জোকারকে প্রথম পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল ১৯৪০ সালে। দেখতে দেখতে পার হয়ে গেছে প্রায় ৭৭ বছর। অথচ আজও জোকারকে নিয়ে মানুষের মোহের শেষ নেই। কমিক্ ভক্ত থেকে শুরু করে সিনেমাপ্রেমী যাকেই জিজ্ঞেস করবেন “আপনার পছন্দের সুপারভিলেন কে?” বেশিরভাগেরই উত্তর হবে “জোকার”। আজকে আমরা জানবো এই কিংবদন্তি কাল্পনিক চরিত্র সম্পর্কেই।
কমিকসে ব্যাটম্যানের সূচনা ১৯৩৯ সালে হলেও আলাদা নিজস্ব সিরিজ পেতে তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল প্রায় এক বছর। প্রথমবারের মতো ‘ব্যাটম্যান’ নামেই তার আলাদা সিরিজের প্রথম ইস্যু বের হয়েছিল ১৯৪০ সালের ২৫ এপ্রিল। সেই ইস্যুতে ডি.সি. কমিকস বিশ্বকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল জোকার নামের এই মনস্তাত্ত্বিক সুপারভিলেনের সাথে। শুরুর দিকে তাকে কমিকসে তুলে ধরা হয়েছিল এক নিষ্ঠুর ভাঁড় হিসেবে। জেনে অবাক হবেন যে, চরিত্রের অতিরিক্ত ভাঁড়ামির সাথে নতুন তেমন কিছু যুক্ত করতে না পেরে একসময় তাকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছিল ভিলেন হিসেবে। পরে পাঠকদের অনুরোধে তাকে আবার ফিরিয়ে আনলেও তাকে তুলে ধরা হলো আরও চালাক, আরও ভয়ংকর রূপে।
জোকারের সৃষ্টির পেছনে অনুপ্রেরণা হিসেব কাজ করেছিল আরেক কাল্পনিক চরিত্র। ১৯২৮ সালে মুক্তি পায় ভিক্টর হুগোর উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত একই নামের সিনেমা ‘দ্যা ম্যান হু লাফস্’, যার কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘গুইনপ্লেইন’- এর উপর ভিত্তি করেই আঁকা হয় জোকারকে । এর পেছনে অবদান রয়েছে বব কেন, বিল ফিঙ্গার এবং জেরি রবিনসন তিনজনেরই। তবে বব, জেরি রবিনসনের কৃতিত্ব শিকার করতে নারাজ ছিলেন; অনদিকে রবিনসনও নিজের অবদান বেশি বলে দাবি করে বেড়াতেন। তাই ‘জোকার’ চরিত্র নির্মাণের পিছনে এই দুজনের মধ্যে কার অবদান আসলে বেশি, এ বিষয়টি কিছুটা বিতর্কিত। কিন্তু কাহিনী লেখার পেছনে ফিঙ্গারের অবদানের কথা আবার স্বীকার করতেন দুজনেই।
এই বিষয়ে বব কেন একবার বলেছিলেন―
“জোকারের সৃষ্টি করছিলাম আমি আর বিল ফিঙ্গার। আমি ছবি আঁকতাম, আর বিল কাহিনী লিখতো। পরে জেরী রবিনসন জোকারের তাস ব্যবহারের আইডিয়া নিয়ে আসে। একদিন বিল আমাকে কনরাড ভেইতের অভিনীত ‘ম্যান হু লাফস’ এর গুয়েনপ্লেন চরিত্রের পোস্টার দেখিয়ে বলেছিল ‘এই নাও তোমার জোকার’। শুরুটা হয়েছিল এভাবেই, এর পেছনে জেরী রবিন্সনের তেমন কোনো কৃতিত্ব ছিলো না। তবুও মরার আগ পর্যন্ত সে বলবে সেই জোকারের স্রষ্টা।”
বই-সিনেমা সবখানেই জোকারকে তুলে ধরা হয় ‘স্যাডিস্টিক সেন্স অফ হিউমার’ বিশিষ্ট এক মানসিক বিকারগ্রস্ত ব্যক্তি হিসেবে। তার প্রধান কাজ হচ্ছে সবসময় ব্যাটম্যানের পেছনে লেগে থাকা। তবে ব্যাটম্যানের চিরশত্রুর পরিচয় ছাড়াও সে ডি.সি. ইউনিভার্সের ভয়ংকর ভিলেনদের মধ্যে একজন।
