‘যুদ্ধ’ শব্দটি বলার সাথে সাথে চোখের সামনে কোন জিনিসটি ভাসে? কামানের গর্জন? বোমা? রক্তাক্ত শহর? মানুষের আহাজারি? নাকি স্বজন হারানোর বেদনা?
যেটাই হোক না কেন, যুদ্ধের সাথে সাধারণত সুখের কোনো অনুভূতির তুলনা করা যায় না। বিশেষত, সেটা যদি হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা।
যুদ্ধ মানে ভয়, বেদনা, জিঘাংসা। যুদ্ধ মানে শৈশব হারানোর গল্প। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়ে চলচ্চিত্র জগতে এযাবত নির্মিত হয়েছে বহু সিনেমা। বাদ যায়নি অ্যানিমেশন জগতেও। বরং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোর মাঝে একটি অ্যানিমেটেড সিনেমার নাম আমরা কম বেশি সবাই জানি- ‘গ্রেইভ অফ দ্য ফায়ারফ্লাইজ’, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন জাপানের কোবে শহরের দুই ভাই-বোনের এক করুণ গল্প।
এমনই আরেকটা সিনেমার কথা বলা হবে এখানে। সেইতা আর সেতসুকোর মতো এই অ্যানিমেশন সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র এক শিশু। বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞে তাকেও হারাতে হয় পরিচিত জগতটাকে। বরং কিছু দিক দিয়ে তার অভিজ্ঞতা কোবের সেই ভাই-বোনের চেয়ে আরো বেশি ভয়াবহ, কেননা এই চলচ্চিত্রের গল্প হিরোশিমাকে নিয়ে।
১৯৮৩ সালে মুক্তি পাওয়া এই অ্যানিমেশন সিনেমার নাম ‘হাদাশি নো গেন’ ( Hadashi no Gen) বা ‘বেয়ারফুট গেন’ (Barefoot Gen)।
‘গ্রেইভ অফ দ্য ফায়ারফ্লাইজ’ এর তুলনায় ‘বেয়ারফুট গেন’ স্বল্পপরিচিত হলেও হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমার ভয়াবহতা আর কোনো চলচ্চিত্রে, তা অ্যানিমেশন হোক বা লাইভ অ্যাকশন, কোনোটাতেই এতটা বিশদভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেনি।
মরি মাসাকি পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটি একই নামের একটি জাপানী কমিকের উপর ভিত্তি করে নির্মিত। কেইজি নাকাজাওয়ার হাতে সৃষ্ট কমিকটি তার নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে রচিত। এ কারণে সিনেমার চরিত্রগুলোর অভিজ্ঞতাগুলো আরো বেশি বাস্তব, আরো বেশি ভয়ংকর মনে হয়- কেননা এর সবকিছুই বালক কেইজির নিজ চোখে দেখা।
সিনেমার শুরুই হয় একটি সাইরেনের আওয়াজ দিয়ে। জাপানের আকাশে তখন মিত্রবাহিনীর উড়োজাহাজ, যেকোনো সময় হতে পারে বোমা হামলা। একসময় নীরব হয়ে যায় সাইরেন। বাঙ্কারের অন্ধকার থেকে বের হয়ে আলোতে এসে দাঁড়ায় ছোট একটি ছেলে, এই গল্পের নামচরিত্র গেন। বাবা মা, বড় বোন ও ছোট ভাইকে নিয়ে সে থাকে হিরোশিমাতে। বিমান হামলার আশঙ্কায় বাঙ্কারে রাত্রিযাপন করাটা তাদের কাছে নতুন কিছু না, যুদ্ধ যে প্রতিদিনের রুটিনটাই বদলে দিয়েছে।
