অ্যাকোয়াম্যান: আটলান্টিকের গহীন রাজ্য জয় করা এক মানবীয় অতিমানব

আইসল্যান্ডের এক দুর্গম কুয়াশাচ্ছন্ন গ্রামের এক আগন্তুকের খোঁজে এসেছেন ব্রুস ওয়েন। সেই আগন্তুক, আর্থার কারি, তার ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে সমুদ্রের প্রাণীদেরকে নিয়ন্ত্রণ করছেন, আর শীতে কাতর মানুষদেরকে খাবারের যোগান দিচ্ছেন। পৃথিবী আক্রমণ করা মহাজাগতিক ভিলেনের বিপক্ষে দল গঠন করছিলেন ব্রুস। প্রথমে সরাসরি তাকে না করে দিলেও পরে নিজের মায়ের রাজ্য আটলান্টিসকে রক্ষার উদ্দেশ্য ঠিকই এগিয়ে আসেন আর্থার।

‘ব্যাটম্যান ভার্সাস সুপারম্যান: ডন অফ জাস্টিস’ মুভিতে ছোট্ট একটি ক্যামিওর পরে ‘জাস্টিস লীগ’ মুভি দিয়ে এভাবেই বড় পর্দায় প্রথম অভিষেক ঘটেছিল অ্যাকোয়াম্যানের। অন্যান্য জনপ্রিয় সুপারহিরোর পাশাপাশি সেখানে অ্যাকোয়াম্যানের মনে রাখার মতো কিছু দৃশ্য ছিল বটে, কিন্তু বিভিন্ন কারণে ডিসির মেগা বাজেটের চলচ্চিত্রটি দর্শক-সমালোচক কারোরই মন জয় করতে পারেনি। ‘জাস্টিস লীগ’ এর বিপর্যয়ের ঠিক এক বছর এক মাস পরে আটলান্টিসের রাজকীয় কাহিনী দিয়ে যেন রাজসিকভাবেই প্রত্যাবর্তন ঘটল ডিসি এক্সটেন্ডেড ইউনিভার্সের। ডিসির মুভি ইউনিভার্সের সাম্প্রতিক এই সংযোজন, ‘অ্যাকোয়াম্যান‘কে নিয়েই আমাদের আজকের এই আয়োজন।

আর্থার কারি © 2018 Warner Bros.

থমাস কারি এক সাধারণ লাইটহাউজ কিপার। প্রবল ঝড়ের এক রাতে সমুদ্রতীরে পেয়ে যান রানী আটলানাকে। দুজনের নিখাঁদ ভালোবাসায় জন্ম নেয় আর্থার, কিন্তু আটলান্টিস রাজ্যের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে স্বামী-সন্তানকে ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন আটলানা। আর্থার অবশ্য সবসময়েই নিজের অতিমানবীয় ক্ষমতা সম্পর্কে জানত। সমুদ্রের প্রাণীদেরকে নিয়ন্ত্রণ কিংবা নিজের অতিমানবিক শক্তি থাকলেও অবশ্য নিজেকে কখনো সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশি অসাধারণ কিছু মনে করেনি শিশু আর্থার। তবে মায়ের ওপর একটা অভিমান ছিল সবসময়েই। তাছাড়া যোদ্ধা হিসেবে প্রশিক্ষণ নেবার পরেও ‘হাফ-ব্রিড’ হবার কারণে আটলান্টিসে ঢুকতে না পারায় অনেক ক্ষোভও ছিল।

আটলান্টিসের ভবিষ্যত রানি মেরা একদিন এক দুঃসংবাদ নিয়ে আসেন আর্থারের কাছে। রানি আটলানার ছেলে, আর্থারের সৎ ভাই, অর্ম স্থলের মানুষের বিরুদ্ধের যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে। তার মুখোমুখি দাঁড়াবার সাহস নেই কারো। তাকে ঠেকাবার একমাত্র উপায় হলো ‘ট্রাইডেন্ট অফ আটলান’ খুঁজে বের করা, যার মালিক ছিলেন আটলান্টিসের প্রথম শাসক। এদিকে অর্ম মুহুর্মুহু সৃষ্টি করছে দুর্যোগ, জলোচ্ছ্বাসে ভাসিয়ে দিচ্ছে সমুদ্রতীরের এলাকাগুলোকে। এতদিন নিজের খেয়ালখুশি মতো মানুষকে সাহায্য করতেন আর্থার, এরকম দায়িত্ব আগে কখনো আসেনি। কিছুটা নিমরাজি হয়েই আর্থার আটলান্টিস দখল করার যুদ্ধে অংশ নিতে রাজি হন। কেবল নিজের রাজ্যের অধিবাসীদের জন্য নয়, গোটা পৃথিবীর মানুষের স্বার্থেই। 

