২৬১ এসি (Aegon Conqueror)। ক্যাস্টারলি রকের লর্ড হিসেবে টাইটোস ল্যানিস্টার ছিলেন দুর্বলচিত্ত এবং সংশয়ী। তাই এমন আত্মশ্লাঘায় ভুগতে থাকা রাজার নির্দেশ ল্যানিস্টার ব্যানারম্যান হাউজগুলো প্রায়ই অমান্য করত। টাইটোস তাই ঠিকভাবে শাসন করতে পারছিলেন না। বাবার এমন পরিস্থিতি একদম সহ্য করতে পারতেন না টাইটোসের ২০ বছর বয়সী ছেলে টাইউইন ল্যানিস্টার।
একই বছরে, হাউজ টারবেক ও রেইন সরাসরি টাইটোসের বিরোধিতা করে বসে। তাদের অর্থ ও শক্তি কিছুটা বেশি হয়ে যাওয়ায় দুর্বল টাইটোসকে সরিয়ে তারা পশ্চিমের ওয়ার্ডেন হতে চেয়েছিল। এবার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেল টাইউইনের। খুবই ভয়ংকর ও নির্মম কৌশলে টাইউইন দুই বিদ্রোহী হাউজকে দমিয়ে দিল। শুধু লর্ডদের মেরেই সে শান্ত হল না। দুই পরিবারের কোনো সদস্যকে সে বাঁচিয়ে রাখল না। রেইন প্রাসাদের দেয়ালে পরিবারের পুরুষ সদস্যদের বিচ্ছিন্ন মাথা বর্শায় গেঁথে ঝুলিয়ে রেখেছিল, যাতে ওয়েস্টারল্যান্ডসের প্রত্যেক ব্যানারম্যান বুঝতে পারেন ল্যানিস্টারদের বিপক্ষে যাবার পরিণতি কী!
উল্লেখ্য, ‘রেইন অব ক্যাস্টামেয়ার‘ গানের জন্ম এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে। তাই এই বিদ্রোহ দমন করে টাইউইন প্রথমে জানিয়ে দিয়েছিলেন, বয়স কম হলেও কেমন ভয়ংকর মানুষ তিনি!
কিং অ্যারিস
২৬২ এসি। টানা চার পূর্বপূরুষ ধরে চলা ব্লাকফায়ার বিদ্রোহ অবশেষে দমন হয়েছে। রাজা দ্বিতীয় জ্যাহেরিস এই যুদ্ধের দুই বছর পর হুট করে মারা গেলেন। আকস্মিতভাবে সিংহাসন পেয়ে গেলেন দ্বিতীয় অ্যারিস। তার বয়স তখন মাত্র ১৮ বছর। আগে থেকেই অ্যারিস রাজপুত্র হিসেবে দারুণ সমাদৃত ছিলেন। তার চালচলন, কথাবার্তা ঠিক যেন একজন রাজার মতো। যদিও ক্ষুরধার মস্তিস্ক তার ছিল না, তবে প্রথম থেকেই তার চাওয়া-পাওয়ার কমতি ছিল না। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন এমন এক শাসক হবার, যিনি ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে থাকবেন।
জ্যাহেরিসের সভাসদদের অ্যারিস আস্তে আস্তে বিদায় করে দিলেন। বৃদ্ধ হ্যান্ড অ্যাডগার স্লোনের বদলে নতুন হ্যান্ড হিসেবে নিযুক্ত করলেন তার ছোটবেলার পরম বন্ধু টাইউইন ল্যানিস্টারকে। টাইউইন হলেন ওয়েস্টেরসের সব থেকে কম বয়সী হ্যান্ড।
