কমিকবুক সুপারহিরোদের মধ্যে ডেয়ারডেভিল বেশ পরিচিত একটি নাম। সকলের পরিচিত স্ট্যান-লি এবং বিল এভারেট চরিত্রটি সৃষ্টি করেছিলেন প্রায় ছয় দশক আগে। কিন্তু ডেয়ারডেভিলের জনপ্রিয়তার পেছনে অন্যতম ভূমিকা ছিল জ্যাক কারবি এবং বিখ্যাত লেখক ফ্র্যাঙ্ক মিলারের। মূলত আশির দশকে ডেয়ারডেভিলকে নিয়ে ফ্র্যাঙ্ক মিলারের করা কাজগুলোই এই চরিত্রকে এক ভিন্ন উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। আর সেই থেকেই লাইভ অ্যাকশন বিনোদন জগতেও ডেয়ারডেভিলকে নিয়ে কাজ করার আগ্রহ শুরু হয়। কিন্তু লাইভ অ্যাকশনে তার উপস্থিতি শুরুতে ছিল একদমই মলিন।
আশির দশকের একদম শেষের দিকে ১৯৮৯ সালে প্রথমবারের মতো কোনো সিনেমায় দেখা মেলে কমিকবুক জগতের অন্ধ আইনজীবী ম্যাট মারডকের। মূলত মারভেলের আরেক জনপ্রিয় সুপারহিরো হাল্কের উপর নির্মিত হয়েছিল সিনেমাটি। আর ম্যাট ছিল সেখানে ব্রুস ব্যানারের উকিল। সিনেমাটিকে একটি সাধারণ টিভি রিলিজ দেওয়া হয়। ফলে সিনেমা পাড়ায় খুব বেশি একটা সাড়া পাওয়াও সম্ভব হয়নি। এরপর গেম কিংবা অ্যানিমেশন কার্টুনে ডেয়ারডেভিলের দেখা মিললেও লাইভ অ্যাকশন নিয়ে আর কোনো চিন্তা করা হয়নি।
১৯৯৭ সালে টুয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্স মারভেল থেকে চরিত্রটির কিছু রাইটস কিনে নেয় এবং সিনেমার উদ্দেশ্যে পরিচালক হিসেবে বেছে নেওয়া হয় হ্যারি পটার এবং হোম অ্যালোনের পরিচালক ক্রিস কলম্বাসকে। আবার বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেয় এবং অবশেষে মার্ক স্টিভেন জনসনকে পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। মূল চরিত্রে ভিন ডিসেল এবং গায় পিয়ার্সকে অফার করা হলেও তারা রাজি না হওয়ায় রোলটি অবশেষে আসে বর্তমান ব্যাটম্যান খ্যাত বেন এফ্লেকের হাতে।
এফ্লেকের জন্য বিষয়টি বেশ আনন্দের ছিল। তিনি ছোটবেলা থেকেই ডেয়াডেভিলের ফ্যান ছিলেন। এছাড়াও সিনেমায় তার বন্ধু হিসেবে দেখা মিলে পরবর্তী সময়ে আয়রন ম্যানের পরিচালক জন ফ্যাভেরুর। ইলেক্ট্রা হিসেবে নেওয়া হয় জেনিফার গারনারকে। ডেয়াডেভিলের ভিলেন বুলস-আই হিসেবে দেখা যায় কলিন ফ্যারেলকে। বেশ পরিচিত মুখ নিয়েই সিনেমার কাস্টিং করা হয়। ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবারের মতো ডেয়ারডেভিলের সিনেমা মুক্তি পায়। ঠিক এর আগের বছরই সুপারহিরো সিনেমায় নতুন রেকর্ড গড়ে দিয়েছিল স্পাইডারম্যান। তাই অনেকেই ভেবেছিল, ডেয়ারডেভিল হয়তো তেমনই কিছু করবে। কিন্তু ব্যাবসায়িকভাবে সফলতা লাভ হলেও সমালোচকদের নিয়ে আশাহত হতে হয় সিনেমাটির, পর্দায় বেন এফ্লেকের প্রতি বেশ নিরাশ হন তারা।
