“খ্যাতি,” আমেরিকান লেখক এরিকা জন একবার বলেছিলেন, “মানে লক্ষ লক্ষ মানুষ আপনার সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করছে!” ৪৪ বছর বয়সী, বৃশ্চিক রাশির জাতক হলিউড তারকা লিও তার নিজস্ব ভঙ্গিমায়, দুর্নিবার গতিতে এই কথাটিকে ক্রমাগত ভুল প্রমাণিত করে চলেছেন। তাকে বিবেচনা করা হয়, হলিউডের সেরা সম্পদদের অন্যতম একজন হিসেবে। টম হ্যাঙ্কস, টম ক্রুজ, ব্র্যাড পিট, জনি ডেপের মতো তারকাদের কাতারে দাঁড়ানো লিও তার দুর্দান্ত অভিনয় দিয়ে অনেক সময় যেন ছাপিয়ে গেছেন বাকি সবাইকে। লিও যদি কোনো সিনেমায় অভিনয় করতে সম্মত হন, তার মানে সিনেমাটি তৈরী না হওয়া পর্যন্ত সেই চরিত্র থেকে আর বের হবেন না তিনি! পার্টি বয়, প্লেবয় ইমেজ ধারণের পাশাপাশি তার মধ্যে কাজ করে অসাধারণ এক ব্যক্তিত্বের ছটা। তিনি যদি কোনো বিষয়ে কথা বলতে না চান, তবে সাংবাদিক যত জাঁদরেলই হোক না কেন, তার পেট থেকে কথা বের করার সাধ্য কারো নেই।
“হাই, আমি লিও,” টাইম আউট ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওর হোটেল কক্ষে গেলে ইলেকট্রনিক সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে এভাবেই অভিবাদন জানান তিনি। তার মুখে হাসি, মানে লক্ষণ শুভ। সাধারণত সাংবাদিক বা সাক্ষাৎকার গ্রহীতাকে খুব একটা সুবিধার মনে না হলে ব্যক্তিগত বিষয়ে মুখই খুলতে চান না তিনি। ‘রোমিও-জুলিয়েট’ বা ‘টাইটানিক’ সিনেমার চকোলেট বয় ইমেজ থেকে বেরিয়ে এসে এখন তার চেহারায় স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে পরিপক্বতার ছাপ। এর আগে পাঁচবার সেরা অভিনেতার জন্য অস্কারে মনোনয়ন পেলেও শেষ পর্যন্ত ‘দ্য রেভেনেন্ট’ তাকে এনে দিয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত সেই সম্মান। তুষারাচ্ছিদত হয়ে শুয়ে থাকা, -৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নগ্ন হওয়া, কাঁচা বাইসনের কলিজা খাওয়া- কী না করেছেন হিউ গ্লাস চরিত্রটিতে অভিনয় করার জন্য! এখনো ঘুমের মধ্যে নিজেকে ঘোড়ার পিঠে আবিষ্কার করেন তিনি। কারো কারো কাছে এটি নিছকই অভিনয় হলেও এই জীবনটি যেন নিজে যাপন করেছেন লিও। কানাডা আর আর্জেন্টিনায় নয় মাসব্যাপী শ্যুটিংয়ের ভয়াবহ অভিজ্ঞতাকে কলাকুশলীরা ‘লিভিং হেল’ বা জীবন্ত নরক বলে অভিহিত করেছেন। কেমন আছেন অস্কারজয়ী লিও? শর্টলিস্ট ডট কমের সাক্ষাৎকার অনুসারে চলুন তবে শুনে আসা যাক তার কাছ থেকেই।
