♫ I don’t wanna die,
I sometimes wish I’d never been born at all. ♬
এইডসের সাথে লড়াইয়ে হার মেনে বিদায় নেওয়া মানুষটি কিন্তু হারিয়ে যাননি পৃথিবীর শত-কোটি সঙ্গীতপ্রেমীর হৃদয় থেকে। ফ্রেডি মার্কারি তার রহস্যময় গান ‘বোহেমিয়ান র্যাপসোডি’র কথাগুলো লিখবার সময় অবশ্য জানতেন না যে, দীর্ঘ জীবনের সৌভাগ্য তার জুটবে না। কিন্তু তার জীবনের অন্যতম সেরা পারফর্মেন্স পঁচাশির ‘লাইভ এইড’ কনসার্টে গাইবার সময় তিনি কি জানতেন যে, তার হাতে সময় আর বেশি নেই? যদি না জেনেই থাকেন, তবে এটাই সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়। কারণ, সেদিন তার গাওয়া বোহেমিয়ান র্যাপসোডির লিরিকগুলো যে অন্য অর্থে ধরা দিয়েছিল; যেন শুনিয়ে দিচ্ছিল সাফল্যের চূড়ায় থাকা ফ্রেডির বিদায়ের ঘণ্টাধ্বনি। ফ্রেডি মার্কারির ২০১৮ সালের বায়োপিক ‘বোহেমিয়ান র্যাপসোডি’ সে অর্থে একদমই সফল- এক নামই যেন তুলে ধরে মুদ্রার দু’পিঠই, একদিকে সফল শিল্পী ফ্রেডির সেরা সৃষ্টি আর অন্যদিকে গায়ক পরিচয়ের আড়ালে ঢাকা পড়া এক পথ হারানো ভবঘুরে ফ্রেডির হাহাকারময় জীবন।
ব্রায়ান সিংগারের পরিচালনায় সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত হলিউড চলচ্চিত্র ‘বোহেমিয়ান র্যাপসোডি’ বাংলাদেশে মুক্তি পায় ৯ নভেম্বর। স্থানীয় এক ব্যান্ডের লিড ভোকালিস্ট হিসেবে যোগ দেওয়া থেকে শুরু করে ১৯৮৫ সালের কনসার্ট পর্যন্ত ফ্রেডি মার্কারির জীবনকে তুলে ধরা হয়েছে এ ছবিতে। স্টার সিনেপ্লেক্সের সৌজন্যে রোর বাংলার পক্ষ থেকে আমাদের সৌভাগ্য হয় ছবিটি মুক্তির আগের দিনই বিশেষ প্রিমিয়ারে দেখে রোরের পাঠকদের জন্য রিভিউ করার।
উনিশশো সত্তর সালের এক রাতে বাবার সাথে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের পর স্থানীয় এক নাইটক্লাবে যান ফ্রেডি। সেখানে পারফর্ম করার পর স্মাইল ব্যান্ডের লিড ভোকালিস্ট তার গান গাইবার ইতি টানেন সে রাতে; সাথে সাথেই ফ্রেডি নিজেকে ভোকালিস্ট হিসেবে নিতে বলেন স্মাইলের দুই সদস্য- ব্রায়ান মে আর রজার টেইলরকে। নিজেকে প্রমাণ করতে গান গেয়ে শুনিয়েও দেন ফ্রেডি, তাজ্জব বনে যান বাকি দুজন। ভোকালিস্ট হিসেবে দলে জায়গা পেতে সময় লাগেনি তাই ফ্রেডির। কিন্তু হিথ্রো বিমানবন্দরের মালামালবাহক থেকে স্থানীয় ব্যান্ডের গায়ক হওয়া- ব্যাপারটা ভালো কিছু মনে হয়নি ফ্রেডির বাবার কাছে। তার স্বপ্ন ছিল, ছেলে আসলেই বড় কিছু করবে। জানজিবার (Zanzibar) নামের তৎকালীন দেশ (এখন তানজানিয়াতে) থেকে পার্সি এই পরিবার পালিয়ে এসেছিল নিজেদের জোরাস্ট্রিয়ান ধর্মপরিচয় রক্ষা করবার জন্য, ব্রিটেনে এসে অন্তত ভালো কিছু করে নিজের পরিচয়টা তো পাকাপোক্ত করুক ছেলেটা! ও হ্যাঁ, তখনও কিন্তু তার নাম মার্কারি না, এমনকি ফ্রেডিও না। তখন তার নাম ফাররোখ বুলসারা।
