সুপারহিরো মাসুদ রানা ও বাংলা স্পাই থ্রিলারের গল্প

বাংলা কথাসাহিত্য বরাবরই সমৃদ্ধ। যুগে যুগে অসাধারণ ও কালজয়ী সব লেখক এসে আমাদের কথাসাহিত্যে নতুন নতুন ধারা যোগ করেছেন, করছেন। বাংলা কথাসাহিত্যকে নিয়ে গেছেন সুবিশাল উচ্চতায়।

কিন্তু আমাদের কথাসাহিত্যে রহস্য, গোয়েন্দা, থ্রিলারধর্মী কাজ খুবই হাতেগোনা ছিল একসময়। আজও যে খুব বেশি কাজ হচ্ছে সেটাও বলা যায় না।

সেই জায়গা থেকে বাঙালি পাঠককে কিছুটা হলেও সাহিত্যের এই দিককে পাঠ করার, উন্মোচন করার সুযোগ করে দিয়েছে কাজী আনোয়ার হোসেনের সেবা প্রকাশনী৷ সেই সেবা প্রকাশনী এবং কাজী আনোয়ার হোসেনের এক অনবদ্য সৃষ্টি বাংলার প্রথম স্পাই থ্রিলারধর্মী সুপারহিরো চরিত্র মাসুদ রানা।

বাংলাদেশে যারা বইয়ের পোকা, যারা নিয়মিত পাঠক, তাদেরকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়- বাংলা কথাসাহিত্যে নিজেদের পড়া সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র কোনগুলো? অনেক নামই আসবে উত্তর হিসেবে। কিন্তু প্রায় সবার উত্তরেই যে নামটি সবচেয়ে কমন হিসেবে আসবে, সেটি হলো ‘মাসুদ রানা’।

বলা যায় বাঙালির ভালোবাসার সুপারহিরোর নাম মাসুদ রানা। যে মাসুদ রানা শুধু দুর্ধর্ষ একজন গুপ্তচর কিংবা গোয়েন্দাই নন, বাঙালি মধ্যবিত্তের স্বপ্নের নায়কও বটে।

মাসুদ রানার স্রষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেনকে পাঠকেরা শ্রদ্ধা ক’রে, ভালোবেসে ডাকে কাজীদা। আজ আমরাও তাকে কাজীদা সম্বোধন করেই লেখাটা এগিয়ে নিয়ে যাবো।

মাসুদ রানা সিরিজের প্রথম উপন্যাস ধ্বংস পাহাড়; Image Source: masudrana.fandom.com

কাজীদা তখন কুয়াশা সিরিজ লিখছিলেন। হঠাৎ একদিন বন্ধু মাহবুব আমিন তাকে বিখ্যাত ইংরেজ লেখক ও জেমস বন্ডের স্রষ্টা ইয়ান ফ্লেমিংয়ের একটি বই পড়ার জন্য দেন।

বইটি পড়ার পর কাজীদার মনে ভাবান্তর শুরু হয়। তিনি ভাবতে থাকেন বাংলা ভাষাতে এই মানের থ্রিলার লিখবেন। শুরু করেন পড়াশোনা। বিদেশি প্রচুর থ্রিলার ও গোয়েন্দাভিত্তিক বই পড়ে প্রস্তুতি নিতে থাকেন।

১৯৬৫ সালে কাহিনীর প্লট সাজাতে মোটর সাইকেল-যোগে ঘুরে বেড়ান রাঙামাটি, কাপ্তাই ও চট্টগ্রামের নানা জায়গায়। সেখান থেকে ফিরে লিখতে বসেন। দীর্ঘ সাত মাস খেটে তিনি লেখেন ধ্বংস পাহাড়। ১৯৬৬ সালের মে মাসে প্রকাশিত হয় বাংলার এই প্রথম স্পাই থ্রিলার গোয়েন্দা কাহিনী।

প্রথম বইটিতেই সাড়া পড়ে যায়। পাঠক দারুণভাবে গ্রহণ করে নেয়। এরপর লেখেন দ্বিতীয় বই ভারতনাট্যম। যেটি লেখার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন আরও বেশি সময়, প্রায় ১০মাস। এই দুটি বই-ই পাঠকমহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে।

