বর্তমান বিশ্বে সিন্ডারেলা, পিটার প্যান, স্নো হোয়াইট কিংবা রাপুনজেলের নাম শোনেনি এমন শিশু-কিশোরের সংখ্যা বোধকরি এখন খুব কমই। সারা বিশ্ব জুড়ে শৈশবকে রূপকথার বর্ণিল রঙে রাঙিয়ে দেয়া এ চরিত্রগুলোর সাথে পরিচয় হয়েছে মূলত ওয়াল্ট ডিজনির চলচ্চিত্রের হাত ধরেই। ডিজনি স্টুডিওর এ শিশুতোষ চলচ্চিত্রগুলোর কাহিনী বরাবরই খুব শুভ, এখানে ভালোর জয় হয় এবং মন্দের শাস্তি।
“অতঃপর তারা সুখে-শান্তিতে দিন কাটাতে লাগলো”- এমন বার্তা দিয়েই শেষ হয় ডিজনির প্রতিটি চলচ্চিত্রই। কিন্তু যে গল্পগুলো থেকে ডিজনির চলচ্চিত্রগুলো অনুপ্রাণিত, সেগুলো কি এমন রঙিন ছিল? মোটেও না। বরং শিশুদের মন জয় করে নেয়া এই চলচ্চিত্রগুলোর মূল গল্পগুলোর অধিকাংশই ছিল হয় করুণ, নতুবা ভয়ংকর। তাহলে কেমন ছিল সেই গল্পগুলো?
সিন্ডারেলা
অধিকাংশ শিশুর রূপকথার রাজ্যের প্রথম গল্পগুলোর একটি হলো সিন্ডারেলা। সৎ মা এবং সৎবোনদের অত্যাচারে দুঃখী সিন্ডারেলার জীবনে বন্ধু বলতে ছিল শুধু কতগুলো পশুপাখি, বিশেষ করে ইঁদুর। রাজপ্রাসাদে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যেতে দেয়া হয় না তাকে, এসময়ে ফেইরি গডমাদার এর জাদুর ছোঁয়াতে সে পায় সুন্দর জামা, ঘোড়ার গাড়ি এবং কাঁচের জুতো। শর্ত ছিল ঘড়ির কাঁটা বারোটায় পৌঁছানোর সাথে সাথে জাদুর প্রভাব কেটে যাবে। এরপর রাজপুত্রের সাথে নাচ এবং মধ্যরাত হবার আগেই একটি জুতো ফেলে সিন্ডারেলা পালিয়ে আসে। সেই ফেলে আসা জুতোর মালিককে পেতে রাজ্যের সব মেয়ের মাঝে তার জন্য রাজপুত্রের খোঁজ, তারপর সিন্ডারেলার পায়ে সেই জুতো হওয়া, এরপর রাজপুত্রের সাথে ধুমধাম করে বিয়ে- এমনটাই ছিল ওয়াল্ট ডিজনির সিন্ডারেলা। কিছু বিষয় ছাড়া মূলগল্প ‘আশপুট্টেল’ (১৮১২) এর সাথে সিন্ডারেলার আর তেমন কোনো পার্থক্য নেই।
গ্রিম ব্রাদার্সের রচিত ‘আশপুট্টেল’ গল্পটিতে আশপুট্টেলের বাবা মারা যাননি, কিন্তু তিনি আশপুট্টেলের উপর তার সৎ মা এবং সৎ বোনদের অত্যাচার করতে কোনো সময়েই বাধা দেননি। মূলগল্পে কোনো ফেইরি গডমাদার ছিল না, বরং তার স্থলে ছিল আশপুট্টেলের মায়ের কবরের উপর বেড়ে ওঠা একটি গাছ। গাছটি তার ইচ্ছাপূরণ করতে পারত। রাজপ্রাসাদে তিনদিন ধরে আয়োজিত ভোজে আশপুট্টেল যেতে চাইলে তাকে বাড়ির সব কাজ করে ফেলতে বলা হয়, যা করতে তাকে সাহায্য করেছিল পায়রা, ইঁদুর না। এরপরও যখন তার সৎ মা ভালো পোশাক না থাকার কারণে তাকে রাজপ্রাসাদে যেতে দিতে চায় না, তখন আশপুট্টেলকে সেই গাছের ডাল থেকে দুটো জামা নিয়ে দেয় তার পাখি বন্ধুরা। এর একটা সোনালী, আরেকটা রূপালী।
