ফিচার হচ্ছে মানবিক আবেদনধর্মী সরস রচনা। গতানুগতিক সংবাদ থেকে ভিন্ন, তথ্যবহুল, ভিন্নধর্মী লেখনশৈলীবিশিষ্ট প্রতিবেদনকে ফিচার বলা হয়। ফিচার যেকোনো একটি নির্দিষ্ট ঘটনা বা ব্যক্তির ওপর আলোকপাত করার মাধ্যমে পাঠককে ঐ ঘটনা বা ব্যক্তি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার সুযোগ করে দেয়। পত্রিকার নিত্যদিনের গতানুগতিক সংবাদ আর ফিচার, দুটো লেখার প্রক্রিয়া ও শৈলী আলাদা। সাধারণ সংবাদকে বলা হয় হার্ড নিউজ আর ফিচারকে বলা হয় সফট নিউজ বা হিউম্যান-ইন্টারেস্ট-স্টোরি। সংবাদ লেখার জন্য সাংবাদিককে একটি নির্দিষ্ট কাঠামোবদ্ধ প্রক্রিয়া, উল্টো পিরামিড কাঠামো (Inverted Pyramid Structure) মেনে চলতে হয়, কিন্তু একজন ফিচার লেখক নিজের ইচ্ছেমতো সুললিত ও আলংকারিক ভাষায় ফিচার লিখতে পারেন। শব্দ ও বাক্যের খেলায় যে যত পটু, তার ফিচারটি হয়ে ওঠে তত বেশি সরস।
লেখক অলিউর রহমান তার সাংবাদিকতা : ধারণা ও কৌশল বইয়ে ফিচার নিয়ে বলতে গিয়ে লিখেছেন,
ফিচার গদ্যময় রচনা হলেও এতে ছড়িয়ে থাকে বিভিন্ন মাত্রার কাব্যময়তা। উপস্থাপনের দিক থেকে এতে নাটকীয়তারও সুযোগ রয়েছে প্রচুর। একে কখনো কখনো কিছুটা রম্যময় ও ব্যঞ্জনাময় মনে হলেও বাস্তবের সঙ্গে থাকে এর প্রত্যক্ষ যোগসূত্র। ফিচার প্রতিবেদনের শব্দে আঁকা দৃশ্যচিত্রে পাঠক যেন কখনো নিজস্ব অভিজ্ঞতার ব্যক্তি-সংস্পর্শের একাত্মতা খুঁজে পায়। তাছাড়া এ ধরনের প্রতিবেদনে কিছুটা মনের মাধুরী ও রসবোধের উপাদান থাকে বলো ফিচারকে বলা হয় কাগজের নিত্যদিনের ‘সরস প্রতিবেদন’।
ফিচারের প্রকারভেদ
বিভিন্ন ঘরানার বিষয় নিয়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে ফিচার আর্টিকেল লেখা যেতে পারে। এখানে ফিচারের কয়েকটি প্রকার দেওয়া হলো।
মানবিক আবেদন (Human Interest): যেসব ফিচার স্টোরি সরাসরি মানুষের আবেগকে স্পর্শ করে সেগুলো এ পর্যায়ে পড়ে। এ ধরনের ফিচার স্টোরি পড়ে মানুষ আবেগাপ্লুত হয়। এই ফিচারগুলো একজন মানুষকে নিয়ে যেমন লেখা সম্ভব তেমনি একটি দল বা সম্প্রদায়কে নিয়েও লেখা যায়। পথশিশুদের ইদ উদযাপনের ব্যর্থতা নিয়ে একটি ফিচার লিখলে সেটা পড়ে পাঠকের ওই শিশুদের জন্য কষ্টবোধের অনুভূতি হতে পারে। আবার কোনো ব্যক্তি যদি কয়েকজন পথশিশুকে ইদ উদযাপনের ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে সেই কাহিনী পড়ে পাঠক আনন্দিত হবেন। অর্থাৎ এ ধরনের ফিচারগুলো পড়ে মানুষ দুঃখ বা সুখ, উভয় অনুভূতিই পেতে পারেন।
প্রোফাইল (Profile): এই ধরনের ফিচারে কোনো বিশেষ ব্যক্তিকে নিয়ে লেখা হয়। বিশেষত সেলিব্রিটি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সমাজ, দেশ বা পৃথিবীর ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জীবনাচরণের ওপর আলোকপাত করা হয় এসব ফিচারে। এই ফিচারগুলো পড়ে পাঠক নিজেকে সেই ব্যক্তির স্থানে কল্পনা করতে পারেন। তবে মনে করা হয়, এ ধরনের ব্যক্তিবিশেষের ওপর করা ফিচারের ক্ষেত্রে লেখককে খুব কাছ থেকে ওই ব্যক্তির জীবন পর্যালোচনা করতে হয়।
