জীবনের উত্তম দর্শন ‘দ্য আলকেমিস্ট’

আমাদের জীবনের লক্ষ্য আসলে কী? আমরা কি জানি বা জেনেও কি মানি? নাকি ‘যা হয় হোক’ ভেবে স্বপ্নকে উপেক্ষা করি? আমরা নিজের স্বপ্নের পেছনে কি কখনো দৌঁড়েছি? হয়তো হ্যাঁ, কিংবা না। প্রকৃতি আমাদের সবসময় কিছু না কিছু চিহ্ন দেখায়, আমরা সেটাকে উপেক্ষা করি। কারণ, আমরা ভালো কিংবা খারাপ লক্ষণগুলো চিনি না, চিনতে শিখিও না। কথাগুলোকে আপাতদৃষ্টিতে কঠোর আর দর্শনশাস্ত্রের মতো বলে মনে হলেও আসলে যে এর অর্থ কী, তা উপলব্ধি হবে এই বইটি পড়লে। 

সান্তিয়াগো নামের ছেলেটি ১৬ বছর পাঠশালাতে পড়েছে। নানা ভাষা জানে, নানা ভাষায় পড়তে আর কথা বলতে জানে। স্পেনে জন্ম নেওয়া আর আন্দালুসিয়ার পথেপ্রান্তরে ঘুরে বেড়ানো এক মেষপালক। মেষের দল তার কাছ থেকে শেখে, নাকি সে মেষপালের কাছ থেকে? বড্ড জটিল প্রশ্ন। মেষ চড়িয়ে বেড়ায়, আর সাথে থাকে একটা বই। বইপ্রেমী এই যুবক দিনের গরমে অস্থির হয়ে শীতের সম্বল জ্যাকেটটি ফেলে দেয়নি। কারণ, এই জ্যাকেট তার প্রাণরক্ষা করেছে শীতে, প্রাণরক্ষা করেছে রাতে।

স্বপ্নের খোঁজে অজানাতে; Image: Walmart

সাইমুম গাছের নিচে আর ভাঙা গীর্জাতে ঘুমিয়ে থাকা এই যুবক অদ্ভুত মানুষ। পরিবারের ইচ্ছা ছিল যাজক হবে, কিন্তু সে হতে চেয়েছিল পিলগ্রিম, পরিব্রাজক। তাই বাবার দেওয়া কিছু মুদ্রা নিয়ে নেমে পড়ে মাঠে। এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ভেড়ার পাল নিয়ে ছুটে বেড়ায়। একসাথে ঘুমায়, ভেড়ার লোম বিক্রি করে খায়, আর বই কেনে।

পরপর অদ্ভুত কিছু স্বপ্ন দেখে সেই যুবক, সেই স্বপ্নের খোঁজে রাস্তায় নামে সে। উদ্দেশ্য, মিশর। কিন্তু কী সেই উদ্দেশ্য? কী দেখেছিল স্বপ্নে, যা তাকে স্পেন থেকে মিশরে টানল? এক বেদুইন মহিলা তাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করে দেয়, বিনিময়ে কিছু চায়।

অন্যদিকে, এক অশীতিপর বৃদ্ধ তাকে উপহার দেয় সাদা আর কালো রঙের পাথর, উরিম আর থুমিম, আর কিছু উপদেশ। বিনিময়ে চেয়ে নেয় মেষপালের মেষ। সেই বৃদ্ধ নিজেকে সালেমের রাজা বলে দাবি করেছিল। আসলে কে ছিলেন তিনি?

অদ্ভুত স্বপ্নের পেছনে ছুটছে যুবক। প্রথমেই ধোঁকা, চুরি হয়ে যায় মেষ বিক্রির টাকা। অজানা দেশে অসহায় মূল চরিত্র সান্টিয়াগো। এক চকলেটের দোকান থেকে কিছু সাহায্য পেল। এরপর ভাগ্যক্রমে সান্তিয়াগো কাজ নিল এক স্ফটিকের দোকানে। সেই স্ফটিকের ব্যবসা স্ফুটিত হলো সান্টিয়াগোর বুদ্ধির জোরে।

সময় যায়। একদিন তাকে সাময়িকভাবে বাস করা এই স্থানকে ছেড়ে যেতে হয়। কারণ, তার লক্ষ্য মিশর। এভাবে এক ধু ধু মরুপ্রান্তরে এসে থামে সে, পরিচয় হয় এক ইংরেজ, এক আলকেমিস্ট, মরুর বুকের অনেক মানুষ, আর ফাতিমার সাথে। পথ চলতে চলতে শিখে যায়, ভালো আর খারাপ চিহ্ন কী। আদতেই কি বোঝা যায়?