সৃষ্টির আজ এত বছর পরেও তার অরিজিন সম্পর্কে কেউ কিছু জানে না। বেশ কিছু কমিকসে তার অতীত কিছু ঘটনা বললেও ডিসি কমিকস স্পষ্টভাবে কোথাও তার অরিজিন তুলে ধরেনি। বিখ্যাত ব্রিটিশ লেখক আল্যান মুর তাঁর ‘দ্য কিলিং জোক’ কমিক বইয়ে জোকারের একটি অতীত জীবন তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন। জোকারের উৎপত্তির অনেকগুলো গল্পের মধ্যে সেটি অন্যতম। পরে ১৯৮৯ সালে মুক্তি পাওয়া টিম বার্টনের ‘ব্যাটম্যান’ মুভিতে দ্য কিলিং জোকের মতো করেই একটি অরিজিন দেখানো হয়েছিল, তবে সেটা সকলের মনঃপুত হয়নি।
আসুন জানা যাক ‘দ্য কিলিং জোক’ কমিক বইয়ে দেখানো জোকারের অতীত সম্পর্কে
জ্যাক (বইয়ে জোকারের ব্যবহৃত নাম) একটি রাসায়নিক কারখানায় প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করতো। কিন্তু তার বহুদিনের স্বপ্ন ছিল কৌতুকাভিনেতার হওয়ার। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ ছেড়ে দিয়ে কমিডিয়ানের চাকরি নেয় সে। কিন্তু যাচ্ছেতাইভাবে সেখানে ব্যর্থ হওয়ার পর সে বুঝতে পারে তার এভাবে ক্যারিয়ার বদলানো ঠিক হয়নি। আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, ঘরে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী জিনিকে হাসপাতালে ভর্তি করার টাকাও তার ছিল না। এসব নিয়ে চিন্তা করতে করতে সে শেষমেশ দ্বারস্থ হয় পরিচিত দুই ডাকাতের। তারা আগে থেকেই জ্যাকের পুরনো কর্মস্থলে ডাকাতি করার পরিকল্পনা করছিল। সে যেহেতু এখানে আগেও কাজ করেছে, তাই ভেতরের সবকিছু ছিল তার নখদর্পণে। তাই ডাকাত দুজন সহজেই রাজী হয়ে যায় এবং চালাকি করে দলনেতা হিসেবে তাকে রেডহুড পরিয়ে দেয়। তিনজন মিলে যখন পরিকল্পনায় মগ্ন, তখন পুলিশ জ্যাককে ফোন করে জানায় যে, হাসপাতালে দুর্ঘটনায় তার স্ত্রী এবং গর্ভের সন্তান দুজনই মারা গেছে।
শোকে বিহ্বল জ্যাক প্রথমে পিছু হটতে চাইলেও সাথের দুজনের পীড়াপীড়িতে শেষমেশ রাজী হয়ে যায়। কিন্তু সামনে তাদের জন্যে অপেক্ষা করছিল মহাবিপদ, কারখানায় গিয়ে তারা দেখে সেখানকার নিরাপত্তা দ্বিগুণ করে দেওয়া হয়েছে। বেড়া কেটে ভেতরে ঢোকার পরে এক নিরাপত্তারক্ষী তাদেরকে দেখে ফেললে তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ক্রিমিনাল দুজন পুলিশের গুলিতে মারা যায়। আর ব্যাটম্যানকে দেখে ভয়ে পিছু হঠতে যেয়ে পা ফসকে রাসায়নিক পদার্থে ভরা ফুটন্ত পাত্রে পড়ে যায় জ্যাক। ঘটনার বেশ কিছুক্ষণ পর পাত্রের সাথে যুক্ত এক জলপথ দিয়ে সে বাইরে এসে পরে। মাথায় পরে থাকা রেড-হুড খুলে দেখে রাসায়নিক পদার্থের তীব্র প্রতিক্রিয়ায় তার গায়ের চামড়া মড়ার মতো সাদা আর চুলের রং কেমন সবুজ হয়ে গেছে। স্ত্রী-সন্তানের মৃত্যুশোক আর ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার আকস্মিকতায় সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। তার অবস্থার জন্যে সে দায়ী করে ব্যাটম্যানকে, জন্ম হয় সিনেমাটিক ইউনিভার্সের অন্যতম ভিলেন জোকারের!
