এই পৃথিবীর একটা প্রজন্ম বেড়ে উঠেছে হ্যারি পটারের মোহময় স্মৃতি সাথে নিয়ে। গাদা গাদা মুভি, সিরিজ, ও বইয়ের ভিড়ে হ্যারি পটারের জ্বলজ্বলে দীপশিখা এখনো স্বতেজে বিদ্যমান। হ্যারি পটার ভক্তরা (পটারহেড) কল্পনার সীমারেখা ভেদ করে অসংখ্যবার ঘুরে বেড়িয়েছে হগওয়ার্টসের আঙিনায়, ছড়ি ঘুরিয়ে উচ্চারণ করেছে প্রিয় মন্ত্রসমূহ, কিংবা অতি আগ্রহের সাথে ব্যবহার করেছে বিভিন্ন রকমের পোশন। মাগল হওয়ার দরুন কপাল চাপড়ানো বা দু-পায়ের ফাঁকে ঝাড়ু উড়িয়ে শৈশবে আকাশে উড়তে চেয়েছে, এমন মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়।
শৈশবের স্মৃতি রাঙিয়ে দেওয়া হ্যারি পটার সিরিজের যে চরিত্রগুলো মনে গভীর দাগ কেটে গেছে, তার মধ্যে লর্ড ভলডেমর্ট অন্যতম। জাদু জগতে সে এতটাই ত্রাস ছড়িয়েছিল যে, তার নাম মুখে আনতেই ভয় পেত সবাই। লর্ড ভলডেমর্টের পরিবর্তে তাকে ‘ইউ-নো-হু’, ‘হি-হু-মাস্ট-নট-বি-নেমড’ বলে সম্বোধন করা হতো। সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সে ভলডেমর্টের হ্যারি পটারের আমল দেখানো হলেও, সেখানে ভলডেমর্টের অরিজিন সম্পর্কে তেমন পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায় না। তাই আজকের লর্ড ভলডেমর্ট আলোচনায়, মুভির ভলডেমর্টের চেয়ে পর্দার আড়ালে থাকা ভলডেমর্টের কাহিনীই প্রাধান্য পাবে বেশি।
তার আসল নাম টম মারভোলো রিডল। ১৯২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর, ইংল্যান্ডের লন্ডন শহরের ওলস অরফানেজে জন্ম নেয় সে। মা জাদুকর এবং পিতা মাগল (জাদুকর নয় এমন মানুষ) হওয়ায় সে ছিল একজন হাফ-ব্লাড (মিশ্রিত রক্ত)। মায়ের দিক থেকে সে ছিল উচ্চবংশীয়, কারণ তার মা ছিল হগওয়ার্টসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সালাজার স্লিদারিনের বংশধর।
টম রিডলের মা মেরোপি গন্ট ছেলেবেলা থেকেই শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। সম্ভ্রান্ত জাদু বংশের উত্তরাধিকারী ও পিওর-ব্লাড হওয়া সত্ত্বেও সে ঠিকমতো জাদু ব্যবহার করতে পারত না।
কাল পরিক্রমায় একসময় মেরোপি গন্ট টম রিডল সিনিয়র নামে এক মাগল যুবকের প্রেমে পড়ল। সে লাভ পোশনের মাধ্যমে টম রিডলকে প্রেমের ফাঁদে আষ্টেপৃষ্ঠে ফেলল। সেকথা মেরোপির বাবা মারভোলো গন্ট জানতে পেরে টম রিডলকে মারার চেষ্টা করে। কিন্তু অনেক চেষ্টার পরেও মারভোলো তাতে ব্যর্থ হয়। জাদুবলে মাগল হত্যার চেষ্টা করায়, সে ‘ম্যাজিকাল ক্রিমিনাল আইন’ ভেঙে ফেলেছিল। সে অপরাধে তাকে পাঠানো হয় ঘুটঘুটে অন্ধকারাচ্ছন্ন আজকাবান কারাগারে।
টম রিডল সিনিয়রের সাথে অবাধ মেলামেশার কারণে একসময় অন্তঃসত্ত্বা হয়ে যায় মেরোপি গন্ট। পেটে সন্তান থাকায় টমের উপর লাভ পোশন প্রয়োগ করা বন্ধ করে দেয় সে। ভেবেছিল, সন্তানের প্রতি টান জন্মানোর ফলে কখনো তাকে ছেড়ে যাবে না টম রিডল সিনিয়র। কিন্তু ফলাফল হলো এর বিপরীত। মেরোপিকে বিপদসঙ্কুল অবস্থায় রেখে নিরুদ্দেশ হয় টম রিডল সিনিয়র।
গন্ট পরিবারের কাছে স্লিদারিনের রেখে যাওয়া একটা লকেট সংরক্ষিত ছিল। অর্থের টানাপোড়েনে মেরোপি স্লিদারিনের সে লকেট বিক্রি করে দেয় ‘বর্গিন এন্ড বার্কস’ নামক এক দোকানে। তারপর লন্ডনের ওলস অরফানেজের উদ্দেশে পাড়ি জমায়। ওখানেই জন্ম হয় হগওয়ার্টসের অন্যতম সেরা খলনায়ক লর্ড ভলডেমর্ট ওরফে টম মারভোলো রিডলের।
ওলস অরফানেজে বেড়ে উঠতে লাগল টম রিডল। জন্মের সময়ই মাতৃবিয়োগের তিক্ত স্বাদ ভোগ করতে হয় তাকে। টম জানত না, সে একজন জাদুকর। তবে নিজের অলৌকিক ক্ষমতা সম্পর্কে কিছুটা টের পাওয়া শুরু করেছিল। ১১ বছর হবার পর, টমকে নিয়ে যেতে ওলস অরফানেজে পা পড়ে মহান জাদুকর অ্যালবাস ডাম্বলডোরের। ডাম্বলডোর রিডলের সাথে দেখা করলে সে তাকে মানসিক রোগের চিকিৎসক মনে করে। কিন্তু ডাম্বলডোর রিডলকে জাদুর মাধ্যমে আগুন লাগিয়ে দেখালে, সে খানিকটা ভরসা পায়। এ সময় রিডল ডাম্বলডোরকে তার অলৌকিক শক্তির কথা খুলে বলে। যেমন, না ছুঁয়েই কোনো জিনিস নাড়ানো, সাপের সাথে কথা বলা ইত্যাদি।
ডাম্বলডোর তখন তাকে জানান, তার এই অলৌকিকতার কদর করার জন্য হগওয়ার্টস নামক বিশেষ এক জাদুর স্কুল আছে, এবং সে স্থান তার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। যাওয়ার সময় তিনি তাকে ডায়াগন অ্যালি, প্লাটফর্ম নাইন অ্যান্ড থ্রি কোয়ার্টারস ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা দিয়ে আসেন, এবং হাতে গুঁজে দেয় স্কুল ফান্ডের কিছু অর্থ। তা দিয়ে ডায়াগন অ্যালি থেকে রিডল কিছু মন্ত্রের বই এবং একটি জাদুর ছড়ি কিনে হগওয়ার্টসের উদ্দেশে রওয়ানা দেয়।
