“লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু”
প্রবাদ বাক্যটি শোনেনি, এমন খুব কম লোকই পাওয়া যাবে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ স্কুল পর্যায়ে নিজেদের বাংলা পুস্তকে এ ব্যাকটির সাথে পরিচিত হয়েছে আর এর ভাব-সম্প্রসারণ পড়েছে। শুধু পড়েছে বললে ভুল হবে। নশ্বর এ পৃথিবীতে মানবজাতির অমরত্ব লাভের যে পিপাসা, পৃথিবীর বুকে লালিত ধন-সম্পদ দিয়ে নিজের থলি পূর্ণ করার যে লালসা ও চাওয়া-পাওয়ার মাপকাঠি নির্ধারণ করতে না পারার দুর্বলতা- তার সাথে পরিচিতি লাভ করেছে। আর এসবের পরিণতি যে মোটেও সুখকর নয়, বরং অভিশাপ রূপে নেমে এসে কখনও একজন মানুষকে, কখনও একটি পরিবারকে, কখনও একটি গোষ্ঠীকে অথবা কখনও সমগ্র একটি জাতিকে দুমড়ে-মুচড়ে মাটির সাথে মিশিয়ে বিলীন করে দেয়, সেটার দৃষ্টান্তমূলক প্রমাণও পেয়েছে। আর আজ আমরা এমন একটি সিনেমা সম্পর্কে জানবো, যেখানে বহুল প্রচলিত এ প্রাচীন প্রবাদ বাক্যের দুর্দান্ত ও শৈল্পিক প্রতিফলন ফুটে উঠেছে।
২০১৮ সালে স্যাক্রেড গেমস ও ঘুল মুক্তির মধ্য দিয়ে ভারত তাক লাগিয়ে দিয়েছিল, এ কথা কমবেশি সবাই জানি। যদিও বা এ সিরিজ দুটোর তুমুল জনপ্রিয়তার পেছনে ‘নেটফ্লিক্স’ নামক ব্র্যান্ড বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। অন্যদিকে বলিউডের সিনেমাগুলোর কথা বলতে গেলে, অন্যান্য জনরার বহু আলোচিত সিনেমার পাশাপাশি হরর-মিস্ট্রি জনরার ‘পারী’ ভালোই প্রশংসা কুড়িয়েছিল। কিন্তু কে জানতো, বছরের শেষের দিকে এসে ‘তুম্বাড়’ নামক এক চমকের দেখা মিলবে! একইসাথে দর্শকদের অফুরন্ত করতালি ও সমালোচকদের মূল্যবান প্রশংসাসূচক বাণী, দুটোই ভাগ্যে জুটিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে ‘তুম্বাড়’ সিনেমাটি।
হিস্টোরিক্যাল পিরিয়ড ড্রামা ও হরর-ফ্যান্টাসি ঘরানার মিশেলে নির্মিত ‘তুম্বাড়’ মুভিটি প্রথম চিত্রধারণ করা হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ছয় বছর আগে। কিন্তু পরিচালক রাহি অনিল বার্ভের মনে হয়েছিল, তারা সিনেমাটিতে যা দেখাতে চেয়েছিলেন, তা ঠিকভাবে তুলে ধরা সম্ভব হয়নি। তাই পরে আনন্দ গান্ধী পুনরায় চিত্রনাট্য রচনা করে, নতুনভাবে সিনেমাটির শুটিং করেন। বাস্তবে ভারতের মহারাষ্ট্রে তুম্বাড় নামে একটি গ্রাম থাকলেও এর আবহাওয়া ও অন্যান্য দিকগুলো সিনেমার তুম্বাড় গ্রামের সাথে কোনোভাবেই মেলে না।
এবার তাহলে, সিনেমাটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়ে যাক।
