শহরের রাস্তায় ঘোড়ার গাড়ির চাকা ঘুরছে। সাথে সাথে ঘুরছে মানব জীবনের চাকা। স্থির কয়েকটি চিত্রে দেখানো হয় জীবনের চিত্র। হাসি, কান্না আর থমকে থাকা জীবনের স্থিরচিত্রের সাথে ঘোড়ার গাড়ির চাকার ঘুরতে থাকা। মহাকালের চমৎকার এক প্রতিনিধিত্ব করে যেন। দেখানো হয় পৃথিবীর মানুষের সৃষ্টিশীল কাজগুলোকেও। স্থিরচিত্রে আরও দেখানো হয় প্রেমের চিত্র। জীবনের বয়ে চলা পুরনো ধারার চিত্র।
সিনেমার নাম ‘কখনো আসেনি’। প্রখ্যাত পরিচালক জহির রায়হানের এই সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৬১ সালের ২৪ নভেম্বর। এটি তার পরিচালিত প্রথম সিনেমা। এর আগে কয়েকটি সিনেমায় সহকারী পরিচালকের কাজ করেছেন তিনি। সেগুলোর মধ্যে ‘জাগো হুয়া সাভেরা’ অন্যতম।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে নতুন ধারা নিয়ে আসতে ‘কখনো আসেনি’ নির্মাণ করেন জহির রায়হান। এই চলচ্চিত্রের বিজ্ঞাপনে বলা হয়-
দেশের জনগণ বিশ বছর পরে যে ছবি দেখবে বলে আশা করেছিল। বিশ বছর আগেই দেশের তরুণরা সে ছবি তাদের উপহার দিল।
সিনেমা শুরু হয় শহরের রাস্তার পানিতে আলো পড়ার এক দৃশ্য দিয়ে। গাড়ি চলার রাস্তায় জমে আছে পানি। সেখানে লাইটের আলো পড়ে সেগুলো যেন তাদের অস্তিত্ব হারাচ্ছে। চমৎকার এক শট। সেই রাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়ে এক বাড়িতে উপস্থিত হন পুলিশ। দেখেন বিছানায় পাশাপাশি মরে পড়ে আছে দুই নারী। উপর তলায় গিয়ে দেখেন তাদের ভাইয়ের আঁকা অনেকগুলো ছবি। সেগুলোর একটি দেখে চোখ কপালে উঠে যায় পুলিশের। ছবিতে আঁকা রয়েছে নিচে এখন মরে পড়ে থাকা দুজনের হুবহু একটি ছবি।
চিত্রশিল্পীকে খুঁজে না পেয়ে ফিরে যান তারা। তারা ফিরে গেলে বাসায় ফেরে দুই নারীর ভাই সেই চিত্রশিল্পী। তার পর্দায় আসার দৃশ্য ক্যামেরায় বন্দী করা হয় চমৎকার এক প্যান শটের মাধ্যমে। গলায় শিকল লাগানো এক কুকুরের দৃশ্য থেকে প্যান করে দেখানো হয় টলতে থাকা সেই চিত্রশিল্পীকে। কুকুরের মতোই হাহাকার করছে যেন সেই লোকটি। খবর পেয়ে ফের তার বাড়িতে আসে পুলিশ। এসে দেখে মরে পড়ে আছেন লোকটিও।
সময় কেটে যায়। কেউ খুঁজে পান না তাদের মৃত্যুর কারণ। তাদের এই মরে যাওয়া নিয়ে পুলিশ রহস্যের কিনারা করতে পারেনি। কেউ জানে না পাশের বাসায় থাকা সেই নারীটিই বা কে। কেন অপলক দৃষ্টিতে মৃতদেহগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলো সে, পাশের বাসার বারান্দায় দাঁড়িয়ে।
এগুলো অনেক অনেক বছর আগের গল্প। লোকের কাছে অজানা রয়ে যাওয়া গল্প। সেই গল্পের পুনরাবৃত্তি হয় কালের পরিক্রমায়। এক যুগের পর আরেক যুগে। শুধু পরিবর্তন হয় কুশীলবের। সিনেমায় ন্যারেটর এই কথাগুলো দর্শকদের বলেন। সেই সাথে তাদেরকে পরিচয় করিয়ে দেন মহাকালের এক বড় সত্যের সাথে।
জহির রায়হান সেই অজানা গল্প বলার জন্য সেই বাড়িতে নিয়ে আসেন আরেক পরিবারকে। ইতিহাসে একজনের জায়গা যেমন আরেকজন দখল করে। ঠিক তেমনি করে এক চিত্রশিল্পী ভাই তার দুই বোন এবং বাবাকে নিয়ে এ বাড়িতে এসে ওঠে।
তাদের পাশের বাসা থেকে প্রায়ই তারা কান্নার আওয়াজ পায়। গভীর রাতে আসে এই আওয়াজ। হরর কোনো গল্প বলতে বসলেন নাকি পরিচালক!