১৯৩৮ সালে হগওয়ার্টসে পা রাখার পর, ‘সর্টিং হ্যাট’ নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষে তাকে ‘হাউজ স্লিদারিন’-এ পাঠায়। কারণ সে ছিল সালাজার স্লিদারিনের একজন বংশধর। ধীরে ধীরে নিজ মেধার পরিস্ফুটন ঘটাতে থাকে টম রিডল। শ্রেণিকক্ষের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে প্রশংসার ফুলঝুরি কুড়িয়ে নেয় সে। ইতোমধ্যে সে স্লিদারিনের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে খুলে বসে একটা গ্যাং, যেটা থেকেই পরে ‘ডেথ ইথার’ দলের জন্ম হয়। রিডল দাবি করত, সংগঠনের সদস্যরা সবাই ওর বন্ধু, কিন্তু সে মোটেও ওদের সাথে বন্ধুর মতো আচরণ করত না। ওদেরকে সে ভৃত্যের নজরেই দেখত।
হঠাৎ একসময় সে নিজ পূর্বপুরুষ ও পরিবার সম্পর্কে জানার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। সে ভেবেছিল, তার মা-বাবা দু’জনই জাদুকর; অর্থাৎ সে পিওর-ব্লাড। সেজন্য সে পিওর-ব্লাড ছাড়া বাকিদের প্রতি (হাফ-ব্লাড ও মাগল) ঘৃণা পোষণ করত। মায়ের পরিচয় জানতে পারলেও, বাবার পরিচয় জানার জন্য স্কুলের ট্রফি কক্ষ, জাদু জগতের নথিবদ্ধ ইতিহাস, সবকিছু তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোনো হদিস পেল না। তাকে একপ্রকার জোরপূর্বক মেনে নিতে হলো, তার বাবা একজন মাগল। আর তার মা একজন জাদুকর হওয়ায় সে নিজে একজন হাফ-ব্লাড। সেজন্য সে নিজেই নিজেকে ঘৃণা করতে শুরু করল।
‘টম মারভোলো রিডল’ নামের মারভোলো শব্দের সূত্র ধরে মাতামহ মারভোলো গন্টের মাধ্যমে সালাজার স্লিদারিনের সাথে সে তার যোগসূত্র খুঁজে পেল। সালাজার স্লিদারিনকে নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতে হঠাৎ সে একদিন ‘চেম্বার অভ সিক্রেটস’ সম্পর্কে জানতে পারে। সালাজার স্লিদারিনের উত্তরসূরী হওয়ায় হগওয়ার্টসের ‘চেম্বার অভ সিক্রেটস’ খুলে ফেলতে সক্ষম হয় সে। তার ফলে বেরিয়ে আসে ব্যাসিলিস্ক নামের দানবীয় এক সরীসৃপ, এবং আঘাত করে বসে অনেক মাগল শিক্ষার্থীকে। সরীসৃপটি মার্টেল ওয়ারেন নামক একটা মেয়েকে মেরে ফেললে, হগওয়ার্টসের সভাসদেরা স্কুল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
সে সময় রিডল প্রধান শিক্ষক আরমান্ডো ডিপেটকে অনুরোধ জানায়, তাকে যেন এখানে থাকতে দেওয়া হয়। তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হয়। নিজেকে বাঁচানোর জন্য রিডল সব দোষ চাপায় হগওয়ার্টসের ছাত্র রুবিয়াস হ্যাগ্রিড ও তার পোষা প্রাণী অ্যাক্রুম্যান্টুলা ও অ্যারগগের উপর। রিডল যেভাবেই হোক ডিপেটকে বোঝাতে সক্ষম হয় যে, হ্যাগ্রিডের পোষা অ্যারগগই এই স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ত্রাস ছড়িয়ে যাচ্ছে। শাস্তিস্বরূপ হ্যাগ্রিডকে তখন হগওয়ার্টস থেকে বের করে দেওয়া হয় আর রিডলকে করা হয় পুরস্কৃত। কিন্তু ডাম্বলডোর বিশ্বাস করতেন, হ্যাগ্রিড এ খুনের জন্য দায়ী নয়। তাই তিনি হ্যাগ্রিডকে হগওয়ার্টসের মাঠ-রক্ষক হিসাবে রেখে দিলেন। আর গোপনে নজর রাখতে শুরু করলেন টম রিডলের উপর।
১৯৪৩ সালের আগস্টে, স্কুলের খণ্ডকালীন ছুটিতে রিডল তার নানাবাড়ি লিটল হ্যাংলেটনের দিকে রওনা দেয়। সেখানে যাওয়ার পর, জীর্ণশীর্ণ বাড়িটার প্রতি সে মায়া অনুভব করে। আধভাঙা দরজাটা খুলেই সে তার মামা মরফিন গন্টের দেখা পায়। টম রিডলকে দেখে মাথায় রক্ত চেপে যায় মরফিনের। মরফিন ভাবে, এ আগন্তুক টম রিডল সিনিয়র। প্রচণ্ড ক্ষোভে সে রিডলের উপর আক্রমণ করে বসে। কিন্তু রিডল তাকে বোঝানোর চেষ্টা করে, সে টম রিডল সিনিয়র নয়, বরং তার ছেলে টম মারভোলো রিডল। ভাগ্নের কথা শুনে শান্ত হয় মরফিন। যতই হোক নিজের রক্ত! একে একে মরফিন খুলে বলে মেরোপি-রিডলের প্রেম উপাখ্যান। পুরো কাহিনী শুনে পিতা টম রিডল সিনিয়রের উপর বেজায় চটে যায় টম মারভোলো রিডল। মামার জাদুর ছড়ি ধার করে খুনের উদ্দেশে বেরিয়ে টম রিডল সিনিয়র ও তার পুরো পরিবারকে মৃত্যুশাপ দিয়ে হত্যা করে।
যাদুতে তুখোড় দক্ষতা রপ্ত করার ফলে টম রিডল যে কারও স্মৃতিকে ভুলিয়ে দেয়ার ক্ষমতাও আয়ত্ত করে নিয়েছিল। সে মরফিনের স্মৃতিকে ভুলিয়ে তাকে দিশেহারা করে দিল। তখন মরফিন নিজের অজান্তেই টম রিডল পরিবারকে হত্যার দায় স্বীকার করে নিল। ফলে জাদু মন্ত্রণালয় মরফিন গন্টকেও চালান করল আজকাবান কারাগারে। ওখান থেকে টম গন্ট পরিবারের আংটিটা নিয়ে চলে আসে।
স্কুলের খণ্ডকালীন ছুটি শেষে হগওয়ার্টসে ফিরে আসে টম রিডল। প্রচণ্ড মেধাবীদের বোধহয় নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি ঝোঁক ও আগ্রহ থাকে একটু বেশিই। তাই, হগওয়ার্টসে নিষিদ্ধ হওয়া কালো-জাদু, ডাকিনীবিদ্যা ও পিশাচ-তত্ত্বের প্রতি তার দুর্বলতা ছিল সবসময়ই। টম রিডল সবসময়ই মনে অমর হবার ইচ্ছা পোষণ করত। সে মৃত্যুকে মনে করত লজ্জাজনক মানবীয় দুর্বলতা। মৃত্যুই ছিল তার একমাত্র ভয়।