আশপুট্টেল রাজপুত্রের সাথে তিনদিনই নাচে আর প্রতিবারই রাজপুত্র তাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে চায়, তার ঠিকানা জানতে চায়। আশপুট্টেল তার কাছ থেকে প্রতিবারই লুকানোর চেষ্টা করে। প্রথম রাতে আশপুট্টেল তার উঠোনের পায়রার খোপে লুকোয়, দ্বিতীয় রাতে সে নাশপাতির গাছে উঠে রাজপুত্রের কাছ থেকে লুকোয়। শেষ রাতে সে রাজপুত্রের কাছ থেকে পালানোর চেষ্টা করলেও রাজপুত্র আগে থেকে প্রাসাদের সিঁড়িতে পিচ ঢেলে রাখে, নামার সময় সে কারণে আশপুট্টেলের একটি সোনার জুতো (কাঁচের না) পা থেকে খসে যায়। পরে রাজপুত্র আশপুট্টেলের বাবার কাছে সেই জুতো পায়ে হবে এমন কোনো মেয়ে বাড়িতে আছে কিনা জিজ্ঞেস করলে আশপুট্টেলের দুই সৎবোন জুতো পায়ে দেয়ার চেষ্টা করে।
তারা রাজপুত্রকে বিয়ে করার জন্য এতই মরিয়া হয়ে গিয়েছিল যে জুতো পায়ে আটানোর জন্য এক বোন তার পায়ের আঙুল ,আরেক বোন তার পায়ের গোড়ালি কেটে ফেলেছিল। এ সময়ে গাছের ডালে বসা পায়রার কথা শুনে রাজপুত্র তৃতীয় আরেক বোনের কথা জিজ্ঞেস করতে বললে তারা আশপুট্টেলকে সামনে নিয়ে আসে। সিন্ডারেলার পায়ে জুতোখানা ঠিক হয় এবং তারপরে রাজপুত্রের সাথে ধুমধাম করে বিয়ে– এভাবেই গল্প শেষ হবার কথা ছিল। কিন্তু তা এখানেই শেষ হয়নি, বিয়ের দিন আশপুট্টেলের পাখি বন্ধুরা এসে ঠোকর দিয়ে তার সৎমা এবং বোনদের চোখ উপড়ে নেয়- এভাবে গল্পটি শেষ হয়। স্বভাবতই এতখানি রক্তাক্ত গল্প ডিজনি শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে চায়নি, এ কারণে আশপুট্টেলকে শিশুদের উপযোগী করে সিন্ডারেলায় পরিণত করা হয়েছে।
তুষারকন্যা
সিন্ডারেলার মতো তুষারকন্যাও মূল গল্প থেকে বেশি সরে আসেনি। ১৮১২ সালে গ্রিম ব্রাদার্স রচিত ‘লিটল স্নো হোয়াইট’ এর ১৮১৯ সালের পুনর্লিখিত সংস্করণের সাথে ডিজনি চলচ্চিত্রের কিছু অংশ বাদে প্রায় পুরোটারই মিল আছে। ১৮১২ সালের সংস্করণে নিষ্ঠুর রানী তুষারকন্যার আসল মা-ই ছিলেন, সৎ মা না। পরবর্তীতে ১৮১৯ সালের সংস্করণে তাকে তুষারকন্যার সৎ মা করা হয়। চলচ্চিত্রে রানী শিকারীকে তুষারকন্যার হৃদপিন্ড কেটে আনার আদেশ দেন, কিন্তু আসল গল্পে তাকে তার যকৃত এবং ফুসফুস কেটে আনার কথা বলা হয়। চলচ্চিত্রে রানী তুষারকন্যাকে একবারই হত্যার চেষ্টা করে, কিন্তু মূলগল্পে তাকে তিনবার হত্যা করার চেষ্টা করা হয়।