‘তুম্বাড়’ সিনেমার কাহিনী গড়ে উঠেছে তুম্বাড় নামের একটি গ্রামকে ঘিরে। তুম্বাড় গ্রামের ক্ষমতাধর এক ব্রাহ্মণ জমিদার পরিবারের এক কালো অধ্যায়কে কেন্দ্র করে সিনেমার গল্প প্রবাহিত হয়েছে। সিনেমার প্রেক্ষাপট তিনটি পৃথক কালকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠলেও গল্পে ধারাবাহিকতা বিদ্যমান ছিল। সিনেমার একদম শুরুর অংশে ধারাভাষ্যকারের কন্ঠে আমরা একটি কাল্পনিক লোককাহিনীর শুনে থাকি।
এরপর শুরু হয় সিনেমার প্রথম অধ্যায়। ভারতবর্ষের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত তুম্বাড় গ্রামের ১৯১৮ সালের চিত্র সেখানে দেখানো হয়েছে। এরপরে চিত্রনাট্য মোড় নেয় পনেরো বছর পরের কাহিনীতে। সে সময়ে শুরু হওয়া এক নতুন কাহিনী ১৯৪৭ সালে এসে মর্মান্তিক নাটকীয়তার মধ্যদিয়ে ইতি টানে। কিন্তু কী ছিল এ সিনেমার গল্প আর গল্পটির প্রারম্ভ ও সমাপ্তির পেছনে সুপ্তমান রহস্যই বা কী?
‘তুম্বাড়’ সিনেমার মূল বিষয়বস্তুকে তুলে ধরতে হলে, মূল চরিত্রাভিনায়ককে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে এগোতে হবে। গল্পের প্রথম অধ্যায়ে দেখানো হয়, ভিনায়কের মা সেই গ্রামের জমিদার বাড়িতে তৎকালীন জমিদার সরকারের যৌন চাহিদা মেটাতে একজন যৌন দাসী হিসেবে কাজ করে। প্রকান্ড জমিদার বাড়ি থেকে সুদূরে লোকালয় ছেড়ে পুরনো ভাঙাচোরা এক বাড়িতে ভিনায়ক ও তার পরিবার বাস করতো। ছোট একটি পাহাড়ের উপর অবস্থিত এ বাড়ির চারপাশ জুড়ে ছিল নদী-নালা, খাল-বিল। ভিনায়কের পরিবারে তার মা ও সে ছাড়াও সাদাশিভ নামে তার এক ছোট ভাই ছিল। ভিনায়ক ও সাদাশিভ, দুই সহোদর আসলে ছিল সরকারের জারজ সন্তান। আর তাই সরকারের ধনদৌলত ও সম্পত্তির উপর তাদের কোনো অধিকার অথবা গ্রামে মাথা উঁচু করে বসবাসের অধিকার ছিল না। তারা ছিল সমাজ থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন।
এতেই কিন্তু শেষ নয়। ভিনায়কের বাড়িতে আরও একটি প্রাণের অস্তিত্ব ছিল। সে ছিল সরকারের মা, অর্থাৎ ভিনায়কের দাদিমা। এখন কথা হলো, এত বিশাল জমিদার বাড়ি থাকতে তিনি কেন একজন দাসীর কুটিরে এসে আশ্রয় নেবেন? আর এখানেই লুকিয়ে আছে সিনেমার আসল রহস্য। সিনেমার প্রথম থেকেই দর্শক দেখতে পাবেন, ভিনায়কের দাদিকে নিয়ে ভিনায়কের পরিবারের মধ্যে বেশ ভীতি কাজ করে। যতক্ষণ ভিনায়কের দাদিকে পর্দার সামনে না আনা হয়, ততক্ষণ এ ভয়ের কারণটা কিছুটা ঘোলাটেই থেকে যায়। তবে পুরোটা সময় ধরে সিনেমাতে যে থমথমে আবহ দেখানো হয়, এতে পরিস্থিতি কিছুটা আঁচ করা যাবে।