ষষ্ঠ বর্ষে থাকাকালীন রিডল প্রফেসর স্লাগহর্নকে হরক্রাক্স সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। সে জানতে চায়, একের বেশি হরক্রাক্স বানানো যাবে কি না। সে এই হরক্রাক্সের কথা মূলত নিষিদ্ধ বই থেকে জানতে পেরেছিল। স্লাগহর্ন সাত-পাঁচ কিছু না ভেবেই নির্দ্বিধায় টপাটপ সব উত্তর বাতলে দেয়। কারণ স্লাগহর্ন তখনো রিডলের আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত ছিল না। ভেবেছিল, ছেলেটা বোধহয় কৌতূহল মেটানোর জন্য প্রশ্নগুলো করছে।
সবকিছুর তালিম নিয়ে এবার প্রয়োগের দিকে হাত বাড়ায় টম। সে বছরই নিজের ডায়েরিকে প্রথম হরক্রাক্স ও গন্ট পরিবারের আংটিকে দ্বিতীয় হরক্রাক্সে রূপান্তর করে ফেলে। হগওয়ার্টসে ৭ সংখ্যাটার মাহাত্ম্য থাকায়, টম ভাবল তার আত্মাকে মোট সাত টুকরো করে সাতটা হরক্রাক্সে পুরে দেবে। এভাবে কেটে যেতে থাকে দিন। অতিমানবীয় পারফর্ম্যান্স ও সুকৌশলের কারণে পুরো হগওয়ার্টসে ছড়িয়ে যেতে থাকে তার খ্যাতি। শেষ বর্ষে এসে সবাইকে টপকে ‘হেডবয়’ হয়ে যায় সে। ঝুলিতে পুরে নেয় দামি দামি সম্মাননা ও অর্জন। তার মধ্যে একটি হলো ‘মেডেল ফর ম্যাজিকাল মেরিট।’
গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর রিডল তৎকালীন হগওয়ার্টসের প্রধান শিক্ষক আরমান্ডো ডিপেটকে করে অনুরোধ করে, তাকে যেন স্কুলে ‘ডিফেন্স অ্যাগেইনস্ট দ্য ডার্ক আর্টস’ বিষয়টা পড়ানোর সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু সে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায়, তার সে প্রস্তাব নাকচ করে দেয়া হয়। স্কুল থেকে যাওয়ার আগে সে হগওয়ার্টসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রোয়েনা র্যাভেনক্ল’র মেয়ে হেলেনা র্যাভেনক্লকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে তার মায়ের ডায়াডেমটা (রাজমুকুট) কোথায় আছে, তা জেনে নেয়। র্যাভেনক্ল’র ডায়াডেম আনার জন্য তাকে একটু পাড়ি জমাতে হয় সুদূর আলবেনিয়ায়। কারণ, র্যাভেনক্ল ছিলেন একজন আলবেনীয় ধর্মযাজিকা। সেখানে এক কৃষককে হত্যা করে ডায়াডেমটি ছিনিয়ে নেয় রিডল। তারপর সেই ডায়াডেমকে রূপান্তর করে তৃতীয় হরক্রাক্সে। ব্রিটেনে ফিরে আসার পর তার কাছে জাদু মন্ত্রণালয়ে যোগ দেয়ার জন্য অনেক চিঠি আসতে থাকলেও সে ‘বর্গিন এন্ড বার্কস’ দোকানে চাকরি নিয়ে নেয়।
এখানে কাজ করার সময় হেপজিবাহ স্মিত নামক এক নারীর সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। সে ছিল হগওয়ার্টসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হেলগা হাফলপাফের একজন বংশধর। হেপজিবাহ হঠাৎ একদিন টমকে তার কাছে থাকা সবচেয়ে মূল্যবান দুটো জিনিস দেখায়। একটা লকেট (স্লিদারিনের লকেট) ও একটা কাপ (হাফলপাফের কাপ)। এগুলো দেখার পর লোভে চোখ চকচক করে উঠল ভলডেমর্টের, তখন নিজেকে সে সামলে রাখল কোনোমতে। তারপর সুযোগ বুঝে হেপজিবাহকে খুন করে, ওগুলো চুরি করে নিয়ে আসে সে। আগের মতোই দোষ চাপানো হলো অন্যজনের ঘাড়ে। এবার সে হতভাগ্য হলো হেপজিবাহর ভৃত্য হাউজ-এল্ফ।
এরপর রিডল কোমরে গামছা বেঁধে বছর দশেকের জন্য নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এই ক’ বছরেই সু-পরিকল্পনা মাফিক সবকিছুর নকশা নিখুঁতভাবে সাজাতে থাকে। হরক্রাক্স বানানো ও তা গুপ্ত-জায়গায় সংরক্ষণের কাজ সেরে ফেলে সে। এ সময়ে কালো-জাদু সম্পর্কে বিশদ গবেষণা করে, বেশ ভালোভাবেই সেটি রপ্ত করে নেয় সে। তারপরই নিজের টম মারভোলো রিডল নাম ছাঁটাই করে, এর বদলে সেঁটে দেয় ‘লর্ড ভলডেমর্ট’। হরক্রাক্সগুলো কতটা সুরক্ষিত, ভলডেমর্ট তা পরীক্ষা করতে চাইল।
সেজন্য সে স্লিদারিনের লকেটটাকে ক্রিস্টাল কেইভে (স্ফটিক গুহা) রেখে তার অনুগত ভৃত্য রেগুলাস ব্ল্যাকের হাউজ-এল্ফ ক্রিচারকে ওই গুহায় নিয়ে গেলো। তারপর তাকে এমেরাল পোশন খাইয়ে ক্রিস্টাল কেইভ আইল্যান্ডে ছেড়ে দেওয়া হলো। ক্রিচার হাউজ-এল্ফ জাদুর দ্বারা ওখান থেকে পালাতে সক্ষম হয়েছিল। তারপর কিছু বছর লাগিয়ে, ভলডেমর্ট একটি ইনফেরি ফৌজ গঠন করলো, যাতে কেউ ক্রিস্টাল কেইভে গিয়ে তার হরক্রাক্স ধ্বংস করতে চাইলে ইনফেরিদের হাতে বেঘোরে প্রাণ হারাতে হয়। এভাবে সে প্রত্যেকটি হরক্রাক্সের জন্য আলাদা আলাদা সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করল। যেমন- মারভোলো গন্টের আংটিটা গন্ট পরিবারের বাড়িতে, ডায়েরিটা লুসিয়াস ম্যালফয়ের হেফাজতে, হাফলপাফের কাপ গ্রিংগটস ব্যাংকের লেস্ট্রেঞ্জ পরিবারের ভল্টে, লকেট ইনফেরিপূর্ণ লেকের গুহায় আর ডায়াডেমটা হগওয়ার্টসের হাউজ অভ রিকোয়ারমেন্টে।