এরপর সিনেমায় আসে ফ্রেডি যোগ দেওয়ার পর স্মাইল ব্যান্ডের গল্প, ব্রিটেন জুড়ে নানা জায়গায় তাদের শো’র গল্প, নিজেদের প্রথম অ্যালবামের গল্প। তখন অবশ্য ব্যান্ডের নাম বদলে রাখা হয়েছে ‘কুইন’। এরকম সময়ে ফাররোখ নিজের নাম পরিবর্তন করে আইনগতভাবেই নাম রাখেন ফ্রেডি মার্কারি। কাছাকাছি সময়েই তার দেখা হয় মেরি অস্টিনের সাথে, প্রেমে পড়ে যান তার। এই মেরিই তার জীবনের কঠিন সময়গুলোতে ছিলেন সঙ্গী হিসেবে। তবে সেটা কেবলই বন্ধু, নাকি তার চেয়েও বেশি কিছু হিসেবে- সেটি ঠিক করে দেয় সময়ই।
গল্প চলতে থাকে। একসময় ইউএস ট্যুরে এসে ফ্রেডির সন্দেহ হতে থাকে, তিনি কি উভকামী? ১৯৭৫ সালে কুইন তাদের চতুর্থ অ্যালবাম করার সময় ব্রিটেনের ইএমআই রেকর্ডের মালিক রে ফস্টারকে ফ্রেডি কথা দেন, তারা সর্বকালের সেরা গানটি গাইবেন। ব্যাপক সমারোহে নীরব গ্রামাঞ্চলে গিয়ে আলাদা এক কুঠিবাড়িতে শুরু হয় মহাকাব্যিক এ গান লেখা, সুর করা আর গাওয়া। সিনেমার বড় একটা অংশ এ গানের রেকর্ডিং নিয়েই। গানের কথাগুলো কারোরই যেন মাথায় ঢুকছিল না, ফ্রেডি কেন এগুলো লিখেছেন?
যথাসময়ে রে ফস্টারের কাছে গানটি নিয়ে হাজির হয় কুইন, কিন্তু ফস্টারের দাবি ছিল ছয় মিনিটের গান কখনও রেডিওতে শোনানো হবে না। নানা নাটকীয়তার পর একপর্যায়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন কুইনের চার সদস্যই।
এবং এরপর, তুমুল হিট হয়ে যায় ‘বোহেমিয়ান র্যাপসোডি’। আর রেডিওতে সেটি চলে টানা ছয় মিনিটই!
এরকম সময়েই ফ্রেডি তার ব্যক্তিগত ম্যানেজার পল প্রেন্টারের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, ওদিকে শুরু হয় মেরির সাথে টানাপোড়েন। এবং জীবনের নানা বাঁক দেখতে দেখতে ফ্রেডি মার্কারি একসময় বুঝতে পারেন, তিনি হঠাৎই একদম একা।
ব্যান্ড নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়, ফ্রেডির নিজের মধ্যেও দ্বন্দ্ব চলতে থাকে। সবকিছু বুঝে উঠতে না উঠতেই তিনি আবিষ্কার করেন, তিনি এইডসে আক্রান্ত। হাতে কতটুকু সময় আছে আর জানা নেই। এবং এমন সময়েই তিনি জানতে পারলেন, ১৯৮৫ সালের ১৩ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে স্মরণকালের সেরা এক শো, লাইভ এইড কনসার্ট, আফ্রিকার অনাহারী মানুষদের জন্য চ্যারিটি শো হিসেবে অনুষ্ঠিত হবে যেটি। ফ্রেডি কিংবা কুইন কারোরই সেখানে থাকার সম্ভাবনা নেই তখন। কিন্তু ফ্রেডির জন্ম তো ‘লিজেন্ড’ হতে, এভাবে হারিয়ে যেতে নয়। দলছুট ফ্রেডি এত কম সময়ে কীভাবে পারবেন জীবনের সেরা পারফর্মেন্সের জন্য তৈরি হতে?
