বৈকাল হ্রদ: পৃথিবীর প্রাচীনতম এবং গভীরতম হ্রদের গল্প

পৃথিবীর মোট আয়তনের চার ভাগের তিন ভাগ জল দিয়ে পরিবেষ্টিত। আয়তনে মোট ১,৩৮৬ মিলিয়ন ঘন কি.মি. পরিমাণ জল আমাদের স্থলভাগকে ঘিরে রেখেছে। এদের মধ্যে রয়েছে বিশাল ৫ মহাসাগর, শত শত সাগর এবং লক্ষাধিক নদীনালা। এছাড়া রয়েছে প্রায় ১১৭ মিলিয়ন হ্রদ। চারদিকে স্থলবিশিষ্ট জলাশয় হিসেবে পরিচিত এই হ্রদগুলো পৃথিবীর জলভাগের অন্যতম প্রধান আধার হিসেবে বিদ্যমান।

পৃথিবীর প্রায় সব অঞ্চলেই ছোট-বড় হ্রদ দেখা যায়। কিছু কিছু হ্রদ এতটাই বিশাল যে, এদের নামকরণে জুড়ে দেওয়া হয়েছে সাগর উপাধি। যেমনটি দেখা যায় কাস্পিয়ান সাগর নামক হ্রদের বেলায়। এ ধরনের বড় হ্রদগুলোকে অনেকে গ্রেট লেক বা মহাহ্রদ হিসেবেও আখ্যা দেন। এই মহাহ্রদগুলো যেন প্রাকৃতিক পরিবর্তন এবং জীববৈচিত্র্যের এক চলমান জাদুঘর। নানাপ্রান্তের এই হ্রদগুলো ভূপ্রাকৃতিক প্রক্রিয়াগুলো অপরূপভাবে মেলে ধরছে আমাদের কৌতূহলী চোখের সামনে। আজকের আলোচনায় আসবে সেরকম একটি হ্রদের গল্প। হ্রদটির নাম ‘বৈকাল’। রুশ মুলুকের সাইবেরিয়া অঞ্চলে অবস্থিত এই হ্রদটি যুগ যুগ ধরে মানুষের কৌতূহল এবং মুগ্ধতার কারণ হয়ে বিদ্যমান রয়েছে। 

হ্রদের পরিচয়   

রুশ ফেডারেশনের সাইবেরিয়া অঞ্চলের দক্ষিণাংশে অবস্থিত পৃথিবীর সর্বপ্রাচীন স্বাদুপানির হ্রদ বৈকাল। বিজ্ঞানীদের হিসাব মতে, এই হ্রদের বয়স প্রায় ২০-২৫ মিলিয়ন বছরের মতো হবে। রুশরা একে ওরেজো বেয়কাল বা বৈকাল নামে ডেকে থাকে। তিইউরিস্ক ভাষার আঞ্চলিক শব্দ ‘বাই-কুল’ থেকে এই হ্রদের নামকরণ করা হয়েছে। বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায় সম্পদশালী হ্রদ। এই হ্রদকে অনেকে সাইবেরিয়ার মুক্তা নামেও ডেকে থাকেন।

সাধারণ জ্ঞানের বইগুলোতে বৈকাল হ্রদের পরিচিতি হচ্ছে পৃথিবীর গভীরতম হ্রদ হিসেবে। প্রায় ১,৬২০ মিটার গভীর এই হ্রদের আয়তন ৩১,৫০০ বর্গ কিলোমিটার। তবে শুধু প্রাচীনতা এবং গভীরতার দিক দিয়েই এই হ্রদ অনন্য নয়; বরং আয়তনের দিক দিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম স্বাদু পানির হ্রদ হিসেবেও এর সুখ্যাতি রয়েছে। পৃথিবীর মোট স্বাদু পানির এক-পঞ্চমাংশ (২৩,০০০ ঘন কি.মি.) এই হ্রদের বুকে প্রবাহিত হচ্ছে।

