হোমকামিংয়ের পর এবার আমাদের প্রিয় স্পাইডারম্যান যাচ্ছে ইউরোপ সফরে। হ্যাঁ, মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সের ২৩ তম মুভিটি হবে পিটার পার্কারের ইউরোপ সফরকে ঘিরে। এই মুভিতে প্রথমবারের মতো স্পাইডারম্যানের দেখা হবে নিক ফিউরি এবং মারিয়া হিলের সাথে। থাকবে পুরোনো কিছু বন্ধু, নতুন কিছু অনুভূতি। তবে ইউরোপ ট্যুরেও পিছু ছাড়বে না নানা বিপত্তি। স্পাইডিকে হতে হবে নতুন কিছু শত্রুর মুখোমুখি, যারা তার এই ভ্রমণকে করে তুলবে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। স্পাইডারম্যান কি পারবে নতুন এই শত্রুদের হারিয়ে তার ইউরোপ সফরকে আরো স্মরণীয় করে রাখতে?
ব্রাশ করতে করতে নেডের (জ্যাকব বেটালন) সাথে এমজে-কে নিয়ে কথা বলছিলো পিটার (টম হল্যান্ড)। হঠাৎ করেই নেড চুপ হয়ে গেল এবং মেঝেতে ধুপ করে একটা শব্দ হলো। ঘুরে তাকাতেই পিটার দেখতে পেল, সোফায় কালো ওভারকোট গায়ে এবং বাম চোখে আইপ্যাচে পরিচিত এক ব্যক্তিকে। তিনি বলে উঠলেন, “অবশেষে তোমার সাথে দেখা হওয়ায় ভাল লাগল স্পাইডারম্যান।” পিটার এতটাই অবাক হয়েছিল যে তার হাত নড়ছিলো না, “আপনি নিক ফিউরি, তাই না?” এভাবেই S.H.I.E.L.D. এর ডিরেক্টর নিক ফিউরির (স্যামুয়েল এল জ্যাকসন) সাথে প্রথমবারের মতো দেখা স্পাইডির। নিক ফিউরির সাথেই ইউরোপে নতুন এক অ্যাডভেঞ্চারে নামবে স্পাইডি।
তবে স্পাইডারম্যানের ইউরোপ সফর যে অত ভাল কাটবে না তা আমরা ট্রেলার দেখলেই বুঝতে পেরেছি। এই ট্রেইলারে আমরা দেখতে পাই চারজন অদ্ভুত ভিলেনকে। একজনের শরীর মাটি দিয়ে তৈরি, একজন পানির, একজন আগুনের এবং আরেকজনের কোনো রুপই নেই, কেবল লন্ডন ব্রিজের উপর বজ্রপাত নিক্ষেপ করছিলো সে। প্রথম দেখাতে যে কারো মনে হবে, এখানে স্পাইডারম্যানের ভিলেন হিসেবে আছে স্যান্ডম্যান, হাইড্রোম্যান, মোল্টেন ম্যান আর বিজলি ছুঁড়ে মারা এই ভিলেনকে দেখে মনে হবে ইলেক্ট্রো। ট্রেলারের বেশ কিছু জায়গাতে তাদের বিষয়ে কিছুটা ইংগিত দেয়া হয়েছে।
তবে গত ৮ ডিসেম্বর ব্রাজিলে কমিক কন এক্সপেরিয়েন্স (CCXP) তে যখন মুভিটির কাস্ট মেম্বাররা মুভিটি নিয়ে কথা বলছিলেন, তখন টম হল্যান্ড সবাইকে জানান মুভিটিতে এলিমেন্টালসরা থাকবে!
