গলায় বাঁধা টাইয়ের গিঁট ঠিক করতে করতে জেরি, জিনোকে লাইনগুলো আরেকবার পড়িয়ে নিচ্ছে। এই দু’দিন আমোদ-প্রমোদে কাটিয়ে শান্ত, অবিচল মনে শিকাগো ফিরে যাবে। এই ছোট্ট ভ্রমণে সে-ই ‘বস’। কথার হেরফের যেন না হয়। ঘাড় নিচু করে সর্বদা হেঁটে চলা বৃদ্ধ জিনো সবকিছুতে সায় দিয়ে তার রূপায়ন করতে চলা চরিত্রের মূল পাঞ্চলাইনটা আরেকবার আওড়ে নিল। জিনোকে দেখে মনে হয়, তার ওই ঘাড় বয়সের ভারে যতটা না নিচু, তারচেয়েও বেশি নিচু দায়িত্ববোধ, সমাজে নিজের অবস্থান আর নমনীয়তার ভারে। এয়ারপোর্ট হতে বেরিয়ে আত্মবিশ্বাসী পদক্ষেপে দাঁড়িয়ে থাকা বাসটির দিকে জিনোকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে জেরি।
হঠাৎ পেছন থেকে এক পরিচিত কণ্ঠ জেরিকে উদ্দেশ করে হাঁক ছাড়ল। ক্ষণিকে জেরির মুখের পাল্টে যাওয়া অভিব্যক্তি স্পষ্ট বলে দিল, পরিচিত এ কণ্ঠ শুনে বিন্দুমাত্রও উচ্ছ্বসিত সে নয়। বরঞ্চ আপদ ঘাড়ে উঠেছে ভেবে বেশ বিরক্তই হলো। তবে মুখে সেটা বুঝতে দিল না। এই গাড়িচালক বেশ বিরক্তিকর গোছের লোক। অতীত নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু করল, খোঁচার সুর তুলে। ব্যাপারটা মোটেই পছন্দ করল না জেরি। ‘গুজব’ বলে নাকচ করে দেওয়ার ভঙ্গিতে বেশ বোঝা গেল, কথাগুলো জেরির অহমে লাগছে।
তবে জেরির সাথে এই বৃদ্ধ লোকটি কে? গাড়িচালক জানতে চাইলে জেরি একবাক্যে কাটছাঁট করে বলে দিল, “দিস ইজ দ্য গাই, বিহাইন্ড দ্য গাই, বিহাইন্ড দ্য গাই।” জেরির কথার ভারত্ব বুঝতে না পারার মতো নির্বোধ এ গাড়িচালক নয়। সংক্ষিপ্ত এ বাক্য, তাদের নিজস্ব অপরাধ দুনিয়ার গুরুত্ববহ কোনো তথ্য যে বহন করছে, তা বেশ বোঝা হয়ে যায়। বৃদ্ধ জিনোর প্রতি সম্মানে নুয়ে লিমুজিনের দরজা খুলে দিল চালক। জিনো এতসব বোঝে না। এই দেখানো সম্মান কিংবা চাটুকারিতা ধরতে পারার মতো ধড়িবাজ ব্যক্তি যে সে নয়। হোটেলে নিয়ে সবচেয়ে বিলাসবহুল কামরা ঠিক করে দিল চাটুকার এই চালক। জেরি বারবার বলছে, গোপনীয়তা বজায় রেখে ভালোয় ভালোয় দুটো দিন কাটিয়ে তারা ফিরে যাবে, কিন্তু কে শোনে কার কথা! চুপিসারে দুটো দিন কাটানো আর হয়ে উঠল কই?