শর্টলিস্ট ডট কম: লিওনার্দো না লিও- কোন নামে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: একটা হলেই হলো। বেশিরভাগ লোক আমাকে লিও বলেই ডাকে।
শর্টলিস্ট ডট কম: এজেন্টরা কখনো আপনার নাম বদলানোর চেষ্টা করেনি?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: করেছে বৈকি! ১১ বছর বয়সে যখন প্রথমবার পেশাদার অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করি তখন থেকেই চলেছে এই চেষ্টা। আমরা এক এজেন্টের কাছে যাই। সে আমার নাম বদলে লেনি উইলিয়ামস রাখার কথা বলে।
শর্টলিস্ট ডট কম: শুনতে খুব একটা ভালো শোনাচ্ছে না…
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: আসলেই ভালো না। তাদের মতে আমার নামটা নাকি বেশি সাম্প্রদায়িক। এই নামের কারণেই আমার ভাত জুটবে না। কিন্তু নাম বদলাতে আমার ঘোরতর আপত্তি ছিল। কাজেই দু’বছর পর, মানে ১৩ বছর বয়সে আবার নতুন করে স্বনামে আমাকে গ্রহণ করবে এমন একজন এজেন্ট খুঁজে বের করি।
শর্টলিস্ট ডট কম:মাত্র ১৯ বছর বয়সেই ‘হোয়াট’স ইটিং গিলবার্ট গ্রেপ’ সিনেমার জন্য অস্কার মনোনয়ন পেয়েছিলেন। মনে মনে স্টেজে উঠে দেয়ার জন্য বক্তৃতা ঠিক করে ফেলেননি?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: না! আমি কিছুই তৈরি করিনি। কোন দুঃখে আমাকে এই অ্যাওয়ার্ড দেয়া হবে, সেটাই ভেবে উঠতে পারছিলাম না! সে বছর আমি অস্কার পেয়ে গেলে বিশাল এক বিপর্যয় ঘটে যেত।
শর্টলিস্ট ডট কম: ‘হোয়াট’স ইটিং গিলবার্ট গ্রেপ’ সিনেমাটি শেষ কবে দেখেছেন?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: কয়েক বছর আগে।
শর্টলিস্ট ডট কম: নিজেকে চিনতে পেরেছিলেন?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: ঐ মুভিটাতে এবং বিশেষত ‘দ্য বয়’স লাইফ’ সিনেমাটিতে নিজেকে দেখে বেশ নস্টালজিক হয়ে পড়ি। মুভিগুলো দেখতে দেখতে মনে হয় আমি আবারও সেই শৈশবে ফিরে গেছি। আবেগ কাজ করে সিনেমা দুটোকে ঘিরে। সেই বয়সে পর্দার সামনে আসতে পেরে আমি সত্যিই খুব খুশি। প্রতিটি স্মৃতি এত জীবন্ত মনে হয়, মনে হয় যেন গতকালের ঘটনা! বিশেষ করে জনি ডেপ আর ডি নিরোর সাথে কাজ করাটা লটারি জেতার চেয়ে কোনো অংশে কম ছিল না।
শর্টলিস্ট ডট কম: লিও-ম্যানিয়ার বছরগুলোকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: লিও- কী?