১৯৮৯ সালে মুক্তি পাওয়া টিম বার্টনের ব্যাটম্যান চলচ্চিত্রে এই কাহিনীটিই দেখানো হয় একটু ভিন্নরূপে। তবে এই দুটির একটিকেও জোকার অফিশিয়াল অরিজিন হিসেবে ধরা হয় না। তাছাড়া তার অতীত সম্পর্কে সে নিজেই বলে- “অতীত যদি থাকতেই হয়, আমি চাই বেছে নেবার মতো একাধিক অতীত থাকুক।” জোকারের অরিজিন নিয়ে পরে সেভাবে কোনো চেষ্টা করা হয়নি। তবে নতুন শুরু হওয়া ‘ডিসি রিবার্থ’-এ তার একটি অরিজিন তুলে ধরার সম্ভাবনা রয়েছে।
এখন পর্যন্ত জোকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন ৪ জন অভিনেতা এবং অ্যানিমেশন সিনেমাগুলোতে গলা মিলিয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। এর মধ্য থেকে আলোচনায় আসা ৫ জন অভিনেতা সম্পর্কে জানা যাক।
সিজার রোমারো
জোকারকে প্রথমবারের মতো সিনেমাটিক রূপ দেয়া হয় ষাটের দশকের ব্যাটম্যান মুভি এবং টেলিভিশন সিরিজে। সেখানে জোকার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অভিনেতা সিজার রোমেরো। জোকার চরিত্রে অভিনয় করা তিনিই একমাত্র অভিনেতা যার পুরষ্কারের থলিতে কোনো অস্কার নেই।
সিজার অভিনীত জোকারের অতীত নিয়েও তেমন কিছুই দেখানো হয়নি সিরিজে। তবে একটি দৃশ্যে বলা হয়, অতীত জীবনে সে ছিল একজন সম্মোহনকারী বা মনস্তত্ত্ববিদ। তার জোকারের কিছু অপরাধে ক্ষতি থেকে বিনোদনই ছিল বেশী, আবার কিছু ছিল খুব বেশী বিপদজনক। বিভিন্ন সময়ে তার জোকারকে দেখা যায় গোথামের অন্যান্য ভিলেনদের নিয়ে দল বেঁধে ব্যাটম্যান কিংবা পুরো শহর ধ্বংসের পরিকল্পনা করতে।
রোমেরোর দাদার বিশাল গোঁফ ছিল। তার দেখাদেখি রোমেরো নিজেও গোঁফ রেখেছিলেন। জোকার চরিত্রের জন্যে তাকে সেই গোঁফ ফেলে দেওয়ার জন্যে বলা হলে তিনি রাজী হননি। শেষমেশ মেকআপের উপরই ভরসা করতে হয়, যদিও মেকআপ তার গোঁফের অস্তিত্ব পুরোপুরি ঢাকতে পারতো না। তার গোঁফের এই ব্যাপারটি পরে এতোটাই জনপ্রিয়তা পায় যে পরে জোকারের আধুনিক কিছু অ্যাকশন ফিগারেও সেই গোঁফ ব্যবহার করতে দেখা যায়।
জ্যাক নিকলসন
ষাটের দশকের টেলিভিশন সিরিজ শেষ হয়ে যাবার পর অনেকদিন ব্যাটম্যান নিয়ে তেমন কোনো চলচ্চিত্র কিংবা সিরিজ নির্মাণ হয়নি। পরে আশির দশকে ‘ওয়ার্নার ব্রস’ পরিচালক টিম বার্টনের উপর দায়িত্ব দেয় ব্যাটম্যান নিয়ে সিনেমা নির্মাণের জন্যে। তখন বব কেনের পরামর্শে টিম বার্টন তার চলচ্চিত্রের জোকার চরিত্রের শরণাপন্ন হন তিনবার অস্কারজয়ী অভিনেতা জ্যাক নিকলসনের। ছোটবেলা থেকে জোকার চরিত্রের ভক্ত নিকোলসন রাজী হয়ে যান সাথে সাথেই। ‘ব্যাটম্যান’ নামেই সেই সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৮৯ সালে।