জিনোর আপ্যায়নে শশব্যস্ত সবাই। জিনোকে তারা ধরে নিয়েছে গাট্টাগোট্টা স্বভাবের মাফিয়া বস হিসেবে। কিন্তু আড়ালের সত্যটা জানে পর্দার জেরি আর পর্দার সামনের দর্শক।
সিনেমার প্রারম্ভিক অংশেই, জিনোর আসল পরিচয়টা জানানো হয়। ইতালিয়ান-আমেরিকান নাগরিক জিনোর দিনকাল চলত অন্য লোকেদের জুতো পালিশ করে। কাজ থেকে অবসর নেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করে চলেছে জিনো, বেশ আগ থেকে। তার ইচ্ছা, জীবনের শেষ ক’টা দিন একটা ফিশিং বোট নিয়ে সিসিলিতে পার করে দিবে। ওই বোটের টাকা জোগাড় করতে করতেই যে, অবসরের সময় আজ-কাল-পরশুর মতো দীর্ঘ হচ্ছে। তবে অন্য কেউ তো দূরে, জিনো নিজেই ভাবেনি, গল্পের প্রধান একটি চরিত্র হয়ে উঠবে সে। তার মুখের প্রতিটি বলিরেখায় বার্ধক্যের ছাপ ভারি হয়ে পড়েছে কিন্তু সে ছাপকে ম্লান করে সামনে এসে পড়ে তার সারা মুখে ছড়িয়ে থাকা নির্লিপ্ততা।
কিন্তু জিনোর ওমন নির্লিপ্ত চাহনিধারী আরেকজন যে অপরাধ জগতের বড় মাফিয়া, সে কথা ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করেনি জিনো। একই চেহারার সেই মাফিয়া বস যখন খুনের দায়ে ফেঁসে গেল, আরেক মাফিয়া বস জিনোকে ভাড়া করতে চাইল ওই মাফিয়া বসের হয়ে জেল খাটতে। মাফিয়া বস জানে, জিনোর মতো সরল-সোজা মানুষগুলোর দুর্বল অংশটায় খপ করে ধরতে পারলেই ঘোল খাওয়ানো খুব সম্ভব। এবং গুনে গুনে জিনোর সেই লালিত স্বপ্নটাতেই নোংরা হাত বাড়াল এই মাফিয়া বস।
ওই জুতো পালিশ করে করে পাওয়া দু-চার আনা পয়সায় কত বছর লাগিয়ে আর স্বপ্নের বোট কিনতে পারবে জিনো? কিন্তু তিনটা বছর মাফিয়া বসের হয়ে জেল খাটলেই তার সেই ফিশিং বোট কেনার স্বপ্ন সত্যি হবে। জিনো বশ হয়ে যায় মাফিয়ার নরম সুরের গোছানো কথাবার্তায়। লিখিত সাক্ষ্য আর আঙুলের ছাপ নিয়ে প্রাথমিক কার্যক্রম শেষে, শুনানির আগ অব্দি জিনোকে দেখে রাখার দায়িত্ব দেওয়া হলো জেরিকে। জেরি এই অপরাধ দুনিয়ায় এখনো শিক্ষানবিশ। ছোটখাটো দু-চার কাজে হাত চালায় মাঝেসাঝে। তবে ‘বস’ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা তার মাঝে বেশ আছে। ধূর্ততা প্রমাণ করতে আগ বাড়িয়ে এক কাজে ভজঘট লাগানোর পর শাস্তিও জুটেছে কপালে। তাই জিনোকে সামলে রাখার উপর নির্ভর করছে অপরাধ দুনিয়ায় তার থিতু হতে পারার বিষয়টি।