এলিমেন্টালস নাম শুনেই নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগবে- এরা কারা? এলিমেন্টালস অনেক প্রাচীন চারজন ভিলেনের একটি দল। কমিকে দেখা যায় কয়েক হাজার বছর আগেই তারা তাদের নিজেদের ইউনিভার্স থেকে নির্বাসিত হয়। তারপর তারা পৃথিবীতে এসে আশ্রয় নেন। ধারণা করা হয়, পৃথিবীতে তাদের আগমন আটলান্টিয়ান সভ্যতা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগেই। এই দলের সদস্যরা হলেন, হাইড্রন, যিনি পানি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, ম্যাগনাম, যিনি মাটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, হেলফায়ার, যার মূল শক্তি আগুন এবং যেফার, যে বাতাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সুতরাং আমরা মোটামুটি নিশ্চিত, ট্রেলারে দেখানো চার ভিলেন মূলত এলিমেন্টালস।
সিনেমাটির কাজ শুরু হওয়ার আগেই গুজব উঠেছিলো, জ্যাক জিলেনহল থাকছেন স্পাইডির ভিলেন হিসেবে। গত মাসেই ইন্সটাগ্রামে একটি ভিডিও শেয়ার করার মাধ্যমে তিনি মোটামুটি নিশ্চিত করেন সেই গুজব। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে CCXP-তে মুভিটির ট্রেলার প্রদর্শনের সময় অন্যান্য অভিনেতাদের সাথে জ্যাক জিলেনহল ছিলেন এবং সেখানে তিনি বলেন, তিনি মুভিতে মিস্টেরিও হিসেবে অভিনয় করবেন।
মিস্টেরিও স্পাইডারম্যানের চিরশত্রু এবং সুপারভিলেইন গ্রুপ সিনিস্টার সিক্সের একজন সদস্য। ১৯৬৪ সালের অ্যামেজিং স্পাইডারম্যান ইস্যু ১৩-এ মিস্টেরিওকে প্রথম দেখা যায়। চরিত্রটি সৃষ্টি করেন প্রয়াত স্ট্যান লি এবং স্টিভ ডিকটো।
কমিকেও মিস্টেরিও পরিচয় নিয়ে বেশ কিছু সুপারভিলেনের আবির্ভাব হয়, তবে কেউই কুইন্টিন বেকের মতো জনপ্রিয় হতে পারেনি। ২০০৯ IGN সালে থেকে প্রকাশিত Greatest Comic Book Villains Of All Time লিস্টে মিস্টেরিওকে ৮৫ তম স্থান দেয়া হয়।
কুইন্টিন ছিল হলিউডের এক বড় স্টুডিওর স্ট্যান্ট ম্যান এবং স্পেশাল ইফেক্টস ডিজাইনার। সে বেশ মেধাবী স্পেশাল ইফেক্ট আর্টিস্ট ছিল। কিন্তু যখন সে দেখল কেউ তার মেধার সঠিক মূল্যায়ন করছে না, তখন সে তার জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা দিয়ে নিজেকে সুপার ভিলেন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। ট্রেলারে তাকে ডক্টর স্ট্রেঞ্জের মতো জাদুবিদ্যার প্রয়োগ করতে দেখা গেলেও, আদতে সে জাদুবিদ্যার কিছুই জানে না। বলতে গেলে তার কোনো সুপার পাওয়ারই নেই। তবে সে নানা রকম ইল্যুশন এবং সম্মোহনবিদ্যায় বেশ অভিজ্ঞ। সে এমন সব দৃষ্টিভ্রম সৃষ্টি করতে পারে, যা দিয়ে স্পাইডারম্যানের মতো সুপারহিরোকেও সে বোকা বানায়। এমনকি একবার তো স্পাইডারম্যানকে সম্মোহন করে তার মুখোশ প্রায় খুলেই ফেলেছিল। এছাড়াও রোবটিক্স এবং বিভিন্ন কেমিক্যাল নিয়েও তার ভাল জ্ঞান আছে। স্পাইডারম্যানের মতো অত শারীরিক শক্তি যদিও তার নেই, তারপরেও সে বেশ কিছু মারামারির কৌশল রপ্ত করেছিল স্টান্টম্যান থাকাকালীন, যা দিয়ে সে মোটামুটি নিজেকে আত্মরক্ষা করতে পারে। তবে সবচাইতে আকর্ষণীয় বিষয় হলো মিস্টেরিওর স্যুট।