নির্দেশনামূলক (Instructional): এই ধরনের ফিচারগুলোকে বলা হয় ‘হাউ টু’ (how to) ফিচার। পাঠককে কোনো একটি কাজ কীভাবে করতে হয় তা শেখাতে এই ধরনের ফিচার লেখা হয়। বর্তমান ফিচারটিও একটি নির্দেশনামূলক ফিচার।
ঐতিহাসিক (Historical): ইতিহাসে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনাকে পাঠকের সামনে তুলে ধরা হয় এই ফিচারগুলোতে। বর্তমানের পাঠককে অতীতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আয়াসসাধ্য কাজটি করে থাকে ইতিহাস সম্পর্কিত সুলিখিত একটি ফিচার।
সাময়িক (Seasonal): বছরের নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কিছু ফিচার লেখা হয় যেগুলো অন্য সময় লিখলে তাতে পাঠকের খুব একটা কাজে আসে না। যেমন- বিভিন্ন দিবসের সময় ঐ দিবসটির মাহাত্ম্য নিয়ে লেখা ফিচার। আবার সমাজে হঠাৎ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা কোনো রোগ, সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে লেখা ফিচারও এই প্রকারভুক্ত। যেমন- শীতকালে নিপাহ ভাইরাস নিয়ে ফিচার লেখা বা সাম্প্রতিক সময়ে ঘন ঘন অগ্নিজনিত দুর্ঘটনা থেকে বাঁচার উপায় নিয়ে ফিচার।
ঘটনার পেছনের ঘটনা (Behind the Scenes): পর্দার আড়ালের অজানা গল্প নিয়েও লেখা যায় ফিচার। যেসব ঘটনা মানুষের কাছে সুবিদিত সেসব ঘটনার পেছনের ঘটনা হয়তো মানুষ জানে না। যেমন- টাইটানিক (১৯৯৭) সিনেমাটি সবাই দেখেছে, সিনেমার কাহিনী অনেকেরই মুখস্ত। কিন্তু এই সিনেমা বানানোর গল্প কিন্তু অনেকেই জানে না। সিনেমাটি কীভাবে বানানো হয়েছিল তা নিয়ে একটি দারুণ ফিচার হতে পারে। এভাবে জানা ঘটনার অজানা ইতিহাস ফিচার লেখার উপকরণ হয়ে উঠে।
ফিচার লেখার ক্ষেত্রে নিয়মের যথাযথ ব্যবহারের চেয়ে লেখকের লেখনশৈলী বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যে লেখক যত আকর্ষণীয়ভাবে তার মনের ভাব লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারেন তার ফিচার তত বেশি সুখপাঠ্য হয়ে ওঠে। তারপরও ফিচার লেখার কাজটা শুরু করার জন্য আপনি কিছু নিয়মনীতি অনুসরণ করতে পারেন। এই ফিচারে ফিচার লেখার নিয়মগুলো বর্ণনা করা হলো।
টপিক পছন্দ করুন
কী নিয়ে লিখবেন তা আগে ভাবতে হবে। আপনার পছন্দের কোনো বিষয় থাকলে তা দিয়ে লেখা শুরু করতে পারেন। এরপর আপনাকে ভাবতে হবে আপনার লেখার দৃষ্টিকোণ (Slant) নিয়ে অর্থাৎ আপনি কোন পয়েন্ট অভ ভিউ থেকে লিখবেন। এক্ষেত্রে আপনি চিন্তা করতে পারেন আপনার পছন্দকৃত টপিক পাঠক কোন প্রেক্ষিতে পড়তে চান। আপনি ইচ্ছে করলে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র কোনো দৃষ্টিভঙ্গি আপনার লেখায় তুলে ধরতে পারেন। যেমন