ছোটবেলা থেকে বন্ধু হলেও অ্যারিস ও টাইউইন চরিত্রগত দিক থেকে একদম ভিন্ন মেরুর। অ্যারিস আমুদে স্বভাবের, রাজসভা মাতিয়ে রাখেন, হুটহাট সিন্ধান্ত নেন, আবার নিজের বলা কথা দ্রুত পর ভুলে যান। বিপরীতে টাইউইন গম্ভীর ও কঠোর প্রকৃতির মানুষ। মেধায় অ্যারিসের থেকে অনেক বেশ এগিয়ে।
ছোটবেলার বন্ধু হবার কারণে রাজার খামখেয়ালি স্বভাব টাইউইন ভালো বুঝতেন। তাই তার মেধা ও দক্ষ পরিচালনার কারণে রাজ্যে কোনো সমস্যা হতো না। রাজার প্রত্যেক সমস্যা সমাধানের জন্য টাইউইন হাজির। খুব দ্রুত সে শান্তিপ্রিয় ‘হ্যান্ড’ হিসেবে সুনাম অর্জন করে ফেলল।
কিন্তু সাধারণ জনগন টাইউইনকে পছন্দ করলেও রাজ্যের লর্ড ও ব্যানারম্যানদের কাছে তিনি জনপ্রিয় হতে পারলেন। কারণ টাইউইন কিছু বললে তারা পালন করত ঠিকই, কিন্তু মনে মনে ভীষণ অপছন্দ করত। এরিসের সভাতেও একই অবস্থা। একদিকে ধৈর্যহীন রাজা, অন্যপাশে ভয়ংকর ভাবলেশহীন টাইউইনের জন্য রেড কিপে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করত।
হ্যান্ড হবার এক বছর পর টাইউইন বিয়ে করেন তার চাচাতো বোন জোয়ানাকে। পাথরের মতো মানুষ এই জোয়ানার কাছে গিয়ে গলে যেতেন। জোয়ানাই একমাত্র চিনেছিল কঠোরতার ভেতরের ভিন্ন এক সত্তাকে। উল্টে রাজপুত্র থাকতে জোয়ানার উপর নজর পরেছিল অ্যারিসের। তাই নিজের বন্ধুর বিয়েতে মদ্যপ হয়ে এক অশালীন কাণ্ড করে বসে খোদ সাত রাজ্যের রাজা।
অ্যারিসের স্ত্রী ছিলেন রায়েলা টারগেরিয়ান। তাদের সংসার সুখের ছিল না। অ্যারিসের নারীদের প্রতি বিশেষ প্রীতি ছিল, সেটা রায়েলা জানতেন। কিন্তু খোদ হ্যান্ডের স্ত্রীর সাথে এরিসের আচরণ রায়েলা মেনে নিতে পারেনি। এরপর সম্পর্কে আরও ভাঙন ধরে, যখন রায়েলা মৃত কন্যা সন্তান জন্ম দিলেন। পরবর্তীতে এক ছেলে সন্তান জন্মের ছয় মাসের মাথায় মারা গেল। তারপর, টানা চার বছরে চার মৃত শিশু। অ্যারিস স্ত্রীর প্রতি ক্রমে ক্রমে সন্দিহান হয়ে উঠলেন।
২৬৬ এসি। জোয়ানা ও টাইউইনের ঘরে দেবশিশুর মতো জমজ শিশু জন্ম নিল। তাদের নাম জেইমি ও সার্সেই। এই খবর শুনে প্রথমবার হিংসায় জ্বলতে লাগলেন অ্যারিস। ততদিনে তার সন্দেহ ও সাবধানী হবার বাতিক আরও বেড়েছে। এ বছরই টাইউইনের বাবা মারা গেলে তিনি ক্যাস্টারলি রকে আসেন মৃত্যুপরবর্তী নিয়ম-কানন পালন করতে। সাথে অ্যারিস ও তার আট বছরের ছেলে রেয়গার। অথচ নিজের স্ত্রীকে সাথে নিলেন না তিনি। ক্যাস্টারলি রকে অ্যারিস কাটিয়ে দেন পুরো এক বছর।
মুখোশবন্ধু