কমিকে সে বিশেষ পরিচিত মাথায় সেই অদ্ভুত ফিশবোল হেলমেটের কারণে। অনেকেই ভেবেছিলো, জ্যাক জিলেনহলের মতো অভিনেতা এই চরিত্রে অভিনয় করায় সেই ফিশবোল হেলমেট আমরা দেখতে পাবো না, কিন্তু মার্ভেল আমাদের হতাশ করেনি। ট্রেলারে আমরা সেই হেলমেট দেখতে পাই। সেই হেলমেট বিশেষ ধরনের ফ্লেক্সিগ্লাস দিয়ে বানানো, অর্থাৎ এটা দিয়ে সে বাইরের সব কিছু দেখতে পায়, কিন্তু কেউ তার চেহারা দেখতে পায় না।
পুরো স্যুটে নানা রকমের গ্যাজেট এবং গ্যাস আছে যা দিয়ে সে স্পাইডারম্যানের স্পাইডার সেন্স বন্ধ করে দিতে পারে। তাছাড়াও তার কাছে এমন কেমিক্যাল আছে, যা স্পাইডাম্যানের জাল গলিয়ে দিতে পারে। এছাড়া স্প্রিং, নজল এসবও আছে, যা দিয়ে সে নিজেকে আত্মরক্ষার পাশাপাশি অনেক রকমের ইল্যুশন সৃষ্টি করতে পারে।
স্পাইডারম্যানের সাথে মিস্টেরিওর শত্রুতা মিস্টেরিওর একেবারে প্রথম আবির্ভাবের পর থেকেই। তবে মুভিতে সে কি স্পাইডারম্যানের বন্ধু নাকি শত্রু সেটা আমরা সিনেমাটি দেখার পরই বুঝতে পারব।
হোমকামিংয়ে স্পাইডারম্যানকে দুটি স্যুটে আমরা দেখতে পাই। একটি সেই ক্যাপ্টেন আমেরিকা সিভিল ওয়ার মুভির সময়কালের, যেটা টনি স্টার্ক স্পাইডারম্যানকে দিয়েছিলো। আরেকটি নিজের বাসায় বানানো স্যুট, যেটা পরেই সে ভালচারকে হারিয়েছিলো। তবে এই সিনেমার ট্রেলারে আমরা স্পাইডারম্যানকে তিনটি স্যুটে দেখতে পাই। একটি সেই লাল-নীল স্যুট, তারপর লাল-কালো স্যুট এবং আরেকটি কালো স্যুট। লাল-কালো স্যুটটি আমাদের মনে করিয়ে দেবে ১৯৬২ সালে প্রকাশিত অ্যামেজিং ফ্যান্টাসির ১৫তম ইস্যুর কথা। সেই ইস্যুতে স্পাইডারম্যানকে এই লাল-কালো স্যুটে দেখা যায়। সে ইস্যুটির প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন স্টিভ ডিকটো। হতে পারে মুভিতে এই স্যুট দেখানোর মাধ্যমে প্রয়াত স্টিভ ডিকটোকেই স্মরণ করা হচ্ছে।
স্পাইডারম্যানকে আমরা শেষবার দেখেছিলাম অ্যাভেঞ্জারস ইনফিনিটি ওয়ার মুভিতে। সেই মুভিতে থানোসের হাতের চুটকিতে এই ইউনিভার্সের অর্ধেক প্রাণীর সাথে হারিয়ে যায় আমাদের প্রিয় স্পাইডারম্যানও। অ্যাভেঞ্জারস এন্ডগেম মুভিতে সেই থানোসের মুখোমুখি আবার হতে চলেছে অ্যাভেঞ্জারসরা। লক্ষ্য একটাই, হারিয়ে যাওয়া সবাইকে আবার ফিরিয়ে আনা। কিন্তু ফার ফ্রম হোম মুভিটিতো রিলিজ পাবে এন্ডগেম মুভির পরে। তাহলে মুভিতে যা হতে চলেছে সেটা কি এন্ডগেম মুভির পরের ঘটনা?