সুপারম্যান, ব্যাটম্যান, ওয়ান্ডার ওম্যান, ফ্ল্যাশের মতো তুমুল জনপ্রিয় ডিসি সুপারহিরোদের ভিড়ে অ্যাকোয়াম্যানকে কিছুটা আন্ডারডগ হিসেবেই বিবেচনা করা হত এতদিন ধরে। সেটা হোক কমিক বই, অ্যানিমেশন মুভি কিংবা টিভি সিরিজ। বিভিন্ন সময়েই পপ কালচার রেফারেন্সে উপহাসের পাত্র হতে হয়েছে তাকে।

©CBS

তাই ওয়ার্নার ব্রাদার্স যখন ২০১৪ সালে অ্যাকোয়াম্যানের সলো মুভি বানানোর ঘোষণা দেয়, এর সাফল্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন অনেকেই। তবে জ্যাক স্নাইডার যখন অ্যাকোয়াম্যান ওরফে আর্থার কারির চরিত্রে ‘গেম অফ থ্রোন্স’ খ্যাত জ্যাসন মোমোয়াকে নির্বাচিত করেন, তখনই নড়েচড়ে বসেন অনেক ভক্ত। পরিচালক হিসেবেও স্নাইডারেরই কাজ করার কথা ছিল প্রথমে। পরে অস্ট্রেলিয়ান জেমস ওয়ানকে পরিচালক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।

স এবং ডেড সাইলেন্স মুভিতে কাজ করার মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করার পর কনজুরিং এবং ইনসিডিয়াস এই দুটি হরর সিরিজ দিয়ে হলিউডে হরর মুভির জনপ্রিয়তা ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছেন. পরবর্তীতে অ্যাকশন মুভির ক্ষেত্রেও নিজের মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন ফিউরিয়াস সেভেন পরিচালনার মাধ্যমে। পর্দার পেছনের মূল হিরো বলা যায় তাকেই। কাহিনী খুব অপ্রত্যাশিত কিছু ছিল না। তবে চিত্রনাট্য এমনভাবে এগিয়েছে, যা দর্শকের মনোযোগ ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট। অনেকে হয়তো কেবল আন্ডারওয়াটার অ্যাকশনই দেখিয়ে মুভি শেষ করবে, একঘেয়ে হবে এমন আশঙ্কায় ছিলেন। 

অ্যাকোয়াম্যান বনাম ওশানমাস্টার ; © 2018 Warner Bros.

এর আগে মাদার বক্সের জন্য আটলান্টিসের কাছাকাছি গেলেও মূল রাজ্যে ঢোকা হয়নি আর্থারের। তার চোখ দিয়েই দর্শক পরিচিত হন এক মনোমুগ্ধকর জগতের সাথে। ‘ডক্টর স্ট্রেঞ্জ’, ‘থর রাগনারক’ কিংবা ‘ব্লেড রানার ২০৪৯’ এর মতোই নয়নাভিরাম সিনেমাটোগ্রাফি উপহার দিয়েছে অ্যাকোয়াম্যান। মসৃণ ক্যামেরার কাজ বরাবরই জেমস ওয়ানের ট্রেডমার্ক কাজ, তার সাথে সাগরতলের বর্ণিল সৌন্দর্য দর্শকের বিনোদনের ষোলকলা পূর্ণ করেছে। ‘ফাইন্ডিং নেমো’র মতো বর্ণিল সামুদ্রিক জীবন যেমন ছিল, তেমনি ছিল ইন্ডিয়ানা জোনসের মতো মরুভূমির অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ। তাছাড়াও, শয়ে শয়ে অ্যাকশন মুভির ভিড়ে ভিন্নধর্মী অ্যাকশন সিকোয়েন্স দেখানোও ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। স্টার ওয়ার্স যেমন স্পেস অপেরা জনরাটিকে তুমুল গ্রহণযোগ্যতা দিয়েছিল, ঠিক তেমনি অ্যাকোয়াম্যান হয়ে উঠেছে একটি পরিপূর্ণ আন্ডারওয়াটার অপেরা। মুভিটি মুক্তির আগে অনেকে বলেছিলেন যে, ‘অ্যাভাটার টু’ এর সমতুল্য প্রযুক্তি দেখা যাবে এই মুভিতে। সেটা হয়তো সত্যি না, তবে আন্ডারওয়াটার অ্যাডভেঞ্চারের ক্ষেত্রে পরিচালক যে ল্যান্ডমার্ক স্থাপন করে গেলেন, তাকে পেরোনো কঠিন হবে।

দৃশ্য বুঝিয়ে দিচ্ছেন জেমস ওয়ান; © 2018 Warner Bros.