দশ বছর পর সে যখন হগওয়ার্টসে ফিরে এল, ডাম্বলডোর তখন হগওয়ার্টসের প্রফেসর। সে আবারও ‘ডিফেন্স অ্যাগেইনস্ট ডার্ক আর্টস’ বিষয়ের প্রফেসর হতে চাইলে ডাম্বলডোর তাকে বাধা দেন। সে তখন রেগে-মেগে অভিশাপ দেয়, এক বছরের বেশি কোনো শিক্ষক হগওয়ার্টসে এই বিষয় পড়াতে পারবে না। সবকিছু নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ভলডেমর্ট তখন ‘ডেথ ইটার’ নামক একটি সংগঠন দাঁড় করায়। এতে যোগ দিল সেভেরাস স্নেইপ, রেগুলাস ব্ল্যাক, বার্টি ক্রাউচ জুনিয়র, বেল্লাট্রিক্স লেস্ট্রেঞ্জ, মালকিবার, লুসিয়াস ম্যালফয়ের মতো খ্যাতনামা জাদুকরেরা। উদ্দেশ্য একটাই, মাগল বংশজাত জাদুকরদের নির্মূলের মাধ্যমে জাদুকর সম্প্রদায়কে বিশুদ্ধ করা। এছাড়াও, জাদু মন্ত্রণালয় দখল করে সারা বিশ্বে নিজেদের কর্তৃত্ব ফলাতেও তারা ছিল বদ্ধপরিকর।
অনুসারীদের কাছে সে ডার্ক লর্ড নামেও পরিচিত ছিল। দলের বাকি সদস্যদের সে যতটা না পরিবারের লোক বা বন্ধু হিসেবে দেখত, তার চেয়ে বেশি গণ্য করত তার ভৃত্য হিসেবে। দক্ষ জাদুকর দলে ভেড়ানোর পাশাপাশি, দলে আনা হলো বিশালাকার দৈত্যদের, যাদের পর্বতে নির্বাসিত করা হয়েছিল। আনা হলো ওয়্যারওলভস, গবলিন, ডিমেন্টরদেরকেও।
১৯৭০ সালে শুরু হয় জাদু-জগতের প্রথম মহাযুদ্ধ। গ্রিস-ট্রয়ের যুদ্ধের মতো এ যুদ্ধও চলল টানা প্রায় ১০ বছরের মতো। এ সময় জাদু আইন নিয়ন্ত্রণ বিভাগের প্রধান বার্তেমেউ ক্রাউচ সিনিয়র অরোরদেরকে (জাদু গোয়েন্দা) ডেথ ইটারদের ওপর ‘আনফরগিভেবল কার্স’ ব্যবহার করার অনুমতি দিলো। এ সময় লোকজন ভয়ে এতই চুপসে গিয়েছিল যে, অনেক বছর ধরে ভলডেমর্টের নাম নিতেও ভয় পেয়েছে। সেজন্য তাকে ‘ইউ-নো-হু’, ‘হি-হু-মাস্ট-নট-বি-নেমড’ বলে ডাকা হতো। লর্ড ভলডেমর্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ডাম্বলডোর ‘অর্ডার অভ দ্য ফিনিক্স’ নামে একটা দল তৈরি করলেন। যুদ্ধে ডাম্বলডোরেরই জয় হয়, এবং তিনি হগওয়ার্টসকে পূর্ণ সুরক্ষা দিতে পেরেছিলেন।
জাদু জগতে প্রথম মহাযুদ্ধের পর সিবিল ট্রিলনি ডাম্বলডোরের কাছে ডার্ক লর্ডের পতন সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে বসে, এবং তা শুনে ফেলে ডেথ ইটারের সক্রিয় সদস্য সেভেরাস স্নেইপ। এই ভবিষ্যদ্বাণী মূলত নেভিল লংবটম কিংবা হ্যারি পটারের উপর বর্তায়। লংবটম ও হ্যারি দু’জনের মা-বাবা’ই অর্ডার অভ দ্য ফিনিক্সে সদস্য, দু’জনেই জন্মেছিল বছরের সপ্তম মাস জুলাইয়ে। কিন্তু একটা কারণে ভলডেমর্ট হ্যারিকেই প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বেছে নেয়। কারণ হ্যারি ও ভলডেমর্ট, দু’জনেই হাফ-ব্লাড। পরাজয়ের হাত থেকে বাঁচতে, বাচ্চা হ্যারিকে খুন করতে যায় ভলডেমর্ট।
হ্যারির জন্মের কিছুদিন পর অর্ডার অভ দ্য ফিনিক্সের সদস্য ও হ্যারি পটারের গোপন সংরক্ষক পিটার পেট্টিগ্রু গোপনে ডেথ ইটারদের কাছে তথ্য পাচার করতে থাকে। ১৯৮১ সালের ৩১ অক্টোবর, সে ভলডেমর্টকে হ্যারি পটারের ঠিকানা বলে দেয়। ভলডেমর্ট পটার দম্পতির বাসায় ঢুকে নিরস্ত্র অবস্থায় জেমস ও লিলি পটারকে খুন করে। তারপর মৃত্যু-শাপ প্রয়োগ করে হ্যারিকে খুন করতে চাইলে, ব্যর্থ হয় সে।
কারণ, লিলি হ্যারির জন্য তার জীবন স্বেচ্ছায় উৎসর্গ করে দিয়ে, তার চারপাশে একটা প্রাচীন জাদুর বলয় তৈরি করে দিয়েছিল। মায়ের ভালোবাসার থেকে জন্ম নেওয়া সেই মৃত্যু-শাপ উল্টো ভলডেমর্টের উপরেই গিয়ে আঘাত হানে। এই আক্রমণের চিহ্ন হিসেবে হ্যারির কপালে বিদ্যুৎ চমকানো আকৃতির একটি কাটা দাগ থেকে যায়। তখন ভলডেমর্টের আত্মার একটি অংশ হ্যারির দেহের সাথে সংযুক্ত হয়ে যায়। এভাবে অজান্তেই তৈরি হয়ে যায় ভলডেমর্টের একটি হরক্রাক্স।
আত্মাগুলো বিভিন্ন হরক্রাক্সে থাকায় সে যাত্রায় মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যায় ভলডেমর্ট। কিন্তু তার শরীর প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে। তারপর সে আবার নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। হ্যারি হত্যা মিশনে ব্যর্থ হয়ে গেলে, কোণঠাসা হয়ে পড়ে ডেথ ইটাররা। জাদু মন্ত্রণালয় সংগঠনের সদস্যদের ধরে ধরে আজকাবানে পাঠায়। তখন কেউ কেউ জবানবন্দি দেয়, তাদেরকে জোর করিয়ে ও ভয় দেখিয়ে ভলডেমর্ট এ কাজে রাজি করিয়েছে। তবে দুজন জাদুকর ভলডেমর্টের কাছে নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়েছিল; বেল্লাট্রিক্স লেস্ট্রেঞ্জ ও তার স্বামী রডলফাস লেস্ট্রেঞ্জ।
এদিকে অবয়বহীন ভূত হিসেবে জীবন অতিবাহিত করতে থাকে ভলডেমর্ট। তার শরীর অবশিষ্ট না থাকলেও, হরক্রাক্সে থাকা আত্মার অংশগুলো তার অস্তিত্ব প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছিল। কিন্তু মানুষের আকার নিতে না পারলেও, সে বিভিন্ন জীব-জন্তুর আকার নিতে পারত। তবুও সে মনুষ্যসমাজে ঢোকার সাহস করল না, কারণ অরোর ফৌজ তাকে তখনো খুঁজে বেড়াচ্ছে।
