ফ্রেঞ্চ রিভিয়েরা নদীর তীরের শহর কানে প্রতি বছরের মতো এবারও হয়ে গেলো জমজমাট কান চলচ্চিত্র উৎসব। বরাবরের মতোই এবারের উৎসবটিও ছিল ভিন্ন স্বাদের নানা চলচ্চিত্রে ভরপুর। বর্ডার এর মতো ইন্ডি মুভি যেমন প্রদর্শিত হয়েছে, তেমনি সোলো: অ্যা স্টার ওয়ার্স স্টোরি এর মতো বিগ বাজেটের ছবিও ছিল। সেইসাথে ছিল ইরানী চলচ্চিত্রকারদের জয়জয়কার। আলোচিত ছিল নেটফ্লিক্স বনাম কান কর্তৃপক্ষের দ্বন্দ্বের বিষয়টাও। হলিউডে তোলপাড় ফেলে দেওয়া মি টু মুভমেন্টের কথাও উঠে এসেছে। এবারের জুরি বোর্ডে প্রধান বিচারক ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান অভিনেত্রী কেট ব্লানচেট। সবচাইতে মর্যাদাপূর্ণ পাম ডি‘অর পুরস্কার পেয়েছে জাপানী পরিচালক হিরোকাজু কোরি-এদার শপলিফটারস। উৎসব শেষ হয় দ্য ম্যান হু কিলড ডন কুইক্সোট চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনীর মাধ্যমে।
ব্ল্যাকক্ল্যানসম্যান
এবারের কানের সবচেয়ে আলোচিত মুভিগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতেই থাকবে স্পাইক লির এই ডার্ক কমেডি থ্রিলার চলচ্চিত্রটি। উগ্র শ্বেতাঙ্গবাদী সংস্থা কু ক্ল্যাক্স ক্ল্যানের কথা অনেকেরই জানা। ৭০ এর দশকে এই কুখ্যাত গ্যাংকে দমাতে কলোরাডোর দুই পুলিশ অফিসার, রন স্টলওয়ার্থ এবং ফ্লিপ জিমারম্যান মিলে অভিযান শুরু করেন। রন কৃষ্ণাঙ্গ হয়েও টেলিফোনে শ্বেতাঙ্গ একজন বর্ণবাদী হবার ভান করে সফলভাবে গ্যাং এর মধ্যে ঢুকে যান। শুধু তা-ই নয়, নেতাপর্যায়ের একটা পদও বাগিয়ে বসেন। এদিকে ফ্লিপ নিজেই ক্ল্যানের মধ্যে ঢুকে তাদের বিভিন্ন পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে থাকেন। রন স্টলওয়ার্থ পরবর্তীতে নিজের জীবনের সত্যি ঘটনা অবলম্বনে ‘ব্ল্যাকক্ল্যানসম্যান’ নামে একটি বই লেখেন, যার ওপর ভিত্তি করেই সিনেমাটি বানানো হয়েছে। রন স্টলওয়ার্থের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ডেনজেল ওয়াশিংটনের ছেলে জন ডেভিড ওয়াশিংটন । সাথে আরো আছেন অ্যাডাম ড্রাইভার এবং টফার গ্রেস। জাঙ্গল ফিভার, ম্যালকম এক্স খ্যাত স্পাইক লি এই মুভির জন্য জিতে নিয়েছেন গ্রাঁ প্রিঁ পুরস্কার।
থ্রি ফেসেস
নানাভাবে রাষ্ট্রের চোখ এড়িয়ে এই মুভিটি নির্মাণ করেছেন ইরানী গৃহবন্দী পরিচালক জাফর পানাহি। কাহিনীতে দেখা যায়, রক্ষণশীল পরিবারের এক কিশোরী মেয়ে ভিডিও মেসেজের মাধ্যমে সাহায্য চাইছে জনপ্রিয় অভিনেত্রী বেহনাজ জাফরির কাছে। তাই জাফরি তার এক পরিচালককে সঙ্গে নিয়ে সেই কিশোরীকে খুঁজতে বের হন। এখানে বেহনাজ জাফরি নিজেই নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। পানাহি বলেছেন, দেশে দেশে নারী অভিনয়শিল্পীরা নানাভাবে অবজ্ঞার শিকার হয়, অসম্মানজনক পরিস্থিতির মুখে পড়ে। সেই বিষয়টি তুলে ধরাই