ধরুন, হোয়াইট হাউজ যদি আপনার লেখার টপিক হয়, তাহলে ভাবুন তো আপনি কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে লিখতে চান? সেটা হতে পারে হোয়াইট হাউজের সূচনার ইতিহাস বা বর্তমান অবস্থা অথবা হোয়াইট হাউজের স্থাপত্যশৈলী নিয়ে। কিন্তু আপনি যদি সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে আপনার লেখাটি লিখতে চান তাহলে আপনি বেছে নিতে পারেন হোয়াইট হাউজের নিরাপত্তা ত্রুটি বা এ ধরনের কোনো কৌতূহলোদ্দীপক বিষয়কে।
লেখার টপিক খুঁজে বের করার পর আপনাকে আরেকটা কাজ করতে হবে। পুরো লেখার মূলভাব বা থিমকে আপনি কিছু বাক্যের মধ্যে গুছিয়ে নেবেন এবং এই থিমের ওপর ভর করেই ধাপে ধাপে আপনার আর্টিকেলের ডালপালা মেলবে।
গবেষণা
পছন্দের টপিক ঠিক করার পর আপনাকে সেই টপিকের ওপর গবেষণা তথা প্রচুর পড়ালেখা ও ঘাঁটাঘাঁটি করতে হবে। লেখার ক্ষেত্রে গবেষণার তিনটি উদ্দেশ্য রয়েছে।
১) গবেষণা আপনাকে বলে দেবে আপনি যে টপিক বা ধারণার ওপর কাজ করার চিন্তা করছেন তা নিয়ে আপনি আদৌ কাজ করতে পারবেন কি না আর যদি পারেন তাহলে আপনাকে লেখা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন নতুন পদ্ধতি বাতলে দেবে। অনেক সময় আমরা ভুল টপিক বা দৃষ্টিভঙ্গির বিবেচনায় কাজ করি। গবেষণা আমাদের এই ভুলগুলো ধরিয়ে ও শুধরে দেয়।
২) প্রতিটি পত্রিকা বা ম্যাগাজিনের নিজস্ব সম্পাদকীয় নীতিমালা থাকে। কোনো সাংবাদিক বা লেখকই সেই নীতিমালা ভঙ্গ করে কিছু লিখতে পারেন না। তাই আপনি যখন আপনার লেখার টপিক নিয়ে গবেষণা করা শুরু করবেন তখনই বুঝতে পারবেন আপনার টপিকটি বা আপনার লেখার দৃষ্টিভঙ্গি আপনি যেখানে লেখা পাঠাবেন সেই সংস্থার সম্পাদকীয় নীতিবিরুদ্ধ কি না। এছাড়া গবেষণার প্রথমদিকেই আপনি আপনার লেখার একটা খসড়া দাঁড় করাতে পারবেন।
৩) গবেষণার মাধ্যমে আপনি আপনার লেখার যাবতীয় মশলা জোগাড় করতে পারবেন। তথ্য সংগ্রহ, সাক্ষাৎকার গ্রহণ, পড়া, ইন্টারনেটে বিদ্যমান তথ্যের সর্বোচ্চ ফলপ্রসূ ব্যবহার সবই গবেষণার অংশ।
গবেষণার জন্য আপনি ইন্টারনেটের ওপর নির্ভর করতে পারেন। কিন্তু কখনো কখনো কোনো টপিক নিয়ে লেখার জন্য আপনাকে বিভিন্ন বইপত্র ঘেঁটে দেখতে হবে। কাজটা একটু সময়সাপেক্ষ হলেও ভালো মানের ফিচার লেখার জন্য এটুকু কষ্ট করতেই হবে। সব আর্টিকেল যে আপনি ঘরে বসে লিখতে পারবেন তা কিন্তু নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনাকে একটু কষ্ট করে মাঠে নামতে হবে। যেমন- কোনো ঐতিহাসিক স্থাপনা নিয়ে লিখতে হলে সেই স্থানে গিয়ে ঘুরে আসার প্রয়োজন হতে পারে। ইতিহাসের কোনো ঘটনা নিয়ে লিখতে হলে আপনার হয়তো আর্কাইভ ঘেঁটে দেখা লাগতে পারে। আবার কখনো কখনো এমন সব বিষয়ের ওপর আপনি লিখবেন যার জন্য আপনাকে কোনো বিশেষজ্ঞের ইন্টারভিউ নিতে হতে পারে।
কুয়েরি লেটার