ভিনায়কের দাদিকে যখন পর্দায় প্রথম দেখানো হয়, সেই দৃশ্য দেখে দর্শক খানিকক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে যাবার কথা। তার শারীরিক অবস্থা যেমন বীভৎস রূপ ধারণ করেছিল ও তার মানসিক অবস্থা যেমন অস্বাভাবিক দেখা যাচ্ছিল, তাতেই ধারণা করা যাবে, বড় কোনো ধরনের পাপের ফল ভোগ করছেন তিনি। প্রথম অধ্যায় শেষ হয় দুটি প্রাণের মৃত্যু আর গল্পের নায়ক ভিনায়কের অন্তরাত্মায় এক নতুন লালসার তৃষ্ণা জাগরণের মাধ্যমে। এ অধ্যায়ে ভিনায়ককে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে দেখবে দর্শক।
দ্বিতীয় পর্বে দেখা যায়, পনেরো বছর পর ভিনায়ক পুনরায় তুম্বাড় গ্রামে ফিরে আসে। তুম্বাড়কে ঘিরে অতীতের ভয়াবহ স্মৃতি ও নিজের মাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি যে ‘সে আর কখনো এ গ্রামে পা রাখবে না’ কোনোকিছুকেই পরোয়া করে না ভিনায়ক। তার মনে তখন ছোটকালের সেই লালসার বীজ বেড়ে উঠে বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। এ অধ্যায়ে ভিনায়ককে নিজের স্বার্থোদ্ধারের নিমিত্তে তার দাদিকে ‘চাবিকাঠি’ হিসেবে ব্যবহার করতে দেখা যায়। অমরত্বের অধিকারী দাদি নাতিকে নিজের জীবনের সবথেকে গোপনীয় তথ্য জানানোর বিনিময়ে নিজের মুক্তির চুক্তি করেন। সেই মুহূর্তে ভিনায়কের নিজেকে ইহজগতের সবথেকে সুখী ব্যক্তি মনে হলেও, আসলে দাদির পাপের বোঝা নিজ কাঁধ তুলে নেওয়া ছাড়া আর কিছুই করেনি সে।
তৃতীয় অধ্যায়ে ভিনায়ক ও তার পুত্রের গল্প চিত্রায়িত হয়েছে। পুত্রের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করতে তাকে নিজের জীবনের সবথেকে বড় সত্য, নিজের আর্থিক উন্নতির মূল উৎসের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় সে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সারাজীবন যে লালসাকে বুকে পুষে রেখেছিল সে, তা শেষমেশ তাকে জীবন্ত অবস্থাতেই জাহান্নামের দিকে ঠেলে দিয়েছিল।
এবার কাহিনীকে আরেকটু খোলাসা করতে উপরে যে বলেছিলাম, সিনেমার শুরুতে একটি মিথের কথা তুলে ধরা হয়েছে, সে বিষয়টা নিয়ে একটু বিশ্লেষণ হয়ে যাক। সিনেমার শুরুতে আমরা যে কন্ঠটি শুনতে পাই তা মূলত ভিনায়কের ছিল। ১৯৪৭ সালে নিজের পুত্রকে কথাগুলো বলছিল সে। তার ভাষ্যমতে, উন্নতির দেবীর গর্ভ থেকে ১৬০ কোটি দেব-দেবী জন্ম হয়েছিল।
দেবীর প্রথম সন্তান হাস্তার ছিল তার সবথেকে প্রিয়। তবে হাস্তার মোটেও সুপুত্র ও মানবজাতি দ্বারা পূজনীয় হবার যোগ্য দেবতা ছিল না। মায়ের গর্ভ অর্থাৎ পৃথিবীর ভূতলে নিমজ্জিত সকল স্বর্ণ ও পৃথিবীর বুকে জন্ম নেওয়া সকল শস্যদানার উপর তার দুর্দমনীয় লোভছিল। একদিন মায়ের গর্ভ থেকে সকল রত্ন চুরি করে, খাদ্যদানার উপর হামলা করতে গেলে, তার বাকি সহোদরেরা তার উপর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। অন্যান্য