১৯৯১ সালে হগওয়ার্টসের প্রফেসর কুইরেল যখন আলবেনিয়া ভ্রমণে গিয়েছিল, ধূর্ত ভলডেমর্ট তখন সহজ-সরল কুইরেলকে নিজের দলে ভিড়িয়ে নেয়। তারপর তার শরীরে স্থান নিয়ে ইংল্যান্ডে চলে আসে। ভলডেমর্ট জানত, পরশপাথর দিয়ে সে আগের অবস্থায় ফিরে আসতে পারবে। এবং তাও জানত, সেই পাথর সুরক্ষিত রয়েছে গ্রিংগটস উইজার্ডিং ব্যাংকের ৭১৩ নাম্বার ভল্টে। তাই, কুইরেলকে সেটা চুরি করতে বলে ভলডেমর্ট। কিন্তু পরশপাথর আগেই সেখান থেকে সরিয়ে ফেলা হয়।
সে বছরই হ্যারি পটার হগওয়ার্টসে ভর্তি হয়। সেটা জানতে পেরে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে ভলডেমর্ট। তারপর কুইরেল ট্রল নামক এক দানবকে ছেড়ে দিয়ে থার্ড ফ্লোর করিডোর থেকে পরশপাথর ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে স্নেইপ তাকে বাধা দেয়। একইভাবে ভলডেমর্টের আদেশে ‘গ্রিফিন্ডর বনাম স্লিদারিন’ কুইডিচ খেলার সময়, কুইরেল হ্যারিকে হত্যার চেষ্টা করলে স্নেইপ বাধা প্রদান করে। প্রফেসর কুইরেলের মাধ্যমে সে হ্যারির মুখোমুখি হয়; উদ্দেশ্য, পরশপাথরের মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত হওয়া। কিন্তু ওখানেও ধরাশায়ী হয় প্রফেসর কুইরেল।
ভলডেমর্ট তখন আলবেনিয়ার জঙ্গলে গিয়ে নাগিনীকে হরক্রাক্স বানিয়ে ফেলে। হ্যারি দ্বিতীয় বর্ষে পদার্পণ করলে, ভলডেমর্ট তার ডায়েরির (হরক্রাক্স) মাধ্যমে হ্যারির কাছে আসার চেষ্টা করে। লুসিয়াস ম্যালফয় চেম্বার অভ সিক্রেটস পুনরায় খোলার উদ্দেশ্য নিয়ে ডায়েরিটি জিনি উইজলিকে দিয়েছিল, কিন্তু লুসিয়াস জানত না যে- এটি একটি হরক্রাক্স। ডায়েরিটা হ্যারির হাতে আসার পর, সেটা সে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে। এর ফলেই ভলডেমর্টের পাতানো ফাঁদে পা দেয় হ্যারি। ডায়েরির মাধ্যমে ভলডেমর্ট পটারকে ৫০ বছর আগের হগওয়ার্টসের স্মৃতি থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসে।
এরপর আকস্মিকভাবে চেম্বার অভ সিক্রেটসের ঠিকানা খুঁজে পায় হ্যারি। ওখানে হ্যারি আর টম রিডলের প্রথম পরিপূর্ণ সাক্ষাৎ হয়। হ্যারিকে সকল উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানায় রিডল। তারপর ব্যাসিলিস্ককে দিয়ে মারার চেষ্টা করে হ্যারিকে। ওইসময় আচমকা ডাম্বলডোরের ফিনিক্স পাখি হ্যারির কাছে গ্রিফিন্ডরের তলোয়ার এনে দেয়। হ্যারি পটার ব্যাসিলিস্ককে গ্রিফিন্ডরের তলোয়ার দিয়ে বধ করার পর এর বিষদাঁত দিয়ে ডায়েরিটিকে ধ্বংসের মাধ্যমে ভলডেমর্টকে আটকাতে সক্ষম হয়।
হ্যারি চতুর্থ বর্ষে উঠার পর পরই হ্যারি একটা স্বপ্ন বারবার দেখতে থাকে। অন্ধকারাচ্ছন্ন এক কক্ষে বার্টি ক্রাউচ জুনিয়র ও পিটার পেট্টিগ্রু অচল লর্ড ভলডেমর্টের সেবা করছে। ভলডেমর্ট তখন ৪২২ তম কুইডিচ বিশ্বকাপের আসর থেকে হ্যারিকে অপহরণ করার ছক কষতে থাকে। তাই ওখানে হঠাৎ ডেথ ইটারের দল আক্রমণ করে বসে। সেবার জাদু মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের জন্য রক্ষা পেয়ে যায় হ্যারি। সেখানে ব্যর্থ হয়ে, পলিজুশ পোশন পান করে বার্টি ক্রাউচ জুনিয়র প্রফেসর অ্যালেস্টার মুডির রূপ নিয়ে গবলেট অভ ফায়ারে হ্যারির নাম দিয়ে দেয়। প্রাণঘাতী এ খেলার প্রতি ধাপেই হ্যারিকে জিতিয়ে দেয় মুডি-রূপী বার্টি ক্রাউচ জুনিয়র।
শেষ ধাপে এসে গোলকধাঁধায় ট্রাই-উইজার্ড কাপকে পোর্টকিতে রূপান্তরিত করা হয়, যা হ্যারিকে নিয়ে যাবে ভলডেমর্টের পারিবারিক কবরে। হ্যারি ও সেডরিক ডিগরি দু’জনেই কাপ একসাথে ছুঁয়ে ফেললে, সেডরিককেও দুর্ভাগ্যবশত লিটল হ্যাংলেটন গোরস্থানে চলে যেতে হয়। ওখানে পেট্টিগ্রু হ্যারির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল। কিন্তু অনাহুত অতিথি হিসেবে সেডরিক চলে আসায়, তাকে মৃত্যু-শাপ দিয়ে তৎক্ষণাৎ মেরে ফেলা হয়। পরে হ্যারি পটারের রক্ত আর পিটার পেট্টিগ্রুর হাতের কব্জি এবং টম রিডলের হাড়ের সাহায্যে পুনরায় পরিপূর্ণ শরীর ফিরে পায় ভলডেমর্ট।
ওখানে হ্যারি ও ভলডেমর্টের প্রথম দন্দ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়। ভলডেমর্ট সরাসরি মৃত্যু-শাপ ‘অ্যাভাদা কেদাভ্রা’ ও হ্যারি ‘এক্সপেলিয়ারমাস’ মন্ত্র ছুঁড়ে মারে। অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়ায়, কেউই কাউকে হারাতে পারবে না। তখন আকস্মিকভাবে হ্যারির বাবা-মায়ের আত্মা হাজির হয়ে তাকে পোর্টকির কাছে ফিরে যেতে বলে। সেডরিকের মৃতদেহ নিয়ে সে বিষণ্ণ মনে হগওয়ার্টসে হাজির হয়। তখন সে লর্ড ভলডেমর্টের প্রত্যাবর্তনের কথা সবাইকে জানালে, তার কাছের দুই বন্ধু ও কয়েকজন শিক্ষক ছাড়া বাকি কেউ তা আমলে নেয়নি। জাদু মন্ত্রণালয় তার এই বক্তব্য হেসেই উড়িয়ে দেয়।