মূল চরিত্রকে জ্যাসন মোমোয়ার চেয়ে নিখুঁতভাবে আর কেউ ফুটিয়ে তুলতে পারতেন বলে মনে হয় না। অ্যাকশন দৃশ্যগুলোতে আর্থার ছিলেন একাই একশো, বিশালদেহী মোমোয়ার কারণে তার ক্ষমতাগুলোও একবারের জন্যও অবাস্তব মনে হয়নি। তেমনি কমেডিক মুহূর্তগুলোতেও ভালোভাবেই হাস্যরসের পরিচয় দিয়েছেন তিনি। জেমস ওয়ানের সাথে একাধিকবার কোলাবোরেশন করা প্যাট্রিক উইলসন ছিলেন আর্থারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ওরম ওরফে ওশানমাস্টার হিসেবে। তবে যতটুকু প্রত্যাশা ছিল, ততটুকু লোমহর্ষক ছিল না তার চরিত্রটি। কে জানে, সেটা পরিচালকেরই ইচ্ছা ছিল খুব ডার্ক কাহিনীর দিকে না যাওয়া।

প্রত্যুতপন্নমতি মেরার চরিত্রে অভিনয় করেছেন অ্যাম্বার হার্ড। ‘মেরা’র মূল ক্ষমতা হাইড্রোকিনেসিস, ঠিক যেন ‘ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট’ এর ‘গি’ এর মতো। সেই সাথে দুর্দান্ত কিছু অ্যাকশন সিকোয়েন্সেও অংশ নিতে দেখা গেছে তাকে। আর আর্থার কারির মা হিসেবে নিকেল কিডম্যানের চেয়ে যোগ্য আর কেউ ছিলেন বলে মনে হয় না। একই সাথে তিনি যেমন ছিলেন লাবণ্যময়ী, তেমনি দোর্দন্ড্য প্রতাপের অধিকারী। এর আগে স্পাইডারম্যানের ভিলেন হওয়া উইলেম ডেফো আবার সুপারহিরো জগতে ফিরে এলেন ‘ভালকো’ চরিত্রে। মুভির আশির দশকের স্বাস পরিপূর্ণ করার জন্যই সেই সময়কার খ্যাতনামা অ্যাকশন অভিনেতা ডলফ লুন্ডগ্রেনকে নিয়েছেন পরিচালক। তবে অল্প সময় স্ক্রিনটাইম পেয়েও ঝলক দেখিয়েছেন ইয়াহিয়া আবদুল মতিন, ব্ল্যাক মান্তার কিছুটা জটিল চরিত্রে খুব ভালোভাবেই উতরে গেছেন তিনি।

‘অ্যাকোয়াম্যান’ মুভির মূল চরিত্রগুলো ; Source: © 2018 – Warner Bros.

আটলান্টিয়ানরা পানির নিচে কীভাবে কথা বলে, মুখ দিয়ে বুদবুদ বের হয় কি না, এসব নিয়ে মুভির ট্রেলার আসার সময়েই তর্ক-বিতর্কের সূচনা হয়েছিল। তার আগে ‘জাস্টিস লীগ’ মুভিতে আর্থারের সাথে কথা বলার সময়ে পানির মধ্যে বিশেষ এক বলয় সৃষ্টি করেছিলেন মেরা, যে বিষয়টি অনেকেই পছন্দ করেননি। পরিচালক জেমস ওয়ান এককথাতেই পুরো বিষয়টির সমাধান দিয়ে দেন। তার মতে, মানুষ স্বাভাবিকভাবে যেভাবে কথা বলে, আটলান্টিয়ানরাও পানির নিচে ঠিক সেভাবেই কথা বলবে। আরেকটি বিষয় হলো, একমাত্র রাজরক্তের অধিকারী আটলান্টিয়ানরাই জলে-স্থলে সমানভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে।