২৬৭ এসি। কিংস ল্যান্ডিংয়ে ফিরে এসেছেন অ্যারিস। ততদিনে তার এবং টাইউইনের বন্ধুত্বে ফাটল ধরেছে। নিজেদের ভেতর প্রচ্ছন্ন বিবাদ সবার সামনে চলে এসেছে। যেখানে আগে টাইউইনের মতামত নিয়ে অ্যারিস সিদ্ধান্তে পৌঁছাতেন, সেখানে তিনি প্রকাশ্যে টাইউইনের মতামতকে বিরোধিতা করতে লাগলেন। কোনো সমস্যা দেখা গেলে তা টাইউইনের ঘাড়ে চাপানোর মতো ঘটনাও দেখা যেতে শুরু করল।
“সিংহাসনে বসে অ্যারিস, আর রাজ্য চালায় টাইউইন।” এই কথা ততদিনে রাজার কানে পৌঁছে গেছে। প্রতিহিংসা আর ক্ষোভে প্রতিনিয়ত টাইউউইনকে অপমান করতে শুরু করলেন তিনি। অ্যারিস শুনেছিলেন, এই কথা নাকি বলে বেড়ায় খোদ হ্যান্ডের রক্ষীর দলনেতা ইলিন পেইন। সাথে সাথে তাকে ধরে নিয়ে তার জিহ্বা কেটে নেওয়া হলো।
এছাড়াও, সভায় কোনো নতুন পদ দেওয়া হলে তা টাইউইনের সুপারিশের বাইরে যেতে থাকল। রেড কিপে মাস্টার-অব-আর্মস হিসেবে টাইউইন সুপারিশ করল নিজের ভাই ট্রাইগেটকে, উল্টে অ্যারিস সেখানে নিয়োগ দিলেন উইলেম ড্যারিকে। তিনি মনে করতেন, টাইউইন তার নিজের চর দিয়ে দল ভরিয়ে ফেলবে। তাই রাজার পছন্দের সব অযোগ্য লোক দিয়ে ভরে যেতে লাগল ‘স্মল কাউন্সিল’।
রাজার প্রবল সন্দেহবাতিক আর মানসিক ভারসাম্য হারানোর বিষয়টি যখন প্রায় প্রকাশ্যে চলে এসেছে, তখন অ্যারিসের রাজা হবার দশ বছর পূর্ণ হয়। রেড কিপে রাজার সামনে জেইমিকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদর্শন করার ছোট্ট একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সে অনুষ্ঠানে তার সন্তানদের নিয়ে এসেছিলেন লেডি জোয়ানা। এই অনুষ্ঠানে সবার সামনে টাইউইনকে অপমান করতেই অ্যারিস অত্যন্ত কটূ কথা বলেন তার স্ত্রীকে। অপমানিত জোয়ানা তখনই কিংস ল্যান্ডিং ত্যাগ করে। পরদিন টাইউইন তার পদত্যাগপত্র পেশ করেন। কিন্তু অদ্ভুত কোনো কারণে নিজের হ্যান্ডকে সন্দেহ করলেও অ্যারিস কখনোই তাকে বিদায় করে দেননি। বিপরীতে, টাইউইনও চূড়ান্ত রকমের অপমান হলেও কোনোদিন এরিসের বিপক্ষে কথা বলেননি।
২৭৩ এসি। টাইউইনের ঘরে তৃতীয় সন্তান জন্ম নিল। কিন্তু আতুঁরঘরের বিছানাতে জোয়ানা মারা গেলেন। যে সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে তিনি মারা গেলেন, তার নাম টিরিয়ন। খর্বকায়, কুৎসিত চেহারার টিরিয়নকে নিয়ে লোকমুখে প্রচলিত, টিরিয়নের নাকি জন্মের সময় লেজ ছিল, যা পরে টাইউইনের আদেশে কেটে ফেলা হয়। জোয়ানার মারা যাবার পর টাইউইনের ভেতর যে সামান্য কোমল হৃদয় ছিল, তার দুয়ারও বন্ধ হয়ে গেল।
এরপর তিনি শুনলেন জোয়ানার মৃত্যুতে রাজা অ্যারিস মন্তব্য করেছে,
