Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অ্যাডভেঞ্চারে ভরা চাঁদের পাহাড়

চাঁদের বুকে পাহাড় আছে আমরা জানি, কিন্তু এটা জানি কি পৃথিবীর বুকেও আছে চাঁদের পাহাড় আছে? যেখানে গেলে মিলবে…। কী মিলবে? চলুন তাহলে জেনে নিই কী মিলবে অথবা মিলেছে।

ডিয়াগো এলভারেজ ১৮৮৮-৯০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় আসে সোনার খনি খুঁজতে। অন্যদিকে, সৌভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্যক্রমে সে পেয়ে যায় রূপোর খনি। যদিও তখন সে জানত না এটা রূপোর খনি। একসময় তার সাথে দেখা হলো জিম কার্টার নামের আরেক যাযাবর মানুষের। দুজন অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষ মিলে গেলে যা হয়, এই দুজন মিলে আফ্রিকার জঙ্গলে নিজেদের পদচিহ্ন রেখে যেতে লাগল।

অরেঞ্জ নামের এক নদী পার হয়ে, প্রায় ৪০ মাইল দূরের এক কাফির সম্প্রদায়ের বস্তিতে পৌঁছালো জিম-এলভারেজ। সেখানে মোড়ল গোছের এক লোকের বাচ্চা মেয়ে সারিয়ে তোলার জন্য পায় এক ধোঁয়াঢাকা পাহাড়ের সন্ধান। এক চাঁদের পাহাড়ের সন্ধান। সেখানে মিলবে শুভ্র সফেদ চাঁদের টুকরো। আসলেই কি তা-ই? সেই বস্তিবাসীর মতো অনেকে সেই পাহাড়ের উদ্দেশ্যে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। বুনিপ নামের দেবতার বাস সেখানে। তার ভয়ে অনেকে সেখানে পা রাখতে চায় না, কারণ, সেখানে গেলে কেউ ফিরে আসে না।

অন্যদিকে, এক চাঁদের মধ্যে চাঁদের পাহাড়ে পৌঁছে যাবার কথা। সেখানে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো জিম-এলভারেজ।

বইয়ের প্রচ্ছদ; Image: Amazon India

ফিরে যাচ্ছি আরো দশ বছর পেছনে। ১৮৭৯ সাল। আত্তিলিও গাত্তি নামের ইতালিয়ান সম্ভ্রান্ত যুবক পশ্চিম আফ্রিকার জঙ্গলে গিয়ে হারিয়ে যায়। তারও লক্ষ্য ছিল সেই চাঁদের পাহাড়। এদিকে বছরের পর বছর তার পরিবার খুঁজে চলেছে তাকে। 

১৯০৯ সাল। এফ এ পাস করা শঙ্কর, ভূগোলপ্রেমী এই যুবক ফুটবলে যেমন পারদর্শী, তেমনি সাঁতার কিংবা বক্সিং রিংয়ে তার সমকক্ষ সেই সময়ে কেউ ছিলই না। পাস করে গ্রামে ফিরে আসার পর বাবার শারীরিক অসুস্থতার জন্য তাকে পাটকলের চাকরি নিতে হলো, যেখানে তার স্বপ্ন দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ানোর। অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় কোনো যুবককে তার অ্যাডভেঞ্চারের স্বপ্ন থেকে টেনে পাটকলে নামিয়ে দেয়া হলে, তার মনের অবস্থা কী হতে পারে?

শঙ্করের অনেক বইয়ের মধ্যে প্রিয় বই বল হাউপ্টমানের লেখা ‘দ্য মাউন্টেন অব দ্য মুন’। সে পড়ে আর ভাবে, যদি যেতে পারত!