শর্টলিস্ট ডট কম: লিও-ম্যানিয়ার বছর। ‘৯০ দশকের শেষদিকে যখন ‘টাইটানিক’ মুক্তি পেল, সে সময়টাকে ইন্টারনেটে এই নামেই অভিহিত করা হয়।
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: সত্যি? আমার কাছে ঐ সময়টা পরাবাস্তব কোনো জগতের মতো ছিল। অবাস্তব কিছু একটা। জিনিসটার ভেতরে এমনভাবে বুঁদ হয়ে গিয়েছিলাম যে বছর কয়েক কোনো কাজই করতে পারিনি। নিজেকে রিচার্জ করেই আবার কাজে নেমেছি।
শর্টলিস্ট ডট কম: কথিত আছে, আপনি নাকি ‘ব্যাটম্যান’ সিনেমায় রবিনের চরিত্রটি করার জন্য স্ক্রিন টেস্ট দিয়েছিলেন…
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: আমি জীবনেও স্ক্রিন টেস্ট দেইনি। জোয়েল শুমাখারের সাথে একবার মিটিং হয়েছিল। ওটা শুধুই একটা মিটিং ছিল, শেষ পর্যন্ত কাজটি করা হয়নি।
শর্টলিস্ট ডট কম: চরিত্রটিতে কী সত্যিই আপনার কাজ করার ইচ্ছা ছিল?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: আসলে, আমার মনে হয় না খুব একটা ইচ্ছা ছিল (হেসে)। যতদূর মনে পড়ে, মিটিং করতে রাজি হয়েছিলাম, চরিত্রটিতে অভিনয় করতে নয়। জোয়েল শুমাখার নিঃসন্দেহে একজন প্রতিভাবান পরিচালক, কিন্তু সে সময় তেমন কোনো চরিত্রের জন্য আমি নিজেই মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম না।
শর্টলিস্ট ডট কম: বন্দুকের গুলিকে পাশ কাটাতে পেরেছেন- এমন কোনো অনুভূতি হয়েছিল?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: (হাসি)।
শর্টলিস্ট ডট কম: স্টার ওয়ার্স প্রিকুয়েলে আনাকিন স্কাইওয়াকারের চরিত্রের জন্যও তো আপনাকে ভাবা হয়েছিল।
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: এ ব্যাপারে জর্জ লুকাসের সাথেও আমার মিটিং হয়েছিল।
শর্টলিস্ট ডট কম: তারপর কী হলো?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: একই কাহিনী হলো (হেসে)।
শর্টলিস্ট ডট কম: উনি আপনাকে চেয়েছিলেন, কিন্তু চরিত্রটি আপনার মনঃপুত হয়নি, তাই তো?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: হুম, ঠিক।
শর্টলিস্ট ডট কম: কেন?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: আবারও একই কথা বলতে হচ্ছে, চরিত্রটির জন্য আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম না, অন্তত তখন না।
শর্টলিস্ট ডট কম: বন্ধু টবি ম্যাগুয়েরের আগে স্পাইডারম্যানের চরিত্রে আপনার কাজ করার সম্ভাবনা কতটুকু ছিল?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: আহ, এটাও অনেকটা রবিনের মতোই পরিস্থিতি। ঐ পোশাকটা গায়ে চাপানোর মতো মানসিকতা তখনো আমার ছিল না। তবে সে সময় বেশ কিছু কালজয়ী চরিত্রে কাজ করার প্রস্তাব পেয়েছিলাম।
শর্টলিস্ট ডট কম: সুপারহিরো চরিত্রে কাজ করার কোনো ইচ্ছা আছে?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: এটা আগে থেকে কখনোই বলা যায় না, কখনোই না। সিনেমাগুলোতে একের পর এক দুর্দান্ত আর জটিল সব চরিত্র আনছে পরিচালকরা। আমি এখনো নিজেকে ঐ জায়গাটাতে কল্পনা করিনি। তবে হ্যাঁ, ছক বাঁধা কাজ করাটা আমার অভ্যাস না।