তবুও ব্যাবসায়িক সফলতা এবং জেনিফার গারনারের আরও একটি সিনেমার চুক্তি থাকার কারণে ডেয়ারডেভিলের একটি স্পিন-অফ মুভি বানানো হয়, যেটি ছিল ইলেক্ট্রার সলো মুভি। আর এটি মুক্তি পাবার আগেই বেন এফ্লেক বলেছিলেন, তিনি ডেয়ারডেভিল হিসেবে আবারো ফিরবেন; যদি প্রোডাকশন কেভিন স্মিথের করা ডেয়ারডেভিলের গল্প নিয়ে কাজ করে। কিন্তু ২০০৫ সালে ইলেক্ট্রা মুক্তির পর সব আশার আলোই নিভে যায়। সিনেমাটি ক্রিটিকালি কিংবা কমার্শিয়ালি কোনোদিকেই সফল হতে পারেনি। এরই জের ধরে ২০০৬ সালে এফ্লেক বলেন,
“ডেয়ারডেভিলে নিজেকে সুপারহিরো হিসেবে প্রকাশ করার কারণে আমি আর কখনো অন্য কোনো সুপারহিরো চরিত্রে নিজেকে দেখতে চাই না। এ ধরনের কস্টিউমড সুপারহিরো হওয়া আমার জন্য অপমান বয়ে এনেছে। যা আমি আর করতে চাই না।”
এভাবেই আবারো অধঃপতন ঘটে ডেয়াডেভিলের। এর কিছু বছর পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় রিবুটের। কিন্তু অনেক চিন্তা-ভাবনার পরও কোনো কাজ হয়নি। চুক্তি ছিল- যদি ২০১২ সালের অক্টোবরের মধ্যে কোনো ডেয়ারডেভিল সিনেমা বানানো সম্ভব না হয়, তবে মারভেল তাদের ডেয়ারডেভিলের রাইটস ফিরে পাবে। এভাবেই ২০১৩ সালের এপ্রিলে ডেয়ারডেভিল সিনেমা মুক্তির ঠিক দশ বছর পর কেভিন ফাইগি ঘোষণা দেন, মারভেল ডেয়ারডেভিলকে ফেরত পেয়েছে। তখন স্ক্রিন রাইটার ড্রু গোডার্ড, মারভেলের কাছে ডেয়ারডেভিলকে নিয়ে একটি নতুন সিনেমা বানানোর প্রস্তাব রাখেন। কিন্তু মারভেল ডেয়ারডেভিল নিয়ে ডার্কার ফিল্ম বানানোর জন্য আগ্রহী ছিল না।
এর পরই অ্যাভেঞ্জারসের সফলতার উপর ভিত্তি করে ডিজনি ঘোষণা দেয়, মারভেল টেলিভিশন আর এবিসি স্টুডিওর নিয়ন্ত্রণে নেটফ্লিক্সে তারা কিছু সিরিজ প্রকাশ করতে চলেছে। সেখানে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিল ডেয়ারডেভিল সিরিজটি। সিরিজটিই রীতিমতো বদলে দেয় সব। ম্যাট মারডক বা ডেয়াডেভিল হিসেবে নেওয়া হয় চার্লি কক্সকে। প্রথম সিজন দিয়েই সুপারহিরো জগতে শক্ত অবস্থান গড়ে তোলে ডেয়ারডেভিল। একটি সাধারণ সুপারহিরো সিনেমা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া ডেয়ারডেভিল নেটফ্লিক্স সিরিজে এসে পায় বিশেষ স্থান।
