সুপারহিরো জগতে স্পাইডার-ম্যানের জনপ্রিয়তা সর্বজনবিদিত, যার কদর সবখানেই সমান মাপে রয়েছে। শুধু মার্ভেল কমিকসই নয়, বরং সুপারহিরোদের ইতিহাসে ব্যাটম্যান, সুপারম্যানদের সাথে শীর্ষ জনপ্রিয় চরিত্র হিসেবে স্পাইডার-ম্যান তার স্থান অনায়াসে দখল করে নেবে। কমিক-বুক রাইটার স্ট্যানলির অমর এই সৃষ্টি সর্বপ্রথম কমিকে আসে ১৯৬২ সালের আগস্ট মাসে, অ্যান্থলজি কমিক বই ‘Amazing Fantasy’ এর ১৫ নম্বর ইস্যুতে। এরপর দিন গড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে এই মাকড়সা-মানবের জনপ্রিয়তা গিয়ে ঠেকেছে আকাশে। গল্পের সৌন্দর্যবর্ধনে নানা সময়ে স্পাইডার-ম্যানের ভিন্ন ভিন্ন সংস্করণ পাঠকদের কাছে উপস্থাপন করেছেন লেখকেরা, পরিবর্তন করেছেন স্পাইডির শক্তিমত্তার স্তর। এই পর্যন্ত স্পাইডার-ম্যানের যত সংস্করণ এসেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হলো ‘ক্যাপ্টেন ইউনিভার্স‘ বা ‘কসমিক স্পাইডার-ম্যান‘।
কসমিক স্পাইডার-ম্যানের অরিজিন জানার আগে জানতে হবে- ক্যাপ্টেন ইউনিভার্স কে? ইউনি-পাওয়ার এবং এনিগমা ফোর্স কী জিনিস?
- ক্যাপ্টেন ইউনিভার্স: ক্যাপ্টেন ইউনিভার্স চিরাচরিত ধারার কোনো সুপারহিরো ব্যক্তিবিশেষ নয়, বরং একে বলা যেতে এক মহাজাগতিক শক্তি। সে হলো মারভেল ইউনিভার্সের ইটার্নিটির অভিভাবক এবং রক্ষাকর্তা।
- ইউনি-পাওয়ার: ইউনি-পাওয়ার হলো মারভেল ইউনিভার্সের এক মহাজাগতিক শক্তি যা ক্যাপ্টেন ইউনিভার্স ধারণ করে থাকে। আর এই ইউনি-পাওয়ার যে হোস্ট বা সত্তার ভেতর ঢোকে, তাকে ক্যাপ্টেন ইউনিভার্স বলে গণ্য করা হয়। ইউনি-পাওয়ার সবার প্রথমে হোস্টকে ভালোভাবে পরখ করে নেয়, ওই সত্তা মহাজাগতিক শক্তি ব্যবহারের যোগ্য কি না। যদি হোস্ট এই শক্তি ক্রমশ নিজ ফায়দা হাসিল এবং খারাপ কাজে ব্যবহার করতে থাকে, তাহলে ইউনি-পাওয়ার তাকে ছেড়ে চলে যায়। এজন্য ইউনি-পাওয়ার সর্বদা শুদ্ধচিত্তের এক সত্তাকেই বেছে নিয়ে তাকে অফুরন্ত মহাজাগতিক শক্তি প্রদান করে। যখনই ইউনিভার্সে কোনো মহাবিপদের আশঙ্কা দেখা দেয়, তখনই ইউনি-পাওয়ার উপযুক্ত সত্তাকে ক্যাপ্টেন ইউনিভার্স হিসেবে বেছে নেয়।
- এনিগমা ফোর্স: এনিগমা ফোর্সের কার্যক্ষমতা সম্পর্কে তেমন পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায় না। তবে কারও কারও মতে, এটা হলো এক গুপ্ত শক্তির আধার, যা মাইক্রোভার্সকে পরিপূর্ণ করে রাখে। এনিগমা ফোর্স ইউনি-পাওয়ারের সাথে যুক্ত থাকলেও, দুটো এক জিনিস নয়। বরং, ইউনি-পাওয়ার হলো এনিগমা ফোর্সের ক্ষুদ্র একটি অংশ।
অরিজিন
‘Act of Vengeance: Avengers’ কমিকের স্টোরিলাইনে দেখা যায়, লোকি অ্যাভেঞ্জারসকে হারানোর জন্য বড় বড় সুপারভিলেনদের নিজের দলে টেনে নেয়। লোকি ছাড়াও ওই দলের সদস্য ছিল ডক্টর ডুম, কিংপিন, ম্যাগ্নেটো, রেডস্কাল, ম্যান্ডারিনের মতো সুপারভিলেনেরা। কিন্তু দলের সদস্যদের মাঝে মতের ভিন্নতা থাকায়, তারা নিজেদের মধ্যেই কোন্দল শুরু করে দেয়। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে লোকি আর তার দলকে হারায় অ্যাভেঞ্জারসরা।