তার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল। সীমান্তবর্তী তিনটি গ্রামে (যার একটি পানাহির বাবার, একটি তার মায়ের আর একটি তার নিজের জন্মস্থান) পুলিশের চোখ এড়িয়ে কৌশলে ‘থ্রি ফেসেস’ এর শুটিং করা হয়। পানাহির মেয়ে সেজন্য বাবার জন্য বিশেষ ক্যামেরা সরবরাহ করেছেন। কাহিনীর পাশাপাশি নির্মাণের পেছনের ঘটনার কারণেও মুভিটি সমানভাবে আলোচিত। কষ্ট কিছুটা হলেও সার্থক, মুভিটি পানাহিকে এনে দিয়েছে শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকারের পুরস্কার।
এভরিবডি নোজ
অ্যা সেপারেশন, দ্য সেলসম্যান খ্যাত ইরানী চলচ্চিত্র পরিচালক আসগার ফরহাদীর এই সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার মুভিটি দিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। মুভির মুখ্য দুই চরিত্র লরা এবং প্যাকোর ভূমিকায় ছিলেন দুই স্প্যানিশ কিংবদন্তি হাভিয়ের বারডেম এবং পেনেলোপে ক্রুজ। বহুবছর আর্জেন্টিনায় কাটাবার পর ছোটবোনের বিয়ে উপলক্ষে স্পেনে ফেরে লরা। সাথে তার আর্জেন্টাইন স্বামী না থাকলেও দুই সন্তান ঠিকই ছিল। লরাকে বহুদিন পরে ফিরতে দেখে তার পরিবারের অন্য সবার পাশাপাশি প্যাকোও খুশি হয়। পারিবারিক অনুষ্ঠানে এমনিতেই সবার মধ্যে কানাকানির অভাব হয় না, আর লরার স্বামীর না আসাটাও সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অবধারিতভাবেই লরার সাথে প্যাকোর অতীতের কিছু ঘটনা সবার জীবনে আবার প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ ফ্যামিলি ড্রামা বলে মনে হতে পারে, কিন্তু সাধারণ ঘটনার মাঝেই অসাধারণ কিছু ফুটিয়ে তোলা ফরহাদীর বৈশিষ্ট্য, হোক তা তেহরানে কিংবা মাদ্রিদে।
শপলিফটারস
সবাইকে কিছুটা হলেও অবাক করে দিয়ে এবারের পাম ডি’অর জিতে নিয়েছে এই ইন্ডি জাপানী মুভিটি। আমাদের দেশের মতো জাপানে রাস্তাঘাটে চুরি-চামারি খুব একটা দেখা যায় না। তারপরেও ‘শপলিফটারস’ এর মূল কাহিনী এগিয়েছে দারিদ্র্যের কারণে দোকান থেকে জিনিস চুরি করে চলা এক পরিবারকে কেন্দ্র করে। তাদের নীতি, “যা দোকানে আছে তা এখনো কারো সম্পত্তি না”। অভাবের সংসার হলেও তাদের মধ্যে আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। সেজন্যই পরিবারের কর্তা হঠাৎ করেই রাস্তায় পড়ে থাকা অসহায় এক মেয়েকে আশ্রয় দিয়ে ফেলে। অসাধারণ কোনো চমক ছাড়াই মানবিক কাহিনী দিয়েই সবার মনে দাগ কেটেছে ছবিটি। রক্তের সম্পর্ক না থাকা যে পরিবারের অংশ হতে কোনো বাধা নয়, পরিচালক হিরোকাজু কোরি-এদা সেটা ভালোভাবেই তুলে ধরেছেন। এর আগেও চারবার তিনি কান উৎসবে অংশ নিয়েছেন। ট্র্যাক রেকর্ড ভালো থাকাই হয়তো তাকে পুরস্কারটি জিতিয়ে দিতে সাহায্য করেছে।
আন্ডার দ্য সিলভার লেক