শর্টলিস্ট ডট কম: ক্রিস নোলানের ‘ইনসেপশন’ তো অভূতপূর্ব একটি সিনেমা। নোলানকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: এই সিনেমাটি শেষ করার সাধ্য হাতেগোনা কয়েকজন চলচ্চিত্র নির্মাতার আছে। এ ধরনের গল্পের সাথে সচরাচর দেখাও হয় না। আর এই পুরো ব্যাপারটা শুধুমাত্র ক্রিস নোলানের পক্ষেই সম্ভব।
শর্টলিস্ট ডট কম: সত্যি করে বলুন তো, স্ক্রিপ্টটা একবার পড়েই বুঝতে পেরেছিলেন?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: দেখুন, স্ক্রিপ্টটা মোটেও দুর্বোধ্য ছিল না। বুঝতে হবে এর পেছনে রয়েছেন এমন একজন মানুষ, একটি দুঃস্বপ্ন আর তাড়া করে ফেরার মতো একটি গল্প, যার সাথে আমাদের কারো পরিচয় নেই। অবচেতন মনের সেই অবদমিত ঘটনাগুলো চোখের সামনে দেখে বুঝে উঠতে কিছুটা সময় লাগবেই।
শর্টলিস্ট ডট কম: যাত্রাপথে মরতে মরতে বেঁচেছেন এমন ঘটনা বেশ কয়েকবার ঘটেছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় হাঙরের আক্রমণ থেকে কোনোমতে বেঁচে ফিরেছেন। এর আগেও একবার লাফ দিতে গিয়ে প্যারাশ্যুট সময়মতো খোলেনি। এ ধরনের পরিস্থিতিতে মনের ভেতর দিয়ে কেমন ঝড় বয়ে যায়?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুত, কারণ সবকিছু ঠিকমতো হওয়ার কথা ছিল। পার্কিং টিকেট পাওয়ার মতোই ঘটনাগুলো কোনো অংশে নাটকীয় হওয়ার কথা না। কিছু একটা ঘটলে মনে হয়: ধুর, আজকেই কেন এটা হতে হবে? আমি এখনো তরুণ। সামনে কত সম্ভাবনাময় জীবন পড়ে আছে। তার মধ্যে এসব দুর্ঘটনা খুব বিরক্তিকর। এখানে গভীর চেতনার কিছু নেই, তার চেয়ে বরং কোনোমতে বেঁচে ফিরে আসার ইচ্ছাটাই প্রবলভাবে কাজ করে।
শর্টলিস্ট ডট কম: ‘শাটার আইল্যান্ড’ সিনেমায় অভিনয় করার জন্য বেশ কয়েকবার মানসিক হাসপাতালের শরণাপন্ন হয়েছিলেন বলে শোনা যায়। ‘দ্য রেভেনেন্ট’ বাদে এখনো পর্যন্ত কোনো চরিত্রের জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতি কী নিয়েছিলেন?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: আসলে, এই সিনেমাগুলোর জন্য প্রস্তুতির ব্যাপারটাকে সেই অর্থে কোনো কিছু দিয়ে মাপা যাবে না। আপনি স্বপ্ন দেখছেন। আমি স্বপ্ন নিয়ে ফ্রয়েডের ব্যাখ্যাগুলো পড়েছি। তবে পড়াশোনা করার পরেও মনে হয়েছে, পুরো ব্যাপারটা আটকে আছে ক্রিস নোলানের মনে। কাজেই আমার প্রস্তুতি ছিল: নোলানের সাথে বেশি বেশি করে কথা বলে আট বছর ধরে তার মাথায় ঘুরতে থাকা গল্পটা, কনসেপ্টটা অনুধাবন করা।
শর্টলিস্ট ডট কম: এমন স্বপ্ন দেখেছেন কখনো যা আপনার মস্তিষ্কে গেঁথে আছে?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: আমি খুব বেশি স্বপ্নালু নই। স্বপ্নরা হুটহাট করে আসে, আমি তাদের ঝটপট ভুলে যাই!