তবে ধূর্ত লোকি এত সহজে দমে যাওয়ার পাত্র নয়। সে তার ম্যাজিকের মাধ্যমে তিন সেন্টিনেলের মেলবন্ধনে এক ট্রাই-সেন্টিনেল তৈরি করে, যারা নিউ ইয়র্ক শহরে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর জন্য প্রস্তুত হয়। সেন্টিনেলরা কতটা শক্তিশালী এবং ভয়ানক হতে পারে, তা ২০১৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘X-Men: Days of Future Past’ মুভিতেই দেখা গেছে। কমিকসে বর্ণিত সেন্টিনেলরা সিনেমা থেকেও অধিক দুর্ধর্ষ এবং শক্তিধর।
ট্রাই-সেন্টিনেল নিউইয়র্ক শহরে সবে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করতে যাবে, অমনি ওখানে স্পাইডার-ম্যান এসে হাজির। কিন্তু এই সাধারণ স্পাইডার-ম্যানের শক্তি দিয়ে ট্রাই-সেন্টিনেলদের হারানো ছিল পুরোপুরি অসম্ভব এক কাজ। হঠাৎ করেই স্পাইডার-ম্যানের ভেতর ইউনি-পাওয়ারের আবির্ভাব হলে, সে অসম্ভব শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ইউনি-পাওয়ারের একটা বিশেষত্ব হলো, সে পূর্বে যার যার শরীরে প্রবেশ করেছিল, তার অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা, শক্তিমত্তা এবং ক্ষমতা নিজের মধ্যে ধারণা করে। অর্থাৎ পরবর্তী হোস্ট পূর্বে হওয়া ক্যাপ্টেন ইউনিভার্সদের সকল শক্তি ও ক্ষমতাই নিজের মধ্যে পাবে। স্পাইডার-ম্যান হয় ক্যাপ্টেন ইউনিভার্সে পরিণত হবার ফলে নিজের মধ্যে ধারণ করে ফেলে অফুরন্ত সকল মহাজাগতিক শক্তির সম্ভার। ফলে স্পাইডার- ম্যান এক চুটকিতেই কাবু করে ফেলে ট্রাই-সেন্টিনেলকে।
আবার দ্য স্পেক্টিকুলার স্পাইডারম্যান কমিকের ১৫৮ নাম্বার ইস্যুতে এসেছে, যখন এম্পায়ার ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ম্যাক্স লুবিশ তার গবেষণাগারে অতি-মাত্রিক শক্তির উৎস নিয়ে কাজ করছিলেন, সেখানে পিটার পার্কার উপস্থিত ছিল। হঠাৎ একটা মেশিন ওভার-লোড হয়ে গেলে তাতে বিস্ফোরণের মাধ্যমে এনিগমা ফোর্স চারিপাশে ছড়িয়ে পড়ে।
স্পাইডারম্যান তার স্পাইডি সেন্স দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটার কাহিনি আগে থেকে আন্দাজ করতে পারলেও, প্রফেসরকে বাঁচাতে গিয়ে এনিগমা ফোর্স তার শরীরে ঢুকে যায়। পরবর্তীতে সেটাই তার শরীরে ইউনি-পাওয়ারে রূপান্তরিত হয়। ফলশ্রুতিতে সে হয়ে ওঠে কসমিক স্পাইডারম্যান। স্পাইডার-ম্যানের পাশাপাশি আরও অনেক মারভেল সুপারহিরো চরিত্র ক্যাপ্টেন ইউনিভার্স হয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইনভিসিবল ওমেন, সিলভার সার্ফার, ডেয়ারডেভিল, এক্স-২৩, ডেডপুল, এমনকি হাল্ক, ডক্টর স্ট্রেঞ্জ ইত্যাদি।
শক্তিমত্তা
স্বাভাবিক ও সাধারণ স্পাইডার-ম্যানের শক্তিমত্তা মোটামুটি ভালোই বলা চলে। সিনেমায় বিশাল ক্রেনের ওজন একা বহন করা, ব্রেক-ফেল হওয়া মেট্রোরেল থামানো ইত্যাদি দুঃসাধ্য কাজ করতে দেখা গেছে। সেই হিসেবে ইউনি-পাওয়ারের দরুন কসমিক স্পাইডারের ক্ষমতা চলে যাবে ধরাছোঁয়ার বাইরে, তা বলাই বাহুল্য। কসমিক স্পাইডার-ম্যানের ক্ষমতাগুলো হলো,
ইউনি-ভিশন