লেখক পাওলো কোয়েলহো; Image Credit: Niels Ackermann/rezo

এই ফাতিমা সেই মেয়ে, যাকে দেখে তার মনে হয়, অদ্ভুত যোগাযোগ আছে তাদের মধ্যে। সে-ই বুঝি তার স্বপ্নের আসল উদ্দেশ্য। কিন্তু তাই কি? স্ফটিক ব্যবসায়ীর মতো ফাতিমাও বলে ‘মাকতুব’। ফাতিমাকে দেখার পর সে বুঝতে পারে, সেই দোকানির মেয়ের প্রতি তার যে অনুভূতি ছিল, তার সাথে ফাতিমার প্রতি অনুভূতির অনেক বেশি পার্থক্য রয়েছে।

কিন্তু এখন যে তাকে মিশরে যেতেই হবে, থামলে চলবে না। তাই ফাতিমাকে ফেলেই সে পা বাড়াল মিশরের উদ্দেশ্যে। কিন্তু কথা দিয়ে আসে, সে আবার ফিরবে ফাতিমার কাছে।

Your Eyes Show the strength of your soul; Image Credit: Tasfia Promy

সেখানে তার জন্য অপেক্ষা করে আছে অন্য কেউ। যে লক্ষ্য তাকে স্পেন থেকে নিয়ে এল আফ্রিকাতে, তার লক্ষ্য একটাই, মিশর। যার জন্য নিজের মেষপাল, নিজের দেশ ছেড়ে আজ সে যাযাবর।

যদিও সে যাযাবরই হতে চেয়েছিল। তবুও এক স্বপ্ন কেবল তাকে নিয়ে এলো এত দূরে। মাসের পর মাস কষ্ট করে, স্বপ্ন দেখে আর মিশরে পৌঁছানোর প্রতিজ্ঞা তাকে কি নিয়ে যেতে পারবে তার স্বপ্নদৃষ্ট স্থানে? নাকি খোলা আকাশের নিচে শুয়ে আকাশের তারা কিংবা ভেড়ার পাল গোনার দিনগুলোতে ফিরে যাবে সে? মিশরে যাবে সান্তিয়াগো? স্পেনে যাবে সেই প্রথম ভালো লাগা মেয়েটির কাছে, নাকি ভালোবেসে ফেলা ফাতিমার কাছে?

বইটা নিয়ে বহুদিন ধরে শুনেছি। পড়া হয়নি। বেশ কয়েক বার পিডিএফ শুরু করেও শেষ হয়নি। গত বছর বইটির ইংরেজি  ভার্সন কিনি। তবুও পড়ি পড়ি করে পড়া হয়নি। মাসদুয়েক আগে একটা বাংলা অডিওবুক শুনি, মন্ত্রমুগ্ধের মতো। এবার বাংলা অনুবাদ পড়লাম।

বইয়ের প্রতিটা লাইন মাথার মধ্যে গেঁথে আছে। প্রতিটি লাইন আপনাকে উদ্বুদ্ধ করবে। আমি নিজে বইটা পড়ে অনেক বিষণ্ণতা কাটিয়ে উঠেছি। আমার মনে হয়েছে, না, আমি পারব। আমার স্বপ্ন, আমাকে পারতেই হবে, আমাকে জয় করতেই হবে। এই বইয়ের মূল শিক্ষা এটাই, যেকোনো স্বপ্নকে কেবল স্বপ্ন বলে উড়িয়ে দেবেন না। সেই স্বপ্নকে একটু ধাওয়া করুন, স্বপ্ন আপনার হাতের মুঠোয় এসে ধরা দেবে।

বইয়ের নাম: দ্য এ্যালকেমিস্ট || লেখকের নাম: পাউলো কোয়েলহো

অনলাইন প্রাপ্তিস্থান: রকমারি

This article is in Bangla language. It is a review of a book named 'The Alchemist' written by Paulo Coelho, later translated by Ashik Mehedi. 

Featured Image: Mel Had Tea

RB-AS

Related Articles

Exit mobile version