পৃথিবীতে স্টিপেনউলফের আক্রমণের ঠিক এক বছর পরের কাহিনী নিয়ে মুভি এগিয়েছে। জাস্টিস লীগের শেষে পাঁচটা চেয়ার দেখা গেলেও জাস্টিস লীগ এখনো পরিপূর্ণভাবে গড়ে উঠেছে কি না, সে বিষয়ে কোনোকিছু বলা হয়নি এই মুভিতে। অন্য কোনো মুভির দিকে রেফারেন্স টেনে ইস্টার এগের ব্যবহার ছিল না বললেই চলে, যা এখনকার সুপারহিরো মুভির ক্ষেত্রে বিরল। মাথা খাটানোর সুযোগ না পেয়ে হয়তো হতাশও হয়েছেন অনেকে। মূল মুভি তো নয়ই, মিড-ক্রেডিট দৃশ্যেও জাস্টিস লীগের অন্য কোনো সদস্যের নাম উঠে আসেনি। ফলে যারা সাধারণ দর্শক, তাদের কাহিনী ধরতে খুব বেশি সমস্যা হয়নি। আবার কমিক ভক্তরাও কিছুটা চমৎকৃত হয়েছেন, কেননা গল্প পুরোপুরি জিওফ জোনসের নিউ ফিফটি টু কমিক্সের কাহিনী কিংবা অ্যানিমেটেড মুভি জাস্টিস লীগ: থ্রোন অফ আটলান্টিসকে পুরোপুরি অনুসরণ করে আগায়নি।

জাস্টিস লীগের অন্যান্য সদস্যদের সাথে অ্যাকোয়াম্যান ; Source: geektyrant

মুভির একটি প্রাণবন্ত দিক ছিল এর সাউন্ডট্র্যাক। সাধারণত এক্ষেত্রে ডিসির মুভিগুলোকে কখনোই হতাশ করে না। জেমস ওয়ানের অসাধারণ নির্মাণের যোগ্য পরিপূরক ছিল রুপার্ট গ্রেগসন-উইলিয়ামসের কাজ। মুভির শুরুর দিকে ‘সাফারি সং’ গানটি দিয়ে শুরুতেই দর্শককে মুভির মেজাজের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন পরিচালক। সিসিলিতে আর্থার এবং মেরার কাটানো মুহূর্তগুলোর ব্যাকগ্রাউন্ডে ‘শি’জ অ্যা মিস্ট্রি টু মি’ গানটির সংযোজন পরিপূর্ণতা দিয়েছে তাদের মধ্যকার রসায়নকে। ঠিক তেমনি ব্ল্যাক মান্তার স্যুট বানানোর সময়ে সাসপেন্সে ভরা ‘ইট’স নো গুড’ ও অসাধারণ ছিল। আর আর্থারের সুপারহিরো থিমটিও ছিল ড্রামা এবং ডিসকোর সমন্বয়ে একটি অনবদ্য সৃষ্টি। তবে ব্যতিক্রমও ছিল এর মধ্যেও, পিটবুলের করা ‘আফ্রিকা’ গানটির কভার বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছে। 

সিসিলিতে আর্থার ও মেরা; © 2018 Warner Bros.

প্রোডাকশন এবং প্রমোশন মিলিয়ে প্রায় ২০০ মিলিয়ন বাজেটের অ্যাকোয়াম্যান ক্রিস্টমাস পূর্ববর্তী সময়ে মুক্তি পেয়ে অন্যান্য বিগ বাজেট জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের সাথে পাল্লা দিয়ে বিশ্বজুড়ে আয় করে নিয়েছে ১১৪৩ মিলিয়ন ডলার। ডিসি এক্সটেন্ডেড ইউনিভার্সের মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে আয়ের দিক দিয়ে শীর্ষে অবস্থান করে নিয়েছে তাই। আইএমডিবিতে এখন পর্যন্ত এর রেটিং ৭.৩/১০, সমালোচকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় রোটেন টমাটোসের টমাটোমিটারে এর রেটিং এখন পর্যন্ত ৬৪%।