গেনের বাবা গমচাষী দাইকিচি নাকাওকা কাঠের জুতো বানান, কিন্তু যুদ্ধের কারণে রোজগার হচ্ছে একেবারেই অল্প। মা কিমিয়ে অন্তঃসত্ত্বা, বড় বোন এইকো ঘরের কাজ করার দায়িত্ব নিয়েছে। গেন তার ছোট ভাই শিনজিকে নিয়ে বাবাকে ক্ষেতে সাহায্য করে। দরিদ্র এবং অভুক্ত হলেও ঠিকই সাধ্যের মধ্যে সুখে দিন কাটায় এই পরিবারটি।
শৈশবের স্বভাবসুলভ দুরন্তপনায় মেতে থাকে গেন আর শিঞ্জি, যদিও তাদের দস্যিপনার মাঝেও দর্শক তাদের কঠিন জীবনটিও দেখতে পারবেন বার বার।
সেটা দেখা যাবে একটি আলু নিয়ে দুই ভাইয়ের মারামারির মধ্যে, যা তারা বোনের বকাতে তাদের মাকে ফেরত দেবে, কেননা তাদের মায়ের সেটা বেশি প্রয়োজন। সেটা দেখা যাবে রেশনের টিকিটের অভাবে তাদের খাবার না পাবার মধ্যে। সেটা দেখা যাবে অপুষ্টিতে ভোগা অন্তঃসত্ত্বা মায়ের স্বাস্থ্যের অবনতির মাঝে।
এক রাতে বাঙ্কার থেকে ফেরত আসার সময় জ্ঞান হারায় কিমিয়ে। ডাক্তার জানান, গেনের মা অপুষ্টিতে ভুগছেন, দ্রুত খাবার না জোগাড় করতে পারলে মা-সন্তান দুজনের প্রাণই ঝুঁকিতে পড়বে। মায়ের জন্য খাবার আনতে পথে নামে দুই ভাই, লুকিয়ে লুকিয়ে রাতের বেলা আরেকজনের পুকুর থেকে মাছ চুরি করে আনে।
চলচ্চিত্রটিতে কমেডির মধ্য দিয়ে কঠিন বাস্তবতা ফুটিয়ে তোলার বিষয়টি লক্ষণীয়। যেমন- মাছটি যখন কেবল অসুস্থ কিমিয়েকে খেতে দেয়া হয়, তখন ছোট্ট শিনজি গিয়ে তার মায়ের কানে কানে একটা কথা বলে, যেটা শুনে তার মা কেঁদে দেয়৷। শিনজি তার মাকে জিজ্ঞেস করেছিল, “তোমার খাওয়া শেষ হলে আমাকে কি একটু মাছের কাঁটাগুলো চুষতে দেবে?”
বাবা দাইকিচি একটু ভিন্নরকমের মানুষ- যুদ্ধকে তিনি ঘৃণা করেন। জাপান হেরে যাবে তা সত্ত্বেও স্রেফ জেদের বশে এই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাধরেরা, সাধারণ মানুষের কী ক্ষতি হলো তার কোনো গুরুত্ব নেই- এমন মত তার। সেই সময়ে রাজা বা জাপানের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে কিছু বলাটা ছিল শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু শান্তিপ্রিয় দাইকিচির মতে, “যখন বাকি সবাই যুদ্ধ এবং হত্যায় আগ্রহী, তখন কখনো যুদ্ধ করতে না চাওয়া বা কাউকে হত্যা না করতে চাওয়াটাই প্রকৃত সাহসের ব্যাপার।” দাইকিচিকে লোকে কাপুরষ বললেও গেনের চোখে তার বাবা অত্যন্ত সাহসী একজন মানুষ।
এদিকে ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টিয়ে এসেছে আগস্ট মাস। নাগোয়া, ইয়োকোহামার মতো বড় বড় শহরগুলোতেই মিত্রবাহিনীর বোমা পড়লেও হিরোশিমায় এখনো কিছু হয়নি কেন- এ নিয়ে আলোচনা করে কিমিয়ে আর দাইকিচি। পুরো বিষয়টাই সন্দেহজনক ঠেকে তাদের কাছে।