ইট ফলোজ খ্যাত পরিচালক ডেভিস রবার্ট মিশেলের পরিচালনায় এসেছে এই ভিন্নধর্মী মিস্ট্রি থ্রিলার মুভিটি। ২০১৫ সালের ইট ফলোজ কানে বেশ সাড়া ফেলেছিল বটে, তবে আন্ডার দ্য সিলভার লেক তাকে ছাড়িয়ে গেছে। লস অ্যাঞ্জেলস এর উদ্দেশ্যবিহীন বেকার এক তরুণ হলো স্যাম। সুন্দরী প্রতিবেশী সারাহর ওপর বাইনোকুলার দিয়ে নজর রাখতে রাখতে একদিন সাহস করে সামনে গিয়ে পরিচিত হয়। পরিচিত হবার পরদিনেই আবিষ্কার করে, সারাহ হঠাৎ করেই ঘর ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে। অন্য সবাই বিষয়টাকে স্বাভাবিকভাবে নিলেও নিরাসক্ত প্রকৃতির স্যাম হঠাৎ করেই এ ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠে। রহস্যের সমাধান করতে গিয়ে সে টের পায় এটি সাধারণ কোনো ব্যাপার না, এর পেছনে অশুভ প্রভাব ফেলছে প্রভাবশালী কোনো গুপ্ত সংস্থা। হয়তো আইজ ওয়াইড শাট এর মতোই বিলাসবহুল বাড়িগুলোতে থাকা ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা আসলেই কোনো গভীর অকাল্টিক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। অ্যান্ড্রু গারফিল্ডের নতুন এই প্রজেক্ট যথেষ্ট সম্ভাবনাময় বলেই মনে হচ্ছে।
কাপারনাওম
নাদিন লেবাকির ১৩০ মিনিট দীর্ঘ এই লেবানিজ চলচ্চিত্রটি জিতে নিয়েছে জুরি পুরস্কার। প্রদর্শনের পরপরই দর্শক-সমালোচকেরা ১৫ মিনিট উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন। জায়িন লেবাননের বৈরুতে বসবাস করা সহায়সম্বলহীন পরিবারের একটি ছেলে। একজনকে ছুরি মারার অপরাধে ইতোমধ্যেই তার পাঁচ বছরের সাজা হয়েছে। এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে জন্ম দেবার অপরাধে জায়িন তার বাবা-মার বিরুদ্ধে কোর্টে কেস করে দেয়। কারণ, তার এক বছরের ছোট বোন সাহারকে তারা কয়েকটি মুরগির বিনিময়ে তাদের বাড়িওয়ালার কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। বাবা-মাকে কোর্টে তুলবার মতো বিষয়টি অতি নাটকীয় বলে মনে হলেও পরিচালক চরম বাস্তবতার চিত্রটি নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। জায়িনের অ্যাটর্নির চরিত্রে লেবাকিকে কিছুক্ষণ পর্দাতেও দেখা যাবে। কেবল দারিদ্র্য নয়, পরিচালক ইগলের চোখ করেছেন সিরিয়ান উদ্বাস্তু, আধুনিক যুগের দাসপ্রথা সহ প্রকট আকার ধারণ করা আরো নানা সামাজিক সমস্যাকে।
কোল্ড ওয়ার
পাওয়েল পাওলিকস্কিকে সেরা পরিচালকের পুরস্কার জিতিয়ে দেওয়া পোল্যান্ডের এই চলচ্চিত্রটি নিয়ে সবার আশা ছিল শুরু থেকেই। ২০১৩ এর ইডা দিয়ে অস্কার জেতা পরিচালক নিরাশ করেননি। ক্যারিয়ারের প্রথমদিকে তেমন সাড়া ফেলতে পারেননি পাওলোকস্কি। তার জন্য সাদা-কালো চলচ্চিত্র ইডা ছিল বেশ একটা ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ। তার চার বছর পরে একই ফরম্যাটে বানানো ৮৫ মিনিট লম্বা এই রোমান্টিক চলচ্চিত্রটির পটভূমি হলো বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ৫০ এর দশকের অস্থির ইউরোপ। ধূসর সেই সময়ে ভিক্টর নামের এক সঙ্গীত পরিচালক নতুন গায়ক খুঁজতে গিয়ে দেখা পায় অসামান্য রূপসী জুলার। গুজব শোনা যায়, জুলা নিজেই তার বাবাকে হত্যা করেছে। ভিক্টরের ডানহাত ইরিনা তাকে সতর্ক করার চেষ্টা করে। এদিকে জুলা আবার এক কম্যুনিস্ট পার্টির লিডারের চোখে পড়ে যায়। পাওলিকস্কি তার নিজের মা-বাবার অভিজ্ঞতা থেকে এই রোমান্টিক নয়্যার ফিল্মটির কাহিনী লেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন।
সোলো: অ্যা স্টার ওয়ার্স স্টোরি
মেগা ফ্র্যাঞ্জাইজি স্টার ওয়ার্স সিরিজের মুভিগুলো এর আগে কমিক কন কিংবা অন্য ফ্যান কনভেনশনে প্রদর্শিত হলেও কান চলচ্চিত্র উৎসবে এবারই প্রথম। সেই ১৯৭৭ সালের স্টার ওয়ার্স: দ্য নিউ হোপ মুভিতে দর্শকদের মন জয় করে নেওয়া হ্যারিসন ফোর্ডের হ্যান সোলো চরিত্রটির পিছনের ইতিহাস দেখানোর পাশাপাশি এটিকে একটি অ্যাডভেঞ্চারধর্মী হিস্ট মুভি হিসেবেও বিবেচনা করা হচ্ছে। হ্যান সোলোর সাথে থাকবে তার চিরসঙ্গী উকি যোদ্ধা চিউবাকা এবং ল্যান্ডো। তরুণ হ্যান সোলোর ভূমিকায় আছেন অলডেন এরেনরাইক, সাথে আরো আছেন গেম অব থ্রোনস খ্যাত এমিলিয়া ক্লার্ক , ডোনাল্ড গ্লোভার এবং উডি হ্যারেলসন। জর্জ লুকাস পরবর্তী যুগের স্টার ওয়ার্স সিরিজের অনেকগুলো মুভির মধ্যে একটি হলো এই স্পিনঅফ। বলা হচ্ছে, বানানোর পরে প্রায় ৮০ ভাগ অংশই নতুন করে রিশুট করা হয়েছে। ২০০ মিলিয়ন বাজেটের ছবিটি ২৫শে মে বিশ্বব্যাপী মুক্তি পেয়েছে।
মান্টো
খ্যাতনামা উর্দু সাহিত্যিক সাদাত হাসান মান্টোর জীবনী নিয়ে নির্মিত নন্দিতা দাশের এই চলচ্চিত্র সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাকে তার প্রজন্মের অন্যতম সেরা ছোট গল্পকার বলে বিবেচনা করা হয়। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী পাকিস্তানে তিনি তার লেখা ছোটগল্পগুলোর কারণে নানাভাবে বাধার শিকার হয়েছিলেন। তার লেখার পেছনে প্রভাব ফেলেছিল দেশভাগ এবং সেসময়কার রক্তক্ষয়ী হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা। তীব্র এবং মর্মস্পর্শী লেখনীর কারণে আদালত তার গল্পগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। দুর্ভাগ্যবশত, জীবনের শেষ সময়গুলো তাকে আইনি লড়াই করেই কাটাতে হয়েছে। নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন এখনকার সময়ের অন্যতম প্রতিভাবান অভিনেতা নওয়াজুদ্দীন সিদ্দিকী। স্বাভাবিকভাবেই তিনি মান্টোর বুদ্ধিদীপ্ত ব্যক্তিত্ব পর্দায় নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। নন্দিতা দাশের আগের মুভিটিও ছিল গুজরাট দাঙ্গার মতো স্পর্শকাতর বিষয়কে ঘিরে।
গার্ল