না, তেমনটি নয়। পাশের বাসার বারান্দায় দেখা যায় এক নারীকে। এক স্থাপত্য নারীদেহের শিল্পের মতো নিশ্চল, নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকে সে। তার নাম মরিয়ম। এই বাড়িতে থাকেন আরও একজন লোক। তার নাম সুলতান। একজন শৌখিন লোক এবং শিল্পের সংগ্রাহক তিনি। তিনি শিল্পের একজন সমঝদার হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন।
তার নিজের সংগ্রহে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম দামি অনেক শিল্প। রক্ষিত করে রেখেছেন এখানে। তার জাদুঘরে। এই শিল্পকে সংগ্রহ করতে যেসব উপায় অবলম্বনের দরকার তা-ই করেন তিনি। যেখানে টাকা দিয়ে শিল্প কেনা যায় না সেখানে ছল করে নিজের করে নেন শিল্পকে। প্রয়োজনে চুরি করেন এবং খুন করতেও পিছপা হন না এই লোক।
এই কারণে সমাজ তাকে পাগল বললেও তার এতে যায়-আসে না কিছু। সবাই যখন জীবনের গতির কথা বলে তখন স্থির হয়ে থাকতে চান তিনি। সেই সময়ে আমাদেরকে শাসন করা পাকিস্তান সরকারের মানসিকতা যেন এই সুলতানের মধ্যে আশ্রয় পায়।
রূপকভাবে সমাজের বাস্তবতাকে উপস্থাপন করতে এক অনবদ্য নাম জহির রায়হান। পরবর্তীতে তার সেরা কাজ ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমায় এমন চিত্র দেখা যায় চমৎকাররূপে।
সুলতান সবচেয়ে মূল্যবান রত্নটি সংগ্রহ করেছেন মাত্র পঞ্চাশ টাকা খরচ করে। এটি একটি বাস্তব নারীমূর্তি। সুন্দরী এক নারী মরিয়ম। তাকে নিজের ব্যক্তিগত জাদুঘরে স্থান দিয়েছেন শ্রেষ্ঠ শিল্প হিসেবে। এই চমৎকার শিল্পে তিনি সাধারণ মানুষের হাত লাগতে দিতে চান না। মুক্ত রাখতে চান মানুষের ধরা-ছোঁয়া থেকে। তার মতে,
সুন্দর চিরকাল স্থির থাকবে, মানুষের হাতে সে নড়বে না। তুমি সেই সুন্দর, তুমি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকো আমার সামনে, আমি দেখি। আমি তোমাকে ছুঁবো না, ফুলের গায়ে হাত দিলে তার পাপড়িগুলো ঝরে যায়।
সৌন্দর্যকে কাছে পাওয়া যায় না, অনুভব করা যায় মাত্র।
সুলতান যেন তৎকালীন পাকিস্তানী স্বৈরশাসক। খুব অল্প দামে নিজেদের হিসেবে পেয়েছে আমাদের পূর্ব বাংলাকে। এখানে অন্য কারও হাত লাগুক এটা তারা চায় না। এখান থেকে তারা নিয়ে নেবে তাদের সুবিধাগুলো। কিন্তু মুক্তির প্রশ্নে থাকবে রাগের বহিঃপ্রকাশ।
কিন্তু মরিয়ম তো মানুষের তৈরি কোনো শিল্প নয়। তার ভেতরে রয়েছে আবেগ, রয়েছে মানুষের প্রেম পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। সে এভাবে স্থির হয়ে কতকাল আর থাকবে? তাই তার প্রেম হয়ে যায় পাশের বাসায় আসা সেই চিত্রশিল্পীর সাথে। তার নাম শওকত।