বিশেষ করে রহস্য, রোমাঞ্চ, হিরোগিরির সাথে যখন অনেক অজানা অ্যাডাল্ট কনটেন্ট যোগ হয়, তখন তরুণ পাঠকেরা মাসুদ রানার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন। চারদিক থেকে প্রচুর চিঠি আসে সেবা প্রকাশনীর ঠিকানায়, আরও দ্রুত মাসুদ রানা লেখার তাগিদ আসে।

পাঠকের বেসামাল চাপে প্রস্তুতি ও অভিজ্ঞতার অভাবে মৌলিক লেখা বন্ধ করে দিয়ে বিদেশী কাহিনীর ছায়া অবলম্বনে সেই যে মাসুদ রানা লিখতে শুরু করেন কাজীদা, এখনও সেটি চলছে অবিরাম। এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচশ’র মত বই প্রকাশ হয়ে গেছে। কিন্তু মাসুদ রানার জনপ্রিয়তা কমেনি একটুও।

মাসুদ রানা সিরিজের লেখক কাজী আনোয়ার হোসেন। যাকে সবাই কাজীদা বলে; Image Source: saptahik.com

মাসুদ রানা চরিত্রটি দুর্ধর্ষ এক স্পাই থ্রিলারের চরিত্র। যার সংক্ষিপ্ত নাম MR9। যিনি দেখতে যেমন সুদর্শন, বুদ্ধিও প্রখর। শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রচণ্ড শক্তিশালী ও দৃঢ়তায় ভরপুর।

বাঙালি হলেও সারাবিশ্বে দুর্দান্ত একজন স্পাই হিসেবে তার খুব নামডাক। নানা সময়ে বহু সুন্দরী নারী যার বাহু-বন্ধনে আবদ্ধ হন, কিন্তু কারও মনের দরজাই তাকে বেঁধে রাখার ক্ষমতা রাখে না। স্বাধীনভাবে কাজ করে যান অবিরাম। সবসময় তার সাথে থাকে প্রিয় ওয়ালথার পিপিকে পিস্তলটি।

মাসুদ রানা চরিত্রটির নামকরণ করা হয় কাজীদার বন্ধু গীতিকার মাসুদ করিমের প্রথম অংশ মাসুদ নিয়ে এবং নিজের প্রিয় ঐতিহাসিক চরিত্র রানা প্রতাপ সিংহের প্রথম অংশ রানা নিয়ে।

মাসুদ রানা সিরিজে ঘুরেফিরে অনেক চরিত্রই এসেছে। তার মধ্যে মেজর জেনারেল রাহাত খান- যার নামকরণ করা হয়েছে কাজীদার বন্ধু সাংবাদিক রাহাত খানের নামে। এছাড়াও সোহানা, কবীর চৌধুরী, সোহেল, অনীতা, ইদু মিয়া, গিলটি মিয়াদের মত চরিত্রগুলো বারবার মাসুদ রানায় এসেছে। সুদর্শনা সোহানাকে ভক্তরা ভাবী বলে সম্বোধন করে আজও। খ্যাপাটে বিজ্ঞানী কবীর চৌধুরী তো রানার চিরশত্রু হিসেবে আজও আছেন। তবে রানা যে সংস্থায় কাজ করেন তার নাম হলো BCI তথা বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স। সংস্থার প্রধান রাশভারী, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মেজর জেনারেল রাহাত খান।

বিদ্যুৎ মিত্র ছদ্মনামে শুরুতে মাসুদ রানা লিখলেও একসময় কাজী আনোয়ার হোসেন নামেই লিখতে শুরু করেন। আস্তে আস্তে কিছু ‘ঘোস্ট রাইটার’ও তার সঙ্গী হন। প্রথম বই ধ্বংস পাহাড় যখন লেখেন, তখন পাকিস্তান আমল। বইটির জনপ্রিয়তা দেখে সেটা অনুবাদ হয় উর্দুতেও। নাম দেয়া হয় ‘মউত কা টিলা’।

মাসুদ রানাকে বলা যায় বাংলা ভাষার প্রথম অ্যাডাল্ট সিরিজ উপন্যাস। অনেকভাবেই যৌনতা ও রোমান্স এসেছে সিরিজটিতে। কাজীদা এ নিয়ে প্রথম বই ধ্বংস পাহাড়ের ভূমিকাতেই লিখেছেন,