ওদিকে নিজ দেহ পুনরায় ফিরে পেয়ে ডেথ ইটারদের নিয়ে পুনরায় শক্তিশালী ফৌজ গড়ে তোলে ভলডেমর্ট। তার উপস্থিতি টের পেয়ে ডাম্বলডোর সিরিয়াস ব্ল্যাকের বাড়িতে ‘অর্ডার অভ দ্য ফিনিক্স’ সংগঠনটি পুনরায় জীবিত করে তোলেন। এর পাশাপাশি হগওয়ার্টসে ‘ডাম্বলডোর’স আর্মি’ নামক এক দল গড়ে তুলে গোপনে হাউজ গ্রিফিন্ডরের ছাত্রদের প্রশিক্ষণ দিতে থাকে হ্যারি।
তখন আজকাবান থেকে ভলডেমর্টের অন্যতম অনুগত ভৃত্য বেল্লাট্রিক্স লেস্ট্রেঞ্জ পালিয়ে গিয়ে ভলডেমর্টের সাথে যোগ দেয়। তারপর হ্যারিকে ভলডেমর্ট মিথ্যা স্বপ্ন দেখায়, ডিপার্টমেন্ট অভ মিস্ট্রিতে সিরিয়াস ব্ল্যাকের ওপর অমানবিক অত্যাচার চালানো হচ্ছে। তাই হ্যারি সাথে হারমায়োনি, রন, নেভিল, লুনা, ও জিনিকে সাথে নিয়ে ডিপার্টমেন্ট অভ মিস্ট্রিতে রওয়ানা হয়। সেখানে তাদেরকে ডেথ ইটাররা পাকড়াও করলে হাজির হয় অর্ডার অভ দ্য ফিনিক্সের সদস্যরা। দুই পক্ষের মাঝে বাঁধে তুমুল সংঘর্ষ।
ভলডেমর্ট আর ডাম্বলডোর একে অপরকে ছড়ি ঘুরিয়ে প্রতিহত করার চেষ্টা করে, এবং তাতে ব্যর্থ হয়ে ভলডেমর্ট শেষমেশ হ্যারির ভেতর ঢুকে তার মস্তিষ্ক কব্জা করার চেষ্টা করে। কিন্তু বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার মায়া হ্যারির মধ্যে বিদ্যমান থাকায়, তার মস্তিষ্ককে কাবু করতে পারেনি ভলডেমর্ট। ফলে সেখানেও হার মানতে হয় ডার্ক লর্ডকে। এতদিন গুজব বলে উড়িয়ে দেয়া খবরকে এবার গুরুত্ব সহকারেই প্রচার করল ‘ডেইলি প্রফেট’ নামক জাদু জগতের দৈনিক পত্রিকা।
ভলডেমর্টকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন প্রফেসর ডাম্বলডোর। কিন্তু টম রিডল থেকে ভলডেমর্টে রূপান্তরিত হবার কাহিনীটা ডাম্বলডোরের এত ভালো করে জানা ছিল না। তাই তিনি শরণাপন্ন হন প্রফেসর হোরেস স্লাগহর্নের। টম রিডল স্লাগহর্নের সান্নিধ্যেই এসেছিল সবচেয়ে বেশি। ডাম্বলডোরের অনুরোধে তিনি আবার পোশন মাস্টার হিসেবে যোগ দেয় হগওয়ার্টসে। এরই মধ্যে স্মৃতিপাত্রে টম রিডলের ওলস অরফানেজের কিছু কাহিনী হ্যারিকে দেখালেন ডাম্বলডোর। কিন্তু ভলডেমর্ট এতটা শক্তিশালী হওয়ার পেছনের স্মৃতিটা স্লাগহর্ন চালাকি করে পাল্টে দিয়েছিল, যাতে দোষটা তার নিজের উপর না বর্তায়।
ডাম্বলডোর হ্যারিকে দিয়ে অনেক চেষ্টার পর ভলডেমর্ট রূপান্তরের আসল স্মৃতিটা স্লাগহর্ন থেকে আনতে পেরেছিলেন। স্মৃতিপাত্রে ওই স্মৃতি ঢালার পরই দেখা যায়, টম রিডল প্রফেসর স্লাগহর্নকে হরক্রাক্সের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছে। তারা তখনই হরক্রাক্সের ব্যাপারে বুঝতে পারে এবং খোঁজ করা শুরু করে বাকি হরক্রাক্সগুলোর। এর আগে হ্যারি রিডলের ডায়েরিটা ধ্বংস করলেও, এটা যে একটা হরক্রাক্স, তা জানত না। আংটিটা ধ্বংস করার পর, হ্যারি আর ডাম্বলডোর গিয়ে জাদুবলে হাজির হয় ক্রিস্টাল কেইভে। সেখানে পাজি ইনফেরি ফৌজের সাথে যুদ্ধজয়ের পর হগওয়ার্টসে ফিরে আসে হ্যারি ও ডাম্বলডোর। উদ্ধার করে নিয়ে আসে হরক্রাক্সরূপী স্লিদারিনের লকেটটি।
এর পরেই পূর্বপরিকল্পনা-মাফিক অ্যাস্ট্রোনমি টাওয়ার থেকে ফেলে দিয়ে ডাম্বলডোরকে খুন করে হাফ ব্লাড প্রিন্স ওরফে সেভেরাস স্নেইপ। হ্যারি তখন লকেটটি হাতে নিয়ে বুঝতে পারে, এটি আসল নয়। কেউ আসল হরক্রাক্সটি চুরি করে নকলটি রেখে গেছে। এই লকেটে একটি গুঁজে দেয়া চিঠিতে R.A.B লিখা ছিল। পরে জানা যায়, এটা মূলত রেগুলাস আর্কটারাস ব্ল্যাক এর সংক্ষিপ্ত রূপ।
ডাম্বলডোরের শেষকৃত্যের পর হ্যারি, হারমায়োনি, আর রন বাকি হরক্রাক্সগুলোর সন্ধানে বের হয়। ভলডেমর্ট তখন ডেথ ইটারদের পুরো দল নিয়ে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ব্যস্ত। একে একে সকল মাগল ধরে ধরে হত্যা করতে থাকে সে। সে জানত, তার আর হ্যারির ছড়ির কেন্দ্র এক। ছড়ির কেন্দ্র এক হলে, একজন আরেকজনকে মারতে পারবে না। তাই সে লুসিয়াস ম্যালফয়ের ছড়ি ধার নিল।
গোপন তথ্য পাচারকারী স্নেইপ তখন হ্যারির এক ভ্রমণ তথ্য ফাঁস করে দিল। আংকেল ভার্ননের বাড়ি থেকে সে উইজলি পরিবারের বাড়িতে যাবে। পরিপূর্ণ সুরক্ষা দেওয়ার জন্য তার সাথে যোগ দেবে অর্ডার অব ফিনিক্সের সদস্যরা। তাই সে অনুযায়ী হামলার ছক কষতে বসলো ভলডেমর্ট বাহিনী। পথিমধ্যে ভলডেমর্ট হ্যারিকে হামলা করলেও, হ্যারির ছড়ির কাছে হার মানে ম্যালফয়ের ছড়ি। সে যাত্রায়ও ভলডেমর্টের হাতছাড়া হয়ে যায় হ্যারি। তখনই জাদু মন্ত্রণালয়ের দখল নিয়ে নেয় ডেথ ইটাররা। ছাঁটাই করা হয় সকল হাফ-ব্লাডকে। সবকিছু হাতের মুঠোয় চলে আসে ভলডেমর্টের। সে ধীরে ধীরে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে শুরু করে।