শওকতের কাছে শিল্প মানে বাস্তবতা। তার বোনদেরকে গানের মাধ্যমে বাস্তবতার গল্প বলার সময় নিজের আঁকা ছবি দেখান তিনি। একেকটি ছবি একেকটি বাস্তব চিত্র। এখানেও চলে আসে দ্বন্দ্ব। শিল্পীর জীবন কি অন্যদের জীবনের চেয়ে আলাদা? অনেকেই বলে থাকেন, শিল্পীদের জীবনের সাথে বিদ্যমান বাস্তব জীবনের একটি বড় ব্যবধান রাখতে হয়। কষ্ট করতে হয় অনেক। পেটে পাথর বেঁধে রাখতে হয়। আমাদের দেশের শিল্পী মানুষেরা নাকি আনন্দে ঘুরে বেড়ায়। এর উত্তর হয়তো শওকতের একটি কথায় রয়েছে,
দুনিয়াটাকে খোলা চোখে দেখতে চেষ্টা করুন। অনেক কিছু বুঝবেন।
পরিবার নিয়ে সুখেই দিন কাটছিলো তাদের। বাবার চাকরির সুবাদে ছেলেকে চাকরি খুঁজতে হন্নে হয়ে ঘুরতে হয় না। শওকত সাহেব তাই নিজের ছবি আঁকা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। বিভিন্ন সময়ে আয়োজন করেন বিভিন্ন ছবির প্রদর্শনী। আর প্রায়ই স্টলে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেন। আলাপ করেন প্রেম নিয়ে, জীবন নিয়ে। মুক্ত এক জীবনের স্বপ্ন নিয়ে পার করেন তার প্রতিটি দিন।
কিন্তু সমাজের চলমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থা কি এই শিল্পীর কদর করতে পারবে? নাকি আগের যুগের শিল্পীদের মতো হেলায় হারাবেন তিনি। দর্শকদের মনে তখন এই দ্বন্দ্ব।
পাশের বাসার মরিয়মকে দেখে সে তার প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু তার পরিবারের তখন বাজে দিন চলে এসেছে। বাবার বয়স হয়েছে। অফিসে কাজ করতে গিয়ে ভুল করছেন। তাকে চাকরি ছেড়ে দিতে বলা হচ্ছে। কিন্তু পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। দুই মেয়ের একজনকেও বিয়ে দিতে পারেননি। তাই কষ্টে হাতে পায়ে ধরে চাকরি চালাচ্ছিলেন।
তার মেয়েরা জানতো তিনি চাকরি চালাচ্ছেন। কিন্তু একদিন তার চাকরি চলে যায়। পকেটে এই কাগজ নিয়ে বাসায় আসেন তিনি। মেয়েদের দেখাতে পারেননি সেই কাগজ। সন্তানরা যাতে বুঝতে না পারে তাই প্রতিদিন অফিসের সময়টা বাইরে কাটান তিনি। পরবর্তিতে তারা কাগজ দেখে বুঝতে পারে তাদের বাবার চাকরি আর নেই।
জীবনের এই সংগ্রামের সময়ে প্রেম হয় মরিয়ম আর শওকত সাহেবের। একে অন্যের সাথে চমৎকার সময় কাটে তাদের। গ্রামে গিয়ে গ্রামীণ পরিবেশে ছবি আঁকে শওকত। তাকে সঙ্গ দেয় মরিয়ম। বৃষ্টিতে ভেজে দুজন।
কিন্তু মরিয়মের আবাস সেই জাদুঘরের মালিক সুলতান তাদের এই প্রেম সহ্য করতে পারেন না। তার মিউজিয়ামের সবচেয়ে দামি রত্নটি তার হাতছাড়া হয়ে যাবে এটা তিনি চান না। মানুষের হাতে মরিয়ম এক কদাকার মানুষ হয়ে উঠবে বলে তার মতামত। তিনি বলেন,