পুরো সিনেমার মূল আকর্ষণ আসলে এই শেষের আধা ঘণ্টা। নির্মাতারা এতটাই চমৎকারভাবে ফ্রেডির হতাশা থেকে উঠে এসে সেরাটা উপহার দেওয়াকে ফুটিয়ে তুলেছেন, একে মাস্টারপিস বললেও আসলে কম বলা হবে! এই দৃশ্য সিনেমা হলে বসে নিজে না দেখলে বিশ্বাস করাই কঠিন। সিনেমাটি দেখবার আগে কারও যদি সেই ১৯৮৫ সালের লাইভ এইড কনসার্টের কুইনের পারফরমেন্স ক্লিপ দেখা থাকে, তাহলে তিনি বুঝবেন, কী প্রচণ্ড খাটুনি নির্মাতারা করেছেন এই সিনেমার জন্য! প্রায় দুই বিলিয়ন মানুষ সরাসরি দেখেছিল এ কনসার্ট, যা কিনা তখনকার বিশ্ব জনসংখ্যার ৪০%! এবং এত মানুষের মন মাতানো সেই সুনিপুণ পারফর্মেন্সের গল্পই এই বোহেমিয়ান র্যাপসোডি!
মালেকের অভিনয়ে ফ্রেডির অসামান্য মুভগুলোর দুর্দান্ত চিত্রায়ন তো বটেই, একটি উদাহরণ থেকে বোঝা যাবে, সিনেমায় কতটা নিখুঁত করার চেষ্টা করা হয়েছে এই কনসার্টটি। খেয়াল করে দেখুন নিচের ছবিতে, পিয়ানোর ওপরের পানীয়র গ্লাসগুলোও একদম অবিকলভাবে দেখিয়েছেন নির্মাতারা!
র্যামি মালেক যে তেজস্বী আর একরোখা অভিনয়টা উপহার দিয়েছেন পুরো সময়জুড়ে, তার তুলনা নেই। মালেক এ অভিনয়ের জন্য অস্কার মনোনয়ন পেয়ে গেলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না। শারীরিক অবয়বে সামান্য এদিক-ওদিক ছাড়া পুরো সিনেমা জুড়ে তাকে র্যামি মালেক মনে হয়নি, মনে হচ্ছিল ফ্রেডিই; স্টেজ পারফর্মেন্সে তাকে দেখে মনে হচ্ছিল, এ কীভাবে সম্ভব!। মেরি অস্টিন চরিত্রে লুসি বয়ন্টন অবশ্য অসাধারণ কোনো অভিনয় দেননি, স্বাভাবিকই ছিলেন। তবে একই কথা ব্যান্ডের বাকি সদস্যদের নিয়ে বলা যাবে না। লিড গিটারিস্ট ব্রায়ান মে’র চরিত্রে গিলাইম লি, ড্রামার রজার টেইলরের চরিত্রে বের হার্ডি, আর জন ডিকন হিসেবে জোসেফ মাজেলো মিশে গিয়েছিলেন নিজেদের চরিত্রের সাথে পুরোপুরি। তাদের তিনজনকে দেখে সত্যিকারের কুইন ব্যান্ডের কথাই মনে হচ্ছিল বারবার।
গানের কথায় আসা যাক, ফ্রেডি মার্কারির চরিত্রে র্যামি মালেক থাকলেও গানগুলো তো আর তার গলায় ছিল না, অন্তত পুরোপুরি না! হ্যাঁ, তিনি গান গেয়েছিলেন, তবে তার কণ্ঠস্বরের উপর বসানো হয় ফ্রেডি মার্কারির স্বর। আর তা নেওয়া হয়েছে কুইনের মাস্টার টেপ থেকে, যার সাথে ‘লিপ সিংক’ করেন র্যামি। তবে কিছু ভোকাল, যেগুলো মাস্টার টেপ থেকে নেওয়া যায়নি, সেগুলো দিয়েছেন কানাডিয়ান গায়ক মার্ক মার্টেল, তাছাড়াও ফ্রেডির গাওয়া কিছু অংশেও তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন। পুরো মুভিজুড়ে কুইনের বিখ্যাত ১৬টি গান রয়েছে, যার সাথে ছিল অনস্ক্রিন লিরিক, আপনার মনে হবে যেন আপনি মিউজিক ভিডিওই দেখছেন সে সময়গুলোতে, কোনো মুভি নয়। সিনেমাটির চমৎকার একটি বিষয় হলো, কোন গান আসলে ফ্রেডির কোন মানসিক অবস্থায় লেখা হয়েছিল কিংবা পারফর্ম করা হয়েছিল সেটা কেবল মিউজিক ভিডিও দেখে যেমন জানা বা বোঝা যায় না; সিনেমায় তেমন নয়। মুভিটি দেখবার সময় দর্শক অনুভব করতে পারবেন ফ্রেডির মনের অবস্থা কখন কেমন ছিল! যেমন, I Want to Break Free গানটির মিউজিক ভিডিওতে আমরা দেখতে পাই ব্যান্ড সদস্যরা নারীরূপ নিয়ে অভিনয় করছেন, কিন্তু সেটা থেকে আমরা বুঝতে পারি না ফ্রেডি তখন কীসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন, কিংবা এ ভিডিও বেরুনোর ঠিক আগে বা পরে কী হয়েছিল। বোহেমিয়ান র্যাপসোডি মুভিটি অন্তত আপনাকে সে সুযোগটা দেবে। বলা যায়- একটি চমৎকার সিনেমাটোগ্রাফিসমৃদ্ধ মুভি, সাথে ছোট বড় ১৬টি মিউজিক ভিডিও, যেন পরপার থেকে আবার নতুন করে পারফর্মেন্স উপহার দিয়ে চলেছেন ফ্রেডি মার্কারি!
