকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে তো রাখেনইনি, বরং যে পদে ছিল, তা থেকেও সরিয়ে দিতে চাচ্ছিলেন। মিশিগানের গভর্নর মুসলিমদের গণহারে আটক করতে শুরু করেছে। প্রেসিডেন্ট নিষেধ করলে একবাক্যে বলে দিয়েছে, এই কার্কম্যানকে সে প্রেসিডেন্ট মানে না। মিশিগান স্টেটের পুলিশ থেকে শুরু করে ফেডারেল গার্ড- সবাই এ ব্যাপারে গভর্নরের সাথে একমত। কী করবেন কার্কম্যান?
এরমধ্যেই জানা গেছে, আরো হামলা হতে পারে। যে বা যারা কলকাঠি নাড়ছে, তারা সংসদের একটা নির্দিষ্ট রুমকে বোম্ব শেল্টার হিসেবে বানিয়ে নিয়েছিল। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো হ্যাক হলো হোয়াইট হাউসের সকল কম্পিউটার। এত সমস্যার তোড়ে এজেন্ট হ্যানা ওয়েলস দিশেহারা হয়ে পড়ল। পারব সে এসব রহস্য ভেদ করতে?
পুরো সিরিজ জুড়ে এমনই একের পর এক সমস্যা আসতেই থাকবে। দেখা যাবে, একজন প্রেসিডেন্ট, যিনি হোয়াইট হাউসের অলিগলিও চেনেন না, তিনি কীভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন একটা দেশকে টেনে তোলার জন্য। বিশেষ করে খুঁটিনাটি যেসব সমস্যার কথা আমরা ভাবিই না, এমন অনেকগুলো সমস্যা উঠে এসেছে সিরিজটিতে। যেমন, রিফিউজিদেরকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়া বা থাকতে দেয়ার ব্যাপার আছে। কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে শ্বেতাঙ্গদের ব্যবহার, অবহেলা; তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে কাজ না দেয়া- এসব তো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।
কিন্তু ধরুন, ভিনদেশের একজন সীমান্ত পার হয়ে অবৈধভাবে চলে এসেছে নিজের ছোট্ট বাচ্চাকে বাঁচানোর জন্য। চিকিৎসা করাতে চায়। কিডনি ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট করা লাগবে, নাহয় মারা যাবে বাচ্চাটা। প্রেসিডেন্ট কি ওদেরকে বের করে দেবেন? একটা ছোট্ট বাচ্চাকে মরতে দেবেন? মানুষ আবার দুয়ো তুলছে, আমেরিকার মানুষই অপারেশনের জন্য যথেষ্ট ডোনার কিডনি পায় না, বাইরের মানুষ, তা-ও অবৈধ একজন- এটা কোন যুক্তিতে পায়? আর, চিকিৎসা খরচ তো আছেই!
কিংবা ধরুন, টেরোরিস্টরা বিদেশি এক হাসপাতালের মাটির নিচের ঘরে আশ্রয় নিয়েছে। প্রেসিডেন্ট কি বোমা মারার নির্দেশ দেবেন? বিদেশের মাটিতে বোমা মারা মানে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেয়া। সেই সাথে হাসপাতালের নিরাপরাধ রোগীরা তো আছেই। আবার, গোপন অপারেশনে নেভি সিল টিমকে পাঠানো যায়। কিন্তু তারা যদি গিয়ে মারা পড়ে? বিদেশের মাটিতে আমেরিকান সৈন্যের মৃত্যু যে ভয়াবহ প্রশ্ন তুলে দেবে, কে দেবে তার মাশুল?
এমনই সব সমস্যার সঙ্গে কঠিন এক ষড়যন্ত্রের ব্যবচ্ছেদ, পরবর্তী নির্বাচন, ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকানদের লড়াই- সব মিলিয়ে দারুণ উপভোগ্য পলিটিক্যাল-কন্সপিরেসি থ্রিলার ডেজিগনেটেড সার্ভাইবার।
সিজন
এবিসিতে ২ সিজন প্রচারিত হয়েছিল সিরিজটির। কিন্তু এবিসি কোনো এক বিচিত্র কারণে সিরিজটি ক্যান্সেল করে দেয়। কারণ হিসেবে যদিও তারা টিআরপি বা দর্শক সংখ্যাকেই দায়ী করেছিল, কিন্তু এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন ওঠে। বিশেষ করে যেখানে আরো কম দর্শক সংখ্যা নিয়ে টিকে আছে অনেক অনেক সিরিজ। যেমন, এজেন্টস অফ শিল্ডের সিজন ৬ এ দর্শক সংখ্যা গড়ে মাত্র ২.২৮ মিলিয়ন। তবু সিরিজটির সপ্তম সিজন আসবে বলে নিশ্চিত করেছে এবিসি। সেখানে ডেজিগনেটেড সার্ভাইবারের প্রথম সিজনের শুরুতে ১০ মিলিয়নের বেশি, এবং শেষে ৫.০৭ মিলিয়ন দর্শক ছিল। সেই সঙ্গে নেটফ্লিক্সের কাছে অনলাইন স্ট্রিমিং রাইটস বিক্রি করেও ভালো আয় করছিল এবিসি।
যেকোনো কারণেই হোক, ২ সিজনের পরে এবিসি সিরিজটি ক্যান্সেল করে দিলে নেটফ্লিক্স দর্শকের চাহিদা এবং স্ট্রিমিংয়ে নিজেদের লাভ হিসেব করে সিরিজটির তৃতীয় সিজন প্রযোজনা করা। জুনের ৭ তারিখ নেটফ্লিক্সে মুক্তি পায় ডেজিগনেটেড সার্ভাইবারের তৃতীয় সিজন।