প্রথমেই বলে রাখি, এই বই বড়দের জন্য লেখা। বাংলা সাহিত্যে রহস্য উপন্যাস বলতে বোঝায় কেবল ছোট ছেলে-মেয়েদের টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে কেনা এক ধরনের উদ্ভট গল্পের বই, যা হাতে দেখলে বাবা, কাকা, ভাইয়া এবং মাস্টার মশাই প্রবল তর্জন গর্জন করে কেড়ে নিয়ে নিজেরাই পড়তে লেগে যান, গোপনে। কেন পড়েন? কারণ এর মধ্যে এমন এক বিশেষ রস আছে যা, প্রচলিত অর্থে যাকে আমরা সুসাহিত্য বলি, তার মধ্যে সাধারণত পাওয়া যায় না। তাই ছোটদের বই থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে, আংশিক হলেও, আনন্দ লাভ করেন বড়রা। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বিশেষ করে ছোটদের জন্যে লেখা বলে এসব বইয়ে ছেলেমানুষির এতই ছড়াছড়ি থাকে যে, আমরা বড়রা এই বই পড়ি, এবং এ থেকে আনন্দ পাই তা স্বীকার করতে লজ্জা বোধ করি। তাই ছেলেমিটাকে যতদূর সম্ভব এড়িয়ে গিয়ে বড়দের উপভোগ্য রোমাঞ্চকর রহস্যোপন্যাস রচনা করবার চেষ্টা করলাম।

এসব অ্যাডাল্ট কনটেন্ট লিখতে গিয়ে অবশ্য প্রচুর ঝামেলাও পোহাতে হয়েছে কাজীদাকে। কয়েকটি বই প্রকাশের পর তৎকালীন রক্ষণশীলরা সিরিজটির বিরুদ্ধে অশ্লীলতার অভিযোগ আনেন। বয়ে যায় নিন্দা আর সমালোচনার ঝড়। বিশেষ করে স্বর্ণমৃগ বইটি তো আদালতের নির্দেশে বন্ধই হয়ে যায়। পরে উচ্চ আদালতের রায়ে পুনরায় প্রকাশ হলেও অনেক কিছু বাদ দিতে হয়।

যদিও একসময় কাজীদা নিজেই উপলব্ধি করেন অতি রক্ষণশীলতা ও মৌলবাদে ভরপুর এই সমাজে যৌনতা একটি ট্যাবু। আস্তে আস্তে তাই যৌনতা কমে আসে মাসুদ রানা থেকে। প্রথম দিককার ১৫/১৬টা বইয়ের পর বাকি বইগুলোতে যৌনতার উপস্থিতি নেই বললেই চলে।

অ্যালিস্টেয়ার ম্যাকলিন, জেমস হেডলি চেজ, রবার্ট লুডলাম, উইলবার স্মিথ, ক্লাইভ কাসলার, হ্যামন্ড ইনস, ডেসমন্ড ব্যাগলি, ইয়ান ফ্লেমিংসহ অসংখ্য লেখকের লেখা গোয়েন্দা-কাহিনীকে কাজীদা উপজীব্য করলেও মাসুদ রানা একজন আপাদমস্তক বাঙালি চরিত্র। এমনভাবেই আসলে কাহিনীগুলো সাজানো হয়েছে।

যেমন কখনো কখনো মাসুদ রানার মনটা হঠাৎ বিষণ্ন হয়ে যায়; ওর মনে পড়ে, কবে একটা কবিতা পড়েছিলাম, “কাছে এলো পূজার ছুটি/রোদ্দুরে লেগেছে চাঁপাফুলের রং।” সমুদ্রের ধারে অস্তগামী সূর্য দেখে প্রকৃতির বিশালত্বের কাছে নিজেকে তার খুবই ছোট মনে হয়। জীবনের কোনো অর্থ খুঁজে পায় না। এ ধরনের চিন্তার সঙ্গে বাঙালি যুবকেরই মিল পাওয়া যাবে, কোনো বিদেশী যুবকের নয়।