শর্টলিস্ট ডট কম: প্রাঞ্জল স্বপ্ন দেখার জন্য কখনো হ্যালুসিনেশন তৈরির ড্রাগ গ্রহণ করেছেন?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: আপনি পিয়ট বা …. ওরকম কোনো নেশাজাতীয় দ্রব্যের কথা বলছেন? ঐ যে, যা কিনতে লোকে ব্রাজিলে যায়। উম, এই মুহূর্তে নামটা মনে পড়ছে না। আমার কয়েকজন বন্ধু আছে যারা ঐ নেশায় আক্রান্ত।
শর্টলিস্ট ডট কম: কিন্তু আপনি নিজে কখনো চেষ্টা করেননি?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: না, আমি কখনো ওসব চেষ্টা করিনি। তবে আমার বন্ধুদের কয়েকজন ব্রাজিল, পেরুতে গিয়ে ওগুলো কিনে এনেছে। চোখের সামনে দেখতাম ওসব ছাইপাঁশ খেয়ে ওরা বমি করছে, ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছে। ওদের কাছ থেকে সেসব অভিজ্ঞতা শুনে বেশ ভালো লেগেছ। কিন্তু বাস্তবতা আর কল্পনার মধ্যকার পার্থক্যটা আমি বুঝি। ওদের চেয়ে আমি অনেক ভালো আছি।
শর্টলিস্ট ডট কম: অস্কার জয়ের ব্যাপারটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: সত্যি বলব? সিনেমা বানানো বা তাতে কাজ করার সময় কখনোই এই কথাটা আমার মাথায় আসে না। অ্যাওয়ার্ড জিতব বলে কোনো কাজ করেছি এমনটাও ঘটেনি জীবনে। প্রতিবার কাজ করতে নেমে নিজের সেরাটুকু উজাড় করে দেয়ার চেষ্টা করেছি শুধু।
শর্টলিস্ট ডট কম: নোলান আর স্কোরসিস দুজনেই আপনাকে ভালবাসে। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। আপনার কী মনে হয়, আগের চেয়ে এখন সম্মান পাওয়ার জায়গাটা অনেকখানি বেড়ে গেছে?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: না, সত্যি কথা বলতে লোকে কী ভাবে তা নিয়ে আমার খুব একটা মাথাব্যথা নেই। আপনি যত বেশি লোককে সামলানোর চেষ্টা করবেন, তত বেশি তারা আপনাকে পেয়ে বসবে। সময় নষ্ট করার জন্য এর চেয়ে বাজে উপায় আর কিছু হয় না। আমার মতে, আপনার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কেউ আপনাকে বিচার করবে এটা মোটামুটি অসম্ভব।
শর্টলিস্ট ডট কম: ‘গ্যাংস অফ নিউ ইয়র্ক’ সিনেমায় শ্যুটিংয়ের সময় আপনি ডেনিয়েল ডে লুইসের নাক ভেঙে ফেলেছিলেন। কথাটি কি সত্যি?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: না, এটা ঠিক না। ও নিজেই ওর নাক ভেঙেছে। একটা দৃশ্য ছিল অনেকটা এরকম, খুব সম্ভবত যেখানে প্যাগোডার সামনে দাঁড়িয়ে আমার মাথার সাথে নিজের মাথা ঠুকে দেয়ার একটা সিন করতে হতো ওকে। মাথায় মাথায় ধাক্কা লেগেছিল এ কথাটা ঠিক, কিন্তু তার জন্য আমি দায়ী না।
শর্টলিস্ট ডট কম: সত্যি সত্যি মারামারি করেছেন কখনো?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: হ্যাঁ, করেছি! (হেসে)।
শর্টলিস্ট ডট কম: কী হয়েছিল তারপর?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: আহ, ঐ তো। মানে জুনিয়র হাই স্কুলে যা হয় আরকি। ছোটবেলায় আমি আকার-আকৃতিতে বেশ ছোটখাট ছিলাম, আর পাড়া-প্রতিবেশীরা ছিল বেশ রুক্ষ স্বভাবের। ১৫ বছর বয়সের আগ পর্যন্ত আমি খুব একটা বাড়িনি। এ কারণেই স্কুলে আমার চেয়ে বড় ছেলেরা কটু কথা বললে লড়াইয়ে জড়িয়ে যেতাম।