বৈকাল হ্রদ; Image Source: Remote Lands

রাশিয়ার অন্যতম এই জলধারাটি স্থানীয়দের নিকট অত্যন্ত পবিত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। অনেক অঞ্চলে এই হ্রদকে ঘিরে অলৌকিক গল্পকথাও প্রচলিত রয়েছে। বিশেষ করে, শীতকালে হ্রদের পানি জমে বরফে পরিণত হলে সেখানে বিশালাকার ‘বলয়’ দেখা দেয়। এই বলয়কে ঘিরে একসময়ে বিভিন্ন উপকথা প্রচলিত ছিল। এমনকি হাল আমলে এসব বলয়কে ভিনগ্রহীদের কারসাজি হিসেবেও চালিয়ে দেওয়া হতো। তবে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান অবশ্য এসব তত্ত্ব বিশ্বাসীদের হতাশ করেছে। বিজ্ঞানীদের মতে, প্রায় ৭ কিলোমিটার ব্যাসের এই বলয়গুলো আসলে হ্রদের উষ্ণ জলের সাথে পৃষ্ঠের বরফের সংস্পর্শে গঠিত হয়েছে। তবে এখনও বিভিন্ন জনপদের বিশ্বাসমতে এই হ্রদ পবিত্র এবং তারা নানা উপায়ে পবিত্র হ্রদকে ঘিরে বিভিন্ন রীতি পালন করে থাকে।

বৈকালের বরফজমা পৃষ্ঠে বলয়; Image Source: NASA

ইতিহাস কথা বলে

বৈকাল হ্রদের অবস্থান; Image Source: Google Maps

প্রাচীনকাল থেকে মানুষ বৈকাল হ্রদ অঞ্চলে বসবাস করে আসছে। ইতিহাসের পাতা ঘেঁটে জানা যায়, খ্রিষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে মানুষ সর্বপ্রথম বৈকাল হ্রদ আবিষ্কার করে। তাছাড়া হান-শিয়ংগু যুদ্ধের অন্যতম ক্ষেত্র হিসেবে এই অঞ্চলের নাম ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ করা রয়েছে। সেই যুদ্ধ সঙ্ঘটিত হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব ১৩৩ সাল থেকে ৮৯ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে। এই হ্রদের ইতিহাস এতটাই প্রাচীন যে, স্থানীয়রা বিশ্বাস করে, স্বয়ং যিশুখ্রিষ্ট এই হ্রদ অঞ্চলে ভ্রমণে এসেছিলেন। যদিও এর কোনো ঐতিহাসিক দলিল নেই।

ইউরোপ মহাদেশ থেকে প্রথম এই হ্রদ অঞ্চলে পদার্পণ করেছিলেন ‘কুরবাত ইভানোভ’ নামক একজন রুশ নাগরিক। তিনি ১৬৪৩ সালে এই কীর্তি গড়েন। তখন সাইবেরিয়া রুশ সাম্রাজ্যের অধীনস্ত ছিল না। ১৭শ শতকে রাশিয়া কর্তৃক সাইবেরিয়া দখল হয়ে গেলে বৈকাল হ্রদ রুশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রশ্ন উঠতে পারে, এই হ্রদ ঠিক কতটা প্রাচীন? এর উত্তর বিজ্ঞান বলছে, এই হ্রদের বয়স কমপক্ষে ২৫ মিলিয়ন বছর। প্রাগৈতিহাসিক যুগে ভূপৃষ্ঠের আন্দোলনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে এই হ্রদকে ঘিরে থাকা পর্বতমালা।

বৈকাল হ্রদ অঞ্চলের স্থানীয় বুরিয়া জাতি; Image Source: Baikal Archive

ধারণা করা হয়, প্রাথমিকভাবে বৈকাল হ্রদ অঞ্চল ছিল একটি নদীর খাত। কিন্তু ভূমিকম্প এবং ভূপৃষ্ঠের ফাটলের কারণে নদীর দুই তীরের মধ্যে প্রশস্ততা বাড়তে থাকে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে নদীর গভীরতা। টারশিয়ারি যুগের (৬৬ থেকে ২.৬ মিলিয়ন বছর আগে) বিভিন্ন সময়ে এই পরিবর্তন সাধনের মাধ্যমে বৈকাল অববাহিকা গঠিত হয়েছে। পর্বতের চূড়ায় জমে থাকা বরফ গলে নদীর পানি বৃদ্ধি করতে থাকে। এরপর প্লাইয়োসিন যুগে (৫.৩ থেকে ২.৫৮ মিলিয়ন বছর আগে) নদী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একাধিক স্বতন্ত্র হ্রদের জন্ম হয়। এরপর সেগুলো ধীরে ধীরে একত্রিত হয়ে সৃষ্টি হয় বৈকাল হ্রদ। হ্রদগুলো এক হওয়ার পেছনে ভূমিকম্প, ভূমিধ্বস, শিলাপতনসহ বেশকিছু সম্ভাব্য কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। আবার এমনও হতে পারে, একাধিক কারণ এই হ্রদ সৃষ্টির পেছনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করেছে।