“দেবতাও এমন অহঙ্কারীকে মেনে নেয় না। তার কাছ থেকে তারা স্বর্গের পুষ্প কেড়ে নিয়েছে, বিনিময়ে দিয়েছে ঐ বামন। এতে যদি সে একটু বিনয় শিখতে পারে।”
জোয়ানার মৃত্যুর পর সকল নিয়ম পালন করে টাইউইন নির্বাক মুখে রাজকার্যে ফিরলেন। কিন্তু অ্যারিসের সাথে তার সামান্য যে সম্পর্ক বেঁচে ছিল, তাও মরে গেল। তবে অ্যারিসের অপমান, তার অতিরিক্ত সাবধান হবার পাগলামি, ভীষণ খুঁতখুঁতে বিপরীতে টাইউইনের নির্বাক পাথরের মুখ আর পুরনো কর্মদক্ষতায় কোনো পরিবর্তন হলো না।
তিন বছর পর অ্যারিসের ঘরে নতুন ছেলে জন্ম নিল। তাতেও তার ভেতর কোনো পরিবর্তন হল না। উল্টে ছেলেকে নিয়ে আরও বেশি সন্দেহবাতিকে ভুগতে শুরু করলেন। সারাদিন কিংসগার্ড সদ্যজাত শিশুকে পাহারা দিত। রায়েলা পর্যন্ত তার ছেলের কাছে যেতে পারতেন না। খাবার পরীক্ষা না করে খাওয়ানো হতো না। প্রত্যেক জায়গায় অ্যারিসের সন্দেহ আর ভয়।
রাজার প্রথম ছেলে রেয়গার তখন সদ্য নাইট উপাধি অর্জন করেছে। নতুন ছেলের জন্ম, রেয়গারের মাত্র ১৮ বছরে এমন উপাধি! টাইউইন ভাবলেন, হয়তো অ্যারিসের মন পরিবর্তন হবে। তিনি তার মেয়ে সার্সেইয়ের সাথে রেয়গারের বিয়ের কথা বললেন। শুনে এরিস তাচ্ছিল্য করে উত্তর দিল,
“তুমি তো চাকর। চাকরের মেয়ের সাথে কখনও রাজার ছেলের বিয়ে হতে পারে?”
ডাস্কেনডেল বিদ্রোহ
২৭৭ এসি। সভাসদ ও বাইরের অধিকাংশ মানুষ ততদিনে বুঝে গেছে, রাজা সঠিকভাবে চিন্তা করতে পারছেন না। এ বছরের একটি ঘটনার পর এরিস একদম উন্মাদে পরিণত হলেন। কিংস ল্যান্ডিং থেকে উত্তরে ডাস্কেনডেল নামে এক প্রাচীন বন্দর আছে। কিন্তু কিংস ল্যান্ডিং তৈরি হবার পর, ডাস্কেনডেলের সুনাম ও ব্যবহার অনেকটা কমে এসেছিল। ডাস্কেনডেলের তরুণ লর্ড ডেনিস ডার্কলিন চাইলেন, এই বন্দরকে আবার আগের মত জমজমাট করে তুলতে। তাই খাজনা কমিয়ে আনার জন্য কিংস ল্যান্ডিংয়ে রাজকীয় সনদ পাঠান। টাইউইন একবাক্যে ডেনিসের আবেদন খারিজ করে দেয়। কারণ রাজধানীর এত কাছের বন্দরকে তিনি এমন সুযোগ করে দেবেন না। এতে অনান্য রাজ্য এরূপ আবদার করে বসতে পারে। তরুণ ডেনিসের রক্ত গরম। তিনি রেগে কিংস ল্যান্ডিংয়ের বিপক্ষে বিদ্রোহ ঘোষণা করে দিলেন।
সবাই জানে, অ্যারিস আর টাইউইনের সম্পর্ক খারাপ। আর অ্যারিস প্রকাশ্যে পাগলামি করে বসে। লর্ড ডেনিস এই সুযোগে খাজনা দেওয়া বন্ধ করে দিলেন। ব্যাপারটা যখন নজরে এলো, তখন ডেনিস জানালেন, রাজাকে স্বয়ং তাদের দূর্গ ডান ফোর্টে এসে আবেদন শুনতে হবে। অ্যারিসের মতো সন্দেহপ্রবণ মানুষের এমন আবদার শোনার কোনো কারণ নেই। কিন্তু যখন টাইউইন তাকে পরামর্শ দিল, রাজা তার উল্টো কাজ করে বসলেন। অল্প কয়েকজন সৈন্য নিয়ে তিনি রওনা হলেন ডাস্কেনডেল। দূর্গে পৌঁছাতেই অ্যারিস বন্দী হলেন ডার্কলিনদের হাতে।