বিষাক্ত আপেল খেয়ে মৃত তুষারকন্যা রাজপুত্রের চুম্বনে জীবন ফিরে পায়- এমনটি ছিল ডিজনি চলচ্চিত্রে। মূল গল্পে রাজপুত্র বনের মাঝে শায়িত তুষারকন্যার প্রেমে পড়ে ঠিকই, এরপর সে তুষারকন্যাকে প্রাসাদে নিয়ে যাবার জন্য তার ভৃত্যদের দিয়ে তার কফিন নিয়ে যাত্রাও শুরু করে। তবে যাবার সময় একজনের হাত ফসকে যাওয়ায় কফিনখানা হাত থেকে পড়ে যায়, এ সংঘর্ষে তুষারকন্যার গলায় আটকে যাওয়া আপেল নেমে যায় আর জেগে ওঠে তুষারকন্যা। পরবর্তীতে রাজপুত্রের সাথে বেশ জাঁকজমকের সাথেই তুষারকন্যার বিয়ে হয়, সাথে থাকে সেই ৭ বামন।
তবে এখানেই গল্প শেষ হয়ে যায়নি। ডিজনি চলচ্চিত্রে ৭ বামনের হাতে মারা যায় সেই রানী । কিন্তু মূল গল্পে তুষারকন্যার বিয়ের আসরে রানীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। রানী আসেনও সেই বিয়েতে। তখন বিয়ের আসরেই রানীকে উত্তপ্ত লোহার জুতো পরে নাচতে বাধ্য করা হয়, যতক্ষণ না তার মৃত্যু হয়। এ ছিল তুষারকন্যাকে হত্যা করার চেষ্টার শাস্তি।
বেশ কঠিন শাস্তিই বটে!
ঘুম কুমারী
মূল গল্প থেকে সবচেয়ে বেশি সরে আসা ওয়াল্ট ডিজনির চলচ্চিত্রগুলোর একটি হলো ঘুম কুমারী। অবশ্য সেজন্য ডিজনিকে খুব একটা দোষ দেয়া যাবে না।
গিয়ামবাতিস্তা বেসিল; গ্রিম ব্রাদার্সের নাম অনেকে শুনে থাকলেও এই নামটি অনেকেই হয়তো জানে না। অথচ ১৬৩২ সালে তার রচিত ‘সান, মুন এন্ড টালিয়া’ থেকেই ‘স্লিপিং বিউটি’ অনুপ্রাণিত। কিন্তু দুটি গল্প একেবারেই আলাদা। কী ছিল ‘সান,মুন এন্ড টালিয়া’-তে যে ডিজনি এতোটা পরিবর্তন করেছিল ?
দুটো গল্পের শুরুটা প্রায় একইরকম। চরকার কাঁটা ফুটে বিপদে পড়তে পারে রাজকন্যা টালিয়া তথা ঘুম কুমারী- এমন ভবিষ্যদ্বাণী শোনার পর রাজা রাজ্যের সমস্ত চরকা পুড়িয়ে ফেলেন। তারপরও এক বৃদ্ধার চরকায় হাত লাগার সময় আঙুলে কাঁটা ঢুকে টালিয়ার মৃত্যু হয়। দুঃখে রাজা তার কন্যাকে প্রাসাদের এক কামরায় রেখে দেশত্যাগ করেন।
এর বহুদিন পর আরেক দেশের রাজা সেই প্রাসাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, প্রাসাদের ভেতর ঢুকে সে টালিয়াকে দেখতে পায়। অপূর্ব সুন্দরী টালিয়াকে দেখে মুগ্ধ হয় সে এবং তাকে জাগানোর চেষ্টা করে, কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয় না। ডিজনি চলচ্চিত্রে রাজকুমার ফিলিপ ডাইনির হাত থেকে রাজকুমারী অরোরাকে বাঁচানোর জন্য ড্রাগনকে হত্যা করে প্রাসাদে প্রবেশ করে। ঘুমন্ত রাজকন্যাকে ফিলিপ চুমু দিয়ে তার উপর দেয়া অভিশাপ কাটায়, জেগে ওঠে রাজকন্যা। তারপর তাদের বিয়ে ও সুখে শান্তিতে জীবনযাপন- এমনই ছিল ডিজনির চলচ্চিত্রে।
কিন্তু টালিয়ার ভাগ্যে তা হয়নি। সুন্দরী টালিয়াকে জাগাতে ব্যর্থ হবার পর কী করল সেই রাজা? চলে গেল?
