এমন যদি হতো, আমি পাখির মতো
উড়ে উড়ে বেড়াই সারাক্ষণ
পালাই বহু দূরে, ক্লান্ত ভবঘুরে
ফিরবো ঘরে কোথায় এমন ঘর?
বৃক্ষ তলে শুয়ে, তোমার দুঃখ ছুঁয়ে
ঘুম আসে না, ঘুম স্বার্থপর…
মাঝে মাঝে মনে হয়, গতানুগতিক জীবনধারা ছেড়ে যাযাবর পাখি হলেই বরং সমস্ত পৃথিবীটা ঘুরে ঘুরে দেখা যেতো। বলুন তো, এমনটা হলে কি খুব মন্দ হতো? মনের ইচ্ছে ডানা মেলে বেড়িয়ে আসা যেতো পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। কিন্তু বাস্তবতা অন্য হিসেব জানিয়ে দিয়ে যায়, এসব কেবল রূপ কথাতেই সম্ভব।
ভাবতে গেলে অবাক লাগে, বিস্ময়কর এই পৃথিবীর কতো কী অজানা, কতো কী অচেনা! পৃথিবীর কোনায় কোনায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অপার বিস্ময়! যতই জানি ততই অবাক হতে হয়, এর যেন কোনো তল খুঁজে পাওয়া সম্ভবই হয় না। কতো অদেখা দেশ, কতো অচেনা জনসমষ্টি, কতো না বর্ণময় সংস্কৃতি, কতো বৈচিত্রময় ভাষা। বিস্ময়ে ভরা এই ধরণীর রূপ, রস, গন্ধের ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র অংশও যদি কেউ তার জ্ঞান ভান্ডারে স্থাপন করে নিতে চায়, তাহলেও বোধ হয় গোটা একটা মানব জীবন যথেষ্ট নয়।
পরিবার, সমাজ তথা ক্যারিয়ারের চিন্তা, পড়াশোনার চাপে পড়ে জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটে যায় বইয়ের পাতায় পাতায়, চারপাশের জগতটাকে যেন ভালোমতো চেনাই হয়ে উঠে না। বইপোকা হয়ে আর না হয় টিভি দেখে চিনে নিতে হয় বহির্জগতের অজানাকে। সেই সুযোগের রেশ ধরেই না হয় চলুন জেনে আসি অজানা পৃথিবীর অবাক করা কিছু বিস্ময়কর তথ্য।
ফকল্যান্ড দ্বীপ
খুব কি অবাক হবেন যদি জানতে পারেন কোনো জায়গার জনসংখ্যার চেয়েও কি না ভেড়ার সংখ্যা বেশি?
হ্যাঁ, মোটেও বানোয়াট কিছু নয়, আটলান্টিক মহাসাগরের ঠিক দক্ষিণে অবস্থিত ফকল্যান্ড দ্বীপ। সেই দ্বীপের জনসংখ্যা আনুমানিক প্রায় ৩০০০ হবে। জানা যায়, দ্বীপটিতে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর প্রধান কাজ ভেড়া পালন। আর সমীক্ষায় উঠে আসে সেই দ্বীপে ভেড়ার সংখ্যা প্রায় পাঁচ লক্ষ। উন্নতমানের উল রপ্তানির জন্য বিখ্যাত এই দ্বীপটির জনসংখ্যা কম হলেও, এই পাঁচ লক্ষ ভেড়ার আশ্রয়দাতা কিন্তু তারাই।
এসকিমো
স্বাভাবিকভাবেই বরফের কথা উঠে আসলেই এসকিমো ছাড়া আর কারো কথাই যেন মাথায় আসে না। আচ্ছা বলুন তো? বরফের কী কী প্রতিশব্দ হতে পারে? শিলা, তুষার আবার ইংরেজিতে স্নো বা আইস ইত্যাদি। এমন অনেক প্রতিশব্দ আছে যা কিনা আমরা জানিই না।
কিন্তু এসকিমোরা বরফ বা স্নো বোঝাতে পঞ্চাশটিরও বেশি শব্দ ব্যবহার করে থাকে। কারণ এসকিমোদের যেহেতু নিজস্ব কোনো ভাষা নেই তাই নানা সম্প্রদায়ের মানুষদের ভাষা একত্রিত করে তাদের নিজেদের ভাষা তৈরি করে নেয়। এ কারনেই এসকিমোদের ভাষাশৈলীতে একটি শব্দের অনেক বেশি প্রতিশব্দের প্রচলন দেখা যায়।
নাইজার
ভাবুন তো এমন কি হতে পারে যে কোনো একটি দেশের জনসংখ্যার ৪৯ শতাংশ মানুষ কি না এখনো কৈশোরই পার হয়নি। বলতে গেলে জনসংখ্যার বেশির ভাগ মানুষের বয়স ১৫ বছরের কম। কোন সে দেশ জানেন কি? দারিদ্র, অপুষ্টি, শিক্ষার অনগ্রসরতা, সামাজিক অচলাবস্থায় আচ্ছন্ন পশ্চিম আফ্রিকার উন্নয়নশীল দেশ নাইজার। সামাজিক সচেতনতার অভাবের কারণে এই দেশে শিশু জন্ম ও মৃত্যুর হার পৃথিবীর মাঝে সর্বোত্তম।
গুয়াম
প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম উপকূলের তীর ঘেঁষে গড়ে উঠা দ্বীপ গুয়াম। দ্বীপ হলেও এখানকার মসৃণ, প্রশস্ত পিচঢালা রাস্তা-ঘাট রীতিমতো চোখ ধাঁধানো। প্রাকৃতিক বালি না থাকায়, সামুদ্রিক কোরালের গুঁড়ো ও তেলের সাহায্যে পিচ ঢেলে তৈরি করা হয় এখানকার রাস্তা-ঘাট।