সিজন ওয়ান সুপারহিরো ধারা থেকে বেরিয়ে এসে হয়ে যায় একটি ক্রাইম জঁনরার সিজন, যেখানে নিউ ইয়র্ক শহরে হেলস কিচেন এলাকায় জনগণের চোখের আড়ালে চলছে নানারকম বেআইনি কর্মকাণ্ড এবং এর পেছনে মূল হাত উইলসন ফিস্কের। তার নাম পর্যন্ত কেউ মুখে আনতে সাহস পায় না। তার বিরুদ্ধেই রুখে দাঁড়িয়েছে একজন অন্ধ আইনজীবী। দিনের আলোতে জনসম্মুখে সে একজন উঠতি আইনজীবী হলেও রাতের অন্ধকারে সে হয়ে ওঠে একজন ভিজিল্যান্ট। তাকে নাম দেওয়া হয় ডেভিল অভ হেলস কিচেন।
সিজন ওয়ানে ম্যাট মারডকের আদর্শ এবং আশপাশের পরিস্থিতি এমন এক আবহ তৈরি করেছিল, যা যেকোনো দর্শককে ভাবিয়ে তুলবে। আইন এবং নৈতিকতা নিয়ে ম্যাট মারডকের যে দ্বিধা, সেটি খুব ভালোভাবে ফুটে ওঠে, যখন সে ফাদার ল্যান্টম নামক একজন পাদ্রীর সাথে নিজের ব্যক্তিত্ব নিয়ে কনফেশন করে। সিরিজের প্রথম এপিসোডেই শুরুর কিছু সংলাপেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
আইন যেমন অন্ধ, ডেয়াডেভিলও তেমনই অন্ধের ন্যায় তার কালো পোশাক পরিহিত অবস্থায় পুরো প্রথম সিজন জুড়ে ছিল।অবশেষে শেষ এপিসোডে দেখা মেলে তার আইকনিক রেড স্যুটের। পর্দায় এটি ন্যায়ের প্রতীকরূপে উপস্থাপন করা হয়, কারণ এই রেড স্যুট পরেই ডেভিল অভ হেলস কিচেন জানান দেয় তার সাহস আর ফিস্ককে ধরিয়ে দেয় পুলিশের হাতে। এর মাধ্যমেই সে হয়ে ওঠে ডেয়াডেভিল।
প্রথম সিজন ভক্ত এবং সমালোচকদের কাছে সাড়া ফেলার পর জানানো হয়, সামনে আরও সিজন বের হবে। কিছুদিনের মধ্যেই খবর শোনা যায়, দ্বিতীয় সিজনে মারভেলের অন্যতম জনপ্রিয় অ্যান্টি-হিরো পানিশারকে দেখা যাবে। ফিস্ক পুলিশের কাছে ধরা খাওয়ায় অনেকেই ভেবেছিল, দ্বিতীয় সিজন হয়তো জমজমাট হবে না। কিন্তু লেখকরা এত নিখুঁতভাবে সিজন টু সাজিয়েছিলেন যে দর্শকদের তা নিরাশ করেনি।
সিরিজের অন্যতম প্রধান হাইলাইট হয়ে ওঠে ফ্র্যাঙ্ক ক্যাসেল বা পানিশার চরিত্রটি। জন বার্নথালের অভিনয় পানিশারকে আবার জীবন্ত করে তোলে। এছাড়াও পানিশারের সাথে ডেয়াডেভিলের মারামারির দৃশ্য এবং আদর্শের অমিল কমিক পাঠকদের মনে করিয়ে দেয় গার্থ এনিসের ২০০৪ সালের ‘পানিশার’ কমিক সিরিজটির। আগের সিজন দর্শকদের যেমন ক্রাইম ড্রামা দেখিয়েছিল, এ সিজনে প্রেক্ষাপট মোড় নেয় কন্সপিরেসি এবং লিগ্যাল ড্রামা থ্রিলারে। এই দুই সিজনে অভিনয় এবং কাহিনী বাদেও যে বিষয়টি চোখে পড়ে, সেটি ছিল সিনেম্যাটোগ্রাফি।