আপনি যদি একজন পার্ট-টাইম বা ফ্রিল্যান্স কনটেন্ট রাইটার হিসেবে কাজ করতে চান তাহলে আপনাকে হয়তো কুয়েরি লেটার পাঠাতে হতে পারে। কুয়েরি লেটার হচ্ছে আপনার ঈপ্সিত প্রতিষ্ঠানের সম্পাদকের কাছে প্রেরিত পত্র। এর সাধারণত কয়েকটি অংশ থাকে। প্রথম অংশে আপনার নাম-পরিচয়, কেন লিখতে চান এবং কী বিষয়ে লিখতে চান তা উল্লেখ থাকে। দ্বিতীয় অংশে ঐ প্রতিষ্ঠানের সম্পাদকীয় নীতির সাথে আপনার আর্টিকেলের তুলনা থাকে। প্রতিটি অংশই মূলত একটি প্যারায় লেখা হয়। তৃতীয় প্যারাগ্রাফে আপনার লেখার কনটেন্ট সংক্ষিপ্তাকারে উল্লেখ করা থাকে এবং পাঠক কেন এই কনটেন্ট পছন্দ করবে তার পেছনে যুক্তি দেওয়া হয়। এর পরের প্যারাগ্রাফে লেখক নিজেকে কেন যোগ্য মনে করেন তা প্রমাণ করেন।
আরও একটু গবেষণা
কুয়েরি লেটার পাঠানোর পর আপনার উচিত হবে সম্পাদকের উত্তরের আশায় বসে থেকে সময় নষ্ট না করে আপনার টপিকের ওপর আরও গবেষণা করা। এবার আপনাকে আরও ইন-ডেপথ রিসার্চ করতে হবে। গবেষণার একপর্যায়ে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন এই টপিকের ওপর আপনার লেখার জন্য যথেষ্ট তথ্য যোগাড় হয়েছে।
এক্ষেত্রে আপনি বলতে পারেন, সম্পাদক যদি কুয়েরি লেটারের উত্তর না-বোধক পাঠান তাহলে তো আগেভাগে রিসার্চ করে কোনো লাভ নেই। কিন্তু আপনি যদি একটি প্রতিষ্ঠানে লেখা পাঠানোর সুযোগ না পেয়ে হাল ছেড়ে দেন, তাহলে তো হবে না। বরং আপনাকে পরে আরেকটি প্রতিষ্ঠানে আপনার আর্টিকেল বিক্রি করার চেষ্টা করতে হবে এবং একসময় আপনি ঠিকই সফল হবেন। এছাড়া রিসার্চ করলে আপনার ঐ বিষয়ের ওপর জানার পরিধি বাড়বে এবং তাতে লাভ ছাড়া ক্ষতি তো হবে না।
এবার পালা লেখার
টপিক পছন্দ, লেখার দৃষ্টিকোণ ঠিক করা ও গবেষণার কাজ শেষ করার পর আপনি লেখার কাজে হাত দেবেন। লেখা শুরু করার আগে একটি আউটলাইন বানিয়ে নিন। আউটলাইনের সবার শুরুতে সূচনা ও সমাপ্তি আগেভাগেই লিখে ফেলুন। এই দুই অংশের মাঝখানে থাকবে আপনার মূল লেখা।
ফিচারের সূচনা
সংবাদপত্রের গতানুগতিক হার্ড নিউজ উল্টো পিরামিড পদ্ধতিতে লেখা হয় যেখানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ সংবাদের শীর্ষে থাকে। কিন্তু ফিচার লেখার সময় সম্পূর্ণ এর বিপরীত প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হয়। ফিচারে লেখায় সারমর্ম ধীরে ধীরে অবতারণা করতে হয়। একজন লেখক গল্প বলার ঢঙে ফিচার লেখেন, তাই তার সূচনাটা হওয়া চাই আকর্ষণীয় যাতে পাঠক সূচনা পড়ে পুরো ফিচার পড়ার আগ্রহ লাভ করে। সূচনা অংশে আপনি পুরো লেখার সারবস্তু কী বা আপনার ফিচারে কী কী থাকছে তা খুব সংক্ষেপে উল্লেখ করতে পারেন।
মূল লেখা
সূচনা পড়ে পাঠক আকৃষ্ট হয়ে লেখার মূল অংশে প্রবেশ করে, তাই মূল লেখায়ও পাঠকের আগ্রহটুকু ধরে রাখা চাই। এই অংশে একজন লেখক তার সৃজনশীল লেখনশৈলীর প্রকাশ ঘটান। অনেকগুলো প্যারাগ্রাফে ফিচারের গর্ভাংশকে বিভক্ত করা যেতে পারে। প্যারাগ্রাফগুলোর ওপর ভর করে ফিচারের কাহিনী এগিয়ে যায় এবং প্রতিটি প্যারাগ্রাফেই নতুন কিছু না কিছু তথ্য থাকে। তবে এমন কোনো অপ্রাসঙ্গিক তথ্য দেওয়া উচিত নয় যা ফিচারের কাহিনীধারাকে বাধাগ্রস্ত করে।