প্রাগৈতিহাসিক যুগের ন্যায় আজও বৈকাল অঞ্চল ভূমিকম্পপ্রবণ। হ্রদের অভ্যন্তরীণ উপত্যকায় প্রতি বছর ২ হাজারের মতো হালকা এবং মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প নির্ণিত হয়। এর ফলে হ্রদের গভীরতাও কম-বেশি বাড়তে থাকে বলে ধারণা করা হয়।

অন্যান্য হ্রদের সাথে বৈকাল হ্রদের গভীরতার তুলনা; Image Source: NOAA / GLERL, Reddit User BUAK

স্বচ্ছ পানির আধার

বৈকাল হ্রদ আর স্বচ্ছ টলমলে পানির শৈল্পিক দৃশ্য যেন সমার্থক শব্দ। এই হ্রদের পানি পৃথিবীর অন্যতম বিশুদ্ধ এবং স্বচ্ছ পানি। গ্রীষ্মকালে সাইবেরিয়ান পর্বতের বরফ সম্পূর্ণ গলে হ্রদের বুক কানায় কানায় ভরে ফেলে। তখন এর স্বচ্ছ বুক ভেদ করে ৩৯ মিটার গভীর পর্যন্ত পরিষ্কার দেখা যায়। এই স্বচ্ছতার পেছনে কলকাঠি নাড়ছে বিশুদ্ধ বরফ গলা পানি, হ্রদের বুকে থাকা প্লাঙ্কটনের ময়লা আহার করা এবং খনিজ লবণের অনুপস্থিতির মতো বেশকিছু বিষয়।

বৈকালের বুকে ছোট ছোট ২৭টি দ্বীপের সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব দ্বীপের বেশিরভাগই মানুষের জন্য একদম বাসযোগ্য নয়। তবে কিছু কিছু দ্বীপে মানুষের বসতি চোখে পড়ার মতো। এদের সবচেয়ে বড় দ্বীপ অলখন লম্বায় ৭২ কিলোমিটার। এখানের জনসংখ্যা প্রায় ১,৫০০ জন।

স্বচ্ছ পানি আর বৈকাল যেন সমার্থক শব্দ; Image Source: Alamy

বৈকাল হ্রদের বিশাল অঞ্চলজুড়ে পানির যোগান দিয়ে আসছে প্রায় ৩৩০টির মতো নদী। এদের মধ্যে সেলেঙ্গা নদী এর সবচেয়ে বড় উৎস হিসেবে চিহ্নিত। হ্রদের অর্ধেকের বেশি পানি আসে এই নদী থেকে। তবে অবাক করা তথ্য হচ্ছে, এতগুলো নদী উৎস হলেও এই হ্রদের পানি পতিত হয় শুধু আঙ্গারা নদীর বুকে। সেখান থেকে প্রতিবছর প্রায় ১৫.৮ ট্রিলিয়ন গ্যালন পানি ইয়েনিসেই নদীতে প্রবাহিত হয়ে আর্কটিক মহাসাগরের বুকে পতিত হয়।

সেলেঙ্গা নদী; Photograph: James Karuga

আবহাওয়া এবং জীববৈচিত্র্য

সাইবেরিয়ান অঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকার তাপমাত্রা অনেক কম থাকে। তবে বৈকাল হ্রদ অঞ্চলের আবহাওয়া সেই তুলনায় অনেকটাই উষ্ণ। এখানে শীতকালে তাপমাত্রা গড়ে -২১° সেলসিয়াস এর মতো হয়। আগস্টের দিকে তাপমাত্রা ১১° সেলিসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। শীতকালে হ্রদের পৃষ্ঠ পুরোটা বরফে আচ্ছাদিত হয়ে যায়। তবে মে-জুন মাসের দিকে বরফ গলে দেখা দেয় স্বচ্ছ পানির স্তর। তখন জলপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা হয় ১২° সেলসিয়াস। বৈকাল হ্রদের বুকে তখন মাঝারি আকারের ঢেউ উঠে। হ্রদের ঢেউয়ের সর্বোচ্চ উচ্চতা মাপা হয়েছে প্রায় ৪.৬ মিটার।