তার ‘জোকার’-এর সংস্করণ সিজার রোমেরোর থেকে অনেক ভিন্ন ছিল। দর্শকরা ঠিক যেভাবে জোকারকে দেখতে চেয়েছিলেন, নিকোলসন ঠিক সেভাবেই হাজির হয়েছিলেন পর্দায়; তাই নতুন এবং পুরনো দুই প্রজন্মের দর্শকরাই উপভোগ করেছিলেন তাঁর এই এডাপশন।
সিনেমায় জোকারকে দেখা যায়, প্রথমদিকে নিজেকে ‘জ্যাক নেপিয়ার’ হিসেবে পরিচয় দিতে এবং পরবর্তীতে দুর্ঘটনায় তার চেহারা পুরোপুরি বদলে যাওয়ার পর সে হাজির হয় জোকারের বেশে।
চলচ্চিত্রে নিকোলসনের জোকারের অরিজিন ভক্তদের পুরোপুরি তৃপ্তি দিতে না পারলেও, জোকার হিসেবে ঠিকই সকলের মন জয় করে নিয়েছিলেন। তিনিই ছিলেন সেই জোকার যাকে পর্দায় দেখার জন্যে ভক্তরা এতদিন অপেক্ষা করে ছিল। জোকার চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে সে বছর সহকারী অভিনেতা হিসেবে গোল্ডেন গ্লোব এবং বাফটা আওয়ার্ডে মনোনয়ন পান জ্যাক নিকলসন।
মার্ক হ্যামিল
১৯৮৯ সালের পর বেশ কিছু ব্যাটম্যান চলচ্চিত্র আসলেও সেগুলোতে দেখা মেলেনি জোকারের। তবে এর মাঝামাঝি সময়ে এসেছে বেশ কিছু অ্যানিমেশন সিনেমা এবং সিরিজ যেগুলোর বেশীরভাগেই জোকারের চরিত্রে কণ্ঠ দিয়েছেন ‘লুক স্কাইওয়াকার’খ্যাঁত মার্ক হ্যামিল।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, জোকার হওয়ার আগে ‘৯২-এর ব্যাটম্যান দ্য অ্যানিমেশন সিরিজের একটি এপিসোডে তিনি ভয়েস দিয়েছিলেন অন্য এক ভিলেন ‘ফেরিস বয়েলের’ চরিত্রে। সিরিজের নির্বাহীরা স্রেফ কৌতূহলের বশে তাকে জোকারের জন্যে অডিশন দিতে বলেন। তার নৈপুণ্যে মুগ্ধ হয়ে আগে থেকে ঠিক করা টিম কারিকে বাদ দিয়ে তাকেই পরে সিরিজের জোকার হিসেবে ঠিক করা হয়।
মার্ক হ্যামিল সেই খবর পেয়ে প্রথমে প্রায় ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। কারণ তিনি মনে করতেন জোকার চরিত্রটি তার জন্যে একটু বেশী ‘হাই প্রোফাইল’ ছিল এবং তার প্রতিভা দিয়ে হয়তো সবাইকে খুশি করতে পারবেন না। তাই তিনি এমন কোনো ভিলেনের চরিত্র চাচ্ছিলেন যাদের সম্পর্কে কারও পূর্ববর্তী তেমন কোনো ধারণা ছিলো না।
অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তার জোকার সবখানেই উল্লেখযোগ্য প্রশংসা পায়। তিনি নিজে তো বটেই, অন্য কেউই হয়তো ভুলেও ভাবেনি শুধুমাত্র কণ্ঠদানের মাধ্যমে তিনি জোকার হিসেবে এতো সুনাম কুঁড়িয়ে নিবেন। হ্যামিলের এই জোকারের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো বিভিন্ন সময়ে জোকারের মেজাজের অবস্থা প্রকাশ করার জন্য তার হাসির বৈচিত্রময় ব্যবহার।