সাত রাজ্যের রাজাকে বন্দী করার খবর শোনার সাথে সাথে ফেটে পড়ল পুরো কিংস ল্যান্ডিং। শুধু টাইউইন নির্বাক। লর্ড ডেনিস বলে দিয়েছে, তাদের দূর্গ সরাসরি আক্রমণ করলে অ্যারিসকে তারা হত্যা করতে বাধ্য হবে। কিন্তু টাইউইন জানে, এমন সাহস নেই ডেনিসের। তাই আপাতত টাইউইনের লোক ডেনিসের দূর্গ ঘেরাও করে রাখল। কিন্তু রাজাকে বন্দী করা ছাড়া ডেনিসের কোনো লাভ হল না। কারণ, টাইউইন সরাসরি কোনো আলোচনায় আসতে রাজি হননি। সময়ের সাথে সাথে সে আরও কঠোর হয়েছে। দূর্গ ঘেরাও করে রাখার ফলে, বাইরে থেকে খাবারের যোগানও বন্ধ।
ডাস্কেনডেল বন্দরে অ্যারিসের প্রায় সকল সভাসদরা অবস্থান করছিল। কীভাবে রাজাকে উদ্ধার করা যায়, সেই আলোচনার মাঝে টাইউইন রেয়গারকে দেখিয়ে বললেন,
“রাজাকে হত্যা করার সাহস ডেনিসের মতো কাপুরুষের নেই। আর যদিও করে, তো আমাদের নতুন রাজা আছে।”
এরপর রাজাকে উদ্ধার করার দায়িত্ব নিল, অসীম সাহসী এক কিংসগার্ড স্যার ব্যারিস্টান সেলমি। তার পাগলাটে পরিকল্পনা শুনে টাইউইনের মতো ঠাণ্ডা মাথার মানুষও সায় দিল। কারণ, তিনি ব্যারিস্টান সেলমিকে খুব ভালো করে চেনেন।
ভিখারী সেজে ব্যারিস্টান সেলমি ডান ফোর্টে দেয়ালের কাছে গেলেন। মোক্ষম সুযোগে দেয়াল টপকে ঠিকই বন্দী রাজাকে খুঁজে বের করলেন তিনি। কিন্তু পালানোর সময় বাধল বিপত্তি। কেউ একজন ঘন্টা বাজিয়ে জানিয়ে দিল, বন্দী অ্যারিস পালাচ্ছে। ব্যারিস্টান সেলমি পালানো বাদ দিয়ে নিজের তলোয়ার বের করলেন। তার মতো নাইটকে হারায় ডান ফোর্টের প্রহরী? ঠিকই রাজাকে নিয়ে অক্ষত অবস্থায় বের হলেন ব্যারিস্টান সেলমি।
এরপরের ঘটনা সহজ কিন্তু ভয়াবহ। অ্যারিস প্রথমে ডেনিসের মাথা আলাদা করে দেবার নির্দেশ দিলেন। তারপর পুরো ডার্কলিন পরিবারকে কচুকাটা করা হল। ডার্কলিনদের সহায়তা করা হাউজ হরলার্ডেরও চিহ্নমাত্র থাকল না।
উন্মাদ রাজা
বন্দী থাকা অবস্থায় অ্যারিসের সাথে ডার্কলিনরা প্রচন্ড খারাপ ব্যবহারের সাথে শারীরিক নির্যাতন করেছে। বন্দীদশা থেকে বের হয়ে অ্যারিস সম্পূর্ণরূপে উন্মাদ হয়ে গেলেন। রেড কিপের প্রাসাদ থেকে বের হওয়া বন্ধ হয়ে গেল। আয়রন থ্রোনের তলোয়ারের ব্লেডে কয়েকবার হাত কাটায় ভয়ে তার চুল, দাড়ি আর নখ কাটা বন্ধ হয়ে গেল। লম্বা চুল, বুক পর্যন্ত দাড়ি আর প্রায় নয় ইঞ্চির মতো বাঁকানো নখে, অ্যারিস পরিণত হলেন এক বুনো মানুষে।