ডেয়ারডেভিলের সিনেম্যাটোগ্রাফি যেকোনো মোশন-পিকচার সিনেম্যাটোগ্রাফির সাথে তুলনা করলে ভুল হবে না। প্রথম দুই সিজনে সিনেম্যাটোগ্রাফিতে লক্ষণীয় বিষয় ছিল হলুদ এবং লাল রঙের মিশ্রণ। হলুদ রঙ ছিল ধারাবাহিকভাবে বিপদের জগতে লড়াই করে নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার মতো। আর কমিকসে ডেয়ারডেভিলের অরিজিনাল পোশাকও ছিল হলুদ রঙের, সিরিজে হলুদের উপস্থিতি অনেকটা সেদিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছিল। অন্যদিকে লাল বা রেড লেয়ারগুলো ছিল অন্যায় মুছে ফেলার প্রতীক, যা তার রেড স্যুটের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছিল। এ ধরনের ডিটেইল্ড সিনেম্যাটোগ্রাফি হলো রিফ্লেক্ট রিপ্রেজেন্টেশন, যা বর্তমানে খুব বেশি একটা দেখা যায় না।
এই দুই সিজনের পর ম্যাট মারডককে দেখা যায় ডিফেন্ডারস নামক মিনি সিরিজে, যেখানে তার ক্রসওভার হয় নেটফ্লিক্সে মারভেলের অন্যান্য সুপারহিরোর সাথে। এর আগেই ২০১৬ সালে কমিক-কনে বলা হয়েছিল, এ সিরিজের তৃতীয় সিজন আসবে। ডিফেন্ডারসের শেষ দৃশ্য দেখে বোঝা যাচ্ছিল, তারা ফ্রাঙ্ক মিলারের ‘বর্ন অ্যাগেইন’ নিয়ে হয়তো কাজ করবে। আর ঘটেছিলও তা-ই। সিজন ওয়ানের মতো সিজন থ্রিতেও তারা ফ্রাঙ্ক মিলারের স্টোরিলাইন থেকে অনুপ্রেরণা নেয়। তবে এই তৃতীয় সিজনে কিছু নতুন কাস্ট যোগ করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিল জে আলির স্পেশাল এজেন্ট রে নাদিম এবং উইলসন বিথেলের বেন পোইনডেক্সটার চরিত্রটি।
এই সিজনটিই ডেয়ারডেভিলকে পৌঁছে দেয় তার অনন্য উত্থানে। প্রথম দুই সিজন থেকে পুরোপুরি বদলে ফেলা হয় সিজনের থিম এবং আবহ। শুরুতে যে ম্যাট মারডককে সবাই দেখেছিল একজন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, স্রষ্টার প্রতি গভীর আস্থা রাখা ব্যক্তি হিসেবে, তাকে এবার দেখা যায় একজন অসহায়, একা এবং স্রষ্টার প্রতি অভিমানী ব্যক্তি হিসেবে। তৃতীয় সিজনের প্রথম এপিসোডে আহত একজন ম্যাট মারডককে গীর্জার বিছানায় পাদ্রি ফাদার ল্যান্টমের কাছে সেবাপ্রাপ্ত অবস্থায় দেখা যায়। এছাড়াও এ সিজনে চার্লি কক্স তার অভিনয় দক্ষতার জানান দেন। যে চরিত্রে অভিনয় করে বেন এফ্লেক অপমানিত হয়েছিলেন, সেই চরিত্রেই অভিনয় করে চার্লি কক্স পৌঁছে যান সফলতার শিখরে।