কথা প্রসঙ্গে ডিসি এক্সটেন্ডেড ইউনিভার্সের অন্য দুই স্ট্যান্ডঅ্যালোন মুভির সাথে ‘অ্যাকোয়াম্যান’ এর তুলনা এসেই যায়। ২০১৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ম্যান অফ স্টিল’ মুভির সুপারম্যান/ক্লার্ক কেন্টের চরিত্রে হেনরি ক্যাভিল ছিলেন সেরা। জ্যাক স্নাইডারের পরিচালনায় মুভিটির কাহিনী, অ্যাকশন এবং সিম্বোলিজম ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়, বক্স অফিসে আয় করে ৬৬৮ মিলিয়ন ডলার। তবে মুভির টোনের কারণে অতিপরিচিত সুপারম্যানের মধ্যে অনেকেই কিছুটা হিউমারের ঘাটতি খুঁজে পেয়েছিলেন। এদিকে ২০১৭ সালের ‘ওয়ান্ডার ওম্যান’ বক্স অফিসে ৮২১ মিলিয়ন ডলার আয় করে ডিসিইউ এর অন্যতম সফল প্রজেক্টে পরিণত হয়। প্যাটি জেনকিন্সের পরিচালনায় কমিকের তুমুল জনপ্রিয় এই চরিত্রটিকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছিলেন গ্যাল গ্যাদোত। মুভির কাহিনী, অ্যাকশন, হিউমার সবদিক থেকেই এগিয়ে ছিল মুভিটি, তবে কেউ কেউ মুভির শেষ অঙ্কে ভিলেনের সাথে সিজিআই লড়াইয়ের সিকোয়েন্সটিতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। এদিকে ‘অ্যাকোয়াম্যান’ এর শক্তিশালী ভিজুয়াল ইফেক্ট এবং অ্যাকশন সিকোয়েন্সগুলো দর্শকের দম ফেলার অবকাশ রাখেনি। তবে কাহিনীতে খুব বেশি গভীরতা ছিল না, খেই হারিয়েছে মাঝেমধ্যেই। শুধু তা-ই না, আর্থারের চরিত্রায়নে কিছু জায়গায় অযথা হিউমার ঢোকানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তাই তুলনায় ঐ দুই মুভির থেকে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও অ্যাকোয়াম্যান নিঃসন্দেহেই অনেক উপভোগ্য। 

‘অ্যাকোয়াম্যান’ মুভির কলাকুশলীবৃন্দ; Source: Kevin Winters/Getty Image

দুর্দান্ত সব অভিনেতা থাকা সত্ত্বেও কাহিনী, সিজিআই সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল ডিসি এক্সটেন্ডেড ইউনিভার্সের সর্বশেষ ছবিটি। সুপারহিরো মুভির ক্ষেত্রে ফর্মুলার বাইরে গিয়ে ভিন্নধর্মী কিছু চেষ্টা করার পরেও বড় কিছু ভুল সিদ্ধান্তের জেরে এই সিনেমাটিক ইউনিভার্সের মর্যাদাও যেন গিয়ে ঠেকেছিল তলানিতে। সমুদ্রের নিচে থেকে সাবমেরিন ওঠানোর মতো করেই যেন ডিসি এক্সটেন্ডেড ইউনিভার্সকে ডুবে যাবার হাত থেকে এখনকার মতো বাঁচিয়ে দিয়েছেন অ্যাকোয়াম্যান। সেইসাথে আগে কখনো বড় পর্দায় না আসা শাজামকে নিয়ে নির্মিত স্ট্যান্ডঅ্যালোনের প্রতি দর্শকের আগ্রহও কিছুটা বেড়েছে। ম্যান অফ স্টিল ২, ফ্ল্যাশ কিংবা ব্যাটম্যানের স্ট্যান্ডঅ্যালোন মুভি নিয়ে দ্বিধায় থাকা ওয়ার্নার ব্রাদার্সকেও যেন কিছুটা আশার আলো দেখালো মুভিটি। সেই সাথে আরো প্রমাণ করে দিলো যে, অযথা কাটাছেঁড়া না করে গোছানো কাহিনী নিয়ে এগোনোই হবে তাদের জন্য সঠিক পদক্ষেপ।

সিনেমা সম্পর্কে আরও জানতে আজই পড়ুন এই বইগুলো

১) নতুন সিনেমা সময়ের প্রয়োজন

২) সিনেমা এলো কেমন করে

৩) বাঙালির সিনেমা

৪) কেমন করে সিনেমা তৈরি হয়

This article is in Bengali Language. It is about Aquman, a DC superhero film starring Jason Momoa, Amber Heard, Patrick Wilson and Nicole Kidman. For references please check the hyperlinked texts in the article.

Featured Image:  2018 - Warner Bros.

Related Articles

Exit mobile version