৬ আগস্ট, ১৯৪৫।
সময় তখন সকাল ৭:৩০ মিনিট।
গেন ব্যাগ গুছিয়ে স্কুলে রওনা দিয়েছে।
শিনজি গেনের বানানো কাঠের নৌকা দিয়ে খেলছে, বাবাকে সে জানায়, বিকালবেলা তারা সেটা নদীতে ভাসাবে।
দাইকিচি জুতার কাজ নিয়ে কেবল বসেছে, কিমিয়ে আর এইকো কাপড় মেলছে।
আর এদিকে ‘লিটল বয়’ বহনকারী এনোলা গে জাপানের আকাশে প্রবেশ করছে, লক্ষ্য হিরোশিমা।
সময় ৮:১৫।
গেন তার এক সহপাঠীর সাথে স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে। আকাশে একটা বিমান দেখা যাচ্ছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সাইরেন বাজেনি। বিষয়টি একটু অদ্ভুত ঠেকলো গেন আর তার বন্ধুর কাছে।
ততক্ষণে আকাশ থেকে লিটল বয় হিরোশিমায় এসে ঠেকেছে।
এরপর শুরু হলো তান্ডব।
মুহুর্তের মধ্যে গলে গেল মানুষ, শিশু, রাস্তার পশু।
ধ্বংস হয়ে গেল বাড়ি-ঘর, দুমড়ে মুচড়ে গেল ট্রাম।
লিটল বয়ের মাশরুমের মতো মেঘের মাঝে বিলীন হয়ে গেল একটা গোটা শহর। আক্রমণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চলচ্চিত্রের এই ১০ মিনিটের সিকোয়েন্স সম্ভবত হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের সবচেয়ে বিস্তারিত উপস্থাপন।
সম্বিত ফিরে পাবার পর গেন দেখে যে তার স্কুল আর নেই, মারা গেছে সাথে থাকা সহপাঠীও।
সে দেখে, পরিচিত শহরটি এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
একটু পরে সে দেখতে পায় সারি সারি মানুষ সদৃশ কিছু জিনিস হেঁটে আসছে টলতে টলতে।
তাদের চামড়া গলে গেছে, কারো বা চোখ কোটরের বাইরে ঝুলছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ মুখ থুবড়ে পড়ে যাচ্ছে।
গেনের মনে হলো সে যেন এক মৃত্যুপুরীতে চলে এসেছে।
খালি পায়ে সে নিজের বাড়ির কাছে দৌড়ে এসে দেখে যে তার বাড়িও মাটিতে মিশে গেছে, আর তার মা কিয়েমি আপ্রাণ চেষ্টা করছেন কিছু একটা তোলার।
ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে গেছে গেনের বাবা দাইকিচি, বোন মেইকো আর ভাই শিনজি।
মায়ের সাথে গেনও উদ্ধারের চেষ্টা করে, কিন্তু দুজনের জন্য তা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। এদিকে আশপাশে লেগে যাওয়া আগুন দ্রুত এগিয়ে আসছে তাদের দিকে। দাইকিচি অনুরোধ করে গেন আর কিয়েমি যেন তাদের ফেলে পালিয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবে কিয়েমি আর গেন তা মানতে রাজি না। দাইকিচি গেনকে আদেশ দেয় কিয়েমি আর তার অনাগত সন্তানকে দেখে রাখতে।