এরপরের চার বছরে তার অবিশ্বাস বাড়তে বাড়তে ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছাল। নিজের ছেলে রেয়গার ও স্ত্রীকে অবিশ্বাস করা শুরু করলেন। তিনি মনে করতেন, তার বন্দী থাকা সময়ে রেয়গার ও টাইউইনের চুক্তি হয়ে গেছে। তাকে মেরে তারা সিংহাসন দখল করবে। নিজের রক্ত তো নয়-ই, একসময় রাজ্যের লোকদেরও সন্দেহের চোখে দেখতেন। পেন্টোস থেকে নিয়ে আসলেন এক গুপ্তচর, নাম ভ্যারিস। রাজার যুক্তি, নিজের রক্ত ও বন্ধু থেকে অচেনা কাউকে এখন বেশি বিশ্বাস করা যায়!
খুব দ্রুত ভ্যারিস তার চর দিয়ে কিংস ল্যান্ডিংয়ে এক অদৃশ্য নেটওয়ার্ক বানিয়ে ফেলল। রাজার পাশে দাঁড়িয়ে কানে ফিসফিস করে মন্ত্র দেওয়া তার একমাত্র কাজ।
অবিশ্বাস-সন্দেহের সাথে এরপর যুক্ত হল ড্রাগন নিয়ে অসুস্থ চিন্তা। ড্রাগনস্টোনের তলদেশ থেকে ড্রাগনের ডিম এনে চেষ্টা চালালেন ড্রাগনের জন্ম দেওয়া জন্য। পুরনো ডিম ততদিনে পাথরে পরিণত হয়েছে। অ্যারিস বিফল হলেন, কিন্তু তার আগ্রহ গেল না। ‘ওয়াইল্ডফায়ার’ নামক এক দাহ্য পদার্থ নিয়ে তার নতুন নেশা শুরু হল। এতদিন শাস্তি হিসাবে গলা কাটা বা জিহ্বা কেটে নেওয়া হতো। কম না বেশি দোষ, সেদিকে খেয়াল না রেখে এবার শুরু হল দোষীদের গণহারে আগুনে পোড়ানো।
শেষদিকে অ্যারিস এতটাই সন্দেহে ভুগতো যে, নিজের কিংসগার্ড ছাড়া তিনি হ্যান্ডের সাথে দেখা করতেন না। অ্যারিস একবার গ্রান্ড মেইস্টার পাইসেলকে বলেছিলেন,
“আমি ইচ্ছা করলেই টাইউইনকে হ্যান্ডের দায়িত্ব থেকে সরাতে পারবে না। কারণ, দায়িত্বচ্যুত করলে টাইউইন আমাকে মেরে ফেলবে।”
নিজের বড় ছেলে রেয়গার টারগেরিয়ানের বিয়েতে অ্যারিস নিজে যাননি, সাথে তার ছোট ছেলে ভিসেরিসকেও যেতে দেননি। বিয়ের পর রেয়গার তার স্ত্রী এলিয়া মার্টেলকে নিয়ে কিংস ল্যান্ডিং ছেড়ে ড্রাগনস্টোনে চলে যায়। অ্যারিস তাই ভেবে ভেবে হয়রান হতেন, ডর্নের বিদেশি নারী ও রেয়গার তার বিরুদ্ধে কী পরিকল্পনা করছে! তাদের প্রথম সন্তান রেইনিস জন্ম নেবার পরও অ্যারিস তার নাতিকে দেখেননি। রায়েলা যখন রেইনিসকে আদর করে কোলে তুলে নিয়েছিল, আতঙ্কে অ্যারিস তখন দূরে দাঁড়িয়েছিলেন।