শর্টলিস্ট ডট কম: প্রথম জীবনের কোন অংশটুকু আপনার সবচেয়ে পছন্দের? কোন স্মৃতির কাছে আপনি বারবার ফিরে যেতে চান?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: ‘দ্য বয়’স লাইফ’। আজ থেকে প্রায় ২৫ বছর আগের কথা। আমার বয়স তখন ১৫, খুঁটিনাটি প্রতিটি ঘটনা মনে আছে আমার। আমার জন্য সবকিছু ছিল একদম নতুন। সেটে এসে রবার্ট ডি নিরোকে সামনাসামনি দেখা, কাজের প্রতি তার অধ্যবসায় আমার জীবনে খুব প্রভাব বিস্তারকারী অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।
শর্টলিস্ট ডট কম: ‘টাইটানিক’ সম্পর্কে কী বলবেন?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: আমার মতে, টাইটানিক আমার জীবনের গতি পাল্টে দেয়া একটি সিনেমা। তখনকার দিনে যে কাজগুলো আমি করছিলাম, তার থেকে একদম আলাদা একটি মুভি টাইটানিক। নিজেকে বলেছিলাম: “ঠিক আছে, পাগলের মতো প্যাশন থাকা মুভিটাতে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। এই সুযোগটা আমি কীভাবে কাজে লাগাব?” আমি বিশ্বাস করি, ভালো পরিচালক, ভালো গল্প নির্বাচনে যথেষ্ট পটু আমি। সময়ের সাথে সাথে অভিনেতা হিসেবেও নিজেকে খানিকটা গড়ে নিয়েছি। তবে যে ধরনের কাজে আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি, তার ধরন মোটেও পাল্টায়নি।
শর্টলিস্ট ডট কম: আপনি প্রেসিডেন্ট ওবামাকে বেশ সমর্থন করতেন। নিবেদিত পরিবেশবিদ হিসেবেও আপনার সুনাম আছে। রাজনীতিতে যোগ দেয়ার ইচ্ছে আছে?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: এ ব্যাপারে এখনো কোনো পরিকল্পনা নেই। দু’বছর ধরে জলবায়ু পরিবর্তনের উপরে একটি ডকুমেন্টারি বানিয়েছি। যদি কোনো কিছুতে সত্যিকার অর্থে আমাকে যোগদান করতে বলা হয়, তাহলে আমি বেছে নেব মানব সভ্যতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুটিকে- জলবায়ু পরিবর্তন। এই ক্ষেত্রে উচ্চপদস্থ কোনো কর্তাব্যক্তি হয়ে কাজ করতে ভালোই লাগবে। তবে তার মানে যে রাজনীতি করতেই হবে, এমন কিন্তু নয়। সাধারণ মানুষের চেষ্টায় অনেক বড় বড় পরিবর্তন ঘটে গেছে। আমার মতে, পরিবর্তনটা আনতে হবে সর্বস্তর থেকে। সঠিক সিদ্ধান্তের জন্য খালি রাজনীতিবিদদের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না।
শর্টলিস্ট ডট কম: ‘দ্য রেভেনেন্ট’ সিনেমার জন্য নিজেকে ঢেলে সাজিয়েছেন আপনি। একটি দৃশ্যে অভিনয়ের জন্য কাঁচা কলিজাও চিবিয়ে খেয়েছেন। কথাটি কি সত্যি? আসলেই খেয়েছিলেন নাকি এই জিনিস?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: খেয়েছিলাম। কারণ নকল কিছু চিবিয়ে ঐ অভিব্যক্তি দেয়া কখনোই সম্ভব নয়। আর্থার, আমেরিকার স্থানীয় যে সহ-অভিনেতার সাথে কাজ করেছি, সারাদিন কলিজা খেয়েই থাকত। আমি তো তবু মাঝে মাঝে বিশাল এক নকল কলিজা নিয়ে খাওয়ার ভান করতাম। শটটা একবারই দেয়ার দরকার ছিল। মাত্র দু’বার খেয়েই আমার কাজ হয়ে গিয়েছিল। স্ক্রিনে সব ঠিকঠাক ছিল। ভেতর থেকেই চলে এসেছিল অভিব্যক্তিটা।