উপরের ভিডিওতে ভক্তদের অনুরোধে কিলিং জোকের কয়েকটি লাইন জোকারের গলায় শুনাচ্ছেন মার্ক হ্যামিল
জোকার হিসেবে তার ভূমিকা শুরু হয় ১৯৯২ সালের ব্যাটম্যান এনিমেশন সিরিজের মধ্যে দিয়ে। তারপর থেকে আনুষঙ্গিক আরও অনেক সিরিজ, সিনেমা এবং ভিডিও গেমসে জোকারের চরিত্রে তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন।
হিথ লেজার
১৯৯৭ সালের পর প্রায় আট বছর ব্যাটম্যান নিয়ে কোনো সিনেমা নির্মাণ হয়নি। পরে ২০০৫ সালে মুক্তি পায় নবীন পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলানের ডার্ক নাইট ট্রিলজির প্রথম সিনেমা ‘ব্যাটম্যান বিগিন্স’, যার শেষ দৃশ্যে তিনি পরের সিনেমাতে জোকারকে আনার আভাস দেন।
আর এদিকে নোলানের সিনেমার ব্যাটম্যানের রোল ফিরিয়ে দেয়া হিথ লেজার ব্যাটম্যান বিগিন্স দেখেই মনঃস্থির করেন, পরের সিনেমায় তিনি জোকার চরিত্রে অভিনয় করবেন। সেই অভিপ্রায় নিয়ে নোলানের দ্বারস্থ হন, অডিশন দেন এবং তার অভিনয়শৈলীর জোরে ‘দ্য ডার্ক নাইট’ চলচ্চিত্রের জোকার চরিত্রটি নিজের করে নেন।
লেজার প্রায় দুই মাস এক হোটেল রুমে নিজেকে তালাবদ্ধ রেখে নিয়েছিলেন জোকার চরিত্রের প্রস্তুতি নিতে। অমানুষিক পরিশ্রম, স্বভাবগত অভিনয় দক্ষতা দিয়ে তিনি জোকারকে দিয়েছিলেন ভিন্ন এক ভয়ংকর রূপ। এমনকি জোকারের ভূমিকায় দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য জিতে নিয়েছিলেন পার্শ্ব চরিত্রে সেরা অভিনেতার অস্কার। সিনেমার ইতিহাসে এর আগে কোনো অভিনেতা কমিকবুক চরিত্রে অভিনয় করে অস্কার জিততে পারেননি।
এদিকে তাকে কিছু না বলেই জোকারের চরিত্রের জন্যে লেজারকে ঠিক করায় অভিনেতা জ্যাক নিকলসন কিছুটা বিচলিত হয়েছিলেন। ২০০৭ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন―
“জোকার এসেছে আমার শৈশবের সময়। ছোটবেলা থেকেই জোকারের প্রতি আমার ভিন্ন এক আকর্ষণ ছিল। আমি ভাবতাম, যতদিন বেঁচে আছি এই চরিত্রে শুধু আমিই অভিনয় করবো।”
লেজার অভিনীত ‘দ্য ডার্ক নাইট’ সিনেমাটি মুক্তি পায় ২০০৮ সালে। এই সিনেমাতেও দেখানো হয়নি জোকারের কোনো অরিজিন। তবে পুরো সিনেমাজুড়ে তাকে অতীতের দুটি গল্প বলতে দেখা যায়। যার একটিতে সে বলে তার অবস্থার পেছনে দায়ী তার বাবা, আরেকটিতে দোষ চাপায় তার স্ত্রীর উপর।