অ্যারিসের ধারণা ছিল, রেয়গার আর টাইউইনের সমাঝোতা হয়ে গেছে। সে মারা যাবার পর রেয়গার বিয়ে করবে সার্সেইকে। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, তার পছন্দ অনুযায়ী রেয়গারকে আবার বিয়ে দেবেন। স্টেফন ব্যারাথিওনকে প্রথমে স্মল কাউন্সিলের সদস্য করে তাকে দায়িত্ব দেয়া হল ইসোসের ভলান্টিস নগর থেকে ভ্যালেরিয়ান কুমারী রাজকন্যা খুঁজে আনতে। কিন্তু স্টেফন এমন কন্যা খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হলেন। ফেরার পথে স্টোর্মস এন্ডের খুব কাছে তার জাহাজ ডুবে গেল। প্রাসাদে দাঁড়িয়ে তার দুই ছেলে রবার্ট ও স্ট্যানিস দেখল, তাদের বাবার জাহাজ ডুবে যাচ্ছে। স্টেফনের জাহাজডুবির খবর শুনে রাজা উন্মাদের মতো আচরণ শুরু করলেন। এই জাহাজডুবির দোষ গেল তার হ্যান্ডের ঘাড়ে। টাইউইন নাকি চক্রান্ত করে স্টেফনের জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছেন!
রাজার এমন মানসিক অসুস্থতা! তবে তার কোনো প্রভাব রাজ্যে পড়ল না। এত কিছুর পরও টাইউইন নিঃশব্দে তার কাজ করে চলছেন। এরিস তখন টাইউইনের উত্তরাধিকারের দিকে হাত বাড়ালেন। জেইমির বয়স তখন মাত্র ১৫ বছর। অল্প বয়সেই সে নাইট খেতাব অর্জন করেছে। অ্যারিসের কিংসগার্ডের একজন মারা গেলে শূন্যস্থানে তিনি নিয়োগ দিলেন জেইমিকে। একজন কিংসগার্ড আজীবন রাজার দেহরক্ষায় নিয়োজিত। সে কোনো হাউজের লর্ড হতে পারবে না, বিয়ে করতে পারবে না, এমনকি পাবে না বংশের সম্পত্তিও। এই পদ অত্যন্ত সম্মানজনক হলেও অ্যারিস মূলত টাইউইনের একমাত্র যোগ্য উত্তরাধিকারীকে আটকে ফেলার জন্যই এই পরিকল্পনা করেছিলেন।
এই পরিকল্পনা বুঝেও টাইউইন রাজার সামনে হাঁটু গেড়ে নত হয়ে, আনন্দিত ও সম্মানিত হবার অভিনয় করলেন। সাথে শারীরিক দূর্বলতাকে তুলে ধরে বিশ্রামের জন্য দায়িত্ব ছেড়ে দেবার আবেদন জানালেন। এবার এরিস রাজি হল। লর্ড ওয়েন মেরিওয়েদার হলেন নতুন হ্যান্ড। আর মুখোশের আড়ালের বন্ধুত্বকে বিদায় জানিয়ে টাইউইন ফিরলেন ক্যাস্টারলি রকে।
টাইউইনের হ্যান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করার দিনগুলোতে অপমান ও লাঞ্ছিত হবার পরও, তিনি একবারও রাজার বিপক্ষে কথা বলেননি। নীরবে সয়েছেন সব কিছু। হয়তো ভেতরে ক্রমাগত জ্বলেপুড়ে ছাই হয়েছেন, কিন্তু প্রকাশ করেননি। কিন্তু ভেতরে তৈরি হচ্ছিল ভয়ংকর এক প্রতিশোধ। সবকিছুর বদলা হয়তো তিনি মোক্ষম সময়ে নিতে চেয়েছিলেন। রবার্ট ব্যারাথিওনের বিদ্রোহের ফলে খুব দ্রুত সেই সময় তার কাছে ধরা দিল!
(চলবে)
[গেম অফ থ্রোনসের মূল ইংরেজি ও বাংলা অনুবাদ কিনতে পারেন রকমারিতে। ক্লিক করুন এখানে।]