এটা হলো একপ্রকার মহাজাগতিক চেতনা, যার দ্বারা কসমিক স্পাইডারম্যান যোজন যোজন আলোক-বর্ষ দূর থেকেও একটা পরমাণুর গতিবিধি পর্যন্ত আঁচ করতে পারে।
সুপারহিউম্যান ভিশন এবং হেয়ারিং
কসমিক স্পাইডার-ম্যানের দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি সাধারণ অকল্পনীয়। সে হাজার মাইল দূর থেকে একটা জিনিসকে দেখা ও তার ফিসফিসানি পর্যন্ত শুনতে পারে।
এনার্জি/ম্যাটার ম্যানিপুলেশন
কসমিক স্পাইডারম্যান যেকোনো শক্তিকে এক রূপ থেকে অন্য রূপে পরিবর্তন করার সক্ষমতা রাখে। অভিকর্ষের বিরুদ্ধে গিয়ে যেকোনো জিনিস উড়ানো তার কাছে কোনো ব্যাপারই নয়। সে বিশালাকৃতির কোনো বস্তুকে চোখের পলকে পরমাণুর আকার দিতে পারে।
মহাজগতে অবস্থিত চার ধরনের মৌলিক বলের (অভিকর্ষ, তড়িৎ চুম্বকীয়, সবল নিউক্লিয়, দুর্বল নিউক্লিয়) উপরেই নিয়ন্ত্রণ ছিল কসমিক স্পাইডার-ম্যানের। কোনো বস্তুর অণু-পরমাণুর স্থান সংস্কারের মাধ্যমে সে বস্তুর আকার পরিবর্তন করতে পারত। এমনকি সে শূন্য হাতেই এমন শক্তি নির্গত করতে পারত, যা আস্ত একটা গ্রহকে ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। তার হাত থেকে ছোড়া জাল অ্যাডামান্টিয়ামে রূপান্তরিত হয়ে যেত, যা মারভেল ইউনিভার্সের সবচেয়ে শক্তিশালী ধাতুগুলোর মধ্যে অন্যতম।
ফ্লাইট
মজার ব্যাপার হলো, এনার্জি ম্যানিপুলেশনের দরুন কসমিক স্পাইডি উড়তে পারার ক্ষমতাও অর্জন করেছে। সে বহু সুপারহিরোকে কয়েক মিনিটের মধ্যেই পৃথিবী থেকে মহাশূন্যে রেখে এসেছিল।
গড লেভেল স্ট্যামিনা
এই স্পাইডার-ম্যানকে কখনো ক্লান্তি কাবু করতে পারত না। তার শরীরে কোনো ঘাম বা চাপও তৈরি হতো না। দুশমনদের ছাতুপেটা করার সাথে সাথে সে দীর্ঘসময় পূর্ণ শক্তিতে লড়ে যেতে পারত। একবার সে অর্ধডুবন্ত আস্ত এক জাহাজ একা শহরে তুলে এনেছিল। এই শক্তির সাহায্যে সে ড্রাগনম্যান নামে এক শক্তিশালী অ্যান্ড্রয়েডকে হারিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, কসমিক স্পাইডার গ্রে হাল্ক এবং থরকে এমন এক ঘুষি দিয়েছিল, যার ফলে দুজনই পৃথিবী থেকে ছিটকে সোজা মহাকাশে গিয়ে পড়ে।
লিমিটলেস ইনভালনেরাবিলিটি
ইউনি-পাওয়ার লাভ করার পর পিটারের ত্বক হয়ে উঠে চরম মাত্রায় দুর্ভেদ্য। মহাজগতের অতল গভীরে ওই দুর্ভেদ্য ত্বক নিয়ে সে অনায়াসে ভ্রমণ করতে পারত। কোনো শারীরিক আঘাত তাকে ছুঁতে পারত না। কসমিক স্পাইডি কৃষ্ণ গহ্বর এবং সুপারনোভার চাপ সহ্য করেও টিকে থাকতে পারত অনায়াসে। ইউনি-পাওয়ার তাকে প্রচণ্ড তাপমাত্রার সহ্য করার ক্ষমতাও প্রদান করেছে।
কসমিক সেলফ-সাস্টেনেন্স
কসমিক স্পাইডার-ম্যানের শ্বাস-প্রশ্বাস বা খাবার-দাবারের দরকার পড়ত না। ত্বক দিয়েই বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় মহাজাগতিক শক্তি সে শোষণ করে নিত।
হাইপারস্পেস ট্রাভেল
কসমিক স্পাইডারম্যান আলোর ৯৯% গতিতে ছুটতে পারত। সংখ্যার হিসেবে যা প্রতি সেকেন্ডে ২৯৯,৭৯২ কিলোমিটার।
সবকিছু বিবেচনায় কসমিক স্পাইডার-ম্যানই হলো স্পাইডার-ম্যানের সবচেয়ে শক্তিশালী সংস্করণ। মারভেল তাকে কোনোদিন রূপালি পর্দায় আনলে তা নেহাতই মন্দ হবে না।