বৈকাল হ্রদের অনন্য মাছ গোলোমিয়াংকা; Image Source: Fishwatching

বৈকাল হ্রদ জীববৈচিত্রের আধার। প্রায় ১,৮০০ প্রজাতির মতো পশুপাখি এই হ্রদ অঞ্চলকে প্রাণের কোলাহলে মুখরিত করে রেখেছে। হ্রদের কাছাকাছি অঞ্চলে পাওয়া যায় শত শত প্রজাতির গাছগাছালি। এখানে প্রাপ্ত জীবদের অধিকাংশই আঞ্চলিক (এন্ডেমিক)। পৃথিবীর অন্য কোথাও এদের দেখা পাওয়া যায় না। এজন্য জীবপ্রেমী এবং গবেষকদের নিকট বৈকাল এক সমৃদ্ধ ভাণ্ডার।

বৈকালের জলে প্রায় ৫০ প্রজাতির মাছের নিবাস। এদের মধ্যে রয়েছে ২৫ প্রজাতির গোবি মাছ, অমোল স্যামন, গ্রেলিং, হোয়াইটফিস এবং স্টারগন মাছ। জেলেদের নিকট অমোল স্যামন সবচেয়ে জনপ্রিয় মাছ। তাছাড়া বিরল প্রজাতির মাছের মধ্যে গোলোমিয়াঙ্কা মাছ উল্লেখযোগ্য।

বৈকাল হ্রদের সবচেয়ে বিখ্যাত প্রাণী নেরপা। এটি শুধু বৈকাল নয়, সারাবিশ্বের একমাত্র স্বাদুপানির সিলমাছ। এখানে প্রায় ১ লাখ নেরপার বসবাস। বিবর্তনবিজ্ঞানীদের নিকট অত্যন্ত আকর্ষণীয় প্রাণী এরা। ঠিক কখন এরা সাগর থেকে স্বাদুপানিতে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে, তা উদঘাটন করতে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

বৈকাল হ্রদের নেরপা সিল; Photograph: Dhritiman Mukherjee

শৈবাল যখন হুমকি

হ্রদের জলধারা ব্যাহত হওয়া কিংবা প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। প্রতিটি হ্রদের জন্য অঞ্চল এবং ভূ-প্রকৃতি ভেদে এসব কারণ আলাদা হতে পারে। তেমনি বৈকালের জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে শৈবালের প্রাচুর্য্য! অবশ্য অনেক মহাহ্রদের জন্যই শৈবালের প্রাচুর্য এক গলার কাঁটা। প্রাথমিকভাবে রুশ বিজ্ঞানীরে ভেবেছিলেন, বৈকালের মতো বিশাল হ্রদের জন্য শৈবাল তেমন বিপদের কারণ হতে পারবে না। ২০০৮ সালের দিকে তাদের ধারণা ভুল প্রমাণিত করে বৈকালের তলদেশে আবির্ভূত হয় স্পাইরোগাইরার ব্লুম (শৈবাল পুষ্প)। হ্রদের তলদেশ থেকে এসব ব্লুম তীরে উঠে আসে এবং মারাত্মক দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। তবে দুর্গন্ধ সৃষ্টি এই ব্লুমের সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক নয়। রাসায়নিকভাবে বিষাক্ত এই ব্লুমগুলো নানা প্রজাতির শামুক, স্পঞ্জ, মাছ এবং ক্রাস্টাসিয়ানদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে হ্রদ অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য হুমকির মুখে পড়বে।

বৈকালের তলদেশে শৈবাল; Image Source: Siberian Times

এছাড়াও প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটকের ভিড়ে জমা হয় প্রচুর পরিমাণ আবর্জনা এবং বর্জ্য। পর্যাপ্ত নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় এসব বর্জ্য হ্রদের পরিবেশ নষ্ট করছে। আশার কথা হচ্ছে, সম্প্রতি ‘লেক বৈকাল ট্রেইল’ নির্মাণ করা হচ্ছে, যা পুরো হ্রদ অঞ্চলকে এসব সমস্যা থেকে স্থায়ী সমাধান দিবে।

মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয়

গত শতাব্দী থেকে মঙ্গোলিয়া এবং রাশিয়ায় শিল্পক্ষেত্রে ব্যাপক বিকাশ সাধন হয়েছে। বর্ধমান চাহিদার সাথে পাল্লা দিয়ে দুই দেশে বাড়ছে কলকারখানার সংখ্যা। দুঃখজনক হলেও সত্যি, এর ফলে বহু প্রাকৃতিক স্থান ধ্বংস করে কারখানা নির্মাণ করা হচ্ছে। এর থেকে বাদ যায়নি বৈকাল হ্রদ অঞ্চলও। বৈকালের প্রধান উৎস সেলেঙ্গা নদীটি মঙ্গোলিয়া দিয়েও প্রবাহিত হচ্ছে। সেখানে তারা বাঁধ নির্মাণের প্রস্তাব দেয়ার পরপরই বৈকাল হ্রদের পানির উৎস নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এর ফলে হ্রদের পানি আশঙ্কাজনকহারে হ্রাস পাবে। তাছাড়া এর ফলে হ্রদে আসা পলির পরিমাণও কমে যাবে। ক্রমান্বয়ে প্রাণীবৈচিত্র্যও ধ্বংসের মুখে পড়বে।

বৈকালের তীরবর্তী কারখানা; Image Source: RT

বৈকালের তীরবর্তী অঞ্চলে বেশ কয়েকটি মাইনিং, কাগজ, জাহাজ নির্মাণ, মৎস্য এবং কাষ্ঠ শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেছে। এসব কারখানা পানির জন্য বৈকালের উপর নির্ভরশীল। এর ফলে বৈকালের বড় একটি অংশে দেখা দিচ্ছে পানি দূষণ। কারখানার রাসায়নিক পদার্থ পানির বিশুদ্ধতা নষ্ট করে দিচ্ছে। এর আগে ১৯৬৬ সালে বৈকাল হ্রদের দক্ষিণ তীরে একটি ঝুঁকিপূর্ণ কাগজ কারখানা নির্মাণ করার প্রস্তাব ওঠেছিল। তৎকালীন সোভিয়েত বিজ্ঞানীরা এর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিলে তা বাতিল করে দেয়া হয়। ১৯৭১ সালে তদানীন্তন সোভিয়েত সরকার এই হ্রদ সংরক্ষণের জন্য জরুরি অধ্যাদেশ জারি করেছিল। কিন্তু ৯০’এর দশকে এই চিত্র পাল্টে যায়। এর ফলে কারখানার বর্জ্যের মাধ্যমে বৈকাল হ্রদ এখন হুমকির মুখে রয়েছে।

হয়তো একদিন বৈকালের এই সৌন্দর্য্য শোভা পাবে জাদুঘরে; Image Source: Worthminer

১৯৯৬ সালে বৈকাল হ্রদকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভূক্ত ঘোষণা দেয়া হয়। এর মাধ্যমে এই বিশাল অঞ্চলকে সংরক্ষণ করার জন্য বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। হ্রদকে ভালোবেসে বহু প্রকৃতিপ্রেমী সংগঠন গড়ে উঠেছে রাশিয়াজুড়ে। এদের সরব প্রতিবাদ এবং কর্মসূচির কারণে ২০০৬ সালে রুশ সরকারের প্রস্তাবিত তেল পাইপলাইন প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। হয়তো একসময় কারখানার বিষবাষ্প গ্রাস করে ফেলবে বৈকালকে। এর শেষ বিন্দু পানি বাষ্প হয়ে পৃথিবীর দীর্ঘশ্বাসে বিলীন হয়ে যাবে; কিন্তু সেই অভিশপ্ত ভবিষ্যৎকে রুখে দিতে এসব সংগঠন এবং অন্যান্য যারা কাজ করছে, তারাই আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের আশার বাণী।

This is a Bangla article about Lake Baikal, the oldest and deepest freshwater lake in the world. This lake is unique in its natural beauty and abundance of floral and faunal resources.

Reference: All the references are hyperlinked.

Feature Image: Widescreen Wallpapers

Background Image: Microsoft

Related Articles

Exit mobile version