জ্যাক নিকলসন যেখানে ছিলেন একদম কমিক বই থেকে উঠে আসা জোকার, অন্যদিকে হিথের জোকার মূলধারা থেকে ব্যতিক্রম কিছু। তাছাড়া হিথের জোকারের পেছনে অনেক ভালো স্ক্রিপ্ট সাপোর্ট ছিল, তাই পারফরমেন্স অনুযায়ী বলা যায় আগের সবগুলো জোকার থেকে তার জোকার অনেক ভালো ছিল। তবে কমিকবুক একুরেসির কথা উঠলে জ্যাক নিকলসনের নামই নিতে হবে।
জ্যারেড লেটো
ডিসি এক্সটেন্ডেড ইউনিভার্স শুরু হওয়ার পর ২০১৪ সালে দর্শকদের জানানো হয়ে সামনে সুইসাইড স্কোয়াড নিয়ে সিনেমা আসছে এবং তাতে জোকার চরিত্রে অভিনয় করতে যাচ্ছেন জ্যারেড লেটো। ফ্যান থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শক সবাই সেই খবরে বেশ খুশিই হয়েছিল। সবাই আশা করে বসেছিল, গেলো বছর অস্কার আর গোল্ডেন গ্লোব জেতা এই অভিনেতা হয়তো জ্যাক নিকলসন এবং হিথ লেজারকে ছাড়িয়ে জোকারকে নিয়ে যাবেন অন্য এক উচ্চতায়।
আশা পূর্ণ হয়নি কারোরই, ফ্যান থেকে শুরু করে দর্শক সবার কাছেই তিনি সমালোচিত হয়েছেন। তবে অনেকেই মনে করেন সিনেমার পর্দায় তিনি অনেক কম সময় ছিলেন বলেই হয়তো সেভাবে তার জোকার চরিত্রের বিকাশ ঘটেনি। তবুও তার মতো অভিনেতার কাছে এই ধরণের কিছু কেউই প্রত্যাশা করেনি।
তবে তার জোকারকে ভিন্ন মাত্রা দেয়ার চেষ্টা তিনি যে করেননি তা না। তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন মেথড অভিনয়েরও। শুটিং করতে আসতেন জোকার সেজে। সেটের বাইরেও তিনি করতেন জোকারর মতো কাজকারবার। তার জোকারের হাসিতে পরিপূর্ণতা আনার জন্য তিনি রাত-বিরাতে কানাডার রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন এবং হঠাৎ করে মানুষের সামনে গিয়ে নানাভাবে উদ্ভট হাসি দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতেন তার কোন হাসিতে মানুষ কীরূপ পতিক্রিয়া হচ্ছে। এতো কষ্ট করেও তিনি পারেননি জোকার হিসেবে ভক্তদের মন জয় করে নিতে।
সম্প্রতি হোয়াকিন ফিনিক্সকে জোকার হিসেবে নিয়ে, জোকারের অরিজিনের উপর একটি সিনেমা নির্মাণ হচ্ছে। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে মুক্তি পাবে সিনেমাটি। এতসব তারকাদের ভিড়ে জোয়াকিন ফিনিক্সের জোকার আপাতদৃষ্টিতে কিছুটা সাদামাটাই দেখায়। কিন্তু অস্কারে তিনবার মনোনয়ন জিতে নেয়া ফিনিক্স কিন্তু সাধারণ মাপের কোনো ব্যক্তি নন! তার নিজের জীবনটাই অনেকের কাছে শোনাবে গল্পের মতো। আর ফিনিক্সে ভর করেই নির্মাতা টড ফিলিপ্স এবার শোনাতে চাইছেন জোকারের জন্মকাহিনী! এই বিষয়ে বিস্তারিত পড়তে ঘুরে আসুন এই লিংক থেকে।
নিচের ভিডিওতে ‘লুপার’ নামের ইউটিউব চ্যানেল জোকারের প্রতিটি সংস্করণ খারাপ থেকে ভালোর ক্রমানুসারে সাজিয়েছে, চাইলে দেখে নিতে পারেন।