মাসুদ রানা সিরিজের প্রথম চলচ্চিত্রের পোস্টার; Image Source: Wikipedia

মাসুদ রানাকে নিয়ে মাসুদ রানা নামে প্রথম চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে ১৯৭৪ সালে। বিস্মরণ বইটি থেকে মাসুদ পারভেজ ওরফে সোহেল রানা চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন। রানা চরিত্রে অভিনয় করেন সোহেল রানা, যেটি ছিল তার অভিনীত প্রথম সিনেমা। তার সাথে আরও অভিনয় করেন কবরী, অলিভিয়া, ফতেহ লোহানী, খলিল প্রমুখ। কাজী আনোয়ার হোসেন এই চলচ্চিত্রের জন্য ১৯৭৪ সালে শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার ও সংলাপ রচয়িতা হিসেবে বাচসাস পুরস্কার লাভ করেন।

সম্প্রতি একটি শীর্ষস্থানীয় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান মাসুদ রানাকে আবারও রূপালী পর্দায় নিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই তারা তাদের পুরো পরিকল্পনা জানিয়ে দিয়েছে। ধ্বংস পাহাড় বইটি থেকেই নির্মিত হচ্ছে চলচ্চিত্রটি।

নির্মাণ করবেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হলিউড পরিচালক আসিফ আকবর। তার সাথে কাজ করবেন বাংলাদেশ ও হলিউডের খ্যাতনামা সব কলাকুশলীরা। বাজেট ধরা হয়েছে ৮৩ কোটি টাকা। বাংলা-ইংরেজি দুটি ভাষাতেই তৈরি হবে সিনেমাটি। দেশে বাংলায় মুক্তি দেওয়া হলেও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মুক্তি পাবে ছবিটির ইংরেজি সংস্করণ। 

শুটিং হবে বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড ও মরিশাসে। অভিনয় করবেন রেসলিং দুনিয়ার দশাসই তারকা দ্য গ্রেট খালি। ছবিতে ভিলেন হিসেবে থাকবেন তিনি। খলচরিত্রে আরো থাকছেন ‘দ্য ম্যাট্রিক্স’ ছবির
খলনায়ক ড্যানিয়েল বার্নহার্ড। এছাড়াও আছেন আয়রন ম্যান-২ খ্যাত হলিউডের জাঁদরেল অভিনেতা মিকি রোর্ক, গ্যাব্রিয়েল্লা রাইট, মাইকেল প্যারেসহ বেশ ক’জন তারকা।

শুধু একটি সিনেমা নির্মাণ নয়, MR9 কে তারা একটি সিরিজ হিসেবে চালিয়ে যাবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই তারা তিনটি বইয়ের স্বত্ব কিনে নিয়েছেন কাজীদার কাছ থেকে। যদি কথামতো কাজ হয়, তাহলে মাসুদ রানা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পাবে, এমনটি বলাই যায়।

ধ্বংস পাহাড়, ভারতনাট্যম ও স্বর্ণমৃগ – মোট তিনটি বইয়ের সত্ব কিনেছে খ্যাতনামা ঢালিউডের খ্যাতনামা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। তৈরি হবে চলচ্চিত্র; Image Source: boibazar.com

সম্প্রতি একটি বিতর্ক শুরু হয়েছে মাসুদ রানাকে নিয়ে। মাসুদ রানার ‘ঘোস্ট রাইটার’ হিসেবে পরিচিত দুজন লেখক ইফতেখার আমিন ও শেখ আব্দুল হাকিম অভিযোগ তুলেছেন কাজীদা ও সেবা প্রকাশনীর বিরুদ্ধে। তারা দাবি করেছেন ‘ঘোস্ট রাইটার’ হিসেবে তারাই বেশিরভাগ মাসুদ রানা লিখেছেন। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী রয়ালটি পাননি। ফলে তারা এখন আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।

অপরদিকে সেবা প্রকাশনী লেখকদ্বয়ের দাবিকে অস্বীকার করেছে। তারা আইনিভাবেই বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে চায়। মাসুদ রানাকে নিয়ে বিগ বাজেটের বিশ্বমানের সিনেমা নির্মাণ যেমন গৌরবের, মাসুদ রানার রয়ালটি-সংক্রান্ত ইস্যু মিডিয়ায় আসা এবং এ-সংক্রান্ত বিতর্কও বিব্রতকর।