তৃতীয় সিজনের কাহিনীতে দ্বিতীয় সিজনের মতো রাখা হয়নি কোনো সাইডস্টোরি। চার্লি কক্স বাদেও পুরো সিরিজে খলনায়ক হিসেবে ভিনসেন্ট ডি’ওনোফ্রিওর অনবদ্য অভিনয় ছিল দেখার মতো। স্পাইডারম্যান কার্টুনে ছোটবেলায় আমরা সকলেই কিংপিনকে দেখেছি। কিন্তু তার ‘ইভিল’ রূপটিই সেখানে সবচেয়ে বেশি দেখা যেত। এ সিরিজে এসে তার খলনায়ক চরিত্রে যোগ করা হয় একধরনের ম্যানুপুলেশন এবং চতুরতা। চালাকির জোরেই তৃতীয় সিজনে সে জেল থেকে বেরিয়ে যায়। এমনকি একটি দৃশ্যে শুধুমাত্র নিজের বুদ্ধির জোরেই সে ডেয়ারডেভিলের আসল পরিচয় বের করে ফেলে।
তৃতীয় সিজনে এসব ছাড়াও সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয় ছিল সিরিজের দার্শনিক সংলাপগুলো। যেখানে ম্যাট বারবার নিজের পরিণতির কথা চিন্তা করে স্রষ্টার প্রতি অকৃতজ্ঞ মনোভাব প্রকাশ করে এবং নিজেকে একধরনের ডেভিলই ভাবতে শুরু করে। এ কারণেই সে ফিস্কের প্রতি জমতে থাকা ঘৃণাকে কেন্দ্র করে তাকে মেরে ফেলার প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে তার আদর্শের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং ফিস্ককে আবারো সবার সামনে তুলে এনে তাকে আইনের হাতে তুলে দেয়।
সিরিজের শেষ সিজনে কাহিনী আরও ডার্ক হয়ে যায়, যখন ডেয়ারডেভিল মুখোমুখি হয় তার নিজের সাথেই। গল্পে বেন পোইনডেক্সটার নামক একজন এজেন্টকে কৌশলে ফিস্ক তার সহযোগী বানিয়ে নেয় এবং তাকে ডেয়ারডেভিলের পোশাক পরিয়ে সবার সামনে ডেয়ারডেভিলকে পরিণত করে একজন আসল ডেভিল হিসেবে।
এই স্টোরিলাইন ফ্রাঙ্ক মিলারের ‘বর্ন অ্যাগেইন’ গল্প থেকেই নেওয়া। পোইনডেক্সটারের চরিত্রটি এমনভাবে সাজানো ছিল, যা দেখে মনে হবে সে ম্যাট মারডকেরই আরেকটি রূপ। তারা দুজনেই একা, দুজনেই কাছের মানুষকে হারিয়েছে। কিন্তু ডেক্স ছিল একজন মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি, যে চাইলেই কাউকে মেরে ফেলতে পারে, যা ম্যাট মারডকের আদর্শ নয়। এভাবেই ম্যাট মারডক অনেকটা নিজের সাথেই অপ্রস্তুত যুদ্ধ করছিল, যা ষষ্ঠ এপিসোডে ডেক্সের ডেয়ারডেভিল বনাম ম্যাট মারডকের মারামারির দৃশ্যে বোঝা যাচ্ছিল। এ ধরনের মেটাফোরিক্যাল মাইন্ডগেম সিরিজে অন্যরকম উত্তেজনা সৃষ্টি করে দিয়েছিল।
ডেয়ারডেভিল পুরো সিরিজ জুড়েই ছিল অসাধারণ সব ‘ফাইট সিন’। দৃশ্যগুলো এত ভালভাবে কোরিওগ্রাফ করা, যা গল্পের সাথে বেশ ভালোভাবে মানিয়ে গিয়েছিল। সিজন ওয়ানে ডেয়ারডেভিলের অরিজিন অনুযায়ী, তার বাবা বক্সার ছিলেন। আর সেভাবেই ম্যাট যখন শত্রুদের সাথে লড়াই করে, তখন সবসময় বক্সিং স্ট্যান্স নিয়ে ডিফেন্স করার চেষ্টা করে। এ কারণে তার দুই হাত সবসময় উপরে ওঠানো থাকে। এছাড়াও এ সিরিজে মার্শাল আর্ট এবং কুংফু মুভসেটের নমুনার দেখা মেলে। ফাইট সিনের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল ক্যামেরায় একটি সিঙ্গেল শটে লং টেক নেওয়া যা বর্তমানে হলিউডে খুব কম দেখা যায়।