মুভিটির নাম বোহেমিয়ান র্যাপসোডি রাখা হলো কেন? আসলে, এটি এমন একটি গান যা সেই পঁচাত্তর সাল থেকেই দর্শকদের কাছে রহস্যময়, কেউই নিশ্চিত করে জানেন না আসলে এর অর্থ কী। ফ্রেডি বেশ সময় নিয়েই এর লিরিক লিখেছিলেন, কিন্তু কোনোদিনই ব্যাখ্যা করেননি তিনি এতে কী বোঝাতে চেয়েছিলেন। এ গান লিখবার সময়ই ফ্রেডি তার জীবনের একটি অধ্যায় বুঝতে পেরেছিলেন। আর তা হলো, তিনি আসলে স্ট্রেইট বা বিষমকামী নন, উভকামী। Mama, I just killed a man– ফ্রেডি তার পূর্বসত্ত্বাকে হত্যা করলেন; Put a gun against his head, pulled my trigger, now he’s dead– নিজের হাতে তার আগের সত্ত্বাকে বিদায় দিলেন, মেনে নিলেন তার নতুন সত্ত্বাকে। মুভির প্রায় পুরোটা জুড়ে রয়েছে এমন মর্মবেদনার প্রতিধ্বনি। মেরি, জিম হাটন কিংবা ব্যান্ড সদস্যদের সাথে সম্পর্কগুলো তাকে নানা স্মৃতিতে জড়ায়, যার সবগুলোর অর্থ হয়তো তার কাছে একেক সময় একেকরকম করে ধরা দেয়। যখন এক বৃষ্টিভেজা রাতে মেরি অস্টিন মিউনিখের দুঃখভারাক্রান্ত ফ্রেডিকে খুঁজে বের করে, এক ঝলকের জন্য মনে হয় ফ্রেডির- যেন পুরনো জীবনের এক টুকরো স্মৃতি ফিরে এসেছে আবছায়া হয়ে- I see a little silhouette of a man। বোহেমিয়ান মানে ভবঘুরে, আর র্যাপসোডি হলো মহাকাব্য। এই একটি গানই তার ভবঘুরে জীবনের নির্মম হাহাকার ছয় মিনিটেই তুলে ধরে, যে হাহাকার তিনি পারতেন না কাউকে শোনাতে। আবার এই এক গানই তার জীবনটা বদলে দেয়, তাকে নিয়ে যায় সাফল্যের তুঙ্গে। আসলেই, বোহেমিয়ান র্যাপসোডি ছাড়া অন্য কোনো নামই এর চেয়ে পরিপূর্ণ হতে পারত না মুভির টাইটেল হিসেবে।
মুভির অন্যান্য অংশে সিজিআই এর ব্যবহার কম থাকলেও, শেষ ২০ মিনিটের কনসার্ট দৃশ্যতে ব্যবহার করা হয়েছে চোখ ধাঁধানো নিখুঁত সিজিআই। পুরো স্টেডিয়াম ভর্তি মানুষ দেখালেও, বাস্তবে আসলে তেমন কিছুই ছিল না- তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ৫২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে বানানো হয় অসাধারণ এ মুভিটি। মজার ব্যাপার, ফ্রেডির চরিত্রে আগে অভিনয়ের কথা ছিল ‘ডিক্টেটর’খ্যাত অভিনেতা সাশা ব্যারন কোহেনের, কিন্তু নানা কারণে সেটি আর হয়নি।
বাংলাদেশে ছবিটির প্রিমিয়ারে বিশেষ আয়োজন করা হয় ঢাকার বসুন্ধরা সিটির সিনেপ্লেক্সে, স্টার লাউঞ্জে ৮ নভেম্বরের বর্ণিল সন্ধ্যায় আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য ছিল এই সময়ের দুই বিখ্যাত শিল্পী রাফা আর জেফারের কণ্ঠে কুইনের গানগুলোর কাভার। আর এরপর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য প্রদর্শিত হয় বোহেমিয়ান র্যাপসোডি।