তা গিয়েছিল বটে, কিন্তু তার আগে সে ‘মৃত’ টালিয়ার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে, তারপর প্রাসাদ ত্যাগ করে! সহজ কথায়, টালিয়ার সাথে সেই রাজা যা করেছিল, তা ধর্ষণ ছাড়া আর কিছুই না। এ সময় টালিয়া গর্ভবতী হয় এবং তার দুটো ফুটফুটে যমজ শিশু হয়। এদের নাম সান আর মুন। শিশুদের একজন টালিয়ার আঙুল চোষাতে আঙুল থেকে সেই কাঁটা বের হয়ে যাওয়ায় টালিয়া জেগে ওঠে। গাঢ় ঘুম থেকে জেগে ওঠা টালিয়া তার শিশুদের দেখে খুবই অবাক হয়।
এ সময়ে সেই রাজা প্রাসাদে এসে জাগ্রত টালিয়া, সান আর মুনকে দেখে খুবই খুশি হয়, তাদের ভালোবেসে ফেলে। নিজ প্রাসাদে ফিরে যাবার পরও তার মুখে টালিয়া, সান আর মুন ছাড়া আর কারও নাম নেই। তা দেখে ঈর্ষান্বিত হয় রানী। উল্লেখ্য, সেই রাজা বিবাহিত ছিল। সন্দেহ হওয়াতে রানী রাজার পেছনে গুপ্তচর পাঠায় আর টালিয়া ও যমজদের কথা জানতে পারে। ক্রুদ্ধ রানী এরপর টালিয়া, সান আর মুনকে খুঁজে পেলে তার বাবুর্চিকে আদেশ দেয় যেন সে সান আর মুনকে রেঁধে রাজাকে রাতের খাবারের সময় পরিবেশন করে। সান আর মুনকে দেখে বাবুর্চির দয়া হওয়ায় তা সে করেনি। যমজদের রাঁধার নির্দেশ দিয়ে আক্রোশ না মেটায় রানী আরো আদেশ দেয় রাজকুমারী টালিয়াকে পুড়িয়ে হত্যা করতে। এমন সময় রাজা রাজপ্রাসাদে টালিয়াকে দেখতে পায় এবং রানী তার কাছে ধরা পড়ে। ক্রুদ্ধ রাজা রানীকে হত্যা করে এবং টালিয়া হয় নতুন রানী।
এরপর রাজা, টালিয়া, সান আর মুন তথাকথিত ‘সুখে শান্তিতে দিন কাটায়’। কিন্তু এই গল্পে টালিয়া অজ্ঞান থাকা অবস্থায় তার সাথে রাজা শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে, যাকে সোজা বাংলায় ধর্ষণই বলে, যা কোনোভাবেই, কোনো অবস্থাতেই ঠিক নয়। কুরুচিপূর্ণ ও বিকৃত এ বিষয়গুলোকে তাই ডিজনি যৌক্তিক কারণেই বদলে দিয়েছে, টালিয়া হয়ে গেছে অরোরা।
মৎস্যকন্যা
মৎস্যকন্যা এরিয়েলের মানুষের প্রতি আগ্রহ অনেক। এক রাজপুত্রকে বাঁচানোর পর এরিয়েল তার প্রেমে পড়ে। এরপর ডাইনি উরসলার কাছে নিজের কন্ঠের বিনিময়ে পা পায় এরিয়েল, শর্ত ছিল রাজকুমার তাকে না ভালোবাসলে সে আবার মৎস্যকন্যা হয়ে যাবে। এরপর রাজপুত্রের সাথে দেখা, প্রেম, ডাইনীর সাথে যুদ্ধ, তারপর সুখে শান্তিতে দিন কাটানো- এই ছিল ওয়াল্ট ডিজনির ‘দ্য লিটল মারমেইড’ এর গল্প।
১৮৩৬ সালে হান্স ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসনের ‘দ্য লিটল মারমেইড’ কিন্তু এমন ছিল না। সেটি ছিল হৃদয়বিদারক এক কাহিনী। ডিজনি চলচ্চিত্রের মতোই মৎসকন্যা রাজপুত্রের জীবন বাঁচায় এবং তার প্রেমে পড়ে। ডাইনীর সাথে সে-ও তার কন্ঠের বিনিময়ে পা পায়। এখানেই ডিজনির সাথে পার্থক্য শুরু হয়। যেখানে ডিজনির চলচ্চিত্রে রাজপুত্র তার প্রেমে না পড়লে সে আবার মৎস্যকন্যা হয়ে যাবে, এন্ডারসনের গল্পে সেখানে শর্তপূরণ না হলে সে মারা যাবে।