কোটি কোটি মানুষ ঘাসের মতো গজায়, সাধারণ মানুষের মতো বিয়ে করে একগাদা বাচ্চা পয়দা করার মধ্যে কী আছে? মাতৃত্ব? মাতৃত্ব তো গরুর দুধের মতো গলে গলে পড়ে।
এই জটিল সময়ে এসে পরিবারের জন্য মনটা হাহাকার করে শওকত সাহেবের বাবার। কিন্তু তিনি কিছুই করতে পারেন না তার পরিবারের জন্য। ছেলেরও হয় না চাকরি, না খেয়ে দিন পার করতে থাকে একটি উদ্দীপ্ত পরিবার। এরই মধ্যে মারা যায় তাদের বাবা। পরিবারে পুরো দ্বায়িত্ব এসে পরে শওকতের উপর। এদিকে মরিয়মকেও অনেক ভালোবাসে সে।
এখানে পরিচালক ফুটিয়ে তোলেন তাদের অভাবের আসল চিত্র। দুই বোন নিজেরা না খেয়ে তাদের ভাইকে খাবার দেয়। তারা যে খেতে পারেনি, ঘরে চাল নেই, সেই কথা ভাইকে জানায় না তারা। রাতে ক্ষুধার তাড়নায় ঘুমাতে পারেনা ছোট বোন। তখন তাদের মধ্যে চলা কথোপকথন শুনতে পায় তাদের ভাই। জীবনের কঠিন সময় এসে তার সামনে হাজির হয়। সে ছিঁড়ে ফেলে তার নিজের আঁকা চিত্রগুলো। যেন নিজের জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। যেন এতকাল ধরে সৃষ্টি করে আসা শিল্পগুলোর প্রতি বিরক্তি।
শওকতের মধ্যে তৈরি হয় দ্বন্দ্ব। মরিয়ম তাকে বলে দূরে কোথাও পালিয়ে যেতে। সুলতান সাহেবের নাগালের বাইরে। মরিয়মকে নিয়ে পালিয়েও যেতে পারে না সে। কারণ তার দুই বোনকে রেখে কোথায় যাবে সে? তার দুই বোনের দায়িত্ব তো তার উপর।
একদিন সে সিদ্ধান্ত নেয় পালিয়ে যাবে মরিয়মকে নিয়ে। তার বোনদের যা হয় হোক। সে তাদের জন্য কিছুই করতে পারছে না। তাই সে তাদের সাথে রাগ করতে শুরু করে। বাজে আচরণ করতে শুরু করে। তার দুই বোন হতবাক হয়ে যায় তাদের প্রিয় এই বড় ভাইয়ের আচরণ দেখে। একদিন শওকত সিদ্ধান্ত নেয় মরিয়ম পালিয়ে যাবার।
কিন্তু তার আঁকা ছবিগুলো বিক্রি করার জন্য কাউকে খুঁজে পায় না সে। যাদের কাছেই সে যায় তারা তাকে ফিরিয়ে দেয়। টাকা না পেয়ে ফিরে আসে আপন ঘরে। নতুন ঠিকানা হয় মৃত্যু। তখন এক চমৎকার দৃশ্যের অবতারণ হয়। তিনি দেখেন তারই মতো আরেকজন চিত্রশিল্পী ছবি আঁকছে। সেই লোকটিও ছবি আঁকছে তার ছোট দুই বোনের। এটি ছিলো তার বিভ্রম।
পরিচালক জহির রায়হান এখানে বড় একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকেছেন। শৈল্পিক মনের মানুষেরা কি করে মুক্তির কথা বলবেন? তাদের নিজেদের জীবনের সংগ্রামই তো বড় বড় গল্প হয়ে থাকে। টিকে না থাকতে পারার মধ্যে তাদের কি দোষ থাকে? তারা তো নিজেদের কোনো ভুলের খেসারতে এই অবস্থায় এসে উপস্থিত হন না। তাদের শিল্প নিয়ে ভাবতে হয়।