অভিনয়
টুয়েন্টি ফোরের জ্যাক বাওয়ার-খ্যাত কিফার সাদারল্যান্ড প্রেসিডেন্ট টম কার্কম্যানের চরিত্রে দারুণ অভিনয় করছেন। ২০০০ সালের দিকে প্রচারিত তার টুয়েন্টি ফোর সিরিজটি আমেরিকায় সেসময় জনপ্রিয় সিরিজগুলোর একেবারে উপরের দিকে ছিল। ওখানেই প্রথম আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট, নারী প্রেসিডেন্ট ইত্যাদির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছিল। সিরিজটির প্রভাব এত বেশি ছিল যে, বিভিন্ন সময় প্রেসিডেন্ট এবং গুরুত্বপূর্ণ অফিসিয়াল লোকজনও এই সিরিজের কথা উল্লেখ করেছেন। বাকিরা অতটা পরিচিত না হলেও সবাই যথেষ্ট ভালো এবং বাস্তব অভিনয় করেছে সিরিজটিতে।
প্রশংসা
প্রথমত, কিফার সাদারল্যান্ড এই সিরিজের সবচেয়ে শক্তিশালী দিকগুলোর একটি। অভিনয়, অভিব্যক্তি ইত্যাদি সবদিক থেকে দারুণ কাজ করেছেন তিনি। দ্বিতীয়ত, সিরিজটির প্লট বেশ আগ্রহোদ্দীপক। তৃতীয়ত, সিরিজটিতে হোয়াইট হাউজের ভেতরের কাজকর্ম বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যেমন, আসলেই নিউক্লিয়ার ফুটবল প্রেসিডেন্ট কীভাবে অ্যাক্সেস করেন বা বিভিন্ন মিশনে তাকে কীভাবে ব্রিফ করা হয়, এসবের মাঝের রাজনীতি, তার নিজের পরিবারের সদস্যরা কীসের মধ্যে দিয়ে যায়- ইত্যাদি দারুণভাবে ফুটেছে এই সিরিজটিতে।
বিশেষ করে তৃতীয় সিজনের কথা বলতে হয়। এই সিজনে সাধারণ মানুষ, কৃষ্ণাঙ্গ, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ কিংবা অবহেলিত ও মাদকাসক্তদের বেশ কিছু সাক্ষাৎকার দেখানো হয়েছে। এর একটিও বানানো না, বরং আসল, বাস্তব সাক্ষাৎকার!
সমালোচনা
একইসঙ্গে রাজনৈতিক ঝামেলা আর ষড়যন্ত্র তত্ত্ব টানতে যাওয়ার ফলে অ্যাকশনের পেছনে যথেষ্ট সময় দেয়া হয়নি সিরিজটিতে। বিশেষ করে এটি যেহেতু প্রেসিডেন্টের কাজকর্মকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে, তাই চাইলেও এফবিআই/সিআইএ এজেন্টদেরকে অতটা সময় দেয়া যায়নি। ফলে কিছু জায়গা একটু দ্রুত টেনে যাওয়া হয়েছে, এমন মনে হয়। বিশেষ করে, আগের সিজনগুলো ছিল অনেক বড়। প্রথম সিজনে পর্ব ছিল ২১টি। সেখানে নেটফ্লিক্স তৃতীয় সিজনে মাত্র ১০ পর্বের সিজন করেছে। সিজন জুড়ে তার একটা রেশ অনুভব করা যাবে, এটাই স্বাভাবিক। হয়েছেও তা-ই। অবশ্য তারপরেও দর্শকদের কাছে দারুণ সমাদৃত হয়েছে সিজনটি।
সব মিলিয়ে, আপনি যদি রাজনৈতিক থ্রিলার বলতেই হাউজ অফ কার্ডের কথা ভাবেন, তাহলে একটুখানি আশাহত হতে হবে। কারণ, ওখানকার মতো আইনের বাইরে গিয়ে হাত নোংরা করেনি এই সিরিজের মূল চরিত্র টম কার্কম্যান। আইনকে আগলে রেখে দেশকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে সে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে। একজন প্রেসিডেন্টকে যখন সিদ্ধান্ত নিতে হয় বা ট্রিগার চাপতে হয় পারমাণবিক বোমার- সেটা যে কতটা কঠিন, তা একেবারে হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যাবে।
বলা যায়, এটিই এই সিরিজটির মূল উপজীব্য যে, রাজনীতিবিদরা তো অনেক রাজনীতি করল, একজন সাধারণ মানুষ যদি দেশের প্রেসিডেন্ট হতো, তবে সে কী করতো?
কী করতো বা করতে পারে, এবং সেজন্য তাকে কী মাশুল দিতে হয়, জানতে হলে দেখতে হবে ডেজিগনেটেড সার্ভাইবার। পুরো সিরিজ দেখবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত আগেই না নিয়ে ঘন্টাখানেক সময় থাকলে বসে যেতে পারেন প্রথম পর্ব বা পাইলট এপিসোড নিয়ে। সময়টা আপনার খারাপ কাটবে না!
রেটিং
রটেন টম্যাটোজে শুরুর সিজনেই সমালোচকদের কাছে ৮৬% এবং দর্শকদের কাছে ৭৯% রেটিং পেয়েছে সিরিজটি। তিন সিজন মিলিয়ে সিরিজটির বর্তমান গড় রেটিং ৭৪%। আর আইমএমডিবিতে সিরিজটির রেটিং ৭.৭।