অপরাধ দুনিয়ায় এখনো আনকোরা বলেই হয়তো, ভেতরে এখনো কিছুটা মায়া-দরদ, সহমর্মিতা আছে জেরির মধ্যে। তার প্রকাশ ঘটে, জেলে চলে যাওয়ার আগে জিনোকে ‘তাহোয়ে’ ঘুরিয়ে আনার সিদ্ধান্তে। দুটো দিন ঝুট-ঝামেলা ছাড়াই কেটে যেত, কিন্তু জেরির বাড়িয়ে বলার স্বভাবটাই গোলমেলে সব পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। ওদিকে মাফিয়া বসের পরিচয় ঘাড়ে নিয়ে অদ্ভুত এক জগতের ভেতরের, দ্বিগুণ অদ্ভুত সব কর্মকাণ্ড অবলোকন করতে শুরু করে নির্লিপ্ত চাহনির জিনো।
‘হাউজ অভ গেইমস’-এর পর ডেভিড ম্যামেটের দ্বিতীয় সিনেমা এটি। হাউজ অভ গেইমসের চেয়ে হালকা চালের, তবে ওই সিনেমার মতোই অদ্ভুত এবং চরিত্রনির্ভর সিনেমা ‘থিংস চেইঞ্জ’। হাউজ অভ গেইমসের একই অপরাধ দুনিয়ায় গড়ে উঠেছে এর গল্প। ‘থিংস চেইঞ্জ’কে মূলত কমেডি সিনেমা হিসেবেই রাখতে চেয়েছেন ম্যামেট। তবে কৌতুকপূর্ণ আমেজ তৈরিতে ম্যামেটের অবলম্বন করা কৌশল সচরাচরের চেয়ে ভিন্ন। মূল কৌতুকাবহকে তিনি রাখতে চেয়েছেন ন্যূনোক্ত করে। মূল কথার শেষে অনুক্ত অংশটিতেই কিংবা ঘটনার পেছনের ঘটনাটায় প্রকৃত হাস্যরস রেখে দিয়েছেন ম্যামেট এবং তা ঠিক ঠিক ধরে হেসে ওঠার ভারটা ছেড়ে দিয়েছেন দর্শকের উপর।
ম্যামেট আশির দশকের কমেডির ধরাবাঁধা গড়নকে প্রহসনের বেশে উপস্থাপন করেছেন ‘থিংস চেইঞ্জ’-এর প্রিমাইজে। জোনাথান ডেমের, ‘ম্যারিড টু দ্য মব’ সিনেমার মতো গড়পড়তা মাফিয়া গল্পের প্রতিটা জীর্ণ পাড়কে ক্ষইয়ে প্রহসন দিয়েই ভিতটা শক্ত করেছেন ম্যামেট। ইতালিয়ান ‘টারান্টেলা’ নৃত্যের মতো পায়ের এক আঙুলে ভর দিয়ে অন্ধকার ছেয়ে থাকা অপরাধ জগতের সরু গলি ধরে ঘুরে ঘুরে চলে এ সিনেমার গল্প। মৃত্যুর মুখোমুখি এগিয়ে চলা এ নৃত্যের ছন্দ (গল্পের চলন) একইসাথে অদ্ভুত এবং জাঁকালোও বটে। এ ছন্দ সিনেমার প্রারম্ভিক দৃশ্যে ম্যান্ডোলিনের অনুনাদী সে শব্দের মতো, যে শব্দকে শিকাগোর শীতলতা আর শূন্যতাকে কেন্দ্রে আনতে নেওয়া ব্লিক শটগুলো আহত করেছে মতন কানে বাজে।
ডেভিড ম্যামেটের লেখনী সবসময়ই সরস, বুদ্ধিদীপ্ত। হলিউডের স্বীয় সৃষ্ট জনরাগুলোর রীতিমতো মাস্টার তিনি। এবং তারও উঁচুতে আছে তার অসামান্য সব সংলাপ। বাহুল্যবর্জিত, ক্ষিপ্র। টেলিগ্রামাটিক ধাঁচের। সংলাপগুলো অশান্তি আর বোঝাপড়ার, গদ্য আকারে লেখা কবিতা যেন। এ সিনেমার সংলাপগুলোয় সেই ‘ম্যামেটিয়’ ধারাটায় ছেদ পড়েনি একটুও। শব্দ আর ফ্রেইজের প্রতি তার ভালোলাগাটা বারে বারে উঠে এসেছে। আলাপনের উদ্দেশ্য এখানে যতটা না যোগাযোগ তৈরিতে, তারচেয়েও বেশি- গোপন সংকেত বিনিময়ে।