কিন্তু সুন্দরের পাশাপাশি অবস্থান অসুন্দরের। সেই অসুন্দর থেকে তৈরি হওয়া মুশকিল হলো রাস্তার উপর জল থাকে সাথে সাথে তেল চিটচিটে হয়ে উঠে রাস্তার পিচ, ভাসতে থাকে যেন তেলের সাগরে। এতে করে বিপদজনক হয়ে উঠে চলাফেরা। ইদানিং অবশ্য বিপদ এড়াতে আরো উন্নত মানের সামগ্রী ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
লিবিয়া
বলুন তো? এমন কোন দেশের অস্তিত্ব আজো টিকে আছে বা এমন কোনো স্থান কী আদৌ আছে নাকি যেখানে বৃষ্টির ছিটে ফোঁটা পর্যন্তও খুঁজে পাওয়া যায় না? আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে সেই দেশটির নাম লিবিয়া এবং লিবিয়ার এমন ৯৯ শতাংশ স্থান মরুভূমিতে ঢাকা। আর সে কারণেই বছরের পর বছর লিবিয়ার কোনো কোনো স্থানে বিন্দুমাত্র বৃষ্টির লেশ খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে যায়।
ভ্যাটিকান সিটি
উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশগুলোতে যেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি একটি প্রধান সমস্যা সেখানে এমন কোনো স্থান খুঁজে পাওয়া কী সম্ভব যেখানে কি না কোনো নির্দিষ্ট সময়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার একেবারেই শূন্য! পরিসংখ্যান অনুযায়ী যাচাই করে এই তথ্য প্রমাণ মেলে যে, সারা বিশ্বে প্রতি সেকেন্ডে যেখানে অন্তত চারজন শিশু জন্মগ্রহণ করে, সেখানে ১৯৮৩ সালে রোমের ভ্যাটিকান সিটিতে কোনো শিশুই নাকি জন্মগ্রহণ করে নি।
সিঙ্গাপুর
আধুনিকতার কবলে আজ বিশ্ব বিমোহিত। আর সেই আধুনিকতার ছোঁয়ায় গড়ে উঠেছে আকাশ ছোঁয়া স্কাইস্ক্র্যাপার, মাল্টিস্টোরিড বিল্ডিং, শপিং মল, পার্ক, জাঁকালো রেস্টুরেন্ট, বিশাল স্থাপত্যশৈলী ইত্যাদি আরো নানা দর্শনীয় স্থান।
মোটামুটিভাবে পুরো শহরটাই এখন আরবানাইজেশনের আলোয় জ্বলজ্বল করছে। কোন সে দেশের কথা বলছি নিশ্চয় খুব জানতে ইচ্ছে করছে? শহুরে আধুনিকতার আবেশে ঢাকা দেশটির নাম হলো সিঙ্গাপুর। এতটায় আধুনিকতায় ছাওয়া দেশটিতে বর্তমানে কৃষিজমি পর্যন্ত অবশিষ্ট নেই বললেই চলে।
সৌদি আরব
নদীবিহীন দেশ বলতেই উঠে আসে যে দেশের নাম তা হলো সৌদি আরব। এতো বড় একটি দেশ অথচ তাদের জীবন ধারণের জন্য ভূগর্ভস্থ জলাধার ভিন্ন তাদের দ্বিতীয় কোনো উপায় নেই।
হাইতি
ক্যারিবিয়ান আইসল্যান্ডের একটি অন্যতম প্রধান দেশ হাইতি। দেশটি একসময় সুজলা- সুফলা, শস্য- শ্যামলা উপাধি পেয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই ১৯২৫ সালের পর থেকে দেশটির জনসংখ্যা দ্রুত গতিতে বেড়ে যাওয়া শুরু করে। বাড়তি জনসংখ্যার জ্বালানি প্রয়োজনের তাগিদে নির্বিচারে কেটে ফেলা হয় গাছপালা। ফলশ্রুতিতে, হাইতি তার সুজলা- সুফলা দেশের খ্যাতি হারাতে শুরু করে। বর্তমানে দেশটির পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে প্রায় ৯৮ শতাংশ জমিই বর্তমানে বৃক্ষহীন।
মঙ্গোলিয়া
আপনি জানেন কি? পৃথিবীতে সবচেয়ে কম ঘনবসতি পূর্ণ দেশ কোনটিকে বলা হয়? দেশটি এতই কম জনসংখ্যা অধ্যুষিত যে সেখানে প্রতি বর্গমাইল এলাকা জুড়ে মাত্র চারজন করে মানুষ বসবাস করে। দেশটির নাম হলো মঙ্গোলিয়া।
এরকম হাজারো বিস্ময় লুকিয়ে রয়েছে পৃথিবীর আনাচে কানাচে যা জানার সাথে সাথে মুগ্ধতায় ভরে উঠে মন। ভিন্ন আদলে জানতে ইচ্ছে করে পৃথিবীটাকে আরো বেশি বেশি।
ফিচার ইমেজ – mongoliasociety.org