আগুন কাছাকাছি চলে আসলে এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় গেন, মাকে জোর করে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে আনে সে। আগুনে পুড়ে মরে তার ভাই, বোন, বাবা।
সিনেমার ধারভাষ্যকার জানায়, হিরোশিমায় এত বড় আক্রমণ হওয়া সত্ত্বেও দেশবাসীকে তা জানায়নি তৎকালীন জাপানি শাসকগোষ্ঠী। অগ্রাহ্য করা হয় আক্রমণের হুশিয়ারিকেও, যার ফলশ্রুতিতে ‘ফ্যাট ম্যান’ নেমে আসে নাগাসাকিতে।
তখন ৯ আগস্ট, ১৯৪৫।
এদিকে পরিবারকে হারিয়ে কঠিন এক জীবনের সম্মুখীন হয় গেন আর কিয়েমি। নিজেদের আগের বাড়ির স্থানেই কোনোমতে একটা ছাপড়া ঘর বানিয়ে থাকে মা ছেলে। কিয়েমির সন্তান জন্মের দিন ঘনিয়ে আসছে, আর গেন সেই সময়ে খাবারের সন্ধানে রাস্তায় ঘুরতে থাকে।
সেনাবাহিনী খাবার দিচ্ছে- এমনটা শুনে সে তাদের ট্রাকের কাছে তা আসলে ছিল লাশবাহী ট্রাক।
এমন সময়ে কিমিয়ে এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেয়, নাম দেয়া হয় তোমোকো, নামের অর্থ ‘যার অনেক বন্ধু আছে’। এ সময়ে তাদের সাথে পরিচয় হয় রিউতার, রিউতাও তার পরিবারকে বোমা হামলায় হারিয়েছে।
রিউতাকে নিজেদের পরিবারের একজন বানিয়ে ফেলে গেন আর কিয়েমি, যেন তারা রিউতার মাঝে শিনজিকে খুঁজে পেয়েছিল। এদিকে গেনের মাথা থেকে দ্রুত চুল পড়ে যাচ্ছে, তেজস্ক্রিয়তা যে তাকেও স্পর্শ করেছে। আবার খাবারের অভাবে শিশু তোমোকো দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। ছোট বোনের দুধের জোগান দেয়ার জন্য এবার আবারো রাস্তায় নামে গেন, সাথে রিউতা।
এ সময় এক ধনী ব্যক্তি দিনে মাত্র ১০ ইয়েনের চুক্তিতে তার যুদ্ধাহত ভাই সিজিকে সেবা করার কাজ দেয় গেন আর রিউতাকে।
সেইজির সারা শরীরের ক্ষতে পোকা বসেছে, আর সে অত্যন্ত বদমেজাজি। কিন্তু গেন আর রিউতা হাসিমুখে তার ক্ষত পরিষ্কারের কাজ নেয়। তবে একসময় তার ব্যবহারের জন্য তারা কাজ ছেড়ে দিতে চাইলে সেই লোক তাদের না যেতে অনুরোধ করে। কেননা গেন আর রিউতার কাছে সে একজন মানুষের মর্যাদা পা,য় যা সে বহুদিন তার পরিবারের কাছেও পায়নি।
মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে এসে সেইজি তাদের উৎসাহে তুলি ধরে, চিত্রকলায় জীবনের অর্থ ফিরে পায়।
গেন আর রিউজির কাজে খুশি হয়ে সেইজির ভাই তাদের ১০০ ইয়েন দিলে তারা তোমোকোর জন্য বস্তাভর্তি দুধের কৌটা নিয়ে বাড়ি ফেরে। এবার যে আর চিন্তা নেই, তোমোকো ইচ্ছামত খেতে পারবে।
ঘরে ফিরে গেন জানায়, তার বোনের দুধের ব্যবস্থা হয়ে গেছে। মা কিয়েমি শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কৌটাগুলোর দিকে। তার কোলে ছোট্ট তোমোকো, সে আর নড়ছে না।
বড্ড দেরি হয়ে গেছে!