হাউজ অভ গেইমসের মতোই, এ সিনেমায়ও আবেগের স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ থেকে নির্মেঘ দূরত্ব রেখেছেন ম্যামেট। ওই সিনেমার মতো, এখানেও অভিনেতারা স্পষ্ট আর নির্ভুল উচ্চারণে জোর দিয়ে ধীর, শান্ত গতিতে একইরকম একটা সুরে কথা বলে চলে, যেন পড়ছে তারা। নাট্যকার হওয়ার সুবাদে মঞ্চে অভিনয়ের এ ধারাকে মসৃণ উপায়ে সিনেমার সাথে মিশিয়েছেন ম্যামেট। মঞ্চ আর সিনেমার সংলাপ প্রদানের ধারা ভিন্ন, এবং ম্যামেট সে ভিন্নতার মাঝে সাযুজ্য ঘটানোর চেষ্টায় সফল। তার সিনেমার চরিত্ররা শব্দগত ভায়োলেন্সেই বিশ্বাসী বেশি। কথা দিয়েই পরস্পরের সাথে কুস্তি লড়ে চলে চরিত্ররা। এর একটা চমৎকার উদাহারণ, তার ‘হাইস্ট’ (২০০১) সিনেমার অন্তিম দৃশ্যে ভিলেনের বলা সংলাপখানা।
শুধু হাউজ অভ গেইমসের একই অপরাধ দুনিয়া নয়, কাস্টিংও শেয়ার করেছে ‘থিংস চেইঞ্জ’। জেরি চরিত্রে জো মান্টেগ্না; আদ্যোপান্ত হাস্যরসাত্মক আর সমঝদারিতে পূর্ণ তার অভিনয়। অন্যরকম চরিত্র এই জেরি। তাকে দেখে মনে হয়, ভালো সঙ্গ হয়ে উঠতে আর চলনবলনে নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে কঠোর পরিশ্রম করেছে সে। স্বল্পভাষী হয়ে ওঠার যথাযথ শব্দভাণ্ডার আর সময়মতো পিছলে যাওয়ার সবক’টা জেশ্চার রপ্ত করে নিয়েছে। হাত নোংরা না করেই ছুঁচো মারতে সে জানে। তবে তার মধ্যেও ভুলত্রুটি আছে। তার ওই সহমর্মী দিকটাই সেই ভুলত্রুটির জায়গাটা করে দেয়। ভেতর আর বাইরের এ দ্বন্দ্বই জেরি চরিত্রটিকে আরো স্পর্শনীয় করে তোলে।
জিনোর যোগ্য সঙ্গী, জেরি। এই কয়েকটা দিনে পরস্পরের প্রতি আস্থাশীল হয়ে ওঠে তারা, কিন্তু ভুল জগতে। জিনো চরিত্রে হাস্যরসটা তার নিখুঁত নম্রতা আর মেজাজের ধীরতায় লুকিয়ে রয়েছে। আচমকা তার কপাল প্রসন্ন (?!) হয়ে ওঠায় তাকে উত্তেজিত কিংবা আশ্চর্যান্বিত, কোনোটিই হতে দেখা যায় না। অত দামি ঘড়িটা এমনভাবে হাতে আঁটায়, কিংবা চোস্ত ইতালিয়ান স্যুটটা এমনকরে গায়ে চড়ায়- যেন সারাজীবন এসব পরেই অভ্যস্ত সে। সদ্য জেতা ৩০ হাজার ডলার ফের হারিয়ে যাওয়ায়ও কোনো বিকার ঘটে না তার মাঝে।