শর্টলিস্ট ডট কম:‘দ্য রেভেনেন্ট’ সিনেমায় বিশ্বকে একটি নিরানন্দ দৃষ্টিতে দেখানো হয়েছে। লোকে একে অপরের সাথে ভয়ঙ্কর সব কাণ্ড ঘটায়, প্রকৃতিও তাতে বীতস্পৃহ। আপনি কি তবে নৈরাশ্যবাদী?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: পরিবেশবিদ হিসেবে প্রশ্নটি বেশ মজার। কিছুক্ষণের জন্য ‘দ্য রেভেনেন্টের’ সময়টাতে ফিরে যাওয়া যাক। পশ্চিমের উত্তাল তরঙ্গ, প্রাকৃতিক সম্পদের অযাচিত ব্যবহার, নির্বিচারে আমেরিকার স্থানীয় জনগোষ্ঠী উপর চালানো হত্যাযজ্ঞ, গণহারে গাছ কাটা, তেলের জন্য মাটি খোঁড়া- পৃথিবীজুড়ে কেবল এসবই চলছে। এই দেখে আপনি ভাবতে বসলেন: “হায় ঈশ্বর! আমরা কত বর্বর ছিলাম!” অতীতের কথা বাদ দিন, এখন কি আমরা খুব সভ্য আচরণ করছি? প্রকৃতি আর প্রাকৃতিক সম্পদের সাথে সাথে কী পরিমাণ প্রাণীদের আমরা হত্যা করছি, তা কল্পনাতীত। কিছুদিন আগে প্যারিস থেকে ঘুরে এসেছি। আমরা যদি জলবায়ু পরিবর্তনের কোনো সুরাহা করতে না পারি, তাহলে নিরানন্দ আর অন্ধকার ভবিষ্যৎ ছাড়া আর কিছুই কপালে জুটবে না।
শর্টলিস্ট ডট কম: আপনার তো একটা টুইটার অ্যাকাউন্ট আছে। টুইটগুলো কি নিজেই করেন না এর জন্য আলাদা লোক রাখা আছে?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: আমি নিজে টুইট করি, পরিবেশ বিষয়ক প্রতিটি কথা আমার নিজের। প্রায় ৮ মাস ধরে এসব ব্যাপারে কাজ করছি আমি। বন্য বাঘ নিয়ে কাজ করতে নেপাল, ভুটানে গিয়েছিলাম, আর মাত্র ৩,২০০ বাঘ বেঁচে আছে। আমার ওয়েবসাইটটা ঢেলে সাজিয়ে নতুন করে মানব ও পশুদের হিতৈষীকর কাজের বিষয়গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করব।
শর্টলিস্ট ডট কম: দাতব্য কাজে আপনি বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করেন। নিজের জন্য খরচ করেন না?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: বিলাসবহুল জীবনের পিছনে দু’হাতে টাকা ওড়ানোর মতো মানুষ আমি নই। আমি একজন সংগ্রাহক। শিল্প আর ভিন্টেজ ফিল্ম পোস্টার বা ঐ ধরনের জিনিস কিনতেই যা খরচ করি।
শর্টলিস্ট ডট কম: আপনার দেখা সবচেয়ে সুন্দর জায়গা কোনটি?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: বেশ কয়েকটি জায়গা আছে এরকম। থাইল্যান্ডের সমুদ্র সৈকত আমাকে মুগ্ধ করেছে। স্কুবা ডাইভের প্রতিও আমার ভালোই আকর্ষণ আছে। কাজেই আমি যখন গ্যালাপাগোসে যাই, যেখানে বসে ডারউইন তার বিবর্তনবাদের তত্ত্ব দিয়েছেন তা প্রত্যক্ষ করি, জায়গাটি আমার ভীষণ ভালো লাগে।
শর্টলিস্ট ডট কম: স্কুবা ডাইভের জন্য কোনো জায়গার পরামর্শ দেবেন?
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারে না। এটা আর বেলিজ এক কথায় চমৎকার। ব্লু হোলেও গিয়েছি আমি। দেখার মতো একটা জায়গা বটে!
ফিচার ইমেজ- thedressdown.com