এখানেই শেষ নয়, মৎস্যকন্যা যতবার মাটিতে পা দেবে, ততবারই তার মনে হবে যেন সে ছুরিতে পা দিচ্ছে। তারপরও রাজি হয় সে। তো মৎস্যকন্যা ডাঙায় আসে, রাজপুত্রের সাথে তার সদ্ভাবও হয়। এদিকে রাজপুত্র তার প্রাণ যে বাঁচিয়েছিল তাকে খুঁজছে, কিন্তু কন্ঠ না থাকায় মৎসকন্যা নিজের পরিচয় দিতে পারে না। একসময় আরেক রাজ্যের রাজকন্যার সাথে রাজপুত্রের বিয়ে ঠিক হয় এবং এই মেয়েটিই রাজপুত্রকে ডাঙায় খুঁজে পায়। রাজপুত্র মনে করে যে সেই মেয়েটিই তার জীবন বাঁচিয়েছে, তাই তাকেই বিয়ে করে। ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে মন ভেঙে যায় মৎসকন্যার। এ সময়ে তাকে জানানো হয় যে নিজের প্রাণ বাঁচানোর একটি উপায় আছে তার, রাজপুত্রকে মেরে ফেললে সে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে পারবে। কিন্তু তাতে রাজি হয় না মৎসকন্যা, ভালোবাসার মানুষের জন্য জীবন দেয় সে, সমুদ্রের ফেনায় পরিণত হয়। এই ত্যাগের জন্য অবশ্য সে পরে এক বাতাসের কন্যা হয়, যাদের জন্য ৩০০ বছর পর খুলবে স্বর্গের দরজা। এভাবেই শেষ হয় এন্ডারসনের গল্প ।
দ্য হাঞ্চব্যাক অফ নটরডেম
১৮৩১ সালে ভিক্টর হুগোর রচিত ‘দ্য হাঞ্চব্যাক অফ নটরডেম’ আর ডিজনি চলচ্চিত্রের মূল পার্থক্য তাদের সমাপ্তিতে। ডিজনির গল্পের মতো হুগোর গল্পে প্রতিবন্ধী তরুণ কোয়াসিমোডো জিপসি এসমারেল্ডার প্রেমে পড়ে। ডিজনি চলচ্চিত্রে ফ্রলো বিনা দোষে এসমারেল্ডাকে ফাঁসি দিতে গেলে কোয়াসিমোডো তাকে বাঁচায়। কিন্তু হুগোর গল্পে কোয়াসিমোডো তাকে বাঁচাতে পারেনি, এরপর সে ফ্রলোকে হত্যা করে।
দিনের পর দিন না খেয়ে মৃত এসমারেল্ডার পাশে শোকগ্রস্ত কোয়াসিমোডো বসে থাকে, এভাবেই একসময় সে মৃত্যুবরণ করে। বহুদিন পরে একজন এসে তাদের হাড় ওঠাতে গেলে কোয়াসিমোডো আর এসমারেল্ডা দুজনের হাড়ই একসাথে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে একাকার হয়ে যায়।
বহু ডিজনি চলচ্চিত্রই তাদের মূল গল্প থেকে অনেকখানি সরে গিয়েছে। আজকের অনেকেই হয়ত জানে না এ রঙিন ডিজনি চলচ্চিত্রগুলো যে গল্পগুলো থেকে অনুপ্রাণিত, তার অনেকগুলোই কতখানি ধূসর কিংবা বেদনার রঙে রঞ্জিত। অবশ্য এই অসামাঞ্জস্যের মাঝেও খুঁজে পাওয়া যায় অনেকখানি বৈচিত্র্য। শৈশবের রূপকথার এ চরিত্রগুলোর দিকে এখন থেকে আর আগের মতো করে তাকাতে পারবেন কি?
ফিচার ইমেজ- jruktoday.wordpress.com