এক চরিত্র হতে আরেক চরিত্রে আরোহণে ঘটা উত্থান-পতনের অদ্ভুত প্রক্রিয়াটি নিষ্ক্রিয়ভাবে দেখার মাঝেই যেন জিনো প্রকৃত আনন্দ লাভ করে। জিনোর সুস্থিরতাতে অনেকাংশে সিনেমার মূল উত্তাপটা ছড়ায়। জিনো চরিত্রে ডন আমিকি তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সূক্ষ্ম অভিনয় দিয়েছেন। জিনো চরিত্রের বদান্যতা আর নির্মলতাকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধারণ করেছেন আমিকি। জিনোর ভাঙা ভাঙা, কিন্তু পরিমিত ইংরেজি আর মনে মনে ওজন করে দেওয়া সব জেশ্চারকে আমিকি এহেন উপায়ে প্রদান করেছেন, যেন চরিত্রটিই তিনি। সহজাত দক্ষতায়ই চরিত্রটি রূপায়ন করেছেন তিনি।
থিংস চেইঞ্জের অনাড়ম্বর বিন্যাসে এর নিজস্ব ছন্দ লুকিয়ে আছে। এমন ঘরানার গল্পে, কিছু একটা হবে হবে- মনে হওয়ার যে উত্তেজনা, যে স্বতঃস্ফূর্ততা- তা ম্যামেট তার এ সিনেমায় সচেতন চিত্তে এড়িয়ে গেছেন। কারণ, অসার এবং হিপোক্রেট সমাজের ব্যঙ্গাত্মকধর্মী এক নিরীক্ষা করেছে এ সিনেমা। সিনেমাটোগ্রাফার হুয়ান রুই, ম্যামেটের অনাড়ম্বরতার মাঝে যে সেন্সুয়ালিটি আর টেনশন আছে, তা যথাযথভাবে ক্যামেরায় ধারণ করেছেন। যতটুকু সম্ভব ‘বাস্তবিক’ ভাবটা রেখেছেন হুয়ান রুই, যার জন্যই তার ইমেজগুলো কাঠখোট্টা আর অকপট হয়ে চোখে ধরা দেয়।
রাউল রুইয়ের লাইটিং অবশ্য উষ্ণ এবং কোমল। নিও-ক্লাসিক্যাল আবহ পাওয়া যায়। থিংস চেইঞ্জ যে আদতে কমেডি সিনেমা, তা ভিজ্যুয়ালি প্রমাণের একমাত্র দলিল লাইটিং। থিংস চেইঞ্জ; এই ক্যাচ-ফ্রেইজের বিশেষ একটা অর্থ সিনেমায় আছে। মিথ্যা, খুন আর বিশ্বাসঘাতকতার চোরাবালিতে আধুনিক জীবনের ভয়াবহ পরিবর্তনশীলতার দিকটিকে নির্দেশ করছে এই নাম। সে চোরাবালিতেই ঢুকে গেছে জেরি, জিনো- দু’জনেরই পা।
থিংস চেইঞ্জে স্পষ্টত বোঝা যায়, পুঁজিবাদ, যৌনতা, পুরুষত্ব নিয়ে কাজ করা ম্যামেট তার দ্বিতীয় সিনেমা দিয়ে তার স্বকীয় ধারা প্রতিষ্ঠায় পূর্ণতাপ্রাপ্তির বেশ কাছাকাছিই যাচ্ছেন। তবে কিছু সীমাবদ্ধতা এই সিনেমাকে জড়িয়ে রেখেছে অবশ্যই। সিনেমার হতাশাবাদী জগতটাকে আশাবাদিতায় মোড়ানোতে একটা দ্বিধার ভাব জড়িয়ে ছিল। এ পর্যায়ে ম্যামেটের সূক্ষ্ম স্পর্শ হারিয়ে গিয়েছে অনেকাংশে। এবং জেরি চরিত্রের উত্তাপটা সরিয়ে তাকে প্রফুল্ল একটি চরিত্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রক্রিয়াটায় তাড়াহুড়ো দৃষ্টিগোচর হয়, যে কারণে চরিত্রের পরিবর্তনের এ জায়গাটায় বিশ্বাসযোগ্যতার ভার হালকা ঠেকে।
শেষত, প্রহসন, বুদ্ধিদীপ্ততা, ভায়োলেন্স, মানবিকতার মতো দ্বান্দ্বিক সব জিনিসের মাঝে সূক্ষ্ম সমতা এনে দেয়, থিংস চেইঞ্জ। শান্তভাবে নিয়ন্ত্রিত ও ধীরলয়ে স্পন্দিত হৃদয় হলো- থিংস চেইঞ্জ।