সমাপ্তি
ফিচারের সমাপ্তি এর সূচনার মতোই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই অংশটুকু পুরো ফিচারটির নির্যাস ধারণ করে। ফিচারের সমাপ্তি অংশ বেশি বড় করা উচিত নয়। সমাপ্তি পড়ে পাঠকের যেন মনে না হয় ‘শেষ হইয়াও হইলো না শেষ’ বরং ফিচারের সমাপ্তি এমন হওয়া উচিত যাতে পাঠকের মনে আরও জানার কোনো আক্ষেপ না থাকে।
তথ্যের সমারোহ
ফিচার লেখার সময় কতটুকু লেখা উচিত বা কোন তথ্য রাখা দরকার, কোনটা নয় তা নিয়ে লেখক অনেক সময় দ্বন্দ্বে পড়ে যান। নিউজ স্টোরির ক্ষেত্রে বলা হয় স্টোরিকে যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত রাখতে হবে, অপ্রয়োজনীয় তথ্য ও বাহুল্য দোষ এড়িয়ে যেতে হবে। কিন্তু ফিচার হওয়া উচিত যতটা সম্ভব ইন-ডেপথ অর্থাৎ লেখক তার টপিক নিয়ে যত দূর সম্ভব গবেষণা করে লিখবেন। এক্ষেত্রে যেসব তথ্য ফিচার স্টোরির দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও বিস্তৃত করতে সহায়তা করে সেগুলো লেখায় যোগ করতে হবে আর যেসব তথ্য ফিচারের টপিক ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রসঙ্গে খুব একটা প্রাসঙ্গিক নয় সেগুলো বর্জন করতে হবে।
বই বা সিনেমার পর্যালোচনা
বই বা সিনেমা নিয়ে আগ্রহ থাকলে এগুলো নিয়েও লিখতে পারেন রিভিউধর্মী ফিচার। তবে রিভিউ লেখার কাজটা খুব একটা সহজ কাজ নয়। বলা হয়, সমালোচনাও একপ্রকারের শিল্প। রিভিউ লেখার জন্য আপনার প্রচুর জানাশোনা থাকতে হবে। যেমন ধরুন, মানিক বন্দোপাধ্যায়ের পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের রিভিউ লিখতে হলে আপনাকে লেখকের লেখার স্টাইল, তার লেখায় ফ্রয়েড বা মার্ক্সের প্রভাব এসব বিষয়ে যেমন ধারণা রাখতে হবে, তেমনি তার বাকিসব লেখাও পড়তে হবে। আবার ধরুন, আপনি সিনেমা সমালোচক হতে চান। সেক্ষেত্রে আপনার সিনেমার মূল নীতিগুলো সম্পর্কে যেমন ধারণা থাকতে হবে তেমনি যে সিনেমার সমালোচনা করতে যাচ্ছেন সেই সিনেমার পরিচালকের বাকি সিনেমাগুলোও দেখা থাকতে হবে। একইভাবে আপনি যে সিনেমার রিভিউ লিখছেন সেটি যে জনরার সিনেমা, সেই জনরার আরও কিছু সিনেমা প্রসঙ্গেও আপনাকে জানতে হবে। তা না হলে আপনার রিভিউ পড়ে পাঠক সন্তুষ্ট হবেন না।
রিভিউ লেখার আগে বিখ্যাত সমালোচকদের রিভিউ পড়তে পারেন। লক্ষ্য করলে দেখবেন, তাদের সমালোচনায় মৌলিক কিছু জিনিস একই। আর তারা নিজেদের মতামতের ওপর খুব বেশি জোর দেন। নতুন রিভিউ লেখকরা নিজের কোনো ব্যক্তিগত মতামত দিতে অস্বস্তি বোধ করেন। অধিকাংশ সময় দেখা যায় নতুন রিভিউ লেখকরা প্রখ্যাত বা জনপ্রিয় মতবাদকেই নিজের ভাষায় পুনর্ব্যক্ত করেন। কিন্ত এমনটা না করে আপনার যদি নিজস্ব কোনো মত থাকে তা আপনার রিভিউতে উল্লেখ করুন। সেটা যদি প্রতিষ্ঠিত সমালোচনার সম্পূর্ণ বিরুদ্ধেও যায়, তাহলে আপনি তা করুন। কারণ সমালোচনার মূল কাজ এখানেই, নতুন কোনো দিক খুঁজে বের করা। প্রথাবিরুদ্ধ হওয়ার চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করার মানসিকতা থাকতে হবে।