হ্যারি, রন, হারমায়োনি রেগুলাস ব্ল্যাকের বাসায় হরক্রাক্স খুঁজতে গেলে ওদের হাউজ-এল্ফ ক্রিচার জানায়, লকেটটা ম্যানডাঙ্গাস চুরি করে নিয়ে গেছে। ম্যানডাঙ্গাস মূলত সল্পদরে ডায়াগন অ্যালিতে চুরি করা মাল বিক্রি করত। ওইখানে তার কাছে থেকে লকেটটি ছিনিয়ে নেয় প্রফেসর ডলোরেস আমব্রেজ। হাউজ-এল্ফ ক্রিচার আর ডবি ম্যানডাঙ্গাসকে পাকরাও করে আনলে সে স্বীকার করে, স্লিদারিনের লকেটটা বর্তমানে ডলোরেস আমব্রেজের কাছে আছে। তাই, হ্যারি, রন, আর হারমায়োনি পলিজুশ পোশন পান করে জাদু মন্ত্রণালয়ের তিনজন কর্মকর্তার রূপ ধারণ করে।
আমব্রেজের গলা থেকে লকেটটা ছিনিয়ে আনতে গিয়ে ধরা পড়তে গিয়েও কোনোরকম বেঁচে যায় তারা তিনজন। ফিরে আসে এক জঙ্গলে, যাতে কেউ তাদের খোঁজ না পায়। তারা লকেটটি বিভিন্নভাবে ধ্বংসের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। কারণ, হরক্রাক্স ধ্বংস করা জাদু জগতের কয়েকটি কঠিন কাজের মধ্যে অন্যতম। তখন ফরেস্ট অভ ডিনের এক বরফে জমাট-বাঁধা হ্রদের তলদেশে গ্রিফিন্ডরের তলোয়ার খুঁজে পায় হ্যারি পটার। সেটা দিয়ে ধ্বংস করা হয় লকেট-রূপী হরক্রাক্সকে।
মৃত্যুর আগে ডাম্বলডোর হারমায়োনিকে একটা বই উপহার দিয়েছিলেন। তাতে হারমায়োনি এক রহস্যময় চিহ্নের খোঁজ পায় এবং এর রহস্য উদঘাটনে ব্যাকুল হয়ে পড়ে। হ্যারিকে সেটা দেখালে সে জানায়, এই চিহ্নের একটা লকেট সে লুনা লাভগুডের বাবা জেনোফিলিয়াস লাভগুডের গলায় দেখেছে। তিনজন মিলে রওনা হয় লুনা লাভগুডের বাড়ির দিকে। সেখানে পৌঁছে লুনার বাবাকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে, এটা ‘ডেথলি হ্যালোস’-এর প্রতীক।
ডেথলি হ্যালোস বা মৃত্যুর উপহার বলতে মূলত তিনটা জিনিস বুঝায়। সেগুলো হলো, দ্য রিসারেকশান স্টোন বা পুনর্জন্মী পাথর অর্থাৎ একটি পাথর যা মৃতকে জীবিত করতে পারে, দ্য এল্ডার ওয়ান্ড বা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী জাদুর ছড়ি এবং দ্য ইনভিজিবিলিটি ক্লোক বা অদৃশ্য হওয়ার আলখাল্লা।
লুনা লাভগুডকে ডেথ ইটাররা তুলে নিয়ে যাওয়ায়, লুনার বাবা ভাবে হ্যারিকে ভলডেমর্টের হাতে তুলে দিলেই তার মেয়েকে ফেরত পাওয়া যাবে। তখন সে ভলডেমর্টের নাম নিলেই হাজির হয় গোটাকতক ডেথ ইটার, হামলা চালায় তার বাড়িতে। জাদুর দ্বারা সেখান থেকে পালিয়ে আসে হ্যারি, রন, হারমায়োনি। কিন্তু এরপর তাদের পাকড়াও করে ফেলে একদল স্নিচার। পুরস্কারের আশায় তারা তিনজনকে নিয়ে আসে বেল্লাট্রিক্স লেস্ট্রেঞ্জের কাছে।
হ্যারির কাছে গ্রিফিন্ডরের তলোয়ার দেখে লেস্ট্রেঞ্জ বারবার উইজার্ডিং ব্যাংকের কর্মরত গবলিন গ্রিপহুককে জিজ্ঞেস করে, তার ভল্ট থেকে এটা চুরি করেছে কে? আর কিছু চুরি হয়েছে কি না সেটাও খুব জোরালোভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গ্রিপহুক তখন কিছু না জানার ভান করলে লেস্ট্রেঞ্জ চারজনকে এক জেলখানায় বন্দি করে রাখে, যেখানে লুনা লাভগুড আগে থেকেই বন্দি ছিল। নিরুপায় হয়ে হ্যারি জাদু আয়নায় সাহায্য প্রার্থনা করে এবং সেখানে হাউজ-এল্ফ ডবি এসে হাজির হয় ও তাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
এল্ডার ওয়ান্ডের প্রকৃত মালিক ছিল জাদু জগতের অন্যতম সেরা জাদুকর গ্রিন্ডেলওয়াল্ড। সে আজকাবানে বন্দি থাকা অবস্থায়, ভলডেমর্ট তার কাছে এসে ছড়িটি নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু সে বলে, ছড়িটি ডাম্বলডোরের সমাধিতে সমাহিত আছে। ভলডেমর্টের সাথে হ্যারির মস্তিষ্কের খানিকটা অংশ সংযুক্ত থাকায়, সে কাহিনী আবার হ্যারি জানতে পেরে যায়। তখন কিছু প্রশ্নের উত্তর বের করতে তারা সবাই তখন পাড়ি জমায় ছড়ি দোকানের মালিক অলিভেন্ডারের বাড়িতে। হ্যারি গ্রিপহুককে গ্রিফিন্ডরের তলোয়ারের কথা জিজ্ঞেস করে বসে। উত্তরে গ্রিপহুক জানায়, গবলিনরাই আসল গ্রিফিন্ডরের তলোয়ার চিনতে পারে। লেস্ট্রেঞ্জের ভল্টে যে গ্রিফিন্ডর তলোয়ার রাখা আছে, তা নকল। হ্যারি তখন আন্দাজ করে নিল, বেল্লাট্রিক্স বারবার যেহেতু ভল্টের কিছু চুরি হবার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করেছে, তাই সেখানে গুরুত্বপূর্ণ কোনো জিনিস রাখা আছে, অবশ্যই সেটা কোনো হরক্রাক্সই হবে।
তৎক্ষণাৎ, তারা লেস্ট্রেঞ্জের ভল্টে ঢোকার ফন্দি আঁটল। গ্রিপহুক গ্রিফিন্ডরের তলোয়ারের বিনিময়ে তাদেরকে সেখানে নিয়ে যেতে রাজি হলো। পলিজুস পোশন পান করে হারমায়োনি বেল্লাট্রিক্সের রূপ, রন স্বাভাবিকভাবেই জাদু-মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তার বেশ নিল। হ্যারি আর গ্রিপহুক লুকালো অদৃশ্য আলখাল্লার নিচে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে লেস্ট্রেঞ্জ ভল্টে পৌঁছানোর পর হ্যারি আঁচ করতে পারল, ওখানে থাকা হরক্রাক্সটা হলো হাফলপাফের কাপ। সেটা ওখান থেকে বের করে এনে চেম্বার অভ সিক্রেটসে ব্যাসিলিস্কের দাঁত দিয়ে ধ্বংস করা হলো।