দেব-দেবীর আক্রমণে হাস্তার যখন শেষনিঃশ্বাস ত্যাগের পথে, তখন মা ‘উন্নতির দেবী’র মনে মাতৃত্ব জেগে উঠে। তবে তিনি একটি শর্তে প্রাণপ্রিয় পুত্রকে মাফ করে বুকে আগলে নিতে রাজি হন। আর তা ছিল, হাস্তরের পূজা কেউ কখনো করতে পারবে না, আর হাস্তরকে চিরকালের জন্য মায়ের গর্ভে মানে ভূ-গর্ভে গা ঢাকা দিয়ে জীবনযাপন করতে হবে। এতে করে, মাটির নিচে নিমজ্জিত সকল স্বর্ণ হাস্তারের মালিকানায় চলে গেলেও, শস্যদানার ক্ষুধা তার অপূরণীয় থেকে যায়। সেই থেকে, ‘লোভ-লালসার’ প্রতিকধারী দেবতা হাস্তার অতৃপ্ত অবস্থায় মায়ের ক্রোড়ে ঘুমিয়ে ছিল।
এখন পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, হাস্তারের সাথে তুম্বাড় গ্রামের অথবা ভিনায়কের সম্পর্ক কী? তাহলে এবার সেই ব্যাপারে অল্প একটু ধারণা দেয়া যাক।
শত শত বছর ধরে হাস্তারের পূজা কেউ না করলেও, হঠাৎ করে তুম্বাড় গ্রামের এক ব্রাহ্মণ পরিবার ( ভিনায়ককের পূর্বপুরুষেরা) একটি মন্দিরের স্থাপনা করে হাস্তারের পূজা করতে শুরু করে। সারা বছর বৃষ্টিবাদল লেগে থাকা তুম্বাড় গ্রাম অভাবে তলিয়ে থাকলেও সেই পরিবারটি হাস্তরের কৃপায় অঢেল সম্পদের মালিক হয়ে ওঠে। কিন্তু যে পদ্ধতি অনুসরণ করে তারা হাস্তরের এ আশীর্বাদ গ্রহণ করে যাচ্ছিল, একসময় সেটি অভিশাপ হয়ে নেমে আসে তাদের বংশে। হাস্তরের ভোজন হিসেবে গম থেকে প্রাপ্ত আটা দিয়ে তৈরি পুতুল করে তাকে খুশি করে (যেহেতু হাস্তারের পেটে রাক্ষুসে ক্ষুধা ছিল) তার ঝুলি থেকে স্বর্ণ হাতিয়ে নিতে শুরু করে। তবে এতে করে হাস্তার থেকে যে ‘বর’ তারা লাভ করেছিল, তা মোটেও সুখকর ছিল না। আর নিজের পূর্বপুরুষের অতি লোভের এই ব্যধি বংশানুক্রমে ভিনায়কের মধ্যেও সংক্রামিত হয়। অনেকটা চক্রাকারে হাস্তার থেকে ভিনায়কের দাদি, ভিনায়ক ও অবশেষে তার পুত্রের ভেতর স্বর্ণের এই অন্তহীন লোভের ভার হস্তান্তরিত হয়েছিল।
এখন কথা হচ্ছে, ‘তুম্বাড়’ সিনেমাতে উল্লেখ করা ‘উন্নতির দেবী’ ও দুষ্ট দেবতা ‘হাস্তার’-এর উপস্থিতি হিন্দু মিথলোজিতে অথবা অন্য কোনো মিথলোজিতে সরাসরি পাওয়া যায়নি। এছাড়া গ্রিক মিথোলজির সাথে হাস্তারের মিথের ভালোই মিল খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। গ্রিক মিথলোজিতে পৃথিবী-মাতা হিসেবে পরিচিত দেবী ‘গাইয়া’র সাথে তুম্বাড়ের ‘উন্নতির দেবী’কে তুলনা করা যায়। আবার হাস্তারের সাথে গাইয়ার সন্তান দেবতা ক্রোনাস চরিত্রের কিছুটা মিল রয়েছে। হাস্তারকে যেভাবে তার সহোদরেরা পরাজিত করার পদক্ষেপ নিয়েছিল, গ্রিক পুরাণে জিউস ও তার ভাইয়েরা মিলে তাদের পিতা ও টাইটানের রাজা ক্রোনাসকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। আবার খ্রিস্ট ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ ‘বাইবেল’-এ ‘ম্যামন’ নামে এক দুষ্ট দেবতার উল্লেখ আছে। ‘গ্রিডি ডেমন’ নামে আখ্যায়িত ম্যামন যেন হাস্তারেরই প্রতিচ্ছবি।