সাক্ষাৎকার
ফিচার লেখার কাজে কখনো কখনো ব্যক্তি-সাক্ষাৎকার নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। যেমন- ইতিহাসাশ্রয়ী কোনো বিষয় নিয়ে লিখলে ইতিহাসের কোনো অধ্যাপকের সাক্ষাৎকার নিতে পারেন। তেমনি খেলা নিয়ে লিখলে ক্রীড়াবিশেষজ্ঞ, সঙ্গীত সম্পর্কে লিখলে সঙ্গীতজ্ঞ যেকোনো ব্যক্তির কাছ থেকে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করলে সেই লেখার গাঁথুনি আরও মজবুত হয়। তাই একটি ফলপ্রসূ সাক্ষাৎকার নেয়ার ক্ষেত্রে আমাদেরকে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যার সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন তার সম্পর্কে আগে থেকে জেনে নিতে হবে। কিছু বেসিক প্রশ্ন তৈরি করে রাখতে পারেন। এমনভাবে প্রশ্ন করবেন না যাতে সাক্ষাৎকারদাতা এক শব্দে যেমন হ্যাঁ বা না-তে উত্তর দিতে পারে।
উদ্ধৃতির ব্যবহার
লেখার মাঝে বা শুরুতে উদ্ধৃতির ব্যবহার আপনার ফিচারকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে। এমন উদ্ধৃতি ব্যবহার করুন যা আপনার ফিচারের দৃষ্টিভঙ্গি বা থিমকে তুলে ধরে। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করলে সেই সাক্ষাৎকারের কোনো এক উপযুক্ত অংশ উদ্ধৃতি হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। তবে অবশ্যই অতিরিক্ত উদ্ধৃতি ব্যবহার করা উচিত নয়।
আবার পড়ুন ও সম্পাদনা করুন
লেখা শেষ হওয়ার পর লেখার ওপর আপনাকে আরেকবার চোখ বুলিয়ে নিতে হবে। এ পর্যায়ে আপনি আপনার লেখায় একজন সমালোচক বা সম্পাদকের চোখে ভুল খুঁজবেন। এছাড়া লেখায় টাইপোগ্রাফিক্যাল এরর, ব্যাকরণগত ভুল, বিরামচিহ্নজনিত ভুল, বাহুল্য দোষ, অনুপযুক্ত শব্দগুচ্ছের ব্যবহার ইত্যাদি ভুলগুলোও শোধরাতে হবে এই পর্যায়ে। আপনি ইচ্ছে করলে অন্য কাউকে দিয়েও আপনার লেখাটি পড়িয়ে নিতে পারেন। তার মুখে নিজের লেখা শুনলে এমন সব ভুল আপনার কানে বাজবে যেগুলো আপনি পড়ার সময় ধরতে পারেননি। লেখার কোনো অংশ ভালো না লাগলে তা পুনরায় লিখতে পারেন।
যদিও প্রথম প্রথম লেখার কাজটি যথেষ্ট পরিশ্রমের বলে মনে হতে পারে, কিন্তু ধীরে ধীরে তা অভ্যাসে পরিণত হবে। আপনি যদি আপনার পছন্দের বিষয় নিয়ে লিখেন তাহলে সামগ্রিক কাজটি আপনার মনোরঞ্জনের একটি অন্যতম পন্থা হয়ে উঠবে। তাছাড়া দিনের শেষে আপনার লেখাটি ছাপা হলে এবং সেই লেখা পাঠককে খুব আগ্রহ নিয়ে পড়তে দেখলে আপনার মনে নিশ্চয়ই একধরনের প্রশান্তির আমেজ বইবে। আর সাথে পারিশ্রমিকের কথাটা না-ই-বা বললাম।