হ্যাঁ, সিনেমাটির প্রডিউসার অ্যামি প্যাস্কেল গত বছর ফ্যানডমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, নতুন স্পাইডারম্যান মুভিটি এন্ডগেম মুভির কয়েক মিনিট পরেই শুরু হয়। তাই আমরা মোটামুটি নিশ্চিত, আমরা আবার আমাদের প্রিয় সব সুপারহিরোদের ফিরে পেতে যাচ্ছি।
স্পাইডারম্যান ফার ফ্রম হোম মুভিটির টিজার ট্রেলার মুক্তি পায় গত ১৫ জানুয়ারি। মুক্তি পেয়েই সনির সবচাইতে বেশি দেখা মুভির ট্রেইলার হিসেবে রেকর্ড করে, যা আগে ছিল স্পাইডারম্যান হোমকামিংয়ের দখলে।
ট্রেলার দেখে আমরা বুঝতে পেরেছি, মুভিতে পিটার এবং এমজের মধ্যে একটি মিষ্টি রোমান্টিক সম্পর্ক দেখতে পাবো। এমজে বা মিশেল জোন্স হিসেবে মুভিতে থাকছেন জেন্ডায়া। তবে কমিক ফ্যানরা এতে কিছুটা হতাশ। কারণ কমিকে এমজে মানেই লালচুলা মেরি জেন। কমিকবুকের অন্যতম জনপ্রিয় কাপল এই পিটার-এমজে। তবে বইপড়ুয়া মিশেল জোন্স হিসেবে জেন্ডায়া আমাদের মন কাড়তে পারবে কি না সেটা আমরা মুভিতেই দেখতে পাবো।
পরিচালক হিসেবে ফিরছেন জন ওয়াটস। আগের মুভি হোমকামিং বেশ ব্যবসাসফল ছিল। বক্স অফিসে ৮৮০ মিলিয়ন আয় করেছিল মুভিটি। তাই মার্ভেল এবারও ভরসা রাখল তার উপর।
হোমকামিংয়ের মতো এই সিনেমাতেও স্পাইডির সাথে থাকবে তার বেস্ট ফ্রেন্ড এবং ‘ম্যান ইন চেয়ার’ নেড লিডস। আবার পিটারকে বিরক্ত আর উত্যক্ত করার জন্য অবশ্য ফ্ল্যাশ থম্পসনও (টনি রেভলরি) থাকবে। যদিও ট্রেলারে আমরা দেখতে পাই ফ্ল্যাশের সাথে পিটারের শত্রুতা থাকলেও সে স্পাইডারম্যানের বেশ বড় ভক্ত। আমরা কমিকেও সে একই বিষয় দেখতে পাই। এমনকি কমিকে সে ‘স্পাইডারম্যান ফ্যান ক্লাব’ এর প্রতিষ্ঠাতা ছিল।
এছাড়াও আন্ট মে (মারিসা টমেই), হ্যাপি হোগান (জন ফেব্রু), ডেলমার (হেমকি মাদেরা), মিস্টার হ্যারিংটন (মার্টিন স্টার)-কেও মুভিতে দেখতে পাব। ট্রেলার দেখে এখনো বোঝার উপায় নেই মূল সিনেমাতে স্পাইডারম্যানের মেন্টর আয়রনম্যান থাকবে কি না। তবে গুজব আছে, অ্যাড্রিয়ান টুমস (মাইকেল কিটন) অর্থাৎ হোমকামিং মুভির ভিলেন ভালচার ফার ফ্রম হোমে থাকতে পারেন।
সিনেমাটির শ্যুটিং শেষ হয়েছে গত বছরের অক্টোবরে। টম হল্যান্ড তার ইনস্টাগ্রাম একাউন্টে লাল-কালো স্যুটে একটি ছবি আপলোড করার মাধ্যমে তা সবাইকে জানান। মুভিটির শ্যুটিং হয়েছে ইংল্যান্ড, চেক রিপাবলিক, ভেনিস, নিউ ইয়র্ক এয়ারপোর্ট এবং নিউ ইয়র্কে।
দেয়াল বেয়ে উঠতে পারা এই সুপারহিরো সবচাইতে জনপ্রিয় সুপারহিরোদের মধ্যে একজন। তাই তার মুভি নিয়ে ফ্যানদের মধ্যে সব সময়ই অন্যরকম হাইপ কাজ করে। স্পাইডারম্যানের এই মুভিটি মুক্তি পাবে জুলাইয়ের ৫ তারিখে। নতুন এবং ভয়ংকর সব ভিলেনদের কাছ থেকে ঠিক কীভাবে স্পাইডি সবাইকে বাঁচাবে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করাটাই অনেক কঠিন কাজ।