একদিন সে স্বপ্ন দেখে যে, দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে আফ্রিকা অথবা মাউন্টেন অভ দ্য মুনে। ভোরে দেখা সেই স্বপ্ন, ভোরের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়, ভাবলো শঙ্কর। একদিন সৌভাগ্য এসে উঁকি দিল শঙ্করের জীবনে। ভোরবেলার স্বপ্ন আসলেই যেন সত্যি হতে শুরু করল, সুযোগ এলো আফ্রিকায় যাবার। রেলের চাকরি নিয়ে বাংলাদেশ থেকে সেই সুদূর আফ্রিকার মোম্বাসায়। একেই বোধহয় ভাগ্য বলে।

নানা ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন শঙ্করের জীবনে একদিন এসে গেল অদ্ভুত এক পরিবর্তন। একদিন তার সাথে এলভারেজের দেখা হলো। দুজনের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠল বাবা-ছেলের মতন। দুজন মিলে চলল চাঁদের পাহাড়ের উদ্দেশ্যে। নানা বাঁধা-বিপত্তি, ভয়ঙ্কর সব প্রাণী সহ নানা রকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছিল এই দু’জন। 

একসময় শঙ্করের সাথে দেখা হল আত্তিলিওর। কিন্তু, যে চাঁদের পাহাড়ের জন্য এত কষ্ট, খেয়ে না খেয়ে থাকা, এত পরিশ্রম, এত বাঁধা-বিপত্তি, তারা কেউ কি পেরেছিল সেই চাঁদের পাহাড়ে পৌঁছাতে?

বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়; Image Source: Sahos24.com

পাঠ প্রতিক্রিয়া

বইটির নাম ছোটবেলা থেকে শুনে থাকলেও পড়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ওঠার পর বইটি পড়ি। আমার মনে হয়েছিল, আফ্রিকা অভিযানে আমি আছি, শঙ্কর নয়। মনে হচ্ছিল, সেই বিষাক্ত সাপ কিংবা হিংস্র বাঘ আমাকেই কামড়ে দেবে। আত্তিলিও আর এলভারেজ- এই দুজন মানুষকে খুব আপন মনে হচ্ছিল।

এখনও আবার বইটা চট করেই পড়ে ফেলেছি, রিভিউ লেখার আগে। এই বইয়ের অডিও বুক শুনেছি বহুবার। বারবার পড়েও তৃপ্ত হইনি। প্রতিবার মনে হয়, নতুন করে পড়ছি। শত বছর আগের এই বই এখনও এত নতুনের মতো মনে হবে যেন কেবল লেখা।

প্রতিটি লাইন মনে করিয়ে দিচ্ছিল, আমি ঢাকায় বসে নেই, বন্দুক হাতে আফ্রিকাতে ছুটে বেড়াচ্ছি চাঁদের পাহাড়ের খোঁজে। কোনো ইংরেজি বই এর অনুকরণে লেখা নয় এই বই, শুদ্ধ বাংলা সাহিত্যে এরকম হাতে গোনা বেশ কয়েকটি অ্যাডভেঞ্চার গল্প আছে, যার মধ্যে প্রথমেই আমি এই বইটিকে রাখব। 

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় আর সত্যজিত রায়, তাদের লেখার মতো লেখা আর পাব কি না জানি না। আফ্রিকাতে না গিয়েও আফ্রিকার জঙ্গলের এত সুন্দর নিখুঁত বর্ণনা আমরা নিজেরা গিয়ে ঘুরে এসেও বোধহয় দিতে পারব না। 

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তার অপু ট্রিলজীর জন্য যেভাবে স্মরণীয়, ঠিক সেরকম স্মরণীয় থাকবেন, অ্যাডভেঞ্চার গল্পের পথিকৃৎ হিসেবে। এরকম লেখকদের বইকে রেটিংয়ের সাহস দেখানো দুঃসাধ্য ছাড়া আর কিছুই নয়। এই বইটি না পড়ে থাকলে, অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষ হলে দেরি না করে আজই পড়ে ফেলুন। 

বইয়ের নাম: চাঁদের পাহাড়  || লেখক: বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়

প্রকাশক: মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড || অনলাইন প্রাপ্তিস্থান: রকমারি.কম

This is a Bangla article. This is a review on a famous fiction named 'Chader Pahar' written by Bibhutibhushan Bandyopadhyay.

Featured Image: Amazon India

RB/AC

Related Articles