সেদিনই শওকত ও তার দু’বোন রহস্যজনকভাবে মারা যায়। মৃত্যুর আগে শওকত এঁকে যায় পাশাপাশি শুয়ে থাকা দু’বোনের ছবি। মৃত দু’বোন অবিকল সেভাবে শুয়ে থাকে। যেন তাদের ভাইয়ের আঁকা সেই দুই নারীর মরদেহের ছবি।
সময় প্রবাহে সেই বাড়িতে নতুন লোক ওঠে। এবারও আসে একজন চিত্রশিল্পী আর দু’বোন। ব্যালকনিতে মূর্তির মতো দাড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখে মরিয়ম। প্রতিবারের মতো এবার আবার নতুন আশার সঞ্চার করে সে। মুক্তি পাওয়ার আশা।
আর পরিচালক আমাদেরকে জানান দেন একটি মুক্তির আশা যেখান থেকে শুরু হয়েছিলো, অনেক জল্পনা-কল্পনার পর সেটি আবার সেখানেই শেষ হয়, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়। একই গল্প বারবার ফিরে আসে। কিন্তু তাতে থাকে না কোনো মুক্তির স্বাদ। কখনো আসেনি সেই কাঙ্ক্ষিত মুক্তি। আমাদের মনে তালা ঝোলানো করিডোর থেকে আমরা পাই না মুক্তি। কখনো মুক্তি আসে না আমাদের প্রাত্যহিক অবহেলায় থাকা জীবন থেকে।
এই সিনেমায় রয়েছে চিরকাল বহমান কয়েকটি দ্বন্দ্বের উপস্থাপন। মূর্ত আর বিমূর্ত জিনিসের মধ্যকার দ্বন্দ্ব। একজনের অনমনীয় শিল্পপ্রেমের সাথে একজন নিমগ্ন চিত্রকরের সংগ্রামের দ্বন্দ্ব। বাস্তব জীবনের সাথে কল্পনার জীবনের এক ভয়াবহ দ্বন্দ্ব। যে দ্বন্দ্ব অনন্তকাল ধরে বয়ে আসছে আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে।
পরিচালক জহির রায়হান এই গল্পে তুলে এনেছেন ছা-পোষা খেটে খাওয়া মানুষ শওকতের বাবা আর তার সন্তানদের জীবন। সে জীবনের যাতনা। শিল্পকে ভালোবাসা এক মানবের অস্তিত্ব সংকটের গল্প এটি। সমাজে টিকে থাকার যোগ্যতা তার কি নেই?
সিনেমায় সুলতান চরিত্রটি আলাদাভাবে নজর কাড়ে দর্শকদের। খলনায়ক হিসেবে এই চরিত্রে দারুণ অভিনয় করেছেন সঞ্জীব দত্ত। তার শারীরিক ভঙ্গি এবং মুখাবয়বের প্রতিক্রিয়া তাকে একজন স্বৈরাচারী মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করে, তার হাঁটাচলা আর কথা বলার ধরনে তাকে একজন অপ্রকৃতস্থ মানুষ হিসেবেই মনে হবে।
জীবন্ত স্থাপত্য হিসেবে উজ্জ্বল ছিলেন মরিয়ম চরিত্রে থাকা সুমিতা দেবী। খান আতাউর রহমান ছিলেন সেই চিত্রশিল্পী শওকত। নায়কের দুই ছোটবোনের একজন ছিলেন পরবর্তীকালের জনপ্রিয় নায়িকা শবনম, আরেক চরিত্রে কণা।
‘কখনো আসেনি’তে সংগীতের সুর ও সংগীতে ছিলেন খান আতাউর রহমান। তার সাথে আরো গান গেয়েছেন কলিম শরাফী ও মাহবুবা রহমান। সিনেমায় কয়েকটি দৃশ্যে পরিচালক মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। ঢাকা শহরের দৃশ্য, বৃষ্টির দৃশ্য কিংবা গ্রামের দৃশ্য চমৎকার দ্যুতি ছড়িয়েছে।