লুকাস ডন্টের বেলজিয়ান এই মুভিটি জিতে নিয়েছে বেশ কিছু পুরস্কার। ১৫ বছর বয়সী লারা বাবার ইচ্ছায় ব্যালেরিনা হতে চায়। কিন্তু লারা ব্যালে নাচের কঠিন কলাকৌশলগুলো সহজভাবে রপ্ত করতে পারে না, কেননা জন্মগতভাবে সে একজন পুরুষ। মেয়েদের লকার রুমে অন্য সবার চোখ এড়িয়ে থাকলেও আত্মপরিচয়কে সে কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।
হোমোফোবিক লোকজন কিংবা বাবা-মায়ের চোখরাঙানি কিন্তু লারার সমস্যা নয়। তার নিজের সাথে নিজের দ্বন্দ্বই তাকে বারবার থমকে দিচ্ছে। আঁ সারতেঁ রিগার বিভাগে সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতে নেন লারার ভূমিকায় অভিনয় করা ভিক্টর পলস্টার। এমনকি অনেকে ভিক্টরের পারফরম্যান্সের সাথে ‘বয়েজ ডোন্ট ক্রাই’ এ হিলারি সোয়্যাঙ্কের পারফরম্যান্সের তুলনা করা শুরু করেছেন। কান কর্তৃপক্ষের সাথে শীতল সম্পর্ক থাকবার পরেও নেটফ্লিক্স আমেরিকা এ মুভিটিকে কিনে নিয়েছে।
দ্য হাউজ দ্যাট জ্যাক বিল্ট
এর আগে শেষ ২০১১ সালে মেলানকোলিয়া নিয়ে উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন লার্স ভন ট্রায়ার। কিন্তু সেবার হিটলার ও নাজিদের পক্ষে কিছু বেফাঁস মন্তব্য করায় বেশ কয়েকবছরের জন্য কান থেকে নিষিদ্ধ করা হয় তাকে। এবারে তিনি নিয়ে এসেছেন জ্যাক নামের এক চরম মানসিক অসুস্থ সিরিয়াল কিলারের অন্ধকার মনের অলিগলির গল্প। পাঁচটি অধ্যায়ে বিভক্ত মুভিটিতে এসেছে জ্যাকের পাঁচটি খুনের কাহিনী। আসলে কতগুলো খুন করা লাগবে জ্যাকের বাড়িটি সম্পূর্ণ করতে, সে প্রশ্নটির জবাব অবশ্য পাওয়া যায়নি। নৃশংস এবং বীভৎস কিছু দৃশ্যের কারণে চলচ্চিত্রটি স্ক্রিনিংয়ের সময়ে অনেকেই সহ্য করতে না পেরে উঠে চলে গেছেন।
আবার অনেক মুভিটিকে উপভোগও করেছেন এর ডার্ক কমেডির জন্য। ২০০০ সালের পাম ডি‘অর জয়ী ট্রায়ার কিছুটা সমালোচনার শিকার হলেও জ্যাকের ভূমিকায় অভিনয় করে ম্যাট ডিলন অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছেন। সেইসাথে আরো অভিনয় করেছেন উমা থারম্যান।
বর্ডার
আঁ সারতেঁ রিগারে প্রদর্শিত ১৮টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে সেরা হয়ে জুরি পুরস্কার অর্জন করে নেয় ইরানীয়-ড্যানিশ চলচ্চিত্রকার আলী আব্বাসীর এই চলচ্চিত্রটি। জুরিবোর্ডের একজন ছিলেন সদ্য অস্কারজয়ী গিয়ের্মো দেল তোরো, এই চলচ্চিত্রটি দেখতে বসেও দেল তোরোর কথা মনে আসা স্বাভাবিক। তথাকথিতভাবে দেখতে কিছুটা অসুন্দর হওয়ায় নিজেকে গুটিয়ে নেয়া সুইডিশ এক নারীকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এর কাহিনী। কাস্টম অফিসার ইভা তদন্ত করতে গিয়ে হঠাৎ করেই আগ্রহী হয়ে পড়ে সন্দেহভাজন ইরোর ওপরে। নর্ডিক এই মুভিটি বেশি আলোচিত হয়েছে এর বৈচিত্র্যপূর্ণ কাহিনী নিয়ে, কেননা একে সুপারন্যাচারাল হরর, রোমান্টিক, ফ্যান্টাসি কিংবা নয়্যার যেকোনো জনরাতেই ফেলা যায়। পরিচালনার পাশাপাশি অভিনেতারাও ছিলেন অসাধারণ, আপাতদৃষ্টিতে অবাস্তব একটি কাহিনীও তাই সবার মন জয় করে ফেলেছে।