‘তুম্বাড়’ সিনেমাটির অভিনয়শিল্পীদের কথা বলতে গেলে, প্রাপ্তবয়স্ক ভিনায়ক চরিত্রের অভিনেতা সোহাম শাহের নাম প্রথমে আসবে। সিনেমাটিতে প্রযোজকের ভূমিকা পালনের পাশাপাশি চমৎকার অভিনয় করে ভিনায়ক চরিত্রটিকে দারুণভাবে তুলে ধরেছেন তিনি। এছাড়া ছোট ভিনায়ক, তার ভাই সাদাশিভ ও ভিনায়কের ছেলের চরিত্রে যে তিনজন শিশুশিল্পী অভিনয় করেছেন, তাদের অভিনয়ও সাবলীল ছিল। আর কদাকার সেই দাদিমার মতো এমন একটা চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে শিশুশিল্পী পিয়ুস কৌশিকের এমন নিখুঁত ও গা শিউরে দেওয়া অভিনয়ের জন্য তার যতই প্রশংসা করা হোক না কেন, কমই হবে।
‘তুম্বাড়’ সিনেমার গল্প আহামরি বা খুব বেশি চমকপ্রদ যে না, তা বিনা সংকোচে বলা যায়৷ কিন্তু অনেক বেশি জটিল প্লটের সিনেমা থেকেও এ সিনেমাকে এগিয়ে রাখা যাবে, কয়েকটি বিশেষ কারণে। প্রথমত, সিনেমার একদম প্রথমে গ্রাফিক্যাল ইমেজের মাধ্যমে যেভাবে হাস্তারের মিথকে তুলে ধরা হয়েছে, সেটি সিনেমা নিয়ে অন্য এক ধরনের আগ্রহের মাত্রা তৈরি করেছিল। এছাড়া পুরোটা সময় ধরে সিনেমাটোগ্রাফি ছিল এককথায় মনোমুগ্ধকর। সিনেমাটোগ্রাফার পংকজ কুমার নিঃসন্দেহে তার ক্যারিয়ারের অন্যতম একটি সেরা কাজ আমাদের উপহার দিয়েছেন।
তুম্বাড় গ্রামের এমন নিরিবিলি, বৃষ্টিস্নাত ও অন্ধকারচ্ছন্ন পরিবেশ দেখলে যে কারো গা ছমছম করে উঠবে। মুভির প্রতিটি দৃশ্যে, বিশেষ করে ভিনায়ক ছোটকালে যে বাড়িতে বেড়ে উঠেছে ও হাস্তারের আবাসস্থলে যে থমথমে ভাব বজায় ছিল, তা কোনো রকম ভূত-পেত্নীর আগমন ছাড়াও যে কারো মনে অস্বস্তিকর এক ভৌতিক অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া সিনেমাতে যেভাবে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনামলের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, তা সত্যিই অসাধারণ। সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর পরিস্থিতিকে আরও গাম্ভীর্যপূর্ণ করে তুলেছিল। সিনেমার ভিজুয়্যাল ইফেক্টও চমৎকার। কিছু দৃশ্যের অভূতপূর্ব কাজ একদম পিলে চমকে দেবে দর্শকদের।
সব মিলিয়ে, ‘তুম্বাড়’ সিনেমাটি ভারতের সিনে জগতের এক নতুন ধারার পথপ্রদর্শক। একটি সাধারণ গল্পের সিনেমাকে অনন্যসাধারণভাবেও যে প্রদর্শন করা যায়, তুম্বাড় তার জলজ্যান্ত প্রমাণ।