তবে মুভিটি যে পুরোপুরি নির্ভুল সত্যি ঘটনা নিয়ে, তা কিন্তু নয়। ড্রামাটিক করে তোলার জন্য কিছু কাল্পনিক ঘটনার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে, তাই পুরোপুরি ঐতিহাসিক বলা চলে না একে। যেমন, ১৯৮৫ সালের কনসার্টের সময় ফ্রেডি জানতেনই না যে, তার এইডস আছে। কিন্তু মুভিতে সেটা দেখানোর কারণে পঁচাশির কনসার্টের অর্থই হয়তো বদলে যাবে দর্শকের কাছে, ড্রামাটিক ইফেক্টের জন্য সেটা অবশ্য জরুরি ছিল। তারপর ধরুন, স্মাইল ব্যান্ডে এত সহজে কিন্তু লিড ভোকালিস্ট হিসেবে জায়গা পাননি ফ্রেডি, যেমন দেখানো হয়েছে এখানে! তাছাড়া ব্যান্ড সদস্যদের সাথে সিনেমার মতো অমন বাদানুবাদও হয়নি ফ্রেডির। সিনেমায় যে ভদ্রলোক কুইনের বোহেমিয়ান র্যাপসোডি ছাড়তে চাননি, সেই রে ফস্টার নামে কেউ ছিলই না আসলে; যার আদলে এ চরিত্র বানানো হয়েছে তার নাম ছিল রয় ফেদারস্টোন, তবে হ্যাঁ, তিনি আসলেই বোহেমিয়ান র্যাপসোডি প্রকাশ করতে চাননি। ছবিতে যদিও মেরি ছাড়া পরবর্তীতে ফ্রেডির আর কোনো প্রেমিকা দেখানো হয়নি, কেবল প্রেমিক দেখানো হয়েছে- আসলে ঘটনা তা না; তার জীবনে পরবর্তীতে আরও অনেক নারীই এসেছিলেন, জার্মান অভিনেত্রী বারবারা ভ্যালেন্টিন তার মধ্যে অন্যতম। আর বাস্তব জীবনের জিম হাটনকে মুভির মতো এত নাটকীয়ভাবে খুঁজে পাননি ফ্রেডি, বরং তার সাথে এক নাইটক্লাবে দেখা হয়, জিম ছিলেন একজন হেয়ারড্রেসার। তবে ফ্রেডির জীবনসঙ্গীদের কেউই আসলে মেরি অস্টিনের মতো জায়গা নিতে পারেনি তার জীবনে। ১৯৯১ সালে মারা যাবার পর ফ্রেডির দেহভস্ম কোথায় রাখা হয় বা কী করা হয়, তা একমাত্র মেরি অস্টিন ছাড়া আর কেউ জানেন না।
আইএমডিবিতে বর্তমানে ছবিটির রেটিং ১০ এ ৮.৪। ক্রিটিকেরা অনেকেই বলছেন মুভিটি ভালো হয়নি, কিন্তু সে কথা তো ১৯৭৫ সালে বোহেমিয়ান র্যাপসডি গানের ব্যাপারেও বলেছিলেন তারা। সমালোচকেরা যে যা-ই বলুন, ফ্রেডি মার্কারির বোহেমিয়ান জীবনের আস্বাদ পেতে, উপভোগ করতে, অভিভূত হতে মুভিটি নিজেই দেখে আসা ছাড়া উপায় নেই! স্টার সিনেপ্লেক্সে ৯ নভেম্বর থেকে চলছে ফ্রেডি মার্কারির এক ভবঘুরে জীবনের ইতিকথা ‘বোহেমিয়ান র্যাপসোডি’। দেখে আসুন, শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ এই কিংবদন্তী রকস্টারের জীবনটা আসলে কেমন ছিল!
♫ Is this the real life? Is this just fantasy?
Caught in a landslide, no escape from reality ♬
সিনেমাটির ট্রেইলার:
বোহেমিয়ান র্যাপসডি মিউজিক ভিডিওটি:
বোহেমিয়ান র্যাপসডি গানটি নিয়ে পড়ুন আমাদের লেখা: বোহেমিয়ান র্যাপসডি: যে গানের মর্ম আজও মানুষের অজানা