বার্নিং
‘বার্ন বার্নিং’ নামের ছোটগল্পের ওপর ভিত্তি করে দক্ষিণ কোরিয়ান এই চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছে। সিক্রেট সানশাইন খ্যাত পরিচালক লি চ্যাং-দং এর আরেকটি মাস্টারপিস এই রোমান্টিক থ্রিলারের কাহিনী জমে উঠেছে জংসু নামের একজন উঠতি লেখককে ঘিরে। সদ্য গ্র্যাজুয়েট জংসু একদিন ডিপার্টমেন্ট স্টোরে গিয়ে পরিচিত হয়ে হেইমির সাথে, যে কিনা তাকে উপহার জেতার সুযোগ করে দেয়। অর্থ এবং ক্ষমতাহীন জংসু কিছুটা হীনম্মন্য হয়ে পড়ে যখন এক মহাধনী বেনের সাথে হেইমি সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। এরপর এই তিন চরিত্রকে ঘিরে ঘটতে থাকে কিছু রহস্যজনক ঘটনা। জংসু জানতে পারে, বেন আসলে ভয়ঙ্কর এক লোক, যার শখ হলো আগুন ধরিয়ে দেওয়া। এরপরে হঠাৎ করে হেইমি একদিন হারিয়ে যায়। সাধারণ হিংসা কিংবা রোমান্টিক কাহিনী থেকে মোড় ঘুরে ‘বার্নিং’ পরিণত হয় একটি থ্রিলার মুভিতে। অস্তিত্ববাদের সংকটে থাকা জংসু পুরো মুভিতেই নিজেকে খুঁজে ফেরে। বেনের ভূমিকায় আছেন দ্য ওয়াকিং ডেড খ্যাত স্টিভেন ইয়ুন। আর বার্নিং এর কেন্দ্রবিন্দু ইয়ু-আহ ইনও দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন জংসুর ভূমিকায়।
হুইটনি
বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী হুইটনি হিউস্টনের জীবন আর ক্যারিয়ারকে নিয়ে এই ব্রিটিশ ডকুমেন্টারিটি নির্মিত হয়েছে। মাদকাসক্তির কারণে অকালেই হারিয়ে যাওয়া এই প্রতিভাধর শিল্পীর জীবনের ইন-ডেপথ অ্যানালাইসিস করেছেন পরিচালক কেভিন ম্যাকডোনাল্ড। অসাধারণ প্রতিভাধর এই শিল্পীটিকে কোকেনের কাছে হেরে যেতে দেখার সময় মনে হতেই পারে, তিনি হয়ত নিজেকে একসময় ঠিক পথে ফিরিয়ে আনবেন। কেনইবা এত সফল একটি ক্যারিয়ারের পরেও তাকে এমন অন্ধকার পথ বেছে নিতে হলো, সে জবাবও দিয়েছেন পরিচালক। তার খালা এবং সহকারী ম্যারি জোনস একপর্যায়ে বোমা ফাটান। তিনি বলেন, হুইটনি শিশুকালে যৌন নির্যাতনের স্বীকার হয়েছিলেন। তিনি অপরিচিত কেউও না, ২০০৮ এ মারা যাওয়া শিল্পী ডি ডি ওয়ারউইক। তাকে ভালোভাবে জানতেন এমন আরো কিছু মানুষের সাক্ষাৎকার এবং দুষ্প্রাপ্য ফুটেজের পাশাপাশি তার কিছু দুর্লভ পারফরম্যান্সেরও দেখা মিলবে এই মুভিতে। সর্বকালের অন্যতম সেরা গায়িকার ভক্তদের জন্য এ এক দারুণ উপহার।
উৎসবে না আসতে পারলেও ফরাসী পরিচালক জ্যঁ লুক-গদার, অস্থির আরব বিশ্বের ছবি দ্য ইমেজ বুক দিয়ে সাড়া ফেলেছেন। এবারে শর্টফিল্ম কর্নারে ছিল বাংলাদেশের চারটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র: নোমান রবিনের অ্যা কোয়ার্টার মেইল কান্ট্রি, জসীম আহমেদের অ্যা পেয়ার অফ স্যান্ডাল, মনজুরুল আলমের মেঘে ডাকা, ইকবাল হোসাইন চৌধুরীর রোয়াই।