সিরিজে এ ধরনের লং টেকে স্টান্ট-ডাবল থাকার পরেও অনেক সময় অ্যাকশন দৃশ্যগুলো চার্লি নিজেই করতেন। যেমন- তৃতীয় সিজনে একটি কারাগারে চার্লির যে ১১ মিনিটের লং টেক অ্যাকশন সিক্যুয়েন্স ছিল, সেটি পুরোটা তার নিজের করা ছিল। ডেয়ারডেভিলের তিন সিজনের ৩৯ এপিসোড মিলে প্রোডাকশন বাজেট ছিল ১৫০ মিলিয়নেরও কম। ২০১৮ সালে যখন ডেয়ারডেভিলের তৃতীয় সিজন বের হয়, সে বছর ১৭টি ভিন্ন সুপারহিরো সিরিজ দর্শকদের সামনে আসে।
এর মধ্যে বেশিরভাগ সিরিজ এবং সিনেমা অনেকটা একই ধাঁচের হয়ে যাচ্ছিল। যেখানে বড় বড় বাজেট এবং অনেক সিজিআই আর ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট দিয়ে বর্তমানে সুপারহিরো ধারাটি জানা যায়, সেখানে প্রতি সিজনে গড়ে ৪০ মিলিয়নের মতো বাজেট নিয়ে ডেয়ারডেভিল দর্শকদের উপহার দেয় উন্নত মানের নিও-নোয়ার সিনেম্যাটোগ্রাফি এবং অ্যাকশন সিক্যুয়েন্স।
তিনটি সিজনের পর নেটফ্লিক্সের অন্যতম প্রধান ফ্ল্যাগশিপ-শো হওয়ার পরও নেটফ্লিক্স সবাইকে অবাক করে ঘোষণা দেয়, তারা আর ডেয়ারডেভিলের সিজন রিনিউ করতে ইচ্ছুক নয়। কারণ তারা এর চেয়ে বেশি ‘অরিজিনাল কন্টেন্ট’ তৈরি করতে চায়। তৃতীয় সিজন শেষ হওয়ার পরও প্রোডিউসার এবং প্রোডাকশনে কথাবার্তা চলছিল পঞ্চম সিজন পর্যন্ত বাড়ানোর। কিন্তু নেটফ্লিক্সের এমন সিদ্ধান্ত অপ্রত্যাশিত ছিল। চার্লি কক্স এ বিষয়ে বলেন,
“আমরা অনেকেই ভেবেছিলাম, ডেয়ারডেভিল সামনে আরও এগোবে, এমনকি ডেয়ারডেভিল সম্পর্কে আরও অনেক গল্প বলার ছিল। তবে আমি সিদ্ধান্তটা বুঝতে পারছি এবং এটি দুঃখজনক। দিনশেষে এটাই ব্যবসা, এভাবেই সব চলে।”
পরবর্তী সময়ে ভক্তদের ডেয়াডেভিলকে ফিরিয়ে আনার জন্য যে ক্যাম্পেইন চলছিল টুইটার জুড়ে, সেটির প্রতিও তিনি ভিডিও বার্তা দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানান। তবুও ডেয়ারডেভিলের রাইটস যেহেতু মারভেলের কাছে, তাই ভক্তরা ডেয়ারডেভিলকে বর্তমানে এমসিইউতে দেখার আশা রাখে। তবে সেই ডেয়ারডেভিল কি চার্লি কক্সই থাকবেন, বা সেই ডেয়ারডেভিল কি নেটফ্লিক্স সংস্করণের মতো হবে কি না, সে বিষয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।