সদা হাস্যোজ্বল গেনও এবার বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। আর একটু দ্রুত আসলেই হয়তো-
সে সময়েই চোখে পড়ে ছোট্ট একটা চারা, তেজস্ক্রিয় মাটিতেও জন্ম নিচ্ছে গম। তার মনে পড়ে যায় তার বাবার কথা, কঠিন মাটিতে, হাজার বৃষ্টির মাঝেও গম বেড়ে ওঠে।
এই ছোট্ট চারাটির মাঝে গেন নতুন করে বেঁচে থাকার উৎসাহিত হয়।
চলচ্চিত্রের শেষে দেখা যায় গেন, কিয়েমি আর রিউতা নদীর ধারে বসে সূর্যাস্ত দেখছে। কোনোমতে বানানো একটা কাঠের নৌকা নিয়ে গেন নদীতে ভাসিয়ে দিচ্ছে, ঠিক যেভাবে শিনজি বলেছিল। নৌকার উপর জ্বলছে ছোট একটা মোমবাতি, নাকাওকা পরিবারের সবাইকে বিদায় জানানোর একটা প্রয়াস।
নতুন দিনের আশায় বুক বেঁধে সেই নৌকার দিকে চেয়ে থাকে গেন, কিয়েমি আর রিউতা।
‘বেয়ারফুট গেন’ এর স্রষ্টা কেইজি নাকাজাওয়ার জীবনটা ছিল গেনের মতোই। লিটল বয়ের কাছে তিনি হারান তার পরিবারকে, গেনের মতোই হিরোশিমার ধ্বংসস্তুপের মাঝে টিকে থাকতে হয়েছিল তার মায়ের সাথে। বড় হবার পর তিনি কমিকের মাঝে তার অভিজ্ঞতা ফুটিয়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু জাপানের কোনো প্রকাশক এই কমিক ছাপাতে রাজি হচ্ছিল না। কেননা এখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার পাশাপাশি জাপান শাসকগোষ্ঠীর তীব্র সমালোচনাও ফুটে উঠেছিল। অবশেষে ১৯৭৩ সালে ছাপা হয় ১০ ভলিউমের কমিকটি। আর ১৯৮৩ সালে মুক্তি পায় চলচ্চিত্রটি।
চলচ্চিত্রটিতে ঘিবলির ন্যায় মসৃণ অ্যানিমেশন ছিলনা, চরিত্রগুলোর ডিজাইনও ছিল ভিন্নরকম। কিন্তু এতে হিরোশিমা হামলার যে দৃশ্যগুলো ছিল তা ছিল যেমন জীবন্ত, তেমনই ভয়ংকর। বাস্তব সিনেমায় হয়তো কোনোদিনই এতটা প্রকটভাবে দেখানো যাবে না, যতটা অ্যানিমেশনে দেখানো সম্ভব। শুধু তা-ই নয়, হামলার সময় যে স্ক্রিন টোন বা কালার স্কিম, সেই সাথে পেছনের ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর- পুরোটাই দৃশ্যটাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
সিনেমার আবহ সঙ্গীতের ব্যবহারও ছিল উপযুক্ত, নৈঃশব্দের ব্যবহার করা হয়েছে যথাযথ।
যুদ্ধবিরোধী বার্তার দিক দিয়ে গ্রেইভ অফ দ্য ফায়ারফ্লাইজের চেয়ে অনেক বেশি সোজাসাপ্টা বেয়ারফুট গেন, ঠিক গেনের মতোই। ঘোর তিমিরের মধ্যেও যে আলো দেখা সম্ভব তারই শিক্ষা দেয় গেন।
১৯৯২ সালে সিনেমাটির ইংরেজি ডাব মুক্তি পায়। বর্তমানে ইউটিউবে চলচ্চিত্রটির জাপানী ও ইংরেজি ডাবিং দুটোই পাওয়া সম্ভব। আইএমডিবিতে এর স্কোর ৮.১, আর রোটেন টমেটোজে ৭১%।
১৯৮৬ সালে এর একটি সিকুয়েল মুক্তি পায়।
শেষ করছি গেনের বাবা দাইকিচির কিছু উক্তি দিয়ে,
তোমরা গম দেখেছো? গমের চারা শীতের সবচেয়ে ঠান্ডা দিনগুলোতে জন্মে, মানুষের পায়ের তলে পিষ্ট হয় বারবার। তারপরও তারা বড় হয়- রোদ, তুষার উপেক্ষা করে, তারপর… তারা ফসল দেয়। তোমরা গমের মতো হও- বলিষ্ঠ, দৃঢ়, হার মেনো না কখনো।
ভালো থাকুক গেনরা।