হ্যারির কল্পনায় তখন র্যাভেনক্ল’র প্রতীক-খচিত পতাকা ভেসে ওঠে। সে বুঝতে পারে, আরেকটা হরক্রাক্স হগওয়ার্টসের হাউজ র্যাভেনক্লতেই আছে। কিন্তু হগওয়ার্টসে তখন তার প্রবেশ করা মানেই আত্মহত্যার শামিল। কারণ, সেভেরাস স্নেইপ তখন প্রধান শিক্ষকের পদে আসীন।
নেভিল লংবটমের সাহায্যে সুড়ঙ্গপথ দিয়ে হগওয়ার্টসে প্রবেশ করে সে। অনেকদিন পর স্কুলের শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে হাউজ গ্রিফিন্ডরের শিক্ষার্থীরা তাকে দেখতে পেয়ে খুব খুশি হয়। প্রফেসর ম্যাকগোনাগল তখন তাকে বলেন, “তুমি তোমার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করো, আমি হগওয়ার্টসের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সামলাচ্ছি।” ম্যাকগোনাগল তখন ‘পিয়েরটোটম লকোমন্টর’ মন্ত্র দিয়ে হগওয়ার্টসের বিশাল বিশাল মূর্তির ফৌজকে প্রহরায় নিযুক্ত করেন।
সাথে প্রফেসর স্লাগহর্ন, প্রফেসর ফিলিয়াস, রনের মা মলি উইজলি প্রোটেজ ম্যাক্সিমা, ফিয়ান্তো দুরি, রিপেলো ইনিমিকাম ইত্যাদি শক্তিশালী মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে পুরো হগওয়ার্টসকে সুরক্ষার চাদরে আচ্ছাদিত করে দেয়। হটে যায় হগওয়ার্টসে হামলা করতে আসা সব ডিমেন্টর। ভলডেমর্ট তার ডেথ ইটার বাহিনী নিয়ে সে রক্ষাকবচ ভেদ করার জন্য ছড়ি থেকে জাদু ছুঁড়তে থাকে।
ওদিকে শিক্ষার্থীদের কথা শুনে হ্যারি জানতে পারে, রোয়েনা র্যাভেনক্ল’র ডায়াডেম অনেক বেশি বিখ্যাত ছিল। তখন লুনার পরামর্শে ডায়াডেমের ঠিকানা জানতে রোয়েনার মেয়ে হেলেনা র্যাভেনক্ল’র আত্মার কাছে যায় হ্যারি। হেলেনার কাছ থেকে হ্যারি জানতে পারে, ডায়াডেম রুম অভ রিকোয়ারমেন্টে লুকানো আছে। তারপর ডায়াডেম-রূপী হরক্রাক্সটিকে ভিনসেন্ট ক্র্যাবের ফিয়েন্ডফায়ার অভিশাপে ধ্বংস করা হয়। এদিকে ডেথ ইটারদের ক্রমশ শক্তিশালী মন্ত্র-বর্ষণের কাছে হার মানতে হয় হগওয়ার্টসের সুরক্ষা ছাদকে।
পিশাচ-বাহিনী নিয়ে হামলা করার সময় লেগে গেল এক গণ্ডগোল। ভলডেমর্টের আদেশে ভালোমতো কারিশমা দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছে এল্ডার ওয়ান্ড। ভলডেমর্টের ধারণা ছিল, এল্ডার ওয়ান্ড তার আদেশই ভালোমতো মানবে। ছড়িকে নিজের বশে আনতে সেভেরাসকে খুন করে বসে ভলডেমর্ট। সেভেরাসকে হত্যার পরই ভলডেমর্ট তার পিশাচ ফৌজ সরিয়ে নিয়ে যুদ্ধে বিরতি দিয়ে দেয়।
পুরো হগওয়ার্টসে বার্তা ছড়িয়ে ভলডেমর্ট হ্যারিকে নিষিদ্ধ বনে তার সাথে লড়াইয়ের আমন্ত্রণ জানায়। সাথে এ-ও জানায়, হ্যারি যদি না আসে, তবে হ্যারিকে যারা সাহায্য করেছে, তাদেরকে সপরিবারে ভয়ানক মৃত্যু যন্ত্রণা সমেত হত্যা করা হবে। তাই, সবদিক বিবেচনা করে হ্যারি ভলডেমর্টের কাছে আত্মসমর্পণ করে দিতে চাইল। আত্মসমর্পণের সাথে সাথেই হ্যারির দিকে মৃত্যু-শাপ ‘আভাদা কেদাভ্রা’ ছুঁড়ে মারে সে। সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে হ্যারি পটার। কিন্তু এর মাধ্যমে নিজের অজান্তেই হ্যারির মধ্যে তৈরি হওয়া হরক্রাক্সকে নিজ হাতে ধ্বংস করে ভলডেমর্ট। তাই, তার মৃত্যু-শাপ পুরোটা গিয়ে লাগে হরক্রাক্সের উপর, এবং অচেতন হয়ে সে যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যায় হ্যারি।
প্রফুল্ল ভলডেমর্ট তখন ধরেই নিয়েছে যে, তার হ্যারি পটার নামক শত্রুটা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। তাই রুবিয়াস হ্যাগ্রিডকে দিয়ে তার মৃতদেহ সবাইকে দেখাতে ভগ্নদশা হগওয়ার্টসে নিয়ে আসে লর্ড ভলডেমর্ট। সাথে ছিল তার ডেথ ইটার ফৌজ। হগওয়ার্টসের পক্ষে থাকা বাকি লড়াকুদের ডেথ ইটার সংগঠনে দিতে বলে সে। এমন সময় হ্যারি হঠাৎ জেগে উঠে ভলডেমর্টের উপর আক্রমণ করলে ভয়ে উধাও হতে থাকে পেছনে থাকা ডেথ ইটারের সদস্যরা। তখন ভলডেমর্ট নাগিনীকে হারমায়োনি আর রনের দিকে লেলিয়ে দিকে সে নিজে ছোটে হ্যারির পেছনে। নাগিনী যে-ই হারমায়োনি আর রনকে ছোবল দিতে যাবে, তখনই আচমকা নেভিল লংবটম গ্রিফিন্ডরের তলোয়ার দিয়ে সাপটার মাথা এক কোপে আলগা করে ফেলে। শেষ হয়ে যায় সর্বশেষ হরক্রাক্সটিও।
এভাবে একে একে হরক্রাক্স হারাতে হারাতে ক্রমশই দুর্বল হয়ে পড়ে নাক-বিহীন ভলডেমর্ট। সবশেষে, হগওয়ার্টস ময়দানে হ্যারির সাথে ছড়ি যুদ্ধেও পরাজয় বরণ করে নিতে হয় তাকে।
এভাবে সমাপ্তি ঘটে জাদু-জগতের দুর্ধর্ষ এক খলনায়কের। জয় হয় সত্যের, পতন ঘটে জাদু-জগতের এক কালো অধ্যায়ের।