পাঠক হিসেবে আমরা চাইবো, প্রিয় মাসুদ রানা সবসময় বিতর্কমুক্ত থাকুক। আদালতে যেহেতু বিষয়টি মীমাংসাধীন, সেহেতু আদালতেই এর সমাধান হোক। আমরা একটি সুন্দর গ্রহণযোগ্য সমাধানের আশায় থাকব।

মাসুদ রানা যখন শুরু হয় তখনও বাংলা কথাসাহিত্যে রহস্য, রোমাঞ্চ, স্পাই থ্রিলারধর্মী শক্তিশালী উপন্যাস কিংবা সিরিজ যেমন অপ্রতুল ছিল, এখনও তাই রয়ে গেছে। অবশ্য ওপারে অনেকেই চেষ্টা করেছেন গোয়েন্দা ও থ্রিলার কাহিনী লেখার। লিখেছেনও অনেক।

শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ বক্সী, সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা, নিহাররঞ্জন গুপ্তের কিরিটি সিরিজ ও বিভূতিভূষণের শঙ্করকে নিয়ে উপন্যাসগুলোর নাম এক্ষেত্রে সবার আগে বলতেই হবে। যদিও পশ্চিমা থ্রিলার সিরিজগুলোর দাঁড় করানো মানদণ্ডে এগুলোর ঠিক ‘বৈশ্বিক আবেদন’ তৈরি হবারও সুযোগ কম।

এপার বাংলায় রোমেনা আফাজের লেখা দস্যু বনহুর, সেবা প্রকাশনীর কুয়াশা, ওয়েস্টার্ন সিরিজ, কিশোরদের তিন গোয়েন্দা সিরিজ আর মাসুদ রানা ছাড়া উল্লেখযোগ্য কাজ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। উল্লিখিত সিরিজের বেশিরভাগ অবশ্য অনুবাদ ও বিভিন্ন বিদেশী কাহিনী অবলম্বনে লেখা।

মৌলিক গোয়েন্দাকাহিনি সে অর্থে খুবই কম লেখা হয়েছে। অবশ্য ইদানিং অনেক তরুণই মৌলিক থ্রিলার গল্প লিখছেন। আশা করা যায়, মাসুদ রানাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার মত মৌলিক কোনো চরিত্র একদিন সৃষ্টি হবে আমাদের দেশেও।

শুরু হয়েছে মাসুদ রানা খোঁজার প্রতিযোগিতা ‘কে হবে মাসুদ রানা?’; Image Source: channelionline.com

মাসুদ রানা শুরু হয়েছিল মৌলিক গল্প দিয়ে। একসময় সেটি বিদেশী কাহিনী-নির্ভর হয়ে যায়। মোটামুটি প্রতি চল্লিশ দিন অন্তর অন্তর মাসুদ রানা বেরোতে থাকে। পঞ্চাশ বছরেরও অধিক সময়ে তাই পাঁচশ’টি বই বের হয়ে গেছে।

যদি গত পঞ্চাশ বছরে প্রতি বছরে একটি করে পাঁচশ’র বদলে মোটে পঞ্চাশটি উপন্যাস বের হতো, আর সবগুলোই হতো ধ্বংস পাহাড়, ভারতনাট্যমের মত মৌলিক কাহিনী, তাহলে বাংলা রহস্য-সাহিত্য আজ অনেক উঁচুতে থাকতো বলেই মাসুদ-রানা ভক্তদের বিশ্বাস। কিন্তু পারিপার্শ্বিক কারণে সেটি হয়নি। তবু বাঙালির প্রথম সুপারহিরো মাসুদ রানাকে আমরা ভালোবাসি, ভালোবাসবো। কিন্তু মৌলিক থ্রিলারের আফসোসটা হয়তো আমাদের রয়েই যাবে।

 

This is a Bengali article. It is about famous Bengali spy thriller novel-series Masud Rana and Its author Kazi Anwar hossain.

Necessary references are hyperlinked within this article. 

Featured Image: mzamin.com

Related Articles

Exit mobile version